#আমার_তোমাকে_প্রয়োজন💖
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_34
কপি নিষিদ্ধ ❌
আপাদের বিয়ের তিন বছর হয়ে যায় কিন্তু তাদের কোনো সন্তান হচ্ছিল না,ভাইয়া তখন সিদ্ধান্ত নেয় ডক্টর দেখাবে,তো যা ভাবা তাই কাজ ওনারা ৪/৫ টা হসপিটালে চেকআপ করায় কিন্তু সবাই বলছে সমস্যাটা আপুর ভাইয়ার না,শেষমেশ ওনারা ইন্ডিয়া যেয়ে চেকআপ করায় সেই ডক্টরের কথা শুনতেই আপার সকল আশা নিমেষেই শেষ হয়ে যায়।
ডক্টর রিপোর্ট দেখে ওনাদের বলে,
সরি টু সে বাট আপনার ৮০% মা হওয়ার সম্ভাবনা নেই,
আপনি হয়তো আর কখনোই মা হতে পারবেন না।
ডক্টরের কথা শুনে আপা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে,ওনাকে একটা কেবিনে শিফট করা হয়।
ওনারা পরদিন বাংলাদেশে চলে আসে আপা আমাকে জড়িয়ে ধরে সেদিন খুব কেঁদে ছিলেন।
দিন যত বাড়ছিল আপা ভাইয়ার দুরত্বও তত বাড়ছিল।
আপা আমার কাছে খোলা ডায়েরির মতো ছিল আমি উনার সকল দুঃখ কষ্ট দেখতে পেতাম।
আপাকে কি বলে সান্ত্বনা দেবো বুঝতে পারিনি।
আপা প্রতিদিন নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে একটা সন্তান ভিক্ষা চাইতো আল্লাহও তার দোয়া ফেরাতে পারেনি,আল্লাহ আপার দোয়া কবুল করে নেয়।
আপার গর্ভে সন্তান আসে কিন্তু এ সন্তান আসাতেও ভাইয়া খুশি হননি,সে কাজের অযুহাত দেখিয়ে আপার থেকে দূরে দূরে থাকতো।
সেদিন আপা বলেছিলো,
মরিয়ম আয়মান হয়তো আমাকে আর ভালোবাসে না,
এতো দিন বাচ্চা না থাকাতে আমার থেকে দূরে সরে থাকতো কিন্তু এখন তো আমাদের সন্তান আছে তাহলে কেন ও আমার থেকে দূরে সরে আছে আমি কি করেছি বলতে পারিস,ও কেন আমাকে আগের মতো ভালোবাসে,কই আগে তো আমাকে ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে পারতো না তবে এখন কেন এতো অবহেলা করছে আমায়,কেন এতো অবহেলা করছে।
আপা শান্ত হও সব ঠিক হয়ে যাবে।
সেদিন আপাকে স্বান্তনা দিয়েও লাভ হয়নি কারণ আপা ঠিক বলেছে ভাইয়া সত্যি আপাকে আগের মতো ভালোবাসে না।
আপার কোল আলো করে আহাদ এলো,
ভাইয়া আহাদকে কোলে নেন নি না তো ভালো মতো দেখেছেন,ভাইয়া কেন এমন করছিল জানতাম না।
এরই মাঝে কেটে যায় চারটি বছর আমার এবং হামিদের বিয়ে হয়ে যায়।
দেখতে দেখতে আহাদ বড় হয়ে যায় ওর আধো আধো গলায় ছোট মা বলা ডাকটা আজও আমার কানে বাজে,আহাদকে পেয়ে আপা একটু হলেও কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করছে।
একদিন,
আয়মান ওর বাসায় আসে আছিয়া তখন আহাদকে ঘুম পাড়াচ্ছিল দরজায় নক করতেই আছিয়া দরজা খুলে দেয় আয়মান ভেতরে আসে আছিয়া ওকে দেখেই বুঝে যায় আয়মান ড্রিং করেছে,আয়মান আছিয়ার পাশ কাটিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে,মুহুর্তের মাঝে ঘুমিয়ে পড়ে,আছিয়া আয়মানের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
আছিয়া আয়মানের পাশে বসে আয়মান নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে আছিয়া আয়মানের মাথায় হাত বোলানোর জন্য হাত বাড়াতেই ফোনের নোটিফিকেশনের আওয়াজে থেমে যায়,আয়মানের ফোনটা হাতে তুলতেই আছিয়া থমকে যায় আছিয়ার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে,আছিয়া মেসেজ অপশনে যেয়ে মেসেজ গুলো পড়তে শুরু করে আর মেসেজ গুলো পড়ে আছিয়া বুঝতে পারে শিমা নামের মেয়েটির সাথে আয়মান সম্পর্কে জড়িয়েছে।
মরিয়মের কথায় ঐশী অবাক হয়ে বলে,
বাবা অন্য নারীতে আস’ক্ত ছিলেন পরকীয়ায় জড়িয়ে পরেছিলেন!
হ্যাঁ বউমা,আরো শুনো,
আছিয়ার চোখ থেকে অঝর ধারায় জল গড়িয়ে পড়ছে ও ভাবতে পারেনি ওর আয়মান ওকে এভাবে ধোঁ’কা দিবে,আছিয়া চোখ মুছে আয়মানের দিকে তাকায়,
আয়মানের কাধেঁ গলায় কা’ম’ড়ে’র দাগ গুলো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে আছিয়ার আর কিছু বুঝতে বাকি রইলো না,ও দৌড়ে ওয়াশরুমে যেয়ে দরজা লাগিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে।
সেদিন আমাকে আপা সব বলেছিলেন,আপা পরদিন ভাইয়াকে শিমার কথা জিজ্ঞেস করে,
বলো আয়মান কে এই মেয়ে,এই মেয়েটার জন্য তুমি আমার থেকে আমার ছেলের থেকে দূরে সরে ছিলে,
আয়মান কেন করলে এমনটা কেন আমাকে এভাবে ধোঁ’কা দিলে,ঐ বা’জে মেয়েটার জন্য কেন আমাকে এতো কষ্ট দিলে।
শিমাকে বা’জে মেয়ে বলায় আয়মানের মাথায় র’ক্ত উঠে যায়,আয়মান ঠা’স করে আছিয়ার গালে চ’ড় বসিয়ে দেয়।
খবরদার আমার শিমাকে বা’জে মেয়ে বলবে না,
তোমাকে ধোঁ’কা দিয়েছি বেশ করেছি,আমার আর তোমাকে ভালো লাগে না আমি তোমাকে আর ভালোবাসি না,আমি শিমাকে ভালোবাসি ও আমার জীবন ও আমার সব ওর নামে আর একটি বা’জে কথা আমি স’হ্য করবো না।
তুমি আমায় মা’রলে,আজ আমি এতোটাই অবহেলার পাএি হয়ে গেলাম,কই বিয়ের আগে তো আমায় কত শত স্বপ্ন দেখিয়ে ছিলে তবে আজ কেন এমনটা করলে,
কেন আমার সুখের সংসারটা ধ্বং’স করে দিলে,কেন আমার হাসিখুশি জীবনটাকে গ’লা টি’পে হ’ত্যা করলে,
আমার সন্তানটা একদিনও বাবার আদর পেলো না,ওর বাবা থেকেও নেই,তুমি তো এমন ছিলে না আয়মান।
আয়মান ঘুমন্ত আহাদের দিকে তাকিয়ে বলে,
ওর জন্যই তো আমাকে এতো কথা এত কিছু স’হ্য করতে হচ্ছে,ওকে আমি মে’রে ফেলবো।
বলেই আহাদের গ’লা টি’পে ধরে আহাদের ঘুম ভেঙে যায় আহাদ ব্যা’থা’য় ছটফট করতে থাকে।
আছিয়া আয়মানের পা জড়িয়ে ধরে,
আমার ছেলেকে ছেড়ে দাও,ওকে মে’রো না আমি আর তোমাকে কিচ্ছু বলবো না,বউয়ের অধিকার নিয়ে কখনোই তোমার সামনে দাঁড়াবো দয়া করে আমার ছেলেটাকে ছেড়ে দাও,আয়মান ও ম’রে যাবে দয়া করে ওকে ছেড়ে দাও।
আয়মান আহাদের গলা থেকে হাত সরিয়ে পা ঝাড়া দিয়ে আছিয়াকে সরিয়ে দেয়,আছিয়া ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে।
আয়মান আঙ্গুল উঠিয়ে আছিয়াকে শা’সি’য়ে বলে,
আজকের মতো ছেড়ে দিলাম যদি আর কখনো তুমি আমার সামনে আসো আমার শিমাকে নিয়ে একটা কথা বলো তবে আমি ওকে মে’রে ফেলবো,আজ থেকে তোমার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই,আমি ওর বাবা না,না তো তোমার স্বামী খুব দ্রুত আমি তোমায় তা’লা’ক দিবো।
আয়মান কথা গুলো বলে রুম থেকে চলে যায় আছিয়া আহাদকে বুকে জড়িয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠে।
সেদিনের পর থেকে ভাইয়া আর কখনো বাসায় আসেনি ওনাদের বাসায় কেবল আপা আহাদ আর আহাদের চাচা থাকতো।
আহাদের চাচা ছিল খুব বা’জে একটা মানুষ সারাদিন নে’শা’র মাঝে ডুবে থাকতো,প্রতিদিন ওনার নতুন নতুন মেয়ে লাগতো।
উনি যতোক্ষণ বাসায় থাকতো আপা ততক্ষণ দরজা বন্ধ করে রুমে বসে থাকতো।
আহাদ আস্তে আস্তে বড় হতে শুরু করে,আপা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে আমি আপাকে হসপিটালে নিয়ে যাই,
চেকআপ করে জানতে পারি আমার ব্রেইন ক্যা’ন্সা’র হয়েছে।
মরিয়মের কথায় ঐশী বলে,
ব্রেইন ক্যা’ন্সা’র!
হ্যাঁ ব্রেন ক্যা’ন্সা’র,আপা লাস্ট স্টেজে ছিলো ওনার হাতে বেশি সময় ছিল না ডক্টর বলেছে হসপিটালে রেখে কোনো লাভ হবে না আপার শেষ সময় চলে এসেছে ওনাকে আর বাঁচানো যাবে না।
আপা ডক্টরের কথা শুনে ভে’ঙ্গে পড়েন,আপা আমার আর হামিদের হাত ধরে আকুতি মিনতি করে বলে,
আমি ম’রে গেলে তোমরা আমার আহাকে দেখে রেখো আমি ম’রে গেলে ও এতিম হয়ে যাবে ওর তো বাবা থাকতেও নেই,আমি ম’রে গেলে আমার ছেলেটার কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকবে না।
আমার ছেলেটা যদি কষ্টে থাকে তবে আমি ম’রেও শান্তি পাবো না,মরিয়ম হামিদ তোমরা আমার ছেলেটাকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবেসো,
হামিদ ও তো কখনো বাবার আদর পায়নি তুমি ওকে বাবার আদর দিয়ে মানুষ করিও,আমি তোমাদের কাছে হাত জোড় করে মিনতি করছি দয়া করে আমার ছেলেটাকে তোমরা দেখে রেখো,দেখে রেখো।
আমি আপাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠি,
আপা মিনতি করছো কেন আহাদ তো আমাদেরও সন্তান দেখো না ও কতো সুন্দর করে আমাকে ছোট মা আর ওকে ছোট বাবা বলে ডাকে,আমরা ওকে নিজের সন্তানের মতো মানুষ করবো কখনো ওকে কষ্ট পেতে দিবো না ওকে মানুষের মতো মানুষ করে তুলবো আপা তুমি চিন্তা করো না তোমার আহাদের অবহেলা করবো না ও আমাদের কাছে খুব যত্নে থাকবে,আপা তুমি চিন্তা করো না তুমি খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে সুস্থ হয়ে যা,
আমার কথা বলার মাঝে আপা শেষ নি’শ্বা’স ত্যা’গ করে আমি চিৎকার করে আপা বলে কেঁদে উঠি।
আছিয়ার মা’রা যাওয়ার কথা বলতে বলতে মরিয়ম কেঁদে উঠে ঐশীর চোখ দিয়েও পানি পড়ছে ওর ভাবতে পারেনি ওর শ্বাশুড়ি এতোটা কষ্ট পেয়েছেন।
মরিয়ম চোখ মুছে আবার বলতে শুরু করে,
সেদিন ভাইয়াও এসেছিলেন কিন্তু তার মুখে কষ্টের রেশ মাএও ছিলো না ওনাকে দেখে মনে হচ্ছিল আপা মা’রা যাওয়াতে ওনার পথের কা’টা সরে গিয়েছে।
সেদিন আমরা সবাই কেঁদে ছিলাম কিন্তু আহাদের চোখে পানি ছিল না ও ওর মায়ের লা’শের দিকে এক মনে তাকিয়ে ছিল,ও যেন পাথর হয়ে গিয়েছিল,
আহাদ আপার কাছে যেয়ে আপাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
মা তুমি কি ঘুমাচ্ছো?
ও মা উঠো না আমার ভালো লাগছে না,মা আমাকে একটু জড়িয়ে ধরে না আমিও তোমার মতো এভাবে ঘুমাতে চাই,জড়িয়ে ধরো না মা।
কথাগুলো বলেই আহাদ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে আমি ভয় পেয়ে যাই আমি দ্রুত ওকে কোলে তুলে নেই ওকে ওর রুমে এনে শুইয়ে দেই আহাদের কিছুতেই জ্ঞান ফিরছিলো না আপা মা’রা যাওয়ার দুদিন পর আহাদের জ্ঞান ফিরে আমি তখন আহাদের জন্য ঔষধ আনতে পাশের ফার্মেসিতে গিয়েছিলাম,রুমে এসে দেখি আহাদের জ্ঞান ফিরে এসেছে ও পা’গ’লের মতো আপাকে খুঁজছে যখন সিয়ামের বাবা বলে আপা আর বেঁ’চে নেই তখন ও চিৎকার করে কেঁদে উঠে ঘরের সব কিছু ভে’ঙ্গে ফেলে কেউ ওকে আটকাতে পারছিলনা,
আমি আহাদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি আর ও শান্ত হয়ে যায় একটা সময় ও আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে,আমিও আমার চোখের জল আটকে রাখতে পারিনি।
আহাদ খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো আমি ওকে ছেড়ে যাওয়ার সাহস পাচ্ছিলো না তাই আমি আর হামিদ আহাদদের বাসাতেই থেকে যাই,আমাদের ইচ্ছে ছিল আহাদ সুস্থ হলে ওকে নিয়ে যাবো অসুস্থ শরীরে ও জার্নি করতে পারবে না,আস্তে আস্তে আহাদ সুস্থ হতে শুরু করে,আহাদ যেহেতু সুস্থ হয়ে গিয়েছে তাই আমি আর হামিদ সিদ্ধান্ত নেই কালই আমরা এ বাসা থেকে চলে যাবো,আমাদের ঘরটা এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে তাই আমি হামিদকে বাসায় পাঠিয়ে দেই আর এটাই আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল।
#চলবে
#আমার_তোমাকে_প্রয়োজন💖
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_35
কপি নিষিদ্ধ ❌
হামিদকে বাসায় পাঠানোই আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল।
ভুল!
হ্যাঁ ভুল,যদি হামিদকে বাসায় না পাঠাতাম তবে আর আহাদকে সং’শো’ধ’নী কেন্দ্রে যেতে হতো না।
শুনো তবে।
আমি আহাদকে ঘুম পাড়িয়ে নিজেও ঘুমিয়ে পড়ি,
ভোর ৪ টার দিকে আমার ঘুম ভেঙে যায় আমার খুব তৃষ্ণা পেয়েছিল আমি উঠে দেখি জগে পানি নেই তাই পানি আনার জন্য নিচে যাই,আর যাওয়ার পথে আসাদের রুম থেকে আমি আসাদের গলার স্বর শুনতে পাই,কেন যেন আমি থেমে যাই কান পেতে ওর কথা শুনার চেষ্টা করি।
আসাদ ফোনে কাউকে বলছিলো,
বললেই হলো নাকি এই সম্পত্তির মালিক আমি,
আমাদের দু ভাইয়ের সম্পত্তির অর্ধেক সম্পত্তি তো আমারই আছে কিন্তু ভাইয়ার সম্পত্তি আহাদ পাবে।
অপর পাশের লোক বলে,
তাহলে তুমি সব সম্পত্তির মালিক হলে কি করে ভাগিদার তো চলে এসেছে।
হাহা তা আমি জানি ভাইয়ার সব সম্পত্তির মালিক এখন আহাদ তাই তো আমি ওকে সে ৫ বছর বয়স থেকে মেডিসিনটা খাওয়াই।
কি বলছো মেডিসিন! কিসের মেডিসিন!
হ্যাঁ মেডিসিন,আসাদ শেখ কখনো কাঁচা কাজ করে না এতো সহজে তো আর আমি সম্পত্তি গুলো হাত ছাড়া করতে পারিনা তাই তো আহাদকে সেই ৫ বছর বয়স থেকে চকলেটের সাথে মেডিসিনটা মিশিয়ে খাওয়াচ্ছি।
এই মেডিসিনের কাজ কি?
মেডিসিনটা আস্তে আস্তে ওকে হিং’স্র করে তুলবে একটা সময় ওর ব্রে’ই’নের সকল স্না’য়ু নষ্ট হয়ে যাবে আর ও পা’গ’লে পরিণত হবে,হাহাহা ও পা’গ’ল হলেই তো ওর সব সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিতে পারবো।
আসাদের কথা গুলো শুনে আমার রুহু কেঁপে উঠে আসাদ সম্পত্তির জন্য এতোটা নিচে নামতে পারলো সম্পত্তির জন্য নিজের আপন ভাতিজাকে পা’গ’লে পরিণত করতে চায়,কিন্তু না আমি তা হতে দিবো না আমি আমার আহাদকে সুস্থ করে তুলবো।
আমি চুপিসারে আসাদের রুমের কাছ থেকে সরে আসি জগে পানি ভরে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে নিলে আসাদ পেছন থেকে আমার হাত ধরে ফেলে,আমাকে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের কাছে টেনে নেয় আমার হাত থেকে জগটা পড়ে যায় আর নিমেষেই তা ভে’ঙে চুরমার হয়ে যায়।
কি করছেন আসাদ ভাই ছাড়ুন আমায়।
কি করে ছাড়ি বলো তুমি যে আমার মনের ঘরে বসে আছো,সেই প্রথম দিন থেকেই আমার নজর তোমার উপর পড়েছে,তোমার মতো সুন্দরীর কাছ থেকে চোখ সরানোর সাহস হয়নি,মরিয়ম আমি তোমার প্রেমে পড়ে গেছি।
আসাদ ভাই আমি বিবাহিত,ছাড়ুন আমায়।
এটাই তো আফসোস তুমি বিবাহিত তাই তো তোমায় বিয়ে করতে পারবো না কিন্তু বাসর তো করতেই পারি।
বলেই আসাদ মরিয়মের হাত ধরে টেনে ওর রুমে নিয়ে এসে বিছানায় ফেলে দেয়,মরিয়ম উঠতে নিলে আসাদ ওর দু হাত বিছানার সাথে চেপে ধরে ওর গলায় মুখ গুঁজে দেয়,মরিয়ম আসাদের কাছে আকুতি মিনতি করছে কিন্তু আসাদ কিচ্ছুটি শুনছে না আসাদ মরিয়মের জামায় হাত দিতেই মরিয়ম স্ব জোরে আসাদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না লিভিংরুমে আসতেই আসাদ মরিয়মের পা ধরে টান দেয় আর মরিয়ম মেঝেতে মুখ থু’ব’ড়ে পড়ে।
মরিয়ম মুখে,পায়ে,কোমড়ে ভিষণ ব্যাথা পায় ওর মাঝে উঠে দাঁড়ানোর শক্তি নেই,আসাদ ক্রমশই মরিয়মের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে মরিয়ম অনেক কষ্টে পিছনের দিকে যাচ্ছে একটা সময় মরিয়মের দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে যায় তা দেখে আসাদ শয়’তা’নি হাসি দেয়,
আসাদ মরিয়মের খুব কাছে চলে আসে মরিয়মের গায়ে হাত দিতে নিলে মরিয়ম পাশে থাকা ফুলের টপটা দিয়ে স্ব জোরে আসাদের মাথায় আ’ঘা’ত করে আর মুহূর্তের মধ্যেই আসাদের মাথা ফে’টে র’ক্ত পড়তে শুরু করে,
আসাদ মাথা চে’পে ধরে ছটফট করতে করতে মা’রা যায়।
তার মানে!
হ্যাঁ আমিই আসাদকে খু’ন করেছি আর আমার খু’নে’র দায় আহাদ নিজের মাথায় নিয়েছে,সম্পূর্ণটা শুনো,
নিজের সামনে আসাদের লা’শ দেখে দেয়ালের সাথে মাথা ঠেকিয়ে থম মে’রে বসে আছি,কি হতে কি হয়ে গেলো কিচ্ছু বুঝতে পারলাম না আমি তো কেবল নিজেকে ওর হাত থেকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম ওকে মে’রে ফেলা তো আমার উদ্দেশ্য ছিল না।
হঠাৎ আহাদ দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে,আমি ওকে ধরে বুঝতে পারছি ও ভয়ে কাঁপছে ও হয়তো নিজ চোখে আসাদের মৃ’ত্যু দেখেছে,আমি আহাদকে বুকে জড়িয়ে ধরে আসাদের লা’শের দিকে তাকিয়ে আছি।
বেশ কিছুক্ষণ পর আহাদ আমার কাছ থেকে সরে এসে সেই টপটা হাতে নিয়ে বলে,
ছোট মা তুমি ভয় কেন পাচ্ছো চাচ্চুকে তো আমি মে’রেছি।
বাবা এসব কি বলছো!
হ্যাঁ ছোট মা তুমি মা’রো’নি সবাই জানবে চাচ্চুকে আমি মে’রে’ছি।
না আহাদ এ হয় না।
ছোট মা আমি আমার এক মাকে হারিয়েছি আরেক মাকে হারাতে চাই না তোমাকে আমার কসম তুমি এই কথা কাউকে জানতে দিবে না সবাই জানবে চাচ্চুকে আমি মে’রেছি।
না বাবা তা হয় না।
আমাদের কথার মাঝে আমরা কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনতে পাই আমি আহাদ মাথা ঘুরিয়ে দেখি আয়মান ভাই দাঁড়িয়ে আছে ওনার হাতের ব্যাগটা মেঝেতে পড়ে আছে,আয়মান ভাই দ্রুত আসাদের কাছে এসে আসাদকে উঠানোর চেষ্টা করে কিন্তু ম’রা মানুষ কি কখনো জীবিত হয়।
আয়মান আহাদের হাতে ফুলের টপটা দেখে অবাক হয়ে যায়।
তুমি! তুমি আমার ভাইকে মে’রে’ছো!
ইতোমধ্যে হামিদও চলে আসে।
হামিদ আমাকে ওভাবে বসে থাকতে দেখে আমাকে উঠিয়ে দাঁড় করিয়ে আমাকে আর আহাদকে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে।
আয়মান মানতে পারছে না আহাদ আসাদকে খু’ন করেছে,কেন আহাদ আসাদকে খু’ন করলো?
কিন্তু ও আহাদের থেকে আসাদকে বেশি ভালোবাসে ও ওর সন্তানের থেকে ভাইকে বেশি ভালোবাসে তাই আয়মান সিদ্ধান্ত নেয় আহাদকে পু’লি’শে দিবে।
আয়মান পু’লি’শ’কে কল দেয়,বেশ কিছুক্ষণ পর তারা ওদের বাড়িতে চলে আসে তারা এসে তদ’ন্ত শুরু করে আর শেষমেশ ওরা আহাদকে নিয়ে চলে যায় আমি আর হামিদ আহাদকে আটকে রাখতে পারিনি।
হামিদ আমাকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসে আমি তখনও আ’ত’ঙ্কে ছিলাম আমার শরীর ভয়ে কাঁপছিল।
হামিদ আমাকে ফ্রেস করিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে দিয়ে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আমার ভয় কাটানোর চেষ্টা করে একটা সময় আমি ডুকরে কেঁদে উঠি তখনকার সব ঘটনা হামিদকে খুলে বলি।
তুমি আসাদকে মে’রে’ছো!
হ্যাঁ আমার ছেলেটা আমাকে বাঁচানোর জন্য আমার দো’ষ নিজের ঘাড়ে নিয়েছে হামিদ কিছু করো আমার মাসুম বাচ্চাটাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও দয়া করে আমার ছেলেটাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।
তুমি চিন্তা করো না আমি এমন কিছু করবো যাতে করে সাপও ম’রে লাঠিও জেনো না ভা’ঙ্গে,তুমি দো’ষী সাব্যস্ত হবে না আহাদও নির্দোষ প্রমানিত হবে।
হামিদের কথায় আমি ভরসা পাই।
শুরু হয় কো’র্টে আমাদের সাথে আয়মান ভাইয়ের ল’ড়াই আমরা আহাদকে বাঁচানোর জন্য ল’ড়ছি আর উনি নিজের সন্তানকে নিজের ভাইয়ের খু’নি প্রমাণ করার জন্য ল’ড়ছেন।
শেষে জয় আমাদেরই হয়।
এরই মাঝে সিয়ামের বাবাও মা’রা যায় আমি সিয়ামকে আহাদের মতোই ভালোবাসি তাই আমরা সিয়াম এবং আহাদকে নিয়ে কানাডায় চলে আসি এখানে আহাদের ট্রিটমেন্ট করি আর জানতে পারি।
আসাদের দেওয়া মেডিসিন আহাদের ব্রেই’নে খুব বা’জে ভাবে প্রবাহ ফেলেছে মেডিসিনটা আহাদের ব্রেই’নের স্না’য়ু গুলো ৪০% দুর্বল করে ফেলেছে,স্না’য়ু গুলো দুর্বল হওয়ায় আহাদ ওর রাগ কন্ট্রোল করতে পারতো না হিং’স্র হয়ে উঠতো তাই সেখানকার ডক্টর ওকে একটা মেডিসিন দেয় এটার কাজ স্নায়ু গুলোকে সচল করে তোলা তাই যখনই আহাদ এই মেডিসিনটা খায় তখন ওর রাগ কমে আসে আর ও শান্ত হয়ে যায়,
আর হ্যাঁ ডক্টর বলে দিয়েছিল আহাদ যতদিন বাঁচবে ততদিনই ওকে এই মেডিসিনটা খেতে হবে নাহলে ও ব্রে’ইন স্টো’ক করে মা’রা যাবে।
তো বউমা পেয়েছো তোমার উওর।
ঐশী মাথা নাড়ায়।
তুমি কি জানো আহাদ তোমায় কেন এসব জানায়নি?
ঐশী না বোধক মাথা নাড়ায়।
ও তোমায় বলেনি কারণ ও ওর মায়ের কষ্ট গুলো তোমাকে জানাতে চায়নি,ওর বাবাকে তোমার সামনে খারাপ ব্যাক্তি হিসেবে তুলে ধরতে চায়নি,ওর চাচাকে চ’রি’ত্র’হী’ন হিসেবে প্রমাণ করতে চায়নি না তো ওর ছোট মাকে ওর চাচার খু’নি করতে চেয়েছে,ও নিজের পরিবারের মানুষকে ভালো রাখার জন্য তোমাকে ওর অতীত সম্মন্ধে কিচ্ছু জানায়নি।
#চলবে