#আমার_পূর্ণতা
#রেদশী_ইসলাম
পর্বঃ ৫
ঠিক দুপুর বেলা। সময় ১:৩০ মিনিট। আমরা সবাই আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি বৃষ্টির আশায়। কিন্তু হায় আফসোস। সকাল থেকে ননস্টপ বৃষ্টি পরেছে। তখন কোমার বদলে উল্টো বেড়েছে। আর এখন গ্রুপ ধরে যখন ছাঁদে আসলাম তখন বৃষ্টির চিহ্ন মাত্র নেই। তবুও জানি কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টি নামবে। কারন আকাশ মেঘে এখনো কালো হয়ে আছে। তবে থেমে থেমে মেঘ ডেকে উঠছে গুরুম গুরুম। আদিত ভাইয়া ছাদের ছিদ্র গুলো বন্ধ করে দিয়েছে যাতে বৃষ্টি পরলে ছাদে পানি জমে। তাতে আনন্দ বেড়ে যাবে কয়েক গুন। এর মধ্যেই রাদিয়া আপু আমার পাশে এসে ধপ করে বসে পরলেন। তারপর বিরক্ত গলায় বললেন—
” দেখলি প্রাচু সারা সকাল ধরে বৃষ্টিতে বাড়ি-ঘর ডুবিয়ে দিলো। তখন মনে মনে এতো বৃষ্টি থামার প্রার্থনা করলাম কিন্তু কবুল হলো না। আর এখন যখন বৃষ্টি চাইছি তখন বৃষ্টির কোনো খোঁজ নেই।”
ওনার কথা শুনে ফোঁস করে নিশ্বাস ছাড়লাম আমি। তারপর মুখ ফুলিয়ে বললাম—
” কি আর করবে আপু। আমাদের মতো আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে থাকো। নাইলে আবির ভাইয়ার সাথে বসে বসে গল্প করো। দেখো বেচারা একা একা দোলনায় বসে আছে।”
” রাখ তোর আবির ভাই। বিয়ের পর প্রথম বৃষ্টি আজ। কোই ভাবলাম দু’জনে একটু বৃষ্টি বিলাস করবো এই রোমান্টিক ওয়েদারে। তারপর সুন্দর সুন্দর ছবি তুলে আপলোড দেবো কিন্তু তা না। বৃষ্টির কোনো খোঁজ নেই।”
” হ্যাঁ হ্যাঁ তোমাদের ই সময় এখন। আমরা সিঙ্গেল মানুষ। তোমাদের দেখি আর জ্বলি ”
” তো চল তোকে ও বিয়ে দিয়ে দি। ছোট বাবাকে বলি যে তার মেয়েকে বিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। না হলে অন্যদের দেখে হা হুতাশ করে মরে যাচ্ছে সে।”
ছাদে প্রবেশ করতে করতে বললেন তাফসির ভাই। ওনার কথা শুনে বিরক্ত হলাম আমি। মানে আমি যেই কথাটা বলবো সেই কথা টায় কেনো ধরতে হবে ওনাকে? আমি হা হুতাশ করে মরে যায় নাকি বেঁচে থাকি তাতে ওনার কি? তাই মাথা উঁচু করে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম—
” আপনাকে ওতো ভাবতে হবে না আমাকে নিয়ে। সময় হলে এমনিতেই বিয়ে করে নিবো। আর বাবা ও দিবেন। তার থেকে বরং আপনি বিয়ে করে ফেলুন। আমরা দাওয়াত খাই একটা। ”
আমার কথা শুনে আকাশ থেকে পরার ভান করলেন উনি। নিচে বসে আমার দিকে ফিরে বললেন— কি সাংঘাতিক কথা বার্তা বলছিস রে প্রাচু। বাড়িতে আমার ছোট বোন আছে একটা। তাকে বিয়ে না দিয়ে আমি কিভাবে বিয়ে করি বল তো। দিন দিন তোর বুদ্ধি দেখি গোড়ালি তে গিয়ে ঠেকছে। ছোট বেলায় তো এমন বলদ ছিলি না। তাহলে এখন কেনো হচ্ছিস?”
তাফসির ভাইয়ের কথায় অবাক হলাম আমি। মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করলাম আমি কি সত্যিই বলদ? ভেতর থেকে মন তৎক্ষনাৎ উত্তর দিলো ” কাভি নাহি প্রাচুর্য। তুই বলদ না। তুই মোটেও বলদ হতে পারিস না। ”
মনের কথা শুনলাম আমি। তাই একই কথা মুখে এনে বললাম—
” আমি মোটেই বলদ না তাফসির ভাই। আপনি ভুল ভাল বকছেন কেনো? ”
” হ্যাঁ তুই বলদ না। ভুল বলেছিলাম আমি। তুই হচ্ছে গভেট। যাকে বলে গাছ গভেট একদম। ”
ওনার কথায় পাশ থেকে শব্দ করে হেঁসে উঠলেন আপু। তারপর তাফসির ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন—
” ভাইয়া এবার থামো তুমি। আর চেতিয়ো না ওকে। বেচারিকে আর কিছু বললে কান্না করে দিবে একদম। দেখো এখনি চোখ কেমন ছলছল করছে। ”
আমাদের কথা বলার মাঝেই ঝপ করে বৃষ্টি নামলো। ওপাশে তিশা আপু, সাইমা আপু, রিয়া আপু, আদিত ভাইয়া আর সামি সাদনান বসে গুটি খেলছিলো। বৃষ্টি নামতেই চিল্লিয়ে উঠলো তিশা আপু ও সাইমা আপু। ওদের চিল্লানো দেখে বিরক্তি নিয়ে চাইলেন তাফসির ভাই। কিন্তু সেদিকে বিশেষ পাত্তা দিলাম না আমি। মনে মনে বেজায় খুশি হলেও প্রকাশ করলাম না তা। না জানি কোন কথা আবার ধরে বসেন পাশের ব্যক্তি অর্থাৎ তাফসির ভাই। তাই সেভাবে বসেই আকাশের দিকে মুখ করে চোখ বন্ধ করে বসে থাকলাম। ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির পানিতে ভরিয়ে তুললো আমার মুখ।
.
.
আমাদের বৃষ্টি বিলাস শেষ হলেই সবাই ড্রেস চেঞ্জ করে চলে গেলাম চিলেকোঠায়। চিলেকোঠার মেঝেতে বড় পাটি বিছিয়ে গোল হয়ে বসলাম। তার মধ্যেই বড় মা, মোঝো মা হাড়ি ভর্তি খিচুড়ি, মাংস, ভর্তা, সালাত নিয়ে আসলেন। রাদিয়া আপু আর রিয়া আপু সবার থালে বেড়ে দিলেন তা। বড় মা, মেঝো মা চলে যেতে লাগলেই তাফসির ভাই হাত টেনে ধরলেন বড় মার। বড় মা আর মেঝো মা’য়ের দিকে তাকিয়ে বললেন—” কোথায় যাচ্ছো মা? তোমরা ও বসো। একসাথে খাই সবাই।” তারপর সাদনানের দিকে তাকিয়ে বললেন— ” ছোটু যা তো ছোটো মা কে ও ডেকে নিয়ে আয়।”
ওনার কথা শেষ হতেই বড় মা ব্যস্ত ভঙ্গিতে বললেন—” না মা আব্বা। তোরা খাচ্ছিস খা না। তার মধ্যে আবার আমাদের টানছিস কেনো? আর তা ছাড়াও তোদের মধ্যে আমরা বুড়িরা কি করবো?”
” তুমি বুড়ি হলে কোথায় মা? আয়নায় দেখেছে নিজেকে? এখনো তোমাকে দেখলে যে কেউ ক্রাশ খাবেন।”
” চুপ কর ফাজিল ছেলে। কিসব বলছিস বাচ্চাদের সামনে?”
” আচ্ছা বেশ। আর ফাজলামো করছি না। এবার বসো তো তুমি।”
” হ্যাঁ মা। আমাদের সাথে বসুন আপনারা। আর কবে এমন একসাথে হবো সবাই তার তো ঠিক নেই কোনো।”__ পাশ থেকে বলে উঠলেন আবির ভাইয়া।
ওনার কথায় সম্মতি দিলেন সবাই। তাই বড় মা, মেঝো মা উপায় না পেয়ে বসে পরলেন আমাদের সাথে। তার মধ্যে সাদনান ডেকে আনলো মা কে। বাবা রা কেউ বাড়িতে নেই। অফিসে গেছেন সবাই। তাই নিশ্চিন্তে হই হই করতে করতে দুপুরের খাবার শেষ করলাম সবাই।
—————————
সারাদিন শান্তিতে-আনন্দে থাকলেও বিকাল পর্যন্ত আর আনন্দে থাকতে পারলাম না আমি। বিকাল ৪ টা বাজতে না বাজতেই ফোন এলো হারুন স্যারের। আজকে তো কোচিং থাকার কথা না। কিন্তু আগামী সাত দিন ট্রেনিংয়ে চলে যাবেন চট্টগ্রাম স্যার। তাই আজকে পড়াতে চাচ্ছেন। কিন্তু এই বৃষ্টি আর হাটু সমান পানির মধ্যে ওনার পড়ানোর দরকার কি বুঝে উঠতে পারলাম না আমি। যদিও এখন বৃষ্টি পরছে না তবুও পানি তো আছে। এই পঁচা পানির মধ্যে মোটেও যেতে ইচ্ছে করছে না আমার। তাই গত ৩০ মিনিট ধরে মায়ের কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করলাম আমি। তবুও সুবিধা করতে পারলাম না বিশেষ। মায়ের এক কথা গাড়ি নিয়ে যাও। গাড়িতে তো আর পানি উঠবে না। তবুও যেতে হবে। আমি মায়ের কথার মাঝের বললাম— ” ওমা একটা দিন ই তো। আজকে যাবো না প্লিজ।”
” একটা সপ্তাহ স্যার পড়াবে না। কোনো দরকারি নোট ও দিতে পারে। সাথে এতোদিনের জন্য পড়া ও দিয়ে দিবেন হয়তো। সেই পড়া বসে বসে শেষ করবি। সামনে এইচএসসি। একদম ফাঁকি বাজি করবি না। আমি তাফসির কে বলে দিচ্ছি। ও বাসায় আছে। নিয়ে যাবে তোকে।”
মায়ের কথায় মুখ কালো হয়ে গেলো আমার। সত্যিই যেতে ইচ্ছে করছে না আজকে। কিন্তু পরমুহূর্তেই মাথায় এলো একটা কথা। যেহেতু আজকে বৃষ্টি পরেছে। রাস্তা-ঘাট পানিতে টুই টম্বুর। সেহেতু গাড়ি চালাতে সমস্যা হবেই। আর তাতে বিভ্রান্তিতে পরবেন তাফসির ভাই। সাথে বিরক্ত ও হবেন। আর উনি বিরক্ত হলেই খুশি হবো আমি। সাথে পথে এটা ওটা কিনে দিতে বলে আরও বিরক্ত করবো আমি। ওনাকে বিরক্ত করার সুযোগ হাত ছাড়া করবো না আমি। তাই রাজি হয়ে গেলাম।
.
.
ঘরে শুয়ে ছিলেন তাফসির ভাই। আমি দরজার সামনে যেয়ে নক করলাম দুইবার। ভেতর থেকে আওয়াজ দিলেন উনি। জিজ্ঞেস করলেন— ” কে?”
” তাফসির ভাই আমি।”
” আমি আবার কে? ”
” আমি মেহেরীন প্রাচুর্য চৌধুরী।”
আমার কথা শুনে খট করে দরজা খুললেন তাফসির ভাই।আমাকে দেখে ভ্রু নাচিয়ে বললেন— ” কি চাই? ”
” আপনাকে চাই”
আমার এ কথাতে থতমত খেয়ে গেলেন উনি। পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলে বললেন— ” আমাকে চাই মানে?”
” আপনাকে চাই মানে আপনাকে চাই। চলুন আমার সাথে”
চলবে