আমার প্রেয়সী পর্ব-১৪

0
120

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_১৪
#জান্নাত_সুলতানা

-“আষাঢ়?”

আষাঢ় কিছু মেয়ের সাথে দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে আছে না হেঁসে কথা বলছে। পাশে কিছু ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। স্টেজে বর বউ কে হলুদ দেওয়া হচ্ছে। এদিকে বড়ো মানুষ এর তেমন ধ্যান নেই। তারউপর বক্সে গান বাজচ্ছে।তাই হঠাৎ এভাবে কে ডাকলো আষাঢ় অনুমান করতে পারে না। তবে কণ্ঠ শোনে খুব চিরপরিচিত মনে হচ্ছে।আবছা আলোয়ে অদূরে আর্শিয়ান ভাই দাঁড়িয়ে।সাদা পাঞ্জাবিতে মানুষ টাকে একটু বেশি সুদর্শন দেখাচ্ছে কি?সুদর্শন দেখাচ্ছে কি আর্শিয়ান ভাই তো সব সময় সুদর্শন।
আষাঢ় মনে মনে কথা গুলো বিড়বিড় করে আর্শিয়ান এর দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই পাশে নজর পরে মেজাজ বিগড়ে গেলো।ওর সাথে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ে গুলো আর্শিয়ান ভাই এর দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।অবশ্য শুধু তাকিয়ে আছে বললে ভুল হবে রীতিমতে আষাঢ়’র আর্শিয়ান ভাই কে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। আষাঢ়’র ফ্রেন্ড নাদিয়াও আছে এরমধ্যে। মেয়ে টা আর্শিয়ান ভাই পছন্দ করে। শুধু পছন্দ নয়।যাকে বলে একদম মনপ্রাণ উজাড় করে ভালোবাসা।তবে আর্শিয়ান ভাই আষাঢ়’র কে ভালোবাসে জানার পর থেকে একদম বদলে গেছে।আষাঢ় নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে কিছু ইশারা করে দ্রুত পা চালিয়ে আর্শিয়ান এর কাছে চলে এলো।মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে বলে উঠলো,

-“ডেকেছেন আমায়?”

-“আমার সাথে আয়।”

ওর হাত ধরে আর্শিয়ান বাড়ির ভেতর এলো।সোজা ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে সেখানে প্লেটে খাবার নিলো।তারপর আবার আষাঢ়’র হাত ধরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে আষাঢ়’র রুমে চলে এলো।নিচে কিছু প্রতিবেশী বসে আছে। তারা অবশ্য আর্শিয়ান এর এমন কাণ্ডে একটু অবাক হলো।আবার কেউ কেউ ফুসুরফুসুর করতে লাগলো।তবে সে-সব আর্শিয়ান পাত্তা দেওয়ার সময় নেই।এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি হচ্ছে আষাঢ় এখনো খাবার খায় নি।একে একে সবাই খাবার খেয়ে নিয়েছে। মেয়ে টা আজ একটু বেশি লাগামহীন চলাফেরা করছে।শিউলি বেগম ভীষণ ব্যাস্ত।তবে কাজের ফাঁকে আষাঢ় কে বেশ কয়েকবার বলেও খাওয়াতে পারে নি।
আর্শিয়ান রুমে এসে আষাঢ় কে বিছানায় বসিয়ে খাবার প্লেট হাতে দিলো।আষাঢ় ঘোরে আছে। আর্শিয়ান এর কণ্ঠ শোনে ঘোর কাটলো।

-“ফিনিশ ইট আষাঢ়।
আর হ্যাঁ খাবার শেষ আর বেরুবি না রুম থেকে। রাত অনেক হয়েছে ঘুমিয়ে পড়বি।”

আষাঢ় কি বলবে খোঁজে পেলো না। আর্শিয়ান রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েও আবার ফিরে এলো।আষাঢ় কে একপলক পর্যবেক্ষণ করে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।মেয়ে টা লাল পাড়ের হলুদ শাড়ী পড়ে আছে। গায়ে বেলিফুলের অল্পস্বল্প সাজ।দেখতে দারুণ মায়াবী লাগছে।এই প্রথম আষাঢ় শাড়ী পড়েছে।দেখলে একবার ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। সেইজন্যই তো এখন পর্যন্ত তো একবারও ভালো করে মেয়ে টাকে দেখে নি।যদি সেদিন রাতের মতো আবার কোনো ভুল করে ফেলে।তবে মন টা বড্ড অস্থির অস্থির করে আজ কিছু দিন ধরে। মনে হয় কিছু হারিয়ে যাচ্ছে আর্শিয়ান খোঁজে পাচ্ছে না নয়তো সে নিজে হারিয়ে যাচ্ছে।আষাঢ়’র এইচএসসি ফাইনাল এক্সাম আর দু’মাস পর।আর্শিয়ান ভেবে নিয়েছে এক্সাম শেষ হলেই তার আষাঢ় মাস কে সে নিজের করে নিবে।একদম নিজের।আর্শিয়ান কথা গুলো ভেবেই
ঠোঁটের উপর এক হাত রেখে বললো,

-“শাড়ী পড়তে বারণ করে ছিলাম।
আর পড়বি না।”

অতঃপর দ্রুত পা চালিয়ে বেরিয়ে গেলো।আষাঢ় তখনো অবুঝ চোখে তাকিয়ে আর্শিয়ান ভাই এর যাওয়ার পথে।
আষাঢ় বুঝতে পারছে না মানুষ টা আজ কিছু দিন ধরে কেন এতো এলোমেলো থাকছে।বড্ড চিন্তিত দেখায় মানুষ টাকে।

——

হলুদের অনুষ্ঠান শেষ আয়াত রুমে এসে শাওয়ার নিলো।মেহদি লাগিয়েছিলো সেই সন্ধ্যায়। কিন্তু হাত গুলো এখনো কেমন ঝিমঝিম করছে।আয়াত হাতে একটু নারকেল তেল লাগালো।চুল আঁচড়াতে সময় লাগলো কিছু টা।ঝটপট চুল আঁচড়ে মোটা একটা বিনুনি করে নিলো।চুল খুব বেশি বড়ো নয় আয়াত এর।কোমড় সমান।চুল বড়ো আষাঢ়’র।আয়াত এর থেকে দিগুণ লম্বা আষাঢ়’র চুল।আষাঢ় কখনো চুল কাটে না।আর্শিয়ান ভাইয়ের লম্বা চুল পছন্দ। শর্মিলা বেগম এর চুল অনেক বড়ো আর্শিয়ান মায়ের চুল আঁচড়ে দেয়।যত্ন করে তেল লাগিয়ে দিতো আগে।বাড়ির মেয়েরা বড়ো হয়েছে পর থেকে আর্শিয়ান সে-সব আর করে না।শর্মিলা বেগম এর কাছ থেকে শুনেছে আয়াত। যদিও আয়াত এর কিছু কিছু মনে আছে।
তবে পুরোপুরি নয়।সেক্ষেত্রে আষাঢ়’র সে-সব মনে না থাকারই কথা।
আয়াত এর খালা এসেছে। আয়াত এর মামার বাড়ির আত্মীয় বলতে এই খালাই আছে। বর্তমানে তিনি সিলেট থাকে।স্বামী বিদেশ থাকে। আয়াত এর নানা নানি কিংবা মামা আর কেউ নেই। সেই খালার এক মেয়ে আছে। বয়স এগারো। আয়াত এর রুমে ঘুমিয়েছে মেয়ে টা।
আয়াত লাইট অফ করে শোয়ার প্রস্তুতি নিতেই কেউ দরজা খুলে রুমে এলো।আয়াত চমকালো।এতোক্ষণ ঘুমে চোখ খুলে রাখা কষ্টসাধ্য হচ্ছিল। আর এখন ভয়ে আতংকে ঘুম সব পালিয়েছে।
আয়াত মুখ ফুটে কিছু বলবে তার আগেই অন্ধকারে একটা দানবীয় হাত ওর মুখ চেপে ধরলো। টেনে নিয়ে গেলো ব্যালকনির দিকে।সেখানে একটা লাইট জ্বলছে। আয়াত হাতের মালিক কে সেটা আগেই বুঝতে পেরেছে। আর এখন দেখার পর চোখ কপালে।সাঈদ ওর মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলো।গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,

-“নো ঘুম আয়াত বেবি।
চলো আজ সারারাত আমার সাথে গল্প করবে।কাম কাম।”

নিজে নিচে বসে দুই হাত বাড়িয়ে দিয়ে আয়াত কে কাছে আসতে ইশারা করে।
আয়াত অসহায় চোখে তাকালো।কোনো একদিন প্রেম চলাকালীন এরকম বলেছিলো বিয়ের আগের রাতে সারা রাত জেগে গল্প করবে দু’জন। কে জানতো এই পুরুষ সেই কথা এখনো মনে রেখে দিয়ে আজ সত্যি সত্যি গল্প করার জন্য চলে আসবে!আয়াত চেয়েও কিছু বলতে পারলো না।

—-

-“বিয়েতে তুমি থাকবে না তাসরিফ ভাই?”

তাসফিয়ার প্রশ্নে তাসরিফ মলিন হাসলো।বোনের একটা বড্ড শখ ছিলো তাসরিফ এর।কিন্তু তায়েফ তায়ুশ হলো।এতে অবশ্য কোনো সমস্যা ছিলো না।আয়াত, আষাঢ় কে নিজের বোনের চেয়ে কম ভালোবাসে না।শুধু কেনো জানি তাসফিয়া কে ওর বোন ভাবতে পারে নি কখনো।বোনের বিয়েতে থাকার ইচ্ছে থাকলে উপায় নেই।যদিও আকরাম তালুকদার বিয়ের পর পুরোদমে চাকরির জন্য চেষ্টা করতে বলেছিলো।কিন্তু তাসরিফ? সে পরশু থেকে চাকরির জন্য দরখাস্ত করে যাচ্ছে।এরমধ্যে একটা ভালো কোম্পানিতে শনিবারে ইন্টারভিউ এর জন্য ডেকেছে।কোম্পানি টা একটু দূরে। বাড়ি থেকে গিয়ে সকালে ইন্টারভিউ দেওয়া সম্ভব হবে না। এতো পথ জার্নি করে।সেইজন্য আজ সন্ধ্যায় চলে যাবে। সেখানে গিয়ে এক ফ্রেন্ড এর বাসায় থাকবে।কিন্তু বিয়েতে থাকবে সে।
এটা অবশ্য কাউ কে বলে নি।মাত্র একটা কাঁধ ব্যাগ কে কিছু কাপড় নিচ্ছিল তাসরিফ তখন তাসফিয়া রুমে এসে উপরোক্ত প্রশ্ন টা করলো।তাসরিফ প্রেয়সীর চোখে জল দেখে একদম বরফ থেকে গলে পানি হয়ে গেলো।এগিয়ে এসে তাসফিয়ার মুখ টা দুই হাতের আঁজল নিয়ে আদুরে কণ্ঠে জানালো,

-“আল্লাহ এই মেয়ে চোখে মুখের কি অবস্থা করেছে।
এই আমি একবারে চলে যাচ্ছি না।মাত্র তিন দিন এর জন্য যাচ্ছি।”

-“আর যদি চাকরি টা হয়ে যায় তাহলে তো সব সময় সেখানে থাকতে হবে।”

তাসফিয়া বললো।
তাসরিফ তাসফিয়ার চোখের জল মুছে দিলো।চুল গুলো ঠিকঠাক করে দিতে দিতে বললো,

-“তখন তোকে সাথে নিয়ে যাব।”

-“তুমি আমাদের অফিসে জয়েন করো না।
এতো দূরে যাওয়ার কি দরকার তাসরিফ ভাই?”

-“ওখানে চাকরি করবো না। শুধু তোর হিটলার বাপকে বোঝাতে হবে তাসরিফ তালুকদার এর যোগ্যতা আছে।”

শেষ এর কথা টা মনে মনে বললো।তাসফিয়া আবার প্রশ্ন করলো,

-“তাহলে কেনো যাচ্ছেন?”

-“এমনি।”

তাসরিফ এর এমন গা-ছাড়া ভাব তাসফিয়ার অসহ্য লাগলো।মেয়ে টা কষ্টে কাল রাত থেকে ঘুমুতে পারে নি।হলুদের অনুষ্ঠান খুব বড়ো করে না হলেও যথেষ্ট ঝাঁক ঝমক পূর্ণ ছিলো।সবাই কতো আনন্দ করেছে। কিন্তু ও?মন টা সারাক্ষণ ছটফট করেছে।সুযোগ হয় নি কাল কথা বলার মতো। তাই তো সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে তাসরিফ এর রুমে চলে এসছে।কিন্তু এই পুরুষ টা?তার তো কোনো ভাবান্তর নেই।
তাসফিয়ার অভিমান হলো।কোনো কিছু না বলেই তাসরিফ এর রুম ত্যাগ করলো।
তাসরিফ মেয়ে টার যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলো।অভিমান করেছে প্রেয়সী।কোনো ব্যাপার না সে মানিয়ে নিবে।তার আগে নিজে কে প্রমাণ করতে হবে।

—–

বিয়ে বাড়ি মানে আনন্দ তেমন কাজের চাপ।আর্শিয়ান দম ফেলার ফুরসৎ নেই।বেচারা কাল থেকে আষাঢ় ছটফট করছে একপলক স্থীর ভাবে মানুষ টাকে মন ভরে দেখার জন্য। তৃষ্ণায় বুক চৌচির হয়ে আসছে।কাল রাতে হলুদের অনুষ্ঠান বেশ রাত করেই শেষ হয়েছে তাই সকালে অনেকে এখন ঘুম থেকে ওঠে নি।আষাঢ় ঘুম চোখে তাও আর্শিয়ান ভাই কে দেখার জন্য ঘুম নিয়ে ওঠে এসছে। নিচে এসে ফ্লাক্স থেকে চা নিয়ে খেলো।ঘুম কিছু টা কাটার পর ছুটলো স্টেজের দিকে।আর্শিয়ান আকরাম তালুকদার এর সাথে কথা বলছে। আষাঢ় কে দেখে ইশারা করে বোঝালো এখন বাহিরে যাবে। ফিরে এসে কথা বলবে।আষাঢ়’র মন টা খারাপ হলো নিমেষেই। তবে চারদিকে এতো মানুষের ভীড়ে সে কিছু করতে বা বলতে পারলো না আর্শিয়ান কে।বাধ্য হয়ে চলে গেলো সেখান থেকে। আর্শিয়ান আষাঢ়’র মুখ দেখে মেয়ে টার মনের কথা কিছু টা হলেও ঠাহর করতে পারে। তাই তো ভাবে ফিরে এসে ওর সাথে কথা বলে সব ঠিক করে নিবে।আদৌও ফিরে এসে সব ঠিক করার জন্য মানুষ টাকে খোঁজে পাবে তো?

#চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে