#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_১২
#জান্নাত_সুলতানা
আষাঢ় শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।শরীর কাঁপছে আর্শিয়ান ঠাহর করতে পারছে সেটা।মেয়ে টা ভয় পেয়েছে কি?
কিছু বলছে না কেনো?
আর্শিয়ান চিন্তিত। চিন্তায় অস্থির আর্শিয়ান। নিজের অধর এক হাতের আঙ্গুল এর সাহায্যে মুছে নিলো।তরল কিছুর স্পর্শ আঙ্গুলে পেলো কি?বৃদ্ধা আঙ্গুল টা সামনে ধরতেই অল্প আলোয়ে দেখা মিললো কিছু টা লাল রক্ত টিপটিপ বৃষ্টির পানির সাথে ধুয়ে যাচ্ছে। আর্শিয়ান চমকালো।অবাক হলো বটে।কখন করলো এতো ক্ষত-বিক্ষত তার আষাঢ় মাস কে?সে তো টেরই পেলো না।মেয়ে টা ব্যাথা পেয়েছে কি?
নিশ্চয়ই পেয়েছে। ঠোঁট কেটেছে দাঁতের সংঘর্ষে।নিশ্চয়ই জ্বলছে। আর্শিয়ান ঝটপট আষাঢ়’র কাঁপতে থাকা দেহটা বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলো।অপরাধী কণ্ঠে জানালো,
-“আমি বুঝতে পারি নি।
এটা কখন করলাম!ব্যাথা দিতে চাই নি জান।”
-“ব্যাথা পাই নি আমি।”
আষাঢ় মাথা নিচু রেখেই মিনমিন করে বললো।আর্শিয়ান ওর মুখ টা দুই হাতের আঁজলে নিলো।ডান হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে নিচের ঠোঁটে লেগে থাকা অল্পস্বল্প রক্ত টা মুছে দিয়ে আগের ন্যায় কণ্ঠে বললো,
-“রক্ত এসেছে?”
-“কিচ্ছু হবে না।
ঠিক হয়ে যাবে।”
মেয়ে টা তাকালো না সামনে দাঁড়ানো তামাটে বর্ণের পুরুষ টার দিকে। চোখ বন্ধ করে রেখেই জানালো।
আর্শিয়ান দেখলো ওকে।হঠাৎ বাঁকা হেঁসে বলে উঠলো,
-“এটা ট্রেলার।
পিকচার এরচেয়েও বেশি ভয়ানক হবে আষাঢ় মাস।বি রেডি।”
আর্শিয়ান এর কণ্ঠে কি ছিলো আষাঢ় জানে না। তবে মানুষ টা ভয়ংকর তারচেয়েও ভয়ংকর হবে মানুষ টার ভালোবাসাময় স্পর্শ গুলো আষাঢ় সেটা কিছু টা হলেও আজ আন্দাজ করতে সক্ষম হয়েছে।
——
রাতে আষাঢ় ঠোঁটে মলম লাগিয়েছিলো।সে-ই জন্য কাটা জায়গায় অনেক টা শুঁকিয়ে গিয়েছে।কিছু টা লালচে ভাব রয়েছে এখনো।তবে কেউ দেখলে বুঝতে পারবে না কাল রাতে এই অধর জোড়ার উপর শক্ত পুরুষালী ঠোঁটের হামলার শিকার হয়েছে।আজ শুক্রবার অনেকে এখনো ঘুম থেকে ওঠে নি।শুক্রবার সবার ছুটির দিন।বেশ বেলা করে সবাই ঘুম থেকে ওঠে।
বাড়ির সব মহিলারা রান্না ঘরে।মোহনা কে তেমন বেশি কাজ করতে দেয় না কেউ।বয়স তেমন বেশি নয়।হয়তো তাসফিয়া আয়াত এর চেয়ে বছর তিন বছর এর বড়ো হবে।কিন্তু মোহনা নিজ থেকে এটাসেটা জায়েদের হাতে হাতে এগিয়ে দেয়।বারণ করলেও শোনে না।
এইযে এখনো রান্না ঘরে এ নিয়ে মাতামাতি হচ্ছে।আষাঢ় ডাইনিং থেকে শুনতে পাচ্ছে সে-সব।এখনো নাস্তার টেবিলে তেমন কেউ আসে নি।আষাঢ়, তায়েফ তায়ুশ, নাসির,আর তাসরিফ আয়াত বসে আছে। বিশাল বড়ো এই ডাইনিং টেবিলে ছয় জোড়া চেয়ার রয়েছে।
আষাঢ়’র দাদা দাদি ছিলেন বেশ সৌখিন মানুষ।ছেলেমেয়েদের জন্য বাড়ি যেমন বিশাল বড়ো করে তৈরী করেছেন তেমন সেটার ভেতর আসবাপত্র দিয়েও দিগুণ সুন্দর করে সাজিয়ে তুলেছেন।বাড়ির প্রতিটা জিনিসপত্রে কেমন একটা জমিদার জমিদার ভাব রয়েছে।
আষাঢ় এর ভালো লাগে এসব।যদিও বাড়ি কয়েকবছর পরপরই রং করা হয় সাথে সব ফার্নিচারও পরিবর্তন করা হয়।তবে কিছু জিনিস সেই শব্দ তালুকদারের হাতের রয়ে গিয়েছে।
আষাঢ় খাবার শেষ করে সোফায় বসলো তায়েফ তায়ুশ এর সাথে। ওরা কার্টুন দেখছে আষাঢ়ও ওদের সাথে দেখতে লাগলো।এরমধ্যে খাবার টেবিলে বসে নাস্তা করতে থাকা আর্শিয়ান এর দিকেও আঁড়চোখে তাকাচ্ছে।
আর্শিয়ান অবশ্য একবারও তাকায় নি।এদিকে যাওয়ার সময় একবার তাকিয়ে ছিলো তাও সেকেন্ড সময় এর জন্য। এতেই আষাঢ় এর হুঁশ হারায়। মানুষ টার চাহনি আষাঢ় একদম নিতে পারে না। কেমন নেশা ধরে যায়।
আষাঢ় আনমনা হয়ে বসে ছিলো।হঠাৎ থাপ্পড় এর আওয়াজ কানে আসতে চমকে উঠলো। আশেপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো আওয়াজ কোথা থেকে এসছে।আর বুঝতে সক্ষম ও হলো।আয়াত গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে শিউলি বেগম চোখ রাঙিয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই হয়তো অবাক হয়েছে। তাই কিছু বলতে পারছে না। আষাঢ় নিজেও অবাক মা কেনো আপা কে মেরেছে বুঝতে পারলো না। তায়েফ তায়ুশ ভয়ে একদম চুপ করে আষাঢ় এর পাশ ঘেঁষে বসে আছে।
হঠাৎ আষাঢ়’র বাবা-র আলতাফ তালুকদার অবাক কণ্ঠে ওনার স্ত্রী কে ডেকে ওঠে বললো,
-“শিউলি।
কি করছো তুমি মাথা ঠিক আছে তোমার?”
-“বেশ করেছি।
এই থাপ্পড় টা আরো আগে দিলে আজ এতোটা বাড় বাড়তে পারতো না।
শুধু আপনার জন্য আজ মেয়ের এই অবস্থা হয়েছে।”
শিউলি বেগম রাগী কণ্ঠে আয়াত এর দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলে উঠলো। সাঈদ অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে।হাত দু’টো মুঠোবন্দি করে।হয়তো সাধ্য থাকলে আজ নিজের প্রেয়সী কে নিজের বাহুডোর আগলে রাখতো।কিন্তু সেই অধিকার এখনো হয় নি যে।আর মা বাবা সন্তান কে শাসন করতেই পারে।এখানে কারোর কিছু বলার অধিকার নেই।
-“শিউলি আমি মরে যা-ই নি।
আমার মনে হয় তোমার মাথা ঠান্ডা করা বেশি প্রয়োজন।”
-“ভাইজান,,,
আকরাম তালুকদার হাতের ইশারায় থামিয়ে দিলো শিউলি বেগম কে।
জিগ্যেস করলো,
-“বড়ো ভাই মানো তো আমায়?তাহলে আশা করছি আমার উপর ভরসা রাখবে।”
-“আমি এখানে কারোর মতামত চাইবো না।
শুধু সাঈদ চাইলে অবশ্যই আমাদের মেয়ে কে আমরা ওর হাতে তুলে দেবো।”
পরপরই আকরাম তালুকদার কথা গুলো বললো।
সাঈদ মায়ের দিকে তাকালো। নাসিমা বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে। তিনি কস্মিনকালেও ভাবতে পারে নি ছেলে কাউ কে ভালোবাসে।তবে কিছু টা অনুমান করেছিল হয়তো তাসফিয়ার সাথে কিছু আছে। সেই অনুমান মোতাবেক তিনি এগিয়ে ছিলো।তবে এখন নিজে কে কেমন হাসির পাত্রী মনে হচ্ছে।ছেলের ভালোর জন্য তিনি সেসব গিলে নিলেন।মাথা নাড়িয়ে সায় জানাতেই সাঈদ সবার অগোচরে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলো।অতঃপর নিজের মতামত জানালো,
-“আমি রাজি মামা।”
সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে।
তাসরিফ তাসফিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।মেয়ে টা খুশি হয়েছে। তাসরিফ নিজেও তাসফিয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলো।আষাঢ় বোনের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়াত চোখে জল মুখে লজ্জা নিয়ে মাথা নিচু করে ধীরেধীরে হেঁটে উপরে নিজের রুমের উদ্দেশ্যে চলে গেলো।আষাঢ় তখন আর্শিয়ান এর দিকে তাকালো।মানুষ টা কেমন করে এতো বড়ো অসম্ভব একটা বিষয় কে সম্ভব করে নিলো।
——–
আয়াত কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে সাঈদ। আয়াত হয়তো কান্না করছে। শরীর একটু পরপরই কেঁপে উঠতে দেখে আষাঢ়’র তাই মনে হলো।আষাঢ় দরজা থেকে সরে এলো।দু’জন ভালোবাসার মানুষ একে-অপরকে পাওয়ার স্বপ্ন পূর্ণ হতে যাচ্ছে। সেই মানুষ দু’টোর কাছে এরচেয়ে বেশি আনন্দ আর কি হতে পারে!
আষাঢ় আর্শিয়ান এর রুমের সামনে এসে একবার উঁকি দিলো রুমের ভেতর। নাহ কেউ নেই। আষাঢ় মাথা উঁচু করে পেছনে ঘুরে দাঁড়াতেই কারোর শক্তপোক্ত চওড়া বুকের সাথে মাথা ধাক্কা লাগলো। আষাঢ় চোখ বন্ধ করে ভ্রু কুঁচকে নিলো।তবে চিরপরিচিত গন্ধ পেতেই চোখ তুলে তাকিয়ে লজ্জায় চোখ আবার নিচু করে নিলো।আর্শিয়ান তাকিয়ে আছে আষাঢ়’র দিকে।মেয়ে টাকে দেখলে ইদানীং নিজে কে কন্ট্রোল করা দায় হয়ে যাচ্ছে।
নাদুসনুদুস এই সুন্দরী সপ্তদশী কন্যা আষাঢ় কে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে নিজের সম্পূর্ণ ভালোবাসা উজাড় করে ভালোবাসতে মন চায়।
কিন্তু এমন টা তো সম্ভব নয়।আর্শিয়ান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে ঘরে চলে গেলো।
আষাঢ় ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইলো। এভাবে চলে গেলো কেনো মানুষ টা?
বুঝতে পারে না আষাঢ়। আষাঢ় কিছু বলবে তার আগেই আর্শিয়ান দরজা বন্ধ করতে করতে বললো,
-“সামনে আসবি না।
আমার ভয়ংকর কিছু করতে মন চায় তোকে সামনে দেখলে, যা সহ্য করার ক্ষমতা তোর এখনো হয় নি।”
#চলবে….