আমার তোমাকে প্রয়োজন পর্ব-১২+১৩

0
1397

#আমার_তোমাকে_প্রয়োজন💖
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_12

কপি নিষিদ্ধ ❌

আহাদ আমেনার রুমে এসে দেখে মেঝেতে চাদরে মোড়ানো আমেনার লা”শ রাখা আছে,আর তার পাশে বসে ঐশী নিঃশব্দে কাঁদছে,কেন যেন আহাদের বুকটা ধক করে উঠে,ও দ্রুত পায়ে ঐশীর কাছে আসে ওর কাছে এসে ওর কাঁধে হাত রাখে,
জান।

আহাদের গলার স্বর শুনে ঐশী চোখ তুলে তাকায়,
আহাদকে দেখে মাএই ঐশী ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগে,
“আহাদ,আমার আম্মু মা’রা গিয়েছে,আম্মু কেন আমাকে একা করে চলে গেল,কেন আমাকে সাথে করে নিয়ে গেলো না,এখন আমি আম্মুকে ছাড়া কি করে থাকবো,বলুন না আহাদ এখন আমি আম্মুকে ছাড়া কি করে থাকবো,এই দুনিয়াতে আমার আপন বলতে আর কেউ রইল না এক আম্মু ছিল সেও আজ আমাকে একা করে চলে গেল,আহাদ আমার আর কেউ রইল না,
কেউ রইল না।
কাঁদতে কাঁদতে ঐশী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
আহাদ ওকে ধরে ফেলে,ঐশীর কান্নায় আহাদের বুকে র’ক্ত’ক্ষ’র’ণ হচ্ছিল,আজ প্রথম ঐশীকে এভাবে কাঁদতে দেখলো,নিজের কষ্ট প্রকাশ করতে দেখলো।
ঐশীর কান্না ঐশীর বলা প্রতিটা কথা আহাদের বুকে তীরে মতো গেঁ’থে ছিলো।
আহাদ নিজেকে সামলে নেয় ও জানে এখন ওকে কি করতে হবে,ও ঐশীকে কোলে তুলে নেয়।
গার্ডদের ইশারায় ঐশীর আম্মুর দাফ’ন কাফ’নের ব্যবস্থা করতে বলে,ও বাড়ি থাকে বের হয়ে যায়।

আহাদ ঐশীকে ওর বাড়িতে এনে ওর রুমের পাশের রুমটাতে ঐশীকে নিয়ে যেয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়।
ডক্টর আসে ঐশীর চেকআপ করে চলে যায়।
ঐশীর এখন ভালো ঘুম দরকার তাই ডক্টর ওকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে গেছে।
আহাদ ঐশীর হাত ধরে ওর দিকে তাকিয়ে আছে,
কিছুক্ষণ পর আহাদ উঠে রুম থেকে চলে যায়,
যাওয়ার সময় দরজা বাহির থেকে লক করে যায়।

আহাদ ঐশীর মায়ের জানাযায় সামিল হয়েছিল নিজ হাতে তাকে কবরে শুইয়ে দিয়েছিল,কবরে মাটি দিয়ে ছিল,এতোদিন ঐশীর মায়ের মাঝে নিজের মাকে খুঁজে পেয়েছিলো কেন যেন ওনাকে দেখলে শান্তি লাগতো,
আজ ওনার মৃ”ত্যুতে ওর বুক কেঁপে ওঠে।
হঠাৎ নিজের মায়ের কথা মনে পড়তেই আহাদের চোখ টলমল করে উঠে ঐশীর মাকে তো নিজ হাতে কবরে শুইয়ে দিতে পেরেছে জানাযায় সামিল হয়েছে কিন্তু নিজের মায়ের জানাযায় সামিল হতে পারেনি,
কবরে মাটি দিতে পারেনি।
কথা গুলো ভাবতেই আহাদের চোখ টলমল করে উঠে চোখ থেকে পানি পরার আগেই আহাদ চোখ মুছে ফেলে।

আহাদ বাড়ি এসে ফ্রেস হয়ে ঐশীর রুমে যায়,
সারাটা রাত ওর মুখশ্রি দেখে পাড় করে দেয়।

সকাল বেলা,
আস্তে আস্তে চোখ মেলছে ঐশী,চোখ মেলে নিজেকে এক বড় সুন্দর সাজানো গোছানো রুমে আবিষ্কার করলো,ও মাথা চেপে ধরে শোয়া থেকে উঠে বসে,
সামনের দেয়ালে তাকাতেই ঐশী থমকে যায়।

রুমের সব দেয়ালে,ঐশীর,ঐশীর বাবা,মায়ের ছবি ফ্রেম বন্ধী করে লাগানো হয়েছে,আহাদ ওর আম্মুর ফোন থেকে,ওর ফোন থেকে,ওদের বাসার এলবাম থেকে যত গুলো ছবি পেয়েছে সবগুলো ছবি ফ্রেম বন্ধী করে দেয়ালে টাঙিয়ে রেখেছে,রুমের সব দেয়ালকে শতশত ছোট বড় ফ্রেম দিয়ে সাজানো হয়েছে।
ঐশী বিছানা ছেড়ে উঠে দেয়ালের সামনে যেয়ে ওর আম্মুর ছবিটা নামায়,ছবিটা বুকে জড়িয়ে অঝোরে কাঁদতে লাগে।
তখনই দরজা খুলে আহাদ রুমে প্রবেশ করে,
ঐশী আহাদকে দেখে দৌড়ে ওর কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগে,
আহাদ আমার আম্মু,আমি আমার আম্মুকে হারিয়ে ফেলেছি,আম্মু কেন আমাকে এই অ’ভি’শ’প্ত
দুনিয়ায় একা করে চলে গেল,কেন আমাকে নিয়ে গেলো না,আমি আম্মুকে ছাড়া কি করে থাকবো,
কি করে থাকবো।
ঐশী যতটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরা সম্ভব ততোটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে,আহাদ ঐশীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,ঐশীর প্রশ্নগুলোর উত্তর আহাদের জানা নেই
ওকে কি বলে সান্ত্বনা দিবে বুঝতে পারছে না।

ঐশীর হুস ফিরতেই ও আহাদের থেকে ছিটকে দূরে সরে যায়,আহাদের ভ্রু কুচকে আসে।

আমি,আমি এখানে কেন?

আমি নিয়ে এসেছি।

কেন নিয়ে এসেছেন,আমাকে বাসায় যেতে হবে।
বলে যেতে নিলে আহাদ ওর হাত ধরে ফেলে,
কোথায় যাচ্ছো?

আমার বাসায়।

ঐ বাসা এখন আর তোমার বাসা নেই।

মানে?

আমি ঐ বাসা বিক্রি করে ফেলেছি।

কিহ!

হ্যাঁ।

ঐশী আহাদের কলার চেপে ধরে চেচিয়ে বলে,
কোন সাহসে বিক্রি করেছেন,ওটা শুধু বাসা ছিল না ওটা আমার বাবা মায়ের শেষ চিহ্ন ছিল,তাদের স্পর্শ মিশে আছে ঐ বাসাতে আপনি কি করে কাজটা করতে পারলেন,বেরিয়ে যান এ মুহূর্তে রুম থেকে বেরিয়ে যান।

আহাদ কোনো কথা না বলে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
যাওয়ার আগে দরজা লক করে যায়।

ঐশী ধপ করে মেঝেতে বসে পড়ে ওর চোখ থেকে অঝোর ধারায় জল গড়িয়ে পড়ছে।

দুপুর ২ টা বাজে,

একজন সার্ভেন্ট দরজা খুলে ভেতরে আসে সে ঐশীর
জন্য খাবার নিয়ে এসেছে,উনি ভেতরে এসে দেখে ঐশী একটা ফটো ফ্রেম বুকে জড়িয়ে শুইয়ে আছে।
উনি ঐশীর সামনে যেয়ে দাঁড়ায়।
ম্যাম।

ঐশী চোখ মেলে উনার দিকে তাকায়।

ম্যাম আপনার জন্য খাবার এনেছি উঠে খেয়ে নিন।

ঐশী উঠে বসে।

আমি খাবাে না,আপনি নিয়ে যান।

ম্যাম আপনি উইক আপনাকে খেতে হবে।

আমার খিদে নেই,আপনি চলে যান।

কিন্তু ম্যাম স্যারের অর্ডার তো আমাকে মানতে হবে,প্লিজ খাবারটা খেয়ে নিন।

আপনার কি কথা কানে যায় না,আমি খাবো না বুঝেছেন আপনি,চলে যান এখান থেকে,যান বলছি।

ঐশীর ধমকে মেয়েটি ভয় পেয়ে চলে যায়।

__

সবেমাত্র বাড়িতে প্রবেশ করেছে আহাদ,রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই সেই সার্ভেন্ট আহাদের কাছে এসে মাথা নত করে বলে,
স্যার ম্যাম খাবার খাননি আমি অনেক জোর করেছি কিন্তু উনি খাবার মুখে তুলেনি।

ঠিক আছে যাও।

সার্ভেন্ট তার কাজ চলে যায়।

আহাদ ওর রুমে চলে যায়,ফ্রেস হয়ে ঐশীর রুমের সামনে আসে ওর হাতে খাবারের ট্রে,
ও দরজার খুলে ভেতরে যায়।
ঐশী খাটে বসে সামনের দিকে তাকিয়ে ছিল আহাদ আসতেই আহাদের দিকে তাকায়।
আহাদ দরজা লক করে ঐশীর কাছে আসে ওর পাশে বসে।
জান খাবার খাওনি কেন?

ঐশী আহাদের সাথে কথা বলে না।

আচ্ছা ঠিক আছে কথা বলতে হবে না,আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি।
আহাদ লোকমা তুলে ধরে কিন্তু ঐশী মুখ ফিরিয়ে নেয়।

কি হলো জান খেয়ে নাও।

আমি খাবো না,চলে যান আপনি।

এমন করছো কেন খেয়ে নাও।

ঐশী চেচিয়ে বলে,
বললাম তো খাবো না,চলে যান আপনি।
ঐশী ধাক্কা দিয়ে প্লেট সরিয়ে দেয়,খাবার পরার আগেই আহাদ সামলে নেয়,ঐশীর কাজে আহাদের রাগ উঠে যায়,ও টেবিলের উপর খাবারের প্লেটটা রেখে হন হন করে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

একটুপরই আহাদ হাতে মোটা দড়ি নিয়ে রুমে আসে,
ওর হাতে দড়ি দেখে ঐশীর ভ্রু কুঁচকে আসে।
আহাদ ঐশীর কাছে এসে ওর হাত চেপে ধরে দড়ি দিয়ে হাত বাঁধতে শুরু করে।
কি করছেন আপনি হাত বাঁধছেন কেন,ছাড়ুন।

আহাদ ওর কথার উওরে কিছু বলছে না।
আহাদ ঐশীর দু হাত বেডের সাথে বেঁধে দেয়।
ঐশী হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কোনাে লাভ হচ্ছে না।

আহাদ হাত ধুয়ে খাবার মাখতে মাখতে বলে,
মোচড়ামুচড়ি করে কোনো লাভ হবে না,তুমি হাতের বাঁধন খুলতে পারবে না,বেশি মোচড়ামুচড়ি করলে হাত কেটে যাবে।

আহাদের কথায় ঐশীর রাগ উঠে যায়।

আহাদ ঐশীর মুখের সামনে খাবার তুলে ধরে,ঐশী মুখ ঘুরিয়ে নেয়,ওকে মুখ ঘোরাতে দেখে আহাদ ঐশীর মুখ চেপে ধরে মুখে খাবার পুরে দেয়,ঐশী রাগান্বিত চোখে আহাদের দিকে তাকায়,আহাদ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছে,ঐশীকে খেতে না দেখে আহাদ বলে,
কি এখনো খাবে না?
তোমাকে কি করে খাওয়াতে হবে তা আমার ভালো করে জানা আছে,ভালো মতো খেয়ে নাও নাহলে।

আহাদের কথায় ঐশী খেয়ে নেয়।

গুড।

আহাদ ঐশীকে খাইয়ে দিচ্ছে ঐশীও আর কিছু না বলে খেয়ে নিচ্ছে।

#চলবে

#আমার_তোমাকে_প্রয়োজন💖
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_13

কপি নিষিদ্ধ ❌

আহাদ ঐশীকে খাইয়ে দিচ্ছে ঐশীও আর কিছু না বলে খেয়ে নিচ্ছে।

খাওয়া শেষে আহাদ ঐশীর হাতের বাঁধন খুলে দেয়,
মোচড়ামুচড়ি করার ফলে ঐশীর হাত ছিলে গেছে,
আহাদ ঐশীর হাত ধরে ছিলে যাওয়া জায়গায় ঠোঁট ছোঁয়ায়,ঐশী রেগে আহাদের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়।

ঐশীর কাজে আহাদ রেগে যায় ও ঐশীর কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়,ঐশী অবাক হয়ে তাকায়।

ঐশী ছোটার জন্য চেষ্টা করতেই আহাদ হাতের বাঁধন ছাড়িয়ে নেয় ঐশী বিছানায় পরে যায়,ঐশী উঠতে নিলে আহাদ ওর হাত বিছানার সাথে চেপে ধরে ওর দিকে ঝুঁকে তাকায়।
জান আমি তোমার কাছে আসলে এতো ছটফট করো কেন,একটু শান্ত হয়ে বসে থাকতে পারো না।

ছাড়ুন আমাকে।

এতো ছাড়ুন ছাড়ুন করো কেন?

কারণ আপনার স্পর্শ আমার স’হ্য হয় না,ঘৃণা হয়।

ঘৃণা হয়!

হ্যাঁ হ্যাঁ ঘৃণা হয়,আপনি একটা জঘ’ন্য মানুষ,আপনার মধ্যে কোনো দয়া মায়া নেই,আপনি না জানে কত খু”ন করেছেন,কতো শত র’ক্তে’র বন্যা বইয়েছেন,কতো পরিবারকে ধ্বং”স করেছেন,আপনি মানুষকে মানুষ মনে করেন না আপনার কাছে এরা কেবল মাএ কীটপতঙ্গ এদের পায়ের তলায় পিছতে পারলেই আপনার শান্তি,আপনি একটা অমানুষ।
আপনাকে আমি ঘৃণা করি,আপনার স্পর্শকে ঘৃণা করি এমনকি আপনার নামকেও আমি ঘৃণা করি।
আপনি একটা অভি’শা’প,আপনি আমার জীবনে অভি’শা’প স্বরুপ এসেছেন।

ঐশীর কথায় আহাদের রাগ উঠে যায়,আজ প্রথম কেউ ওর সাথে এভাবে কথা বলেছে,রাগে আহাদের চোখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে কপালে ঘাড়ের র’গ ফুলে উঠেছে।

আহাদ ঐশীর গলায় মুখ গুঁজে গলায় জোরে কামড় বসিয়ে দেয়,ঐশী ব্যাথায় “আহ” করে উঠে।
আহাদ ঐশীর উপর থেকে সরে আসে,ঐশী উঠে বসে গলায় হাত দেয় ব্যাথায় ওর জান বেরিয়ে যাচ্ছে।

আহাদ ঐশীর কোমড় জড়িয়ে ধরে পুনারায় নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় এক হাত দিয়ে কোমড় চেপে ধরে অন্য হাত দিয়ে ঐশীর ঘাড় চেপে ধরে রাগি কন্ঠে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
কি বললে তুমি আমার স্পর্শ তোমার স’হ্য হয় না, আমাকে তুমি ঘৃণা করো,আমার মধ্যে দয়া মায়া নেই,
আমি জঘ’ণ্য,অমানুষ,আমি তোমার জীবনে অভি’শা’প স্বরুপ এসেছি।
হ্যাঁ ঠিক বলেছে তুমি,আমি নির্দয়,জঘ’ন্য,অমানুষ,
আমি তোমার জন্য অভি’শা’প।
কিন্তু,
ঐশীকে নিজের সাথে আরেকটু মিশিয়ে,
এই অভি’শ’প্ত জীবনে তোমাকে বেঁচে থাকতে হবে,
এই জঘ’ন্য মানুষের সাথেই সারাজীবন থাকতে হবে,
আমার স্পর্শ তোমাকে সারাজীবন স’হ্য করতে হবে।

ঐশী রেগে বলে,
থাকবো না আপনার সাথে চলে যাবো আমি।

তোমাকে যেতে দিলো তো,তুমি আজ থেকে এই বাড়ি কি এই রুম থেকেও এক পা ও বাড়াতে পারবে না,
তোমাকে সারাজীবন এই চার দেয়ালের মাঝে ব’ন্ধী হয়ে থাকতে হবে,হ্যাঁ আমার বন্দী’নি হয়ে থাকতে হবে।

আমি ম’রে যাবো তবু আপনার সাথে থাকবো।

তুমি ম’রতেও পারবে না,আমি তোমাকে ম’রতে দিবো না,সারাজীবন তুমি আমার দ’হ’নে পু’ড়’বে,তুমি ম’রণ ভিক্ষা চাইবে তবুও তোমায় ম’রতে দিবো না।
কথা গুলো বলেই আহাদ রেগে হনহন করে রুম থেকে চলে যায়।

নিজের রুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে অফিসে চলে যায়।

নিজের কেবিনে বসে কাজে মনোযোগ দেওয়া চেষ্টা করছে আহাদ কিন্তু বারবারই ঐশীর বলা কথা গুলে মনে পড়ে যাচ্ছে,আহাদ রেগে সামনে থাকা গ্লাসটা মুঠো করে চেপে ধরে মুহূর্তের মধ্যে গ্লাসটা ভে’ঙ্গে কাঁচ গুলো আহাদের হাতে ঢুকে যায়।

আহাদ ওর হাতের দিকে তাকায়,ঠিক তখনই সিয়াম কেবিনে প্রবেশ করে আহাদের হাতে র’ক্ত দেখে হন্তদন্ত হয়ে আহাদের কাছে আসে,
স্যার আপনার হাত কাটলো কি করে?

আহাদ চুপ করে আছে।

টেবিলের উপর গ্লাসের টুকরো গুলো দেখে সিয়াম বুঝতে পারে আহাদের হাত কিভাবে কেটেছে।

স্যার হাতটা দিন ব্যান্ডেজ করতে হবে।

লাগবে না।

প্লিজ স্যার হাত থেকে র’ক্ত পড়ছে ব্যান্ডেজ করতে হবে।

বললাম তো লাগবে না।

স্যার প্লিজ।

আহাদ আর কিছু না বলে হাত বাড়িয়ে দেয় সিয়াম ওর হাতের র’ক্ত পরিষ্কার করে দিচ্ছে,ব্যান্ডেজ করতে করতে বলে,
স্যার এতো রেগে আছেন কেন?

রেগে নেই আমি।

স্যার এতো বছর ধরে আপনার সাথে আছি আপনাকে আমি খুব ভালো করে চিনি আপনি কখন রেগে থাকেন কখন হ্যাপি থাকেন আর কখন টেনশনে থাকেন তা আমি বুঝতে পারি,স্যার বলুন না কেন রেগে আছেন?

আহাদ চুপ করে রয়।

স্যার ম্যামের সাথে ঝ’গ’ড়া হয়েছে?

আহাদ সিয়ামের দিকে তাকায়।

বুঝে়ছি ম্যামের সাথে ঝ’গ’ড়া হয়েছে।

সিয়াম ও যে কেনো আমাকে এতোটা ঘৃণা করে আমি জানি না,আচ্ছা ও কি আমার ভালোবাসা বুঝতে পারে না,ও কি আমার কষ্ট গুলো দেখতে পায় না,
বলতে পারো ও কেন আমার সাথে এমন করে,কেন এতো কষ্ট দেয়?

স্যার চিন্তা করিয়েন না ম্যাম একদিন ঠিক আপনার ভালোবাসা বুঝতে পারবেন।

আহাদ দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।

স্যার আপনি বাসায় চলে যান,বাকি কাজ আমি সামলে নিবো।

হুম।

আহাদ চেয়ার ছেড়ে উঠে কেবিন থেকে বের হয়ে যায়।

৭ টার দিকে আহাদ বাড়িতে আসে,সিঁড়ির কাছে যেতেই রিমির সাথে দেখা হয়,রিমি আহাদের সার্ভেন্ট,
আহাদ ওকে ঐশীর দেখাশোনা করার জন্য রেখেছে।

রিমি তোমার ম্যামের কাছে গিয়েছি?

জ্বী স্যার কিছুক্ষণ আগে গিয়েছিলাম উনি ঘুমাচ্ছে।

এই সময় ঘুমাচ্ছে! আচ্ছা ঠিক আছে যাও।

আহাদ ওর রুমে চলে আসে,ফ্রেস হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয় রিমি ওর নাস্তা রুমে দিয়ে গেছে,আহাদ ফোন স্ক্রল করছে আর নাস্তা খাচ্ছে।

বেশ কিছুক্ষণ পর আহাদ ঐশীর রুমে আসে,দরজা খুলে ভেতরে এসে দেখে ঐশী কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।
আহাদ ওকে দেখে চলে যেতে নিলেও কেন যেন আবার রুমে আসে,ওর পাশে বসে মৃদু স্বরে বলে,
উঠো জান আর কতো ঘুমাবে,জান উঠো,উঠো জান
আর কতো ঘুমাবে,কি হলো উঠো?

আহাদ ওকে ডাকছে কিন্তু ঐশীর কোনো সাড়াশব্দ নেই,আহাদের কেন যেন খটকা লাগে ও ঐশীর মুখের উপর থেকে কাঁথা সরায়,কাঁথা সরাতেই ঐশীর পায়ের দিকের কাঁথা অংশটা সরে যায় আর কিছু একটা মেঝেতে পড়ে,কোনো কিছুর শব্দ শুনতে পেয়ে আহাদ মেঝেতে তাকায় আর তাকাতেই র’ক্ত মাখা ছু”ড়ি দেখতে পায়।
র’ক্ত মাখা ছু”ড়ি দেখে আহাদের মনে অজানা ভয় কাজ করে,ও ঐশীর উপর থেকে কাঁথা সরিয়ে ফেলে আর কাঁথা সরাতেই দেখতে পায় ঐশীর বাম হাত কাটা হাতের র’ক্তে সাদা চাদর লাল বর্ণ ধারণ করেছে,
হাতের র’ক্ত শুকিয়ে গেছে বোঝাই যাচ্ছে অনেকক্ষণ আগে হাত কেটেছে।
আহাদ ঐশীকে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরে,
জান কি করলে তুমি,জান এমনটা কেন করলে,
জান চোখ খোলো,জান কথা বলো আমার সাথে,
জান তোমার কিচ্ছু হবে না,কিচ্ছু হবে না।

আহাদ ঐশীকে কোলে তুলে রুম থেকে বের হয়ে দ্রুত পায়ে নিচে আসে,রিমি এদিক দিয়েই যাচ্ছিল আহাদের কোলে ঐশীকে অচেতন অবস্থায় দেখে রিমি আহাদের কাছে ছুটে আসে।
স্যার ম্যামের কি হয়েছে?

রিমিকে দেখে আহাদের রাগ উঠে যায়,রেগে চেচিয়ে বলে,
ওকে ছু”ড়ি দিয়েছো কেন?

আহাদের হু’ঙ্কারে রিমি কেঁপে উঠে,ও কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
স্যার ম্যাম চেয়েছিলেন।

চেয়েছিলো বলে দিয়ে দিলে একবারও কি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলে?

আসলে স্যার,

তুমি আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাও।

স্যার,

যাও বলছি।

রিমি মাথা নিচু করে ফেলে।

আহাদ ঐশীকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠে বসে,আহাদ গাড়ি স্টার্ট দেয়,খুব স্পিডে ড্রাইভ করছে,আহাদ ড্রাইভ করার ফাঁকে ফাঁকে ঐশীর দিকে তাকাচ্ছে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা হসপিটালে চলে আসে,আহাদ ঐশীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দ্রুত পায়ে হসপিটালের ভেতরে যায়,ডক্টর ওদের দেখে আহাদকে ঐশীকে নিয়ে ওটিতে যেতে বলে,আহাদ ঐশীকে বেডে শুইয়ে দেয়,
ডক্টর ওকে বের হতে বললে ও ওটি থেকে বের হয়ে যায়।

কিছুক্ষণের মধ্যে সিয়ামও হসপিটালে চলে আসে আহাদ ওকে আসতে বলেছে।

স্যার ম্যাম কোথায়?

ওটিতে।

সিয়াম আর কিছু বলে না।

আহাদ কপালে দু আঙ্গুল ঠেকিয়ে বসে আছে,
ঐশীর কাজে কষ্ট পাবে না রাগ করবে বুঝতে পারছে না।

আহাদের পাশে দাঁড়িয়ে ওটির দরজার দিকে তাকিয়ে আছে সিয়াম,সিয়াম জানে ঐশীর কাজে আহাদ অনেক কষ্ট পেয়েছে,রেগেও আছে বটে,ঐশী নিজের ক্ষ’তি করে খুব বড় ভুল করে ফেলেছে,এ ভুলের মাশুল যে ওকে দিতেই হবে।

বেশ কিছুক্ষণ পর ডক্টর ওটি থেকে বের হয়।
আহাদ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।
ডক্টর ঐশী,

আমাদের ইমিডিয়েটলি O- ব্লা’ড লাগবে,হাত কা’টার ফলে শরীর থেকে অনেক র’ক্ত বেরিয়ে গেছে,র’ক্ত দিতে না পারলে ওনাকে বাঁচানো যাবে না।

সিয়াম বলে,
ডক্টর আমি ম্যামকে র’ক্ত দিবো,আমার রক্তের গ্রুপ O-।

ওকে আসুন আপনি।

সিযাম ডক্টরের সাথে যায়,ওর ব্লা’ড টেস্ট করা হয়,
তারপর ওর থেকে ২ ব্যাগ ব্লা’ড নিয়ে ঐশীকে দেওয়া হয়,সিয়াম কেবিন থেকে বের হয়,ঐশীর ট্রিটমেন্ট আবার শুরু করা হয়।

আহাদ সিয়ামকে জড়িয়ে ধরে,সিযাম মুচকি হাসে।
সিয়াম কি বলে যে তোমাকে ধন্যবাদ দিবো বুঝতে পারছি না।

স্যার ধন্যবাদ দেওয়ার প্রয়োজন নেই আপনি আমার জন্য যা করছেন তাতে যদি আমি আমার জীবনও দিয়ে দেই তবুও আপনার ঋণ শোধ করতে পারবো না।

আহাদ আবারও সিয়ামকে জড়িয়ে ধরে।

বেশ কিছুক্ষণ পর ডক্টর ওটি থেকে বের হয়,আহাদের কাছে যেয়ে বলে,
মি. শেখ পেসেন্ট এখন বিপদ মুক্ত,উনাকে একটু পর কেবিন শিফট করা হবে,আপনি যদি আরেকটু দেরি করেন তবে ওনাকে আর বাঁচানো যেতো না,এরপর থেকে ওনার খেয়াল রাখবেন,ওনাকে একা রাখবেন না,ওনার পাশে কেউ একজন সবসময় থাকবেন,উনি আজ সু’ই’সা’ই’ড করার চেষ্টা করেছেন কাল পরশু আবারও করতে চাইবেন তাই ওনাকে একা রাখবেন না,
বুঝেছেন?

জ্বী ডক্টর।

ডক্টর চলে যায়,ঐশীকে কেবিনে শিফট করা হয়,
আহাদ সিয়ামকে রেস্ট করার জন্য বাসায় পাঠিয়ে দেয়,ও ঐশীর কেবিনে আসে ওকে অচেতন অবস্থায় দেখে আহাদ দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে,ঐশীর কাছে এসে ওর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়,ব্যান্ডেজ করা হাতে ঠোঁট ছুঁইয়ে মৃদু স্বরে বলে,
জান আজ যা করলে ঠিক করলে না,আমাকে এভাবে আঘাত দিবে ভাবতে পারিনি,এভাবে কষ্ট না দিলেও পারতে,জান নিজের ক্ষ’তি করার চেষ্টা করে খুব বড় ভুল করে ফেলেছো,এই ভুলের শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে