আমার প্রেয়সী পর্ব-০৩

0
13

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_৩
#জান্নাত_সুলতানা

-“চোখ নিচে।
দ্বিতীয় বার তাকাতে দেখলে ভয়ংকর কিছু হবে।”

ছেলের বাড়ির খুব বেশি আত্মীয় স্বজনরা আসে নি।শুধু পরিবারের লোক।কিন্তু সন্ধ্যা হতে হতে বিয়ে পড়ানোর আগে মেয়ের আত্মীয় অনেকে এসে উপস্থিত হয়েছে।মেয়ের আপন কোনো ভাই বোন নেই।কিন্তু আত্মীয় স্বজনদের মাঝে বেশ কিছু ছেলেমেয়ে এসছে। এরমধ্যে একটা ছেলে বারবার আষাঢ় এর দিকে তাকাচ্ছিল।আর এখন খাওয়া শেষ আষাঢ় তায়ুশ এর সাথে বসে ছিলো।তক্ষণি ছেলেটাও সেখানে উপস্থিত হলো।ইনিয়েবিনিয়ে আষাঢ় এর সাথে কথা বললো।আষাঢ় বিরক্ত। কাউ কে যে কিছু বলবে সে টাও পারছে না। শেষমেশ বাধ্য হয়ে মায়ের সাথে থাকছে। বিষয় টা সবটাই অবলোকন করেছে আর্শিয়ান শুধু বাড়ি ভর্তি মানুষ সেইজন্য কিছু করতে পারছে না।
আর্শিয়ান আষাঢ় কে চলে যেতে দেখে ফোঁস করে দম ছাড়ে।তায়ুশ এর পাশে গিয়ে বসে ছেলেটার দিকে গম্ভীর আর দাঁতে দাঁত পিষে উপরোক্ত হুমকি টা দিলো।
ছেলে টা বুঝতে পারছে না কি বলছে আর্শিয়ান।তবে আর্শিয়ান এর ভয়ংকর চাহনি ছেলে টা ভয় পাচ্ছে।বয়স আর কেমন হবে হয়তো আষাঢ়’র থেকে বছরখানেক এর বড়ো।আর্শিয়ান ছেলেটার ভীতু চাহনি আর কথার মানে যে বুঝতে পারে নি তা ঠিক ঠাহর করতে পারে। এবার তায়ুশ কে ছেড়ে ছেলেটার পাশে বসলো।এক হাতে ছেলেটার কাঁধে চাপড় মারলো।
আরেক হাতের আঙ্গুল সামান্য উঁচিয়ে আষাঢ় কে দেখিয়ে বললো,

-“শী ইজ অনলি মাইন, অনলি মাইন।সো keep ইউর আইস ডাউন অর ইউ উইল রিগ্রেট [অনুশোচনা] ইট লেটার।”

ছেলে টা ফ্যালফ্যাল করে আর্শিয়ান এর দিকে তাকিয়ে রইলো।সে কখনো কোনো মেয়ের আশেপাশে যায় নি।ভালো লাগে নি আজ পর্যন্ত কাউ কে।আষাঢ় কে দেখে কেনো জানি ভালো লাগলো।আর কথা বলার জন্য মন টা কেমন করছিলো।তবে সাহস পাচ্ছিল না।শুধু নিজের বোনের থেকে অনুপ্রেরণা মুলুক মন্তব্য পেয়ে অনেক টা সাহস নিয়ে কথা বলতে এসছিল।তাও মেয়ে টা বেশি কিছু বলে নি।শুধু বর ওর কাকা হয় আর কিসে পড়ে এসব বলার পরই তো ওর মায়ের কাছে চলে গেলো।
ছেলেটার ভাবনার মাঝেই আর্শিয়ান ওর গালে আলতো করে চাপড় মেরে বলল,

-“মাইন্ড ইট।”

অতঃপর পাঞ্জাবির হাতা ফোল্ড করতে করতে চলে গেলো। ছেলে টা তখনো দুঃখী দুঃখী মুখ করে বসে আছে।

—–

-“শক্ত করে ধরে বোস।”

আষাঢ় চমকে উঠলো। আর কিভাবে ধরবে?মানুষ টাকে যতোই মনেপ্রাণে ভালোবাসে মনের ঘরে এই মানুষ টা যতোই রাজত্ব করে। কিংবা কল্পনায় মানুষ টা কে জড়িয়ে ধরা সেসব যতোই করে। কিন্তু বাস্তবে?আষাঢ় তো একদমই প্রস্তুত নয়।অতোটা সাহসও হয় নি।আষাঢ় বুঝতে পারছে ওর হাত কাঁপছে হয়তো পুরো বডি কাঁপছে। আর্শিয়ান ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে। নিজে দুই হাতে আষাঢ় এর হাত নিজের পেটের উপর এনে রেখে দিয়ে বললো,

-“এভাবে ধর।
নয়তো ভয় পাবি।”

আষাঢ় আর দ্বিমত পোষণ করার কোনো রাস্তা পেলো না। ব্যাগ কাঁধে নিয়ে জড়িয়ে ধরে রইলো সেভাবে। আর্শিয়ান বাইক স্টার্ট করলো।
বিয়ে পড়ানো শেষ খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষ করে সব গুছিয়ে বেরুতে বেরুতে রাত হয়ে এলো।বউ আর বর একটা গাড়িতে গিয়েছে। সাথে তাসরিফ রয়েছে। আর বাকি দুইটিতে পরিবারের সবাই। নাসির আসার সময় তো বাইকে করে এসেছে।এখন বাইকে করে আর্শিয়ান যাওয়ার কথা ছিলো না। তাসরিফ যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আষাঢ়ও বায়না ধরলো বাইকে যাবে।এদিকে হঠাৎ আর্শিয়ান তাসরিফ কে কাকার সাথে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে বাইক নিয়ে আসছে জানালো।
বাড়ির কাছাকাছি চলে এসছে।আর কিছু টা পথ পর তালুকদার বাড়ি।হঠাৎ আর্শিয়ান বাইক থামালো।পাশে কিছু দোকানপাট আছে। আষাঢ় ভ্রু কুঁচকে কিছু জিগ্যেস করবে তার আগেই আর্শিয়ান বলল,

-“চুপ করে বসে থাকবি।
আমি পাঁচ মিনিট এর ভেতর চলে আসবো।”

আষাঢ় বাইক থেকে নেমে সেটায় ঠেশ দিয়ে দাঁড়ালো। পাশে কিছু ছেলেপেলে দাঁড়িয়ে সিগারেট টেনে ধোঁয়া গুলো আষাঢ় এর দিকে তাকিয়ে লোভাতুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ছাড়ছে।
আষাঢ় ভয় পেলো।ছেলেগুলো এই পাড়ারই।এরা খুব বাজে। এদের নাম চুরি ডাকাতি থেকে শুরু করে ধর্ষণ কোনো কিছুর কেস বাদ যায় নি।শুধু বড়োলোক পরিবারের ছেলেপুলে বলে বেঁচে যায়।আষাঢ় ভয়ে একদম গুটিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ছেলে গুলো বারকয়েক শীষ বাজালো
আষাঢ় তাকালো না ওইদিকে। এরমধ্যে আর্শিয়ান হাতে একটা পলিথিন ব্যাগ নিয়ে এসে হাজির হলো।আষাঢ় কে এমন ভয়ে চুপসে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। ভ্রু কুঁচকে পাশে তাকালো।ছেলে গুলো আর্শিয়ান কে দেখে ভয়ে দৌড়াদৌড়ি করে চলে গেলো। আর্শিয়ান বিড়বিড় করে বলে উঠলো,

-“সবার চোখে শুধু এটার উপর পড়ে।দেশে কি মেয়ের অভাব?পরে দেখছি তোদের।”

আষাঢ় আর্শিয়ান কে দেখে স্বস্তি পেলো।মাথা ঘুরিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখলো ছেলে গুলো চলে গেছে। আষাঢ় আঁটকে রাখা দম টা ফোঁস করে ছাড়ে।আর্শিয়ান ভাই কে এই পড়ায় কমবেশি সবাই চিনে।অনেকে সম্মান করে। আবার অনেকে ভয় পায়।কারণ আর্শিয়ান ভাই এর আস্ত একটা দল রয়েছে।
আষাঢ় এর ভাবনার মাঝেই আর্শিয়ান ওর হাতের পলিথিন ব্যাগ টা ওর হাতে নেওয়ার জন্য এগিয়ে দিয়ে বলল,

-“ওঠে বোস।”

আষাঢ় সেটা হাতে নিয়ে নেড়েছে দেখলো।ভেতরে ভেলপুরি আর ফুচকাও দেখা যাচ্ছে। অনেক গুলো বাড়ির সবার জন্য নিয়েছে। আষাঢ় একটু আগের সব ভুলে গেলো।ভয়ে কেটে মুখে হাসির ঝলক দেখা গেলো।

—–

বাড়িতে নতুন বউ কে সবার দেখা শেষ রুমে নিয়ে গেলো মেঝো মা।খাবারও রুমে দিলো।সবার খাওয়াদাওয়া শেষ করে নাসির কেও সবাই মিলে ঠেলেঠুলে রুমে পাঠালো।শুধু লিভিং রুমে আর্শিয়ান বসে রইলো।ফোনে গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু করছে সে। ছোট বড় সবাই যে যার রুমে চলে গিয়েছে।আর্শিয়ান প্রায় অনেক সময় পর রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।দোতলায় উঠতেই একদম করিডরে শেষ কর্নারে রুমের সামনে দরজায় দিকে দৃষ্টি পড়তেই ভ্রু কুঁচকে এলো।রাত বাজে সাড়ে বারো টা।আর তায়ুশ তায়েফ থেকে শুরু করে কেউ বাদ যায় নি দরজায় আড়ি পাতা থেকে।আর্শিয়ান ধুপধাপ পা ফেলে এগিয়ে গেলো।

-“তুমি কিছু শুনতে পাচ্ছো ভাই?”

-“আরে চুপ কর।
কিছু শুনতে পাচ্ছি না। কাকাই মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছেছ,,,

তাসফিয়ার কথায় তাসরিফ বলে উঠলো। তবে পুরো টা কথা সম্পূর্ণ করার আগেই ঘাড় ফিরিয়ে আর্শিয়ান কে ওদের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে থমথম খেলো।
আর্শিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে জিগ্যেস করলো,

-“এখানে কি করছিস তোরা?”

এতো সময় নিচু হয়ে বেঁকে থাকা সবাই চুপচাপ সটান হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো।তায়ুশ তায়েফ গিয়ে দাঁড়ালো একদম আষাঢ়’র পেছনে। এই দু’টো সব সময় আষাঢ়’র সাথে চিপকে থাকে।আষাঢ় বিরক্ত হলো।এখন তো সেই লুকানোর আশ্রয় পাচ্ছে না। সেখানে এই বিচ্ছু গুলো ওকে খাম্বা বানিয়েছে।তাসফিয়া একদম পেছনে আয়াত তাসরিফ এর পেছনে।আর আষাঢ় তাসরিফ সামনে। আষাঢ় চারদিকে তাকালো।কেউ যে এই ব্লাক কফির সামনে টুঁশব্দ করতে পারবে না আষাঢ় ভালোই জানে।তাই নিজেই একটু সাহস নিয়ে মেকি হেঁসে বললো,

-“এ হে,, কিছু না। ইয়ে মা,,

-“চোপ বেয়াদব।
পাঁচ সেকেন্ড, এরপর যদি এখানে কাউ কে দেখি খুব খারাপ হবে।”

তায়েফ তায়ুশ আষাঢ় কে ধাক্কা মেরে ফেলে চলে গেলো।আষাঢ় তাল ঠিক রাখতে না পেরে পড়তে পড়তে রেলিং ধরে দাড়ালো।ততক্ষণে সব গুলো এক দৌড়ে যে যার রুমে ঢুকে গিয়েছে। আষাঢ় সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে অসহায় চোখে তাকালো আর্শিয়ান এর দিকে।
নির্ঘাত দুই টা চর ফ্রী এখন। আষাঢ়’র কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আর্শিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে আবারও বলে উঠলো,

-“আমার জন্য কফি করে নিয়ে আসবি।দশ মিনিট সময়। এটা তোর শাস্তি স্টুপিট কোথাকার।”

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে