Monday, October 6, 2025







আমার তুমি ২ পর্ব-৩০+৩১

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_৩০
#জান্নাত_সুলতানা

-“অলরেডি অনেকটা লেইট্ মিস্টার কবির।
টেন পারসেন্ট আশা।
খুব সাবধানে সতর্কতার সহিত থাকতে হবে।ফুল বেড রেস্ট।একটা পানির জগে এক লিটার পানি ধরে।সেটাও তিন্নি নিজে ক্যারি করতে পারবে না। জগ থেকে পানি টা ওকে ঢেলে দিতে হবে।”

তিন্নি স্তব্ধ হয়ে সামনে বসা ডক্টর তাসলিমার কথা গুলো শুনে যাচ্ছে।
কি থেকে কি হচ্ছে? সবে তো এক মাস চলে।এতেই এতো রিস্ক?একদমই আশা নেই?কি হবে সামনে? থাকবে তো বেবি টা?
কবির ডক্টর এর সাথে কথা বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো।খুব ধীরে তিন্নি কে নিয়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে এলো।কবির তিন্নি যাওয়া মাত্র ডক্টর তাসলিমা মফিজুর মির্জা কে কল লাগালেন।
পূর্বপরিচিত তারা।মির্জা বাড়ির বাঁধা একজন ডক্টর বলা চলে ডক্টর তাসলিমা। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সাথে গাইনী ডক্টর। ওয়াজিদ রিধির বিয়েতে গিয়ে তিন্নির সাথে পরিচিত হয়েছিল।পরিবার নেই।এতিম জানতে পেরে তখন থেকে মেয়েটার প্রতি একটু আলাদা মায়া কাজ করে।আর একজন মেয়ের এই অবস্থায় নিজের পরিবার কে সব চেয়ে বেশি মিস করে। সেখানে তিন্নি ভিন্ন। বাচ্চা টা এখনো নিদিষ্ট স্থানে এসে পৌঁছায় নি।টিকতে পারে আবার নাও।এই দোটানায় একটা মেয়ে নিশ্চয়ই মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরবে।তাই মনোবল ধীর করার জন্য মানসিক সাপোর্ট ভিষণ প্রয়োজন।
কবির তিন্নি পার্কিং লটে পৌঁছাতেই মির্জা বাড়ির একটা সিলভার রঙের গাড়ি শাঁই শাঁই করে এসে ওদের গাড়ির পাশে থামলো।সেখান থেকে মফিজুর মির্জা আজ্জম মির্জা সহ রোজিনা বেগম নামলো।তারা তিন ভাই বোন গিয়েছিল আজ তাদের যে স্কুল টা রয়েছে সেখানে। আর সেখানে সভা শেষ বেরুতেই ডক্টর এর ফোন পেয়ে ছুটে এসছে।রোজিনা বেগম তিন্নি কে আগলে নিলো।হাসি মুখে সব জিগ্যেস করে কবির এর গাড়িতে বসলো।কবির অবাক হয়ে শুধু দেখছে।কি হচ্ছে? ওনারা কোথা থেকে এলো কিছু মাথায় আসছে না।
কবির থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। আজ্জম মির্জা থমথমে কণ্ঠে কবির কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

-“গাড়ি গুলো মির্জা বাড়ি যাবে সোজা।
কোনো রূপ বাক্য শুনতে চাই না আমি।”

——

তিন্নি আসা মাত্র মির্জা বাড়ি যেনো আরো উল্লাসে মেতে উঠলো।রান্না বান্না। পরিবেশ টা কিছু টা রমরমা হয়ে গেলো। শুক্রবার বিধায় কবির একদম ফ্রী।তাকেও জোর জবরদস্তি করে সবাই রেখে দিয়েছে। কালাম খান কে সব জানানো হয়েছে। যদিও তিনি বেশি খুশি হোন নি তিন্নি মির্জা বাড়ি বেশ কিছু দিন থাকবে বলে।কিন্তু তিন্নির কন্ডিশন এর কথা ভেবে কিছু বলতে পারে নি।অবশ্যই খান বাড়ি থাকলেও কোনো সমস্যা হতো না।দুই দুই জন কাজের লোক রয়েছে দরকার পড়লে আরো নিতেন।তবে এমন অবস্থায় একটা মেয়ের সবচেয়ে বেশি যাকে প্রয়োজন সে হচ্ছে এক মাত্র মা। আর মির্জা বাড়িতে তিন্নির দুই দুই টা মা রয়েছে। তারা কখনো যে তিন্নি কে এমন অবস্থায় বাড়ি যেতে দিবে না সেটা দুই বাপ ছেলে ভালোই জানে।তাই তো কালাম খান কিছু বলে না।
তিন্নির সাথে দেখা করে দুপুরে খাবার খেয়ে বাড়ি চলে যায়।তখন সবাই লিভিং রুমে বসে ছিলো।একমাত্র সাদনান আর রাহান বাদে সবাই আজ বাড়িতে। তবে আজ্জম মির্জা ছেলের কথা মতো রেডি হয়ে চলে গেলো সাদনান এর দেওয়া এড্রেস অনুযায়ী একটা রেস্টুরেন্টে।
লিভিং রুমে তখন কবির অসহায় এর মতো বসে আছে। বউ কে সে এই বাড়ি আসার পর একবারও পায় নি।তিন্নি আর কবির কে নিচে লিভিং রুমের পাশে একটা বেডরুমে দিয়েছে। আর সেখানে তিন্নি বিছানায় আধশোয়া করে কেউ না কেউ ওর কাছে গল্প করছে বসে বসে।
তাই কবির রুম হতে বেরিয়ে এসছে।এতো মহিলার ভীড়ে থাকা সম্ভব না-কি!

—–

আধঘন্টা নাগাদ আজ্জম মির্জা সহ সাদনান রাহান একটা টেবিলে বসে আছে। রেস্টুরেন্ট বেশ নামী-দামী।
সোফায় গা এলিয়ে সাদনান ফোনে স্ক্রল করছে।একটা বড়সড় রুমের মতোই কিছু টা। এটার বাহিরে রয়েছে গার্ড সব সাদনানের। আজ্জম মির্জা বারংবারই এখানে প্রবেশ করার সেই স্থানের দিকে তাকাচ্ছে।তিনি ছেলের এমন ভাবভঙ্গি দেখে বড়ই বিরক্ত হলেন।কিছু টা বিরক্তিকর স্বরে বলে উঠলো,

-“কি ব্যাপার তোমার পাত্র এখনো কেনো আসছে না?
আর কতক্ষণ বসে থাকবো!আমার কোমড় ব্যাথা হয়ে গেলো।”

-“এখনো তো আমার বাচ্চাকাচ্চা পালা বাকি বাবা।
আর তোমার এক্ষুনি কোমড় ব্যাথা?আজই ডক্টর দেখাতে হবে।”

সাদনানের চিন্তিত কণ্ঠে শুনে আজ্জম মির্জার কপালে বিরক্তির ভাঁজ পরে। ছেলের কথার কোনো যুক্তি তিনি খোঁজে পেলেন না।ভ্রু কিঞ্চিৎ পরিমাণ কুঁচকে শুধালো,

-“তোমার বাচ্চার সাথে আমার কোমড় ব্যাথার কি সম্পর্ক?”

-“সেকি কথা?বাচ্চাদের সাথে খেলতে হবে না!ওদের রাখতে হবে না। নয়তো আমার বউ আমাকে সময় দিতে পারবে না যে।”

সাদনানের কথার ভাব এমন মনে হচ্ছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছে সে।আজ্জম মির্জার কান গরম হয়ে আসে।ছেলে টা কোনো দিন ঠিক হবে না। সব সময় তাকে লজ্জায় ফেলবে।তিনি কিছু টা দাঁত কটমট করে বলল,

-“চুপ করো বেয়াদব ছেলে।
তোমার এসব কথাবার্তা শোনার জন্য আজ ছুটির দিনেও আমি দৌড়ে উপজেলায় আসি নি।”

-“মিথ্যা কেনো বলছো?
তুমি দৌড়ে কখন এলে?তুমি বিএমডব্লিউ কারে করে এসছো।যেটা এসি সহ বিশেষ সুবিধা প্রাপ্ত।”

সাদনানের কথায় রাহানের পেট মুচড়ে হাসি পেলো। তবে হাসলো না।এখনো হাসলে নিজের কপালে শনি রবি সবই আছে। আজ্জম মির্জা তাজ্জব বনে বসে আছে।সাদনান রাহানের দিকে একবার তাকিয়ে এবার নড়েচড়ে বসলো।
সিরিয়াস মুড নিয়ে বলল,

-“বাবা সারা আমাদের সবার আদরের। ওর কষ্ট হয়। ও দুঃখ পাবে এমন কিছু আমি তুমি ইভেন আমরা কেউ করবো না।ও যদি অল্পতে খুশি থাকতে পারে আমরা কেনো ওর সেই খুশি ছিনিয়ে নেব?অবশ্যই না।ওর খুশিতে আমরা খুশি।ও ভালো থাকলে আমরা নিশ্চিন্তে থাকবো।আর আমার মনে হয় ও ওর ভালোবাসার মানুষ টার সাথেই খুশি থাকবে।”

হঠাৎ কেনো সাদনান এসব বলছে কিছু মাথায় এলো না আজ্জম মির্জার।তবে লাস্ট কথা টায় তিনি অনেক টাই অবাক হয়েছে।সারা এমন কিছু করেছে?তাহলে তিনি কিছু টের পেলো না কেনো?অবশ্য পাবেই বা কি করে একজন মেয়ে যদি এমন কিছু করে তবে সবার আগে সেটা তার মায়ের কাছে ধরা পরে। সেক্ষেত্রে তিনি তো বাবা।আর যদিও এসব করেই থাকে!তাহলে সালেহা কেনো তাকে কিছু বললো না?না-কি সেও জানে না এসব?না-কি জানে ইচ্ছে করে বলে নি?
আজ্জম মির্জা থমথমে কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,

-“কি বলতে চাইছো?
সারা?”

-“হ্যাঁ মামা।
আমি সারা কে ভালোবাসি।”

আজ্জম মির্জা মনে মনে এতোক্ষণ প্রশ্নের ঝড় তুললেও এপর্যায়ে তিনি একদম নীরব হয়ে গেলেন।শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো রাহানের দিকে। রাহান নিজে থেকে নিজের ঘাড়ে অপরাধ নিয়ে বলতে লাগলো,

-“মামা ওর কোনো দোষ নেই। প্লিজ ওকে তুমি ভুল বুঝো না।”

-“আমার মেয়ে ব্যাপার টা না হয় আমাকে বুঝতে দাও।
আর দেড়মাস পর আমি এব্যাপারে কথা বলবো।ততদিনে তুমি একটা চাকরির ব্যবস্থা করবে।বিয়ের পর অবশ্য তুমি আমাদের কোম্পানিতে আবার জয়েন করবে।যদি প্রশ্ন আসে তাহলে চাকরি কেনো খুঁজতে হবে? তাহলে আমার উত্তর হবে আমার মেয়ের জন্য আমি যোগ্য পাত্র চাই।এমন টা কখনো যেনো না হয়।আমার মেয়ে এবং মেয়ের জামাই কে কখনো মির্জা বাড়ির কাছে মাথা নত করে থাকতে না হয়।তাই নিজে কে প্রমাণ করার একটা সুযোগ দিলাম তোমায়।”

এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে থামলো আজ্জম মির্জা। সাদনান রাহান চুপ করে শুনে গেলো শুধু। কিছু বলার মতো অবশিষ্ট আর নেই।একদম শুরু থেকে শেষ করে দিয়েছে কথার।আজ্জম মির্জা একটু পানি খেলো।বসা ছেড়ে রুম হতে বেরিয়ে আসার উদ্দেশ্যে পা বাড়িয়ে ফের ফিরে তাকালো সাদনানের দিকে অতঃপর আবারও থমথমে কণ্ঠে সাদনান কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

-“আর হ্যাঁ।
তোমাকে বলছি।চাকরির ব্যাপারের কোনো সাহায্য করবে না তুমি রাহান কে।আমি জানি ওর যোগ্যতা দিয়ে ওর একটা ভালো পোস্টে জব হবেই।”

—-

-“বাবা-র রিয়াকশন কি ছিল?”

-“কোনো রিয়াকশন নেই।
শুনলে তো সব।”

সাদনান মোলায়েম কণ্ঠে জানালো। প্রিয়তা সাদনানের চুলের ভাঁজে ফের আঙ্গুল চালায়।সাদনান বউয়ের পেট জড়িয়ে আরো কিছু টা প্রিয়তার কোমড়ে চেপে নিজের সাথে মিশিয়ে নেই।
বাহিরে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।ব্যালকনির দরজা খোলা।তারউপর রুমে ফ্লোরে বসে আছে ওরা দু’জন। বাইরে থেকে আসা ঠান্ডা বৃষ্টির বাতাস। আর নিচে টাইলস এর ঠান্ডা দু’টো মিলে শরীর হিম হয়ে আসছে। প্রিয়তার পেটে সাদনান বারকয়েক নাক ঘষে। প্রিয়তা সাদনানের চুলে মৃদু টেনে বলল,

-“সব সময় ধান্ধা।”

-“শোনো।
ভার্সিটি থেকে নোটিশ দিয়েছে।
এটা কোনো মার্কস হলো জান?
তোমার সেকশনে তোমার সবচেয়ে নম্বর কম।
এমন হলে আমার সম্মানের বলে কিছু থাকবে না।”

সাদনান শোয়া থেকে ওঠে বসে অসহায় চোখে তাকিয়ে কথা গুলো বলল।
প্রিয়তা ভাবলেশহীন। বসা থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে বিছানার দিকে এগুতে এগুতে জানালো,

-“এমনি হবে।
পড়তে চাই না আমি।”

-“তো?”

-“কতদিন বলেছি সংসার করবো!
আপনার তো সেসব শোনার প্রয়োজন নেই।”

সাদনান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে।
এগিয়ে এসে প্রিয়তা কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে নাক ঘষে আদুরে কণ্ঠে বলল,

-“এটা কেমন বাচ্চাদের মতো কথা বলছো!
সময় চলে যাচ্ছে না।”

-“নিজে তো বুড়ো হচ্ছেন।
সেদিকে খেয়াল আছে?”

প্রিয়তা নিজে কে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে উঠলো।সাদনান ছাড়লো না বউ কে।
শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে জানালো,

-“আমি বুড়ো না জোয়ান সেটা রোজ রাতে প্রমাণ করি।
চলে তোমার যখন বিশ্বাস হচ্ছে না তবে আবার প্রমাণ দেই।”

#চলবে…..

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_৩১
#জান্নাত_সুলতানা

আজ তিন হয় রাহান বাড়ি নেই।চাকরির খোঁজে আছে।অনেক গুলো কোম্পানিতে চাকরির জন্য আবেদন করেছে। আর সেগুলোর সব ইন্টারভিউ এর জন্য সে কোনো এক বন্ধুর বাসায় রয়েছে। আজও একটা ইন্টারভিউ ছিল।সকালে একবার সারা কে ফোন করে জানিয়েছে। সারাদিন আর কোনো খবর পাওয়া যায় নি।বিকেলের দিকে অনেক গুলো ম্যাসেজ কল করেছে সারা কিন্তু কোনো রেসপন্স আসে নি।ফোন বন্ধ। সারা সেইজন্য চিন্তায় আছে। রাতে খাবার খেয়ে একটু আগেই রুমে এসছে। যদিও সারা আজ তিন দিন ধরে খাবার নিয়ে বসছে ঠিকই কিন্তু সেগুলো গলা দিয়ে নামতে চায় না।কোথায় আছে মানুষ টা?কি খাচ্ছে? কিভাবে থাকছে?
দেখতে ভীষণ ইচ্ছে করে। কিন্তু রাহানের ফোনে নেট নেই।নেট নেই বললে ভুল হবে। রাহানের কাছে নেট নেওয়ার মতো অহরহ টাকা নেই।মির্জা বাড়ি থেকে সে এক পয়সাও নেই নি।নিজের বাইক বিক্রি করে দিয়েছে। যেটা রাহান টিউশন আর একটা কোচিং সেন্টারে যখন জব করতে ভার্সিটিতে পড়াকালীন তক্ষুনি বাইক টা নিজের রোজগারের টাকা দিয়ে নিয়েছিলো।যদিও রাহানের বাবা এখন যথেষ্ট বিত্তশালী মানুষ।ছোটখাটো একটা ব্যবসা দিয়েছে সেখানে কিছু কর্মচারী রয়েছে।কিন্তু রাহান কারোর সাহায্য নেয় নি।বাবা রফিক আহমেদ এই ব্যাপারে কিছু দিতে চাইলে রাহান বারণ করে দিয়েছে। আজ্জম মির্জা যেমন আদেশ দিয়েছে তারচেয়েও বেশি রাহান পালনের চেষ্টা করছে।
একদম নিজের প্রচেষ্টায় কিছু করার চেষ্টা।
আর সাফল্য অর্জন করার ফার্স্ট স্টেপই হলো চেষ্টা।

—-

সারা চোখে ঘুম নেই। বিছানায় হাঁটু ভাঁজ করে বসে আছে। গোলগাল মুখ টা এই টুকুন হয়েছে। কোমড় সমান সিল্কি চুল গুলো কেমন এলোমেলো। আগের মতো আর ঝরঝরে নয়।রাহান পাইপ বেয়ে সারা’র ছোট মিনি ব্যালকনিটায় এসে ঝুলে আছে।ব্যালকনির দরজা বন্ধ। কিন্তু একটা জানালার পাট খোলা।আর সেই অল্পস্বল্প ফাঁক দিয়ে রাহান সারা কে দেখছে।
রাহান এর মায়া হয়।বুক চিরে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে।নিচে একবার গার্ড এর দিকে তাকায়।একজন গার্ড রাহান কে পাইপ বেয়ে উপর উঠতে সাহায্য করেছে।রাহান গার্ড এর দিকে তাকিয়ে কিছু ইশারা করতে গার্ড লাইট নিয়ে চলে গেলো।
রাহান রেলিঙের ফাঁকে পা দিয়ে উঠার চেষ্টা করতেই পা লেগে একটু ফুলের টব কাত হয়ে পরে গেলো।রাতের নিস্তব্ধতায় ভালোই শব্দ হলো।সারা চমকে উঠলো। ভীতু চোখে ব্যালকনির দিকে দৃষ্টিপাত করতেই লম্বাটে পুরুষের এক অবয়ব দেখতে পেলো। কিঞ্চিৎ সময় লাগলো মানুষ টা কে বুঝতে।বসা ছেড়ে এল দৌড়ে দরজা খুলে ব্যালকনিতে চলে গেলো।সবার আগে নিচে তাকালো।পরপরই রাহান কে টেনে নিয়ে ভেতরে আসতে আসতে ভীতু স্বরে জিগ্যেস করলো,

-“আপনি বাড়িতে কি করে প্রবেশ করলেন?এতো টা উঁচু কি করে আসলেন?কেউ দেখেনি?”

সারা’র বাচ্চা বাচ্চা প্রশ্নে রাহান ক্লান্তিতে চোখ পিটপিট করে তাকালো সারা’র চিন্তিত মুখপানে।

-“সেসব তোকে জানতে হবে না।
শুনলাম খাওয়াদাওয়া করছিস না ঠিক মতো?
এই কথা কেনো বলছিস না? আমি এতো কিছু কার জন্য করছি?তোর জন্য।আর তুই আমার সব কিছুর এই দাম দিচ্ছি?”

সারা কোনো কথা বলছে না। রাহান সারা’র দুই বাহু ঝাঁকিয়ে জিগ্যেস করে।
সারা চোখ টলমল করে। রাহানের হাত সরিয়ে আলগোছে মাথা রাখে রাহানের শক্ত পোক্ত বুকে।রাহান একদম চুপ হয়ে গেলো। নিজেও এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আরেক হাত সারা’র মাথায় রাখতেই সারা ফুঁপিয়ে শব্দ করে।তবে কাঁদে না। ধরে আসা গলায় বলল,

-“আমার আপনার জন্য কষ্ট হয়।এতো ভালো ভালো খাবার আমার গলা দিয়ে নামে না।আপনি যেখানে এতো কষ্ট করছেন সেখানে আমি এসি রুমে আরাম-আয়েশ দিন পাড় করছি।”

-“চাকরি পেয়ে গেলে তো শেষ। আর কিসের কষ্ট?এটা তো আমায় আজ হোক কাল হোক করতেই হতো।আর সবচেয়ে বেশি খুশির খবর হচ্ছে পরশু যে ইন্টারভিউ টা দিয়েছি সেটা থেকে আমায় আজ ই-মেইল পাঠিয়েছে দেখা করার জন্য।”

রাহানের হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের ভালো লাগে।তবে হঠাৎ কিছু মনে হতে মলিন হয় মুখ।মলিন কণ্ঠেই বলে উঠলো,

-“যদি সিলেক্ট না করে?”

-“নেগেটিভ কেনো ভাবছিস?পজিটিভ ভাব।”

সারা আবার দুই হাতে জড়িয়ে ধরে রাহান কে।

—-

-“রাহান ভাইয়ের চাকরি হয়েছে।আমার যে কি খুশি লাগছে।”

সাদনান রুমে প্রবেশ করা মাত্র প্রিয়তা উপরোক্ত কথা গুলো বলে উঠলো।
সাদনান পাঞ্জাবির বোতাম খুলতে খুলতে ভ্রু কুঁচকে সন্দিহান কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,

-“কি ব্যাপার তোমার কেনো এতো খুশি লাগছে?”

-“আপনি বুঝবেন না।
আমি তো জানি সারা এই পনেরো দিনে কত টা কষ্ট পেয়েছে। আর চাকরি পেয়েছে তাই বাবা আর এখন অমত করতে পারবে না।তাহলে সারা আর কষ্ট পাবে না।”

সাদনান বউয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। গা হতে পাঞ্জাবি খুলে প্রিয়তার হাতে দিয়ে টাওয়াল হাতে ওয়াশ রুমের উদ্দেশ্য চলে যেতে যেতে বলল,

-“সোফায় দু’টো প্যাকেট রাখা আছে।
দেখো ওগুলো একটা বিয়ের জন্য আরেকটা হলুদের।”

প্রিয়তা সাদনানের কথা অনুযায়ী প্যাকেট খুলে দেখলো।সব কমপ্লিট।কোনো কিছু বাদ রাখে নি।একদম জুয়েলারি থেকে শুরু করে সবই আছে। প্রিয়তা অবাক হলো।সবে তো চাকরি হয়েছে। তবে কি বিয়ের ডেইটও ফিক্সড করে ফেলেছে?তাহলে ও কিছু শোনেনি কেনো?
প্রিয়তা প্যাকেট গুলো কাবডে তুলে রেখে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে রইলো।রাত তখন একটা ছুঁই ছুঁই করছে।সাদনান বেরিয়ে এলো সাত কি আট মিনিট এর মধ্যে।শাওয়ার নেই নি।শুধু গা মুছে নিয়েছে। সকালে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে।তারউপর সারা দিন বৃষ্টি আবহাওয়া ঠান্ডা।সাদনান টাওয়াল সোফায় রেখে বিছানা থাকা সবুজ রঙের গেঞ্জি টা পড়ে নিলো।চপ্পল খুলে বিছানায় পা তুলে গুটিশুটি মেরে বউয়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। প্রিয়তা নড়েচড়ে বসলো। এটা যেনো এই পুরুষের রোজকার নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রিয়তা সাদনানের চুলে হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে জিগ্যেস করলো,

-“আপনি এতো আগে কেনো শপিং করে নিয়ে এসছেন?
মাত্র চাকরি হয়েছে বিয়ে এখনো অনেক দূর।”

-“কে বলেছে?
কাল সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ।বাবা-র সাথে আমি রুমে আসার আগে এব্যাপারে কথা বলে এসছি।”

-“দাদু?”

-“দাদু নিজেই সব আয়োজন করছে।”

সাদনান বউয়ের পেটে মুখ গুঁজে সেখানে নাইটি সরিয়ে অধর স্পর্শ করে বলে উঠলো,

-“আমার অস্তিত্ব কবে এখানে আসবে?”

প্রিয়তা লজ্জায় মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিলো।সব সময় মুখে মুখে যা-ই বলে কিন্তু সাদনান নিজে কিছু বললে প্রিয়তার লজ্জায় তখন কান গরম হয়ে আসে।সাদনান বউয়ের লজ্জা মাখা মুখপানে চেয়ে শব্দ করে হেঁসে বউ কে এক ঝটকায় বিছানায় শুইয়ে দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গলায় মুখ গুঁজে নেশাতুর কণ্ঠে বলে উঠলো,

-“এবার তাহলে সত্যি সত্যি অস্তিত্ব আনার মিশন শুরু করি! বউ লজ্জা পায় এখন।”

——

-“দেখো মাইশা ও তোমার মতো করে হাসে।
কিউট গালে কি সুন্দর টোল পড়ে।মাশা-আল্লাহ।
ঠোঁট গুলো তোমার মতো চিকন গোলাপি।”

আয়ানের কথা শুনে মাইশা হাসলো।আজ পাঁচ মাস নাগাদ এই কথা গুলো আয়ান রোজ বলে।
কিন্তু ছেলে পুরোই বাবা-র মতো দেখতে হয়েছে।যদিও মাইশার মতে।কিন্তু সবাই বলে মিশান মাইশার কার্বন কপি।শুধু হাত পায়ের আঙ্গুল বাবা-র মতো লম্বা লম্বা।মাইশার ভাবনার মাঝেই আয়ান ছেলে কে দোলনা থেকে তুলে কোলে নিয়ে বিছানায় বসাল।ইদানীং ছেলে তার দোলনা বেশি পছন্দ করে না।বিছানায় বসালে বসে এদিকে সেদিকে হামাগুড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে।আবার দাদা,পাপা, মামা ডাকে।আর কাউ কে না।মাইশা তখন কান্না পায়।ছেলে কে নয় মাসের বেশি সময় পেটে ধারণ করলো সে।আর ছেলে?সে গুষ্টি শুদ্ধো লোকে ডাকে।শুধু মা কে ডাকে না।তখন আয়ান দম ফাটা হাসিতে লুটিয়ে পড়ে।বাবা-র সাথে সাথে ছোট মিশানও হাসে।কি বুঝে কে জানে।মাইশার তখন সব মন খারাপ দূর হয় ছেলের হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে।

-“ওর মনে হয় ক্ষুধা পেয়েছে।
তুমি ফিডিং করিয়ে দাও।আমি গোসল করিয়ে রেডি করে দেব।বিকেলে তো আবার মির্জা বাড়িতে হলুদ অনুষ্ঠান অ্যাটেন্ড করতে হবে।”

#চলবে….

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ