আমার প্রেয়সী পর্ব-০১

0
20

#আমার_প্রেয়সী
#সূচনা_পর্ব
#জান্নাত_সুলতানা

গালে পরপর দু’টো থাপ্পড় পড়তেই গাল জ্বলে উঠলো আষাঢ়’র।ব্যাথার চোটে চোখ ভিজে উঠলো।থাপ্পড় কেনো মেরেছে বুঝতে পারলো না।কি দোষ তার?কেনো মারলো?তার সাথে কেনো মানুষ টা সব সময় এমন করে? আষাঢ়’র মাথায় আসে না।যখন তখন ধমক থাপ্পড় দু’চার টা ফ্রি-তে খেতে হয়। আশেপাশে তেমন লোকজন নেই।শুধু বলিষ্ঠ তাগড়া পুরুষ টার পেছনে চার পাঁচ জন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। তাও বেশ অনেক টা দূরে। আর রাস্তায় যাতায়াতে কিছু মানুষ রয়েছে। তবে যে যার মতো কাজে ব্যস্ত।চারদিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে নিলো আষাঢ়। হাতের খামটা শক্ত করে ধরে ছিলো।কিন্তু সামনে রক্তচক্ষু নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষ টা সেটা টেনে নিলো।
আষাঢ় চোখ তুলে একবার তাকিয়ে আবার মাথা নুইয়ে নিলো।আর্শিয়ান খামটা টুকরো-টুকরো করে ছুঁড়ে ফেলে দিলো দূরে।
দাঁতে দাঁত পিষে বলে উঠলো,

-“এসব করার জন্য তোকে কলেজ পাঠানো হয়?
খবরদার যদি তোকে আরেকবার এসব করতে দেখেছি আমার থেকে বেশি খারাপ কেউ হবে না আষাঢ়।”

আষাঢ় তড়িৎ মাথা তুলে তাকালো।বলিষ্ঠ পুরুষ টার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকালো।বুঝতে সময় লাগলো না থাপ্পড় মারার কারণ হাতের খামটা। কিন্তু খামটা তো ওর না।এটা ওর বান্ধবী নাদিয়ার।নাদিয়ার কথা মাথায় আসতেই মনে পড়লো নাদিয়া কোথায়?
এইমাত্র তো মেয়ে টা এখানে ছিল।ওই তো খামটা ধরতে বলে কোথায় উধাও হয়ে গেলো?
আষাঢ় আবারও চারপাশে চোখ বোলালো ওই তো দূরে দাঁড়িয়ে আছে নাদিয়া। একটা গাছের আড়ালে। ভীতিকর মুখে এদিকে তাকিয়ে আছে।যার অর্থ আষাঢ় যেন কিছু না বলে। আষাঢ় যেন চট করে মুখ দেখে মনের কথা পড়ে নিলো।কিছু বলার আগেই আর্শিয়ান এর গম্ভীর রাগী কণ্ঠ শোনা গেলো,

-“এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?
থাপ্পড় আরো কয়েকটা খাওয়ার ইচ্ছে আছে?”

আষাঢ় ভয়ে মুখে থমথম খেলো।পেছনে ফিরে বাড়ির উদ্দেশ্যে পা চালাতেই পেছন থেকে আর্শিয়ান জিগ্যেস করলো,

-“ছেলে টার নাম কি?”

আষাঢ় মনে মনে বেশ কিছু কটু বাক্য উচ্চারণ করলো আর্শিয়ান কে ঘিরে।কি মানুষ কিছু না জেনেশুনে শুধু একটা খাম দেখে দুই দুই টা থাপ্পড় মেরো দিলো।এখন আবার জিগ্যেস করছে ছেলে টার নাম কি?আষাঢ়’র রাগ হলো।তবে সেটা এই পুরুষ টার সামনে বহিঃপ্রকাশ করা কোনো দিন সম্ভব হবে না। তাই চট করে মিথ্যা কথা বলে দিলো,

-“সৈকত।”

-“তোদের ক্লাসের!
আরেকবার যে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো?”

আর্শিয়ান ভ্রু কুঁচকে জানতে চাইলো।আষাঢ় জবাবে।বলল,

-“হ্যাঁ।”

অতঃপর দ্রুত পা চালিয়ে চলে এলো।পেছনে হাতের আঙ্গুল মুঠোবন্দী করে দাঁড়িয়ে রইলো আর্শিয়ান।

—–

বাড়ি ফিরলো আষাঢ় সাড়ে তিন টা বাজে।লিভিং রুম তখন পুরো ফাঁকা।বিকেল হলেই পুরো লিভিং রুম জুড়ে মানুষ গিজগিজ করবে।যেন বাড়ি তো নয় চিরিয়াখানা।ওর দাদা ছিলে শব্দ তালুকদার। ওনার আর কোনো ভাইবোন ছিল না। কিন্তু ওনার ছেলেমেয়ে মোট ছয়জন। দুই মেয়ে একজনের নাম নাসিমা,তিনি বর্তমানে ছেলে মেয়ে নিয়ে বিদেশ রয়েছে। আরো একজন এর নাম আনোয়ারা তিনি ওদের বাড়ির পাশে বাড়ি করেছেন।আষাঢ় এর বাবা আলতাফ তালুকদার তিন নম্বর।ওনার ছেলেমেয়ে বলতে দুই মেয়ে। আয়াত আর আষাঢ়। আর বড় চাচা আকরাম তালুকদার।এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে মাহমুদ আর্শিয়ান তালুকদার এবার বিদেশ থেকে লেখাপড়া শেষ করে বছর ঘুরতে চললো দে-শে এসছে।পরিবারের বিজনেস দেখভাল এর সাথে সাথে ছেলেদের নিয়ে রাজনীতির একটা দলও গঠন করেছে।সেটার সহসভাপতি সে।গম্ভীর স্বভাবের মানুষ টাকে বাড়ির প্রতি টা ছোট সদস্য ভয় পায়।সাথে সম্মানও করে।সবার চোখের মনি বলা চলে।সবার সাথে কত সুন্দর করে কথা বলে।শুধু আষাঢ় কে দেখলেই ব্যাটা গিরগিটির ন্যায় রং পালটে নেয়। আর মেয়ে তাসফিয়া এবার অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। আয়াত আর তাসফিয়া একই ক্লাসে পড়ে। মেঝো চাচা তোফায়েল তালুকদার।ওনার তিন ছেলে তায়েফ, তায়ুশ জমজম।এবার তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে।আর বড় ছেলে তাসরিফ তালুকদার এবার অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সেই সাথে জবও করছে। আর ছোট কাকা নাসির তালুকদার।সবার বিয়ে হয়েছে শুধু তিনি এখনো বিয়ে করে নি।লেখাপড়া শেষ বর্তমানে জব করছে।অবশ্য মেয়ে দেখা হচ্ছে ওনার জন্য।আষাঢ় সবার কথা ভাবতে ভাবতে রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুইয়ে পড়লো। এই বাড়িটা বিশাল বড়ো।দোতলা বাড়িটার নিচতলায় ছয় টা রুম সহ ডাইনিং, লিভিং, রান্না ঘর।আর উপরে আটটা ঘর।বাড়িটা বড়ো অংকের আয়তনের একটা জমির উপর দাঁড়িয়ে আছে।
সবার জন্য আলাদা আলাদা রুম বরাদ্দ।তবে এই বাড়িতে সবচেয়ে বেশি সুন্দর হচ্ছে আর্শিয়ান নামক পুরুষ টার কক্ষ।এই মানুষ টা বেশ সৌখিন। নিজের রুমে কাউ কে প্রবেশ করতে দেয় না।শুধু মা চাচিদের ব্যতিত। আর কেউ গেলেও ধমকে-ধামকি দিয়ে বের করে দেয়। এই তো আষাঢ় সেদিন তায়ুশ কে খুঁজে পাচ্ছিল না।ভেবেছিল হয়তো আর্শিয়ান ভাইয়ের ঘরে হয়তো আছে। কারণ রাতে খাবার খাওয়ার আগে তায়ুশ তায়েফ মাঝেমধ্যে আর্শিয়ানের সাথে থাকে।কিন্তু সেদিন ছিল না। আর্শিয়ান নিজেও রুমে ছিল না। আষাঢ় যখন ওদের না পেয়ে ফিরে আসার জন্য উদ্যত হয় তক্ষুনি কোথা থেকে আর্শিয়ান চলে এলো।এক রামধমক দিয়ে বের করে দেয় আষাঢ় কে।এরপর আষাঢ় আর আজ অনেক দিন হয় ওই রুমের ছায়া ও মারায় না।
শরীর ক্লান্ত আর গালের ব্যাথা নিয়ে আষাঢ় কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেও বুঝতে পারে নি।এরমধ্যে বেশ কয়েকবার এসে ওর মা শিউলি বেগম খাবার খাওয়ার জন্য ডেকে গিয়েছে। আষাঢ় ঘুমঘুম কণ্ঠে কোনো রকম একবার জানালো।সে এখন খাবে না। পরে খাবে।সে নিজে হাতে খেয়ে নিবে।কাউ কে অপেক্ষা করতে বারণ করলো।
শিউলি বেগম চিন্তিত হলেন।বেশ কয়েকবার জিগ্যেস করলো শরীর ঠিক আছে কিনা। আষাঢ় বিরক্ত হলো।তবে মায়ের সাথে সে খারাপ ব্যবহার করলো না।কোনো রকম বুঝিয়ে-সুঝিয়ে যেতে বলে আবার ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।রাত সাড়ে এগারো টা নাগাদ আষাঢ় ঘুম ভাঙ্গে। বাড়ি তখন শুনশান নীরবতা। এই বাড়িতে কিছু নিয়ম রয়েছে সকাল সাতটার আগে সবাই কে ঘুম থেকে উঠতে হবে।সকালে আর রাতের খাবার এক সাথে খেতে হবে। দুপুরে কাজের চাপে অফিস বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকে সুতরাং দুপুরে এক সাথে না হলেও রাতে খাবার এক সাথে খেতেই হবে।আর রাত দশটার মধ্যে সবার খাবার খাওয়া শেষ। তারপর আড্ডা দিয়ে রাত এগারোটার মধ্যে যে যার রুমে।আষাঢ় ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো।রুমে লাইট অন করে নি।ওয়াশরুমের লাইট অন ছিল বিধায়। কিন্তু খাবার খাওয়ার জন্য নিচে যেতে হবে সেইজন্য রুমের লাইট অন করার জন্য উদ্যত হতেই দরজায় শব্দ হলো।আষাঢ় ভয় পেলো।এতো রাতে কে এসছে?ভীতিকর মন নিয়ে লাইট অন করে পা জোরা টেনে নিয়ে দরজার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলো,

-“কে?”

-“আমি।
আর্শিয়ান। দরজা খোল।”

গম্ভীর স্বর কিন্তু চাপা আওয়াজ।
আষাঢ়’র বিকেলের সেই থাপ্পড় এর কথা মনে পড়লো।দানবীয় হাতের দুই দুই টা থাপ্পড় খেয়ে গাল এখনো টনটন করছে।মুখ শক্ত করে নিলো।দরজা সে কিছুতেই খুলবে না।কিন্তু মন শক্ত হলো না।তামাটে বর্ণের এই পুরুষ টাকে একপলক দেখার জন্য মন কেমন সব সময় ছটফট করে।কতশত বার পুরো বাড়ি চক্কর কেটেও মানুষ টার সাক্ষাৎ মিলা বড়োই কষ্টসাধ্য।সেখানে মানুষ টা নিজ থেকে আজ ওর ঘরের দুয়ারে।একপলক না দেখলে কি করে হয়!বেশ ধীরেসুস্থে দরজার কপাটি খুলে আষাঢ়। আর্শিয়ান দাঁড়িয়ে দরজায়।গায়ে কালো একটা টি-শার্ট।কি দারুণ দেখতে মানুষ টা।একপলক দেখলে তৃষ্ণা মিটে না বারবার দেখতে মন চায়।বেহায়া চোখ জোড়া বারবার গিয়ে এই মানুষ টাতে আঁটকে যায়।আষাঢ় নিজে কে শাঁসালো।কিছুতেই আর তাকাবে না এই ব্লাক কফির দিকে।আষাঢ় আর্শিয়ান এর একটা নাম দিয়েছে। ব্লাক কফি।যাকে দেখতে সুন্দর হলেও খেতে একদম বিশ্রী।এই যে সামনে দাঁড়ানো পুরুষ টা কত সুন্দর দেখতে কিন্তু ব্লাক কফি যেমন খেতে তিতা ঠিক তেমন মানুষ টার কথা গুলো তিতা। চোখ ঘুরিয়ে মাথা নুইয়ে নিলো। এলো-মেলো চুল মুখে হাল্কা চিকচিক করতে থাকা পানি ডাগর ডাগর আঁখি জোড়ার উপর পানিতে ভেজা ঘন পাপড়ি।হঠাৎ আর্শিয়ান এর নজর এলো আষাঢ় এর বা গালে। গাল এখন লাল হয়ে আছে।থাপ্পড় গুলো বেশ জোরে দিয়েছে। রাগের মাথায় বুঝতে পারে নি।এখন নিজের বুকের ভেতর কেমন করছে।আর্শিয়ান নিজের দৃষ্টি ঘুরালো।ঠোঁট কামড়ে ধরে কিছু মনে করে বলে উঠলো,

-“খাবার কেনো খাস নি?
চল খাবার খাবি।”

কথা শেষ আর্শিয়ান হাঁটা ধরলো। কিন্তু আষাঢ় ডাগর ডাগর আঁখি জোড়া আরো কিছু টা ভাসিয়ে তাকিয়ে রইলো আর্শিয়ান এর দিকে।

-“আমি খাবার খাই নি, এটা কে বললো আপনাকে?”

আষাঢ় এর প্রশ্নে চকিত নজর ফিরিয়ে তাকালো আর্শিয়ান মেয়ে টার দিকে।গম্ভীর স্বরে জানালো,

-“মেঝো মা।”

#চলবে….

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে