আমার প্রেয়সী পর্ব-০৯

0
110

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_৯
#জান্নাত_সুলতানা

আর্শিয়ান বাড়ি ফিরেছে কিছু সময় আগে।এখন রাত সাড়ে ন’টা।ডাইনিং টেবিলে খাবার দিচ্ছে মহিলারা।জগে পানি আর টুকটাক যা লাগে কাজের লোক দিচ্ছে। তায়েফ তায়ুশ কে শিউলি বেগম খাবার খাইয়ে দিচ্ছে। আষাঢ় কেও ডেকেছিল। কিন্তু আষাঢ় খাবে না জানিয়েছে মা কে।এখন খাবার খেয়ে নিলে আর্শিয়ান ভাই কে যে আর আজ রাতে এক পলক দেখা হবে না। খাবার শেষ হলেই শিউলি বেগম মেয়ে কে ঠেলেঠুলে রুমে পাঠিয়ে দিবেন আষাঢ় সেটা ভালো করে জানে।তাই গাপটি মেরে আয়াত, তাসফিয়া, সাঈদ, সাইফ, তাসরিফ এর সাথে বসে রইলো।আষাঢ় এর বড়ো ফুফি আনোয়ারা বেগম গতকালই চলে গিয়েছে।ছেলে বউয়ের শরীর বিশেষ ভালো নেই।নয় মাসের ভরা পেট।বাড়িতে কেউ নেই। পুত্র বধূ বাবা-র বাড়ি রয়েছে। বাড়িতে কেউ নেই। আষাঢ়’র ফুফা অনেক আগে ভদ্র লোক ইন্তেকাল করেছেন। কোনো এক কঠিন ব্যামো ছিলো ওনার। বাড়িতে কেউ নেই তিনি একা। তাই তাসফিয়া কে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু তাসফিয়ার আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস ছিল সেজন্য যেতে পারে নি।পরে আষাঢ় কে যাওয়ার জন্য বললে আর্শিয়ান বারণ করে দিয়েছে। এতে অবশ্য যথেষ্ট কারণ রয়েছে। আনোয়ারা বেগম এর এক দেবর এর ছেলে রয়েছে বখাটে। যদিও আর্শিয়ান নিজের বোন কেও যেতে দিতো না।
আনোয়ারা বেগম আর বেশি বাড়াবাড়ি করলো না।যদি কোনো খারাপ কিছু হয় সেই ভয়ে ভাইয়ের মেয়েদের আর সাথে নিলো না।আষাঢ় অবশ্য এতে প্রাণ ফিরে পেয়েছিল।ওখানে গেলে আর্শিয়ান ভাই কে যে দেখতে পারবে না সেটা ভেবে।

-“এই বন্যা খেতে আয়।
বড়ো মা ডাকে শুনছিস না?”

হঠাৎ আয়াত এর ডাকে চমকে উঠলো আষাঢ়।কি বলে ডেকেছে টনক নড়তেই রেগে গেলো।
সাবধান করে দিয়ে বলে উঠলো,

-“খবরদার আপু তুমি আমায় ওইসব বলবে না।
আমার নাম আষাঢ়।”

-“তো ঘুরেফিরে একই তো হলো।
আষাঢ় মাস মানে তো বৃষ্টি আর বেশি বৃষ্টি মানে বন্যা।”

আয়াত সোজাসাপটা বলে দিলো।
হাফসা বেগম এবার আয়াত কে ডেকে ওঠে বললো,

-“আহ কি হচ্ছে আয়াত!আমার মেয়ে টা কে কেনো রাগাচ্ছিস শুধু শুধু?
আষাঢ় আয় তো মা এখানে বস।”

দুই টা চেয়ার ফাঁকা আছে।
আষাঢ় গিয়ে একটায় বসলো।সবাই বসে গিয়েছে বাড়ির মহিলারা বাদে।আষাঢ় জানে আর্শিয়ান ভাই এখন এখানে এসে বসবে।লোক টা এখনো আসছে না কেনো?অদ্ভুত! এতো সময় কি করে রুমে?
আষাঢ় সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে প্লেটে মায়ের থেকে ভাত নিলো।শিউলি বেগম মেয়ের গতিবিধি লক্ষ করছে বেশ কিছু দিন ধরে। মায়ের মন তো হয়তো কিছু আন্দাজ করতে পারছে।শিউলি বেগম ভাবছে যদি তিনি যা ভাবছেন তা হলে খুব খারাপ হবে।না হলে তো শুকরিয়া। কিন্তু তাও মেয়ের সাথে এই বিষয়ে কথা বলবেন বলে মনস্থির করলো।
আষাঢ় মুখে খাবার তুলতে চপল পায়ে আর্শিয়ান কিছু টা আওয়াজ করে এসেই আষাঢ় এর পাশে বসলো।গম্ভীর মুখে নিজে হাতে প্লেটে ভাত নিতে নিতে অধর জোড়া খুব সাবধানে নেড়ে আওড়াল,

-“একটা খাবার প্লেটে থাকলে খুব খারাপ হবে আষাঢ়।
আমাকে না দেখলে কিছু হবে না। কিন্তু খাবার না খেলে বিয়ের পর তোর সাথে সাথে আমারও ভীষণ ক্ষতি হবে।”

আষাঢ় মন দিয়ে শুনলো কথা গুলো। তবে আগামাথা কিছু বুঝতে পারে না।তাই চুপ করে রইলো।কিন্তু কথা হচ্ছে মানুষ টা বুঝতে পারলো কি করে আষাঢ় তাকেই দেখছিলো?
খাবার খেলো আষাঢ় একঝাঁক প্রশ্ন মাথায় নিয়ে। খাবার শেষ সবাই বসলো লিভিং রুমে। মহিলারা খেয়ে তারাও এলো।নাসিমা বেগম তখন সাঈদ এর পাশে বসে আছে। কিছু নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন তিনি।শিউলি বেগম ননদ কে এভাবে আনমনা হয়ে বসে থাকতে দেখে জিগ্যেস করলো,

-“আপা শরীর খারাপ লাগছে আপনার?”

-“না ভাবি।”

নাসিমা বেগম অল্প হাসার চেষ্টা করে জানালো।আলতাফ তালুকদার ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো,

-“তাহলে এমন দেখাচ্ছে কেনো তোমাকে?”

-“আসলে ভাইজান হয়েছে কি।
একটা কথা বলবো বলবো করে বলা হচ্ছে না। তোমাদেরও কাজের প্রেসার বেশি।”

আকরাম তালুকদার এতো সময় চুপ থাকলেও এবার কিছু টা সিরিয়াস হলেন।বোন এতো বণিতা করার মানুষ নয়।নিশ্চয়ই গভীর কিছু হবে।
তাই গম্ভীর স্বরে তিনি বলে উঠলেন,

-“এতো বণিতা করার কি আছে নাসু?
তুই কি এমন বলবি যে আমাদের বলতে দ্বিধা করছিস?”

তোফায়েল তালুকদারও বললেন,

-“হ্যাঁ হ্যাঁ আপা বলো!”

নাসিমা বেগম ছেলের দিকে তাকালো। সাঈদ বুঝতে পারছে না তার মা কি এমন বলবে?কেউই বুঝতে পারছে না কি বলবে নাসিমা বেগম। সবাই ওনার দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নাসিমা বেগম ছেলের দিক হতে দৃষ্টি সরিয়ে বড়ো ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,

-“আসলে ছেলের বয়স হয়েছে।
সব দিক চিন্তা করে মনে হচ্ছে ছেলের বিয়ে দেওয়া প্রয়োজন।”

-“হ্যাঁ, হ্যাঁ। ঠিক কথা বলছিস।
তা মেয়ে কি পছন্দ আছে?থাকলে বল আমরা দেখাদেখি করি।”

আকরাম তালুকদার সায় জানিয়ে বলে উঠলো।
নাসিমা বেগম দ্বিধা নিয়ে জানালো,

-“না ভাইজান ঘরে মেয়ে আছে। শুধু শুধু কেনো দূর থেকে কাউ কে আনবো।আমার আপনই আমার কাছে আসুক।আমি তাসফিয়া কে সাঈদ এর জন্য চাইছি।যেহেতু তাসফিয়া বাড়ির বড় মেয়ে।”

সাঈদ চমকালো।তার মা যে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে ভাবতেই পারছে না।সবার আগে বড়ো বড়ো আঁখি জোড়া দিয়ে আয়াত এর দিকে তাকালো। মেয়ে টা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে অনুভূতি শুন্য।তাসরিফ আর্শিয়ান এক সাথে বসে আছে। আষাঢ় তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। অপেক্ষা করছে কিছু বলবে এই দুই মানব কিন্তু না কিছু বললো না।মুখে কুলু এঁটে বসে আছে। তাসফিয়া তৎক্ষনাৎ নিজের রুমের উদ্দেশ্যে চলে গেলো।বড়রা ভাবলো লজ্জায়।কিন্তু আবার কেউ মনের অবস্থা বুঝতে পারলো।
বাড়ি টা মূহুর্তের মধ্যে কেমন শুনশান নীরবতা এসে হাতছানি দিলো।আকরাম তালুকদার গুরুগম্ভীর। আর্শিয়ান ভাবলেশহীন ভাবে উঠে রুমে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই তিনি ডাকলো ছেলে কে।
আর্শিয়ান পেছন ফিরে বলে উঠলো,

-“কিছু বলবে?”

-“একবার বনুর সাথে কথা বলো।
আপাতত পরে আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করবো।এখন ঘুমুতে যাও সবাই।”

আকরাম তালুকদার নিজের কক্ষের দিকে চলে গেলো।আস্তে আস্তে সবাই যেতে লাগলো সাঈদ মায়ের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে হনহন করে উপরে ওঠে গেলো।
নাসিমা বেগম ছেলের এমন চাহনির মানে বুঝতে পারে না।তবে বেশি কিছু না নিজের রুমে চলে গেলো।
সবাই যাওয়ার পর আর্শিয়ান তখনো সোফার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে আষাঢ় থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। কেনো জানি রাগ হচ্ছে আর্শিয়ান ভাই এর উপর। সেইজন্য তাকালো না আষাঢ় আর্শিয়ান এর দিকে। আর্শিয়ান কিছু সময় নীরব রইলো।অপেক্ষা করলো প্রেয়সীর মুখ থেকে কিছু শোনার জন্য। কিন্তু আষাঢ় একদম চুপ।
আর্শিয়ান রয়েসয়ে আষাঢ় কে শান্ত কণ্ঠ অথচ গম্ভীর স্বরে ডাকলো,

-“আষাঢ়!”

আষাঢ় তৎক্ষনাৎ তাকালো পুরুষ টার দিকে।এই ডাক উপেক্ষা করার সাধ্যি আষাঢ়’র নেই।তবে মুখে কিছু বললো না। তাকিয়ে রইলো শুধু।
আর্শিয়ান আষাঢ়’র চোখের দিকে তাকিয়ে আদেশ করলো,

-“আমার রুমে আয়।”

আর্শিয়ান ইশারা করে চলে গেলো।
আষাঢ় ভ্রু কুঁচকালো।রুমে যেতে কেনো বললো?বুঝতে পারে না আষাঢ়।
যাবে না যাবে না করেও মন কে মানাতে পারলো না।
আষাঢ় কচ্ছপের গতিতে আগালো আর্শিয়ান ভাই এর রুমের উদ্দেশ্যে।
রুমের সামনে এসে আষাঢ় একবার উঁকি দিয়ে দেখলো ভেতরে আর্শিয়ান ভাই গম্ভীর হয়ে রুমে থাকা সিঙ্গেল সোফা টায় বসে আছে।সামনে সেন্টার টেবিলে একটা শপিং ব্যাগ রাখা।
আষাঢ় কে দেখে আর্শিয়ান দ্রুত পায়ে ব্যাগ হাতে এগিয়ে এলো।আষাঢ় অবাক হলো।রুমে ডেকে এখন দরজায় এমন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে মনে হচ্ছে আষাঢ় বিনা নিমন্ত্রণে চলে এসছে।
আষাঢ় চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আর্শিয়ান এর দিকে।
আর্শিয়ান সামনে দাঁড়ানো নিজের প্রেয়সী কে দেখলো।মেয়ে টা বড়ো কেনো হচ্ছে না? কবে বড়ো হবে ও?আর্শিয়ান এভাবে ধরে বেঁধে নিজে কে আর কত কন্ট্রোল করবে?ভয় হয় বড্ড ভয় হয় কখন না আবার কোন ভুল হয়ে যায় এই ভেবে।
আর্শিয়ান ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে। আষাঢ় এর হাতে শপিং ব্যাগ টা দিয়ে আদেশ স্বরে বললো,

-“কাল কলেজ যেতে হবে না।
সকালে আয়াত এর সাথে বেরুবি এই ড্রেস টা পড়ে।”

#চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে