#আমার_তোমাকে_প্রয়োজন💖
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_43
#অন্তিম_পর্ব
কপি নিষিদ্ধ ❌
ঐশী রোজা বসে আছে ডক্টর শাহনাজের কেবিনে।
ডক্টর শাহনাজ ঐশীর কথা শুনে বলেন,
আমি আপনাকে কিছু টেস্ট করতে দিবো সেগুলো করে আনবেন আর হ্যাঁ প্রেগনেন্সি টেস্টও করতে হবে।
প্রেগনেন্সি টেস্ট!
জ্বি আপনার কথা শুনে তো তাই মনে হচ্ছে তবুও আমি টেস্ট করিয়ে সিউর হতে চাই,আপনি প্রেগনেন্ট নাও হতে পারেন কিন্তু টেস্ট করাতে তো আর সমস্যা নেই।
ডক্টরের কথা মতো ঐশী সব টেস্ট করে,ডক্টর বলেছে আগামীকাল ওর বাসায় রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
ঐশী রোজা হসপিটাল থেকে বাসায় চলে আসে।
রাতে আহাদ বাসায় এসে দেখে ঐশী বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে,আহাদ ওর কাছে যেয়ে ওর কাঁধে হাত রাখতেই ও কেঁপে ওঠে।
কি হলো জান,ভয় পেয়েছো?
আব না তেমন কিছু না।
চলো রুমে চলো।
আহাদ ফ্রেশ হয়ে আসে,ঐশীকে ভাবনায় মশগুল থাকতে দেখে বলে,
কি হয়েছে জান সেই তখন থেকে দেখছি তুমি যেন কি ভাবছো,কি এতো ভাবছো তুমি?
নাহ কিছু না।
ডক্টর দেখিয়ে ছিলে?
হুম,আগামীকাল রিপোর্ট দিবে।
ওহ।
খাবার কি রুমে নিয়ে আসবো?
হ্যাঁ একটু কষ্ট করে খাবারটা রুমে নিয়ে আসো নিচে যেতে ইচ্ছে করছে না।
আচ্ছা নিয়ে আসছি।
ঐশী নিচে যেয়ে আহাদের জন্য খাবার নিয়ে আসে।
জান খাইয়ে দাও না।
আহাদের আবদার ঐশী ফেলতে পারে না।
–
আহাদের বুকে মাথা রেখে চুপটি করে শুয়ে আছে ঐশী,
আহাদের শরীর ক্লান্ত থাকায় আহাদ শোয়া মাএই ঘুমিয়ে পড়ে,আহাদ ঘুমিয়ে পড়লেও ঘুম নেই ঐশীর চোখে,কিছু ব্যাপার নিয়ে ঐশী খুব চিন্তিত।
চিন্তার মাঝেই কেটে যায় রাত।
সকাল হতেই ঐশীর টেনশন আরো বেড়ে যায়।
আহাদ সকাল ৭ টার দিকে অফিসে চলে গেছে।
এখন বাজে ১২ টা,ঐশী সারা রুমে পায়চারী করছে টেনশনে ওর হাত পা কাঁপছে।
ডক্টর শাহনাজ বলেছিলেন ও সাড়ে বারোটার মধ্যে রিপোর্ট হাতে পাবে,ঐশীর আর তড় সইছে নাহ ও বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর রোজা ঐশীর রুমে আসে,ঐশী তখনও সারা রুমে পায়চারী করছিলো,ওকে এভাবে পায়চারী করতে দেখে রোজা ওর হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে দেয়।
কি হয়েছে তোর এভাবে পায়চারী করছিস কেন?
আমার খুব টেনশন হচ্ছে আল্লাহই জানে রিপোর্ট কি থাকবে,টেনশনে আমার মাথা কাজ করছে না।
আল্লাহ ভরসা সব কিছু ঠিক থাকবে আল্লাহ আমাদের নিরাশ করবেন না তুই এতো টেনশন করিস না।
ওদের কথার মাঝে কেউ এসে কলিংবেলে চাপ দেয়,
ঐশী কলিংবেলের আওয়াজ শুনতেই দ্রুত পায়ে নিচে চলে আসে।
দরজা খুলতেই লোকটা বলে,
আপনি কি ঐশী ইসলাম?
জ্বি।
আপনি এখানে একটা সাইন করে দিন।
লোকটার কথা মতো ঐশী চার্টটায় সাইন করে দেয়।
লোকটা ওর হাতে একটা খাম দিয়ে চলে যায়,
ঐশী দরজা লাগিয়ে খামটা খুলে।
ইতোমধ্যে রোজাও নিচে চলে এসেছে।
রিপোর্টের লেখা পড়ে ঐশী স্তব্ধ হয়ে যায়,ওর শরীর কাপছে মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না।
ঐশী কাঁপা কাঁপা গলায় রোজাকে বলে,
রোজা দেখতো এখানে কি লেখা আছে?
রোজা ঐশীর হাত থেকে রিপোর্টটা নিয়ে লেখাটা পড়া মাএই ঐশীকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলে,
ইয়াহু আমি খালামনি হবো,ইয়াহু ইয়াহু দোস্ত তুই মা হতে চলেছিস।
রোজার কথা ঐশীর কানে যেতেই ঐশী কেঁদে দেয়,
উহুম এটা দুঃখের নয় সুখের কান্না,কোনো অমূল্য জিনিস পাওয়ার সুখ।
কাঁদিস না বোন আমার।
আমি যে কতোটা খুশি তা তোকে বলে বোঝাতে পারবো না।
আমিও খুব খুশি হয়েছি,এক কাজ করি সিয়ামকে আর ভাইয়াকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দেই।
এই না না।
কেন?
আমি ওনাকে অন্য ভাবে জানাতে চাই,এতো বড় খুশির খবর কি আর ফোনে বলে শান্তি পাবো।
–
আহাদ আজ ৮ টায় বাসায় চলে আসে,ক্লান্ত শরীর নিয়ে রুমে চলে আসে কিন্তু ঐশীকে কোথাও দেখতে পায় না,আহাদ বারান্দায় যেয়ে দেখে ঐশী কালো শাড়ী পড়ে রকিং চেয়ারে চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে বসে আছে,ওর চুল আর শাড়ীর আঁচল বাতাসে উড়ছে।
আহাদ ঐশীর সামনে যেয়ে দাড়াতেই ঐশী চোখ মেলে তাকায়,আহাদ ঐশীর কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে,
আমার জানকে আজ কালো শাড়ীতে খুব সুন্দর লাগছে।
ঐশী আহাদের কথায় মুচকি হাসে।
জান তোমার না আজ রিপোর্ট হাতে পাওয়ার কথা ছিলো,পেয়েছো?
ঐশী মাথা নাড়ায়।
কি আছে রিপোর্টে?
ঐশী কিছু না বলে আঁচলের নিচ থেকে একটা ছোট বক্স বের করে আহাদের সামনে তুলে ধরে।
কি আছে এতে?
নিজেই দেখুন।
আহাদ বক্সটা খুলে দেখে বক্সে ছোট বাচ্চাদের এক জোড়া জুতো আছে।
জান আমাকে ছোট বাচ্চাদের জুতো কেন দি..
আহাদ সম্পূর্ণ কথাটা শেষ করতে পারে না অবাক হয়ে চোখ বড় করে ঐশীর দিকে তাকায়।
ঐশী আহাদের রিয়েকশন দেখে মুচকি হাসে।
আহাদের গলা কাঁপছে কিভাবে কি বলবে বুঝতে পারছে না তবুও আহাদ নিজেকে সামলে বহুকষ্টে বলে,
জান তার মানে।
ঐশী চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় আহাদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কানে ফিসফিস করে বলে,
“হ্যাঁ আপনি বাবা হতে চলেছেন,আমাদের ভালোবাসার অংশ আমাদের সন্তান আসতে চলেছে।”
কথাটা শুনো মাএই আহাদ ঐশীকে কোলে তুলে ঘুরতে শুরু করে আর চিৎকার করে বলে,
আমি বাবা হবো,ইয়াহু আমি বাবা হবো।
এই এই নামান আমার মাথা ঘুড়ছে।
ওহ সরি সরি।
আহাদ ঐশীকে কোল থেকে নামিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দেয়,ঐশীর পেটে হাত রেখে বলে,
এখানে আমাদের বেবি আছে তাই না?
ঐশী আহাদের কথায় মুচকি হেসে মাথা নাড়ায়।
আহাদ ঐশীর পেটে চুমু দিয়ে হাসিমুখে বলে,
বাবা তুমি খুব তাড়াতাড়ি চলে আসো,আমাদের বেশি অপেক্ষা করিও না,আর হ্যাঁ মাকে বেশি কষ্ট দিও না।
আহাদ ঐশীর দিকে তাকাতেই দেখতে পায় ঐশী আহাদের দিকে মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,
ওর চোখ অশ্রুতে টলমল করছে।
আহাদ ঐশীর গালে হাত রেখে মিষ্টি স্বরে বলে,
এই জান কাঁদছো কেন?
ঐশী আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না আহাদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে উঠে,আহাদ ওর জানকে আগলে রাখে।
আহাদ আজ আমি ভিষণ খুশি,আমি মা হতে চলছি আমার গর্ভে ছোট একজন ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে।
জান আমিও আজ ভিষণ খুশি,থ্যাঙ্ক ইউ জান থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ।
–
দোলনায় ঐশীকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে আহাদ।
আহাদ ঐশীর চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,আর ঐশী চুপটি করে আহাদের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে,আহাদ ঐশীর মাথায় চুমু দিয়ে বলে,
জান মনে আছে সেদিন তুমি আমায় বলেছিলে না কেন আমি এসব খু’ন খা’রা’বি ছাড়িনা বা কেন ছাড়তে পারি না।
আহাদের কথার উত্তরে ঐশী মাথা নাড়ায়।
জান আমি জানি তোমার এসব খু’ন খা’রা’বি পছন্দ না তুমি এসব স’হ্য করতে পারো না।
আজ তোমাকে আমি কথা দিচ্ছি জান আমি এসব ছেড়ে দিবো,এ হাত দিয়ে আমি আর কাউকে মা’র’বো না,এই হাতে আর কারো শরীরের র’ক্ত ঝড়বে না এ হাত আর কখনো কারো র’ক্তে রঙিন হবে না,আমি এসব ছেড়ে দিবো,আমি আর মা’ফি’য়া পরিচয় নিয়ে বাঁচতে চাই না।
আহাদ ঐশীর পেটে হাত রেখে বলে,
আমি আমার অনাগত সন্তানের জন্য সব কিছু ছেড়ে দিবো,আর খু’ন খা’রা’বি করবো না আমি চাই না কেউ আমার আগে পিছে আমার সন্তানকে মা’ফি’য়ার সন্তান বলুক,আমি এসব ছেড়ে দিয়ে সবাইকে নিয়ে কানাডায় চলে যাবো হ্যাঁ কালই কানাডায় চলে যাবো সেখানেই
সেটেল্ড হয়ে যাবো,আমি চাইনা আমার সন্তান এই অ’সু’স্থ পরিবেশে বেড়ে উঠুক ওকে আমি একটা সুস্থ সুন্দর জীবন দিতে চাই,ওকে খুব ভালোবাসা দিতে চাই পৃথিবীর সমস্ত সুখ ওর পায়ের কাছে এনে ফেলতে চাই,
ওকে আমি খুব ভালোবাসবো খুব ভালোবাসবো।
ঐশী চুপটি করে আহাদের কথা গুলো শুনছে আহাদের কথা গুলো শুনে ওর খুব শান্তি লাগছে।
জান তোমাকে কি বলে ধন্যবাদ জানাবো বুঝতে পারছি না,আমি যে আজ কতোটা খুশি হয়েছি তা তোমায় বলে বুঝাতে পারবো না,আমাদের ভালোবাসার অংশ আসতে চলেছে জান,আমাদের সন্তান আসতে চলেছে।
হ্যাঁ আহাদ।
তোমাকে খুব ভালোবাসি জান,তুমি আমার জীবনে আসার পর থেকে আমার জীবনের সমস্ত দুঃখ কষ্ট ঘুচে গিয়েছে,তুমি আমার জীবনে সুখের জোয়ার হয়ে এসেছো,তোমাকে আমি কথা দিচ্ছি আজ থেকে তোমার কোনো অযত্ন আমি হতে দিবো না,তোমার উপর কোনো আচঁ’ড় পড়তে দিবো না,দুঃখের ছায়া তোমার উপর পড়তে দিবো না,বিপদকে তোমার কাছে ভিড়তে দিবো না,জান আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।
আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি।
জান জীবনে সুখে থাকার জন্য #আমার_তোমাকে_প্রয়োজন,বেঁচে থাকার জন্য #আমার_তোমাকে_প্রয়োজন,শেষ নিশ্বাস নেওয়ার জন্য #আমার_তোমাকে_প্রয়োজন,এক সাথে বাকিটা পথ চলার জন্য #আমার_তোমাকে_প্রয়োজন,জান
জীবনের প্রতিটা ক্ষণে #আমার_তোমাকে_প্রয়োজন,
থাকবে কি আমার সাথে,ভালোবাসবে কি আমাকে?
হ্যাঁ ভালোবাসবো,হ্যাঁ আপনার সাথে হাজার পথ চলবো
আপনাকে ছাড়া কি করে থাকবো বলুন কারণ সুখের দিনে #আমার_আপনাকে_প্রয়োজন,দুঃখের দিনে #আমার_আপনাকে_প্রয়োজন,কাঁধে মাথা রেখে কাঁদার জন্য #আমার_আপনাকে_প্রয়োজন,আমাদের অনাগত সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলার জন্য #আমার_আপনাকে_প্রয়োজন,শেষ নিশ্বাস অব্দি বেঁচে থাকার জন্য #আমার_আপনাকে_প্রয়োজন।
ভালোবাসি আহাদ,আপনাকে ভিষণ ভালোবাসি।
আমিও আমার জানকে ভিষণ ভালোবাসি।
#সমাপ্ত।