আমার প্রেয়সী পর্ব-০২

0
130

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_২
#জান্নাত_সুলতানা

আষাঢ় কলেজ বেশ কয়েকদিন ধরে সৈকত এর দেখা পাচ্ছে না।আজ দেখতে পেয়েছে। কিন্তু আষাঢ় অনেক টা অবাক হলো।সৈকত ছেলে টা সব সময় ওর আশেপাশে ঘুরাঘুরি করে। কিন্তু আজ ছেলে টা ওর দিকে তাকালো পর্যন্ত না।ভারি অদ্ভুত ঠেকালো আষাঢ়’র নিকট ছেলেটার হঠাৎ পরিবর্তনে।দুপুর দুই টা বাজে কলেজ ছুটি হলো।নাদিয়া আজ আসে নি। আষাঢ় একাই ক্লাস করেছে।কলেজ থেকে বেরিয়ে বাড়ির রাস্তায় হাঁটা ধরে।বাড়িতে তিন টা গাড়ি রয়েছে। একটা বাচ্চাদের স্কুল কলেজ আসা নেওয়া করার জন্য।আর একটা দিয়ে তিন ভাই অফিস যায়।আর একটা বাড়িতে থাকে।আর্শিয়ান ভাইয়ের। এটা আর্শিয়ান নিজের টাকায় কিনেছে।আর ছোট কাকার একটা বাইক আছে। আষাঢ় কে মাঝেমধ্যে তিনি কলেজ পৌঁছে দেয়।কিন্তু বাড়ি ফিরার সময় আষাঢ় প্রায় হেঁটে বাড়ি ফিরে। যদিও তাসফিয়া আর আয়াত এর সাথে গেলে গাড়ি দিয়ে যাওয়ার জন্য একটু অপেক্ষা করতে হয়।কিন্তু আষাঢ়’র অতো ধৈর্য নেই।সে পনেরো মিনিট এর রাস্তা প্রায় হেঁটে চলে আসে।হাঁটতে হাঁটতে প্রায় অনেক টা পথ চলে এসছে আষাঢ়। তক্ষুণি পেছন থেকে কেউ ডাকলো।আষাঢ় ভাবলো এই রাস্তায় তাকে কে ডাকবে।মনের ভুল ভেবে পেছন ফিরে না।কিন্তু হঠাৎ কেউ সামনে চলে এলো।আষাঢ় ভরকে গিয়ে চকিতে মাথা তুলে সামনে সৈকত কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখো বিস্ময় কেটে ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ পরিমাণ কুঁচকে এলো।
সৈকত কিছু সময় নীরব থেকে বললো,

-“আমি ট্রান্সফার হয়ে চলে যাচ্ছি।
তোমাকে আর ডিসটার্ব করবো না।”

আষাঢ় কিছু বলবে তার আগেই সৈকত লম্বা লম্বা কদম ফেলে চলে গেলো উলটো দিকে।আষাঢ় বুঝতে সময় লাগলো।কি বলে গেলো বুঝতে পেরে অবাক হলো।আষাঢ় রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করতে লাগলো।এমন সময় ফুটপাত ধরে একটা গাড়ি ঠিক ওর পাশে ঘেঁষে দাঁড়ালো এসে।আষাঢ় চমকে উঠলো। গাড়ি টার দিকে লক্ষ্য করে মনে মনে ভয় পেলো।আবার এসছে আজ আর্শিয়ান ভাই।কেনো?আষাঢ় এর ছোট মাথায় যখন একঝাঁক প্রশ্ন কিলবিল করছে।আর্শিয়ান তখন গাড়ির জানালার কাচ নামিয়ে গম্ভীর স্বরে ডেকে বলল,

-“গাড়িতে উঠ।”

-“আমি হেঁটে যেতে পারবো।
আপনি যান কোনো কাজ থাকলে,,

আষাঢ়’র কথা সম্পূর্ণ না শুনেই আর্শিয়ান দাঁতে দাঁত পিষে বলে উঠলো,

-“চুপচাপ ওঠে বোস।
আমি বেরুলে খুব বেশি ভালো হবে না আষাঢ়।”

আষাঢ় চুপচাপ গাড়িতে ওঠে বসে। আর্শিয়ান গাড়ি স্টার্ট করে। পেছনের সিটে বেশ কিছু শপিং ব্যাগ নজরে এলো আষাঢ়’র।তবে জিগ্যেস করার মতো সাহস পেলো না। পেছন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই চোখ কপালে ওঠে গেলো।অবাক হলো আষাঢ়। আর্শিয়ান ভাই গাড়ি কেনো ঘুরালো?এদিকে কোথায় যাচ্ছে?
নিজের মনে প্রশ্ন গুলো বিড়বিড় করে মুখে জিগ্যেস করলো,

-“আমরা এদিকে কোথায় যাচ্ছি?”

-“গেলে দেখতে পারবি।
খবরদার এখন বকবক করে আমার মাথা খাবি না।”

আষাঢ় চোখ পিটপিট করলো।গাল ফুলিয়ে চুপচাপ বসে রইলো।আধঘন্টা পর ওরা একটা ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে নামলো।আর্শিয়ান পেছনের সিট থেকে ব্যাগ গুলো নিয়ে আরেক হাতে আষাঢ়’র হাত ধরে আষাঢ় একটু নড়েচড়ে উঠলো।শরীরে জুড়ে অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেলো।আষাঢ়’র হাত ধরে আর্শিয়ান বাড়ির ভেতর গেলো।আষাঢ় বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে আরো একদফা অবাক হলো।বাড়ির ভেতর সব-কয়টা মুখ ওর পরিচিত।মা বাবা ভাই বোন কেউ বাদ যায় নি।ছোট কাকা সোফায় বসে আছে। চোখমুখ জুড়ে লজ্জার আস্তরণ।
আষাঢ় যখন বিস্ময় নিয়ে সামনে তাকিয়ে ঠিক তক্ষুনি আর্শিয়ান চাপা স্বরে বলল,

-“বেশি লাফালাফি করবি না।
নয়তো,,,

আষাঢ় এর অতো ধৈর্য কোথায়? পুরো টা শুনলে তো।এক দৌড়ে তায়েফ তায়ুশ এর কাছে চলে গেলো। আর্শিয়ান চোখ কটমট করে সেদিকে তাকিয়ে রইলো।
ততক্ষণে ওর মা আর তাসফিয়া, আয়াত এসে হাতের শপিং ব্যাগ গুলো নিয়ে চলে গেলো।
আর্শিয়ান গিয়ে ছোট কাকার পাশে বসলো।আজ হঠাৎ মেয়ে দেখতে এসে পছন্দ হয়েছে সবার। যদিও এর আগে মেয়ে কে সবাই দেখেছে শুধু বাড়ির ছোট সদস্যদের আর নাসির তালুকদার কে ছাড়া।বিয়ে ওনি করবে না এমনটাই মনস্থির করেছেন। কারণ হচ্ছে কলেজ লাইফে এক রমণী কে ভালোবেসেছিল।যেমন তেমন ভালোবাসা না ভয়ংকর রকমের ভালোবাসা। কিন্তু ছাত্র জীবনে ভালোবাসার কোনো পূর্ণতা বা মূল্য কোনো টাই থাকে না।এই কথা টা চিরন্তন সত্য। ওনার ভালোবাসা পূর্ণতা পায় নি।মেয়ে টা ছিল ধনী পরিবারের।যদিও তালুকদার পরিবার যথেষ্ট বিত্তশালী। কিন্তু রমণীর বাবার এক কথা ছেলের পরিবার বড়োলোক। ছেলে নয়।তাছাড়া এই বয়সে একটু-আধটু এমন হয়।এসব সিরিয়াস নিতে নেই।কিন্তু নাসির তো সিরিয়াস ছিলো।কিন্তু মেয়ের বাবা মানলো না।জোর করেই বিয়ে দিয়ে দিলো মেয়ের। মেয়ের অবশ্য অল্পস্বল্প মত ছিল।ছেলে সুদর্শন আর টাকাওয়ালা। সেখানে কলেজ পড়ুয়া নাসির তখন রোগা-সোগা টাইপ লেখাপড়াও খুব বেশি একটা ভালো ছিল না। তবে চলনসই যাকে বলে।সেক্ষেত্রে বাবা-র পছন্দ করা পাত্র কে বিয়া করা উত্তম মনে করে বিয়ে করে নিলো।এদিকে নাসির অনেকটা ভেঙ্গে পড়ে।পরিবারের চাপ আর নিজের জেদে নিজে কে আজ এখানে এনেছে।

-“শোন আমার বিয়ে তো হয়ে যাচ্ছে। তুইও বিয়ে টা এবার করে নে।বয়স তো আর কম হচ্ছে না।”

হঠাৎ নাসির ফিসফিস করে আর্শিয়ান কে বললো।নাসির আর আর্শিয়ান এর মাঝে কাকা ভাতিজা সম্পর্ক কম বন্ধুত্বের সম্পর্ক বেশি। সেজন্যই বেশ ভাব তাদের মধ্যে। আর্শিয়ান সতর্কতার সহিত চারদিকে দৃষ্টি বোলালো। অতঃপর ফোনের স্ক্রিনে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে নিজেও কাকার মতো ফিসফিস করে জানালো,

-“আমার বয়স হয়েছে। কিন্তু আমার বউয়ের হয় নি।অপেক্ষা করতে হবে।”

নাসির তালুকদার চোখ কপালে তুলে চাইলো ভাতিজার দিকে। কি বলে ছেলে?বুঝতে পারলো না।আর্শিয়ান তখন তায়ুশ এর সাথে চকলেট নিয়ে কাড়াকাড়ি করতে থাকা আষাঢ় এর দিকে অপলক তাকিয়ে। নাসির তালুকদার চমকে উঠলো মনে হচ্ছে উনুনের উপর বসে আছে। আন্দাজ করতে পারছে বোধহয়।চোখ বড়ো বড়ো করে সেইজন্য বলল,

-“এই হতচ্ছাড়া দৃষ্টি সংবরণ কর।নিজের বয়সের দিকে একবার তাকা। তোর মতো বুড়োর কাছে আমরা মেয়ে দেবো না।”

আর্শিয়ান বাঁকা চোখে তাকিয়ে বসা হয় ওঠতে ওঠতে বলল,

-“অনুমতি চাইবো না আমি তোমাদের কাছে। শুধু ওকে একটু বড়ো হতে দাও।”

নাসির তালুকদার জোরে কিছু বলতে গিয়েও পারে না। যতই হোক পাত্র বলে কথা তারউপর একটু পর বিয়ে।
আর্শিয়ান হনহন করে আষাঢ় এর মায়ের কাছে চলে গেলো। আষাঢ় তাকিয়ে রইলো সেদিকে মানুষ টাকে দেখার তৃষ্ণা কোনো জন্মে মিটবে না। এই তামাটে বর্ণের পুরুষ টা বেশি সময় কালো পড়ে যাতে করে আরো বেশি সুদর্শন লাগে। আষাঢ় মাঝেমাঝে ভাবে কে বলেছিল কালো মানুষ কে কালোতে মানায় না?এইতো তার আর্শিয়ান ভাই কে ভয়ংকর সুদর্শন লাগে। অবশ্য আর্শিয়ান ভাই তো এক্কেবারে কালো নয়।পরিবারের সবাই ধবধবে সাদা সেইজন্য হয়তো এই আর্শিয়ান নামক সুদর্শন পুরুষটার চাপা গায়ের রঙ টাকে কালো মনে হয়।আসলে তেমন নয়।আর্শিয়ান ভাই তো শ্যাম্য পুরুষ। গল্পের, উপন্যাসের সেই নায়কদের মতো নজরকাঁড়া সৌন্দর্যের অধিকারী।
ইশ মাঝেমধ্যে যখন আর্শিয়ান ভাই ওনার ফ্রেন্ডদের সাথে যখন ফেসবুকে পিকচার আপলোড করে তখন তো কতশত মেয়ের কমেন্ট করে।আর্শিয়ান এর অবশ্য সেসবের কোনো রেসপন্স নেই।আর ওনার দুই টা মেয়ে ফ্রেন্ড আছে।মাঝেমধ্যে আর্শিয়ান ভাই সেই ভার্সিটি লাইফের ফ্রেন্ড’দের সাথে আড্ডা, ঘুরাঘুরি করতে যায়।একটা মেয়ে অবশ্য আর্শিয়ান ভাই কে ভালোবাসে।আষাঢ় যতটুকু জানে মেয়ে গুলো কে আর্শিয়ান তেমন পাত্তা দেয় না।
আর আষাঢ় এর ক্লাসের মেয়ে গুলো?রোজ তো একটা একটা এসে আর্শিয়ান ভাইয়ার নাম্বার চায়।আষাঢ় অবশ্য তখন ভাবসাব নিয়ে জানায় ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড আছে। শুধু নাদিয়া জানে আর্শিয়ান ভাই পিওর সিঙ্গেল আর সেইজন্যই তো সেদিন মেয়ে টা ইচ্ছে করে ওই খামটা আষাঢ় এর হাতে ধরিয়ে দিয়ে পগারপার। আষাঢ় পরে জানতে পেরেছিল খামের ভেতর চিঠি আর্শিয়ান ভাইয়ের জন্য ছিলো।আষাঢ় এটা ভেবে স্বস্তি পায় ভাগ্যিস আর্শিয়ান ভাই সেদিন খাম খুলে দেখে নি।নয়তো কি যে হতো আল্লাহ ভালো জানে।

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে