#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_৬
#জান্নাত_সুলতানা
-“ওইখানে দাঁড়া।
মেয়ে দেখতে পাবি।”
আষাঢ় সামনে তাকিয়ে উপরে টানানো ফুল গুলোর সাথে একটা আয়না দেখতে পেলো।ভ্রু কিঞ্চিৎ পরিমাণ কুঁচকে এলো।পুরো দোকানে চোখ বুলিয়ে কোনো মেয়ে দেখতে পেলো না আষাঢ়।আর্শিয়ান ভাই কি মজা করছে?এখানে মেয়ে কোথায়? শুধু তো মাঝবয়েসী দোকানদার আর একটা বয়স্ক লোক।আষাঢ় বিরক্ত হয়ে আর্শিয়ান কে ফের জিগ্যেস করলো,
-“কোথায় মেয়ে?
কোনো মেয়ে নেই এখানে।”
-“সত্যি নেই?”
আর্শিয়ান ফুল বেছে বেছে দোকানদারের হাতে দিতে দিতে জিগ্যেস করলো।
আষাঢ় বিরক্তিতে বিস্ময় নিয়ে বলে উঠলো,
-“আশ্চর্য।
থাকলে আমার নজরে আসতো।”
আর্শিয়ান অধর চেপে হাসলো।আষাঢ়’র নজরে এলো না সেটা।আর্শিয়ান কিছু বলে না।চুপচাপ ফুলওয়ালার কাছ থেকে সব ফুল বুঝে নিয়ে বিল দিয়ে পলিথিন ব্যাগ হাতে আষাঢ়’র কাছে এগিয়ে এলো।আষাঢ় তখন কৌতূহলী হয়ে দাঁড়িয়ে।ভাবছে আর্শিয়ান ভাই বুঝি সত্যি বিয়ের জন্য মেয়ে দেখছে। তাহলে তাসফিয়া আপু ঠিকই বলেছে।আষাঢ় চোখের কোঠায় জল জমে।মানুষ টা বড্ড পাষাণ। একটু কি আষাঢ়’র মনের কথা, চোখের চাহনি বুঝতে পারে না? আষাঢ়’র ভাবনার মাঝেই আর্শিয়ান একটা বেলি ফুলের মালা আষাঢ়’র হাতে দিলো।আষাঢ় অবাক হলো।কিছু না বলে অন্য দিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিলো।আর্শিয়ান পাত্তা দেয় না সে-সব। বরং স্বাভাবিক ভাবে বললো,
-“আচ্ছা চল।
বাড়ি যাই।”
আষাঢ় একটু নড়লো না।ঠাঁই দাঁড়িয়ে থেকে অসহায় কণ্ঠে আবদার করলো,
-“আমি মেয়ে দেখবো।”
-“কিন্তু মেয়ে তোকে দেখতে চাইছে না।”
আর্শিয়ান ফটাফট জবাব দেয়।পরপরই আষাঢ়’র হাত ধরে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো।ফুলে গুলো পেছনের সিটে রাখলো।আষাঢ় কে সামনে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসলো।
আষাঢ় তখন ঘোরে আছে।কি বললো একটু আগে আর্শিয়ান ভাই? মেয়ে ওকে দেখলো কি করে? আর বললই বা কখন এমন কথা?আর্শিয়ান ভাই নিজেও তো কারোর সাথে কোনো রকম ফোনকল বা সামনা-সামনিও কথা বলে নি।তবে?আষাঢ় কোনো প্রশ্নের জবাব পেলো না। হঠাৎ আর্শিয়ান কে নিজের খুব সন্নিকটে আবিষ্কার করলো।আঁড়চোখে তাকাতেই নজরে এলো আর্শিয়ান ভাই খুব মনোযোগ দিয়ে সিট বেল্ট বেঁধে দিচ্ছে।
আষাঢ় ক্ষেপে উঠলো।আর্শিয়ান এর হাত সরিয়ে নিজে বেল্ট লাগাতে লাগাতে বলে উঠলো,
-“আমার টা আমি লাগাতে পারবো।আপনি অন্য দিকে নজর দিন।”
আর্শিয়ান সরে বসলো।গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে ফের অধর কামড়ে হাসলো।তবে আষাঢ় সেদিকে তাকাতেই মুখ গম্ভীর করে নিলো।থমথমে কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,
-“অন্য কোন দিকে নজর দেবো?”
আষাঢ় থমথম খেলো।ঠিকই তো।কোন দিকে নজর দিতে বলছে আর্শিয়ান ভাই কে?আর আজ হঠাৎ ওর এতো সাহস এলো কোথা থেকে?আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা আষাঢ় এরূপ ব্যবহার করছে আর্শিয়ান ভাই তাও কেনো কোনো রিয়্যাক্ট কেনো করছে না?আষাঢ়’র এই এটুকু জীবনে যতটা অভিজ্ঞতা হয়েছে সেটার হিসেব করলে আর্শিয়ান ভাইয়ের থাপ্পড় তো এতোক্ষণে গালে দুই চার টা পড়ার কথা ছিলো।আর্শিয়ান ভাই বিদেশ পড়তে যাওয়ার আগেও সব ঠিকঠাক ছিলো।মাঝে একবার দেশে এলো যখন তখন আষাঢ় এইটে পড়ে।বয়স টা তখন রঙিন।যা দেখে তাই তখন কিশোর কিশোরীর ভালো লাগে। সব দেখতে সুন্দর লাগে। আষাঢ়’র ও লাগতো।সুন্দরী হওয়ার দরুনে হাইস্কুল ওঠার পর থেকে কম প্রেমপত্র পায় নি।তবে প্রেম করার মতো দুঃসাহসিকতা দেখাতে পারে নি।বাপ চাচা থেকে শুরু করে সবার কমবেশি নজর ছিলো আষাঢ়’র উপর। সবাই বেশ আগলে রাখতো।মূলত সবার এতো আগলে রাখার ভীড়ে আষাঢ় কখনো এসব করার সময় বা সুযোগ কোনো টায় পায় নি।তারমধ্যে স্টুডেন্ট ভালো হওয়ায় টিচারদের নজরেও ছিলো।সেদিন আর্শিয়ান ভাই যখন সন্ধ্যায় বাড়ি এলো তখন আষাঢ় লিভিং রুমে বসে কার্টুন দেখছিলো।মা চাচি সবাই তখন রান্না ঘরে। রান্নাবান্নায় ব্যাস্ত বাড়ির কেয়ারটেকার কেউ হাত খালি ছিল না।সবাই কাজে ব্যাস্ত।আষাঢ় তখন কলিং বেল বাজাতে বেশ বিরক্ত। তায়েফ তায়ুশ তখন তিন বছরের ওরা ও ছিলো লিভিং রুমে কিন্তু সদর দরজা খোলার মতো বয়স বা শক্তি কোনোটাই ওদের হয় নি।তাই আষাঢ় কে বাধ্য হয়ে দরজা খুলতে হয়ে ছিলো।তখন বাইরে বৃষ্টি।গেইট খুলতেই নজরে আসে সাদা শার্ট গায়ে তার উপর কালো জ্যাকেট।বুকের কাছে শার্টে কালো সানগ্লাস ঝুলানো অল্পস্বল্প গোলাপি অধর।মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। বেশি বড়ো নয় বেশ ছোটখাটো একটা ট্রলি হাতে আর্শিয়ান ভাই দাঁড়িয়ে পেছন ছিলো তাসরিফ সাথে ছোট কাকা তাদের হাতেও ব্যাগ। আষাঢ় তখন একপলক দেখে আর্শিয়ান কে।হয়তো সম্ভব হলে আরো কিছু সময় দেখতো।আর এই একপলক দেখায় আর্শিয়ান ভাই ছোট আষাঢ়’র ছোট হৃদয়ে জুড়ে বিশাল বড়ো দাগ কেটে দিয়ে ছিলো।আষাঢ় জানে না সেদিন আর্শিয়ান ভাইয়ের বুকের ভেতর কিছু হয়েছিল কি না।তবে আষাঢ়’র হয়েছিলো।সেটা তখন মোহ মনে হলেও আষাঢ় ধীরে ধীরে উপলব্ধি করতে পারে সেটা পরে ভালোবাসায় রূপ নিয়েছে।আর এখন সেটা তীব্র আঁকড়া ধারণ করেছে।আষাঢ় জানে না আদৌও এর পরিণয় হবে কি না কিন্তু ভালোবাসায় তো আর দোষ নেই। এটা কখন কিভাবে হয়ে যায় কারোর প্রতি সেটা আমরা বুঝতেই পারি না।আষাঢ় দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। তবে এখন থেকে নিজে কে যথেষ্ট সামলে চলার চেষ্টা করবে আষাঢ় নিজে কে।এতোদিন যদিও ভেবেছে আর্শিয়ান ভাই হয়তো কোনো এক সময় ওর ভালোবাসা বুঝতে পারবে নিজেও ভালোবাসবে।কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে আর্শিয়ান ভাই কোনো দিন এসব বুঝতে পারবে না।
আষাঢ় বাইরে তাকিয়ে ছিলো।হঠাৎ গাড়ি থেমে যাওয়ায় নড়েচড়ে উঠলো। বুঝতে সক্ষম হলো ওরা বাড়িতে চলে এসছে।আর্শিয়ান গাড়ি থেকে নামতে নামতে আষাঢ় কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
-“বাড়ি চলে এসছি আষাঢ়।
নেমে পড়।”
আর্শিয়ান নেমে দারোয়ান চাচার কাছে চাবি দিয়ে গাড়ি গ্যারেজে রাখতে বলে দিলো।আষাঢ় নেমে বাড়ির ভেতর দিকে যেতে লাগলো।আর্শিয়ান ফুলের পলিথিন ব্যাগ টা নিয়ে লম্বা লম্বা কদম ফেলে আষাঢ় কে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময় গম্ভীর কণ্ঠে বলে গেলো,
-“এখন রুমে গিয়ে একবার আয়নার সামনে দাঁড়াবি মাথামোটা।”
আষাঢ় বুঝতে পারে না। আয়নার সামনে কেনো দাঁড়াতে বললো?তবে মনে মনে ঠিক করলো সত্যি একবার আয়নার সামনে দাঁড়াবে রুমে গিয়ে।
——
অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা চললো।তবে মেহমান সব বিদায় নিয়েছে রাত ন’টার মধ্যে।মোহনার বাবা-র বাড়ি থেকে আজ ওদের নিতে চাইলেও আষাঢ় এর আর্শিয়ান এর মা দিলেন না।আজ এতবড় একটা অনুষ্ঠান হলো।গতকাল বিয়ে হলো।মেয়ে টার উপর দিয়ে কম দখল তো আর যায় নি।তাই সবাই বুঝিয়ে-সুঝিয়ে কাল মোহনা আর নাসির কে পাঠাবে বলে আশ্বাস দিলো।মোহনার বাবা মা ভীষণ খুশি হলেন।মেয়ে কে সবাই আদর যত্ন বেশ ভালোই করছেন ঠিক বুঝতে পারে মেয়ের মুখ দেখে।একমাত্র মেয়ে তাদের। মেয়ের সুখই তাদের সুখ।মেয়ের দিক টা বিবেচনা করে ওনারও রাজি হয়ে বাড়ি ফিরে গেলো।
বাসর ঘর সব কাজিন দল মিলে সাজালো।তারজন্য অবশ্য মোটা অংকের একটা টাকা নিয়েছে নাসির’র থেকে।নাসির অবশ্য জোর ধরে নি।টাকা দিয়ে সবাই কে বিদায় করে ঘরে চলে গেলো।নাসির দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করলেও আয়াত বাইরে থকেও দরজা বন্ধ করলো।রাত তখন একটার কোঠা ছুঁই ছুঁই করছে। সবাই ঘুমে ঢুলঢুল করছে।তায়েফ তায়ুশ কোনো রকম রুমে গেলো।বড়রাও যে যার রুমে গেলো।নাসির এর কক্ষ হতে আষাঢ় এর কক্ষ বেশ দূরে।আর্শিয়ান ভাইয়ের রুম সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আষাঢ় চোখ ঢলে ঢলে নিজের রুমের উদ্দেশ্যে চালিত পা জোরা থামালো।চোখে তখন ঘুম সব আবছা আবছা দেখছে।আষাঢ় চোখ পিটপিট করে দরজায় তাকিয়ে আর্শিয়ান কে দেখলো।আষাঢ় ভ্রু কুঁচকালো।এক সেকেন্ড সময় ভেবে নিলো এটা স্বপ্ন। রোজকার ন্যায় আজও আর্শিয়ান ভাই দরজায় দাঁড়িয়ে আষাঢ় কে দেখছে।আষাঢ় রোজ স্বপ্নে এমন টা দেখে।আষাঢ় নিজের রুমে যাচ্ছে আর আর্শিয়ান ভাই নিজের রুম থেকে আষাঢ় কে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে।আসলে তেমন কিছু হয় না।আষাঢ় এসব বাস্তবে ভাবে এমন তাই ঘুমালেও এসব স্বপ্নে দেখে।তাই ভাবলো এখনো হয়তো স্বপ্নে আর্শিয়ান ভাই ওকে দেখছে।
রাগ হলো।এটা বাস্তব হলো কি এমন ক্ষতি হয়?
মুখ ভেংচি কাটলো। রাগ নিয়ে মুখ বেঁকিয়ে বলে উঠলো,
-“রোজ স্বপ্নে না এসে একবার বাস্তবেও তো এভাবে মুগ্ধ হয়ে আমায় দেখতে পারেন না-কি!
আর একবার যদি স্বপ্নে এসেছেন খুব খারাপ হবে মিস্টার আর্শিয়ান তালুকদার।”
লাস্ট ওয়ার্নিং এটা।”
#চলবে….