#আমার_তোমাকে_প্রয়োজন💖
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_42
কপি নিষিদ্ধ ❌
দেখতে দেখতে কেটে গেছে অনেক দিন।
ঐশী এখন সম্পূর্ণ সুস্থ,আহাদের যত্নে ঐশী এতো দ্রুত সুস্থ হতে পেরেছে,আহাদ যত্ন নিবে আর ঐশী সুস্থ হবে না তা কি হয়।
ঐশী বারান্দায় দাঁড়িয়ে দূর আকাশের চাঁদ দেখছে।
আহাদ ঐশীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঐশীর চুলে মুখ ডুবিয়ে বলে,
আমার জানটা এখানে দাঁড়িয়ে কি করছে?
চাঁদ দেখছি।
তুমিই তো একটা চাঁদ,চাঁদ দেখার জন্য বারান্দায় আসা লাগে না কি আয়নার সামনে দাঁড়াবে আর আয়নাতে সুন্দর একটা চাঁদ দেখতে পাবে,আমার ব্যাক্তিগত চাঁদ।
আহাদের কথায় ঐশী ফিক করে হেসে ফেলে।
এই হাসছো কেন?
ফ্লার্ট করছেন?
করলে ক্ষ’তি কি?
মানুষ তো পটানোর জন্য ফ্লার্ট করে,আমি তো সে কবে থেকেই পটে আছি।
আমার বউয়ের সাথে আমি ফ্লার্ট করছি এতে তোমার কি?
নাহ আমার কিছু না।
কিছুটা সময় আহাদ ঐশীকে ঐভাবেই জড়িয়ে ধরে রাখে,আহাদ ঐশীকে ছেড়ে দিয়ে বলে,
জান আমার না খুব ঝাল কিছু খেতে ইচ্ছে করছে।
এত রাতে!
হ্যাঁ জান কিছু রান্না করে দাও না।
আচ্ছা বলুন কি খাবেন।
ঝাল করে নুডলস রান্না করো।
আচ্ছা।
ওহ না থাক বেশি ঝাল দিলে তো তুমি খেতে পারবে না।
কে বলেছে আমি ঝাল খেতে পারবো না।
ঝাল খেতে পারো বাট আমার থেকে তো বেশি ঝাল খেতে পারো না।
আমি আপনার থেকেও বেশি ঝাল খেতে পারি।
বললেই হলো না কি তুমি মোটেও আমার থেকে বেশি ঝাল খেতে পারো না।
তাই না কি,চ্যালেন্জ করছেন?
হুম করছি।
ওকে চ্যালেন্জ এক্সেপ্ট করলাম,কিন্তু আপনি হারলে আমাকে কি দিবেন?
তুমি যা চাইবে তাই দিবো কিন্তু তুমি হারলে আমাকে কি দিবে?
আপনি যা চাইবেন তাই দিবো।
আহাদ ঐশীর কানে ফিসফিস করে কিছু একটা বলে।
কি জান দিবে তো?
আগে জিতুন তারপর দেখা যাবে।
এটা বললে তো মানবো না,দিবে না কি দিবে না?
আচ্ছা ঠিক আছে দিবো।
তো চলো রান্নাঘরে।
চলুন।
ওরা রান্না ঘরে চলে যায়,কেবিনেট থেকে নুডলস বের করে,ফ্রিজ থেকে মরিচ,ধনেপাতা,মাংস,সবজি বের করে।
টেবিলের উপর একে একে নুডলস,পেঁয়াজ,মরিচ, সবজি,মাংস,টমেটো সস,চিলি সস,গার্লিক সস,মরিচ গুড়ো,আরো সব মসলা আর তেল রাখে।
ঐশী একে একে মরিচ,পেয়াজ,ধনেপাতা আর বাকি সবজি গুলো কুঁচি কুঁচি করে কা’টছে।
আহাদ নুডলস সিদ্ধ করার জন্য চুলায় একটি পাএে গরম পানি করতে দিয়েছে।
পানি গরম হয়ে গেলে পানিতে কিছুটা তেল দিয়ে তাতে নুডলস গুলো দিয়ে দেয়।
নুডলস সিদ্ধ হতেই আহাদ নুডলস ছাকনীর সাহায্যে ছেঁকে নেয়।
কাটাকুটি শেষে ঐশী রান্না করতে শুরু করে।
আহাদ ঐশীকে সাহায্য করছে কম জ্বা’লাচ্ছে বেশি।
ওদের খুনসুটির মাঝে রান্না শেষ হয়।
ঐশী দু’টি বাটিতে নুডলস ঢেলে ট্রের উপরে রাখে।
আহাদ ট্রেটা হাতে তুলে নেয়,আহাদ ট্রে নিয়ে আগে আগে হাঁটছে আর ঐশী ওর পিছে পিছে।
ওরা রুমে এসে খাটের ওপর বসে পড়ে।
দুজনের সামনে দু’টি বাটি রাখা আছে।
শুনো জান এই গেমে কিছু রুলস আছে।
কি রুলস?
এমনিতে এখানে মাএাতিরিক্ত ঝাল দেওয়া আছে তবুও আমরা আরো একবার চিলি সস এড করবো।
আর শর্ত হচ্ছে ঝাল লাগলেও পানি পান করা যাবে না।
কিহ পানি পান করা যাবে না!
ইয়েস জান রুলস রুলসই তুমি যদি না চাও তাহলে এখনই বলতে পারো।
আচ্ছা আমি শর্তে রাজি ঝাল লাগলেও পানি পান করবো না।
গুড যে শেষ পর্যন্ত সবটুকু নুডলস শেষ করতে পারবে সেই জিতবে,তো শুরু করি?
অবশ্যই।
আহাদ ৩ চামচ চিলি সস ওর আর ঐশী নুডলসে মেশায়।
ওরা দুজন হাতে নুডলসের বাটি নিয়ে বসে আছে।
জান প্রথমে তুমি শুরু করো তারপর আমি শুরু করছি।
ঐশী নুডলসের দিকে একবার তাকিয়ে ঢোগ গিলে, নুডলসটা যে মা’রা’ত্ম’ক ঝাল হয়েছে তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
ঐশী চামচে করে নুডলস তুলে মুখে পুরে নেয়,ঐশীকে খেতে দেখে আহাদও খেতে শুরু করে।
তিন চামচ নুডলস খেয়েই ঐশীর ভীষণ ঝাল লাগে ঝালে ঐশীর কান দিয়ে ধুয়া বের হচ্ছে,তবুও ও হার না মেনে খেয়ে যাচ্ছে।
আহাদ প্রচুর ঝাল খেতে পারে তাই ওর ওতো টাও ঝাল লাগছে না।
৩ ভাগের ১ ভাগ নুডলস খেয়েই ঐশীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়,ঐশীর চেহারা লাল হয়ে গেছে,চোখ থেকে পানি পড়ছে।
জান পানি খাও।
খাবো না,পানি খেলে আমি হেরে যাবো।
আহহা এখানে হার জিতের কি আছে,জান তোমার ঝালে অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে,চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়েছে চোখ থেকে পানি পড়ছে,প্লিজ পানিটা খেয়ে নাও।
খাবো না।
ঐশী আবারও নুডলস খেতে শুরু করে কিন্তু এবার আর ঐশী নিজের জেদ ধরে রাখতে পারলো না,পানি খেয়ে ফেললো,পানি খাওয়াতেও ঐশীর ঝাল কমছে না,ঐশীর নিজেকে পা’গ’ল পা’গ’ল লাগছে,ঐশী ঝালে কাঁদছে।
আহাদ দ্রুত নিচে যেয়ে ফ্রিজ থেকে মধু নিয়ে এসে
ঐশীকে খাইয়ে দেয়,ঐশী পানি খাচ্ছে আর মধু খাচ্ছে।
বেচারির ঝালে অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর ঐশী স্বাভাবিক হয় এখন আর ঝাল লাগছে না।
জান ঠিক আছো?
হুম।
বলেছিলাম না তুমি ঝাল খেতে পারবে না তবুও কেন জেদ করে খেলে।
ওহ নো।
কি হলো?
ঐশী কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে,
আমি হেরে গিয়েছি।
আহাদ দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে,
হেরে যখন গিয়েছো তো আমি যা চাই তা দাও।
ঐশী ঠোঁট ফুলিয়ে আহাদের দিকে তাকায়।
হাহা জান আমার পৌষ মাস আর তোমার স’র্ব’না’শ।
_
বেশ কিছু দিন যাবৎ ঐশী অসুস্থ,না তো ও ঠিক মতো খেতে পারছে না তো ঠিক মতো ঘুমাতে পারছে,প্রায়ই ওর মাথা ঘুরে উঠে ও কোনো রকমে নিজেকে সামলে নেয়,ওর পেটে কিছু থাকে না খেলেই বমি করে ফেলে,
খাবারের ঘ্রাণও স’হ্য করতে পারে না,কিচ্ছুটি মুখে দিতে পারে না।
আহাদ রুমে এসে দেখে ঐশী কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে আছে,
আহাদ ঐশীর কাছে এসে চুলে আলতো করে হাত বুলায়।
জান এই সময় ঘুমাচ্ছো যে?
ঘুমাচ্ছি না শরীরটা ভালো লাগছে না তাই শুয়ে আছি।
কি হয়েছে জান?
মাথা ঘুড়ছে,ক্লান্ত লাগছে।
কিছু খাওনি।
ঐশী কিছু বললে তার পূর্বেই ওর গা গুলিয়ে আসে ও মুখ চেপে ধরে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়,ঐশীর পিছে পিছে আহাদও আসে,ঐশীকে বমি করতে দেখে আহাদ ওর চোখে মুখের উপর থেকে আলতো করে চুল সরিয়ে পিঠে হাত বুলাচ্ছে,ঐশী আহাদের ডান হাত শক্ত করে চেপে ধরে।
বমি করে ঐশী ক্লান্ত হয়ে গেছে,আহাদ ওর চোখে মুখে পানি দিয়ে কোলে তুলে নিয়ে রুমে চলে আসে।
আহাদ ঐশীকে বিছানায় বসিয়ে ওর সামনে বসে,
ঐশী আহাদের বুকে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে।
আহাদ ঐশীর চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
জান ঠিক আছো?
ঐশী উওরে মাথা নাড়ায়।
ক্লান্ত লাগছে?
হুম।
শরীরে তো জ্বর নেই তবে হঠাৎ বমি হলো কেন?
হঠাৎ না বেশ কিছুদিন যাবৎ বমি করছি,কিছু খেলেই বমি চলে আসে।
তুমি তো আমাকে কিছু বললে না।
স্বাভাবিক বিষয় ভেবে আর বলিনি।
শুধু কি বমি হচ্ছে না কি আরো কোনো সমস্যা হচ্ছে?
হ্যাঁ,শরীর দূর্বল লাগে,মাথা ঘুড়ায়,ভালো মতো ঘুম হয় না,দিনে ৪/৫ বার বমি করি,কিচ্ছু খেতে পারি না
এমন কি খাবারের ঘ্রাণও স’হ্য করতে পারি না,নাকে খাবারের ঘ্রাণ আসতেই গা গুলিয়ে উঠে।
কতদিন ধরে হচ্ছে এসব?
১০/১২ দিন হবে।
আচ্ছা চলো।
কোথায় যাবো?
হসপিটালে,তোমার চেকআপ করাতে হবে।
এখন!
হ্যাঁ।
এখন যাবো না।
কেন?
উঠে দাঁড়ানোর মতো শক্তি নেই আমার মাঝে,আমি এখন যাবো না।
কিন্তু জান চেক আপ করাতে হবে তো।
আচ্ছা ঠিক আছে কাল রোজাকে নিয়ে হসপিটালে যাবো,এখন আমাকে একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরুন, আমার ভালো লাগছে না।
ঐশীর কথা মতো আহাদ ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
হঠাৎ আহাদ চিন্তায় পড়ে যায়।
“আচ্ছা আমি যা ভাবছি তা হবে না তো?”
#চলবে