Monday, October 6, 2025







আমার তুমি ২ পর্ব-২৬+২৭

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_২৬
#জান্নাত_সুলতানা

-“রেডি হয়ে নাও জান।
আমাকে বেরুতে হবে।”

মাত্রই সকালের নাস্তা করে রুমে এসছে প্রিয়তা।সাদনান একটু আগে রুমে এসছে।আর প্রিয়তা রুমে আসা মাত্র সাদনান উপরোক্ত আদেশ টা করলো।প্রিয়তা দৃষ্টি এলোমেলো ঘুরালো।তার আজ থাকতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কথা টা বলার মতো সাহস সঞ্চয় করে উঠতে পারছে না। সাদনান প্রিয়তা কে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো। বিছানা ছেড়ে ওঠে এগিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে প্রিয়তা কে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। প্রিয়তা মৃদু কেঁপে ওঠে। গলা জড়িয়ে ধরলো সাদনানের।সাদনান এক হাতের তর্জনী আঙ্গুল উঁচিয়ে প্রিয়তার কপালে এলোমেলো চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিতে দিতে বলল,

-“আই নো।তোমার থাকতে ইচ্ছে করছে। বাট সরি জান।আমার বউ আমি শ্বশুর বাড়ি রেখে নিজের বাড়ি থাকতে পারবো না।”

-“আপনি চলে আসবেন।”

প্রিয়তা হঠাৎ কথা টা বলে পরপরই মাথা নিচু করে নিলো।সাদনান যে কিছুতেই রাজি হবে না।ভালোই জানা আছে।

-“একজন মন্ত্রী হয়ে রোজ শ্বশুর বাড়ি পরে থাকা টা ভালো দেখায় না।”

সাদনানের থমথমে কণ্ঠস্বর শুনে প্রিয়তা নিজেও থমথমে খেলো। মানুষ টা বড্ড খুঁতখুঁত টাইপ।দু’দিন এর তো ব্যাপার একটু ম্যানেজ করে নিলে কি এমন ক্ষতি হয়!

——-

সারা আর প্রিয়তা লিভিং রুমের পাশে যে বারান্দায় টা রয়েছে সেখানে বসে আছে। এখন বিকেলে। প্রিয়তা আর সাদনান আজ দু’দিন হয় মির্জা বাড়ি থেকে ফিরে এসছে।প্রিয়তা ঘুম থেকে ওঠে এসছে।এতোক্ষণ আয়না ইনিয়া ও বসে ছিল।কিন্তু ইনিয়া বাইরে যাওয়ার জন্য কান্না করছিল তাই আয়না শাশুড়ী কে ইনিয়া কে নিয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য দিতে গিয়েছে।অতঃপর সে রাতের রান্নার কাজে লেগে পড়বে।যদিও সব কাজের লোক করে দিবে।তারউপর সাথে সুফিয়া বেগম থাকবে।প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই সারা হঠাৎ হাই তুলে বলে উঠলো,

-“শরীর টা কেমন করছে।
এখন সন্ধ্যা হয়ে আসছে।শোয়াও যাবে না।”

-“চা করে নিয়ে আসি ভালো লাগবে।”

প্রিয়তার কথায় সারা ভাবলো সত্যি এক কাপ চা হলে হয়তো শরীর টা ভালো লাগবে।তাই আর বারণ করে না। প্রিয়তা চলে গেলে সারা আবার একটা হাই তুলে ওঠে দাঁড়াল। এগিয়ে গিয়ে বারান্দার গ্রীল ধরে বাইরে তাকালো।অদূরে বাগানে ইনিয়া কে দেখা যাচ্ছে। দাদির সাথে গল্প করতে করতে সে দাদি কে এদিক ওদিক নিয়ে ছুটোছুটি করছে।হঠাৎ পেছনে কারোর আসার শব্দ পেয়ে সারা ভাবলো প্রিয়তা এসছে। তাই পেছনে না তাকিয়ে বলল,

-“দেখ প্রিয় কি সুন্দর লাগছে দুই দাদি নাতনি কে।
মাশাল্লাহ কারোর নজর না লাগে।
জানিস আমি ভাবছি বিয়ে টা তাড়াতাড়ি করে নেব।অতঃপর বছর বছর একটা করে বাচ্চা নিয়ে শ্বাশুড়ির কাছে দিয়ে রাখব।আর আমি বসে বসে তাদের কাহিনি দেখবো।”

-“আমিন।
তোর মনের ইচ্ছে আল্লাহ তায়ালা অতিশীঘ্র পূর্ণ করুক।”

চমকালো সারা।বুকের ভেতর ধুম ধুম শব্দ করে হৃদপিণ্ড টা অস্বাভাবিক ভাবে লাফঝাপ শুরু করে দিলো।মস্তিষ্ক জানান দিলো এটা সেই অতিপরিচিত পুরুষের কণ্ঠস্বর। কানে যেনো কথা গুলো ঝংকার তুললো।
মাথা ঘুরিয়ে পেছনে ফিরলো তড়িৎ গতিতে।
কোমড়ে দুই হাত রেখে রাহান কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে থমথমে খেলো।কি বলবে কোনো শব্দ গলা দিয়ে বেড় করতে পারলো না।
রাহান দু কদম এগিয়ে এলো।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করলো সারা কে।পরপরই গম্ভীর কণ্ঠে জানালো,

-“তোর ডজন খানেক বাচ্চার আবদার অতিদ্রুত পূর্ণ করে দেওয়ার ফার্স্ট মিশন আমি আজ থেকে পুরোদমে শুরু করে দেব।বি রেডি।”

সারা বিস্ময় চোখ বড়ো বড়ো হয়ে এলো।মনের কোণে প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি দেয় কি করবে এই মানব?
সারা ভাবনায় ভাটা পড়ে প্রিয়তার কণ্ঠ শোনে,

-“ভাইয়া আপনাকে চা দেব?”

-“আরে মন্ত্রীর বউ কি বলে!মন্ত্রী মশাই জানতে পারলে আমার তেরো টা বাজিয়ে দিবে।আমি অন্য কাউ কে বলে কফি নিচ্ছি।”

রাহান মজার ছলে কথা গুলো বলতে বলতে বারান্দা থেকে চলে গেলো।
প্রিয়তা এগিয়ে গিয়ে সারা’র হাতে চায়ের কাপ দিলো।সারা ধন্যবাদ দিয়ে চায়ের কাপে চুমুক বসায়।

———

তিন্নি ঘুমঘুম চোখে শোয়া থেকে ওঠে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো সদর দরজার দিকে। কলিং বেল বেজেছে দু’বার। কবির আসে এসময়ে।তিন্নি তড়িঘড়ি করে দরজা খুলে অপরাধী কণ্ঠে বলে উঠলো,

-“সরি, সরি এত্তো গুলো সরি।
ঘুমিয়ে ছিলামম,,,

কবির এর দিকে তাকিয়ে কথ আর সম্পূর্ণ করতে পারে না তিন্নি। কবির হাতের দু’টো শপিং ব্যাগ আর একটা পলিথিন ব্যাগ এগিয়ে দিলো তিন্নির দিকে। তিন্নি বিস্ময় নিয়ে সেগুলো হাতে নিয়ে কবির এর কাঁধের থেকে কালো ল্যাপটপ এর ব্যাগ টাও খুলে হাতে নিতে নিতে বলল,

-“আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন।
আমি কফি নিয়ে আসছি।”

-“না।কফি লাগবে না।
তুমি রুমে এসো।”

কবির কথা শেষ রুমের উদ্দেশ্য পা বাড়ালো।তিন্নি রান্না ঘরে গিয়ে পলিথিন থাকা আইসক্রিম এর বক্স ফ্রিজে রাখে।কবির রোজ আসার সময় কিছু না কিছু হাতে করে নিয়ে আসে। কালাম খাঁন নিজেও আনে।তিন্নির নিকট এসব প্রথম। কখনো এমন আদর ভালোবাসা পায় নি সে।তবে এখন নিজে কে সুখী মনে হয়। তিন্নি কথা গুলো ভাবতে ভাবতে হাতে থাকা শপিং ব্যাগ গুলো অল্প ফাঁক করে নেড়েচেড়ে দেখলো।একটা ব্যাগে একটা কালো শাড়ী রয়েছে। আরেকটা ব্যাগে একটা বেলি ফুলের মালা আরো কিছু কসমেটিক। তিন্নি এসব দেখে মনে মনে খুশি হলো। আবার অল্পস্বল্প রাগ হলো।বিয়ের পর থেকে কবির এই তিন মাসের মধ্যে না হলেও পনেরো টার বেশি শাড়ির হবে এনে দিয়েছে।রুমে গিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,

-“রোজ কেনো এসব আনতে হবে?
আর আনবেন না।”

-“আমার ইচ্ছে।
বাই দ্য ওয়ে যাও এগুলো পড়ে রেডি হয়ে এসো।”

-“কোথায় যাব?”

-“এতো কোশ্চেন কেনো করো তুমি?
যা বলেছি সেটা করো।”

তিন্নি মুখ ভোঁতা করে কিছু বিড়বিড় করে রুম হতে বেরিয়ে যেতে নিলেই কবির বলে উঠলো,

-“কোথায় যাচ্ছো তুমি রুমে পড়ে নাও।আমি ফ্রেশ হয়ে নেই।”

কবির ওয়াশ রুমে চলে গেলে তিন্নি আস্তে ধীরে তাই করে।একদম তিন্নির শাড়ী পড়া শেষ কবির ওয়াশ রুম হতে বেরিয়ে এসে তিন্নির শাড়ির কুঁচি ঠিক করে দিলো।অতঃপর আলমারি থেকে একটা কালো রঙের পাঞ্জাবি বেড় করে পড়ে নিলো।ড্রেসিং টেবিলের সামনে তিন্নির পাশে দাঁড়িয়ে নিজেও রেডি হয়ে নিলো।তবে রেডি হওয়া শেষ হলেও কবির সেখানে আয়নায় তিন্নির দিকে তাকিয়ে থাকে।তিন্নি বিষয় টা বুঝতে পেরে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,

-“চুরি করে কেনো দেখছেন?আমি কি পাশের বাসার ভাবি?”

-“চুরি করে কেনো দেখবো?আমার বউ আমি যেভাবে খুশি দেখবো।দরকার পড়লে কোলে নিয়ে বসে বসে দেখবো।বউ আমার চুরি করে দেখার প্রয়োজন পড়বে না।”

কবিরের অকপটে জবাবে তিন্নি থমথমে খেলো।

—–

রাতে সাদনান বাড়ি ফিরে দেখলো বউ তার আজ ঘুমিয়ে পড়েছে।একটু অবাক হলো।বউ তার তো এমন করে না খুব একটা। ততই রেগে থাকে অভিমান করে সে না আসা অব্ধি ঘুমায় না।সাদনান এসব ভাবতে ভাবতে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে রুমে এসে বিছানায় বসতেই নজর পরে বউয়ের চোখ ফুলে আছে।আর পাশেই ব্যথার ঔষধ দেখে হঠাৎ কিছু মনে পড়লো।ফোনের সাইড বাটন চেপে কিছু দেখে বিড়বিড় করে বলল,

-“শীট।
আমি ভুলে গেলাম কি করে!”

রুমে থাকা ফ্লাক্স থেকে হট ব্যগে পানি নিলো।বিছানায় এসে বউয়ের পাশে বসে প্রিয়তা কে সোজা করে শুইয়ে দিলো।প্রিয়তা নড়েচড়ে অল্প চোখ খুলে সাদনানের দিকে নিবুনিবু চোখে তাকিয়ে মৃদু কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,

-“কখন এসছেন?
খাবার খেয়েছেন?”

-“আমাকে বলো নি কেনো?কখন থেকে হচ্ছে এমন?”

সাদনান প্রিয়তার প্রশ্ন সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে নিজে প্রশ্ন করলো। ততক্ষণে প্রিয়তার জামা সরিয়ে তলপেটে হট ব্যাগ ধরেছে।প্রিয়তা গরম ছোঁয়া পেয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।পরপরই চোখ খুলে বলল,

-“ততটাও গুরুতর নয় বিষয় টা।সবার হয়। স্বাভাবিক ব্যাপার। প্রতিবারই এতো টা কেনো বিচলিত হোন আপনি?”

সাদনান কোনো জবাব দিলো না। বউয়ের পেটে হট ব্যাগ ধরে বসে থাকে অনেক টা সময় নিয়ে।প্রিয়তা এটাসেটা বলছে।সাদনান হু, হ্যাঁ করে শুধু সঙ্গ দিচ্ছে।সারা দিনের ক্লান্তি তার বউয়ের মুখ দেখলে চলে যায়।আর যখন মেয়ে টা সারাদিনের কথা ঝুলি নিয়ে বসে তখন সারাদিনের টেনশন ভুলে যায়।সুখ সুখ লাগে। অদ্ভুত এক প্রশান্তি লাগে মনের মধ্যে।আর এই সবকিছুর কারণ যে সে যদি কষ্ট পায় অসুস্থ থাকে তাহলে সে কি স্থির থাকতে পারে!
অনেক্ক্ষণ পর প্রিয়তা হট ব্যাগ সাদনানের হাত থেকে টেনে নিয়ে পাশের টেবিলে রেখে দিলো।সাদনান সুইচ টিপে লাইট অফ করে এসে বউ কে বুকে আগলে নিয়ে শুয়ে পড়লো।অনেক সময় সেভাবে থাকার পর প্রিয়তার মাথার তালুতে চুলের ভাঁজে চুমু খেয়ে আওড়াল,

-“আমার তুমি টা আমার পূর্ণতা। আমার মানসিক শান্তি তুমি।তোমার কিছু হলে আমার বুকে তীব্র যন্ত্রণা হয়।সব কিছু এলোমেলো লাগে।এতে আমার কি দোষ!”

#চলবে….

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_২৭
#জান্নাত_সুলতানা

-“না যাই প্লিজ।
আপনিও দেশে শিফট করেন।”

রিধির কথায় ওয়াজিদ দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। এগিয়ে এসে বিছানায় রিধির পাশে বসে ওর একটা হাত ওয়াজিদ এর হাতের মুঠোয় পুরো নিলো।বোঝানোর স্বরে বলল,

-“রিধু এমন টা কথা ছিল না।
যেতে হবে দু’দিন পর ফ্লাইট।”

-“তো আপনি যান।
তারপর সব সেটেল্ড করে চলে আসুনন,,,

-“মেরে ফেলবো।তুমি ছাড়া এতোদিন অসম্ভব।
যতদিন থাকি তোমাকেও যেতে হবে।”

ওয়াজিদ রিধি কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কথা গুলো বলে উঠলো।রিধি হাসলো।মানুষ টা বড্ড বেশি ভালোবাসে ওকে।বিয়ের পর একটা রাতও গিয়ে মির্জা বাড়ি থাকতে দেয় নি।

—–

তিন্নি আজ ভার্সিটিতে এসছে।খুব সকালে।কবির নিজেও তিন্নির আগে এসেছে।
তবে তিন্নি এতো তাড়াতাড়ি ভার্সিটিতে এসছে কবির জানতো না।তাকে খবর টা বাড়ি থেকে জানিয়েছে কাজের লোক।সাথে এটাও জানিয়েছে তিন্নি সকালে কোনো খাবার খায় নি।তখন থেকে কবির এর মেজাজ তুঙ্গে। শুধু ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে সেজন্য কিছু করতে পারে নি। তবে নিজের ক্লাস ছিল তৃতীয় ঘন্টায়।কিন্তু কবির আজ ক্লাস করাবে না।একজন পিয়ন দিয়ে তিন্নি কে ডেকে পাঠিয়েছে। আর এখন বসে বসে তিন্নির আসার প্রহর গুনছে।এদিকে তিন্নি কবিরের কেবিনের সামনে এসে অনেক সময় হয় দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। সে জানে কবির এতোক্ষণ সব জেনে গিয়েছে আর সেই জন্যই তাকে ডেকে পাঠিয়েছে। আর মানুষ টা যে ওর উপর রেগে আছে সেটাও ভালোই বুঝতে পারছে।তবে সব ভয় ঠেলে সরিয়ে কেবিনে প্রবেশ করলো। কবির ল্যাপটপ স্কিনে তাকিয়ে ছিল।কারোর রুমে প্রবেশ করার শব্দ বুঝতে বাকি থাকে না কে এসছে।একবার চোখ তুলে সামনে তাকলো।পরপরই দৃষ্টি সরিয়ে আদেশের স্বরে বললো,

-“বসো।”

তিন্নি কাঁপা কাঁপা পা জোরা টেনে নিয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়ে রইলো। বসার মতো সাহস কুলাতে পারে না।কবির শান্ত। তিন্নির সেটা দেখে আরো বেশি ভয় লাগছে। তিন্নি কে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কবির এবার কিছু টা খেঁকিয়ে ওঠে বলে উঠলো,

-“বসতে বলি নি! বসো।”

তিন্নি চট করে ঘুরে এগিয়ে গিয়ে কবির এর কোলে বসলো।কবির কিছু টা ভ্যাবাচ্যাকা খেলো।পরক্ষণেই বউয়ের কোমড় দুই হাত রাখলো।মিশিয়ে নিলো নিজের সাথে। তিন্নি কবির এর গলা জড়িয়ে ধরে বাচ্চা ফেস করে বলল,

-“জানেন আমি যে এতিমখানায় থাকতাম। সেখানের একজন মহিলা আছে বৃদ্ধা।আমরা সবাই ওনাকে দাদি ডাকি।ওনি অসুস্থ। তাই সকালে আপনি বেরিয়ে আসার পর আমিও,,,

-“না খেয়ে দেখতে চলে গিয়েছিলে।
আমাকে বললে আমি নিয়ে যেতাম না?একা কোথাও যেতে কত বার বারণ করেছি। কেনো শোনো আমার কথা?”

-“আমার অভ্যাস আছে একা একা চলাফেরা করার।”

-“কিন্তু এখন তুমি একা নয়।
তোমার হাসবেন্ড রয়েছে। একটা বাবা রয়েছে।অনেক বড় একটা পরিবার হয়েছে।তারচাইতেও ইম্পরট্যান্ট কথা আমার ভয় হয়।আতংকে থাকি।”

তিন্নি একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকে অনিমেষে কবিরের চিন্তিত মুখপানে।
এর আগে কখনো ওকে নিয়ে এভাবে কেউ ভাবে নি, হারানোর ভয় পায় নি।এখন এসব নিজের মনে বাঁচার তীব্র ইচ্ছে জায়গায়। এই মানুষ গুলো কে নিয়ে অনেক বছর বাঁচতে ইচ্ছে করে সুন্দর সুন্দর মূহুর্ত কাটাতে ইচ্ছে করে। আর সেগুলো সৃতি বন্দী করে ভবিষ্যতে সেগুলোর সৃতিচারণ ঘটাতে চায়।
তিন্নির ভাবনার মাঝেই কবির ব্লুটুথ চাপলো দুইবার।বারো পনেরো সেকেন্ড এর মাথায় কাউ কে বলল,

-“হ্যাঁ একটা বিরিয়ানির প্যাকেট, একটা আইসক্রিম, হ্যাঁ,না আর কিছু না।হুম কেবিনে দিয়েন।”

তিন্নি ভ্রু কুঁচকে নিলো।মানুষ টা কি পাগল হলো?এখন সাড়ে বারো টা অলরেডি বেজে গিয়েছে। আর ঘন্টা দুই পর বাড়ি চলে যাব।এখন এমন পাগলামির মানে হয়?
তিন্নি কবিরের কোল থেকে উঠার চেষ্টা করতে করতে বলল,

-“একটু পর বাড়িতে চলে যাব।
আমি যাচ্ছি।”

-“এক পা নাড়াবে না খবরদার।
বসো।”

তিন্নি চুপ করে ওঠে এসে সামনে চেয়ারে বসলো।কবির ফের ল্যাপটপে মনোযোগ দিলো। মিনিট পাঁচ মিনিট এর মাথায় কেবিনের দরজায় টোকা পড়ে।কবির উঠে গিয়ে একটা প্যাকেট হাতে ফিরে এলো।
তিন্নির সামনে রেখে আদেশের স্বরে বলে উঠলো,

-“একটাও যেনো পড়ে না থাকে।নাউ স্টার্ট।”

তিন্নি একপলক তাকালো খাবার এর দিকে। এক প্যাকেট বিরিয়ানি তিন্নি চোখ বড় বড় হয়ে এলো।সে আজ পর্যন্ত কখনো এক প্যাকেট বিরিয়ানি সহিসালামতে খেতে পারে নি।যদিও তিন্নির বিরিয়ানি খুব ফেবারিট। তারপরও কেনো জানি বেশি খেতে পারে না। ঠেলেঠুলে অর্ধেক। তিন্নি কে একই ভাবে বসে থাকতে দেখে কবির কিছু টা ধমকের স্বরে বলল,

-“বসে থাকার জন্য ডাকি নি আমি তোমায়।
খাবার খেয়ে ঝটপট ক্লাসে যাও।”

তিন্নি ওঠে গিয়ে বেসিন থেকে হাত ধুয়ে এসে প্যাকেট খুলে কবিরের কাছে চেয়ার টা টেনে নিয়ে বসলো।অতঃপর নিজের সাথে কবির কেও খাইয়ে দিলো। কবির প্রথমে ধমক দিলো পরে বউয়ের টলমল চোখের দিকে তাকিয়ে মায়া হয়।তাই কিছু না বলে খেয়ে নিলো।

—-

সাদনান গাড়িতে বসে আছে।এখন দুপুর মূলত বউ আর বোন কে নিতে ভার্সিটির পাশে অপেক্ষা করছে।পাশে রাহান বসে আছে।সাদনান ফোনের স্কিনে তাকিয়ে আছে। রাহান তখন বলল,

-“বলছিলাম বাবা-র সাথে কি কথা বলব?”

-“এতো তাড়া কিসের!আস্তে ধীরে হোক না।”

-“যা সালা তুই তাহলে জানিস না।তোর বাপের মতিগতি আমার ঠিক লাগছে না।”

-“কেনো?”

-“আমাদের নেক্সট ডিল টা যেই কোম্পানির সাথে হওয়ার কথা। ওই কোম্পানির মালিকের ছেলে।
বিদেশ রয়েছে। লেখাপড়া শেষ হয়তো খুব তাড়াতাড়ি দেশে চলে আসবে।”

-“এতে তোর কি সমস্যা?”

-“তোর বাপের মনে অন্য কিছু চলছে।
দেখলি না সেদিন ওই ব্যাটা কে বাড়িতে ডেকে কত আদর আপ্যায়ন করলো।”

সাদনান এবার একটু ভাবুক হলো।সত্যি সেদিন একজন বাড়িতে এসছিল।তার বাবা আজ্জম মির্জা সে কি এলাহি আয়োজন করে লোকটা কে আমন্ত্রণ জানালো। তবে সে বিষয় টা তেমন পাত্তা দেয় নি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে পাত্তা দেওয়া প্রয়োজন।
সাদনান কিছু বলবে তার আগেই সারা আর প্রিয়তা চলে এলো।তাই আর কেউ এব্যাপারে কিচ্ছু বলল না।

——-

মির্জা বাড়ির সবাই রাতের খাবার খেতে বসেছে।আজ সবাই এক সাথে হয়েছে অনেক দিন পর।খাবার শেষ লিভিং রুমে বৈঠক বসলো।অনেক্ক্ষণ গল্পগুজব করলো।রাত বেশি হচ্ছে বিধায় জাফর মির্জা আম্বিয়া মির্জা কক্ষে চলে গেলো। সারা রাহাত আয়না প্রিয়তা ওরাও যে যার রুমে চলে গেলো।
রাহান সাদনান আজ্জম মির্জা সুফিয়া বেগম সালেহা বেগম মফিজুর মির্জা রোজিনা বেগম শুধু বসে রইলো।সাদনান বাবা আর চাচার ব্যবসার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছে সে-সব শুনছে।এক পর্যায়ে আজ্জম মির্জা ছেলে কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

-“তোমার সাথে অনেক দিন ধরে একটা বিষয় আলোচনা করব করব করে আর বলা হচ্ছে না।”

-“এখন বলো।
শুনছি।”

সাদনান গম্ভীর কণ্ঠে বলল।
আজ্জম মির্জা একটু নড়েচড়ে বসলো।সবার দিকে একবার তাকিয়ে বলল,

-“ইয়ে মানে!বলছিলাম কি বিশিষ্ট শিল্পপতি কাদের শেখ। ওনার সাথে একটা ডিল নিয়ে কথাবার্তা চলছে।ডিল টা আমাদের কোম্পানি পেলে ভীষণ ভালো হবে। না পেলে তেমন কোনো লোকসান হবে না।পেন্ডিং আছে এটা।এখন ওনার সাথে কোনো ভাবে আমাদের সম্পর্ক টা যদি মজবুত করা যায়।তাহলে ডিল কনফার্ম।”

-“এরজন্য কি করতে হবে?”

সাদনান কোনো ভণিতা ছাড়া জিগ্যেস করলো। আজ্জম মির্জা এই পর্যায়ে এসে একটু ভিতু হলেন।আমতা আমতা করে জানালো,

-“সেদিন বাড়ি এলো না।
তখন সারা কে দেখেছে ওনার ছেলে মালদ্বীপ রয়েছে বর্তমানে খুব শীগ্রই দে-শে ফিরবে।বিয়ের ব্যাপারে এগুতে চাইছে।”

-“না করে দাও।
ডিলও করতে হবে না। আমি আমার বোনের বিয়ে ঠিক করে রেখেছি।”

সাদনানের শান্ত কণ্ঠে বিস্ফোরণ ঘটালো সবার মাঝে। রাহান নির্বিকার সাদনানের পাশে বসে আছে। আজ্জম মির্জা কিছু টা উচ্চস্বরে বলে উঠলো,

-“কি সব বলছো?
বিয়ে ঠিক করে রেখেছো মানে কি?ছেলে কি করে?জাতবংশ বাড়ি কোথায়?”

-“কাল কথা বলছি এব্যাপারে তোমার সাথে। এখন আমার বউ নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে পড়েছে। আমাকে যেতে হবে।”

কান ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলো সবার।কেমন একটু বেশরম শোনাল বাক্য গুলো। সাদনান সে-সব উপেক্ষা করে বসা ছেড়ে ওঠে দাঁড়াল।গেঞ্জি টেনেটুনে ঠিক করে উপরে নিজের রুমে চলে এলো।

প্রিয়তা বিছানায় শুয়ে আছে। হাতে ফোন। সাদনানের যা দেখে মেজাজ খারাপ হলো।বউ কেনো রাতে ফোন নিয়ে শুয়ে থাকবে?জামাই আছে জামাই কে সময় দিবে।এগিয়ে গেলো।প্রিয়তার হাত থেকে ফোন টেনে নিয়ে দূরে সোফায় ছুঁড়ে ফেলে দিলো। প্রিয়তা আকস্মিক ঘটনায় ভড়কে গিয়ে শোয়া থেকে ওঠে বসে গেলো।সাদনান কে চোখ লাল করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আস্তে করে একবার ঢুক গিলে নিলো। সাদনান বাড়ি থাকলে প্রিয়তা কখনো ফোন হাতে নিতে পারে। সাদনান পছন্দ করে না।প্রিয়তা নিজেও ধরে না ফোন। কিন্তু এখন ঘুম আসছিল না।আর সাদনান রুমে ছিল না সেইজন্যই ধরে ছিল।কিন্তু কে জানতো এই রাক্ষস গম্ভীর পুরুষের আগমন এখনই ঘটবে!
সাদনান প্রথমে রেগে থাকলে পরবর্তীতে রাগ পড়ে যায়।সামন্য অসুস্থ বউ।এমন ব্যবহার করা মোটেও ঠিক হয় নি।

সাদনান হঠাৎ করে প্রিয়তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। প্রিয়তা একটু চমকে যায়।তবে নিজে কে ধাতস্থ করে সাদনানের ঘনকালো জঙ্গলের ন্যায় চুলের ভাঁজে আঙ্গুল চালায়।দু-তিন মিনিট এভাবে অতিবাহিত হলো।কেউ কোনো কথা বলল না। হঠাৎ করেই সাদনান বলে উঠলো,

-“ব্যালকনিতে যাবে?
চলো না যাই!”

প্রিয়তা অবাক হলো।আজ মোটেও আকাশে চাঁদ নেই। অন্ধকার আকাশ।মেঘ আকাশে সন্ধ্যের আবার বৃষ্টি হয়েছে।

-“অন্ধকার।”

-“ভয় নেই সুন্দর নারী।
তোমার মন্ত্রী মশাই আছে।”

#চলবে….

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ