আমার প্রেয়সী পর্ব-১০

0
117

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_১০
#জান্নাত_সুলতানা

আর্শিয়ান এর কথা মতো আষাঢ় আয়াত এর সাথে রেডি হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো।পড়নে আর্শিয়ান এর দেওয়া সাদা পাকিস্তানি থ্রি-পিস।
এখন বাজে সকাল দশ-টা। বাড়িতে মহিলারা ব্যতিত আর কেউ নেই।সকাল সকাল সাঈদ, তাসরিফ তাসফিয়া বেরিয়ে গিয়েছে। নাসির তালুকদার এখন বাড়ি ফিরে নি।আষাঢ় শুনেছে আজ বিকেলে না-কি চলে আসবে।দুই বোন একটা রিকশা ঠিক করে সেটায় চড়ে বসলো।আয়াত বারকয়েক আষাঢ় জিগ্যেস করলো কোথায় যাচ্ছে তারা।কিন্তু আয়াত বারবার শুধু একই জবাব দেয় গেলই দেখতে পারবি।রাতে আর্শিয়ান ভাইও বললো না। কি অদ্ভুত। সবাই এতো রহস্যময় কেনো আষাঢ়’র এই ছোট মাথায় বুঝে আসে না।

একটা শপিংমল এর সামনে রিকসাওয়ালা রিকসা থামালো।আয়াত নেমে ভাড়া মিটিয়ে আষাঢ় এর হাত ধরে ভেতরে প্রবেশ করলো। সোজা লিফটে করে চারতলায় গিয়ে নামলো।সেখানে একটা রেস্টুরেন্ট রয়েছে।তালুকদার বাড়ির প্রায় সবাই এটাতে আসে। ভেতরে প্রবেশ করে আষাঢ় থমকালো।অবাক হলো।সব-কয়টা পরিচিত মুখ।
সবাই এখানে কেনো এসেছে কিছুই বুঝতে পারছে না।নাসির, মোহনায় সবাই এখানে। কিন্তু কেনো?
ওরা গিয়ে গিয়ে একটা টেবিলে বসলো।
আষাঢ় চারদিকে দৃষ্টি বোলালো।আর্শিয়ান ভাই কোথায়? সবাই কে তো মানুষ টা এক সাথে হতে বলেছে এখন মানুষ টা নিজেই উধাও।
সবাই চিন্তিত। মুখে কারোর কোনো কথা নেই।
তাসরিফ উশখুশ করছে।আয়াত নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে আছে। পাশে তাসফিয়া বারবার চোখ ছোট ছোট করে তাকাচ্ছে তাসরিফ এর দিকে।সাঈদ নাসির তালুকদার এর সাথে কথা বলছে।
মোহনা হয়তো কিছু বুঝতে পারছে না সবাই এখানে কেনো এভাবে বসে আছে।তাই আষাঢ় কে নিচু স্বরে জিগ্যেস করলো,

-“আষাঢ় বাড়িতে কিছু হয়েছে?”

-“নাহ ছোট মা।
সাঈদ ভাইয়ার সাথে তাসফিয়া আপুর বিয়ের কথা বলেছে ছোট মনি এটুকুই।”

মোহনা হয়তো আরো কিছু জিগ্যেস করতো।কিন্তু তার সুযোগ আর পেলো না।
তার আগেই আর্শিয়ান এলো।এসেই আষাঢ় এর পাশে বসলো।এক পাশে মোহনা অন্য পাশে আর্শিয়ান। আষাঢ় মাঝে।অপর পাশে সাঈদ নাসির তাসরিফ। আর দুই পাশে আয়াত তাসফিয়া।
আর্শিয়ান এসেই আগে ওয়েটার ডাকলো।সাঈদ ক্ষেপে উঠলো।
দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে উঠলো,

-“শ্লা।তোর মনে হয় আমরা এখানে গিলতে এসছি?আমি টেনশনে কাল সারা রাত ঘুমুতে পারি নি।প্লিজ ভাই কিছু একটা কর।”

আর্শিয়ান সাঈদ এর কথায় পাত্তা দেয় না। ওয়েটারের কাছে অর্ডার দিয়ে তারপর তাকালো সাঈদ এর দিকে।
কালো শার্ট টার হাতা গুটিয়ে কনুইয়ের উপর রেখে বললো,

-“তো বল না সেটা তোর মাকে।”

সাঈদ আয়াত এর দিকে তাকালো। আয়াত চুপচাপ বসে আছে। এই মিটিং টা বাড়িতে করা যেতো।কিন্তু বাড়িতে এতোগুলা মানুষ এক সাথে বসে এসব আলোচনা করতে গেলে এটা নিয়ে নিশ্চয়ই কারোর না কারোর নজরে পড়ে যেতো।সাঈদ তাসরিফ এর দিকে তাকালো চোখ কটমট করে দাঁতে দাঁত পিষে বলে উঠলো,

-“এই তুই কিছু বলছিস না কেনো?
মনে হচ্ছে বিপদ শুধু আমার।বেশি ভাব নিবি তো তোর টা কেই বিয়ে করে নেবো,,,

সাঈদ এর সম্পূর্ণ কথা শেষ হওয়ার আগেই তাসরিফ অসহায় কণ্ঠ অথচ কিছু টা জোরেই বলে উঠলো,

-“সাঈদ ভাই।খুব খারাপ হবে।ভালো হবে না তাসফিয়ার দিকে নজর দিলে।”

তাসফিয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো।যতোই হোক বড়ো ভাইয়ের সামনে বসে আছে।যদিও আর্শিয়ান বোনের সাথে একদম ফ্রী। বোন কে সে অনেক ভালোবাসে যত্ন করে। কিন্তু তাসফিয়ার আজ তাও কেনো জানি লজ্জা অস্বস্তি সব হচ্ছে। আষাঢ় ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে তাসরিফ এর দিকে। এই মানুষ টা এমন? কখনো হাবভাবে তো এমন মনে হয় নি।কাল রাতের কিছু কথোপকথন শোনে আষাঢ়’র মাথা ঘুরে যাওয়ার জোগাড়।যদিও আষাঢ় ফোনের ওপাশের কথা শুনতে পায় নি।তবে তাসফিয়ার কথার ধরন এমন ছিলো “একদম না তাসরিফ ভাই।আমি এখন ছাঁদে কিছুতেই যেতে পারবো না।” এরপর ওপাশ হতে কি বলেছিলো আষাঢ় সেটাও শোনেনি। তবে তাসফিয়া বিচলিত কণ্ঠে বলছিল “আচ্ছা আচ্ছা দিচ্ছি।” পরপরই ফোন মুখের সামনে নিয়ে শব্দ করে চুমু খেয়েছিলো।আষাঢ় এটা ভবলেই মনে হচ্ছে তাসরিফ ভাই এমন মানুষ? সেটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।
আষাঢ় এর ভাবনার মাঝেই সাঈদ মুখ বেঁকিয়ে বললো,

-“এহ।আসছে।তাহলে বাড়িতে কিছু বলছিস না কেনো?”

তাসরিফ এতোক্ষণ শক্ত হয়ে বসে থাকলেও এবার নড়েচড়ে বসলো।সবার দিকে একপলক করে তাকালো।অতঃপর মিনমিন করে জানালো,

-“আমার বাপ জীবনে মানবে না।
বলবে নিজের চলার মতো সামর্থ্য তো হয় নি আবার এসছো আমার মেয়ে নিতে। তুমি তো জানো বাবা ওদের কত ভালোবাসে।”

-“এই চুপ কর তোরা।
কাজের কথা আসা যাক।”

আর্শিয়ান এর গম্ভীর স্বরে ধমক শুনে সবাই নড়েচড়ে উঠলো।ওয়েটার এসে এর মাঝে খাবার সার্ভ করে গেলো।সবাই কিছু সময় নীরব রইলো। মোহনা কিছু বুঝতে পারছে না। তবে এতটুকু বুঝতে পেরেছে তাসরিফ তাসফিয়া কে ভালোবাসে।কিন্তু সাঈদ কেনো বিয়ে করতে চাইছে না সেটা বুঝতে পারছে না।
আর্শিয়ান চামচ এর সাহায্যে মুখে বোরহানি তুলতে তুলতে সাঈদ কে উদ্দেশ্য করে বললো,

-“সাঈদ বাবা-র সাথে কথা বলবি আজ।
বাকি টা আমি সামলে নেবো।”

সাঈদ মুখ ভোঁতা করে নিলো।সামনের কাচ্চির প্লেট ঠেলে সরিয়ে দিয়ে টেবিলে হাত রেখে গালে হাত ঠেকিয়ে অসহায় মুখ করে বসে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,

-“হয়ে গেলো।
আমার নাওয়াখাওয়া হারাম করার জন্য এই সিচুয়েশনে টা যথেষ্ট।”

পাশ থেকে আয়াত শুনতে পেলো কথা টা।পা দিয়ে সাঈদ এর পায়ে গুঁতা মারতেই সাঈদ চমকে ওঠে সোজা হয়ে বসে গেলো।
আয়াত এর চোখের দিকে তাকিয়ে গড়গড় করে বলতে লাগলো,

-“তোর জন্য আমি সব করতে পারবো।
একদম যদি পরে উল্টো পাল্টা কিছু করেছিস তাহলে শাস্তিস্বরূপ বাসর রাতে আমি যা বলবো তা করতে হবে।”

সাঈদ এর কথায় প্রথমে সবাই মুগ্ধ হলেও লাস্ট কথায় সবাই ফিক করে হেঁসে উঠলো।আষাঢ় নিজেও হাসছে। আর্শিয়ান ওর হাত চেপে ধরতেই আষাঢ় চমকে উঠলো।
পাশে তাকাতেই দেখলো আর্শিয়ান খাবার খাচ্ছে।ভাবসাব এমন মনে হচ্ছে সে কিছু করে নি।
আষাঢ় ভ্রু কুঁচকে কিছু বলবে তার আগেই আর্শিয়ান নিচু স্বরে বলে উঠলো,

-“খাবার শেষ কর।”

আষাঢ় মাথা নিচু করে হাসলো।
মিনমিন করে বললো,

-“আমার হাত।”

আর্শিয়ান তৎক্ষনাৎ হাত ছেড়ে দিলো।
সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ বেরিয়ে এলো।অবশ্য খাওয়া আর কি।সাঈদ তাসরিফ তাসফিয়া তো খাবার মুখেই তুলে নি।টেনশন থাকলে পেটে খাবার যায় না-কি।
পার্কিং এরিয়ায় এসে সবাই গাড়িতে বসলো।আয়াত তাসফিয়া পেছনে বসলো।সাঈদ ড্রাইভিং সিটে তাসরিফ ওর পাশে। নাসির মোহনা শপিং করবে সেইজন্য তৃতীয় ফ্লোরে এসে ওরা দোকানে ঢোকে গিয়েছে।সাঈদ গাড়ি স্টার্ট করতেই আষাঢ় দৌড়ে এলো কিছু টা।আর্শিয়ান তখন ওর পেছনে। আষাঢ় গাড়ি টার দিকে তাকিয়ে আর্শিয়ান কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

-“আপনার জন্য। কতবার বললাম তাড়াতাড়ি আসার জন্য। কিন্তু আপনি? সবাই চলে গেলো।আমাদের নিলো না।”

আষাঢ় বকবক করেই যাচ্ছে। ওরা সবার পেছনে ছিলো।আর্শিয়ান তখন এক হাত আষাঢ়’র হাতের ভাঁজে নিয়ে ধীরগতিতে হাঁটছিল।সেইজন্য ওদের আসতে লেইট হয়েছে। আর্শিয়ান বারকয়েক ডাকলো আষাঢ় কে।কিন্তু আষাঢ় নিজে কথা বলেই যাচ্ছে সেইজন্য আর্শিয়ান এর ডাক শুনতে পারছে না।আর্শিয়ান এবার জোরে ডাকলো।সেই সাথে দুই হাত আষাঢ়’র কাঁধের উপর রাখলো।

-“আষাঢ়।আষাঢ়।”

আষাঢ় আর্শিয়ান এর দিকে তাকালো।ভীত চোখে তাকিয়ে রইলো। আর্শিয়ান বাইক দেখিয়ে বলে উঠলো,

-“আমরা বাইকে যাব।”

আষাঢ় বাইক এর দিকে তাকিয়ে খুশি হলো।আর্শিয়ান গিয়ে বাইক নিয়ে এলো।আষাঢ় কে পেছনে বসতে ইশারা করলো।
আষাঢ় ওঠে বসলো।সেদিন এর মতো অস্বস্তি নিয়ে নয় একরাশ ভালো লাগা নিয়ে এক হাত কাঁধে রেখে অন্য হাত আর্শিয়ান এর ঠিক বুকের বা পাশে রাখলো।আর্শিয়ান তৃপ্তির হাসি হাসলো।আষাঢ় দেখলো না।একবার দেখলে হয়তো বুঝতে পারতো মানুষ টা ওকে কতা টা ভালোবাসে।ওর একটু ছোঁয়া আশেপাশে থাকা মানুষ টাকে কতটা শান্তি দেয় সেটা হয়তো অনুভব করতে পারতো।

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে