আমার তোমাকে প্রয়োজন পর্ব-৩৪+৩৯

0
1050

#আমার_তোমাকে_প্রয়োজন💖
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_38

কপি নিষিদ্ধ ❌

হঠাৎ ঐশী ওর কাঁধে তরল কিছু অনুভব করে ওর আর বুঝতে বাকি নেই আহাদ কাঁদছে।
ঐশী চুপচাপ আহাদের চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,আহাদ ঐশীর কাঁধে মুখ গুঁজেই বলে,
জান বাবা মা’রা গিয়েছে।

ঐশী উওরে মাথা নাড়ায়।

আমি না এটা চাইনি,বিশ্বাস করো আমি কখনো উনার মৃ’ত্যু কামনা করিনি,হ্যাঁ আমার কষ্ট হতো ভিষণ কষ্ট হতো যখন বাবা আমার থেকে মুখ ঘুরিয়ে রাখতো,
আমাকে কোলে নিতো না আদর করতো না,অবহেলা করতো তখন না খুব কষ্ট হতো সেই কষ্ট না আমি কাউকে বুঝাতে পারবো না।
তোমার তো বাবা মা’রা গিয়েছিল কিন্তু আমার বাবা তো জীবিত থেকেও আমার কাছে মৃ’তের মতো ছিল।
ওনার থেকে এতো এতো কষ্ট পেয়েও না নিজেকে মানিয়ে নিয়ে ছিলাম নিজেকে শক্ত করে ছিলাম,বাবার সামনে নিজেকে কঠোর দেখতাম কিন্তু জানো আমার না ওনাকে জড়িয়ে ধরে বাবা বলে ডাকতে ইচ্ছে করতো কিন্তু আমি না পারতাম না কষ্ট করে হলেও নিজেকে বাবার সামনে কঠোর দেখতাম।
কিন্তু আজ বাবার মৃ’ত্যুটা আমি মেনে নিতে পারছি না,
ভেবেছিলাম বাবার সাথে কিছু মুহূর্ত কাটাতে পারবো কিন্তু তা আর হলো না আমি আজ আমার বাবাকে হারিয়ে ফেলাম,পেয়েও হারিয়ে ফেললাম।
ঐশী আহাদকে কিভাবে সান্ত্বনা দিবে বুঝতে পেরেছে না ঐশী কেবল আহাদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর কান্না থামানো চেষ্টা করছে।

আস্তে আস্তে কেটে যায় অনেক দিন সবাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।

ঐশী ক্লাসে বসে আছে আজ রোজা ভার্সিটিতে আসেনি ঐশী ক্লাসে বসে মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করছিলো কিন্তু হঠাৎ কেউ এসে ওদের ক্লাসের মনোযোগটা নষ্ট করে দেয়।
ঐশী সামনে তাকিয়ে দেখে মিযান দাঁড়িয়ে আছে।
মিযানকে দেখে ঐশী কিছুটা অবাক হয় সেদিনের পর ও আর মিযানকে দেখেনি তবে আজ ও কেন এলো?

মিযান পকেট থেকে রি’ভ’লবা’রটা বের করে হাতের ইশরায় প্রফেসর সহ সবাই বেরিয়ে যেতে বলে,মিযানের হাতে রি’ভ’লবা’র দেখে কেউ আর ক্লাসে বসে থাকার চেষ্টা করেনি।

রুম এখন একদম ফাঁকা,ঐশী মিযান ব্যাতীত রুমে আর কেউ নেই,ঐশী ওর সিট ছেড়ে উঠেনি ও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মিযানের দিকে তাকিয়ে আছে।
মিযান আস্তে আস্তে হেটে এসে ঐশীর মুখোমুখি বসে।
মিযান রি’ভ’লবা’রটা বেঞ্চের উপর রেখে বলে,
কেমন আছো জানেমান?

জানেমান মানে?

জানেমান মানে জানেমান,আমি তো তোমায় ভালোবাসি তাকে ভুলে গেলে,সেদিন যখন তোমাকে প্রপোস করেছিলাম সেদিন তো উওরটা দিলে না।

আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন আমি বিবাহিত।

উহুম ভুলিনি আমার স্পষ্ট মনে আছে তুমি বলেছিলে,
তুমি আহাদ শেখের ওয়াইফ,আমি কে কি আমার পরিচয় তা জানতে তোমার শুধু দশ মিনিট লাগবে,
আর আমাকে এ দুনিয়া থেকে বিদায় করতে জাস্ট এক সেকেন্ড লাগবে,তুমি আমাকে তোমার থেকে দূরে থাকতে বলেছিলে,কিন্তু কি করবো বলো তোমার থেকে দূরে থাকা সম্ভব নয় এতদিন দেশের বাহিরে ছিলাম তাই তোমার সাথে দেখা করতে পারিনি কিন্তু এখন যখন দেশে এসেছি তোমার পিছু আমি ছাড়ছি না।
কি জানি কি জা’দু করেছো তোমার থেকে চোখই সরাতে পারিনা দূরে যাবো কিভাবে?
তুমি সেদিন কি ভেবেছিলে আমি রি’ভ’লবা’র দেখে ভয় পেয়ে যাবো,যে প্রতিদিন মৃ’ত্যু নিয়ে খেলে তাকেই মৃ’ত্যু’র ভয় দেখাচ্ছো,আহাদের বউ তুমি।
আমার না আহাদের বউকে দেখার অনেক শখ ছিলো,
দেখেও নিলাম আর তার প্রেমেও পড়ে গেলাম।
একদম আহাদের মতোই তেজ তোমার,আর এই তেজই আমায় বারংবার তোমার কাছে টেনে নিয়ে আসছে,
সে তুমি যার বউ হওনা কেন,তোমার উপর আমার নজর পরেছে আমার তোমাকে চাই।
মিযান যা চায় তাই পায় আপোষে না পেলে ছিনিয়ে নেয়,তোমাকে আমি আহাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে আসবো,দেখে নিও।

হাহ আর আহাদ আপনাকে ছিনিয়ে নিতে দিবে আপনি জানেন সে যদি জানতো আপনি আমার সামনে বসে আমাকে এসব বলছেন তবে আপনাকে মে’রে ফেলতে সে ভাবতো না,আহাদ আমাকে অনেক ভালোবাসে আমার দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালে আহাদ তার চোখ উপ’ড়ে ফেলে,হাহ আর আপনি এসেছেন আহাদের কাছ থেকে আমাকে ছিনিয়ে নিতে,
হাসালেন মিস্টার হাসালেন।

হেসে নাও জানেমান,আমি কি করবো তা দেখতেই পাবে।
কথাটা বলে বেঞ্চের উপর থেকে রি’ভল’বা’রটা নিয়ে মিযান রুম থেকে চলে যায়।
আর ঐশী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মিযানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয়।
_

ঐশী আজ বেশ কিছু দিন যাবৎ লক্ষ্য করছে আহাদ প্রায় অনেক রাত করে বাড়ি ফিরে,ও যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন আহাদ বাড়ি ফিরে,আর প্রতিদিন ওর শার্টে র’ক্ত লেগে থাকে,ঐশী বুঝতে পারে আহাদ ইদানীং খু’ন করছে,ও জানে আহাদ কখনো নির্দোষ কাউকে আ’ঘা’ত করবে না তবুও ওর আর এসব ভালো লাগছে,
আহাদের হাতে আর কারো খু’ন ও দেখতে পারবে না ওকে কিছু একটা করতে হবে আহাদকে থামাতে হবে,
প্রথমে আহাদকে মানা করতো না ভাবতো হয়তো আহাদ এসব ছেড়ে দিবে কিন্তু না আহাদ তা করছে না ঐশীর আর এসব দেখতে ভালো লাগছে না ওর কিছু একটা করতে হবে আহাদকে থামাতে হবে।

রাত ২ টায় হঠাৎ ঐশীর ঘুম ভেঙে যায়,ও পাশ ফিরে দেখে আহাদ ঘুমিয় আছে,ও ঘুমানোর চেষ্টা করে কিন্তু ওর ঘুম আসছে না ঐশী উঠে বসে এক গ্লাস পানি খেয়ে নেয় রুমে বসে থাকতে ভালো লাগছে না তাই রুম থেকে বের হয়,বাহিরে ভালো বাতাস বইছে ঐশী ভাবছে একটু ছাদে গেলে ভালো লাগতো,যা ভাবা তাই কাজ ঐশী সিঁড়ি বেয়ে ছাদে চলে যায়।
ওদের ছাদের লাইট সব সময় রাতে জ্বালানো থাকে তাই অন্ধকার না থাকায় ঐশী নির্ভয়ে ছাদে এসেছে।
ঐশী ছাদের কিনারায় যেয়ে দাঁড়াতেই একটা দমকা হাওয়া এসে ঐশীর শরীর ছুঁইয়ে দেয়।
ঐশী চোখ বন্ধ করে তা অনুভব করে,চোখ বন্ধ করতেই
আহাদ আর ওর একসাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে।

Phir Agar Mujhe Tu Kabhi Na Mile
Hamsafar Mera Tu Bane Na Bane
Faslon Se Mera Pyaar Hoga Na Kam
Tu Naa Hoga Kabhi Ab Judaa.

Maine Tera Naam Dil Rakh Diya
Maine Tera Naam Dil Rakh Diya
Dhadkega Tu Mujhme Sada
Maine Tera Naam Dil Rakh Diya.

Tere Waste Kabhi Mera
Ye Pyaar Na Hoga Kam.

Maine Tera Naam Dil Rakh Diya
Maine Tera Naam Dil Rakh Diya
Dhadkega Tu Mujhme Sadaa
Maine Tera Naam Dil Rakh Diya.

ঐশী গুনগুন করে গানটা গাইছে আর ওদের একসাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো মনে করছে,অনুভব করছে।
ওর ভাবনার মাঝে আহাদ ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে গলায় ঠোঁট ছুঁইয়ে মৃদু স্বরে বল,
ম্যানে ভি তেরা নাম দিল রাখ দিয়া।

ওরা দু’জন বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রয় একটা সময় মৌনতা কাটিয়ে ঐশী মৃদু স্বরে বলে,
আহাদ।

হ্যাঁ জান।

একটা কথা বলি?

একটা কেন হাজারটা বলো।

আপনি কি আমায় ভালোবাসেন?

আহাদ ঐশীর গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে,
নিজের জীবনের থেকেও বেশি।

আহাদ।

হ্যাঁ জান।

এই খু’নখা’রা’বি ছেড়ে দেন না।

ঐশীর কথা আহাদের কানে যাওয়া মাএই আহাদের হাত আলগা হয়ে যায়,আহাদ কিছু না বলায় ঐশী পেছনে ফিরে।
আহাদ প্লিজ এই খু’ন’খা’রা’বি ছেড়ে দেন না।

সরি জান আমি এটা পারবো না।

কেন আহাদ এগুলো না করলে কি হয় না?

জান আমি এ বিষয়ে আর একটি কথাও শুনতে চাই না।

কিন্তু আহাদ,

প্লিজ জান।
আহাদ আর কিছু না বলে ছাদ থেকে নেমে যায় ঐশী আহাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয়।

#চলবে

#আমার_তোমাকে_প্রয়োজন💖
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_39

কপি নিষিদ্ধ ❌

রোজা ঐশী মাঠে হাটছে,ঐশীকে ম’নম’রা হয়ে হাটতে দেখে রোজা ঐশীকে জিজ্ঞেস করে,
কি হয়েছে তোকে এমন ম’নম’রা লাগছে কেন?

কিছু না।

না বললে আমি শুনবো নাকি কিছু না কিছু তো হয়েছে,বল আমাকে।

ঐশী দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রোজাকে গতকাল রাতের ঘটনা বলে।

ওহ তো এই ব্যাপার এই কারণে তোর মন খারাপ।

তো কি করবো বল আমি বুঝিনা উনি কেন এসব ছাড়তে চান না।

দেখ আমাদের এসব মেনে নিতে হবে,এই পেশা ওনারা চাইলেও ছাড়তে পারবে না।

আমার না এসব আর ভালো লাগে না খু’ন খা’রা’বী আর ভালো লাগে না।

কিছু করার নেই রে আমাদের এসব মেনে নিতে হবে।

ঐশী রোজার কথার উওরে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।

আজ বেশ কয়েক দিন যাবৎ মিযান ঐশীকে ডিস্টার্ব করছে,ঐশী আহাদের সাথে রাগ করে মিযানের কথা আহাদকে বলছে না।

ঐশী রোজা গাছের নিচে বসে আড্ডা দিচ্ছে,ওদের আড্ডার মাঝে মিযানের আগমন ঘটে,ঐশী মিযানকে দেখে উঠে যেতে নিলে মিযান ঐশীর হাত ধরে ঐশীকে বসিয়ে দেয়।

উফফ জানেমান উঠছো কেন?

ছাড়ুন আমার হাত।

এই নেও ছেড়ে দিলাম,আমি ধরলে এমন করো কেন?

কারণ আমার আপনাকে স’হ্য হয় না।

স’হ্য করতে হবে জানেমান স’হ্য করতে হবে,কিছুদিন পর তো তুমি আমার বউ হবে তখন তোমাকে এসব স’হ্য করতে হবে।
কথা গুলো বলে মিযান চলে যায়।

ঐশী এবার কিন্তু কথা গুলো ভাইয়াকে জানানো উচিত মিযান কিন্তু খুব বেশি বাড়াবাড়ি করছে।

ঐশী রোজার কথার উওরে কিছু বলে না ও কি করবে না করবে বুঝতে পারছে না।

রোজা ঐশীকে চুপ করে থাকতে দেখে মনে মনে ভাবে,
“আমি জানি তুই ভাইয়াকে কিছু বলবি না কিন্তু এই মিযান খুব বাড়াবাড়ি করছে ওকে এখন না থামালে পরে হিতের বিপরীত হয়ে যাবে,আমি আজই ভাইয়াকে সব কিছু খুলে বলবো।”

রোজা ঐশী বাসায় চলে আসে।

রোজা ওর রুমে এসে আহাদকে কল দেয়।
আহাদ ওর কেবিনে বসে কাজ করছিলো,ফোন বেজে উঠায় আহাদ ফোন হাতে নিয়ে দেখে রোজা কল দিয়েছে,আহাদ কল রিসিভ করে,
হ্যাঁ রোজা বলো।

ভাইয়া এখন আমি আপনাকে কিছু কথা বলবো আপনি ঠান্ডা মাথায় শুনিয়েন।

আচ্ছা বলো।

রোজা আস্তে আস্তে মিযানের সম্পর্কে সব কিছু বলতে শুরু করে রোজার কথা শুনে আহাদের চোয়াল শক্ত হয়ে যায় ও রাগে হাত মুঠো করে রেখেছে।

ভাইয়া আপনি ঐশীকে কিছু বলিয়েন না ও ভেবেছে আপনি ব্যস্ত তাই আপনাকে এসব নিয়ে বিরক্ত করতে চায়নি,আপনি ওর সাথে রাগারাগি করিয়েন না।

ঠিক আছে রোজা তুমি চিন্তা করো না আমি ঐশীকে কিচ্ছু বলবো না এমনকি মিযানের কথাও জিজ্ঞেস করবো না।

আচ্ছা ভাইয়া।

রোজা আমি একটু ব্যস্ত আছি পরে কথা বলছি।

আচ্ছা ভাইয়া।
রোজা কল কেটে দেয়।

আহাদ রেগে হাত মুঠো করে চোয়াল শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে বিরবির করে বলে,
“মিযান তোর এত বড় সাহস তুই আমার জানের দিকে হাত বাড়িয়েছিস,আমার জানকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে চাইছিস,কিন্তু তা তো আমি হতে দিবো না আমার জানের দিকে যে হাত বাড়াবে আমি তার শরীর থেকে মাথা আলাদা করে ফেলবো।”
আহাদ গায়ে কোর্টটা জড়িয়ে হনহন করে কেবিন থেকে বের হয়ে যায়।

মিযান ওর কেবিনে বসে আছে,ও উল্টো দিকে ঘুরে গ্লাস দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখছে হঠাৎ ও ওর গলায় ধা’রা’লো কিছু অনুভব করে,ও বুঝতে পেরেছে কেউ পেছন থেকে ওর গ’লায় ছু’ড়ি ধরেছে,ও নড়তে পারছে না ওর নড়লেই ওর গ’লা কে’টে যাবে,মিযানের গলায় ছু’ড়ি ঠেকিয়ে আহাদ ভারী গলায় বলে,
তুই কোন সাহসে আমার বউয়ের দিকে নজর দিয়েছিস,
কোন সাহসে ওকে ডিস্টার্ব করেছিস,তুই কি আমার সম্মন্ধে জানিস না,তোর কি ম’রার ভয় নেই?
আহাদ মিযানের গলা থেকে ছু’ড়ি সরিয়ে চেয়ারটা ঘুরিয়ে মিযানকে নিজের মুখোমুখি করে বুক বরাবর লা’থি মা’রে মিযান ছিটকে মেঝেতে পড়ে,আহাদ ওর কাছে যেয়ে ওকে মা’রতে শুরু করে আহাদ ওকে মা’রতে মা’রতে আ’ধম’রা করে ফেলে।
আহাদ মিযানকে শেষ একটা লা’থি মে’রে হু’ঙ্কা’র দিয়ে বলে,
আজ তোকে ছেড়ে দিচ্ছি কিন্তু আর কখনো যদি তোকে আমার বউয়ের সামনে যেতে দেখি তবে তোকে কে’টে টু’ক’রো টু’ক’রো করে ফেলবো,মাইন্ড ইট।
আহাদ হন হন করে কেবিন থেকে বের হয়ে যায়।

মিযান কোনো মতে উঠে চেয়ারে বসে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
“আহাদ কাজটা তুই ঠিক করলি না,তোর বউয়ের কাছে গিয়েছি বলে তুই আমাকে মা’রলি তো,তোর বউকে তুই অনেক ভালোবাসিস কিন্তু তোর বউকে যদি মে’রে ফেলি তখন কি করবি?
ঐশী তোমার মাঝে এক অন্যরকম নে’শা আছে যে নে’শা আমাকে দিনকে দিন গ্রা’স করছে,তোমাকে আমি আর নিজের করে পেতে চাইবো না কারণ তোমাকে আর আমি বাঁচিয়ে রাখবো না।
আমার যে জিনিসের উপর এক বার নজর পড়ে হয়তো আমি সেটাকে ছি’নিয়ে নেই নয়তো ধ্বং’স করে ফেলি,
তোমাকে ম’রতে হবে ঐশী,তোমাকে ম’রতে হবে।
আহাদ তোর বউকে মা’রতে আসছি পারলে ঠেকা।”
কথা গুলো বলে মিযান শ’য়’তা’নি হাসি হাসে।
_
১১ তারিখ রাত ১০ টায়,
ঐশী বাড়িতে একা,রোজা সিয়াম রোজার বাবা বাড়িতে গিয়েছে,আজ অফিসে অনেক কাজ থাকাতে আহাদ দেরি করে আসবে,আহাদের দেরি করে আসাতে ঐশীর বেশ উপকার হয়েছে।
কেন?
কারণ ঐশী আহাদকে সারপ্রাইজ দিবে,আজ ওদের বিয়ের এক বছর পূর্ণ হলো,আজকের দিনটা ঐশী স্বরণীয় করে রাখতে চায়,সন্ধ্যা থেকে লিভিং রুমটা ঐশী নিজ হাতে সাজিয়েছে,সন্ধ্যায় সব গার্ড সার্ভেন্টকে ছুটি দিয়ে দিয়েছে,আজ ও আহাদের সাথে একান্তে সময় কাটাতে চায়।

ঐশী লিভিংরুম সাজিয়ে রান্না ঘরে চলে যায়।
ও আজ নিজ হাতে আহাদের জন্য রান্না করবে ঐশী আহাদের পছন্দের চকলেট কেক আর পিজ্জা বানাবে,
এবং কাচ্চি,রোস্ট,আর গরুর রেসালা রান্না করবে।

রান্না শেষ করে সবকিছু লিভিং রুমের টেবিলের উপর সাজিয়েছে রাখে,ঐশী কিছুটা দূরে যেয়ে পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে মুচকি হাসে,হাতে ফোন নিয়ে রুমের ছবি তুলে রোজাকে পাঠিয়ে দেয় আর লিখে,
সাজানোটা কেমন হয়েছে তোর ভাইয়ার পছন্দ হবে তো?

রোজা এখনো মেসেজ সিন করেনি।
ওকে মেসেজ সিন করতে না দেখে ঐশী ভাবে হয়তো সবার সাথে ব্যাস্ত আছে তাই মেসেজ সিন করেনি।

ঐশী ওর রুমে চলে আসে কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছে,গোসল করলে ভালো লাগবে।
ঐশী কাবার্ড খুলে ভাবনায় পড়ে যায় বুঝতে পারছে না কোন শাড়িটা পড়বে।
একটা সাদা শাড়ীর উপর ঐশীর চোখ আটকে যায়,ও শাড়িটা হাতে তুলে নেয়,সাদা শাড়ীটা বেশ সুন্দর,ঐশী এই শাড়িটা পড়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

ঐশী শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় বেশ কিছুক্ষণ পর চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে,
ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে হেয়ার ড্রায়ার বের করে চুল গুলো শুকিয়ে ফেলে।
মুখে হালকা মেকআপ করে কানে ছোট ডায়মন্ডের টপ
পড়ে,স্ট্রেটনার নিয়ে চুল গুলো স্ট্রেট করে নেয়।
আয়নায় নিজেকে একবার দেখে ঐশী মুচকি হাসি দেয়।

আহাদ ওর অফিসে বসে আছে আজ কাজের খুব চাপ ছিল কেবলমাত্র কাজ শেষ হলো,আহাদ ওর ফোনটা নিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে যায়,নিচে এসে গাড়িতে উঠে বসে,ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেয়।
আহাদ ফোন স্ক্রল করছিলো হঠাৎ ওর আজকের তারিখের উপর চোখ পড়ে আর ও চমকে যায়।
“আজ ১১ তারিখ!
আজ রাত বারোটায় তো আমাদের বিয়ের এক বছর পূর্ণ হবে,আমি এই দিনটার কথা কিভাবে ভুলে গেলাম,
শিট কাজের চাপে আমি একদিন পা’গ’ল হয়ে যাবো,
জান যদি জানতে পারে আমি আজকের দিনের কথা ভুলে গেছি তবে তো ও আমাকে খু’ন করে ফেলবে,
বউকে খুশি করতে হবে এক কাজ করি ওর তো গহনা পছন্দ ওকে গহনা কিনে দেই,ও খুশি হয়ে যাবে,
আমার বউ খুশি তো আমিও খুশি।”
আহাদ কথা গুলো ভেবে ড্রাইভারকে জুয়েলারি শপে যেতে বলে,আহাদ সেখানে যেয়ে গহনা পছন্দ করে গহনা কিনে পুনরায় গাড়িতে বসে পড়ে।

ঐশী আহাদের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছে।
“উফফ আহাদ কখন আসবেন,আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবো,প্লিজ তাড়াতাড়ি চলে আসেন না।”
ঐশী ভাবনার মাঝে কলিংবেলের আওয়াজ শুনতে পায়,কলিংবেলের শব্দ শুনতেই ঐশীর ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে ও বুঝে যায় ওর অপেক্ষার প্রহর শেষ ওর প্রিয়তম চলে এসেছে।
ঐশী বসা থেকে উঠে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে নিচে চলে আসে,দৌড়ে সদর দরজার কাছে এসে দরজা খুলতেই ভয় পেয়ে যায়।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে