#আমার_তোমাকে_প্রয়োজন💖
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_32
কপি নিষিদ্ধ ❌
আমি ভাইয়াকে ছোট বেলা থেকে চিনি,ভাইয়া আমার থেকে ২ বছরের বড়,আমার বয়স যখন ১ বছর তখন আমার মা মা’রা যায়,আমার বাবা ভাইয়াদের বাসায় ড্রাইভারের কাজ করতো,তো সে সুবাদে আমি প্রায়ই ভাইয়াদের বাসায় যেতাম ভাইয়ার মা অনেক ভালো ছিল,আমার তো মা ছিল না তাই আমি উনাকে মা বলে ডাকতাম উনিও আমায় নিজের ছেলের মতোই ভালোবাসতেন,উনাদের বাসায় গেলে আমাকে গোসল করিয়ে সুন্দর জামা পড়িয়ে দিতেন,ভাইয়াকে আর আমাকে একসাথে বসিয়ে খাইয়ে দিতেন,খাওয়া শেষ করে আমি আর ভাইয়া খেলতাম আর মা আমাদের প্রাণ ভরে দেখতো,মা সবসময় আমাকে তার ছোট ছেলে ভেবে ভালোবাসতো,সব ঠিক ছিল আমরা সবাই সুখেই ছিলাম কিন্তু একদিন,
একদিন কি?
মা মা’রা যায়,সেদিন আমি চিৎকার করে কেঁদেছিলাম বাবাকে জড়িয়ে খুব কেঁদেছিলাম,কাঁদতে কাঁদতে যখন ভাইয়ার দিকে চোখ পড়ে তখন ভাইয়াকে একদম শান্ত হয়ে বসে থাকতে দেখলাম সে যেন পাথর হয়ে গিয়েছিল একটা সময় ভাইয়া জ্ঞান হারিয়ে ফেলে,
আমি মায়ের ক’ব’রে মাটি দিতে পেরেছিলাম কিন্তু ভাইয়া পারেনি,মা মা’রা যাওয়ার ২ দিন পর ভাইয়ার জ্ঞান ফিরে জ্ঞান ফিরতেই ভাইয়া মাকে পা’গ’লের মতো খুঁজতে শুরু করে যখন উনি শুনে মা মা’রা গিয়েছে তখন উনি চিৎকার করে কেঁদে উঠে ঘরের সব কিন্তু ভে’ঙ্গে ফেলে আমরা কেউ তাকে আটকাতে পারেনি কিন্তু ছোট মা মানে ভাইয়ার খালামুনি উনাকে আমরা ছোট মা বলে ডাকি উনি এসেই ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে আর ভাইয়া শান্ত হয়ে যায় একটা সময় ভাইয়া ছোট মাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগে।
মা মা’রা যাওয়ার পর ভাইয়া খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো ছোটমা ভাইয়াকে ছেড়ে যাওয়ার সাহস পাচ্ছিলো না তাই উনি ভাইয়ার সাথে থেকে যায়,ছোট মার যত্নে ভাইয়া আস্তে আস্তে সুস্থ হতে শুরু করে কিন্তু আমি আমার হাসিখুশি ভাইটাকে হারিয়ে ফেলি,ভাইয়া কেমন যেন চুপচাপ হয়ে যায়,দিন যত যাচ্ছিল ভাইয়াও কঠোর হচ্ছিল,সব কিছু ঠিক থাকলেও বিপ’দ বাধেঁ সেদিন,
বিপ’দ কিসের বিপ’দ!
ভাইয়াকে সং’শো’ধ’নী কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।
কিহ!
হুম,একদিন আমি স্কুল থেকে সোজা ভাইয়ার বাসায় আসি কিন্তু বাড়িতে ঢুকে দেখি বাড়িতে অনেক পু’লি’শ এসেছে আর মেঝেতে ছোট চাচার লা’শ পড়ে আছে।
লা’শ!
হুম লা’শ,চাচার লা’শের সামনে আঙ্কেল মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিল,আর উনার থেকে কিছুটা দূরে ভাইয়া আর ছোটমা দাঁড়িয়ে ছিল,আমার বাবাও সেখানে ছিলো,আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই দুটো পু’লি’শ ভাইয়াকে নিয়ে যায়,সবার কথা শুনে বুঝতে পারি পু’লি’শ ভাইয়াকে সং’শো’ধ’নী কে’ন্দ্রে নিয়ে গেছে।
কিন্তু কেন?
এই কেনোর উওর আমি আজ অব্দি জানতে পারিনি,
ভাইয়া কখনোই এ বিষয়ে আমার সাথে কথা বলেনি আমি অনেক বার জানতে চেয়েছি কিন্তু ভাইয়া বরাবরের মতোই চুপ ছিল।
তাহলে আমরা কি করে জানবো,কে বলবে আমাদের?
সিয়াম অনেক ভেবে বলে,
ছোট মা,হ্যাঁ ছোট মা,সেদিনের ঘটনার সম্পর্কে ছোট মা নিশ্চয়ই কিছু জানে আমাদের ছোট মার কাছে যেতে হবে।
ছোট মা কোথায় থাকেন?
চট্টগ্রামে থাকেন।
আচ্ছা ঠিক আছে আমি কালই চট্টগ্রাম যাবো ছোটমার কাছে।
ঠিক আছে কাল নিয়ে যাবো।
না থাক আপনাকে যেতে হবে না।
আপনাকে একা ছাড়লে ভাইয়া আমাকে কে’টে কুঁচি কুঁচি করবে,আমি আপনাকে কাল চট্টগ্রামে নিয়ে যাবো,
এখন যেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।
সিয়াম ছাদ থেকে নেমে যায়।
ঐশী ছাদে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে রুমে চলে আসে।
ঐশী রুমে এসে বিছানা গুছিয়ে বালিশ ঠিক করে শুয়ে আহাদকে ভিডিও কল দেয়,আহাদ কল রিসিভ করে।
জান কেমন আছো?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো,আপনি এখনো ড্রেস চেঞ্জ করেননি?
মাএই কাজ শেষ করে হোটেলে ফিরেছি।
ওহ,ফ্রেশ হয়ে কল দিন।
আচ্ছা।
আহাদ কল কেটে জামা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় কিছুক্ষণ পর গোসল করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়,
টাওয়ালটা রেখে ঐশীকে কল দেয়,ঐশী সাথে সাথে কল রিসিভ করে যেন ও আহাদের কলেরই অপেক্ষায় ছিলাে।
সরি জান তোমাকে একটু বেশিই অপেক্ষা করতে হলো।
সমস্যা নেই,ডিনার করেছিলেন?
হুম তুমি?
হুম আমি আর ভাইয়া একসাথে ডিনার করেছি।
রোজা বাসায় নেই?
না ও ওর বাসায় গিয়েছে।
ওহ,ওয়েট তোমাকে একটা জিনিস দেখাই।
আহাদ ওর ব্যাগ থেকে এক জোড়া কানের দুল বের করে ঐশীকে দেখায়।
জান ইয়ারিংটা কেমন?
খুব সুন্দর।
হোটেলে আসার সময় ইয়ারিং জোড়ার উপর নজর পড়লো তাই দেরি না করে কিনে ফেললাম,ইয়ারিংটা পড়লে তোমাকে খুব সুন্দর লাগবে।
আহাদের কথায় ঐশী মুচকি হাসে।
জান তোমাকে অনেক মিস করছি।
আমিও আপনাকে অনেক মিস করছি।
মন চাইছে ছুটে তোমার কাছে চলে আসি কিন্তু সেটা তো সম্ভব না।
হুম অনেক সময় পরিস্থিতি আমাদের মাঝে দূরত্ব তৈরি করে দেয়।
হুম তবে সাত দিন পর এ দূরত্ব ঘুচে যাবে আমি তোমার কাছে চলে আসব।
হুম।
আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ঐশী কল কেটে দেয়।
সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে ভাবে,
আহাদ আপনার হয়তো বেদনাদায়ক অতীত রয়েছে যেটার সম্পর্কে আপনি আমায় কিছু জানাতে চান না কিন্তু আমি জানবো,কেন আপনাকে সং’শো’ধ’নী কেন্দ্রে যেতে হলো,কে চাচাকে খু’ন করলো,মেডিসিনের রহস্যই বা কি আর কেনই বা বাবার সাথে আপনি ঠিক মতো কথা বলেন না আপনাদের মাঝে কিসের দ্ব’ন্দ্ব,
কিভাবে এই দ্ব’ন্দ্ব তৈরি হলো?
আমার সব প্রশ্নের উত্তর একজনই দিতে পারবে আর সে হচ্ছে ছোট মা,আমার প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কাল যাবো ছোট মার কাছে।
ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় ঐশীর,হালকা ভাবে চোখ খুলে দেখে আহাদ ভিডিও কল দিয়েছে,ঐশী কল রিসিভ করে ফোনটা বালিশের সাথে কাত করে রাখে,
গুড মনিং জান।
ঐশী চোখ বন্ধ করে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে,
গুড মর্নিং।
কি হলো আমার জানটার এখনো ঘুম ভাঙ্গেনি?
আমি থাকলে ঠিক মতো ঘুমাতে পারতে তাহলে এতো বেলা অব্দি ঘুমাতে হতো না।
আপনি না থাকাতে ভালোমতো ঘুমাতে পেরেছি আপনি থাকতে তো আমাকে ঠিক মতো ঘুমাতেই দেন।
কি করি আমি?
আপনি আমাকে জ্বা’লাতন করেন।
আহাদ দাঁত চেপে হেসে বলে,
তাই বুঝি,তো আমি কিভাবে জ্বা’লাতন করি?
আপনি,
কথাটা বলতে যেয়েই ঐশীর হুঁশ আসে ভাগ্যিস হুঁশ এসেছিল নাহলে কি বলতে কি বলে ফেলতো।
কি জান বলো আমি কিভাবে জ্বা’লাতন করি।
উফফ রাখুন তো এসব কথা।
ঐশী কল কেটে দেয় আহাদ হাসতে হাসতে লুটোপুটি খায়।
হাহা আমার বউটা কতো বোকা।
সিয়াম রেডি হয়ে ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে পড়ে ঐশী নিচে এসে সিয়ামকে খাবার বেড়ে দিয়ে নিজের প্লেটেও খাবার তুলে নেয়,সিয়াম খেতে খেতে বলে,
ভাবি আমার অফিসে কিছু কাজ আছে আমি সেগুলো করে দুপুরে বাসায় আসবো আপনি রেডি হয়ে থাকবেন আমরা বাসা থেকে সোজা এয়ারপোর্টে যাবো।
আচ্ছা।
সিয়াম নাস্তা করে অফিসে চলে যায়,ঐশী ওর রুমে এসে আহাদকে কল দেয় কিন্তু আহাদের ফোন বিজি বলছে তাই ঐশী আর কল দেয় না কিছুক্ষণ পর আহাদ কল দেয় ঐশী কল রিসিভ করে।
সরি জান একটা ইমপোর্টেন কল এসেছিলো তাই,
আচ্ছা সমস্যা নেই আমি কিছু মনে করিনি,খেয়েছেন কিছু?
হুম,তুমি নাস্তা করেছো?
হুম,হোটেলে নাকি মিটিং এ?
হোটেলে,একটু পর বের হবো।
ওহ,আচ্ছা মিটিং শেষ করে কল দিয়েন।
আচ্ছা।
দুপুরে ঐশী গোসল করে দুপুরের খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে রেডি হয়ে নেয়,ঐশী আজ নীল রংয়ের থ্রি পিস পড়েছে,সাজ বলতে জাস্ট ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়েছে আর কিছু না।
ঐশী রুমে বসে সিয়ামের জন্য অপেক্ষা করছে।
সিয়াম ইতোমধ্যে বাসায় এসে পড়েছে ও ওর রুমে রেডি হচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর সিয়াম ঐশীর রুমে এসে নক করে বলে,
ভাবি আসেন।
ঐশী ওর ব্যাগটা হাতে তুলে রুম থেকে বের হয়ে বাহির থেকে দরজা লাগিয়ে নিচে চলে আসে,সিয়াম গাড়িতে বসে ঐশীর জন্য ওয়েট করছিলো,ঐশী গাড়িতে উঠে বসতেই ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেয়।
বেশ কিছুক্ষণ পর ওরা এয়ারপোর্টে যেয়ে পৌঁছায়,
সেখানে সব ফর্মালিটিস পূরণ করে প্লেনে উঠে বসে।
ঐশী জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে উপর থেকে সব কিছু কতো ছোট এবং সুন্দর লাগছে।
বাহিরের থেকে চোখ সরিয়ে ঐশী চোখ বন্ধ করে,
“হে আল্লাহ অনেক আশা নিয়ে ছোট মার কাছে যাচ্ছি দয়া করে আমায় নিরাশ করিয়েন না।”
#চলবে
#আমার_তোমাকে_প্রয়োজন💖
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_33
কপি নিষিদ্ধ ❌
৪ টায় ঐশী সিয়াম চট্টগ্রামে এসে পৌঁছায়,ওরা এখন গাড়িতে বসে আছে ছোট মার বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা দিয়েছে,সিয়াম ছোট মাকে কল দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে ওরা আসছে,কিছুক্ষণ পরই ওরা ছোট মার বাসায় চলে আসে ঐশী গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায় চোখ তুলে তাকাতেই অনেক সুন্দর একটা বাড়ি দেখতে পায় বাড়িটা একদম রাজপ্রাসাদের মতো।
সিয়াম ভাড়া মিটিয়ে ঐশীকে সাথে নিয়ে বড় দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে,ঐশী সামনে তাকিয়ে দেখে সদর দরজার সামনে একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা এবং পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে।
মহিলার চেহারায় এখনো সৌন্দর্য ফুটে আছে,তিনি গায়ে জড়িয়েছেন আকাশী রঙের জামদানী শাড়ি,
গলায়,কানে,হাতে পড়ে আছেন স্বর্ণের গহণা,মাথায় তার আধ পাকা চুল।
ঐশী উনাদের দেখে বুঝতে পেরেছে এটা ছোট মা আর ছোট মার স্বামী,ঐশী মাথায় ওড়না দেয়,ওনাদের কাছে এসে ওনাদের সালাম করে,ছোট মা ঐশীর থুতনি ধরে মুখটা একটু উঁচু করে বলে,
মাশাআল্লাহ বউমা তুমি অনেক সুন্দর,আসো বউমা ভেতরে আসো।
ছোট মা ওদের ভেতরে নিয়ে আসে।
সার্ভেন্টদের ওদের রুম দেখিয়ে দিতে বলে,সিয়াম ঐশী ওদের রুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসে ওরা সবাই লিভিং রুমের সোফায় বসে।
বাবা সিয়াম তোমার বউ আসলোনা যে?
ছোট মা ও ওর বাবার বাড়িতে গিয়েছে।
ওহ আর আহাদ?
ভাইয়া কাজের জন্য সাত দিনের জন্য ঢাকার বাহিরে গিয়েছে।
ওহ।
ছোট মা এবার ঐশীকে বলে,
তোমাকে দেখার খুব ইচ্ছে ছিলো আমি অসুস্থ ছিলাম তাই তোমাদের বিয়েতে যেতে পারিনি,আর উনার কাজ থাকায় সিয়ামের বিয়েতে যেতে পারিনি তোমরা কিছু মনে করোনি তো?
না ছোট মা আমরা কিছু মনে করিনি।
আহাদকে কতো করে বললাম তোমাকে যেন নিয়ে আসে কিন্তু ও একা একাই চলে আসে।
উনি এর আগেও এসেছিলেন?
কেন তুমি জানো না ও তো দশ দিন পর পরই আমার কাছে আসে আমাদের না দেখলে নাকি ওর ভালো লাগে না তাই তো আমার পা’গ’ল ছেলেটা আমাদের কাছে ছুটে আসে।
ওহ।
আমার কাছে আসলেই তোমার প্রশংসা করে ছোট মা ঐশী এটা করে ওটা করে আমার যত্ন করে আমাকে ভালোবাসে মানে দিন রাত শুধু তোমারই প্রশংসা করে আমার ছেলেটা তোমাকে অনেক ভালোবাসে।
কিন্তু আপনার ছেলে যে আমাকে ধোয়াশার মাঝে রেখেছে।
মানে?
সে আমাকে তার অতীতের সম্পর্কে কিছু বলেনি এমনকি আপনার সম্মন্ধেও কিছু বলেনি।
আচ্ছা আমি তো উনার স্ত্রী আমার কি ওনার অতীত জানার অধিকার নেই?
ছোট মা আমি আপনার কাছে আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে এসেছি।
প্রশ্ন!
হ্যাঁ প্রশ্ন,ছোট মা আহাদ কিসের মেডিসিন খায়?
আদোও কি মেডিসিন খেলে রাগ কমে,আহাদ এতো রেগে যান কেন,রাগলে এতো হিং’স্র হয়ে উঠেন কেন,
কেন সে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে আর কেনই বা মেডিসিনই ওনার রাগ কমাতে পারে,এই মেডিসিনের রহস্য কি,কেন আহাদকে সং’শো’ধ’নী কেন্দ্রে যেতে হলো,কে চাচাকে খু’ন করলো,মায়ের মৃত্যু বা হলো কিভাবে আর কেনই বা বাবার সাথে আহাদ ঠিক মতো কথা বলেন না উনাদের মাঝে কিসের দ্ব’ন্দ্ব?
কিভাবে এই দ্ব’ন্দ্ব তৈরি হলো?
বলুন ছোট মা আমি আমার প্রশ্নের উত্তর চাই প্লিজ ছোট মা বলুন,প্লিজ বলুন।
শান্ত হও বউমা আমি তোমার কৌতূহল,ভয় বুঝতে পেরেছি চিন্তা করো না তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিবো আমি তোমাকে আর ধোঁয়াশার মাঝে রাখবো না আহাদের অতীত সম্পর্কে তোমার জানার অধিকার আছে,তোমার থেকে আর কিচ্ছু লুকাবো না কিন্তু তোমাকে আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে আমি রাতে তোমাকে সব বলবো।
ঠিক আছে ছোট মা আমি অপেক্ষা করবো।
যাও এখন তোমার রুমে যেয়ে রেস্ট করো রাতে কথা হবে।
ছোট মা সোফা ছেড়ে উঠে ওনার রুমে চলে যান।
ঐশী ওর রুমে চলে আসে।
রুমে আসতেই আহাদ কল দেয়,ঐশী কল রিসিভ করে।
আমার জানটা কি করছে?
এই তো বসে আছি আপনি কি করছেন?
আর কি করবো কাজ করছি কবে যে এ কাজ শেষ হবে।
ধৈর্য ধরুন,ধৈর্যের ফল মিষ্টি হয়।
তাই বুঝি আমি সেই মিষ্টি খেতে চাই।
এই আমি কিন্তু সেটা মিন করিনি।
তাতে আমার কি আমার তো সেই মিষ্টিই চাই।
ধ্যাত।
_
এখন বাজে সাতটা ঐশীর কিছু ভালো লাগছে না ক্লান্ত লাগছে ও বিছানায় শুইয়ে পড়ে শরীর ক্লান্ত থাকায় নিমেষেই ঘুমিয়ে পড়ে।
ঐশীর ঘুম ভাঙ্গে ৯ টায় ও বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসে লিভিংরুমে আঙ্কেল আর সিয়াম বসে ছিল ছোট মা ওনার রুমে আছেন ঐশী ওনাদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে।
১০ টার দিকে ওরা সবাই খেতে বসে খাওয়া দাওয়া শেষ করে ওরা আবার লিভিং রুমে চলে আসে।
ছোট মা ওনার রুম থেকে একটা এলবাম নিয়ে আসেন সেন্টার টেবিলের উপর এলবামটা রেখে একটা ছবি বের করে।
এ দেখো বউমা এই হলেন আছিয়া বেগম তোমার শ্বাশুড়ি মা।
বাহ উনি তো অনেক সুন্দর ছিলেন।
হুম আপা অনেক সুন্দর ছিলেন উনার পিছে যে কতো ছেলে ঘুরেছে তার হিসেব নেই কিন্তু শেষ মেষ উনি দুলাভাইয়ের প্রেমে পড়েন।
উনারা ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন?
হুম,ছয় বছর পর উনাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পায়।
ছোট মা আরেকটা ছবি বের করে বলেন,
আসাদ শেখ আহাদের চাচা।
উনি একে একে উনার বিয়ের ছবি,আছিয়া আয়মানের বিয়ের ছবি,উনার ছেলের ছবি,আছিয়ার সাথে উনার ছবি,আহাদ সিয়ামের ছোটবেলার ছবি দেখায়।
তুমি হয়তো আমার নাম জানো না,আমার নাম মরিয়ম বেগম আর উনি আমার স্বামী হামিদ খান,আমাদের একটা ছেলে আছে ও বর্তমানে বিদেশে আছে।
ওহ।
বউমা এবার আমি তোমার প্রশ্নের উওর দিবো।
উনি কিছু বলবে তার আগেই ঐশীর ফোনে কল আসে ঐশী ফোন হাতে তুলে দেখে আহাদ কল করেছে।
ছোট মা আহাদ কল করেছে উনি জানেন না আমি এখানে এসেছি এখন কি করবো?
কল রিসিভ করে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলো।
আচ্ছা।
ঐশী কল রিসিভ করে।
জান কল রিসিভ করতে এতো লেট হলো কেন?
আসলে ঘুমিয়ে ছিলাম একটু অসুস্থ বোধ করছিলাম তাই চোখে ঘুম চলে এসেছিলো আমার এখনও খুব ঘুম পাচ্ছে কাল কথা বলি।
আচ্ছা বেশি খারাপ লাগলে মেডিসিন খেয়ে নিও।
আচ্ছা।
নিজের যত্ন নিতে ভুলবে না।
আচ্ছা।
ঐশী কল কেটে দেয়।
হ্যাঁ ছোট মা বলুন।
আমি শুরু থেকে শুরু করছি।
আমার নাম মরিয়ম বেগম,আমি পেশায় উকিল,
উনিও পেশায় উকিল আমরাও ভালোবেসে বিয়ে করেছি,আমি আর আপা আমরা দু বোন,আপন বলতে তখন দুনিয়াতে কেবল আপা আর হামিদই ছিল।
আপা যখন ভার্সিটিতে অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিল তখন আয়মান ভাই ঐ ভার্সিটিতেই শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন,আয়মান ভাই আপাকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেন,আস্তে আস্তে আপাকে ইমপ্রেস করতে শুরু করে একটা সময় ভাইয়ার ডাকে আপা সাড়া না দিয়ে থাকতে পারে না আস্তে আস্তে কথা বলা শুরু হয় তারপর প্রেম।
আমাদেরও বাবা মা ছিল না আয়মান ভাইয়েরও বাবা মা ছিল না ওনার আপন বলতে শুধু এক ভাই ছিল উনি ওনার ভাইকে ছোট থেকে মানুষ করেছেন,আয়মান ভাই ওনার ভাইকে অনেক ভালোবাসতেন।
দেখতে দেখতে কেটে যায় অনেক বছর আপার পড়াশোনাও শেষ হয় ভাইয়াও একটা প্রাইভেট কলেজে প্রফেশর হয়ে যায় একটা সময় ওনারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয় আমরাও তাতে আপত্তি করি না,
ওনাদের কাজি অফিসে বিয়ে পড়ানো হয়।
সেদিন আপার ঠোঁটে প্রাপ্তির হাসি ছিল সেদিন আপা খুব খুশি ছিলেন কিন্তু ওনার এই হাসি খুশি সময়টা দীর্ঘস্থায়ী হলো না।
#চলবে