আমার প্রেয়সী পর্ব-১১

0
119

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_১১
#জান্নাত_সুলতানা

-“তুমি কিছু বলবে সাঈদ?”

আকরাম তালুকদার রুমে বসে ছিলো।খাবার শেষ আজ তিনি একটু দ্রুত রুমে চলে এসছে। শর্মিলা বেগম এখন রুমে আসে নি। তিনি শোয়ার প্রস্তুতি নিতেই দরজায় কেউ নক করে। ভেতরে আসার অনুমতি দিলে সাঈদ ভেতরে প্রবেশ করলো।
সাঈদ কিছু টা নার্ভাস। সেটা আকরাম তালুকদার দেখা মাত্র আন্দাজ করতে পেরেছিলো।সেইজন্য তিনি না শুয়ে বিছানা ছেড়ে ওঠে এগিয়ে আসতে আসতে উপরোক্ত প্রশ্ন টা সাঈদ কে করলো।
সাঈদ দৃষ্টি এলোমেলো ঘুরালো। বড় মামা কে সে বেশ সম্মান করে শ্রদ্ধা করে। ওনার সামনে প্রেম ভালোবাসার কথা বলতে ইতস্তত বোধ করাটা স্বাভাবিক। তবুও আজ কিছু করার নেই। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। আজ যদিও আট সেকেন্ড এর তিন টা শব্দ না বলতে পারে তাহলে আগামী আশি বছর আফসোস নিয়ে বয়ে বেড়াতে হবে। তাই সাহস করে বলেই ফেললো,

-“আমি আয়াতকে ভালোবাসি।”

আকরাম তালুকদার অবাক হলো।তবে মুখের আদল গম্ভীর করে রাখলেন।এমন কিছু তিনি আশা করে নি।তবে কিছু একটা গন্ডগোল আছে সেটা বুঝতে পারছিলো।তবে এখন বিষয় টা ভাবার প্রয়োজন।কিন্তু তার আগে আরো একটা কথা জানা জরুরি। তাই তিনি গম্ভীর স্বরে জিগ্যেস করলো,

-“আয়াত?”

-“হ্যাঁ।”

সাঈদ এতো সময় লজ্জায় অস্বস্তিে মাথা নিচু করে ছিলো।তবে বড় মামার প্রশ্নে মাথা তুলে আকরাম তালুকদার এর দিকে তাকিয়ে অকপট জবাব দিয়ে দিলো।
আকরাম তালুকদার এবার কুঁচকানো ভ্রু জোড়া আগের স্থানে ফিরে এলো।শান্ত কণ্ঠে জানতে চাইলো,

-“মাকে বলেছো?”

-“আমি বুঝতে পারি নি মা এমন কিছু করবে। তাই এখন মায়ের কাছে কথা টা বলার আগে আমার মনে হলো তোমাকে জানানো প্রয়োজন।”

আকরাম তালুকদার গভীর চিন্তায় মগ্ন হলেন।সত্যি বিষয় টা একটু ঘেঁটে গেলো।তবে কোনো ব্যাপার না যেহেতু পরিবারে মধ্যে রয়েছে বিষয় টা তাই তেমন কোনো ঝামেলা হবে না তাই ভাবলো ব্যাপার টা দ্রুত মিটিয়ে নিবে।
সাঈদ কে এব্যাপারে কিছু জানালো না।শুধু বললো কাল এসব নিয়ে কথা বলবে।সাঈদ মাথা নাড়ে।সাঈদ রুম থেকে বেরিয়ে যেনো আঁটকে রাখা নিঃশ্বাস টা ছাড়লো।বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিলো নাসির তাসরিফ তাসফিয়া।সাঈদ বেরিয়ে আসতেই নাসির ওর হাত টেনে ধরে দোতলায় করিডরে নিয়ে গেলো।চিন্তিত স্বর কৌতুহল নিয়ে জানতে চাইলো,

-“বড় মামা কি বললো?”

-“তোমার ভাই তো।
তাই কিছু বলে নি।”

সাঈদ বললো।নাসির সাঈদ এর থেকে দূরে দাঁড়ালো। গায়ের গেঞ্জি টেনেটুনে ঠিক করে বলে উঠলো,

-“খবরদার সাঈদ আমি মোটেও বড় ভাইজান এর মতো নয়।আমি কোনো কাজ ঝুলিয়ে রাখি না।”

নাসির এর ভাবসাব দেখে তাসরিফ বিরক্ত হলো।টেনশনে বেচারার মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়। হওয়ার জোগাড় কি অলরেডি সে অর্ধেক পাগল হয়ে গিয়েছে। তাই নাসির এর কথায় পাত্তা না দিয়ে সাঈদ কে অস্থির কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,

-“সত্যি কিচ্ছু না?”

-“বলেছে কাল এসব নিয়ে কথা হবে।”

সাঈদ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে জানালো।তাসফিয়া হতাশার শ্বাস ছাড়ে। সাঈদ চলে গেলো।নাসির নিজেও গেলো।বউ তার জন্য নিশ্চয়ই অপেক্ষা করছে।বউ কে দেখার জন্য মন টা বড্ড অস্থির অস্থির করছে। তাই দ্রুত রুমের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো।
তাসফিয়া হেলেদুলে রুমের দিকে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই তাসরিফ ওকে আগলে দাঁড়ালো।
তাসফিয়া ভ্রু কুঁচকে তাকালো তাসরিফ এর দিকে। তাসরিফ নিজের বা গালে হাতের আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে আবদার স্বরে বলে উঠলো,

-“প্লিজ একটা।
ঘুম আসে নি কাল রাতে।আজ একটা দিয়ে দাও জান।”

তাসফিয়া লজ্জায় কান গরম হয়ে আসে। মাথা নিচু করে নিলো।তাদের প্রেম টা কখন হয়েছিলো তাসফিয়ার জানা নেই। তবে তাসরিফ এর দিকে কখনো সেভাবে তাকায় নি।
সব সময় আর্শিয়ান এর মতো তাসরিফ কেও ভেবে এসছে।কিন্তু কথায় আছে না। মেয়েরা ঠিক বুঝতে পারে কোন ছেলে তার দিয়ে কি নজরে তাকায়।তেমন ধীরে ধীরে তাসফিয়া বুঝতে পারে তাসরিফ ভাই মোটেও ওর দিকে বোনের নজরে তাকায় না।যেমন টা আয়াত আষার এর দিকে তাকায়।

-“একটা প্লিজ।”

তাসফিয়া চমকে উঠলো।গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এসে তাসরিফ এর বা পাশে দাঁড়ালো।কিছু টা উঁচু হয়ে অধর ছুঁয়ে দিলো তাসরিফ এর ফর্সা চাপদাড়ি ভর্তি গালে।তাসরিফ চোখ বন্ধ করে স্পর্শ টা অনুভব করলো।তবে চোখ খুলে আর তাসফিয়ার দেখা পেলো না। এদিকওদিক খুঁজেও দেখা মিলে না।মুচকি হেঁসে এক হাতে মাথার পেছনে চুল খামচে ধরে কিছু টা দূরে তাকাতেই চক্ষু বেরিয়ে আসার মতো অবস্থা হলো।তায়েফ ওর নিজের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বেচারা ড্যাব ড্যাব করে যে চশমার ভেতর দিয়ে তাসরিফ এর দিকে তাকিয়ে আছে বুঝতে একটু অসুবিধা হলো না।তায়েফ কিছু বলবে তার আগেই তাসরিফ ইশারা করে বললো বলে গেলো কাল চকলেট দিবে।কিন্তু তায়েফ তখনো ঘোরে আছে।

—–

-“আর্শিয়ান ভাই?”

আষাঢ় মৃদু স্বরে ডাকলো।আর্শিয়ান আষাঢ় ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে।আর্শিয়ান রেলিঙের উপর বসালো আষাঢ় কে।আষাঢ় ভয় পেলো না। আর্শিয়ান এর গলা জড়িয়ে ধরলো। আর্শিয়ান আষাঢ়’র গালে এক হাত রাখলো।নিজেও মৃদু স্বরে জবাব দিলো,

-“হ্যাঁ বল।”

-“আপনি এতো সুন্দর কেনো?”

আর্শিয়ান ভ্যাবাচেকা খেলো।কি বলে এই পুঁচকে মেয়ে।ওর তুলনায় আর্শিয়ান ভাই তো একদম কালো।কিন্তু তার ব্যক্তিত্ব যেকোনো নারী কে ঘায়েল করতে সক্ষম। বডি ফিটনেস, চুলের স্টাইল, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি,অল্পস্বল্প গোলাপি রঙের অধর।আষাঢ় মাঝেমাঝে ভাবে ও এতো ফর্সা হয়েও বোধহয় ঠোঁট গুলো আর্শিয়ান ভাইয়ের মতো এতো সুন্দর নয়।কালো মানুষ সুন্দর তাদের আলাদা একটা সৌন্দর্য থাকে।আষাঢ় হয়তো আর্শিয়ান ভাই কে না দেখলে বিশ্বাস করতো না।
আর্শিয়ান ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো,

-“তোকে কে বললো আমি সুন্দর?”

-“হ্যাঁ আপনি সুন্দর।
আমার চোখে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সৌন্দর্যের অধিকারী পুরুষদের মাঝে আপনি একজন আর্শিয়ান ভাই।”

আষাঢ় মুগ্ধতা নিয়ে বললো।
আর্শিয়ান আষাঢ়’র বাতাসে উড়তে থাকা এলোমেলো চুল গুলো ঠিক করে দিতে দিতে মোলায়েম কণ্ঠে জানালো,

-“তোমার ভালোবাসার মানুষ তোমার চোখে বিশ্বের সেরা সুন্দর।এটা বাস্তব।”

রাত প্রায় সাড়ে বারো টা বাজে।বাড়িতে হয়তো সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।আকাশে অল্পস্বল্প বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে সেই সাথে পূর্ব দিক থেকে বাতাস বইছে। আকাশ একদম ঘুটঘুট অন্ধকার। এতোক্ষণ তো ভালোই ছিলো।চাঁদ ছিলো।মেঘ গুলো হয়তো কিছু সময় ব্যবধানে আসমান হতে জমিনের মাটিতে বৃষ্টি হয়ে গড়িয়ে পরবে।আর্শিয়ান অন্ধকার আকাশ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আষাঢ়’র দিকে তাকালো। আষাঢ়’র কোমড়ে দুই হাত রেখে রেলিঙের উপর থেকে নামাতে নামাতে সন্দিহান কণ্ঠে বললো,

-“বৃষ্টি আসবে হয়তো।
চল রুমে যা।”

-“না।”

আর্শিয়ান ঘুরে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে আষাঢ়’র কণ্ঠ শোনে অবাক হলো।
ভ্রু উঁচিয়ে পেছন ফিরে আষাঢ়’র হাত ছেড়ে জিগ্যেস করলো,

-“কি?”

-“বৃষ্টিতে ভিজবো আর্শিয়ান ভাই।”

আষাঢ় আহ্লাদী স্বরে বললো।
আর্শিয়ান তড়িৎ আবদার নাকচ করে দিয়ে সাবধানের সহিতে জানালো,

-“নো, নেভার।
আগের বার মনে নেই বৃষ্টিতে ভিজে পনেরো দিন জ্বর ছিলো।”

-“তখন আপনি ছিলেন না।এখন তো আপনি আছেন।”

-“আষাঢ় একদম,,,

আষাঢ় শুনলো না। আর্শিয়ান কে টেনে নিয়ে ছাঁদের ঠিক মাঝে গিয়ে দাঁড়ালো। আর্শিয়ান চেয়েছে বলেই আষাঢ় টেনে নিতে সক্ষম হয়েছে নয়তো আষাঢ়’র মতো মেয়ে আর্শিয়ান কে ধাক্কা মেরেও নড়াতেও পারবে না।
বৃষ্টির ছোট ছোট ফোঁটা পড়তে শুরু করেছে। ছাঁদের দরজায় একটা লাইট আছে সেটার অল্পস্বল্প আলো এসে ছাঁদে পড়ছে।যার ফলস্বরূপ পরিবেশ টা দারুণ এক সুন্দর দেখাচ্ছে। আষাঢ় একটা লেমন কালার থ্রি-পিস পড়ে আছে। ওড়না টা পাতলা জর্জেট কাপড়ের। গলায় দেওয়া। আর্শিয়ান আষাঢ় এর দিকে এক ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।এতো বছর চেপে রাখা অনুভূতি গুলো বেরিয়ে এসে ভয়ংকর কিছু ঘটাতে চাইছে।যেগুলো আর্শিয়ান এর জন্য নিষিদ্ধ। কিন্তু কথায় আছে না নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি ঝোঁক মানুষ জাতির সবসময়ই বেশি। ঠিক সেটাই হলো আর্শিয়ান এর সাথে মন শুনলই না তার বারণ।মস্তিষ্ক বাঁধা দিলেও মন শুনলো না।ধীরগতিতে কদম ফেলে আষাঢ়’র দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।আষাঢ় বৃষ্টি ভিজতে ব্যস্ত। যদিও বৃষ্টি তেমন ভাবে পড়ছে না। তবে এই অল্প বৃষ্টিতেই আষাঢ়’র শরীরে জামাকাপড় পুরোপুরি ভিজে গিয়েছে।আর্শিয়ান জানে তার আষাঢ়’র মাসের দিকে এভাবে তাকানো ঠিক না।তাদের মনের মিলন হলেও এখনো যে একে-অপরের জন্য হালাল নয়।কিন্তু নিজের মন কে আর্শিয়ান কিছুতেই বোঝাতে পারছে না।একটু হলেও এখন তার আষাঢ় কে চাই।একটু বেশি না।
আর্শিয়ান নিজের বা হাত এগিয়ে আষাঢ়’র কোমড়ে রাখলো।আষাঢ় কিছু টা চমকে ওঠে ফিরে তাকাতেই আর্শিয়ান কে নিবুনিবু চোখে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে শরীরের শিরদাঁড়া দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলো।বুঝতে সময় লাগলো না আর্শিয়ান ভাই ঘোরে আছে। আর এই ঘোরে থেকেই হয়তো ওনি কোনো ভুল করে বসবে।আষাঢ়’র ভাবনা সত্যি হলো।
আর্শিয়ান চট করে নিজের মুখ এগিয়ে আনলো।মাথার পেছনে নিজের দানবীয় হাতের সাহায্যে আষাঢ়’র চুল সহ ঘাড় শক্ত করে ধরে বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে আষাঢ়’র ঠোঁটে স্লাইড করতে করতে এগিয়ে আনলো আষাঢ়’র মুখ।নিজের মুখ টা নিচু করে ফিসফিস করে বলে উঠলো,

-“এটা ভুল, পাপ আমি জানি। কিন্তু এই ভুল আর পাপ টা আমি আজ করতে চাই আষাঢ় মাস।প্লিজ তুই অভিমান করিস না সোনা।”

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে