আমার তোমাকে প্রয়োজন পর্ব-১৪+১৫

0
1359

#আমার_তোমাকে_প্রয়োজন💖
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_14

কপি নিষিদ্ধ ❌

ঐশী পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়,চোখ মেলে নিজেকে রুমে আবিষ্কার করে,মাথা ঘুমিয়ে পাশে তাকাতেই আহাদকে দেখতে পায়।
আহাদ সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে,
ঐশীকে চোখ মেলতে দেখে আহাদ বাঁকা হাসি দেয়,
আহাদকে দেখে ঐশী উঠার চেষ্টা করে।
কিন্তু শরীরে উঠার মতো শক্তি নেই,ঐশীকে উঠতে চেষ্টা করতে দেখে আহাদ সোফা ছেড়ে উঠে ঐশীর কাছে যায়,ঐশীকে উঠিয়ে বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিয়ে,আহাদ ওর পাশে বসে ভ্রু কুচকে বলে,
জান ম’রো’নি?
ওহ হ্যাঁ আমি তো তোমাকে বাঁচিয়ে ফেলেছি,সরি জান। তুমি যেহেতু ম’রতে চেয়েছি তোমাকে ম’রতে দেওয়াই উচিত ছিল কিন্তু কি করে দেই বলো তুমি ম’রে গেলে তো আমি বেঁচে থাকতে পারবো না,তুমি যে আমার
প্রাণ ভ্রোমরা,জান এতো সহজে তো তোমায় ম’রতে দিচ্ছিনা,এখনো যে তোমাকে অনেক কিছু স’হ্য করতে হবে,আমার মতো জ’ঘন্য মানুষের সাথে সারাজীবন থাকতে হবে,আমাদের একসাথে বাঁচতে হবে,একসাথে পথ চলতে হবে,তুমি ম’রে গেলে কি তা হবে বলো,
তাই তোমাকে আমি ম’রতে দিচ্ছিনা।
এতোক্ষণ মুখে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে কথা গুলো বললেও,
এখন ওর মুখের হাসি বদলে চেহারা কাঠিন্য ভাব চলে এসেছে ও গম্ভীর ভাবে বলে,
আজ থেকে তোমার ব’ন্ধী জীবন শুরু হলো সারাজীবন এই চার দেয়ালের মাঝেই তোমাকে ব’ন্ধী হয়ে থাকতে হবে,আমাকে তোমার সারাজীবন স’হ্য করতে হবে,
আর হ্যাঁ তুমি চাইলেও ম’রতে পারবে না,
আমি তোমাকে ম’রতে দিবো না।
আহাদ কথা গুলো বলেই রুম থেকে চলে যায়।

ঐশী ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয় ওর ডান চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে।
মনে পড়ে যায় বিকেলের ঘটনা।

বিকেলে,

আহাদের কথা গুলো শুনে ঐশীর রাগ উঠে যায়,
আহাদের বলা কথা গুলো ওর কানে বাজচ্ছে,
ওর কেন যেন নিজেকে তু’চ্ছ মনে হচ্ছে,আহাদের হাতের পুতুল মনে হচ্ছে,আহাদের কড়া কথা আর স’হ্য করতে পারছে না,এভাবে তিলেতিলে ম’রার চেয়ে
ম’রে যাওয়াই ভালো।

ঐশী বিছানায় বসে জোরে রিমিকে ডাক দেয়,
ওর ডাক শোনা মাএই রিমি দরজা খুলে ভেতরে আসে,
জ্বী ম্যাম বলুন,আপনার কিছু লাগবে?

হ্যাঁ,আমি ফ্রুট খাবো,আমার জন্য ফ্রুট নিয়ে আসুন।

ওকে ম্যাম।

আর হ্যাঁ ফল গুলো কেটে আনবেন না,একটা ছু’ড়ি দিয়ে যাবেন আমি নিজে কেটে খাবো।

ওকে ম্যাম।

রিমি নিচে চলে যায় কিছুক্ষণ পর ঐশীর জন্য ফল নিয়ে আসে।

ম্যাম এনেছি।

টেবিলের উপর রেখে চলে যান।

ওকে ম্যাম।

রিমি ফলগুলো টেবিলের উপর রেখে চলে যায়।

ঐশী হাতে ছু’ড়ি নিয়ে বসে আছে,
আপন মনে বিড়বিড় করে বলছে,
আহাদ কি বললেন আপনি,আপনার অ’ভি’শ’প্ত জীবনে আমাকে বেঁচে থাকতে হবে,আপনার স্পর্শ সারাজীবন স’হ্য করতে হবে,এই চার দেয়ালের মাঝে আমাকে ব’ন্দী হয়ে থাকতে হবে?
কিন্তু আমি তো তা হতে দিবো না,আমি বেঁচে থাকলে তো আপনি আমার উপর ট’র্চা’র করতে পারবেন আমাকে আপনার ব’ন্দী’নি করতে পারবেন,
আমি ম’রে যাবো তবুও আপনার ব’ন্দী’নি হবো না।

ঐশী চোখ বন্ধ করে নিজের বাম হাত কে’টে ফেলে,
ঐশী দাঁতে দাঁত খিঁচে কষ্ট স’হ্য করছে,ও হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে হাত থেকে গলগল করে র’ক্ত বের হচ্ছে।
ঐশী ছু’ড়িটা মেঝেতে ফেলতে যেয়েও থেমে যায় ছু’ড়িটি মেঝেতে ফেললে এর শব্দে সার্ভেন্টরা উপরে চলে আসবে আর ওরা ওকে এভাবে দেখলে আহাদকে কল করে সব জানিয়ে দিবে আর আহাদ ওকে বাঁচিয়ে ফেলবে,না এমনটা করা যাবে না।
ঐশী ছু’ড়িটা নিজের পায়ের কাছে রেখে নিজেকে কাঁথা
দিয়ে ঢেকে দেয়,ও জানে কিছুক্ষণ পর পরই সার্ভেন্টরা আসবে,ওরা যদি ওকে এভাবে কাথা মুড়িয়ে থাকতে দেখে তবে মনে করবে ও ঘুমিয়ে আছে।
ঐশীর হাত থেকে গলগল করে র’ক্ত বের হচ্ছে ব্যাথায় ঐশীর জান বেরিয়ে যাচ্ছে,ঐশী দাঁতে দাঁত খিঁচে চোখ বন্ধ করে রেখেছে ও মৃ’ত্যু’কে আপন করে নিতে পারবে আহাদকে নয়।

বিকেলের কথা গুলো মনে পড়তেই ঐশী দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।

ঐশী চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে,
ও বুঝতে পেরেছে আহাদ এতো সহজে ওকে ছাড়বে না,
ওকে সারাজীবন এখানেই থাকতে হবে কিন্তু ও যে আর পারছে না,কি করে থাকবে এখানে।

ঐশী দরজা খোলার শব্দ শুনতে পায় চোখ বন্ধ করে রেখেও বুঝতে পারে আহাদ এসেছে।

আহাদ ঐশীর পাশে বসে,ঐশী চোখ মেলে তাকায়।
ফ্রেস হয়ে আসো,খাবার খেয়ে মেডিসিন খেতে হবে,
চলো আমি তোমাকে নিয়ে যাই।

আমি একা যেতে পারবো।

ঐশী উঠার চেষ্টা করে কিন্তু শরীরে উঠার মতো শক্তি নেই।
আহাদ বিছানা ছেড়ে উঠে ঐশীকে কোলে তুলে নেয়।

কোলে তুললেন কেন নামান আমাকে।

বেশি ছটফট করলে ফেলে দিবো।

ফেলেদেন।

হুম তা তো বলবেই তুমি তো চাও আমি যেন সারাজীবন তোমাকে কোলে নিয়ে ঘুরি অবশ্য এতে আমার কোনো সমস্যা নেই।

আহাদের কথার উত্তরে ঐশী কিছু বলে না।

আহাদ ঐশীকে ওয়াশরুমের সামনে নামিয়ে দেয় ঐশী ফ্রেস হয়ে আসতেই আবারও ওকে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে এসে হেলান দিয়ে বসিয়ে দেয়।

আহাদ চামচে করে স্যুপ তুলে ঐশীর মুখের সামনে তুলে ধরে,ঐশী কিছু বলবে তার আগেই আহাদ বলে,
সম্পূর্ণ খাবার খেতে হবে কোনো মানা শুনবো না,
দুপুরের কথা মনে আছে তো নাকি আবারো সেভাবেই খাওয়াতে হবে।

আহাদের কথা শুনে ঐশী কোনো কথা না বলে স্যুপ টুকু খেয়ে নেয়,আহাদ আস্তে আস্তে ঐশীকে সম্পূর্ণ খাবার খাইয়ে মেডিসিন খাইয়ে দেয়।
আহাদ ঐশীকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে রুমের লাইট অফ করে চলে যায়।
শরীর ক্লান্ত থাকায় আর মেডিসিনের প্রভাবে ঐশী ঘুমিয়ে পড়ে।

আহাদও নিজের রুমে যেয়ে শুয়ে পড়ে।
চোখ বন্ধ করে রেখেছে কিন্তু ঘুম আসছে না,কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করে উঠে বসে,সামনের দেয়ালটাতে তাকাতেই গিটার দেখতে পায়,বিছানা ছেড়ে উঠে দেয়াল থেকে গিটারটা নামিয়ে বারান্দায় চলে যায়,
রকিং চেয়ারে বসে গিটারে টুংটাং সুর তোলে,আকাশের চাঁদটার দিকে তাকিয়ে গুন গুণ করে গান গায়।

সকালে ৯ টার দিকে ঐশীর ঘুম ভেঙ্গে যায়,ঘুম থেকে উঠেই কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগে গোসল করলে হয়তো ভালো লাগবে,তাই ঐশী বিছানা ছেড়ে উঠে কাবার্ড থেকে জামা নিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়।
কিছুক্ষণ পর গোসল করে বের হয়,মাথা ভালো ভাবে না মুছে বারান্দায় যেয়ে টাওয়ালটা গ্রিলের উপর মেলে দেয়,গ্রিলে হাত রেখে নিচের দিকে তাকায় বাড়ির আসে পাশে অনেক গার্ড দেখতে পায়,ঐশী জানে এতো গুলো গার্ডের চোখ ফাঁকি দিয়ে ও কখনোই এখান থেকে পালাতে পারবে না,চোখ দুটো বন্ধ করে নিশ্বাস নেয়,
ঐশীর আজ মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে আহাদের জন্য মায়ের সাথে অনেক মিথ্যে কথা বলেছে,বলতে গেলে মাকে মিথ্যেতেই জড়িয়ে রেখেছিলো,আজ হয়তো মা থাকলে তার সাথে নিজের মনের কথা বলতে পারতো তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে পারতো কিন্তু তা যে আর হবার নয় মা যে আর কখনোই ওর কাছে ফিরে আসবে না।
মায়ের কথা মনে পড়তেই ঐশীর চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে ঐশী আবেশে চোখের জল মুছে ফেলে।

হঠাৎ পেছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুঁজে ঐশী বুঝতে পারে এটা আহাদ ছাড়া অন্য কেউ না,
আহাদ ওকে কিছুটা শক্ত করেই ধরেছে ও জানে ও ঐশীকে জড়িয়ে ধরলে ঐশী ছোটার জন্য চেষ্টা করবে তাই কিছুটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে।

কিছুক্ষণ পর আহাদ ঐশীকে ছেড়ে দেয়।

জান ভালো ভাবে চুল মুছোনি কেন চুলের পানিতে পিঠ ভিজে যাচ্ছে।

আহাদ গ্রিলের উপর থেকে টাওয়াল নিয়ে ঐশীর চুল মুছে দিচ্ছে,চুল মোছা শেষে হাত দিয়ে চুল গুলো ঠিক করে দিয়ে কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়।

জান আমি অফিসে যাচ্ছি,উল্টা পাল্টা কিছু করার কথা মাথাতেও এনো না রুমের কোনায় কোনায় হিডেন ক্যামেরা সেট করা আছে,আমি অফিসে বসেও সারাক্ষণ তোমাকে দেখতে পারবো তাই যা করবে বুঝে শুনে করবে,তোমার যা লাগবে রিমিকে বলবে ও তোমাকে সব কিছু এনে দিবে,এখন যাই লেট হয়ে যাচ্ছে।
আহাদ ঐশীর কপালে চুমু দিয়ে “বায়” বলে চলে যায়।

ঐশী আহাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে পুনরায় ভাবনায় ডুব দেয়।

#চলবে

#আমার_তোমাকে_প্রয়োজন💖
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_15

কপি নিষিদ্ধ ❌

আজ ১০ দিন হলো ঐশী আহাদের বাড়িতে আছে,
আহাদ ঐশীকে চার দেয়ালের মাঝে ব’ন্ধী করে রেখেছে
ঐশীর না তো পালানোর সুযোগ আছে না তো আ’ত্ন’হ’ত্যা করার,আহাদ ঐশীর রুম থেকে সব ধরণের ধারালো জিনিস সরিয়ে ফেলেছে,যাতে করে ঐশী যেনো নিজেকে আ’ঘা’ত করতে না পারে।
বারান্দায়ও গ্রিল লাগানো বারান্দা দিয়ে পালানোর কোনো সুযোগ নেই,আহাদ ঐশীকে রুম থেকে বের হতে দেয় না,ওর যা যা প্রয়োজন সব রুমে এনে রেখেছে।
সব ধরনের ড্রেস,বোরকা,শাড়ী,থ্রী পিস,গাউন,লেহেঙ্গা
ইত্যাদি সব ড্রেস দিয়ে কাবার্ড ভর্তি,ড্রেসিং টেবিলে সাজসজ্জার জন্য কসমেটিকস এন্ড সব ধরনের অর্নামেন্টস দিয়ে ভর্তি,ওর সেবার জন্য রিমি সহ আরো দুজন মেয়ে সার্ভেন্ট রেখেছে,ঐশীর যখন যা প্রয়োজন হয় ওরা তা এনে দেয়।
এক কথায় আহাদ ঐশীকে সব দিয়েছে শুধু স্বাধীনতা ছাড়া।

ঐশী এই ব’ন্ধী জীবনে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে,
আহাদের ভালোবাসা কেয়ারিং ওর বিরক্ত লাগে কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না।
কিছু বললেই আহাদের ট’র্চার শুরু হয়ে যায়,
যে ট’র্চারে আ’ঘা’ত নয় কেবল ভালোবাসা থাকে।

আহাদ প্রতিদিন তিন বেলা ঐশীকে খাইয়ে দেয়,অফিস থেকে আসার সময় ওর জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসে,
মাঝে মাঝে ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে ঐশীকে বিরক্ত করে,ঐশীকে বিরক্ত হতে দেখে আহাদ খুব মজা পায়।

ঐশীর কাছে আহাদের ভালোবাসা,কেয়ারিং সব মিথ্যে মনে হয়,কেন যেন আহাদের ভালোবাসা কেয়ারিং ঐশীর স’হ্য হয় না,আহাদের স্পর্শ স’হ্য হয় না ঘৃণা হয়,
যখনই আহাদের জন্য ওর মনের অনুভূতি গুলো জেগে ওঠে তখনই মনে একটা প্রশ্ন উকি দেয়,
আচ্ছা যে ব্যাক্তি মানুষকে এতো যন্ত্রণা দিয়ে মা’রতে পারে সে কি আমাকে ভালোবাসে?
___

আহাদ সিয়াম রেস্টুরেন্টে এসেছে,এখানে একটা মিটিং আছে,ক্লাইন্টরা জ্যামে আটকে গেছে তাই আসতে লেট হচ্ছে,সিয়াম কফি অর্ডার করেছে একটা ওর জন্য আরেকটা আহাদের জন্য,ওয়েটার কফি দিয়ে গেছে,
আহাদ কফিতে চুমুক দেয়।

সিয়াম কফিতে চুমুক দিয়ে বলে,
স্যার একটা কথা ছিল।

হ্যাঁ বলো।

স্যার আসলে,

তুমি আবার আসলে নকলে শুরু করেছো,সিয়াম যা বলার বলে ফেলো।

স্যার কিভাবে যে কথাটা বলি।

এতো ভনিতা করার কিছু নেই নিরদ্বিধায় বলে ফেলো।

স্যার আপনি ম্যামকে বিয়ে করে ফেলুন।

বিয়ে!

হ্যাঁ স্যার বিয়ে করে ফেলুন।

হ্যাঁ বিয়ে তো করবো কিছু দিন পর।

স্যার বিয়েটা তাড়াতাড়ি করলে ভালো হয় কারণ ম্যাম বিয়ে না করে আপনার বাসায় থাকছে আর মানুষ এটাকে স্বাভাবিক ভাবে নিচ্ছে না তাদের সাহস নেই আপনার সামনা সামনি কিছু বলার কিন্তু আপনার পিঠ পিছে তারা আপনাকে আর ম্যামকে নিয়ে অনেক কটুকথা বলছে সমালোচনা করছে,তাই বলছিলাম কি,
সিয়ামের কথা শেষ হওয়ার আগেই আহাদ বলে,
বিয়ের আয়োজন করো।

জ্বী স্যার!

বললাম বিয়ের আয়োজন করো,আগামীকাল আমাদের বিয়ে,বিয়ের আয়োজন করো।

আব. ওকে স্যার।

ওদের কথা মাঝে ক্লাইন্টরা চলে আসে,তারা আসতেই ওরা কুশল বিনিময় করে নিজেদের প্রোজেক্ট সম্পর্কে তাদের বিস্তারিত তথ্য জানায়,তারাও খুব মনোযোগ সহকারে ওদের কথা শুনে।
মিটিং শেষে আহাদ সিয়াম অফিসে চলে যায়।
২ টার দিকে আহাদ বাসায় আসে।

বারান্দার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে চোখের জল ফেলছে ঐশী,নিরবে চোখের জল ফেলছে সে,এছাড়া যে আর কোনো উপায় নেই তার,ঐশীর আর এই চার দেয়ালের মাঝে ব’ন্ধী হয়ে থাকতে ভালো লাগছে না,ও আর আহাদের ব’ন্দি’নী হয়ে থাকতে চায় না।

ও না তো এই ব’ন্ধী জীবন মেনে নিতে পারছে না তো এখান থেকে পালাতে পারছে।
না তো আহাদের থেকে দূরে সরতে পারছে না তো ওর কাছে যেতে পারছে।
না তো আহাদের থেকে মুখ ফুরিয়ে থাকতে পারছে না তো আহাদের ডাকে সাড়া দিতে পারছে।
না তো আহাদকে ভালোবাসতে পারছে না তো ঘৃণা করতে পারছে।
না তো ম’রতে পারছে না তো বেঁচে থাকতে পারছে।
ঐশী দোটানায় পড়ে গেছে বুঝতে পারছে না কি করবে।

যখন ঐশী এসব ভাবনায় মশগুল ছিল তখনই পেছন থেকে কেউ ওকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুঁজে ছোট ছোট ভালোবাসার পরশ একে দেয়।
ঐশী জানে এটা আহাদ ছাড়া অন্য কেউ না,
আহাদের স্পর্শে ঐশী খনেখনে কেঁপে উঠছে।
আহাদ ওকে নিজের দিকে ফিরিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়,ঐশী মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে,আহাদ ঐশীর থুতনি ধরে মুখ উঁচু করে,
ঐশীর চোখে পানি দেখে আহাদ ওর চোখের পানি মুছে দেয়,আহাদ ঐশীর গালে স্লাইড করতে করতে বলে,
জান একটা গুড নিউজ আছে।
আহাদের কথায় ঐশীর ভ্রু কুচকে আসে।

আগামীকাল আমাদের বিয়ে।

ঐশী এক ঝটকায় আহাদের থেকে দূরে সরে আসে।
কি!

হ্যাঁ,এতে এতো চমকানোর কি আছে?

আহাদ ঐশীর কাছে এসে ওর হাত ধরে আরো একবার নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়,
হ্যাঁ আগামীকাল আমাদের বিয়ে,আর কতো দিন তোমার থেকে দূরে দূরে থাকবো বলো,এবার যে তোমার কাছে আসতে চাই,তোমাকে ভালোবাসতে চাই।
আহাদ আর কিছু বলবে তার পূর্বেই ওর ফোন বেজে উঠে,আহাদ ঐশীকে ছেড়ে দেয়।

আহাদ কল রিসিভ করে,ঐপাশে থেকে কিছু বলতেই আহাদ বলে,”আমি আসছি”।
কথাটা বলেই আহাদ কল কেটে দেয়।

জান আমাকে অফিসে যেতে হবে,রাতে এসে কথা বলবো।
ঐশীর কপালে চুমু দিয়ে “লাভ ইউ” বলে রুম থেকে চলে যায়।

ঐশী ধপ করে মেঝেতে বসে পড়ে,
বিয়ে! আগামীকাল আমাদের বিয়ে,উনাকে বিয়ে করা মানে সারাজীবন এই চার দেয়ালের মাঝে পঁচে ম’রা,
না এটা কখনো হতে পারে না,আমি ওনার ব’ন্দি’নী হয়ে থাকতে চাই না,আমাকে পালাতে হবে,হ্যাঁ আমাকে পালাতে হবে,কিন্তু কি করে আমি এতো গুলো গার্ডের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালাবো?

সন্ধ্যায়,
ঐশী সারারুমে পায়চারি করছে,টেনশনে ওর মাথা কাজ করছে না,কি করে পালাবে বুঝতে পারছে না।
কি করি,কি করি,উফফ মাথায় কিচ্ছু আসছে না,
কি করে এতো গুলো গার্ডের চোখে ধুলো দিয়ে পালবো,
উম্ম হ্যাঁ আইডিয়া।

ঐশী বারান্দায় যায়,নিচে রিমিকে দেখতে পেয়ে ওকে ডাক দেয়,রিমি ওর ডাক শুনে একটু সামনে আসে,
জ্বী ম্যাম,কিছু বলবেন?

হ্যাঁ আমার রুমে আসেন।

জ্বী আসছি।

একটুপর রিমি দরজা খুলে ভেতরে আসে।

জ্বী ম্যাম বলুন,আপনার কিছু লাগবে?

হ্যাঁ আমার একটা কাজ করে দিতে পারবেন?

জ্বী ম্যাম বলুন।

………. পারবেন?

জ্বী ম্যাম পারবো।

ওকে তবে যান।

রিমি রুম থেকে চলে যায়।
রিমি যেতেই ঐশী হেসে বিছানায় শুয়ে পড়ে।

৯ টার দিকে সিয়াম ডেকোরেশনের লোক নিয়ে এসে ওনাদের সব কিছু বুঝিয়ে দেয়,কাল বিয়ে তাই আজ
ভোরের মধ্যে পুরো বাড়ি সাজানোর কাজ শেষ করতে হবে,সিয়াম ওনাদের কাজের তদারকি করে অফিসে চলে যায়।

রাত ১১ টার দিকে আহাদের গাড়ি আহাদ মেনশনে প্রবেশ করে,আহাদ গাড়ি থেকে নেমে দেখে সবে মাএ বাড়ির ছাদের দিকটা সাজানো হয়েছে এখনো অনেক কাজই বাকি আছে,আহাদ সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিংবেলে চাপ দিতেই সার্ভেন্ট এসে দরজা খুলে দেয়,আহাদ ভিতরে এসে সিঁড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে যায়,ফ্রেস হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে,ঐশীর রুমের সামনে আসে,দরজা খুলতেই দেখতে পায় ঐশী পুরো রুম অন্ধকার করে রেখেছে।

”জান কোথায় তুমি,সারারুম অন্ধকার করে রেখেছো কেন,কি হলো জান কোথায় তুমি,জান কথার উওর দিচ্ছো না কেন?
ঐশীর সাড়া শব্দ না পেয়ে আহাদের মনে অজানা এক ভয় বাসা বাঁধে।
রুমের লাইট জালাতেই আহাদ থমকে যায়।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে