আমার তোমাকে প্রয়োজন পর্ব-৪০+৪১

0
1168

#আমার_তোমাকে_প্রয়োজন💖
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_40

কপি নিষিদ্ধ ❌

ঐশী দৌড়ে সদর দরজার কাছে এসে দরজা খুলতেই ভয় পেয়ে যায়।

ওর সামনে ছু’ড়ি হাতে দাঁড়িয়ে আছে মিযান,মিযানের পিছনে ওর গার্ডরা দাঁড়িয়ে আছে।

ঐশী কিছু বলবে তার পূর্বেই মিযান ওর হাতের ছু’ড়িটা দিয়ে ঐশীর বাহুতে আঁ’চ’ড় কা’টে।
ঐশী ব্যাথায় “আহ” করে উঠে,ঐশী ওর বাহু চেপে ধরে ঐশীর বাহু থেকে গলগল করে র’ক্ত বের হচ্ছে।

মিযান পুনরায় ঐশীর অপর বাহুতে আঁ’চ’ড় কা’টে,
ঐশী যন্ত্রণায় “আহ” করে উঠে।

মিযান ঐশীর কাছে এসে ঐশীর পেটে ছু’ড়ি ঢুকিয়ে দেয়,ঐশীর পেট থেকে গলগল করে র’ক্ত বের হচ্ছে,
ঐশীর পক্ষে আর দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হলো না ও মেঝেতে পড়ে যায়।

মিযানের লোকেরা ঘরের সমস্ত কিছু ভে’ঙ্গে চু’রমা’র করে দেয়।

মিযান ঐশীর কাছে আসে,ঐশী ব্যাথায় ছটফট করছে।
মিযান ওর হাতের ছু’ড়িটা দিয়ে ঐশীর গালে আলতো করে স্লাইড করতে করতে বলে,
“জানেমান আজ তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে,তোমাকে
দেখে নে’শা ধরে গিয়েছে,তোমাকে ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করছে কিন্তু তুমি তো আমার জন্য সাজনি তুমি তো ঐ আহাদের জন্য সেজেছো।
জানেমান তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। ভেবেছিলাম তোমাকে বিয়ে করে সুখে থাকবো কিন্তু না তা আর হলো না তোমার জন্য আহাদ আমার গায়ে হাত তুলেছে আমাকে থ্রে’ট দিয়েছে কিন্তু আমি কাউকে থ্রে’ট দেই না সোজা কাজ করি।
তোমাকে মা’রতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে চোখের সামনে তোমাকে য’ন্ত্র’ণা’য় ছটফট করতে দেখতে পারছি না কিন্তু কি করবো বলো আমি যা চাই তা হয়তো ছি’নিয়ে নেই নয়তো ধ্বং’স করে ফেলি,তোমাকে যেহেতু আমি আহাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবো না তাই তোমাকে আর বাঁচিয়ে রাখবো না কারণ তুমি আমার নাহলে তোমাকে আমি অন্য কারো হতে দিবো না,
তুমি শুধু আমার শুধুই আমার।”

মিযান ঐশীর হাত ধরে ঐশীকে উঠিয়ে জড়িয়ে ধরে পুনরায় ঐশীর পেটে ছু’ড়ি ঢুকিয়ে দেয়,ঐশী য’ন্ত্র’ণা’য় দাঁত খিঁচে ধরে।
মিযান ঐশীকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ঐশীর দিকে একবার তাকিয়ে ওর লোকদের নিয়ে চলে যায়।

ঐশী ক্লান্ত দৃষ্টিতে মিযানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয়,
ও বুঝে গেছে ও আর বাঁচবে না ওকে এই পৃথিবীর মায়া ত্যা’গ করতে হবে।
ঐশী আর চোখ খুলে রাখতে পারলো না ওর চোখ বন্ধ হয়ে গেল।

আহাদের গাড়ি আহাদ মেনশনে প্রবেশ করে আহাদ গাড়ি থেকে ফুরফুরে মেজাজে বের হয়,হাতে গহনার বক্স এবং ফুলের তোড়া নিয়ে সামনের দিকে হাটা শুরু করে।
আহাদ সদর দরজা কাছে এসে কলিংবেলে চাপ দিতে যেয়েও থেমে ওর মনে হলো দরজা খোলা আছে,ও হাত দিয়ে হালকা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়,আর দরজা খুলতেই ও যা দেখতে পেলে তাতে ওর রুহু কেঁপে উঠল।

ওর জান ওর ভালোবাসার মানুষ র’ক্তা’ক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছে ওর র’ক্তে ওর সাদা শাড়ি এবং সাদা টাইলস লাল বর্ণ ধারণ করেছে।
ঐশীর চারপাশে সব কিছু ভা’ঙ্গা অবস্থায় পড়ে আছে,
এই দৃশ্য দেখে আহাদ থমকে যায় ওর হাত থেকে ফুলের তোড়া এবং গহনার বক্সটা মেঝেতে পড়ে যায়।

আহাদ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না দৌড়ে ঐশীর কাছে এসে ঐশীর মাথাটা ওর কোলের উপর রাখে,আহাদ ঐশীকে পা’গ’লের মতো ডাকছে কিন্তু ঐশীর কোনো সাড়াশব্দ নেই।
একটু পানি পাবার আসায় আহাদ আশেপাশে তাকাচ্ছে
কিন্তু সব যে ভে’ঙে পড়ে আছে,আহাদ ওর কোল থেকে ঐশীর মাথা নামিয়ে দৌড়ে রান্নাঘরে যেয়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে আসে।
আহাদ ঐশীর চোখে মুখে পানি ছিটাচ্ছে,হঠাৎ ঐশী পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়,ও আহাদকে দেখে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
“আহাদ এতো দেরি করে আসলেন কেন,ওরা তো আপনার জানকে আপনার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে,আপনার জানকে আ’ঘা’ত করেছে,আমাকে মে’রে ফেলতে চেয়েছে আহাদ আমি ম’রে যাচ্ছি আহাদ আমি ম..”
ঐশী আর কিছু বলতে পারলো না পুনরায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
আহাদ ঐশীকে বুকে জড়িয়ে ধরে বিরবির করে বলে,
“মে’রে ফেলবো ওদের সবাইকে মে’রে ফেলবো,জান তোমার কিচ্ছু হবে না,কিচ্ছু না।”
আহাদ ঐশীকে কোলে তুলে নিয়ে দৌড়ে গাড়ির কাছে চলে আসে,আহাদ ঐশীকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে,
ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেয়।

ড্রাইভার ফুল স্প্রিডে গাড়ি চালাচ্ছে,আহাদ ডক্টরের সাথে ফোনে কথা বলছে,আহাদ সিয়াম রোজাকেও জানিয়ে দিয়েছে।

ওরা হসপিটালে এসে পড়ে,আহাদ ঐশীকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়,ডক্টর ওদের জন্য অপেক্ষা করছিলো,আহাদ ঐশীকে স্ট্রেচারে শুইয়ে দেয় ডক্টর ঐশীকে ওটিতে নিয়ে যায়।
আহাদ চেয়ারে বসে মাথা চেপে ধরে।

কিছুক্ষণের মধ্যে সিয়াম,রোজাও চলে আসে।

ভাইয়া,ভাবি কোথায়?

আহাদ হাতের ইশরায় দেখিয়ে দেয়।

ভাইয়া কিভাবে কি হলো?

আহাদ যা যা দেখেছে তা তা সিয়ামকে বলে।

কিন্তু কে ছিল সে?

মিযান,মিযান করেছে এসব।

মিযান!

হ্যাঁ মিযান।

আহাদ সিয়ামকে মিযানের সম্পর্কে সব কিছু খুলে বলে
কিভাবে ঐশীর সাথে দেখা হলো,কিভাবে মিযান ঐশীকে ডিস্টার্ব করতো সব কিছু।

ওকে বাঁচিয়ে রাখাটাই আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল,
ওকে সেদিন মে’রে ফেললে আজ এ দিন দেখতে হতো না।

ওদের কথার মাঝে ডক্টর বের হয়।

ডক্টর আমার ওয়াইফ?

মি. শেখ আমাদের ইমিডিয়েটলি ২ ব্যাগ র’ক্ত লাগবে।

ডক্টর আমি ভাবিকে র’ক্ত দিবো তার ব্লা’ড গ্রুপ আর আমার ব্লা’ড গ্রুপ সেইম।

আসুন আমার সাথে।

সিয়াম ডক্টরের সাথে চলে যায়।

আহাদ বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়,ও যাওয়ার জন্য সামনের দিকে পা বাড়াতেই রোজা প্রশ্ন করে,
কোথায় যাচ্ছেন ভাইয়া?

ঐ অমা’নুষটা’কে শে’ষ করতে।

আহাদ কাল বিলম্ব না করে হসপিটাল থেকে বের হয়ে যায়।
_
ক্লা’বে ম’দের নে’শায় বুদ হয়ে আছে মিযান,ওর ঐশীর জন্য কষ্ট হচ্ছে,ঐশী ম’রে গেছে ভাবতেই ওর কষ্ট হচ্ছে,
মিযান ওর হাতের গ্লাসে পড়ে থাকা সবটুকু ম’দ খেয়ে পেছনে ঘুরতে কেউ ওর মাথায় ম’দের বোতল দিয়ে
স্ব জোরে আ’ঘা’ত করে,মিযানের মাথা ফে’টে যায়,ওর মাথা থেকে গলগল করে র’ক্ত বের হচ্ছে।
মিযান মাথা ঝাঁকিয়ে ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখে আহাদ ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

আহাদ পাশের টেবিলের উপর রাখা ম’দের ট্রেটা হাতে তুলে মিযানের দিকে ছু’ড়ে মা’রে,ম’দের বোতল গুলো মিযানের গায়ে লাগতেই বোতল গুলো ভে’ঙে মিযানের গায়ে গেঁ’থে যায়,মিযান মেঝেতে পড়ে যায়,আহাদ ওর কাছে এসে ওকে এ’লো’পা’থা’ড়ি লা’থি মা’রতে শুরু করে।

মিযানের লোকেরা আহাদকে আটকাতে পারছে না,
আহাদ দু হাতে রি’ভ’ল’বা’র নিয়ে মিযানের লোকদের মাথা বরাবর শু’ট করে দেয়।

আহাদ মিযানের কাছে এসে মিযানের বুকে পা’ড়া দিয়ে হু’ঙ্কা’র দিয়ে বলে,
“তোকে সেদিন বাঁচিয়ে রাখাটাই ভুল ছিল,তোকে যদি বাঁচিয়ে না রাখতাম তবে আজ আর এ দিন দেখতে হতো না,তোর এতো বড় সাহস তুই আমার জান মা’রতে চেয়েছিস,আমার জানকে আ’ঘা’ত করেছিস ওকে মৃ’ত্যু’র মুখে ঠে’লে দিয়েছিস তোকে তো আর বাঁচিয়ে রাখা যাবে না।”
মিযান আহাদের কথার উওরে কিছু বলতে পারছে না,
এমনিতেই নে’শা’গ্র’স্ত ছিল তার উপর আহাদ এভাবে মা’রা’য় মিযানের মধ্যে ল’ড়াই করার কোনো শক্তি নেই।

আহাদ ওর রি’ভ’ল’বা’রে বু’লে’ট ভরে,মিযানের চুল মুঠো করে ধরে দাঁড় করায়,দাঁড়ানোর মতো শক্তি নেই মিযানের মাঝে,আহাদের চোখ পড়ে দূরে থাকা কাঠটার উপর ও ভা’ঙ্গচু’র করার ফলে ফার্নিচারটা ভেঙ্গে যায় আর সেই কাঠটা ধা’রালো হয় যায়।

আহাদ মিযানকে টেনে হিঁ’চড়ে সেই কাঠটার কাছে নিয়ে আসে,আহাদ মিযানের পেট বরাবর লা’থি দেয়,মিযান ছিটকে সেইদিকে পড়ে আর কাঠটা ওর পি’ঠ ভে’দ করে ফেলে।

আহাদ মিযানের বু’কে পরপর ছয়টা গু’লি করে।
মিযানের নিথ’র দেহ মেঝেতে পড়ে আছে,মিযানকে মে’রেও আহাদের শান্তি হলো না ও মিযানের সামনে বসে পকেট থেকে ছু’ড়ি বের করে পা’গ’লের মতো মিযানের মৃ’ত দে’হে আ’ঘা’ত করতে থাকে।

#চলবে

#আমার_তোমাকে_প্রয়োজন💖
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_41

কপি নিষিদ্ধ ❌

পিট পিট করে চোখ মেলে তাকাচ্ছে ঐশী,চারপাশটা কেমন ঝাপসা হয়ে আছে,শরীরে অস’হ্য য’ন্ত্র’ণা হচ্ছে,
মাথার য’ন্ত্র’ণায় ঠিক মতো তাকাতে পারছে না তবুও বারকয়েক চোখের পলক ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক করে ঐশী।
নাহ এখন সব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে,ঐশী ঘাড় ঘুরিয়ে পাশ ফিরে তাকাতেই,চেয়ারে বসে বেডের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে থাকা ক্লান্ত আহাদের মুখশ্রী দেখতে পায়।
ঐশী এক মনে আহাদের দিকে তাকিয়ে আছে,ও আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না,গা ঝাড়া দিয়ে উঠে আহাদকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।
আহাদের ঘুম ভেঙে যায়।

ঐশী কান্না মাখা কন্ঠে বলে,
“ভাবিনি আপনাকে আবার দেখতে পাবো,ছুঁতে পারবো,
তখন মনে হচ্ছিল এই বুঝি পৃথিবীর মায়া ত্যা’গ করে পরপারে চলে যেতে হবে,আহাদ আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম,আপনাকে হারানোর ভয় পেয়ে ছিলাম,
আহাদ আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি,আহাদ আমি আপনাকে হারাতে চাই না,হারাতে চাই না।
আমৃ’ত্যু আপনার সাথে থাকতে চাই।”

আহাদ ঐশীর কথার উওরে কিছু বলছে না এমনকি ঐশীকে স্পর্শও করছে না,হঠাৎ আহাদ ওর পিঠে তরল জাতীয় কিছু অনুভব করে আর ও বুঝে যায় ঐশীর হাত থেকে চুয়ে চুয়ে র’ক্ত পড়ছে।
আহাদ ঐশীকে নিজ থেকে সরিয়ে বেডে শুইয়ে দেয়।
আহাদের ধারণাই ঠিক ছিল ঐশী শরীরের সমস্ত জোড় খাটিয়ে উঠার ফলে হাতের ক্যানোলা গুলো খুলে হাত থেকে র’ক্ত পড়তে শুরু করে,এমনকি পেট থেকেও চুয়ে চুয়ে র’ক্ত পড়ছে।

আহাদ বাহিরে যেয়ে ডক্টরকে ডেকে নিয়ে আসে।
ডক্টর এসে ঐশীর হাতের এবং পেটের র’ক্ত পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দেয়।
ডক্টর চলে যেতেই কেবিনে সিয়াম,রোজা প্রবেশ করে।

ভাবি এখন কেমন আছেন?

জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

ভাইয়া আপনি বাসায় চলে যান আমরা আছি ভাবির পাশে।

ঠিক আছে।
আহাদ ঐশীর পাশে রোজা,সিয়ামকে রেখে বাসায় চলে যায়।

আহাদ বাসায় এসে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
নিজের মাথা চেপে ধরে ঝর্ণার নিচে দাঁড়িয়ে আছে আহাদ,ঝর্ণার পানি ওর সমস্ত অঙ্গ ভিজিয়ে দিচ্ছে।
আহাদ মাথা চেপে ধরে ভাবছে কি থেকে কি হয়ে গেলো,গতকাল কতোটা ফুরফুরে মেজাজে খুশি মনে ঐশীর জন্য গিফট কিনে এনেছিলো,ঐশীর সাথে বিবাহ বার্ষিকী উৎযাপন করতে চেয়েছিল কিন্তু ভাগ্যে তো লেখা ছিল অন্য কিছু,ঐশীর যখন জ্ঞান ফিরছিলো না তখন আহাদের মনে হচ্ছিল এই বুঝি ওর নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে,নিজের চোখের সামনে প্রিয়তমাকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে ওর ভালো লাগছে না।
বেশ কিছুক্ষণ পর গোসল শেষ করে আহাদ ওয়াশরুম থেকে বের হয়।
রেডি হয়ে পুনরায় হসপিটালে চলে যায়।

আজ ৩ দিন যাবৎ আহাদ ঐশীর সাথে ঠিক মতো কথা বলে না,ঐশীর সব কাজ করে দেয় কিন্তু বিনিময়ে টু শব্দও করে না,ঐশীর কথায় কেবল হু হা বলে উওর দেয়,আহাদের এমন নিরবতা ঐশীর স’হ্য হচ্ছে না।

আজ ঐশীকে হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ করা হবে।
ঐশী আজ ভিষণ খুশি অবশেষে ও এখান থেকে মুক্তি পাবে,ওর মনে হচ্ছিল এখানে থাকলে মেডিসিনের স্মেলে ও আরো অসুস্থ হয়ে যাবে,ঐশী দ্রুত ডিসচার্জ নেওয়ার জন্য আহাদকে জো’ড় করে আর আহাদও ওর কথা না মেনে পারে না।

ঐশী বর্তমানে ওর কেবিনে শুয়ে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবছে।

আহাদ টাকা পরিশোধ করার জন্য আর ডক্টরের সাথে দেখা করার জন্য বাহিরে গিয়েছে।

আহাদ ঐশীর সাথে থাকায় সিয়ামকে একা হাতে অফিস সামলাতে হচ্ছে।

ঐশী বাসায় আসবে বলে রোজা সার্ভেন্টদের দিয়ে বাসা পরিষ্কার করাচ্ছে।

আহাদ হসপিটালের সব ফর্মালিটিস শেষ করে ঐশীর কেবিনে আসে,ঐশী তখনও ভাবনায় মশগুল ছিল,
আহাদ ওর কাছে আসতেই ওর ভাবনার সুতো ছিড়ে।
আহাদ ওকে সাবধানে কোলে তুলে সামনের দিকে পা বাড়ায়।

গাড়িতে আহাদের বুকে মাথা রেখে বাহিরের দৃশ্য দেখছে ঐশী,আহাদের মৌনতা ওর ভালো লাগছে না।
কি হলো মানুষটার আমার সাথে কথা বলছে না কেন?

আহাদ,ঐশী বাসায় চলে আসে।
আহাদ ঐশীকে রুমে এনে ফ্রেস করিয়ে খাবার খাইয়ে অফিসে চলে যায়।

সারাটা দিন ঐশীর বিষ’ন্ন’তায় কেটেছে।

রাত আটটার দিকে আহাদ বাসায় আসে,রুমে এসে দেখে ঐশী চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে,ঐশীকে শুইয়ে থাকতে দেখে আহাদ জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
আহাদ গোসল করে বের হয়,ঐশীকে উঠার জন্য চেষ্টা করতে দেখে আহাদ দ্রুত ওর কাছে এগিয়ে যায়। ঐশীকে ছুঁতে নিলেই ঐশী রাগী কন্ঠে বলে,
ছুঁবেন না আমায়।

ঐশীর আচরণে প্রথমে অবাক হলেও পরে আহাদ নিজেকে সামলে ঐশীকে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসায়।

আমাকে ছুঁইয়েছেন কেন,আপনাকে আমার স’হ্য হচ্ছে না,আপনি আমার চোখের সামনে থেকে চলে যান।

কোথায় যাবো?

যেখানে খুশি সেখানে যান।

এতোক্ষণ রেগে কথা বললেও হঠাৎ ঐশী কেঁদে উঠে।
কাঁদতে কাঁদতে বলে,
কি করেছি আমি,আজ তিন দিন যাবৎ আপনি আমার সাথে ঠিক মতো কথা বলছেন না,আপনাকে পাশে পাচ্ছি ঠিকই কিন্তু কাছে পাচ্ছি না,আপনাকে দেখতে পাচ্ছি ঠিকই কিন্তু অনুভব করতে পারছি না।
কি করেছি আমি কেন এভাবে আমার থেকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছেন?

তুমি কান্না বন্ধ করো তোমার সেলাইতে টান লাগবে র’ক্ত বের হবে।

ছাড়ুন আমায়,আমি ম’রে গেলে আপনার কি এমনিতে তো ম’রণের থেকে কম য’ন্ত্র’ণা দিচ্ছেন না।

আচ্ছা ঠিক আছে তুমি কান্না থামাও।

সরুন আমার সামনের থেকে..
ঐশী আর কিছু বলবে তার পূর্বেই আহাদ ওকে জড়িয়ে ধরে ঐশী ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু আহাদ ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে,একটা সময় ঐশী শান্ত হয়ে যায়,আহাদ ঐশীর মাথায় হাত বুলাচ্ছে।

জান সরি বাট আমি তোমার উপর রেগে ছিলাম অবশ্য এটাকে রাগ বলে না অভিমান বলে।

কি করেছি আমি?

মিযানের কথা আমাকে জানাওনি কেন?

আহাদের কথায় ঐশী চুপ করে রয়।

আচ্ছা জান আমরা তো দুজন দুজনকে প্রমিস করে
ছিলাম আমরা কখনো কিছু লুকাবো না,তবে তুমি কেন মিযানের কথা আমার কাছ থেকে লুকালে?

রোজা আপনাকে মিযানের কথা বলেছে তাইনা?

হুম।

সরি আহাদ আপনি তো বিজনেসের কাজে বিজি ছিলেন তাই আপনাকে মিযানের কথা বলে আর বিরক্ত করতে চাইনি,ভেবে ছিলাম আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু এতে যে হিতের বিপরীত হয়ে যাবে তা ভাবিনি।

সেদিন রোজার থেকে মিযানের কথা শুনে মিযানের অফিসে যেয়ে মিযানকে খুব মে’রেছিলাম,থ্রে’টও দিয়েছিলাম তাই ও তোমাকে মে’রে আমাকে কষ্ট দিতে চেয়েছিল।

সেদিন আমি কতো আশা নিয়ে আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম,আপনার সাথে আমাদের বিবাহ বার্ষিকী উৎযাপন করতে চেয়েছিলাম,আমি আপনাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম,লিভিংরুমটা খুব সুন্দর করে সাজিয়েছিলাম,আপনার পছন্দের চকলেট কেক
বানিয়ে ছিলাম,আপনার পছন্দের খাবার রান্না করেছিলাম কিন্তু সব কিছু এক নিমিষেই শে’ষ হয়ে গেল।

আমি তোমার উপর আরো একটি কারণে রেগে ছিলাম,
তুমি কেন একা বাড়িতে ছিলে,কেন গার্ড,সার্ভেন্টদের সন্ধ্যায় বিদায় করে দিয়েছিলে,যদি বাড়িতে গার্ড থাকতো তবে মিযান বাড়িতে আসার সাহস পেতো না।

সরি আমি আসলে আপনার সাথে একান্তে সময় কাটাতে চেয়েছিলাম,আমি বুঝতে পারিনি এমনটা হয়ে যাবে।

বি’প’দ বলে আসে না।

সরি,প্লিজ আপনি আর অভিমান করে থাকবেন না।

জান সরি বললেই কি সব কিছুর সমাধান হয়ে যায়,সরি বলাতেই কি তুমি সুস্থ হয়ে গেছো,সেদিন যদি তুমি এই বোকামিটা না করতে তবে কি এরকম হতো।

সরি আজ আপনাকে প্রমিস করলাম আর কখনো এমনটা হবে না,কখনো গার্ডদের সার্ভেন্টদের বিদেয় করবো না,একা বাড়িতে থাকবো না একা কোথাও যাবোও না যদি কখনো আপনাকে সারপ্রাইজ দিতে ইচ্ছে করে তবে সেদিন সিকিউরিটি চার গুণ বাড়িয়ে দিবো,আহাদ সরি,প্লিজ মাফ করে দিন।

আচ্ছা মাফ করলাম।

এবার তো একটু হাসুন।

ঐশীর কথা মতো আহাদ মুচকি হাসে।

ঐশী আহাদকে জড়িয়ে ধরে বলে,
এতো কেন ভালোবাসেন?

আহাদ ঐশীর ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে,
জানি না,তবে আজীবন তোমাকে এভাবেই ভালোবেসে যাবো।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে