#আমার_পূর্ণতা
লেখনীতেঃ রেদশী_ইসলাম
সূচনা পর্ব
বাড়ির মেজো মেয়ের বিয়েতে হঠাৎ বাড়ির বড় ছেলেকে দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো সবাই। প্রায় ৬ বছর পর চৌধুরী বাড়িতে পা রেখেছে সাদিকুর তাফসির চৌধুরী। যা দেখে বাড়ির মহিলা সদস্যের চোখ উপচে পানি পরছে। আর বিয়ের কনে? তার কথা তো বাদই দিলাম। এতো গুলো বছর পর ভাইকে দেখে তো কান্নায় থামছে না তার। অবশেষে অভিমান মিটলো তবে? ভাই বাড়িতে ফিরে এসেছে ভেবে তার কান্না আরও দ্বিগুণ হলো। কিন্তু কান্নার দাপুটে এতো টাকা খরচ করে করা মেকআপ যে নষ্ট হতে চললো এদিকে খোজ নেই তার। সে রীতিমতো কান্নায় ব্যস্ত। এদিকে যাকে নিয়ে এতো কান্না সে নিরুত্তাপ। কিন্তু চোখে মুখে বিরক্তির ছায়া স্পষ্ট। এই যে মা-কাকিমা রা যে তাকে ঘিরে কান্না করছে সেদিকে তো একবারও খেয়াল নেই তার। সে নিশ্চিন্ত মনে সোফায় বসে ফোন টিপছে। মনে হচ্ছে যেনো কিছুই হয় নি।
এতোক্ষণ যাবত এসবই দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছিলো প্রাচুর্য। কিন্তু এবার সত্যি বিরক্ত হলো সে। কি এমন মানুষ এলো রে বাবা যার জন্য বিয়ে বাড়িতে এতো কান্নার ঢল। কোনো রাজা মহারাজা নয় তো তাহলে এতো সমাদর করার দরকার টা কি? হঠাৎ একটা রাশভারী কথা ভেষে এলো কানে। সামনে তাকিয়ে দেখলাম তাফসির ভাই বড় মায়ের দিকে তাকিয়ে বলছে ” আহ মা এবার থামবে তোমরা? কি শুরু করলে বলো তো? এসেছি ধরে কেঁদেই যাচ্ছো। এবার তো একটু থামো। নাহলে এই মূহুর্তে আমি আবার ব্যাক করবো কানাডা ”
কথাটা তে কাজ হলো বোধহয়। কারন নারী সদস্যদের কান্না থেমে গেছে হঠাৎ করে। মনে মনে খুশি হয়ে ধন্যবাদ জানালাম তাফসির ভাইকে।
.
.
বেশ সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাবেই সম্পন্ন হলো বাড়ির বড় মেয়ে রাদিয়া চৌধুরীর বিয়ে টা। বিশেষ করে বাড়ির বড় ছেলে এতো গুলো বছর পর আসায় আনন্দ যেনো কানায় কানায় পূর্ণ হলো এবার। সকলের মুখ থেকে যেনো চওড়া হাসি সরছেই না। মেয়েকে বিদায় দিয়ে দুঃখ পাওয়ার বদলে সবার মুখে লেগে আছে হাসি। বাড়ির ছেলে বাড়িতে ফিরেছে এর থেকে আনন্দের কি হতে পারে আর। তা নিয়ে মোটেও আক্ষেপ নেই রাদিয়ার। ভাই ফিরেছে সে তাতেই খুশি।
কিন্তু বড় বোন চলে যাওয়ায় বেশায় মন খারাপ হলো প্রাচুর্যের। বোনকে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না। রাদিয়া ও কেঁদেছিলো বটে। সবাইকে ফেলে চলে যাচ্ছে তো কান্না আসবে না?
সব ঝামেলা শেষ হতে হতে রাত তখন ১২ টার কাটায়। সবাই বেশ ক্লান্ত। কম তো ধকল গেলো না। ক্লান্ত পায়ে নিজের ঘরে এসে কোনো মতে ফ্রেস হয়েই ঘুমিয়ে পরলো প্রাচুর্য। আজ আর তার হুড়োহুড়ি করার মতো জোর অবশিষ্ট নেই শরীরে। যা করার কাল সকালে দেখা যাবে।
.
.
চৌধুরীর বাড়িতে একান্নবর্তী পরিবার। নিয়ম টা মোহাতাব চৌধুরী করেছিলেন। যিনি সম্পর্কে প্রাচুর্যদের দাদা মশাই হন যদিও তিনি মৃত। মোহাতাব চৌধুরীর তিন ছেলে। বড় ছেলে ইশতিয়াক চৌধুরীর ১ ছেলে ও ১ মেয়ে। ছেলে সাদিকুর তাফসির চৌধুরী ও মেয়ে রাদিয়া চৌধুরী। মেজো ছেলে ইকরামুল চৌধুরী। তার ২ ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে রিয়া চৌধুরী ও জমজ ২ ভাই সামি, সাদনান। ও ছোটো ছেলে অর্থাৎ আমার বাবা ইনসাফ চৌধুরী। আমার বাবার একমাত্র মেয়ে আমি মেহেরীন প্রাচুর্য চৌধুরী।
যখন আমর বয়স ১২ তখন কোনো কারন বসত তাফসির ভাই রাগ করে কানাডা চলে যান। কারনটা হয়তো বাড়ির ছোট সদস্যরা বাদে বড় সদস্যরা সবাই জানে। তারপর ইশরাফ ভাই বড় মা ছাড়া আর কারোর সাথেই যোগাযোগ রাখেন নি। বড় মার সাথে ফোনে যতটুকু কথা হতো তাতেই তাফসির ভাইয়ের খোজ খবর পেতেন সবাই। ইশরাফ ভাই এতোদিন যাবত সেখানেই পড়াশোনা করতেন। তবে তার পড়া-শোনার পার্ট চুকে গেছে বছর খানিক আগেই। শুনেছি সেখানেই কোনো একটা চাকরি করতেন।
.
.
.
সকালে যখন ঘুম ভাঙলো আমার তখন সকাল গড়িয়ে প্রায় দুপুর হওয়ার পথে। দাঁত ব্রাশ করতে করতে বেলকনিতে এসে দাঁড়ালাম। এটা অবশ্য আমার নিত্যদিনের কাজ। সকালে এসে বেলকনিতে লাগানো প্রিয় ফুলের গাছ গুলোতে চোখ না বুলালে ভালো লাগে না আমার। হঠাৎ পাশের বেলকনি থেকে থাই গ্লাস সরানোর শব্দে পাশ ফিরে তাকালাম। অমনি উদাম গায়ে বের হলেন তাফসির ভাই। যা দেখেই আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। হঠাৎ খেয়াল করলাম উনিও ভ্রু কুঁচকে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। এটা দেখার পর ও কি আর এক মুহূর্ত সেখানে দাড়ানো যায়? ছুটে দৌড় লাগালাম ঘরে। উফফ ওনাকে এই সময়ই আসতে হলো!! এতো গুলো বছর যাবত ঘরটা খালি ছিলো শান্তি মতো ছিলাম। কিন্তু এখন ঘরের মালিক ও চলে এসেছে আর আমার শান্তি ও শেষ।
হঠাৎ মায়ের ডাকে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে বের হলাম। বাইরে এসে দেখলাম খাবার হাতে দাঁড়িয়ে আছে মা।
” বলি এতো বেলা করে কোন মেয়ে ঘুম থেকে ওঠে শুনি? খাওয়া দাওয়ার প্রতি ও কোনো নজর নেই তোর৷ আমি আর কতো দিকে খেয়াল রাখবো? আজ বিয়ে দিলে কাল হয়ে যাবি বাচ্চার মা আর সেই মেয়েকে এখনো কি না গালে তুলে খাইয়ে দিতে হয়।
মায়ের কথায় বিরক্ত হয়ে তার দিকে তাকালাম। এ নতুন কিছু নয়। প্রতিদিন সকালেই এসব কথা শুনতে শুনতে অভ্যস্ত আমি। মায়ের দিকে তাকিয়ে করুন কন্ঠে বললাম ” মা এমন করছো কেনো? একটু খাইয়ে দিলে কি হয়? আর এতো বেলা করে উঠেছি তো মাত্র আজকেই। এরপর থেকে তো আবার সেই নিত্যদিনের মতো সকালে উঠে কলেজে দৌড়াতে হবে। ”
” হয়েছে থাক অতো সেন্টিমেন্টাল হতে হবে না। আয় খাইয়ে দি। ওদিকে আবার অনেক কাজ আছে। এতো বছর পর ছেলেটা বাড়ি ফিরলো। একটু আয়োজন না করলে হয় নাকি। তার উপর আবার মেহমান।”
“হ্যাঁ যাও যাও। তোমাদের আদরের ছেলে বাড়িতে ফিরেছে এখন তাকে যত্ন-আত্তি করো। আমরা তো আর কেউ না।”
” এক চড় মারবো বেয়াদব মেয়ে। এসব কথা বাড়ির কেউ শুনলে কি মনে করবে। আর সোনার টুকরো ছেলে আমাদের। ওর যত্নআত্তি করবো না কি তোর করবো? সারাদিন শুধু ছোটাছুটি করিস।”
চলবে
#আমার_পূর্ণতা
#রেদশী_ইসলাম
পর্বঃ ২
মায়ের কথা শুনে মনটা একটু আধটু খারাপ হলো আমার। বলে ফেলেছি একটা কথা তার জন্য এমন ভাবে বলার কি আছে রে বাবা। তবুও কিছু না বলে চুপচাপ খাওয়া টা শেষ করলাম। আমাকে খাইয়ে দিয়েই মা ব্যস্ত পায়ে চলে গেলেন নিচে। বাড়ি ভর্তি মেহমান। আমাকে নিয়ে পরে থাকলে চলবে নাকি তার। কতো কাজ। আমার আর কি করার এখন। তাই নতুন একটা জামা পরে গায়ে ওড়না পেচিয়ে বসার ঘরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম। কিন্তু যাওয়ার পথে হঠাৎ রিয়া আপুর ঘর থেকে হাসাহাসির আওয়াজ শুনে থেমে গেলাম। বুঝলাম রিয়া আপুর ঘরেই আড্ডা বসেছে সবার অর্থাৎ কাজিন মহলের।
আমার কি এখন অন্য কোথাও যাওয়ার ইচ্ছা থাকে? যেখানে আড্ডা সেখানে আমি। তাই চলে গেলাম রিয়া আপুর ঘরে। আমি যেতেই আমাকে টেনে নিয়ে বসালো সবার মাঝখানে। আমিও বাবু হয়ে বসে পড়লাম। ঘরে ছোটো বড় সব বোনই আছে। তাফসির ভাইয়ের মামাতো বোন তিশা আপুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
” কাহিনি কি আপু? এতো হাসাহাসি কিসের? আড্ডার বিষয়বস্তু কি সেটা আগে বলো।”
আমার কথা শুনে তিশা আপু রশিক গলায় বললো ” আজকের আড্ডার বিষয়বস্তু আমাদের তাফসির ভাই।”
তারপর আবার উচ্ছাসিত কন্ঠে বলে উঠলো–”দেখেছিস প্রাচুর্য তাফসির ভাই বিদেশ যেয়ে আগের থেকে কি সুন্দর হয়েছে।”
আমি বললাম ” সুন্দর হতেই পারে আপু। এটা কি স্বাভাবিক না? উনি তো আগেও সুন্দর ছিলো। আর ওখানের আবহাওয়া ভালো হয়তো তাই আরও সুন্দর হয়েছে। এটাতো অস্বাভাবিক কিছু না। ”
আমার কথা শুনে তিশা আপু বললো ” তা ঠিক। আচ্ছা ওনার কি গার্লফ্রেন্ড আছে? জানিস কিছু?”
ওনার কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেলাম আমি। আরে আজব তো!! আমি কিভাবে জানবো? আমি কি ওনার সাথে থাকি নাকি। এতো দরকার পরলে নিজে যেয়ে খুঁজে নিলেই তো হয়। আমার কাছে জিজ্ঞেস করছে কেনো? তবুও মুখের কথা মুখে রেখে বললাম ” আমি এতো কিছু জানি না আপু। আর ওনাকে তো আমি এখনো পর্যন্ত ভালো করে দেখলাম ই না। কাল আসার পর যখন সোফায় বসেছিলো তখন দুর থেকে যেটুকু দেখেছিলাম অতুটুকুই। ” সকালের কথাটুকু চেপে গেলাম। কারন ওই কথাটুকু বললে এখন একশোটা প্রশ্ন করে মাথা খাবে এরা। আর ওনার বিষয়ে বেশি কথা বাড়াতে আমি মোটেও ইচ্ছুক নয়।
আমার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে রিয়া আপু বললো ” হয়েছে এবার থামো সবাই। তারপর বলো কালকে রাদিয়া আপুর রিসিপশনে কে কি পড়ছে?
রিয়া আপুর কথায় গল্পের মোড় ঘুরে গেলো কালকে রাদিয়া আপুর রিসিপশনের দিকে। সবাই বিশাল আলোচনার পরে ডিসিশন হলো শাড়ি পড়বে সবাই। এই ডিসিশনে সবাই খুশি হলেও হতে পারলাম না আমি। কারণ শাড়ি পরে হাটা তো দুরের ই কথা। শাড়ি পরলেও কেমন লজ্জা লাগে আমার কিন্তু কেনো তা জানি না। তাই বাধ সেধে বললাম ” তোমরা শাড়ি পরলে পরো গে বাবা।আমি ওসব শাড়ি টাড়ি পরতে পারবো না।”
আমার কথা শুনে খেইখেই করে উঠলো রিয়া আপু। তারপর রাগী কন্ঠে বললো –
” শাড়ি পরতে পারবি না মানে? মামার বাড়ির আবদার পেয়েছিস নাকি যে শাড়ি পরতে পারবি না বললি আর অমনি আমরা শুনে নিলাম।”
রিয়া আপুর সাথে তাল মিলিয়ে তাফসির ভাইয়ের খালাতো বোন সাইমা আপু ও বলে উঠলো ” হ্যাঁ তাইতো। আমরা সবাই শাড়ি পরবো আর তুমি একা পরবে না এটা তো মেনে নিবো না। তোমাকে পরতেই হবে।
আপুর সাথে সবাই বলে উঠলো যে ” হ্যাঁ পরতেই হবে।” অগত্যা আমি আর কি করবো। উপায় না দেখে রাজি হয়ে গেলাম।
.
.
.
.
সব মেহমান দের খাওয়া হয়ে গেলে বসলো বাড়ির সদস্যরা। আমার ডাক পরতেই ডাইনিং রুমে যেয়ে দেখলাম খাবারের বিশাল আয়োজন। ইতিমধ্যে বসে পরেছে সবাই। তার মধ্যে তাফসির ভাই ও আছে দেখছি। আমি চেয়ার টেনে বসতেই এক নজর আমার দিকে তাকিয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো সে। বড়মা, মেজো মা সবাই এমন খাতির যত্ন করছে দেখে মনে হচ্ছে বাড়িতে নতুন মেয়ে জামাই এসেছে। কিন্তু বড় বাবার দিকে তাকিয়ে অবাক হলাম। তার কোনো দিকে খেয়াল নেই। দেখে মনে হচ্ছে খুব বিরক্ত সে। কিন্তু কারণ টা বুঝলাম না। এতোদিন পর ছেলে বাড়িতে এসেছে। কোথায় বাকিদের মতো মাথায় তুলে রাখবে আর তা না করে তিনি বিরক্ত হচ্ছেন? তাই পাশে বসা রিয়া আপুর কাছে কানে কানে জিজ্ঞেস করলাম,,
” কি ব্যাপার বলো তো আপু? বড় বাবা এমন বিরক্ত হয়ে খাচ্ছে কেনো? ”
আমার কথা শুনে রিয়া আপু বললো,,
” পাশে তাফসির ভাই আছেন তো তাই হয়তো। উনি আসা অবধি না এখনো পর্যন্ত তিনি বড় বাবার সাথে কথা বলেছেন আর না বড় বাবা। এদের মধ্যে কোনো যুদ্ধ তো চলছেই যা আমরা জানি না। ”
রিয়ার আপুর কথা শুনে বুঝলাম কাহিনী একটু বেশিই গড়মিলে। জানার প্রচুর আগ্রহ থাকলেও আপাতত শান্ত হয়ে খেতে শুরু করলাম। খাওয়ার মাঝখানে তাফসির ভাইয়ের ফোন বেজে ওঠায় উনি উঠে চলে যেতে লাগলেন। কিন্তু তার মধ্যেই পেছন থেকে ডেকে উঠলেন মেজো বাবা। তাফসির ভাই থেমে মেজো বাবার দিকে তাকিয়ে বললেন ” জ্বী মেজো বাবা বলুন। ”
খেতে খেতে মেজো বাবা তাফসির ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বললেন ” ফ্রী হয়ে একবার আমার রুমে এসো তো। জরুরি কথা আছে।”
মেজো বাবার কথা শুনে তাফসির ভাই এক পলক বড় বাবার দিকে তাকালেন। তারপর আবার মেজো বাবার দিকে তাকিয়ে বললেন ” ঠিক আছে মেজো বাবা। আমি একটু পর আসছি। ”
মেজো বাবা উপর-নীচ মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতেই তাফসির ভাই ভারী কদম ফেলে চলে গেলেন।
______________
খাওয়া শেষ হতেই রুমে এসে ফোন হাতে নিয়ে বসলাম। কালকে থেকে ফোন ধরার সময় টুকু পাই নি। তাই মেসেঞ্জারে ঢুকেই সর্ব প্রথম ফ্রেন্ড’দের গ্রুপে ঢুকলাম। এরা ননস্টপ বকবক করে। তাদের সাথে কথা বলতে বলতে কখন ঘুম ঘুম ভাব টা চলে আসলো বুঝতে পারি নি। কিন্তু আমার ঘুমটা বোধহয় রিয়া আপুর সহ্য হলো না।
ঘুমের ভাবটা গাঢ় হতেই এসে ডাকাডাকি করা শুরু করলো সে। আমি অনেক কষ্টে চোখ আধ টুকু খুলে জিজ্ঞেস করলাম ” কি হয়েছে হয়েছে আপু? ডাকছো কেনো?”
রিয়া আপু হাত ধরে টেনে ওঠাতে ওঠাতে বললো ” তুই এই সময় ঘুমাচ্ছিস? তাড়াতাড়ি উঠে রেডি হ। শাড়ি কিনতে যাবো সবাই।”
আপুর কথায় সোজা হয়ে বসলাম আমি। ঘুমে ঢুলু ঢুলু চোখে চুলে হাত খোঁপা করতে করতে জিজ্ঞেস করলাম ” কিসের শাড়ি? আমার আর শাড়ি কেনা লাগবে না মায়ের থেকে একটা নিয়ে পরবো। তোমরা যাও।”
আমার কথা শুনে বেশ বিরক্ত হলো আপু। বাজখাঁই কন্ঠে বললো ” জ্বি না। ওই শাড়ি পড়লে হবে না। আমরা সবাই একি রকম শাড়ি পড়বো। তাড়াতাড়ি উঠে রেডি হন। বসুন্ধরায় যাবো। তোকে ১০ মিনিট সময় দিলাম তার মধ্যে রেডি হয়ে নিচে আসবি। অপেক্ষা করছি। ” বলে ঘর থেকে বের হয়ে চলে গেলো আপু।
.
.
রেডি হয়ে নিচে আসতেই দেখলাম তাফসির ভাই মেজো বাবার ঘর থেকে বের হচ্ছে। তৎক্ষনাৎ মনে পরলো ওহহো মেজো বাবা তো ডেকেছিলেন ওনাকে কোনো একটা কারনে। কিন্তু কি বললো তা তো জানা হলে না।
আমার ভাবনা চিন্তার মাঝেই সামনে কারোর উপস্থিতি টের পেলাম। আস্তে আস্তে মাথা তুলে তাকাতেই দেখলাম তাফসির ভাই এসে দাড়িয়েছেন আমার সামনে। ওনাকে এতো সামনে দেখতেই প্রথমে থতমত খেয়ে গেলাম। কিছু বলতে যাবো তার আগেই উনি বলে উঠলেন,,
” এতো সেজেগুজে কোথায় যাচ্ছিস?”
ওনার কথা শুনে একবার নিজের দিকে তাকালাম কিন্তু সাজার চিন্হ মাত্র না পেয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম ” সাজলাম কোথায় তাফসির ভাই? নতুন জামা টাই তো পরলাম শুধু। ”
আমার কথায় ভ্রু কুঁচকে বললেন ” বাহ দুই দিনের পুচকে মেয়ে কথা শিখেছিস তো ভালো। কোন টা কে সাজ বলে আর কোন টা কে বলে না তা এখন তোর কাছ থেকে শিখতে হবে জানতাম না তো। ”
ওনার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম আমি। আমি কি বললাম আর উনি কি কি বললো। আমি উত্তরে কিছু বলতে যাবো তার মধ্যেই রিয়া আপু এসে দাঁড়ালো পাশে। তাফসির ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,,
” কি হয়েছে ভাইয়া? কোনো সমস্যা?”
” তোদের ছোট বোন যে দিন দিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে সেদিকে খেয়াল রাখিস তোরা? মুখে মুখে তর্ক ও করা শিখেছে দেখছি। সাবধানে রাখিস এটাকে। ” বলে চলে গেলেন তাফসির ভাই।
ওনার কথা শুনে তাজ্জব বনে গেলাম। মনে মনে ভাবছি কি এমন বললাম যার জন্য বেয়াদব উপাধি পর্যন্ত পেয়ে গেলাম।
তাফসির ভাইয়ের কথা শুনে আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রিয়া আপু বললো ” ওনাকে কি বলেছিস প্রাচু? এই তুই বেয়াদবি করেছিস ওনার সাথে? জানিস না উনি তোর কতো বড়? ”
” বিশ্বাস করো আপু কিচ্ছু বলি নি আমি। উনি বানিয়ে বানিয়ে বলেছেন। ”
” আচ্ছা বাদ দে। চল। গাড়িতে তিশাপু আর সাইমা অপেক্ষা করছে।”
” হুম চলো”
.
.
.
ঘড়িতে যখন দশটা বাজে তখন এক গাদা শপিং ব্যাগ নিয়ে বাড়িতে ঢুকলাম সবাই। আমাদের দেখেই মা শরবত বানাতে চলে গেলেন সবার জন্য। আমি এসেই শপিং ব্যাগ গুলো কোনো মতে নিচে রেখেই সোফায় গা এলিয়ে দিলাম ক্লান্তিতে। পা ব্যাথায় টনটন করছে। পুরো বসুন্ধরা চরকি মারিয়েছে একই রকমের অনেক গুলো সুন্দর শাড়ি খুজতে। যেটা পছন্দ হয় সেটা একই রকমের অনেক গুলো পাওয়া যায় না আবার যেটা পাওয়া যায় সেটা পছন্দ হয় না। অবশেষে ঘুরে ঘুরে এক দোকানে পেলাম কুন্দনের কাজ করা গোলাপি ও বেগুনির সংমিশ্রণের শাড়ি। অসম্ভব সুন্দর দেখতে শাড়ি টি পছন্দ হলো সবারই। এর মধ্যেই নিচে নেমে এলেন তাফসির ভাই। সদর দরজার দিকে যেতে যেয়েও আমাদের দেখে পা ঘুরিয়ে চলে এলেন আমাদের দিকে।
চলবে