আমার তুমি ২ পর্ব-২২+২৩

0
99

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_২২
#জান্নাত_সুলতানা

সকাল থেকে সাদনান প্রিয়তার দেখা পায় নি।রাগে ভেতর ভেতর ফুঁসছে। একবার নিচে তো একবার উপরে নিজের রুমে আসে।প্রিয়তা রান্না ঘর থেকে সবটাই অবলোকন করে।মানুষ টা বাড়িতে খুব বেশি একটা থাকে না।সকালে বাড়ি থেকে বেড় হলে রাত এগারো টার আগে বাড়ি ফিরে না। কখনো তো আবার রাত একটা দেড় টাও বাজে।একটু সময় তো মানুষ টা কে দেওয়া উচিৎ। কিন্তু আজ সেটা সম্ভব হচ্ছে না। বাড়ি ভর্তি মেহমান গিজগিজ করছে। আর এতো কাজের ভীড়ে রুমে গিয়ে বসে থাকা টাও শোভনীয় দেখায় না।

-“আমার একটা কফি!”

সাদনান লিভিং রুম থেকে হাঁক ছেড়ে কফি চায়।রাহানের মা শাড়ীর আঁচলে হাত মুছতে মুছতে রান্না ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো।আসার আগে অবশ্যই একজন কাজের লোক কে কফি বানাতে বলে এসছে।

-“তুই রুমে যা।
আমি কাউ কে দিয়ে পাঠাচ্ছি।”

রাহানের মা জানালো।
সাদনান ঘাড় দুলিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে আবার কিছু মনে পরে বলে উঠলো,

-“ওহ্ হ্যাঁ।
একটু পর কিছু লোক আসবে।নিচের ঘরে নাস্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করো মনি।”

রাহানের মা বলল,

-“সে কি কথা আজকের দিনেও তুই কাজ ক,,,

-“আমার দায়িত্ব অনেক বেশি মনি।
আমি হাত পা গুটিয়ে কি করে বসে থাকি!তাছাড়া বাড়িতে তো আছি।ঘন্টাখানেক সময় শুধু ওনাদের দেব। বিকেলে না অনুষ্ঠান শুরু হবে।”

রাহানের মা আর কিছু বলে না এব্যাপারে। তাগাদা দিয়ে রান্না ঘরে ছুটলো।
সাদনান গটগট পায়ে স্থান ত্যাগ করে।
সাদনানের মা রান্না ঘরে ছিল না।তিনি রান্না ঘরে আসা মাত্র কাজের লোক কে কফি হাতে দেখে সেকেন্ড এর মতো সময় লাগলো কফি যে নিজের ছেলের জন্য যাচ্ছে। তিনি চট করে কিছু ভাবলো।প্রিয়তা কে ডেকে বলল,

-“কফি টা তুই দিয়ে আয়।
আর তুমি আমার সাথে এসো।”

প্রিয়তার হাতে কফির ছোট ট্রে টা দিয়ে সালেহা বেগম কাজের লোকে নিয়ে আম্বিয়া মির্জার রুমের দিকে চলে গেলো। প্রিয়তা মুখ গম্ভীর করে রাখলেও ভেতরে ভেতরে ভীষণ খুশি হলো।একটু সুযোগ পাওয়া গেলো তবে।প্রিয়তা দাঁড়িয়ে আছে দেখে আয়না ভ্রু কুঁচকে নিলো।
এগিয়ে এসে বলে উঠলো,

-“যাচ্ছিস না কেনো?কফি ঠান্ডা হয়ে যাবে।জলদি যা।”

প্রিয়তা বোনের কথায় সম্মতি দিয়ে উপরে রুমের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে।
সাদনান সোফায় বসে আছে। মুখ সব সময়ের মতো গম্ভীর। প্রিয়তার শ্বাস যেনো বেরিয়ে আসার জোগাড়। মানুষ টা এমন কেনো?
সব সময় কেনো এমন ভাবে থাকতে হবে?এই লোক টা কি বোঝে না ছোট্ট প্রিয়তা এই মন্ত্রী সাদনান শাহরিয়ার এমন রূপ গম্ভীর মুখ দেখলে ভেতরে ভেতরে ভয় পায়।

-“আপনার কফি।”

সাদনান বউয়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে কফি টা হাতে নিলো।পায়ের উপর থেকে পা সরিয়ে সোজা হয়ে বসে কফি টা সেন্টার টেবিলের উপর রাখে।প্রিয়তা তখনো চুপ করে দাঁড়িয়ে।
সাদনান বউয়ের দিকে না তাকিয়ে হাত টেনে নিজের কোলে বসাল।
প্রিয়তা কেঁপে উঠল। তবে ভ্রু কুঁচকে সাদনানের গলা জড়িয়ে ধরে এক হাতে সাদনানের কাঁধ থেকে গেঞ্জি সড়িয়ে নিলো।
কাঙ্খিত জিনিসের দেখে না পেয়ে প্রশ্ন করলো,

-“দাগ টা নেই কেনো?”

-“আছে তো।নিচে।”

-“ব্যথা করে?”

সাদনান গম্ভীর হয়ে গেলো।প্রিয়তা হঠাৎ মনে হলো কি ধরণের প্রশ্ন করলো এটা!এই লোকের আবার ব্যথা?সেটা তো গুলি লাগার পরেও মনে হয় পায় নি।যা শক্ত মানুষ।

-“রুমে কেনো আসো নি?”

-“কত কাজ।
বিয়ে বাড়ি।”

-“কাজ করার জন্য কাজের লোক রয়েছে।”

সাদনানের জবাবে প্রিয়তা চুপ করে গেলো।আগে থেকে বাড়িতে তিনজন কাজের লোক ছিলো।সাদনান এখনো আরও দুজন বাড়িয়েছে।কিন্তু তাও আম্বিয়া মির্জা কাজের লোকের কাজ পছন্দ করে না।তাই তো রান্না আর কোনো অনুষ্ঠানের কাজ বেশিরভাগই বাড়ির মেয়ে বউদের করতে হয়।প্রিয়তা আগেও যখন এ বাড়িতে আসতো তখন বোন কে একটু অবসর পেতো না।এই জন্যেই প্রিয়তা বিশেষ করে এই পরিবারের মানুষ গুলো কে বেশি ভালো লাগত না।কিন্তু ভাগ্য? প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই সাদনান কফি মগ হাতে আগে বউয়ের দিকে এগিয়ে দিলো।প্রিয়তা একবার চুমুক দিয়ে সেটা ফের সাদনানের হাতে দিয়ে ওঠে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই সাদনান প্রিয়তা কে টেনে ধরে। কফি রেখে শক্ত হাতে বউ কে নিজের সাথে চেপে ধরে বলল,

-“ছাড়তে ইচ্ছে করে না।”

-“নিচে যেতে হবে।
আপনার না আবার কি কাজ আছে।”

প্রিয়তার কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রুমের বাহির থেকে একজন কাজের লোক জানালো নিচে সাদনানের সাথে দেখা করতে লোকজন চলে এসছে।
সাদনান গম্ভীর কণ্ঠে জানালো,

-“আপনি যান।আসছি আমি।”

তবে বউ কে ছাড়ে না।

-“কাবাডে একটা ব্যাগ রাখা আছে।
সন্ধ্যায় ওগুলো পড়ে নিবে।”

বলতে বলতে নিজের অধর বউয়ের অধর আলতো ছুঁয়ে দিয়ে ছেড়ে দিলো।প্রিয়তা মাথা নেড়ে বলল,

-“আচ্ছা।”

সাদনান আর কিছু বলে না।কফি হাতে রুম হতে বেরিয়ে
যায়।পেছনে পেছনে প্রিয়তাও আসে।

——–

-“এই এই তুই এদিকে কোথায় যাচ্ছিস!ঠ্যাং ভেঙে দেব আর এক পা ওদিকে বাড়ালে।”

রাহান হঠাৎ কোথা থেকে এসে কথা গুলো বলে উঠলো। সারা আকস্মিক এভাবে রাহান কে সামনে দেখে একটু ভয় পেলো।দু কদম পিছিয়ে গেলো।ভ্রু কুঁচকে নিয়ে জানাল,

-“তিন্নি আপু আছে ওখানে।”

-“তিন্নি চলে এসছে।
দেখিস না ওখানে কত ছেলে!”

রাহান ফুঁসে ওঠে বলল।সারা ফ্যালফ্যাল করে রাহানের দিকে তাকিয়ে আবার বাড়ির ভেতর চলে এলো।অদ্ভুত মানুষ।এভাবে বলার কি আছে? একটু সুন্দর করে বলল কি এমন হতো?
রাহান প্রেয়সীর এভাবে নিঃশব্দে স্থান ত্যাগ করায় বুঝতে অসুবিধা হয় না প্রেয়সী অভিমান করেছে।কিন্তু অভিমান করলেও কিছু করার নেই।
এতো এতো মানুষ জন কার নজর আবার পরে বসে।পরে দেখা যাবে তার প্রেয়সী কে নিয়ে আবার টানাটানি শুরু হয়ে গেলো

——

ওয়াসিফ দেওয়ান বেশ আয়োজন করে পুত্র বধূর জন্য হলুদের জিনিস সব পাঠিয়েছে। যদিও জাফর মির্জা নাতনির হলুদ বিয়ের অনুষ্ঠান কোনোটাই কমতি রাখছে না।কিন্তু এসব কোনো ব্যাপার না। এই সব কিছু স্বাভাবিক হলেও অস্বাভাবিক হচ্ছে হলুদের দিন জামাই নিজেও বউ কে হলুদ দিতে এসছে।কিছু মানুষ আঁড়চোখে তাকাচ্ছে। তো কেউ আবার ফিসফিস করছে।কিন্তু মির্জা বাড়ির কারোর এসবে মাথা ব্যথা নেই।যুগ পাল্টেছে। এটা তেমন কোনো আহামরি কোনো ব্যাপার না।ওয়াজিদ আসাতে আরো খুশি হলো সবাই। রিধির মা বাবা ভীষণ খুশি। মেয়ে জামাই যে মেয়ে কে প্রচুর ভালোবাসে এটা নিঃসন্দেহে মানতে হবে।ওয়াজিব এর জন্য রিধির পাশে বসার জায়গায় করা হয়েছে।ওয়াজিদ বসে আছে। রিধি কে সবাই হলুদ দিচ্ছে।

-“আপনি বুদ্ধি কি সব লজ্জার সাথে সাথে গিলে পানি দিয়ে খেয়ে ফেলেছেন?”

রিধির ফিসফিসি কণ্ঠে এরূপ প্রশ্নে ওয়াজিদ থমথমে কণ্ঠে জবাব দিলো,

-“একদম না।”

-“আপনি কেনো আসতে গেলেন?”

রিধি ফের জিগ্যেস করে।ওয়াজিদ আগের ন্যায় থমথমে কণ্ঠে বলল,

-“আমার মনে হচ্ছে না কোনো ভুল করেছি।
কোথাও লেখা আছে হলুদ নিয়ে জামাই আসতে পারবে না।”

-“না সেটা নেই।
কিন্তু মানুষ জন,,,

রিধির সম্পূর্ণ কথা না শুনেই ওয়াজিদ বলল,

-“তুমি ভালো করে জানো রিধু।আমি কে কি বললো এসব ভাবি না।জীবন আমার তো মর্জিও আমার।”

—–

লাল পাড়ের হলুদ শাড়ী।ছোট ছোট এক জোড়া স্বর্নের দুল। গলায় একটা লকেট।ঠোঁটে গোলাপি রঙের লিপস্টিক। লম্বা চুলের মোটা বিনুনি কাঁধের একপাশে রেখে সেটায় একটা বেলি ফুলের মালা পড়িয়ে দিলো সাদনান।
বউয়ের প্রতিবিম্বর ড্রেসিং টেবিলের আয়নার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।প্রিয়তার সাথে একবার চোখাচোখি হয়েছে।
প্রিয়তা লজ্জায় মাথা নুইয়ে রাখলো।

-“এতো লজ্জা পেতে নেই জান।
তবে যে এখুনি একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেলব।”

সাদনানের কথায় প্রিয়তার লজ্জা দিগুণ হলো।লোক টা ইদানীং একটু বেশি বেহায়া কথাবার্তা বলে।শুনলে কান গরম হয়ে আসে।যেমন টা এখন হচ্ছে।
প্রিয়তা সাদনান কে ঠেলে সরাবার চেষ্টা করে বলল,

-“ছাড়ুন।
অনুষ্ঠান কখন শুরু হয়েছে।”

সাদনান প্রিয়তার কথা শুনলো।কিন্তু চুল পরিমাণও হাতের বাঁধন ঢিলে করে না।বরং আগের তুলনায় শক্ত করে চেপে ধরে নিজের সাথে।ঘাড়ে নাক ঘষে অধর স্পর্শ করে কাঁধে। প্রিয়তা কেঁপে ওঠে শক্ত করে নিজের শাড়ী খামচে ধরতেই সাদনান বউ কে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিজের অধরে বউয়ের অধর চেপে ধরে। সময় গড়ায়।কিন্তু সাদনান বউ কে ছাড়ার নাম নেই।প্রিয়তা প্রথমে রেসপন্স করলে মিনিট পেরোলেই শ্বাস আঁটকে আসে।ছুটোছুটি করে।সাদনান বউয়ের অবস্থা বেগিত বুঝতে পেরে ছেড়ে দিয়ে বউ কে নিজের বুকে আগলে নিয়ে জানাল,

-“এখন এটুকুই থাক, বাকি টা রাতে হচ্ছে।”

#চলবে……

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_২৩
#জান্নাত_সুলতানা

-“বাবা-র সাথে কথা হয়েছে?”

কবির ফোন হাতে ব্যালকনি থেকে রুমে প্রবেশ করতেই তিন্নি উপরোক্ত প্রশ্ন টা করে।কবির তিন্নির দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল।গভীর ভাবে মেয়ে টাকে পর্যবেক্ষণ করলো।শাড়ীতে চমৎকার দেখতে লাগছে রমণী কে।সন্ধ্যায় পড়েছে শাড়ী সেই জন্য কিছু টা অবিন্যস্ত, এলোমেলো।লম্বা চুল গুলো খোঁপা বেঁধেছিল।কিন্তু এখন সেটা পুরো এলোমেলো কিছু চুল খোঁপা হতে মুক্ত পেয়েছে।যার ফলস্বরূপ সৌন্দর্য কয়েকগুণ যেনো বৃদ্ধি পেয়েছে। কবিরের ঘোর লেগে গেলো। কবির ধীরে গতিতে এগিয়ে এসে তিন্নি কে আগলে নিলো। তিন্নির এলোমেলো অবাধ্য ছোট ছোট চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিতে দিতে বলল,

-“হুঁ।
কাল সকালে চলে আসবে।আজ না-কি মাত্র অফিস থেকে ফিরছে।”

তিন্নি নিজে কে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বলল,

-“ছাড়ুন।
রাত ক’টা বাজে দেখছেন?ফ্রেশ হতে হবে।”

-“যাও।
দ্রুত আসবে।”

কবির তিন্নি কে ছেড়ে দিয়ে আদেশের স্বরে বলল। তিন্নি দ্রুত পায়ে নিজের ড্রেস হাতে ওয়াশরুম চলে গেলো। মানুষ টা ইদানীং বড্ড বেশি তিন্নি কে চোখে হারায়।

—–

-“কমনসেন্সে নেই আপনার?
রাত তিন টা বাজে একটা মেয়ের রুমে চলে এলেন!”

সারা ফিসফিস করে বলে উঠলো।
রাহান দরজা বন্ধ করে এগিয়ে এলো।শক্ত হাতে খাবলে ধরে সারা’র বাহু।রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।তবে কণ্ঠ শান্ত। গম্ভীর স্বরে বলে,

-“থাপ্পড়ে তোর সেন্স আমি এনে দেব।বেয়াদব।
ফাইজলামি করিস আমার সাথে?তোর ঢং আমি বেড় করে দেব।ওয়েট কর।”

সারা’র চোখের কোঠায় জল জমে।লাইট এর আলোয়ে চিকচিক করে সেই জল।রাহানের বুকের ভেতর ধক করে ওঠে।এই মেয়ে এমন কেনো?এটুকুতেই কেনো এতো অভিমান করে?

-“সরি।”

রাহানের রাগ সারা’র মায়াবী মুখপানে তাকিয়ে পানির ন্যায় শান্ত হয়ে যায়।তাই তো মোহনীয় কণ্ঠে সরি বলে।কিন্তু সারা’র অভিমান তীব্র হয় এতে।প্রিয় মানুষ টার আস্কারায় চোখের কোঠায় জল গুলো গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে।

-“আপনি সব সময় এমন করেন।
কথা নেই আপনার সাথে।”

সারা নিজে কে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে অভিমানী স্বরে বলে।রাহান জড়িয়ে ধরে সারা কে।দিনদিন মেয়ে টা বড্ড বেশি অবুঝ হচ্ছে।
খুব শীগ্রই কিছু একটা করতে হবে। মায়া দিনদিন বেড়ে চলছে। দূরে রাখা সম্ভব না।

-“তুই কেনো এতো অবুঝ?ভার্সিটিতে পড়িস।
একটু তো আমাকে বুঝতে পারসি!সব সময় আমাকে কিভাবে রাগানো যায় সেই ফন্দি আঁটিস।”

সারা কোনো জবাব দেয় না।চুপ করে রাহানের বুকে মিশে থাকে।

——

ওয়াজিদ কে বাইকে বসে থাকতে দেখে রিধি ভূত দেখার মতো করে চমকে উঠলো। চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে জিগ্যেস করলো,

-“আপনি বাইক চালাতে পারেন?”

-“কেনো কোনো সন্দেহ আছে?”

রিধি ভ্রু কুঁচকে নিলো। এই লোক কোনো দিন কোনো প্রশ্নের ঠিকঠাক জবাব দিলো না। সব সময় প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন করবে।অদ্ভুত লোক।

-“ফাস্ট ওঠে আসো।”

ওয়াজিদ তাগাদা দিয়ে বলে।রিধি হাই তুলে মুখের সামনে হাত রাখে।ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো,

-“আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।”

-“এসব কি রিধু?তুমি তো বলেছিল ঘুরতে যাবে!তাহলে!”

-“আমি কি জানতাম আমার ঘুম পেয়ে যাবে!”

-“আচ্ছা চলো যাও।
রুমে যাও।”

রিধি ওয়াজিদ এর গালে আলতো করে অধর স্পর্শ করে সদর দরজা দিয়ে বাড়ির ভেতর চলে গেলো। রিধির একটু খারাপ লাগে।কিন্তু রাত বাজে তিন টা।তারউপর সন্ধ্যার পর থেকে কম দখল যায় নি।রিধি ভেতর প্রবেশ করা মাত্র কাজের লোক দরজা বন্ধ করে দিলো।ওয়াজিদ তপ্ত শ্বাস ফেলে গেইটের কাছে গিয়ে সিকিউরিটির হাতে একটা হাজার টাকার নোট গুঁজে দিতেই সিকিউরিটি মুচকি হেঁসে হাত সরিয়ে বলে উঠলো,

-“লাগবে না স্যার।
আপনি কি মনে করেছেন আমরা আপনার কথায় ম্যাডাম এর সাথে আপনাকে এতো রাতে দেখা করতে দিয়েছি!না স্যার আমাদের স্যার এর অনুমতি ছিল বলে আপনি দেখা করতে পেরেছেন।”

-“সাদনান?”

ওয়াজিদ ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো।সিকিউরিটি হেঁসে ঘাড় নাড়ে। ওয়াজিদ তাও হাতের নোট টা গুঁজে দিলো সিকিউরিটির হাতে অতঃপর বাইক ওঠে স্টার্ট করে চলে গেলো।

——-

-“একটু খেয়ে নাও।
বমি চলে যাবে।”

আয়ানের কথা শুনে মাইশা অসহায় চোখে আয়ানের দিকে তাকিয়ে কণ্ঠ অসহায় করে বলল,

-“আমি আর খাব না।
প্লিজ আপনি এটা রেখে দিন।”

-“সোনা।এমন করলে হয়।খেতে হবে। প্লিজ একটু।”

মাইশা মুখ খুলে খাবার টা মুখে নিলো।কোনো রকম দু’বার নিয়ে আর নিলো না।আয়ান অনেকবার জোর করেও দিতে পারে না।
বাধ্য হয়ে খাবার রেখে হাত ধুয়ে এলো।মাইশা তখন বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে।
আয়ান এগিয়ে এসে বউয়ের মুখে ক’টা বাদাম পুরে দিলো। মাইশা ওয়াক করে ফেলে দিতে গিয়েও পারে না। আয়ান নিজের অধর বউয়ের অধর চেপে ধরে রাখে।মাইশা আয়ানের পিঠে কিল-ঘুষি দিয়েও কোনো কিছু করতে না পেরে মুখের খাবার গিলে নেয়।

-“দেখলে চেষ্টা করলে অবশ্যই খেতে পারবে।
তুমি বমি করার ভয়ে খাবার খেতে চাও না।”

কথা টা শেষ করে পরপরই আবার বলে উঠলো,

-“শুধু শুধু আমার মেয়ে কে না খাইয়ে রাখো।”

-“মোটেও আপনার মেয়ে হবে না।
আমার ছেলে হবে।”

মাইশা নাক মুখ কুঁচকে বলে উঠলো।
আয়ান হেঁসে দিয়ে বলল,

-“আল্লাহ যা দেয় তাই আলহামদুলিল্লাহ।”

—-

-“জান উঠো।
ফ্রেশ হয়ে খেতে হবে।”

সাদনান বউয়ের পাশে বসে ডেকে ওঠে বলল।প্রিয়তা ঘুমঘুম কণ্ঠে অনুরোধ স্বরে বলল,

-“প্লিজ না।
আমার ঘুম পাচ্ছে। আপনি খেয়ে শুয়ে পড়ুন।”

-“একদম না।
উঠো।খেতে হবে।”

প্রিয়তার কোনো কথা শুনলো না সাদনান।কোলে তুলে ওয়াশ রুমে নিয়ে ফ্রেশ করিয়ে রুমে নিয়ে এলো।প্রিয়তা পানির ছোঁয়া পেতেই ঘুম সব উড়ে গেলো। তবে রেশ টা এখনো কাটে নি। ঝিম মেরে বসে থাকে।সাদনান সেন্টার টেবিলের উপর প্লেট দিয়ে ডেকে রাখা খাবার প্লেট হাতে নিয়ে বউয়ের পাশে বসলো।প্রিয়তার মুখে খাবার দিতেই প্রিয়তা চুপচাপ খেয়ে নিলো।সারা দিন অনেক দখল গিয়েছে। খাবার ঠিকঠাক মতো খেতে পারে নি। অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে কতক্ষণ আগে। শরীর আর খাবার খাওয়ার জন্য সায় দিচ্ছিল না।তাই তো রুমে এসে শুয়ে পড়েছিল।সাদনান রুমে ছিল না। রুমে এসেই ডাকাডাকি শুরু করে দেয়।আর নিজে ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার নিয়ে রুমে এসেও যখন প্রিয়তা কে শুয়ে থাকতে দেখে খাবার রেখে নিজে ফ্রেশ করিয়ে নিয়ে এলো। পেটে ক্ষুধা থাকায় বেশ অনেক টা খাবার খেলো প্রিয়তা।সাদনান নিজেও একই প্লেটে খেয়ে নিলো।এঁটো প্লেট রেখে হাত ধুয়ে লাইট অফ করে বিছানায় বউয়ের পাশে শোয়া মাত্র প্রিয়তা সাদনানের লাল রঙের টি-শার্ট এর বোতাম একটা একটা করে দু’টো বোতাম খোলা মাত্রই সাদনান প্রিয়তা কে বুকের উপর থেকে নিজের নিচে ফেলে দিলো।
ঘাড়ে মুখ গুঁজে গলায় কামড় বসাল। প্রিয়তা আর্তনাদ করতেই সাদনান সরে গেলো প্রিয়তার উপর থেকে।
প্রিয়তা ফের টেনে ধরে সাদনান কে।সাদনান ভ্রু কুঁচকালো। কিছু টা গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,

-“এতোক্ষণ ঘুমিয়ে যাচ্ছিলে।এখন আবার আদর চাই!”

প্রিয়তা জবাব দিলো না। কাচুমাচু ভঙ্গিতে সাদনান বুকে মুখ লুকাল। সাদনান শব্দ করে হেঁসে বউ কে শক্ত করে ধরে আলিঙ্গন করে।

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে