আমার প্রেয়সী পর্ব-০৭

0
8

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_৭
#জান্নাত_সুলতানা

-“স্বপ্ন না বাস্তব বুঝবি কি করে?
সারাক্ষণ তো মাথায় উদ্ভট চিন্তা নিয়ে ঘুরঘুর করিস।
এক মিনিট এরপর তোকে যদি এখানে দেখেছি তো সারা রাত এভাবে এখানে দাঁড় করিয়ে রাখবো।তখন তোর স্বপ্ন সব জানালা দিয়ে পালাবে।”

আষাঢ় পিটপিট করা নয়ন জোড়া হঠাৎ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো।আকৃতি এমন হয়েছে চোখ কোঠরি ছেড়ে যেন এক্ষুণি বেরিয়ে আসবে।
আষাঢ় একবার ভাবলো কাল ওর সাথে আর্শিয়ান ভাই কি করবে তা এক ঝলক কল্পনা করা যাক।কিন্তু পরক্ষণেই সেই ভাবনায় ভাঁটা পড়ে আর্শিয়ান ভাই এর হুমকির কথায়। তাই ভাবাভাবি বাদ দিয়ে এক দৌড়ে কক্ষে চলে এলো।আপাতত ঘুমানো যাক।কাল কি হবে সেট কাল দেখা যাবে।
এদিকে আর্শিয়ান আষাঢ়’র কাণ্ড দেখে কি রিয়াকশন দেবে ভুলে গেলো।কতক্ষণ আষাঢ়’র রুমের দিকে তাকিয়ে দেখে গম্ভীর মুখে নিজেও রুমের ভেতর চলে গেলো।

——-

সকাল সকাল আজ আষাঢ় ঘুম থেকে উঠে নিজের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে রইলো। রোজ বাগান যায় সবার সাথে। কিন্তু আজ গেলো না। উপর থেকে নিচে জিম করতে থাকা আর্শিয়ান এর দিকে তাকিয়ে আছে।নাসির তাসরিফ সবাই কিছু নেই কিছু করছে বডি ফিটনেস ধরে রাখার তাগিদে। এই বাড়ির সব ছেলেরা জিম করে সেইজন্য বোধহয় তাদের বডি ফিটনেস দেখতেও এতোটা আকর্ষণীয়।বাপ চাচা থেকে শুরু করে সবাই বডি ফিটনেস নিয়ে সচেতন। আর আর্শিয়ান ভাই সে-তো সবার থেকে একধাপ এগিয়ে।
আষাঢ় আনমনা হয়ে আর্শিয়ান এর দিকে তাকিয়ে ছিলো।হঠাৎ ধ্যান ফিরে দেখলো আর্শিয়ান উপরে তাকিয়ে আছে।আপাতত সে বাগানে থাকায় দোলনায় বসে আছে। হাতে একটা পানির পট।আষাঢ় আর্শিয়ান এর গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে থমথম খেলো।দৃষ্টি বারকয়েক এলোমেলো ঘুরালো। ফের দ্রুত পায়ে রুমে চলে এলো।ওয়াশ রুমে গিয়ে ব্রাশে পেষ্ট লাগিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁত মাজার মাঝেই হঠাৎ আয়নার দিকে তাকিয়ে কিছু মনে পড়লো।রাতের ঘটনা মনে পড়তেই হাত থেকে ব্রাশ পড়ে গেলো।মুখে কোনো রকম পানি দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে এলো রুম থেকে। সোজা আর্শিয়ান ভাইয়ের রুমে চলে এলো।আর্শিয়ান তখন সবেমাত্র রুমে এসছে।ঘামে শরীর চকচক করছে। গলায় একটা টাওয়াল ঝুলানো।আষাঢ়’র বুক ধুকপুক করছে।অধর জোড়া উত্তেজনায় মূদু কাঁপছে। আর্শিয়ান হঠাৎ আষাঢ়’র এমন আকস্মিক আগমন আর অস্বাভাবিক লাগছে কেনো বুঝতে পারছে না।
চট করে হাতের জিমের জ্যাকেট টা সোফায় রেখে দ্রুত পায়ে এগিয়ে এলো।আষাঢ়’র মাথায় ডান হাত টা আলগোছে রেখে বিচলিত কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,

-“কি হয়েছে?
এমন দেখাচ্ছে কেনো তোকে?
শরীর খারাপ? মেঝো মা কে ,,

আর্শিয়ান পুরো টা কথা শেষ করতে পারলো না। তার আগেই আষাঢ় আর্শিয়ান এর ঘামে ভেজা বুকে আলগোছে মাথা রাখলো।আর্শিয়ান এর শরীর থেকে আসা গন্ধ শুঁকে নিজের ভেতরে নিলো।আর্শিয়ান ভাই পাশ দিয়ে হেঁটে গেলোও আষাঢ় কমপক্ষে এক মিনিট সময় গন্ধ টা পায়।আষাঢ় গন্ধ শুঁকে তিরতির করে কাঁপতে থাকা অধর জোড়া নেড়ে আওড়াল,

-“কালকের মেয়ে টা আমি ছিলাম আর্শিয়ান ভাই।
আমি কত বোকা আপনার কথা গুলো কখন গভীর ভাবে ভেবে দেখি না।কেনো?”

আর্শিয়ান বাকরুদ্ধ।চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো শুধু।
আষাঢ়’র আর্শিয়ান এর থেকে কোনো রূপ মন্তব্য না পেয়ে মাথা তুলে আর্শিয়ান এর মুখের দিকে তাকালো। হঠাৎ আর্শিয়ান আষাঢ়’র দুই গালে হাত রাখলো।কপালে অধর ছুঁয়ে দিয়ে আদেশ করলো,

-“রুমে যা।”

আষাঢ় গেলো না।
যাবে না সে।যদিও নিজের প্রশ্নের উত্তর সে পেয়েছে। কিন্তু আজ যেনো সাহস আরো বেড়ে গেলো।

-“একবার বলুন না ভালোবাসি।”

কত সুন্দর আবদার।আর্শিয়ান অধর দাঁত দ্বারা চেপে ধরে ঘুরে দাঁড়ালো।
নিজে কে ধাতস্থ করে ফের শুধালো,

-“রুমে যা।”

আষাঢ়’র বুঝি অভিমান হলো।চোখ টলমল করে। জল গড়িয়ে পড়ার আগেই দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।আর্শিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে এতো সময় নিজে কে কন্ট্রোল করলো।খুশিতে বোধহয় হৃদপিণ্ডটা লাফালাফি করতে করতে ছিটকে বেরিয়ে আসবে।কিন্তু এতো খুশির মাঝেও আর্শিয়ান হঠাৎ চিন্তিত হলো।গম্ভীর মুখে টাওয়াল হাতে ওয়াশ রুমে চলে গেলো।

—–

নাসিমা বেগম নিজেদের বাড়িতে চলে যেতে চাইছিলো আজ।কিন্তু কেউ যেতে দিলো না। উল্টো ওনার স্বামী দেশে না আসা অব্ধি এখানে থাকার জন্য বললো।নাসিমা বেগম কি ভেবে রাজি হলো।
আষাঢ় কলেজ যাওয়ার জন্য এক্কেবারে রেডি হয়ে নিচে এলো।পড়ালেখা সে বেশ ভালো। কিন্তু মাঝে কিছু দিন অনেক টাই রেজাল্ট খারাপ করেছে আষাঢ়।কলেজ থেকে এই নিয়ে নোটিশ এসছে। প্রিন্সিপাল স্যার আকরাম তালুকদার এর বেশ ভালো বন্ধু। আর বিচার টাও এসছে বড়ো বাবাই এর কাছে। এ নিয়ে অবশ্য তিনি কিছু বলে নি।শুধু বলেছে মন দিয়ে পড়ার জন্য। ইয়ার চেঞ্জে ভালো করতে হবে। তবে শিউলি বেগম আষাঢ় কে ইচ্ছে মতো ঝেড়েছে।আষাঢ় আজ ভীষণ খুশি। মায়ের বকা খেয়ে আজ একটুও মন খারাপ করে নি।বরং এখন থেকে ভালো করে লেখাপড়া করবে ঠিক করেছে।আর্শিয়ান ভাই যেখানে বিদেশ গিয়ে লেখাপড়া করে এসছে সেখানে আষাঢ় যদিও টেনেটুনে উচ্চমাধ্যমিক টা না টপকাতে পারে। ভালো একটা ভার্সিটিতে চান্স না পায় তাহলে ব্যাপার টা কেমন দেখাবে না।সমান সমান না হোক চলনসই তো হতে হবে।
আষাঢ় নাস্তার টেবিলে বসে নাস্তা খাচ্ছিল।বাড়ির অর্ধেক মানুষ আছে এখানে। আষাঢ়’র বাবা আর তাসরিফ এর বাবা ব্যতিত।মহিলারা সবাই নাস্তা দিচ্ছে। তায়েফ তায়ুশ সকাল সাড়ে সাত টায় স্কুল চলে গিয়েছে।
আষাঢ় মন দিয়ে নাস্তা খাচ্ছে। মাঝেমাঝে আবার লিভিং রুম ক্রস করে সিঁড়ির দিকে তাকাচ্ছে।
আজ আয়াত তাসফিয়াও ভার্সিটিতে খুব সকালে গিয়েছে সাড়ে আটটায় ক্লাস আছে আজ।ওদের সাঈদ ভাই ভার্সিটিতে দিতে গিয়েছে। এখন শুধু আষাঢ় আর সাইফ বাকি আছে। সকালে নাস্তার পর নাসির তালুকদার আর মোহনা ওদের বাড়িতে যাবে। আজ আষাঢ় আর বাইকে করে যেতে পারবে না। তারজন্য সামন্য মন খারাপ হলো।ভাবলো আজ বুঝি এই বাঁচাল সাইফ এর সাথে একা কলেজ যেতে হবে।আষাঢ় পানি খেয়ে ব্যাগ নিয়ে উঠে দাঁড়াতেই সিঁড়ির দিকে নজর গেলো।ফর্মাল ড্রেসে আর্শিয়ান ভাই। কালো শার্ট গায়ে। শার্ট ইন করা। পায়ে লোফার। আষাঢ় বুঝি একটুর জন্য ভুলে গেলো এখানে সবাই রয়েছে। ড্যাব ড্যাব করে তাকাতে গিয়েও সবার কথা মনে পড়লো।চোখ বন্ধ করে ঠোঁট গোল করে শ্বাস ছাড়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,

-“আমার আর্শিয়ান ভাই।”

আর্শিয়ান কে এভাবে রেডি হয়ে নিচে আসতে দেখে সবাই কমবেশি অবাক হলো।আবার মনে মনে খুশিও হলো।শর্মিলা বেগম ছেলে কে এমন ড্রেসে থেকে হাসি মুখে এগিয়ে এলো।আর্শিয়ান তখন মাত্র চেয়ারে বসেছে। তিনি খুশি মনে জিগ্যেস করলো,

-“আব্বা দুপুরে খাবার কি দেবো?”

-“খাবার দিতে হবে না মা।
আমি দুপুরে বাড়ি চলে আসবো।হাফডে ডিউটি করবো আমি।”

আর্শিয়ান এর কথায় আকরাম তালুকদার আঁড়চোখে ছেলের দিকে একবার তাকালো।এতে ওনার তেমন কিছু যায় আসে না। ছেলে অফিস যাচ্ছে তিনি এতেই খুশি। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে এমন টাই ওনার ধারণা। কিন্তু আদৌও ঠিক হবে কি-না সেটা আর্শিয়ান ভালো জানে।আষাঢ় একপাশে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। সাইফ তখনো গিলে যাচ্ছে। আষাঢ় বিরক্ত হলো।ছেলে টা বড্ড পেটুক।সারাদিন শুধু খাইখাই করে কিন্তু শরীর দেখলে কেউ বিশ্বাসই করবে না এই ছেলে সারাদিন কিছু না কিছু গিলতে থাকে।ফু দিলে যেন উড়ে যাবে। এদিকে কলেজের লেইট হচ্ছে।
আষাঢ় কিছু বলতেও পারছে না।নাসিমা বেগম তখন কোথা থেকে হন্তদন্ত হয়ে এলো।এসে ছেলে কে তাগাদা দিতে লাগলো।সাইফ হাত ধুয়ে ফিরে এসে ব্যাগ কাঁধে তুলতে তুলতে আষাঢ় কে উদ্দেশ্য করে বললো,

-“চল।
আর মাত্র বিশ মিনিট আছে।”

আষাঢ় ঘড়ি দেখলো একপলক এমন ভাবে বলছে মনে হচ্ছে দেরি টা আষাঢ় করেছে।আষাঢ় চুপ থেকে মাথা দুলিয়ে পা বাড়ালো সামনের দিকে।
হঠাৎ বড়ো মা বলে উঠলো,

-“তোরা একা যাচ্ছি!
আর্শিয়ান নামিয়ে দিবে একটু বসে যা।”

তিনি কথা শেষ করে আবার রান্না ঘরে চলে গেলো।
আর্শিয়ান তখন টিস্যু দিয়ে হাত মুছে ফোন আর চাবি নিয়ে আগে আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। আষাঢ় সাইফ পেছন পেছন এলো।সাইফ এসেই পেছনের সিটে ধপ করে বসে দরজা লাগিয়ে দিলো।
তারপর আষাঢ় কে উদ্দেশ্য করে বললো,

-“আষাঢ় ওদিক দিয়ে এসে পেছনে বসে যা।”

-“আষাঢ় পেছনে বসবে না।
ওর পেছনে বসার অভ্যাস নেই।”

আর্শিয়ান গম্ভীর স্বরে কথা টা বলেই সামনের দরজা খুলে আষাঢ় কে বসতে ইশারা করলো। আষাঢ় মিষ্টি হেঁসে বসে পড়লো।আর্শিয়ান ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করল। রাস্তায় সাইফ অনেক বকবক করলো।সব আর্শিয়ান মুখ বুঁজে সহ্য করলো।তবে মনে মনে বেশ রেগেও গেলো।কারণ টা হচ্ছে সাইফ সব কথা শেষ করে আষাঢ় কে উদ্দেশ্য করে জিগ্যেস করে, ঠিক বলেছি না আষাঢ়?আষাঢ় বাধ্য হয়ে মাথা নাড়ে। গাড়ি থামলো একদম গেইটের সামনে এসে। কলেজের অনেক স্টুডেন্ট এই গেইটে।আবার মাঝেমধ্যে ভার্সিটির কিছু স্টুডেন্টও রয়েছে।সাইফ আগে গাড়ি থেকে নেমে আশেপাশে তাকাতে লাগলো।আর্শিয়ান সুযোগ করে আষাঢ়’র ডান হাতের উলটো পিঠে চুমু খেয়ে গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,

-“প্রেমের শুরু আজ থেকে।
আমাকে সহ্য করার জন্য রেডি হউ।”

আষাঢ় লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতে পারলো না। প্রথম বারের ন্যায় ভালোবাসার মানুষ টার মুখ থেকে তুমি ডাক শোনে লজ্জায়,অস্বস্তিে দ্রুত দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো।আষাঢ় কোনো দিকে না তাকিয়ে গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো।
আর্শিয়ান জানালার কাচ নামিয়ে সাইফ কে ডাকলো।সাইফ ততক্ষণে আষাঢ় কে কলেজ এর ভেতরে চলে যেতে দেখে এসে আগে আগে বলে উঠলো,

-“আমিও যাই আষাঢ় চলে গেলো।”

সাইফ চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আর্শিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে ডেকে ওঠে বললো,

-“শোন।
ওর সাথে সাথে থাকবি।কিন্তু লিমিট এর মধ্যে।বেশি বাড়াবাড়ি যদি করেছিস না।খুব খারাপ হয়ে বলে দিলাম।”

#চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে