আমার তোমাকে প্রয়োজন পর্ব-১৬+১৭

0
1437

#আমার_তোমাকে_প্রয়োজন💖
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_16

কপি নিষিদ্ধ ❌

রুমের লাইট জালাতেই আহাদ থমকে যায়।
পুরো রুম রংবেরঙের ফুল,বেলুন,ফেয়রি লাইট দিয়ে সাজানো হয়েছে,আহাদ সামনে তাকিয়ে আরো বেশি অবাক হয়,বারান্দা থেকে কালো শাড়ী পরিহিত রমনী বেরিয়ে আসে,সে আহাদের কাছে এসে চোখ তুলে আহাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।

কালো শাড়ীতে ঐশীকে একটু বেশিই আবেদনময়ী লাগছে,ঐশী আহাদের পাশ কেটে দরজার কাছে যেয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে পুনরায় আহাদের সামনে এসে দাঁড়ায়,আহাদ ঐশীর দিকে একপলকে তাকিয়ে আছে চোখের পলক যেন পড়ছেই না।

ঐশী আহাদকে জড়িয়ে ধরায় আহাদ অবাক হয়ে যায়,
ঐশী আহাদের বুকে মাথা দিয়ে আহাদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,আহাদও ঐশীকে জড়িয়ে ধরে।

ঐশী আহাদের বুক থেকে মাথা তুলে আহাদের গলা জড়িয়ে ধরে,মুচকি হেসে গেয়ে উঠে,
Main jaan ye vaar doon
Har jeet bhi haar doon
Keemat ho koi tujhe
Beinteha pyaar doon.(2)

আহাদের গলা থেকে হাত নামিয়ে ঘুরে আহাদের হাত নিজের কোমড়ে রাখে,আহাদ ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে,
ঐশী আহাদের হাতের উপর হাত রাখে,আহাদ ঐশীর গলায় ঠোঁট ছোঁয়ায়,ঐশী কেঁপে উঠে বলে,
Saari hadein maine meri
Ab maine tod di
Dekar mujhe pataa
Awaargi ban gaye

Haan hasi ban gaye
Haan nami ban gaye
Tum mere aasmaan
Meri zameen ban gaye

Haan aa.. o..

আহাদ ঐশীর হাত ধরে ঘুরিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়,আহাদ একহাত দিয়ে ঐশীর হাত ধরে আর অন্য হাত দিয়ে ঐশীর কোমড় ধরে,ঐশী আহাদের কাঁধে হাত রাখে,দুলতে দুলতে বলে,
Kya khoob rab ne kiya
Bin maange itna diya
Warna hai milta kahaan
Hum kaafiron ko khuda.(2)

আহাদ ঐশীর হাত ধরে ঘুরায়,
Hasratein ab meri
Tumse hai jaa mili
Tum duaa ab meri
Aakhiri ban gaye

Haan hasi ban gaye
Haan nami ban gaye
Tum mere aasmaan
Meri zameen ban gaye.

ঐশীর গান শেষ হয়,আহাদ ঐশীর কোমড় জড়িয়ে ধরে আছে,আহাদ ঐশীর চুলের ভাঁজে হাত ডুবিয়ে ঐশীর কাছে চলে আসে,একদম কাছাকাছি চলে আসে,
আহাদ চোখ বন্ধ করে ঐশীর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবাতে নিলে,
ঐশী কোমড়ে গুঁজে রাখা রুমাল বের করে আহাদের নাকে চেপে ধরে,নাকে ক্লোরোফ্রোম মেশানো রুমাল চেপে ধরায় আহাদ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

ঐশী আহাদকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে,আহাদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে কাবার্ড থেকে বোরকা বের করে পড়ে নেয়,আহাদের দিকে একবার তাকিয়ে দরজা খুলে বের হয়ে যায়।

ঐশী সার্ভেন্টদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়,মেইন গেইট দিয়ে বের হওয়ার সময় একজন গার্ড ঐশীকে পেছন থেকে ডাক দেয়,
এই মেয়ে কে তুমি?

ঐশী পেছনে ফিরে,নিকাব পড়া ছিল তাই গার্ড ওর মুখ দেখতে পারেনি।
ঐশী গলার স্বর পাল্টে বলে,
সাহেব আমার সোওয়ামী এহানে কামে আইছে,হ্যায় আমারে কইছে বাসার থেইকা হ্যার লেইগা গামছা লইয়া আইতে তাই আমি এহানে আইয়া তারে গামছা দিয়া গেছি,এহোন কি আমি যামু?

হ্যাঁ যাও।

আইচ্ছা সাহেব।

ঐশী মেইন গেট থেকে বের হয়ে কিছুটা দূরে গিয়ে পেছনে ফিরে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে বুকে হাত দিয়ে নিশ্বাস নেয়।
যাক বাবা এতগুলো গার্ডের চোখ ফাঁকি দিয়ে বের হতে পেরেছি,ভাগ্যিস বোরকা পড়েছি না হলে তো গার্ডটা আমাকে চিনে ফেলতো।
আহাদ শেখ আপনার এতো গুলো গার্ড আমাকে আটকাতে পারিনি,আজ আমি মুক্ত।
আপনার বাড়ি থেকে চলে এসেছি এবার আপনার জীবন থেকেও চলে যাবো।
ঐশী সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে শুরু করে।
কিছুটা দূরে গিয়ে পড়নের বোরকা আর নিকাব খুলে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়,ওর কাছে টাকা নেই তাই হেঁটে হেঁটেই বাসস্ট্যান্ডে যেতে হবে।

___

সিয়াম হন্তদন্ত হয়ে আহাদের বাড়িতে আসে,
সিয়াম আহাদের রুমে যেয়ে দেখে সেখানে আহাদ নেই,
ও সার্ভেন্টদের আহাদের কথা জিজ্ঞেস করে তারা বলে আহাদ কোথায় তারা জানে না,সিয়াম আহাদকে পুরো বাড়িতে খুঁজেছে কিন্তু কোথাও পায়নি ছাদ থেকে নেমে নিচে যাওয়ার সময় ঐশীর রুমটা চোখে পড়ে,সিয়ামে ভাবে “স্যারকে সব জায়গাতেই খুঁজলাম কিন্তু উনাকে তো ম্যামের রুমে খুঁজিনি,স্যার ম্যামের রুমে নেই তো?

সিয়াম দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবনায় পড়ে যায় বুঝতে পারছে না নক করবে নাকি করবে না,
নক করলে যদি স্যার রেগে যায় কিন্তু স্যারকে খবরটা দেওয়াও জরুরি।
সিয়াম দোটানায় পড়ে গেল।
শেষমেশ দরজায় নক করার সিদ্ধান্ত নিলো।

সিয়াম নক করার জন্য দরজায় হাত দিতেই দরজা খুলে যায়,দরজা খুলতেই সিয়াম হা হয়ে রয়,রুমটা কতো সুন্দর করে সাজানো হয়েছে,এতো সাজসজ্জার মাঝে সিয়ামের চোখ পড়ে আহাদের উপর আহাদকে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে সিয়াম দ্রুত আহাদের কাছে আসে,
স্যার উঠুন,স্যার ঘুমাচ্ছন,স্যার আপনার সাথে জরুরি কথা আছে প্লিজ স্যার উঠুন।

অনেকক্ষণ ডাকার পরও আহাদ না উঠায় সিয়ামের খটকা লাগে।
স্যার তো কখনো এতোটা গভীর ঘুমে থাকে না,আজ কি হলো এতো ডাকার পরও স্যার উঠছেন না কেন?
সিয়াম কিছু একটা ভেবে আহাদের চোয়াল ধরতেই বুঝতে পারে আহাদ অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।

স্যার সেন্সলেস অবস্থায় পড়ে আছে,ম্যাম কোথায়?

সিয়াম ওয়াশরুম বারান্দা চেক করে ঐশী কোথাও নেই।

ওহ নো ম্যাম পালিয়েছেন!

সিয়াম দ্রুত আহাদের কাছে গিয়ে ওর চোখে মুখে পানির ছিটা দেয়,কিছুক্ষণ পরই আহাদ পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়,আহাদকে চোখ মেলতে দেখে সিয়াম আহাদকে উঠতে হেল্প করে।
কিছুক্ষণ পর আহাদ স্বাভাবিক হয়,
সিয়ামকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে,
তুমি এখানে?

আহাদ আশে পাশে তাকিয়ে বলে,
ঐশী কোথায়?

আহাদের কথায় সিয়াম ভয়ে ভয়ে বলে,
স্যার ম্যাম পালিয়েছেন।

ওয়াট!

জ্ব..জ্বী স্যার।

আহাদ বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় বারান্দা ওয়াশরুম চেক করে দেখে ঐশী কোথাও নেই।

আহাদ রেগে সিয়ামকে জিজ্ঞেস করে,
সিয়াম ঐশী কোথায়?

সিয়াম ভয়ে ভয়ে বলে,
স্যার আমি জানি না,আমি আপনাকে অনেকক্ষণ যাবৎ কল দিচ্ছিলাম কিন্তু আপনি কল রিসিভ করেননি তাই আমি বাসায় আসি,আপনাকে আপনার রুমে এমনকি পুরো বাড়িতে খুঁজি কিন্তু কোথাও পায়নি শেষে বের হওয়ার সময় ম্যামের রুম চোখে পড়ে তাই দরজায় নক করি,দরজায় হাত রাখতেই দরজা খুলে যায় আর আপনাকে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখি আপনাকে অনেকক্ষণ ডাকি কিন্তু আপনার সাড়াশব্দ না পেয়ে আপনার চোয়ালে হাত রাখতেই বুঝতে পারি আপনি জ্ঞান হারিয়েছেন,ম্যামকে রুমে না পেয়ে আপনার জ্ঞান ফেরাই,স্যার হয়তো ম্যাম আপনাকে অজ্ঞান করে পালিয়েছেন।

সিয়ামের কথা কানে যেতেই আহাদ মাথা চেপে ধরে,
আর মনে পড়ে যায় কিছুক্ষণ আগের ঘটনা,ও বুঝতে পারে ঐশীই ওকে অজ্ঞান করেছে।
আহাদ সামনে তাকাতেই মেঝেতে একটা রুমাল পড়ে থাকতে দেখে বুঝে যায় ঐশী ক্লোরোফ্রোম মেশানো রুমাল দিয়ে ওকে অজ্ঞান করেছে।

ঐশীর কাজে আহাদের রাগ উঠে যায়,রাগে আহাদের চোখ লাল হয়ে যায় কপালের ঘাড়ের র’গ ফুলে উঠে,
আহাদ আপনমনে বিড়বিড় করে বলে,
ছলনায়,জান আমার সাথে ছলনায় করলে,আমি সব স’হ্য করতে পারি কিন্তু ছলনায় আর বিশ্বাস’ঘা’ত’ক’তা স’হ্য করতে পারি না,তুমি কি ভেবেছো এখান থেকে পালিয়ে যেতে পারবে,না জান তোমাকে আমি পালাত থেকে হলেও খুঁজে বের করবো।

আহাদ সিয়ামের দিকে তাকিয়ে বলে,
সব সার্ভেন্ট,গার্ডদের হল রুমে আসতে বলো।

ওকে স্যার।

সিয়াম নিচে চলে যায়,সবাইকে হল রুমে জড়ো হতে বলে,সব গার্ড,সার্ভেন্ট হল রুমে এসে জড়ো হয়।

আহাদ হাতে রি’ভ’ল’বার নিয়ে নিচে আসে।
নিচে এসে নিজের চেয়ারে বসে।
সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে গম্ভীর স্বরে বলে,
ঐশী কোথায়?

আহাদের কথায় সবাই চুপ করে রয়,
সবার মনে একটাই প্রশ্ন জাগে,”ম্যাম কোথায় মানে”?

আহাদ আবারও গম্ভীর স্বরে বলে,
এতো গুলো সার্ভেন্ট গার্ডদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঐশী পালালো কি করে?

আহাদের কথায় সবাই চমকে উঠে।
ম্যাম পালিয়েছেন!
সবাই নিজেদের মধ্যে বলাবলি করেছে,
ম্যাম পালিয়েছেন,কিন্তু কখন,কিভাবে?

আহাদ সবার দিকে তাকিয়ে রেগে সামনে থাকা ফুলের টপটায় গু’লি করে মুহূর্তের মধ্যে টপটা ভে’ঙ্গে যায়, গু’লির শব্দে সবাই কেঁপে উঠে।

সিয়াম আমার কথা হয়তো ওদের কানে যাচ্ছে না,
আরো কয়েকটা বু’লে’ট নিয়ে আসো সব কটাকে খ’ত’ম করে দেই।

ওকে স্যার।

সিয়াম যেতে নিলেই সবাই দু হাঁটু গেড়ে বসে মিনতি করে বলে,
স্যার আমাদের মা’রবেন না,আমরা জানি না ম্যাডাম কোথায় গিয়েছেন,প্লিজ স্যার আমাদের প্রাণ ভিক্ষা দিন।

একটা জলজ্যান্ত মানুষ এতো গুলো গার্ড সার্ভেন্টের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালায় কি করে,তোমাদের কি শুয়ে বসে থাকার জন্য টাকা দেই,বলো।

সবাই মাথা নিচু করে ফেলে।

সিয়াম গাড়ি বের করো আমাদের বের হতে হবে।

আহাদ উঠতেই একটা গার্ড বলে,
স্যার আনুমানিক বিশ মিনিট আগে একটা বোরকা পড়া মেয়ে বের হয়েছিল,উনি ম্যাম নয়তো?

আহাদ ভ্রু কুঁচকে বলে,
বোরকা পড়া মেয়ে।
আহাদ কিছু একটা ভেবে সিয়ামকে ওর ল্যাপটপ এনে দিতে বলে,সিয়াম আহাদের রুম থেকে ল্যাপটপ নিয়ে আসে।
আহাদ ভিডিও ফুটেজে দেখতে পায় ঐশী বোরকা পড়ে ওর রুম থেকে বের হয়ে কিভাবে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বের হয়েছে,মেইন গেইটের সামনে গার্ডের আর ঐশীর কথাকোপনের দৃশ্যও দেখতে পায়।
ল্যাপটপ অফ করে বসা থেকে উঠে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় আহাদ।

আহাদ গাড়িতে বসে ফুল স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে,
ওর পিছনে সিয়ামের গাড়ি আর সিয়ামের পিছনে
গার্ডদের গাড়ি।

হাঁটতে হাঁটতে ঐশীর পা ব্যাথা হয়ে গেছে।
উফফ পা ব্যাথা হয়ে গেছে,এখানেই তো বাসস্ট্যান্ড ছিল কোথায় গেল,আরেকটু সামনে যেয়ে দেখি।
শাড়ীর কুঁচি ধরে কিছুটা জোরে হাঁটছে ঐশী।
একটু সামনে যেতেই থেমে যায় ঐশী,
সামনে তাকাতেই ভয়ে ঢোক গিলে।

#চলবে

#আমার_তোমাকে_প্রয়োজন💖
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_17

কপি নিষিদ্ধ ❌

সামনে তাকাতেই ভয়ে ঢোক গিলে ঐশী।

ঐশীর সামনে সাতটা ছেলে বাইকে বসে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

ছেলেগুলো জারিফের লোক ওরা ক্লাবে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলো ওরা ঐশীর পাশ কাটিয়ে যেতেই একজনের চোখ পড়ে ঐশীর উপর,ও সবাইকে বাইক থামাতে বললে সবাই বাইক থামায়।

কি হয়েছে বাইক থামাতে বললি কেন?

ঐ দেখ আহাদ শেখের গার্লফ্রেন্ড যাচ্ছে,
খবরটা বসকে দেয়া যাক।
ঐ ছেলেটা ওদের বস জারিফকে কল দেয়।
জারিফ কল রিসিভ করে।
হ্যাঁ বলো।

বস আমরা আহাদ শেখের গার্লফ্রেন্ডকে দেখেছি।

সাথে কি আহাদ আছে?

না বস একা একা হাঁটছে।

হাহাহা এটাই সুযোগ আহাদকে সা’য়ে’স্তা করার,
ঐ মেয়েটাকে তুলে নিয়ে আসো।

ওকে বস।

ওরা জারিফের কথা মতো ঐশীর পিছু নেয়।

ওরা ঐশীর সামনে এসে বাইক থামায়।

ঐশী ওদের দেখে ঘা’বড়ে যায়,ওরা বাইক থেকে নেমে দাঁড়ায়,ওরা এক পা এক পা করে ঐশীর দিকে এগোচ্ছে,ঐশী পেছাতে পেছাতে বলে,
কারা আপনারা,আমার দিকে এগোচ্ছেন কেন?

আমরা জারিফ স্যারের লোক।

কি চাই আপনাদের?

ওদের মধ্যে একজন ঐশীর হাত ধরে বলে,
আপনাকে।

ঐশী হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে,
ছাড়ুন আমাকে,ছাড়ুন।

একটা পর্যায়ে ঐশী হাত ছাড়িয়ে ডান দিকে দৌড় দেয় ছেলেগুলোও বাইকে চড়ে ওর পিছু নেয়।

ঐশী যতোটা দ্রুত সম্ভব দৌড়াচ্ছে,ছেলে গুলোও ওর পিছনে আসছে,ঐশী দৌড়াতে দৌড়াতে মেইন রোডে চলে আসে,ঐশী একবার সামনে তাকাচ্ছে তো আর একবার পেছনে তাকাচ্ছে।

দৌড়াতে দৌড়াতে একটা গাড়ির সাথে ঐশীর ধাক্কা লাগে ঐশী রোডে পড়ে যায়,গাড়িটি যথাসময়ে ব্রেক করেছিলো কিন্তু ঐশী নিজের ব্যালেন্স রাখতে পারেনি তাই গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগেছে।

ঐশী পিঠে,কোমড়ে,কনুইতে ব্যাথা পেয়েছে,ব্যাথায় চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে,হঠাৎ ছেলেগুলোর কথা মনে পড়তেই ঐশী চোখ খোলে,আর চোখ খুলতেই নিজের সামনে এক হাঁটু গেড়ে আহাদকে বসে থাকতে দেখে,আহাদকে দেখে ঐশী ভয়ে সিটিয়ে যায়।
আহাদ ঐশীকে তুলে দাঁড় করায়,ছেলে গুলোও ইতোমধ্যে চলে এসেছে,ওরা আহাদকে দেখে বাইক থেকে নেমে দাঁড়ায়।

ঐশী ওদেরকে দেখে আহাদের পেছনে যেয়ে শার্ট খামচে ধরে,আহাদ মাথা ঘুরিয়ে ঐশীর দিকে তাকিয়ে,
সামনের ছেলেগুলোর দিকে তাকায়।
তোরা কার লোক?

জারিফ স্যারের।

ওর পিছু নিয়েছিস কেন?

ওনাকে আমাদের বসের কাছে নিয়ে যাবো।

ওহ তাই।
আহাদ ঐশীর হাত ধরে সামনে এনে বলে,
নিয়ে যায়।

ওদের মধ্যে একজন আহাদের কাছে এসে ঐশীর হাত ধরতে নিলে আহাদ ওর বুকে লা’ঠি দেয়,লোকটা ছিটকে দূরে যেয়ে পরে,ওরা সবাই এবার একসাথে আহাদের উপর হাম’লা করে,আহাদ সবকটাকে মা’রতে শুরু করে,ওদের অবস্থা খারাপ করে দেয়,ওরা রোডে পড়ে রয়,আহাদ পকেট থেকে রি’ভ’ল’বা’র বের করে সবকটার বুকে গু’লি করে দেয়,ওদের নি’থ’র দেহ রোডে পড়ে রয়।

আহাদ পেছনে ঘুরে,ঐশী এতক্ষণ ভয়ে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিল,আহাদ হেঁটে ঐশীর কাছে আসে,
ঐশী আহাদকে দেখে আরো ভয় পেয়ে আর ঐশীকে দেখে আহাদের রাগ উঠে যায়,আহাদ খপ করে ঐশীর হাত ধরে ফেলে,আহাদ অনেক শক্ত করে ঐশীর হাত ধরেছে,ঐশীর খুব ব্যাথা লাগছে কিন্তু ভয়ে আহাদকে কিছু বলতে পারছে না।

আহাদ ঐশীকে টেনে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে,ডোর,উইন্ডো লক করে গাড়ি স্টার্ট দেয়,
ও ফুল স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে,এত স্পিডে গাড়ি চলায়
ঐশীর ভিষণ ভয় লাগছে ও ভয়ে বারবার আড় চোখে আহাদের দিকে তাকাচ্ছে,কিন্তু আহাদ একটি বারের জন্যও ঐশীর দিকে তাকায়নি ও সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভ করছে।

মেনশনে আসতেই আহাদ গাড়ি থেকে নেমে ঐশীকে টেনে গাড়ি থেকে নামিয়ে হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
আহাদ সব সার্ভেন্টদের সামনে ঐশীকে টেনে উপরে নিয়ে যাচ্ছে,ঐশী আহাদের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু আহাদের সাথে পেরে উঠছে না।

আহাদ ঐশীকে রুমে এনে হাত ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দেয় ঐশী ছিটকে কাবার্ডের সাথে আ’ঘা’ত পায়,ওর কপাল কে’টে যায়,ঐশী কপালে হাত দিয়ে দেখে র’ক্ত বের হচ্ছে।

আহাদ পড়নের বেল্ট খুলে হাতে পেঁচিয়ে ঐশীর দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকায়,ঐশী ভয়ে ভয়ে আহাদের দিকে তাকায়।
আহাদ হু’ঙ্কা’র দিয়ে বলে,”পালিয়েছিলে কেন?”

আহাদের হু’ঙ্কা’রে ঐশী কেঁপে উঠে,ভয়ে গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না,কথা গুলো যেন গলার মধ্যে দলা পাকিয়ে গেছে।

ঐশীকে কথা বলতে না দেখে আহাদ বেল্ট দিয়ে সোফায় আ’ঘা’ত করে বলে,
বলো কেন পালিয়েছিলে?

বিক’ট শব্দে ঐশী কেঁপে উঠে।

আহাদ কাঁচের টপ গুলো মেঝেতে ফেলে দেয়,
ঐশী দুহাত দিয়ে কান চেপে ধরে,ঐশী ভয়ে কাঁপছে।

আহাদ পুরো রুমের আসবাবপত্র ভাং’চুর করছে,আর রেগে ঐশীকে শা’সা’চ্ছে।
ঐশী ভয়ে চুপ করে আছে।

পুরো মেঝেতে কাঁচ,আসবাবপত্রের ভা’ঙা অংশ পড়ে আছে।

আহাদ এবার হাতের বেল্ট পেঁচাতে পেঁচাতে ঐশীর কাছে এসে ওর চোয়াল শক্ত করে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
কি হলো মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না,বলো কেন পালিয়েছিলে,বলো কেন পালিয়েছিলে?

আহাদ ঐশীকে ধাক্কা দিয়ে কাঁচ ভর্তি মেঝেতে ফেলে দেয়,ঐশীর হাতে,পায়ে,পেটে কাঁচ ঢু’কে যায়।

আহাদ বেল্ট দিয়ে ঐশীর গায়ে আ’ঘা’ত করে,
ঐশী চিৎকার দিয়ে উঠে,আহাদ আবারও আ’ঘা’ত করে বলে,
কি ভেবেছিলে এখন থেকে পালাতে পারবে,
দেখেছো তুমি,তোমাকে আমি পালাতে দেইনি ঠিক খাঁচায় এনে ব’ন্ধী করেছি,তুমি যদি পাতালে তুকাতে না আমি তোমাকে সেখান থেকেও তুলে নিয়ে আসতাম,
কেন ছলনায় করে পালিয়েছিলে,কেন মিথ্যে আয়োজন করেছিলে,কেন আমায় কাছে টেনে ছিলে,
বলো কেন ছলনায় করলে আমার সাথে?
আহাদ বেল্ট দিয়ে আ’ঘা’ত করেছে আর চেচিয়ে কথা গুলো বলছে।
রাগে আহাদ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।
ব্যাথ্যায় ঐশীর মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না,
একেকটা আ’ঘা’তে ঐশীর চিৎকার পুরো রুমে বারি খাচ্ছে,সার্ভেন্টরা নিচ থেকে ঐশীর চিৎকার শুনতে পারছে কিন্তু ওদের হাত পা যে বাঁধা ওরা চাইলেও আহাদকে আটকাতে পারবে না।

র’ক্তা’ক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছে ঐশী।
ঐশীর শরীর থেকে গলগল করে র’ক্ত বের হচ্ছে।
ওর র’ক্তে সাদা টাইলস লাল বর্ণ ধারণ করেছে।
ওর শরীরে উঠার মতো বিন্দু মাএ শক্তি নেই,
ও নিভু নিভু চোখে সামনে বসে থাকা আহাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

ঐশীর সামনে হাতের বেল্টটা মুঠো করে ধরে চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে আহাদ।
চোখে মুখে রাগের রেশ এখনো কাটেনি তার,তড়তড় করে ঘামছে সে,ঐশীর গায়ে আ’ঘা’ত করে সে ক্লান্ত।

আহাদ চেয়ার ছেড়ে উঠে,ঐশীর কাছে এসে মেঝেতে এক হাঁটু গেড়ে বসে শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে ঐশীর থুতনি উঁচু করে ঐশীর চোখে চোখ রেখে গম্ভীর স্বরে বলে,
“কি হলো জান উঠার শক্তি নেই?
উঠতে পারছো না?
তুমি কি ভেবেছিলে তুমি পালিয়ে যাবে আর আমি তোমায় ধরতে পারবো না?
ভুল ভেবেছিলে জান ভুল ভেবেছিলে,এই চার দেয়ালের
বাহিরে তুমি কখনো যেতে পারবে না,বাঁচতে হলে তোমাকে এখানেই বাঁচতে হবে ম’রতে হলেও তোমাকে এখানেই ম’রতে হবে,কখনো এখান থেকে পালাতে পারবে না,আমি তোমায় পালাতে দিবো না,
তোমাকে সারাটা জীবন এখানেই থাকতে হবে,
একটা কথা মাথায় রেখো তুমি শুধু আমার,শুধু আমার।
কথা গুলো বলে আহাদ হন হন করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

কথা বলার মতো শক্তি টুকুও নেই ঐশীর মাঝে,
আহাদের কথার উওরে সে একটি কথাও বলতে পারেনি কেবলমাএ ক্লান্তি মাখা নয়নে তাকে দেখেছে।
ঐশী বুঝতে পেরেছে ওর পালানো উচিত হয়নি কিন্তু ও কি বা করবে ওর যে এখানে দম বন্ধ হয়ে আসে,
ও কিভাবে সারাজীবন এখানে থাকবে।
ঐশী আর কিছু ভাবতে পারলো না জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।

___

দেয়ালে একের পর এক ঘু’ষি মা’র’ছে আহাদ,নিজের সমস্ত রাগ দেয়ালের উপর ঝাড়চ্ছে,আজ যদি ও সময় মতো না যেতো তবে কি হতো তার আইডিয়া নেই ঐশীর,ঐশীর করা বোকামি আহাদের রাগ খনে খনে বাড়িয়ে দিচ্ছে,ঐশীকে আ’ঘা’ত করে রাগ কমার বদলে উল্টো বেরে গেছে,আহাদের নিজ উপর রাগ হচ্ছে কেন ও নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারলো না কেন ও ঐশীর গায়ে হাত তুললো,ও কিভাবে ঐশীকে আ’ঘা’ত করতে পারলো।
নিজের উপর প্রচন্ড রেগে আছে আহাদ,দেয়ালে ঘু’ষি মা’রতে মা’রতে আহাদের হাত ফে’টে টপটপ করে র’ক্ত পড়ছে।

আহাদ রেগে দেয়ালে জোরে একটা ঘু’ষি দিয়ে বেডে বসে মাথা চেপে ধরে ওর রাগ কিছুতেই কমছে না মনে হচ্ছে সব কিছু ভে’ঙে গুড়িয়ে ফেললেও রাগ কমবে না।
আহাদ উঠে মেডিসিনের বক্স থেকে একটা মেডিসিন বের করে খেয়ে নেয়,বেশ কিছুক্ষণ পর আহাদের রাগ কমে যায় এখন নিজেকে কিছুটা শান্ত লাগছে।

আহাদ হাতে অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে রুম থেকে বের হয়।

আহাদ ঐশীর রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আহাদের গিলটি ফিল হচ্ছে,কিভাবে ঐশী সামনে দাড়াবে বুঝতে পারছে না,ও যে এতোটা হিং’স্র হয়ে যাবে,ঐশী গায়ে হাত তুলে ফেলবে বুঝতে পারেনি,আহাদ নিজের করা অন্যায়ে ভিষণ অনুতপ্ত।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে