আমার প্রেয়সী পর্ব-০৫

0
13

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_৫
#জান্নাত_সুলতানা

আষাঢ় আর্শিয়ান এর কথার মানে তখন বুঝতে পারে নি।বুঝতে পারে নি বললে ভুল হবে। বুঝে ছিলো।ভেবেছিল আর্শিয়ান ভাই হয়তো আবার থাপ্পড় দেওয়ার কথা বলেছে।কিন্তু না তেমন নয় ব্যাপার।রুমে এসে আয়নার সামনে দাঁড়াতে নজরে আসে ওড়না একপাশে সরে গিয়েছে।আর গলা বি কার্ট হওয়াতে ইনার এর ফিতা অল্পস্বল্প উঁকিঝুঁকি মারছে। এটা দেখার পর লজ্জায় তখন থেকে রুমে বসে আছে আষাঢ়।
আষাঢ় বিছানায় বসে নখ কাটছে দাঁত দিয়ে। তখন আয়াত এলো।বোন কে এভাবে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে এসে জিগ্যেস করলো,

-“কি ব্যাপার এখানে বসি আছিস কেনো?
নিচে চল। ছোট ফুপি এসছে।”

-“কি?
তোমার মাথা ঠিক আছে ফুপি কোথা টপকালো?”

-“সিঙ্গাপুর থেকে টপকেছে।
আগে না-কি সব ঠিক করা ছিলো।”

আষাঢ় আর কিছু বললো না। আয়াত কে ফেলে আগে আগে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
আয়াত নিজেও পেছন পেছন বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। অদ্ভুত ব্যাপার মেয়ে টার গাল তখন সামন্য লালচে আকার ধারণ করেছে।
আষাঢ় অনেক আগে নিচে নেমে গিয়েছে। আয়াত সিঁড়ির কাছে গিয়ে থমকালো।এখানে একটা গেস্ট রুম রয়েছে।আয়াত বুকের ভেতর ধুকপুক ধুকপুক পাশে একপলক রুমের ভেতর উঁকি দিয়ে চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই ভেতর থেকে পুরুষালী গম্ভীর কণ্ঠে কেউ বলে উঠলো,

-“স্টপ আয়াত।
আর এক পা এগুলো খুব খারাপ হবে।”

আয়াত এর পা জোড়া আপনা-আপনি থেমে গেলো।বুকের ভেতর আগের চেয়ে বেশি জোরে হৃদপিণ্ড টা লাফ লাফি করতে লাগলো।আয়াত আস্তে করে একটা ঢুক গিলে। ভেতর থেকে শক্ত পুরুষালী হাত আয়াত এর হাত হেঁচকা টানে ভেতরে টেনে নিতেই আয়াত চমকে ওঠে চোখ বন্ধ করে গড়গড় করে বলে উঠলো,

-“কি করছেন সাঈদ ভাই?
বাড়ি ভর্তি মানুষ কেউ দেখলে কেলেঙ্কারির শেষ থাকবে না।”

-“বাট হোয়াই?
আমি কি তোর সাথে রোমান্স করছি?”

সাঈদ এর এমন প্রশ্নে হকচকালো আয়াত।চোখে অশ্রু জমা হয়।দ্রুত সাঈদ এর হাত নিজের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

-“আমি নিচে যাবো।”

-“সে-তো যাবি।
তার আগে বল এতো সাজুগুজু কার জন্য করেছিস?
খবরদার আয়াত তুই যদি এভাবে নিচে যাস খুব খারাপ হবে।”

আয়াত ফ্যাল ফ্যাল করে সাঈদ নামক বিদেশি দেখতে মানুষ টার দিকে তাকিয়ে রইলো।
এই মানুষ টা বেশি বাড়াবাড়ি করে সব সময়। আজ তিন বছর ধরে তাদের সম্পর্ক।আয়াত এর এসব প্রথম প্রথম ভালো লাগলেও এখন সে অতিষ্ঠ।আবার ভালো লাগে।এতো কেয়ার আয়াত কে নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি। কোথাও যেতে না দেওয়া।হয়তো ভালোবাসে বলেই এতো করে। আচ্ছা সব পুরুষ কি এমন?নিজের শখের নারী কে একটু বেশি যত্ন করে চোখে চোখে রাখে সারাক্ষণ ভয়ে থাকে?
হ্যাঁ থাকে সাঈদ ব্যতিত আরো একটা পুরুষ কে সে চিনে যে নিজের প্রেয়সী কে নিজের চেয়েও বেশি যত্ন করে চোখে চোখে রাখে।কত টা ভালোবাসে মানুষ টা নিজের প্রেয়সী কে এসব দেখতেও ভালো লাগে।
আয়াত নিজের ভাবনার মাঝেই ঠোঁট শক্ত আঙুল এর ঘষা অনুভব করে।সাঈদ নিজের বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে আয়াত এর অধর থেকে লিপস্টিক মুছে ফেলেছে। টিস্যু দিয়ে চোখের মেক-আপ মুছিয়ে দিলো।কিন্তু লিপস্টিক উঠছে না।সাঈদ ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো,

-“এই, এই ঠোঁটে কি লিপস্টিক দিয়েছিস?
এগুলো উঠে না কেনো?”

সত্যি লিপস্টিক একটু নড়চড় হয় নি।শুধু সামন্য ঘেঁটে গিয়েছে।আয়াত চোখ কটমট করে তাকালো সাঈদ এর দিকে।সাঈদ এবার অদ্ভুত এক কাজ করে বসলো হঠাৎ।
আয়াত এর অধর জোরা নিজের অধর চেপে ধরলো। আয়াত ছটফট করলো।তবে সময়ের সাথে সাথে শান্ত নদী হয়ে গেলো। নিজেও রেসপন্স করে।সাঈদ অনেক সময় নিয়ে নিজের কাজ চালালো।বেশ অনেক্ক্ষণ সময় পর ছেড়ে দিয়ে মুচকি হেঁসে আয়াত এর অধরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

-“এখন ঠিক আছে।”

আয়াত জোরে জোরে শ্বাস ফেলে চোখ তুলে তাকালো।লজ্জায় আয়াত মাথা নিচু করে সাঈদ কে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
সাঈদ পেছনে দাঁড়িয়ে নিজেও হাসলো।

——

নাসিমা বেগম এর দুই ছেলে।সাঈদ, সাইফ।সাঈদ লেখাপড়া শেষ। দেশে যে বিজনেস রয়েছে সেটাই আপাতত দেখভাল করবে। আর সাইফ আষাঢ় এর সমান।তাই সাইফ কে আষাঢ় এর কলেজে ভর্তি করা হবে। তার কারণ তারা বাংলাদেশ শিফট করেছে এই বছর। সাঈদ এর বাবাও ওদিক দিয়ে সব গুছিয়ে দেশে চলে আসবে।আষাঢ় এসব সাইফ এর থেকে শুনছে বসে বসে।ছেলে টা অনেক মিশুক। আগেও বাংলাদেশ এলে এখানে থাকতো ওরা।তাই কোনো সংকোচ নেই ছেলে টার মাঝে।কিন্তু আষাঢ় এর ভালো লাগছে না।
এদিকে আর্শিয়ান একটু পরপরই এদিকে তাকিয়ে গম্ভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। আষাঢ় সেটা দেখে দাঁতে দাঁত চেপে বসে আছে সাইফ এর সাথে।
মেয়ে টা তখন ঘটনার পর থেকে কেমন আর্শিয়ান এর সামনে যাচ্ছে না। তবে মনে ওই ঘটনার পর কিছু চলছে।আর্শিয়ান কে কেমন ইগনোর করছে।আর্শিয়ান সেই থেকে গম্ভীর হয়ে ওকে দেখছে। এতে করে আষাঢ় কিছু বোঝার চেষ্টা করছে।কিন্তু কি সেটা বুঝতে পারছে না আর্শিয়ান।আর্শিয়ান নাসির এর সাথে দাঁড়িয়ে ছিলো।ঠিক তক্ষণি তাসফিয়া আর আয়াত এলো কোথা থেকে। তাসফিয়ার
হাতে একটা টাকার বান্ডিল। সেটা আর্শিয়ান এর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে জানালো,

-“ভাইয়া যা ফুল এনেছে তা দিয়ে নিচে ডেকোরেশন করতে লেগে গিয়েছে।কিন্তু বাসর ঘর সাজানো এখনো বাকি।তাসরিফ ভাই কে খোঁজে পাচ্ছি না।
তুমি প্লিজ ফুল গুলো নিয়ে এসো না।
মদন কাকা বলতাম। কিন্তু ওনাকেও খোঁজে পাচ্ছি না।”

তাসফিয়ার কথা শেষ করে টাকা গুলো আর্শিয়ান এর হাতে নেওয়ার জন্য ইশারা করলো।আর্শিয়ান ধরলো না।পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে কনুইয়ের উপর ভাজ করে রাখতে রাখতে গম্ভীর স্বরে বললো,

-“তোরা নিয়ে নে এটা।তবে তার জন্য একটা শর্ত আছে।
মানলে বল না মানলে যার বাসর তাকে বল ফুল আনতে।”

নাসির চোখ বড় বড় করে তাকালো আর্শিয়ান এর দিকে। ব্যাটা ভীষণ চতুর। ঠিক জানা আছে যা শর্ত দিবে তা যে নাসির কিছুতেই মানবে না সেইজন্য এমন বলা।এখন জামাই নিজে তো আর নিজের বাসর এর জন্য ফুল আনতে যেতে পারবে না।
অগত্যা ভাবলো রাজি হয়ে যাবে। নাসির কিছু বলবে তার আগেই তাসফিয়া বলে উঠলো,

-“আচ্ছা আমরা চেষ্টা করবো।”

আয়াত সায় দিলো।নাসির ওদের দিকে চোখ কটমট করে তাকালো।মনে মনে বেয়াদব, স্বার্থপর বলতেও ভুলে না।
আর্শিয়ান ওর হাতে চাবির গোছা ঘুরাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।
আয়াত তাসফিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,

-“আমি পারবো না।
তুই গিয়ে চেষ্টা কর।”

তাসফিয়া শয়তানি হেঁসে আয়াত এর দিকে তাকিয়ে আষাঢ়’র কাছে চলে গেলো।
আয়াত দূরে দাঁড়িয়ে দেখলো তাসফিয়া কিছু বলছে। যা শুনে আষাঢ়’র মুখের চিত্র পাল্টে গেলো।দ্রুত বসা ছেড়ে হন্তদন্ত হয়ে আয়াত’র সামনে দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।
তাসফিয়া ফিরে এসে জানালো,

-“কাজ হয়ে গেছে।
সাথে টাকা।”

—-

আষাঢ় বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে দেখলো আর্শিয়ান বাইকে বসে আছে।
আষাঢ় দ্রুত গেইট এর কাছে এগিয়ে গেলো।চারদিকে বারকয়েক তাকিয়ে কিছু খুঁজল। অতঃপর আর্শিয়ান এর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

-“এখানে একটা মেয়ে ছিলো?”

আর্শিয়ান কোনো প্রতিত্তোর করে না। আষাঢ় উত্তর এর অপেক্ষা করে। তবে উত্তর না পেয়ে আবারও বলে উঠলো,

-“আপনি এখানে বসে আছেন কেনো?
কোথা যাচ্ছেন?”

আষাঢ় কৌতুহল নিয়ে জানতে চায়।আর্শিয়ান বাইকে থেকে নেমে পড়লো।পাশে সিকিউরিটি কে উদ্দেশ্য করে বললো,

-“কাকা গেইট খোলে দিন।”

আষাঢ় এর হাত ধরে টেনে গাড়ির দিকে এগুতে এগুতে আষাঢ়’র প্রশ্নের জবাবে জানালো,

-“মেয়ে দেখতে।
চল তোকেও দেখাবো।”

#চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে