#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_৮
#জান্নাত_সুলতানা
আর্শিয়ান গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছে কলেজ গেইট এর বাহিরে। চেহারায় ফুটে রয়েছে অস্থিরতা। কাউ কে এক পলক দেখার তৃষ্ণা চোখ জোড়া চাতক পাখির ন্যায় তাকিয়ে অপেক্ষা করছে কখন আসবে আর্শিয়ান এর আষাঢ়!খবর পেয়েছে আর্শিয়ান সাইফ মাত্র দু’ঘন্টা ক্লাস করে বিদায় নিয়েছে।ছোট বেলার কোনো এক ফ্রেন্ড এর সাক্ষাৎ পেয়ে তার সাথে চলে গিয়েছে।আয়াত তাসফিয়াও বাড়ি চলে গিয়েছে।সাঈদ ফোন করে এমনটাই জানিয়েছে। যদিও আর্শিয়ান রোজকার ন্যায় নিজের প্রেয়সী কে দেখার জন্য হলেও কলেজ আসতো।আড়াল থেকে দেখে আবার চলে যেতো।কিন্তু আজ আর আড়ালে থাকবে না।
আর সম্ভব নয় ও আড়ালে থাকা।কত চেপে রাখবে নিজের ভেতর অনুভূতি?কেনো লুকিয়ে রাখবে? যেখানে যাকে নিয়ে অনুভূতি সেখানে সে নিজেও তারজন্য পাগল।তাই এসব লুকিয়ে রাখার কোনো মানেই নেই।এবার অন্তত এই লুকোচুরি বাদ দাও যাক।কিন্তু এর পরিণয় দেওয়া খুব একটা সহজ হবে না। আবার খুব কঠিনও হবে না। যদি পরিবার না মানে তাদের মানাতে কাঠখড় পোড়াতে হবে। আর পরিবার এতো সহজে মেনে নিবেও না।
-“আর্শিয়ান ভাই?”
হঠাৎ আষাঢ়’র কণ্ঠে শোনে আর্শিয়ান চমকালো।তবে সেটা আষাঢ় কে বুঝতে না দিয়ে মুখের গম্ভীর ভাব রেখে কিছু টা ঝুঁকে গাড়ির দরজা খুলে আষাঢ় কে বসার জন্য ইশারা করলো।
আষাঢ় লাজুক হাসলো।পুরুষ টা ওর ভালোবাসার।ভাবতেই হৃদয়ে যেমন ভালো লাগার দোলা দিয়ে যায়। তেমন চোখে মুখে ফুটে উঠে অস্থির লজ্জা।
গাড়িতে বসে দরজা লাগালো আষাঢ়। আর্শিয়ান ততক্ষণে আষাঢ়’র কোলের উপর থেকে ব্যাগ নিয়ে পেছনের সিটে রেখে দিলো।আষাঢ় পাশ ফিরে মানুষ টা কে বারকয়েক আঁড়চোখে দেখলো।বড্ড অগোছালো লাগছে। চুলগুলো কিছু টা এলোমেলো।শার্ট এর ইন অনেক টা ঝুলে গিয়েছে।চোখে মুখে লেপ্টে রয়েছে ক্লান্তি।কিন্তু তবুও আষাঢ়’র মনে হলো মানুষ টার মেজাজ বেশ ফুরফুরে রয়েছে।আষাঢ়’র ভাবনার মাঝেই আর্শিয়ান গাড়ি স্টার্ট করার আগে একটা বড়ো চকলেট আর পানির বোতল আষাঢ়’র দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,
-“ফিনিশ ইট।”
আষাঢ় কোনো রূপ বাক্য প্রয়োগ না করে খেতে লাগলো।সকালে এতো বড় একটা কান্ড করার পর নিজে থেকে কেমন অস্বস্তি হচ্ছে। আর্শিয়ান ভাই কে দেখলে যেমন ভালো লাগে, মুগ্ধ হয়।ঠিক তেমন লজ্জায় বারবার মনে হয় একটু বেশি হয়েছি কি সকালে?
একবার মনে হয় বেশি বেশি বেহায়াপনা হয়েছে তো আরেকবার মনে হয় মানুষ টা নিজেই তো ক্লু দিয়ে রেখেছিলো।শুধু আষাঢ়’র নিজের বুঝতে সময় লেগেছে।
আষাঢ় চকলেট খেতে খেতে প্রায় অর্ধেক খাওয়ার পর মনে হলো একবার আর্শিয়ান ভাই কে জিগ্যেস করা উচিৎ চকলেট খাবে কি-না।
আর্শিয়ান এর দিকে হঠাৎ তাকাতে খেয়াল করলো আর্শিয়ান গাড়ি ড্রাইভ করছে সেই সাথে একটু পরপরই আষাঢ় কে আঁড়চোখে দেখছে। আষাঢ় তাকানোর সেকেন্ড সময় ব্যবধানে দু’জনের চোখাচোখি হয়ে গেলো।আর্শিয়ান ইশারায় জিগ্যেস করলো “কি” আষাঢ় মাথা নাড়ে। আর্শিয়ান দৃষ্টি সরিয়ে নিতেই আষাঢ় ধীরে কণ্ঠে ডেকে উঠলো,
-“আর্শিয়ান ভাই!”
-“হুঁ বল।”
আর্শিয়ান শান্ত কণ্ঠে জবাব দিলো।
আষাঢ় নড়েচড়ে বসে হাতের চকলেট টা আর্শিয়ান এর এগিয়ে দিয়ে জিগ্যেস করলো,
-“চকলেট খাবেন?”
আর্শিয়ান তৎক্ষনাৎ গাড়ি থামালো।আকস্মিক গাড়ি থেমে যাওয়ায় আষাঢ় কিছু টা ঝুঁকে গেলো সামনের দিকে। সোজা হয়ে বসে কোনো রকম নিজে কে সামলে পাশে তাকিয়ে দেখলো আর্শিয়ান গম্ভীর হয়ে বসে আছে। আষাঢ় কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তার আগেই আর্শিয়ান অতি শান্ত কণ্ঠে বলে উঠলো,
-“সত্যি খাবো?”
আষাঢ় বুঝতে পারে না।কি বলছে মানুষ টা?ও তো খাওয়ার জন্যই দিয়েছে তাহলে?এভাবে কেনো জিগ্যেস করছে আর্শিয়ান ভাই?
আষাঢ় ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইলো আর্শিয়ান এর দিকে। আর্শিয়ান ঝুঁকে এলো।আষাঢ় কে টেনে একদমই নিজের একটা উরুর উপর বসিয়ে দিলো।আষাঢ় চমকালো।থমথম খেয়ে দুই হাতে আর্শিয়ান এর গলা জড়িয়ে ধরে নিলো।জীবন প্রথম কোনো পুরুষের এতোটা সন্নিকটে এসেছে। এতো টা কাছ থেকে তাও আবার ভালোবাসার মানুষের।এই অনুভূতি যেমন ভালো লাগার তেমন অস্থিরতার।শক্ত হয়ে গলা জড়িয়ে ধরে আষাঢ় বরফের অনুরূপ জমে গেলো।আর্শিয়ান অদ্ভুত ভাবে আষাঢ়’র দিকে তাকিয়ে আছে।আষাঢ়’র পুরো শরীর শিরশির করে উঠে।আর্শিয়ান ভাই এভাবে কেনো তাকিয়ে আছে?এমন ভাবে টেনে কেনো নিলো কিছুই বুঝতে পারছে না।
আর্শিয়ান এর খসখসে চামড়া দানবীয় হাতের স্পর্শ নিজের নরম তুলতুলে গালে পেতেই আরো এক দফা নড়েচড়ে উঠলো পুরো শরীর। আর্শিয়ান আষাঢ়’র চোখের দিকে তাকিয়ে শান্তস্বরে বলে উঠলো,
-“আজ না।
বিশেষ কোনো দিন তোর হাত থেকে চকলেট খাব সেদিন খুব করে মনে হবে এই দিন টা বুঝি না এলেই ভালো হতো।কিন্তু আমার ভালোবাসার স্পর্শে আমি তোকে সেই ভাবনা থেকে এক অন্য রকম সুখের সাগরে ভাসিয়ে তোর চিন্তাধারা বদলে দেবো। সেইদিন টার জন্য নিজে কে প্রস্তুত কর আমার আষাঢ় মাস।”
আষাঢ় এবারেও আর্শিয়ান ভাইয়ের এই গভীর কথার গভীরতা ঠিকঠাক বুঝতে পারে না।তবে আর্শিয়ান এর মুখে আষাঢ় মাস ডাক টা এই নিয়ে দু’বার শুনেছে।
আরেকবার আষাঢ়’র বৃষ্টিতে ভিজে প্রচন্ড জ্বর হয়েছিলো তখন।যদিও আষাঢ়’র তখন পুরো পুরি জ্ঞান ছিলো না।কিন্তু ডাক টা আষাঢ় শুনতে পেয়েছিল।
কিন্তু চোখ খুলে মানুষ টাকে একবার দেখার শক্তি কুলিয়ে উঠতে পারে নি সেদিন।
আর্শিয়ান আষাঢ় কে ছেড়ে দিলো।সিটে বসিয়ে গাড়ি ফের স্টার্ট করলো।আষাঢ় ভাবনায় ডুবে গেলো।একটু আগের ঘটে যাওয়া ঘটনা মস্তিষ্কে সৃতিচারণ করতে ব্যস্ত হলো।হাতের চকলেট তখন গলে যাচ্ছে।
আষাঢ় সেটা টের পেতেই চকলেট দ্রুত মুখে পুরে নিলো।আর্শিয়ান আষাঢ়’র এমন কান্ড দেখে আষাঢ়’র অগোচরে ঠোঁট কামড়ে হাসলো।
——
দুপুরে আর্শিয়ান আষাঢ় কে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে নিজেও কোনো রকম ফ্রেশ হয়ে অল্প খাবার খেয়ে আবার কোথাও একটা চলে গেলো।
আষাঢ় গোসল দিয়ে এসে খাবার টেবিলে কাউ কে পেলো না। তাসরিফ এর মা হাফসা বেগম তখন তায়েফ তায়ুশ এর জন্য পাস্তা তৈরী করছিলো।তিনি আষাঢ় কে খাবার দিলো।কাজের লোক কে খাবার শেষ সব গোছাতে বলে তিনি রুমে গেলো।হাফসা বেগম সহজসরল মানুষ।ওনার মেয়ে ভীষণ পছন্দ তো।তাসরিফ জন্ম নেওয়ার সতেরো বছর পর কনসিভ করার পর ভেবেছিল এবার হয়তো একটা মেয়ে হবে। কিন্তু তায়েফ তায়ুশ হলো।এতে অবশ্য হাফসা বেগম বা তোফায়েল তালুকদার বা কেউ অখুশি হয় নি।বরং খুশিই হয়েছিল খুব।
হাফসা বেগম তাসফিয়া, আয়াত,আষাঢ় ওদের খুব যত্ন করে। নিজের সন্তানের মতোই আগলে রাখে।
আষাঢ় খাবার খেয়ে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।ভাবলো সন্ধ্যায় ওঠে পড়বে।কিন্তু রুমে গিয়ে বিছানায় অনেক সময় গড়াগড়ি খাওয়ার পরও ঘুম এলো না।
বাধ্য হয়ে ওঠে তাসফিয়ার রুমে গেলো।প্রথমে ভাবলো আয়াত এর রুমে যাবে। কিন্তু আয়াত এমন সময় তাসফিয়ার সাথে ব্যালকনিতে বসে আড্ডা দেয়।তাই তাসফিয়ার রুমে গেলো।
দরজা খোলাই ছিলো।আষাঢ় নক না করে সোজা ব্যালকনিতে চলে এলো।তবে ব্যালকনির দরজার কাছে এসেই আষাঢ় থমথম খেলো।
আয়াত নেই।তাসফিয়া কারোর সাথে ফোনে কথা বলছে।কথার ধরণ একটা বাচ্চাও বলতে পারবে রমণী তার ভালোবাসার মানুষ টার সাথে কথা বলছে।আষাঢ় কখনো ভাবে নি এমন কিছু থাকতে পারে তাসফিয়া আপুর মাঝে। অবশ্য ভাবার সময় বা এমন কোনো পরিস্থিতি আসে নি।আষাঢ় জানে আড়িপাতা ঠিক নয়।কিন্তু সে তো আড়িপাতে নিয়ে।অনাকাঙ্খিত ভাবে এমন পরিস্থিতিতে পড়ে গিয়েছে।
আষাঢ় চুপ করে আবার তাসফিয়ার রুম হতে বেরিয়ে এলো।আর ভাবলো আর্শিয়ান ভাই এসব জানে?
#চলবে….