আমার প্রেয়সী পর্ব-০৪

0
9

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_৪
#জান্নাত_সুলতানা

-“বিয়ে দিলে এতোদিনে বাচ্চাকাচ্চা থাকতো দুই চার টা।আর এখনো সামন্য একটা কফি বানাতে পারিস না?”

আর্শিয়ান গম্ভীর স্বরে কথা টা বলেই ঠাশ করে কফির মগ টা সেন্টার টেবিলে উপর রেখে দিলো।আষাঢ় তখন দরজায় দাঁড়িয়ে দুঃখী দুঃখী মুখ করে তাকিয়ে আছে কফির মগ এর দিকে। বজ্জাত ব্লাক কফি।বানানোর সময় তো আষাঢ় একবার চেক করেছিল তখন তো দারুণ লেগেছিলো।যদিও তেঁতো ছিল।কিন্তু ভালো হয়েছে সব কিছু পারফেক্ট লেগেছিল।তাহলে এখন আর্শিয়ান ভাই এর হাতে গিয়ে কেনো বাজে হয়ে গেলি?মনে মনে বেশ কিছু গালি আওড়ালো কফি কে উদ্দেশ্য করে। তবে আর্শিয়ান এর ধমকে কেঁপে উঠল আষাঢ়।আর্শিয়ান গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,

-“এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?
বিদায় হ এখান থেকে।”

আষাঢ় আর্শিয়ান এর কথায় ঘুরে দাঁড়ালো। ওদিকে ফিরে মুখ ভেংচি কাটলো। বজ্জাত ব্যাটা একটা ধন্যবাদ দিলো না।আর না রুমে যেতে বললো একবার।আষাঢ় বিড়বিড় করে বললো,

-“আষাঢ় কোনো পঁচা আবর্জনা। রুমে গেলে রুম নোংরা হয়ে যাবে? যে একবার রুমের ভেতর যেতে বললো না।উল্টো বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে কত গুলো কথা শুনিয়ে দিলো।”

আষাঢ় যাওয়া মাত্র আর্শিয়ান ঠাশ করে দরজা বন্ধ করে দিলো আষাঢ় অল্পস্বল্প চমকে উঠলো।তবে দ্রুত রুমে চলে গেলো। আর্শিয়ান দরজা বন্ধ করে এগিয়ে গিয়ে কফি টা হাতে নিয়ে সোফায় বসলো।ল্যাপটপ কোলে তুলে সেটা অন করে কফির মগে ঠোঁট বসিয়ে এক চুমুক খেয়ে হাতের আঙ্গুল ল্যাপটপে চালাতে চালাতে হতাশার শ্বাস ফেলে মূদু স্বরে বলে উঠলো,

-“আর কতদিন যে কফি কে রাতের সঙ্গী করতে হবে আল্লাহ ভালো জানে।”

——

-“কিছু করবে না-কি দলবল নিয়ে সবার সাহায্য করলে হবে?”

আর্শিয়ান খাওয়া বন্ধ করে দিলো।খাবার টেবিলে সবাই চুপ হয়ে গেলো আর্শিয়ান এর বাবা আবার বলে উঠলো,

-“বিদেশ এতো ভালো জব ছেড়ে দেশে চলে এলে।তখন কিছু বলি নি।এখন তো অন্তত আমাদের ব্যবসার দিকে একটু নজর দিতে পারো।আর দু’জন তো একদম নামি-দামি ব্যক্তি ওনারা তো আমাদের মতো ছোটখাটো কোম্পানিতে জব করবে না।তা তুমি ও নিশ্চয়ই এরচেয়ে ভালো কোনো কোম্পানিতে জব করবে না-কি নিজে ব্যবসা করবে?”

লাস্ট এর কথা গুলো নাসির আর তাসরিফ কে উদ্দেশ্য করে বলেছে সেটা বুঝতে কারোই বাকি নেই।তালুকদার স্টিল কোম্পানি।বেশ বড়সড় সাথে বিশাল নামডাক তাদের। কিন্তু নাসির আর তাসরিফ বেশ ছোটখাটো কোম্পানিতে জব করে।যেখানে নিজেদের কোম্পানি এতো বড় সেখানে তারা অন্য কোথাও জব করে সেটার কারণ তারা চায় নিজেরা কিছু করতে। দাদার মতো বাপ চাচাদের মতো হতে।
নাসির বড়ো ভাইয়ের দিকে একবার তাকিয়ে আর্শিয়ান এর দিকে তাকালো।আর্শিয়ান তখন গম্ভীর মুখে বসে আছে। আষাঢ় ছোট কাকার পাশে বসে আছে। ভয়ে পাচ্ছে বেচারি।আর্শিয়ান এর বাবা ভীষণ রগচটা মানুষ। বাপ ছেলের মধ্যে সাপেনেউলের সম্পর্ক।এখন নিশ্চয়ই আবার ঝামেলা করবে আর্শিয়ান।
আর্শিয়ান এর মা শর্মিলা বেগম ছেলের পাশে এসে দাঁড়ালো।
ছেলের কাঁধে হাত রাখলো আলগোছে।আর্শিয়ান এই স্পর্শের অর্থ জানে।
তাই তো মাথা ঠান্ডা করে খাবার প্লেটে হাত ধুতে ধুতে জিগ্যেস করলো,

-“আমি কি আমার চলার খরচ নেই তোমাদের থেকে?”

-“আর্শিয়ান,তুমি রেগে যাচ্ছো কেনো?
ভাইজান তোমার ভালোর জন্য বলছে এসব।দেখছো না দু’টো কেমন গোল্লায় যাচ্ছে। অদ্ভুত সব কাজকর্ম করে।”

তোফায়েল তালুকদার এর কথা গুলো নিজের ছেলে আর ভাই কে উদ্দেশ্য করে বললো।তাসরিফ বাবা-র দিকে চোখ ছোট ছোট করে একপলক তাকিয়ে ফের খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।
আর্শিয়ান কারোর কোনো কথার জবাব দিলো না।মায়ের কাপড়ের আঁচলে হাত মুখ মুছে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।
এদিকে বাড়িতে নতুন বউয়ের সামনে এমন সব ঘটনায় নাসির কিছু টা লজ্জা পেলো।মেয়ে টা সহজ সরম।মনে বেশি প্যাচ নেই।নাসির সেটা কাল রাতেই টের পেয়েছে।নাসির রুমে যাওয়ার পর সালাম দিয়ে টুকটাক কথা বলে ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়লো।নাসির নিজেও কিছু টা কনফিউজড ছিলো কি করবে কি বলবে ভেবে কিন্তু মেয়ে টা একদম স্বাভাবিক আচরণ করাতে সহজেই সব অস্বস্তি ভুলে নিজেও এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলো।

-“ছোট বাবাই চলো।
আমার কলেজ লেইট হচ্ছে।”

আষাঢ় এর কথায় নাসির বউয়ের দিক হতে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিলো।ততক্ষণে মেয়ে টা রান্না ঘরে চলে গিয়েছে বড় জা এর সাথে।
নাসির পানি খেয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে বললো,

-“তুই একমিনিট দাঁড়া আমি দুই মিনিটে আসছি।”

বলতে বলতে রান্না ঘরের সামনে বেসিনে গিয়ে হাত ধুয়ে ফিরে এসে টিসু আর বাইকের চাবি নিয়ে আষাঢ় এর হাত ধরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো।আষাঢ় এর বাবা আজ শুধু অফিস গিয়েছে। সাথে তায়েফ তায়ুশ কেও স্কুল নিয়ে গিয়েছে। দুপুরে ফিরে আসবে। কারণ বিকালে বাড়িতে অনুষ্ঠান শুরু হবে।

—–

পুরো বাড়ি ডেকোরেশন করা হয়েছে। কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে আসার চমকালো।পুরো বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো।শিউলি বেগম রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এসে মেয়ে কে এভাবে ঘুরতে দেখে তাগাদা দিয়ে বললো,

-“আষাঢ় মা জলদি গোসল সেরে নে।
তারপর তায়েফ তায়ুশ এর সাথে খাবার খেতে আয়।মানুষ জন আসতে শুরু করে দিবে এক্ষুণি।”

আষাঢ় মায়ের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসলো।শিউলি বেগম জাম কালার একটা শাড়ী পড়েছে। কি সুন্দর লাগছে।এই শাড়ী টা আষাঢ় মা কে আগে পড়তে দেখে নি।আষাঢ় এর মা চাচি মোদ্দা কথা বাড়ির সব মহিলারা শাড়ী পড়ে।কিন্তু আজ মা কে দেখে আষাঢ় এর শাড়ী পড়তে ইচ্ছে করছে। আষাঢ় মায়ের দিকে তাকিয়ে আহ্লাদী স্বরে বললো,

-“আম্মু আমিও শাড়ী পড়বো।”

-“না মা।
শাড়ী অনেক বড়ো সামলাতে পারবে না। আবার গরম অনেক কষ্ট হবে।তোমার বড় বাবাই সবার জন্য শপিং করে এনেছে সকালে।
আমি তোমার টা রুমে রেখে এসছি।ওটাই পড়ে এসো।”

আষাঢ় নতুন ড্রেস এর কথা শুনে খুশি হয়ে গেলো।তবে মনে মনে ঠিক করলো একদিন শাড়ী পড়বে।আষাঢ় মা কে বলে রুমের দিকে পা বাড়ালো।আয়াত এর রুমের সামনে দিয়ে আসার সময় সেখানে একবার উঁকি দিলো।কারণ বউ কে সেখানে রেডি করছে তাসফিয়া আয়াত আর একজন মেক-আপ আর্টিস্ট মিলে।
আষাঢ় ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় ছোট কাকার বউ কে দেখলো।নাম মোহনা।গায়ের রঙ টাও উজ্জল ফর্সা। গোলগাল মুখ চেপ্টা নাক।ঠোঁট গুলো একটু মোটা।তবে চেহারার সাথে মানানসই। এখন সাজানোর ফলে আরো সুন্দর নাদুসনুদুস লাগছে।
আষাঢ় কে আয়নায় দেখে মোহনা হাসলো।
আষাঢ় নিজেও হাসলো।এটা দেখে আয়াত মুখ ভেংচি কেটে বললো,

-“এভাবে দাঁত বেড় করে না রেখে গিয়ে রেডি হ।”

আষাঢ় বোনের কথায় মুখে আধার নামিয়ে নিলো।থমথমে কণ্ঠে জানালো,

-“আমার দাঁত সুন্দর সেইজন্য দেখাই।
তোমার ইচ্ছে করলে তুমিও দেখাও।”

আয়াত কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে প্রস্থান করলো আষাঢ়। আয়াত সহ সবাই ফিক করে তখন হেঁসে উঠলো।
তাসফিয়া হাসতে হাসতে বললো,

-“ওকে না রাগালে তোর পেটের ভাত হজম হয় না।”

আয়াত কিছু বললো না। শুধু হাসলো। এই বোন কে সে ভীষণ ভালোবাসে।কিন্তু ব্যবহার দেখলে মনে হবে আষাঢ় কে আয়াত দুচোখে দেখতে পারে না। কিন্তু সবাই জানে আয়াত হয়তো বাবা মায়ের চাইতেও বেশি এই বোন কে ভালোবাসে।আষাঢ় নিজেও জানে।আর সেও বোন কে প্রচুর ভালোবাসে।

—–

আষাঢ় কালো একটা পাকিস্তানি থ্রিপিস পড়েছে।এটার গায়ে সাদা সাদা পাথর বসানো।খুব সুন্দর দেখতে। সুন্দরী রমণীর গায়ে সুন্দর এই ড্রেস টা চমৎকার মানিয়েছে।
আষাঢ় খাবার শেষ তায়েফ তায়ুশ এর সাথে বসে আছে। আনোয়ারা বেগম ওনার ছেলে আর স্বামী কে নিয়ে এসেছে। বাড়িতে মানুষ পানির ন্যায় থৈথৈ করছে।কিন্তু আষাঢ় এতো মানুষের ভীড়ে আষাঢ়’র চোখ শুধু আর্শিয়ান ভাই কে খুঁজে চলেছে। কিন্তু মানুষ টার পাত্তা নেই।
আষাঢ় চারদিকে দেখছে। তক্ষুণি আর্শিয়ান এর মা এলো।হাতে একটা শপিং ব্যাগ সেটা আষাঢ় এর দিকে এগিয়ে দিয়ে কণ্ঠে ব্যস্ততা নিয়ে বলে উঠলো,

-“আষাঢ় এটা তোর আর্শিয়ান ভাই কে দিয়ে আয় তো।
আমি যেতে পারছি না।সবাই কাজ করছে।তুই দিয়ে আয় না একটু কষ্ট করে।”

আষাঢ় চমকালো।আর্শিয়ান ভাই বাড়িতে? কখন এসছে?তবে প্রশ্ন মনে চেপে রেখে ব্যাগ টা হাতে নিয়ে বললো,

-“আচ্ছা বড় মা।”

-“জলদি যা।
ছেলে টা নিশ্চয়ই গোসল করে বসে আছে। কখন ডেকেছে আমায়।”

তিনি আষাঢ় কে ঠেলে সিঁড়ির দিকে দিয়ে রান্না ঘরে ছুটলেন আবার।
আষাঢ় গুটিগুটি পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপর এলো।
নাসির এর ঘরের পাশে দক্ষিণ দিকে আর্শিয়ান ভাইয়ের রুম।আষাঢ়’র বুক ধুকপুক করছে। তবুও সাহস নিয়ে এগিয়ে গেলো।দরজায় হাত রাখতেই সেটা স্বল্প আওয়াজ করে খুলে গেলো।
আর্শিয়ান দরজা খোলার শব্দে কাবাড থেকে কাপড় বেড় করতে করতে জিগ্যেস করলো,

-“কে?”

-“আমি।
আপনার পাঞ্জাবি।”

আষাঢ় আসার সময় শপিং ব্যাগে ভেতর নেড়েচেড়ে দেখছে। কালো একটা পাঞ্জাবি আছে ওটার ভেতর। তখন থেকে আষাঢ় এর মন কিছু টা ফুরফুরে হয়ে গিয়েছে।
আষাঢ় ঘরের ভেতর উঁকিঝুঁকি মারছে ঠিক তক্ষুনি আর্শিয়ান ভেতর থেকে এসে ওর থেকে ব্যাগ টা টেনে নিলো গম্ভীর স্বরে আদেশ করলো,

-“যা।”

বলিষ্ঠ পেটানো শরীর টা অল্পস্বল্প পানির ছিটেফোঁটায় ভিজে আছে। মাথার চুল গুলো ভেজা।কি দারুণ স্নিগ্ধ লাগছে দেখতে।
আষাঢ় এর মন চাইলো একবার ছুঁয়ে দিতে এই তামাটে বর্ণের পুরুষ টা কে।কিন্তু মস্তিষ্ক বাঁধ সাধল।চোখ নিচে করে ফিরে আসার জন্য উদ্যত হতেই আর্শিয়ান ভাই পেছন থেকে গম্ভীর স্বরে বললো,

-“ওড়না ভালো করে গায়ে জড়াবি।নেক্সট টাইম এভাবে আমার সামনে এলে ভয়ংকর কিছু হলে সেটার জন্য আমাকে দায়ী করতে পারবি না।”

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে