#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_১৩
#জান্নাত_সুলতানা
-“তুই এটা পড়বি আষাঢ় মাস।”
আর্শিয়ান একটা শপিং ব্যাগ আষাঢ়’র হাতে দিয়ে বললো।আষাঢ় ব্যাগ টা হাতে নিলো।তবে অবাক হলো।আজ পাক্কা নয়দিন পর আর্শিয়ান ভাই ওর সামনা-সামনি দাঁড়িকয়ে কথা বললো।মানুষ টা সেই দিন রাতের পর আর আষাঢ়’র সাথে কথা বলে না।আষাঢ় নিজেও আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে পারে নি।তবে আগের ন্যায় ঠিক পুরুষ টাকে লুকিয়ে পর্যবেক্ষণ করে আসছে।
আষাঢ় কথা গুলো মনে মনে ভেবেই ব্যাগ টা হাতে নিয়ে মিনমিন করে বলে উঠলো,
-“কিন্তু বড়ো মা সব,,,
-“জানি আমি।
কিন্তু তুই এটাই পড়বি বিয়েতে।”
আর্শিয়ান আষাঢ়’র কথা সম্পূর্ণ না শুনেই আদেশের স্বরে বললো।পরপরই দ্রুত পা চালিয়ে ছেলেদের সু শো-রুম এর দিকে চলে গেলো। আষাঢ় তাকিয়ে রইলো পেছন থেকে ফর্মাল গেটআপে থাকা আর্শিয়ান ভাইয়ের দিকে।
বিয়ে তারিখ ঠিক করা হয়েছে অনেক আগে।সব দিক গুছিয়ে আজ বিয়ের শপিং করা হচ্ছে।বাড়ির সবাই এসছে। আজ বুধবার আগামী শুক্রবারে বিয়ে।মহিলারা দুপুরে খাবার পর মার্কেট এসছে।আর পুরুষরা সবাই অফিস থেকে এসে সবাই এক সাথে হয়েছে।আচ্ছা আর্শিয়ান ভাই কি দুপুরে খাবার খেয়েছে?
মুখ টা কেমন শুঁকিয়ে আছে।চুল গুলো এলোমেলো। আবার শার্ট এর ইন কোমড় থেকে খোলে আছে। মানুষ টাকে এর আগে আষাঢ় কখনো এমন এলোমেলো দেখেছে বলে মনে হচ্ছে না। আচ্ছা অফিস কি কাজের চাপ বেশি?
আষাঢ় নিজ মনে কথা গুলো আওড়ালো।
কেনাকাটা শেষ করতে করতে রাত আটটার বেশি সময় বেজে গেলো।সবাই এক্কেবারে ডিনার করে তবেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো। তখন ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে ন’টা ছুঁই ছুঁই করছে।রোজকার ন্যায় আজো আর্শিয়ান আষাঢ় কে সবার সাথে যেতে দিলো না। আজ একটা বাইক নয় দুই টা বাইক।সাঈদ সাইফ এর বাইক নিয়ে এসছে। সাইফ কে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে গাড়িতে করে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। সাঈদ আর আয়াত এক সাথে যাবে শুনে আষাঢ় কিছু টা অস্বস্তি অনুভব করলো।তবে সাঈদ যেন আরো একধাপ এগিয়ে।আষাঢ় কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
-“বড়ো আপা।
আমি কিন্তু সব জানি।আয়াত কিছু ব,,,
-“আপনি একটু চুপ থাকতে পারেন না।
আষাঢ় আমি কিছু বলি নি।”
সাঈদ এর পুরো কথা শেষ করার আগেই আয়াত সাঈদ কে থামিয়ে দিলো।চোখ কটমট করে তাকিয়ে বলে।তবে লাস্ট কথা টা আষাঢ় কে বললো।আষাঢ় চারদিকে চোখ বোলালো।না আর্শিয়ান ভাই নেই।থাকলে কি হতো?নিশ্চয়ই চোখ ছোট ছোট করে আষাঢ়’র দিকে তাকিয়ে থাকতো।আর পরে সুযোগ পেলে জিগ্যেস করতো, আষাঢ় মাস তুমি আমায় আগে থেকে ভালোবাসতে? আষাঢ় তখন কি জবাব দিতো?নিশ্চয়ই লজ্জায় নুইয়ে যেতো।আর আর্শিয়ান ভাই নিশ্চয়ই এটা নিয়ে বারবার লজ্জা দিতো।
আর্শিয়ান একটু পর ফিরে এলো হাতে একটা বেলি ফুলের মালা।
এসেই সেটা আষাঢ়’র হাতে পড়িয়ে দিলো।আয়াত তাকিয়ে রইলো সেদিকে।বোন পারফেক্ট একটা মানুষ চুজ করেছে জীবনে। এখন ভাগ্য সহায় হলে হয়।
দুই টা বাইক।মেইন রোড ছেড়ে তালুকদার বাড়ির রাস্তা ধরেছে। আষাঢ় রাতের পরিবেশ না রাস্তায় কৃত্রিম আলোর মাঝে আবছা আবছা দেখতে আর্শিয়ান ভাই কে বাইকের মিররে দেখছে। পুরুষ টা গায়ের রং তামাটে বর্ণের হলেও খুব সহজে যে কারোর চোখ পড়ার মতো একজন পুরুষ।বলিষ্ঠ পেটানো শরীর টা খুব সহজে মানুষের নজর কারে।আষাঢ় মাঝেমাঝে ভাবে আচ্ছা আদৌও কি এই সুপুরুষ, সুদর্শন পুরুষ যেটাই হোক তার পাশে কি আষাঢ়’র মতো পুঁচকে এই মেয়ে কে মানাবে?
আষাঢ়’র ভাবনার মাঝেই আর্শিয়ান বাইক থামালো।সেদিন এর সেই দোকান গুলোর পাশে। আষাঢ় চমকালো।সাঈদও থামিয়েছে।আষাঢ়’র তবুও ভীত চোখে আশেপাশে তাকালো। সেদিন এর ছেলে গুলোর চাহনি মোটেও ভালো ছিলো না।একই পাড়ায় বসবাস হলেও ছেলে গুলো কে কখনো সেভাবে দেখা হয় নি।কিন্তু আজ অনেক দিন হয় ছেলে গুলো কে কলেজ থেকে ফিরার পথেও দেখে না।
তাই বাইক থেকে নেমে কৌতূহলবশে আর্শিয়ান কে জিগ্যেস,
-“আর্শিয়ান ভাই ছেলে গুলো কে অনেক দিন ধরে দেখি না।”
-“ওদের দেখতে না পেয়ে কি তোর কষ্ট হচ্ছে?”
আর্শিয়ান গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন করলো।
আষাঢ় থমথম খেলো।কি জবাব দিবে এই প্রশ্নের? মানুষ টা জীবনে একটা কথা সোজা করে বললো না।সব সময় ত্যাড়ামি।আষাঢ় চুপ করে রইলো।পাশ থেকে সাঈদ দুই প্লেট ভেলপুরি নিয়ে এলো।একটা আয়াত এর হাতে দিয়ে আরেকটা আষাঢ়’র হাতে দিয়ে আর্শিয়ান এর দিকে তাকিয়ে দেখলো।কি ভয়ংকর এক চিলতে হাসি পুরুষ টার মুখে। সাঈদ মুচকি হেঁসে আষাঢ় কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
-“ওদের জায়গায় রাস্তা নয়।ওদের যেখানে থাকার কথা সেখানেই আছে।
তুমি চিন্তা করো না সুইটি।”
সাঈদ লাস্ট কথা টা বলার পর আর্শিয়ান এর দিকে তাকিয়ে আস্তে করে একটা ফাঁকা ঢুক গিলে আমতা আমতা করে বললো,
-“আমার, আমার বোন তো। মিষ্টি একটা বোন এভাবে তাকাস কেন শ্লা!”
পরের কথা টা বিড়বিড় করে বলে বাইকের দিকে চলে গেলো।
আষাঢ় কিছু বুঝতে পারছে না। সাঈদ ভাই কি বলে গেলো?আষাঢ় একটা পুরিও মুখে তুলতে পারলো না। এদিকে আয়াত এর কোনো হেলদোল নেই।সে একমনে খেয়ে যাচ্ছে।
——
আকরাম তালুকদার সবাই কে নিজের কক্ষে ডেকে পাঠিয়েছেন। মানুষ টা চতুর। ছেলেও ঠিক ওনার মতোই হয়েছে। ওনি ধীরেসুস্থে ঠান্ডা মাথায় কাজ কিছু দিন ধরে তিনি একটা বিষয় নোটিশ করছেন।সব বড়ো মানুষ এর ভীড়ে তাসরিফ কেও ডেকেছে। তাসরিফ ভয়ে গুটিশুটি মেরে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে।আকরাম তালুকদার তোফায়েল তালুকদার এর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বললো,
-“আগে পুরো টা শুনবি।তারপর কথা বলবি।আর বাকিরা তোমাদেরও বলে দিচ্ছি। এই ঘরে আজ এই মূহুর্তে যা কথা হবে। তা যেনো আর কেউ জানতে না পারে।”
তোফায়েল তালুকদার বড়ো ভাইয়ের এমন কথায় অবাক হলো বটে সাথে কিছু টা কৌতূহল। এমন কি বলবে ভাইজান যে আগে আগে তাকে সাবধান করে দিলো?
-“আগামী তিন মাস।
এই তিন মাস।তুমি নিজেকে গড়বে।আমার মেয়ের জন্য।তোমার যা আয় এতে করে নিশ্চয়ই বউ পালার মতো অবস্থায় নেই।যদি বলো সাঈদ তো চাকরি করে না।বিদেশ থেকে হায়ার এডুকেশনের পাঠ চুকিয়েছে। নিজের বাবার বিজনেস দেখভাল করে।তবে আমি বলবো তোমার পরিবারের বিজনেস রয়েছে।কিন্তু তোমার তো এখন সেই সুযোগ নেই।তাই যা করার তুমি নিজ থেকে করতে হবে।”
সবাই কমবেশি অবাক হয়েছে। তবে আকরাম তালুকদার এর কড়া নির্দেশনায় কেউ টুঁশব্দ করার সাহসও পেলো না। তাসরিফ মাথা নিচু করেই এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলো।কিন্তু এবার চোখ তুলে তাকালো বড়ো আব্বুর দিকে।বেশ সাহসিকতা আর আত্মবিশ্বাসের সাথে জানালো,
-“গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট আমার।
ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুত আমি আমার প্রতিভা দিয়ে চাকরি পেয়ে যাবো।আমি নিজে কে যোগ্য করে তবেই তোমার সামনে আসবো।আর তুমিও তৈরি থাকো।মেয়ে বিদায় দেওয়ার জন্য।”
—–
-“আর্শিয়ান ভাই?”
আষাঢ় মূদু স্বরে ডাকলো।আর্শিয়ান কফির মগে ঠোঁট ছোঁয়াল। ল্যাপটপের স্ক্রিনে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেই শান্ত কণ্ঠে উত্তর দিলো,
-“বল!”
-“আপনি কিছু করেছেন!”
আষাঢ়’র প্রশ্নে আর্শিয়ান স্বাভাবিক ভাবে জিগ্যেস করলো,
-“কি করেছি?”
-“আমি তাসরিফ ভাইয়ার কাছে শুনেছি সব।”
আর্শিয়ান এবার নড়েচড়ে বসলো। বিড়বিড় করে তাসরিফ কে জঘন্য বিশ্রী কিছু গালি ওর জন্য বরাদ্দ করলো।অতঃপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,
-“পেটে কিছু হজম হয় না শ্লা।”
আষাঢ় শুনতে পেলো না। চারদিকে তাকিয়ে একবার দেখে নিলো লিভিং রুমে কেউ নেই। তাই আরো কিছু টা পাশ ঘেঁষে বসলো আর্শিয়ান এর।আর্শিয়ান আগের ন্যায় কণ্ঠ স্বাভাবিক রেখে জানতে চাইলো,
-“কি শুনেছিস?”
-“আপনি মেরে ওদের জেলে পাঠিয়েছেন আপনার এক পুলিশ ফ্রেন্ড এর সাহায্যে।”
আষাঢ় ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে বললো।আর্শিয়ান এবার মগ হাত থেকে সামনে সেন্টার টেবিলে রাখলো।ল্যাপটপ ঠাশ করে বন্ধ করলো।আষাঢ় চমকে উঠলো। আর্শিয়ান ঘাড় ফিরিয়ে আষাঢ়’র দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কিন্তু চাপা স্বরে বলে উঠলো,
-“বেশ করেছি।
দরকার পড়লে খুন করে ফেলবো।এই আষাঢ় মাস শুধু আমার। আমি ওকে দেখবো। খারাপ ভালো সব এঙ্গেল থেকে।অন্য কেউ নয়।আর দেখলেও খুব খারাপ হবে।”
#চলবে…..