আমার তোমাকে প্রয়োজন পর্ব-৪+৯

0
1429

#আমার_তোমাকে_প্রয়োজন💖
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_8

কপি নিষিদ্ধ ❌

আহাদ খুব সাবধানে ঐশীর ক্ষ’ত গুলো পরিষ্কার করে অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিচ্ছে,ওর শরীরের ব্যাথা কমানোর জন্য আহাদ একটা ইনজেকশন পুষ করে দেয়।

আহাদ ঐশীর গায়ে চাদর দিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হাতে চুমু দিয়ে রুম থেকে বের হয়।

রোজার সামনে বসে আছে আহাদ।
রোজা।

জ্বী ভাইয়া।

রোজা আজ যা হয়েছে তা ঠিক হয়নি,ঐশী এখন মেন্টালি ডিস্টার্ব,ওকে আমাদের সাপোর্ট দিতে হবে,
আজকের এই ঘটনার কথা ও কখনোই মায়ের সাথে শেয়ার করবে না,ও মাকে কোনো প্রকার মানষিক চাপে রাখতে চায় না,ও সব কিছু নিজের মাঝেই দমিয়ে রাখবে কাউকে কিছু বুঝতে দিবে না,তাই আমাদের ওর পাশে দাঁড়াতে হবে ওকে সাপোর্ট দিতে হবে।

হ্যাঁ আমাদের ওর পাশে দাঁড়তে হবে ওকে সাপোর্ট দিতে হবে।

হুম।

___

চোখ মেলে নিজেকে এক গোছানো রুমে আবিষ্কার করে ঐশী,রুমটি তার অচেনা না এ রুমে আরো একবার এসেছে ও,সেদিনও অচেতন অবস্থায় এসেছিলো আজও তাই,ঐশী শরীরে ব্যাথা অনুভব করছে কষ্ট করে উঠে বসে আয়নায় তাকাতেই
শরীরের ক্ষ’ত গুলো চোখে পড়ে,ওর চেহারা মলিন হয়ে যায় রবিনের করা কাজ গুলো মনে পড়ে যায়,
আজ যদি আহাদ না আসতো তাহলে কি হতো,
ওর জীবনে কল’ঙ্কের দাগ লেগে যেতো,তখন তো আ’ত্ন’হ’ত্যা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকতো না।
ঐশীর চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে।

ঐশী বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়,দরজার দিকে পা বাড়াতেই দরজা খুলে যায়,দরজার ওপারে আহাদ দাঁড়িয়ে আছে।
ঐশী আহাদের দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

আহাদ ঐশীর সামনে এসে দাঁড়ায়,ওর গালে হাত রেখে বলে,”ঠিক আছো?”

ঐশী চোখ বন্ধ করে খুলে,যার অর্থ হ্যাঁ ও ঠিক আছে।
কেনো যেন আজ আহাদের স্পর্শে ওর খারাপ লাগেনি,
কেন যেন ওকে স্পর্শ করার জন্য কড়া কথা বলতে পারেনি,কেন যেন আহাদের স্পর্শে ভালো লাগছে
মনে হচ্ছে এ স্পর্শে যেন শান্তি মিশে আছে।

আহাদকে অবাক করে দিয়ে ঐশী আহাদকে জড়িয়ে ধরে,ঐশী জড়িয়ে ধরা মাএই আহাদের বুক ধক
করে উঠে।
ঐশী আহাদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে,আহাদ নিজেকে সামলে ঐশীকে হালকা করে জড়িয়ে ধরে।

আহাদকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায়,
থ্যাঙ্ক ইউ।

লাভ ইউ।

ঐশী আহাদকে ছেড়ে দিয়ে বলে,
কেউ থ্যাঙ্ক ইউ বললে ওয়েলকাম বলতে হয়।

হ্যাঁ জানি কিন্তু তোমার সাথে আমার থ্যাঙ্ক ইউ ওয়েলকামের সম্পর্ক না লাভ ইউর সম্পর্ক।

হুম বুঝেছি,আমাকে এখন বাড়ি যেতে হবে।

যাবে তো এত তাড়া কিসের,বসো আমি সার্ভেন্টকে তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসতে বলছি।

না আমি কিছু খাবো না।

তা বললে তো হবে না তুমি অনেক উইক।

আমি এখন খাবো না,আমার খেতে ইচ্ছে করছে না প্লিজ জোর করিয়েন না।

কিন্তু,

প্লিজ।

আচ্ছা ঠিক আছে,চলো রোজা তোমার জন্য ওয়েট করছে।

রোজাও এসেছে?

হুম,মেয়েটা তোমার অনেক কেয়ার করে,
রোজা খুব ভালো,তোমার প্রকৃত বন্ধু।

হুম।

চলো।

চলুন।

ওরা নিচে নেমে আসে,রোজা ঐশীকে দেখে ওর কাছে এসে জড়িয়ে ধরে।
দোস্ত ঠিক আছিস তুই?

হ্যাঁ ঠিক আছি।

আজ রবিন যা করলো,

প্লিজ ওর কথা আর মনে করিয়ে দিস না,আমি এসব শুনতে চাই না।

আচ্ছা ঠিক আছে বলবো না।

হুম,চল বাসায় যাবো।

আচ্ছা।

চলো তোমাদের বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি।

না আপনাকে কষ্ট করে,
ঐশীর কথা শেষ হওয়ার আগেই আহাদ বলে,
তোমাদের পৌঁছে দিয়ে আসতে আমার কোনো কষ্ট হবে না,আর হ্যাঁ আমার সাথে যেতে না চাইলে তোমাকে আমি যেতেই দিবো না,এখন তুমি বলো যাবে কি যাবে না?

যাবো।

তাহলে চলো।

ওরা বাসা থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠে বসে,
আহাদ ড্রাইভিং সিটে,ঐশী আহাদের পাশের সিটে আর রোজা পেছনের সিটে বসেছে,আহাদ গাড়ি স্টার্ট দেয়,
বেশ কিছুক্ষণ পর ঐশীদের বাসার সামনে চলে আসে।
ওরা গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়।

আমরা যাচ্ছি আপনি চলে যান।

আমিও তোমাদের সাথে যাবো।

মাথা খারাপ নাকি আম্মু আপনাকে দেখে ফেলবে।

দেখবে না।

কিভাবে?

আমি লুকিয়ে থাকবো,চলো।

কিন্তু,

ওহহো এত কিন্তু টিন্তু না করে চলো তো।

ওরা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে,ঐশী কলিংবেলে চাপ দিয়ে ভয়ে ঢোগ গিলে দরজা থেকে কিছুটা দূরে ডান পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আহাদের দিকে তাকায়।
আহাদ ওকে ভয় পেতে দেখে ফিক করে হেসে দেয়,
ঐশী রেগে ওকে কিছু বলবে তার আগেই আমেনা দরজা খুলে,
তোমাদের এতো দেরি হলো যে,এ কি মা তোমার ঠোঁট কাটলো কিভাবে আর হাতে কাঁধে ক্ষ’ত হলো কিভাবে?

রোজা কিছু বলবে তার আগেই ঐশী ওকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
আম্মু আসার সময় রিকশা থেকে পরে গিয়েছিলাম তাই হাত ঠোঁট কেটে গেছে।

কি বলো,একটু সাবধানে চলতে পারো না যদি বড় কোনো দূর্ঘটনা ঘটে যেতো তখন কি হতো,
বাহিরে দাঁড়িয়ে থেকো না ভেতরে আসো।

ঐশী ঘাড় ঘুরিয়ে আহাদের দিকে একবার তাকিয়ে ভিতরে চলে যায়,রোজাও ওর সাথে ভেতরে যায়,
আমেনা দরজা লাগিয়ে দেয়,আহাদও আর দাঁড়িয়ে না থেকে চলে যায়।

রাতে আমেনা ঐশীকে খাবার খাইয়ে মেডিসিন খাইয়ে দেয়,মেয়েকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে গায়ে চাদর দিয়ে মাথায় কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে লাইট অফ করে চলে যান।

ঐশী শুয়ে আছে কিন্তু ওর চোখে ঘুম নেই,দু চোখের পাতা এক করতে পারছে না,চোখটা বন্ধ করলেই রবিনের চেহারা ভেসে ওঠে তখনকার ঘটনা গুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে,ঐশী অনেকক্ষণ এপাশ ওপাশ করে কিন্তু ঘুম আসে না,বেশ কিছুক্ষণ পর ও বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় রুমের লাইট জ্বালিয়ে বসে রয়,ড্রেসিং টেবিলের উপর মেডিসিনের বক্স দেখতে পেয়ে উঠে মেডিসিনের বক্স থেকে তিনটে স্লিপিং পিল হাতে নেয়,হাতের তিনটে ঔষধের দিকে তাকিয়ে আছে ঐশী,খাবে নাকি খাবে না বুঝতে পারছে না,শেষমেশ ভেবে নেয় ঔষধ খাবে,ঔষধ গুলো মুখে নিতে নিলেই আহাদ ফোন করে,ঐশী হাতে ঔষধ নিয়ে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে রয়।

এতক্ষণ যাবৎ ঐশীর সব কাজ কর্ম আহাদ ল্যাপটপে দেখছিলো,হ্যাঁ আহাদ ঐশীর রুমে হিডেন ক্যামেরা লাগিয়েছে,এই বিষয়ে ঐশী এখনো কিছু জানে না,
ঐশীর অজান্তেই কাজটি করেছে আহাদ।

আহাদ টেবিলে বসে ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছিলো,পাশে অন্য ল্যাপটপে ঐশীর রুমের ফুটেজ দেখা যাচ্ছিল,আহাদ কাজের ফাঁকে ফাঁকে ঐশীকে দেখছিলো,ঐশীর রুমের লাইট অফ হতেই আহাদ ঐ ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে নিজের কাজে মন দেয় কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ পরই ঐশীর রুমের লাইট জ্বলে উঠে আহাদেরও চোখ পড়ে সেদিকে,আহাদ কাজ রেখে ওকে দেখে,ওর কাজ কর্ম দেখে আহাদ বুঝতে পারে ঐশীর ঘুম আসছে না তাই স্লিপিং পিল খেতে চাইছে,
স্লিপিং পিল খাওয়ার আগেই আহাদ ঐশীকে কল দেয়।

ঐশী এখনো হাতে ঔষধ নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে আহাদ ৫ বার কল দিয়ে ফেলেছে কিন্তু ঐশী কল রিসিভ করছে না,এখনো ফোন বাজছে,ঐশী ভাবলো, না এবার ফোনটা ধরা উচিত।
যা ভাবা তাই কাজ ঐশী কল রিসিভ করে,
হুম বলুন।

ঘুম আসছে না।

না।

আচ্ছা আমার সাথে কথা বলাে ঘুম চলে আসবে।

আহাদ ঐশীকে এটা সেটা বলছে ঐশী আহাদের কথার উত্তরে হু হা করছে,অনেকক্ষণ এভাবে কথা বলতে বলতে ঐশীর ঘুম চলে আসে ও ফোন কানে নিয়েই ঘুমিয়ে পড়ে,রুমের লাইটটাও অফ করেনি,
আহাদ ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে,
ওকে দেখতে দেখতে রাত পাড় করে দেয়।

দেখতে দেখতে কেটে গেলো ৩ মাস,
এ কদিন বেশ ভালো ভাবেই কেটেছে,
প্রথম কয়েকদিন ঐশী ডিপ্রেশনে ছিলো কিন্তু আহাদ আর রোজা ওকে ডিপ্রেশনে ভুগতে দেয়নি সারা দিন ওরা এটা সেটা করে ঐশীর মন ভালো রাখার চেষ্টা করেছে,দিন কাটতে লাগলো ঐশীর মাথা থেকে রবিনের স্মৃতিও আস্তে আস্তে মুছতে শুরু করলো।
সেদিনের পর থেকে ঐশীর দিকে কেউ চোখ তুলে তাকানোর দুঃসাহস করে না,সবাই জানে ওর দিকে তাকালেও আহাদ ওদেরকে মে’রে ফেলবে।
প্রতিদিন আহাদ একবার করে ভার্সিটিতে এসে ঐশীর সাথে দেখা করে যায়,ঐশীর প্রতি ওর ভালোবাসা কেয়ারিং দিন দিন বেড়েই চলেছে,ঐশীও এখন ওর কেয়ারিং এ অভস্ত্যত হয়ে গেছে,ঐশীও বুঝতে পারছে ও আস্তে আস্তে আহাদের মায়ায় পড়ে যাচ্ছে।

সকাল বেলা,
ঐশী ঘুম থেকে উঠে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নেয়,কাল রাতে আমেনা ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে ছিল তাই ঐশী আর ওনাকে ডাক দেয় না,নাস্তা না করেই ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য বের হয়,দরজা লক করে নিচের তলার এক ভাড়াটিয়ার কাছে চাবি দিয়ে যায় আর বলে যায় তিনঘণ্টা পর যেন সে দরজা খুলে দেয়,ঐ ভাড়াটিয়াও “ঠিক আছে” বলে।

ঐশী বাসা থেকে বের হয়ে,মেইন রোডে যেয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করে রিকশা পেতেই রিকশায় চড়ে বসে,
রোজা আজ একটু লেট করে যাবে তাই ঐশী একাই যাচ্ছে।

ঐশী ভার্সিটির পুকুরের দিকটায় চলে আসে সেখানে রাখা চেয়ারটায় বসে পড়ে,টেবিলের উপর ব্যাগ রেখে কলম খাতা বের করে ম্যাথ করতে বসে যায়।
ক্লাস শুরু হতে এখনো সময় আছে তাই ঐশী এদিকটায় এসে বসেছে।

বেশ কিছুক্ষণ পর ঐশী যখন মনোযোগ দিয়ে ম্যাথ করছিলো তখন কে যেন এসে পেছন থেকে ঐশীর চোখ ধরে,ঐশী সে ব্যাক্তির হাতের উপর হাত রাখতেই বুঝতে পারে এটা আহাদ ছাড়া আর কেউ না,
ঐশী মুচকি হেসে বলে,
আমি জানি এটা আপনি আহাদ।

আহাদ মুচকি হেসে ঐশীর চোখ থেকে হাত সরিয়ে ওর পাশে বসে,ঐশী মুচকি হেসে আহাদের দিকে তাকায়,
টেবিলের উপর চোখ পড়তেই ঐশী অবাক হয়ে যায়।

#চলবে

#আমার_তোমাকে_প্রয়োজন💖
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_9

কপি নিষিদ্ধ ❌

টেবিলের উপর চোখ পড়তেই ঐশী অবাক হয়ে যায়।
লম্বা টেবিলটার পুরোটা জুড়ে রেপিং করা ডালা রাখা হয়েছে,এত বড় ডালা দেখে ঐশী অবাক হয়ে যায়।

ওকে আরো অবাক করে দিয়ে আহাদ ওর দিকে বড় গোলাপের তোড়া বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“Happy Birthday My love”.

ঐশী অবাক হয়ে যায় আজ ওর বার্থডে তা ওর মনেই নেই,ঐশী অবাক হয়ে বলে,
আপনার মনে ছিলো?

কি করে ভুলি বলো,মহারানী ফুলগুলো গ্রহণ করুন।

ঐশী মুচকি হেসে আহাদের হাত থেকে ফুলের তোড়াটা নিয়ে নেয়।

আচ্ছা এই ডালাতে কি আছে?

নিজেই দেখে নাও।

আহাদের কথা মতো ঐশী পাশের চেয়ারে তোড়াটা রেখে রেপিং খুলতে শুরু করে।

ওয়েট আমিও হেল্প করছি।

আহাদ ঐশী দুজনে মিলে ডালাটার রেপিং খুলছে,
রেপিং খোলা মাএই ঐশী আরো চমকে উঠে।
ডালাতে রয়েছে অনেক গুলো শাড়ী।

এত্তো শাড়ী!

কই এত্তো এখানে তো মাএ ২২টি শাড়ী আছে।

২২ টি!

ঐশীর নাকে টোকা দিয়ে বলে,
হ্যাঁ ২২ টি কারণ আজ আমার জান ২২ বছরে পা দিয়েছে।
এতেই চমকে যাচ্ছো তোমার জন্য আরোও সারপ্রাইজ আছে।

আরো সারপ্রাইজ!

জ্বী মহারানী।

আহাদ কল করে ওর গার্ডদের আসতে বলে।
সাথে সাথেই দুটো গার্ড দুটো ডালা নিয়ে হাজির হয়।
ওদের হাতে ডালা দেখে ঐশী আহাদকে জিগ্যেস করে,
এই ডালা গুলোতে কি আছে?

একটি ডালাতে সব শাড়ীর সাথে ম্যাচ করে ২ মুঠ করে মোট ৪৪ মুঠ কাঁচের চুড়ি আছে আর ওপর ডালাতে সব শাড়ীর সাথে ম্যাচ করে মোট ২২ জোড়া ঝুমকা রয়েছে।

এতো কিছুর কি কোনো প্রয়োজন ছিল?

না ছিল না কিন্তু আমি আমার জানকে ভালোবেসে উপহার দিয়েছি,আমি জানতাম আমার মহারানীর “কাঁচের চুড়ি,ঝুমকো আর শাড়ী” ভিষণ পছন্দ,তাই আমার জানকে সামান্য খুশি করার জন্য এইটুকু করলাম,প্রতিটা শাড়ী,প্রতিটা চুড়ি,প্রতিটা ঝুমকো আমি নিজে পছন্দ করে কিনেছি তোমার জন্য বেস্ট টা আনার চেষ্টা করেছি,খুব যত্ন করে নিজ হাতে ডালা গুলো সাজিয়েছি,এসবের সাথে আমার ভালোবাসা জড়িয়ে আছে তোমার ঠোঁটে সামান্য হাসি ফোটানোর জন্যই এত আয়োজন।

আপনি না পাগল।

হুম তোমার প্রেমে পাগল।

ধ্যাত।

জান আজ তোমার থেকে একটা জিনিস চাইবো,
দিবে কি?

আহাদের কথায় ঐশীর ভ্রু কুচকে আসে।

আহা ভয় পাবার কিছু নেই আমাকে ভালোবাসতে বলবো না,শুধু আজকের এই দিনটায় আমি তোমার হতে চাই,এখন থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমি তোমার সাথে থাকতে চাই,তোমার সাথে কিছু সুন্দর মুহূর্ত কাটাতে চাই।
আহাদ ঐশীর সামনে হাত বাড়িয়ে বলে,
বলো আমার এই আবদারটা রাখবে কি?

ঐশী মুচকি হেসে আহাদের হাতের উপর হাত রাখে,
হ্যাঁ রাখবো,আজকের এই দিনটা আমি আপনার নামে করে দিলাম।

ঐশীর কথায় আহাদ খুশি হয়ে যায় ওর হাতে চুমু দিয়ে বলে,”চলো।”

কোথায় যাবো?

প্রথমে শপিংমলে যাবো সেখানে তুমি একটা শাড়ী পড়ে আমার সাথে ব্রেকফাস্ট করতে যাবে,ব্রেকফাস্ট শেষ করে আমরা ঘুরতে বের হবো,তারপর দুপুরের লাঞ্চ করে আবার ঘুরতে বের হবে শেষে ডিনার করে তোমাকে বাসায় দিয়ে আসবো,এটাই আজকের সিডিউল।

আচ্ছা,কিন্তু এতো গুলো শাড়ীর মধ্যে কোন শাড়ীটা পড়বো?

আমি সিলেক্ট করে দেই?

হুম অবশ্যই।

আহাদ সব শাড়ীতে একবার চোখ বুলিয়ে লাল খয়েরী রঙের কম্বিনেশনের স্টোনের শাড়ীটা হাতে তুলে নেয়।
এটা কেমন?

ভিষণ সু্ন্দর।

ওকে,আমি চুড়ি আর ইয়ারিংটা সিলেক্ট করে দিচ্ছি।

আহাদ শাড়ী,চুড়ি,ইয়ারিং সিলেক্ট করে একটা পেকেট ভরে নেয়।
চলো তবে।

চলুন।

ওরা গাড়িতে উঠে বসে,আহাদ ড্রাইভিং সিটে বসেছে আর ঐশী ওর পাশের সিটে বসেছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর ওরা শপিংমলের সামনে চলে আসে,
আহাদ গাড়ি পার্ক করে গাড়ি থেকে বের হয়,ঐশী আগেই নেমে গিয়েছিলো,আহাদ গাড়ি থেকে বের হতেই আহাদের সাথে শপিংমলের ভেতরে প্রবেশ করে।
ঐশী চেঞ্জিং রুমে ড্রেস চেঞ্জ করে রেডি হয়ে বের হয়।

আহাদ বসে ফোন স্ক্রল করছিলো আর ঐশীর জন্য ওয়েট করছিলো ঐশীকে দেখামাত্রই বুকে হাত রেখে বলে,
হায় একদম হুরপরী লাগছে।

তাই নাকি।

জ্বি তাই,আমার ভাবনার থেকেও আরো বেশি সুন্দর লাগছে।
আহাদের কথায় ঐশী মুচকি হাসে।

আহাদ ঐশীর দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়,ঐশী আহাদের হাতের উপর হাত রাখে,আহাদ ঐশীর হাত মুঠোবন্দী করে সামনের দিকে হাঁটা শুরু করে।

ওরা দুজন রেস্টুরেন্টে বসে আছে,আহাদ খাবার অর্ডার দেয়,কিছুক্ষণ পর খাবার চলে আসে,ওরা খাওয়া শুরু করে,খাওয়ার মাঝে ঐশী আহাদকে প্রশ্ন করে,
আচ্ছা আপনি স্যারের সাথে থাকেন না কেন?

প্রয়োজন মনে করি না।

মানে?

তেমন কিছু না এমনি আমরা আলাদা থাকি।

আহাদের কথায় ঐশীর খটকা লাগেও পাল্টা প্রশ্ন করে না কেবলমাত্র “ওহ” বলে।

ওদের খাওয়ার মাঝে ঐশীর ফোন বেজে উঠে,ঐশী ফোন হাতে নিয়ে দেখে রোজা কল করেছে,
ও কল রিসিভ করে ,
হ্যাঁ বল।

Happy Birthday.

থ্যাঙ্ক ইউ।

সরি দোস্ত আমাকে হঠাৎই গ্রামে যেতে হয়েছে তাই তোর সাথে দেখা করতে পারলাম না,সরি।

সরি বলতে হবে না,তুই সাবধানে আসিস।

আচ্ছা,আমি এসে নেই তারপর একসাথে তোর বার্থডে সেলিব্রেট করবো।

আচ্ছা।

রাখি তবে।

আচ্ছা।

রোজা কল কেটে দেয়।

রোজা কল করেছে?

হ্যাঁ বার্থডে উইশ করলো,ও গ্রামে গিয়েছে তাই আমার সাথে দেখা করতে পারেনি।

ওহ।

ওরা ব্রেকফাস্ট করে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়,
আহাদ ঐশীকে নিয়ে কয়েকটা জায়গা থেকে ঘুরে আসে,দুপুরে রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করে।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে,
আহাদ ঐশী নদীর কিনারায় বসে আছে,
দুজন পানিতে পা ভিজিয়ে রেখেছে।

জান।

হুম।

তোমার জন্য একটা ছোট সারপ্রাইজ আছে।

আবার সারপ্রাইজ!

হ্যাঁ জান।

আহাদ গার্ডকে কল দিয়ে আসতে বলে।
কিছুক্ষণ পর নদীতে একটা লঞ্চ এসে ভিড়ে।
লঞ্চটা অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।
ঐশী চমকে আহাদের দিকে তাকায়,আহাদ মুচকি হেসে ঐশীর হাত ধরে লঞ্চে উঠে।

ঐশীকে উপরের তলায় নিয়ে আসে,এখানে আসতেই ঐশী আরো চমকে যায়,এ দিকটা আরো সুন্দর করে সাজানো হয়েছে,সামনেই টেবিলে উপর কেক আর সফ ড্রিকং সাজিয়ে রাখা আছে।

ঐশী খুশি হয়ে বলে,
এতো কিছু আমার জন্য?

আহাদ ঐশীর মাথায় চুমু দিয়ে বলে,
হ্যাঁ জান তোমার জন্য,চলো কেক কাটি।

আহাদ ঐশীকে নিয়ে টেবিলটার সামনে আসে ঐশীর হাতে না’ইফ ধরিয়ে নিজেও ঐশীর হাতের উপর হাত রাখে।

জান ফু দাও।

দুজন একসাথে দেই।

ওরা একসাথে ফু দিয়ে ক্যান্ডেল গুলো নিভিয়ে দিয়ে কেক কাটে,দুজন দুজনকে কেক খাইয়ে দেয়।

লঞ্চ করে নদীর অন্য পাশে চলে আসে,এ পাশে আসতে অনেকক্ষণ সময় লাগে,লঞ্চ আবারও ঘোরানো হয় পাড়ে ফেরার জন্য।

ঐশী আহাদ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে,বাতাসে ঐশীর চুল আর শাড়ীর আঁচল উড়ছে,আহাদ বাতাসের সাথে ঐশীর চুল আর আঁচলের খেলা দেখছে।
ঐশী সামনে থেকে চোখ সরিয়ে আহাদের দিকে তাকাতেই আহাদ বলে,
জান একটা গান গেয়ে শুনাও।

গান!

হুম,প্রথমে তোমার নামের প্রেমে পড়ি তারপর রুপের প্রেমে আর শেষে তোমার গানের প্রেমে পড়ি।
সেই একবারই তোমার গান শুনলাম আর তো শুনতে পেলাম না,জান আজ একটা গান গাইবে,প্লিজ।

কেন নয় যে আমার জন্য এতো কিছু করলো তার জন্য আমি এই টুকু করতে পারবো না।

ঐশীর কথায় আহাদ খুশী হয়ে যায়।

ঐশী গ্রিলের উপর হাত রেখে,গাল হাত দিয়ে আহাদের দিকে তাকিয়ে বলে,
“হতে পারে রুপকথার এক দেশের,

রাতের আকাশের এক ফালি চাঁদ,

তোমার আমার চিরকাল।

তুমি আমি হাতে রেখে হাত,

ছুঁয়ে দিয়ে আঙুলে আঙুল,

দেখতে পারো,

কিছু আদুরে সকাল।

হতে পারে এ পথের শুরু,

নিয়ে যাবে আমাদের অজানায়।

তুমি আমি আমাদের পৃথিবী,

সাজিয়ে নিবো ভালোবাসায়।

ভালোবাসি বলে দাও আমায়,

বলে দাও হ্যাঁ সব কবুল।

তুমি শুধু আমারই হবে,

যদি করো মিষ্টি এই ভুল।

হাতে হাত রাখতে পারো,

সন্ধি আঙুলে আঙুল।

ভালোবাসা বাড়াতে আরও,

হৃদয় ভীষণ ব্যাকুল।

প্রতিদিন কি জানি কি হয়ে যায়

শুধু তোমার কল্পনায়

ডুবে থাকা, আমায় ভালোলাগায়,

ভালোলাগার স্বপ্ন বোনায়।

কখনো হারাবে না তুমি

চোখে চোখ রেখে কথা দাও।

থাকবে কাছে ছায়ার মত,

ছেড়ে যাবেনা কোথাও।

হতে পারে তোমার একটু চাওয়ায়,

এনে দেবো শুকতারা কুড়িয়ে।

স্বপ্ন আঁকবো চন্দ্র দিয়ে,

পূর্ণিমাতে তোমায় বুকে জড়িয়ে।

ভালোবাসি বলে দাও আমায়,

বলে দাও হ্যাঁ সব কবুল।

তুমি শুধু আমারই হবে,

যদি করো মিষ্টি এই ভুল।

হাতে হাত রাখতে পারো,

সন্ধি আঙুলে আঙুল।

ভালোবাসা বাড়াতে আরও,

হৃদয় ভীষণ ব্যাকুল।”

ওরা নদীর পাড়ের কিছুটা কাছাকাছি চলে এসেছে,
গান শেষ হতেই আহাদ ঐশীর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে হাতের রিং বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“Jan,Will you marry me?”

ঐশী মুচকি হেসে আহাদের থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকায়,সামনে তাকাতেই ঐশীর চেহারায় আ’ত’ঙ্ক দেখা দেয়,আহাদ ওর চেহারায় আ’ত’ঙ্ক দেখে দাঁড়িয়ে যায় ও কিছু বলবে তার পূর্বেই ঐশী আহাদকে ধাক্কা দিয়ে আহাদকে নিয়ে মেঝেতে পড়ে যায়,ওরা পড়তেই একটা গু’লি এসে লঞ্চের লোহার সাথে লেগে বি’ক’ট শব্দ হয়।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে