#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_১৬
#জান্নাত_সুলতানা
[পর্ব টা রোমান্টিক পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]
সাদনান ফোনে কথা বলা শেষ করে বউ কে টেনে নিজের বক্ষদেশ নিলো।প্রিয়তা ঘুম ঘুম চোখ সাদনানের মুখের দিকে একবার তাকিয়ে মুচকি হেঁসে সাদনানের গালে হাত ছোঁয়া দিলো অতঃপর চোখ বন্ধ করে নিশ্চিন্তে নিরাপদ স্থানে ঘুমিয়ে গেলো।
সাদনান বউ কে এক হাতে নিজের বুকে আগলে রেখে আরেক হাতে ফোনে একটা ভিডিও ওপেন করে।যেটার শেষ অব্ধি সাদনান শুধু হাসলো।যেনো কোনো ছাড়পোকা ঘর থেকে বের করে দিয়েছে।
ভিডিও দেখা শেষ সাদনান হোয়াটসঅ্যাপ গিয়ে একটা ম্যাসেজ লিখল।
এরপর সাদনান ফোনে স্ক্রল করে আবার।
বাইরের দিকে নজর পড়তেই দেখা মিলে সাদনান এর সাথে আসা গাড়ি গুলো একটা বিশাল বড় বিল্ডিংয়ের গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছে।সেখানে সব গুলো গাড়ি পার্কিং করা হলো।মোটামুটি মিডিয়ার লোকের জায়গায় ভীড় জমিয়েছে।প্রশ্ন একের পর এক করেই যাচ্ছে। এখানে আসার মূল উদ্দেশ্য কি?শুধু কি স্ত্রী কে সাথে নিয়ে আলাদা সময় কাটানো ঘুরাঘুরি করা নাকি এর পেছনে ভিন্ন কারণ রয়েছে?
এমন অনেক প্রশ্ন সাদনান উপেক্ষা করে বউ কে এক বাহুতে আগলে এগিয়ে গেলো।সামনে পেছনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে।প্রিয়তা শরীর কাঁপছে। এরকম পরিস্থিতিতে সে আর কখনো পড়ে নি।সাথে অস্বস্তি তো আছেই।
——
তিন্নি অনুভূতিহীন।আসলে অনুভূতিহীন বললে ভুল হবে। মেয়ে টা ভাবতে পারে নি এতো টা সহজে নিজের ভালোবাসার মানুষ টা কে নিজের করে পেয়ে যাবে।তাই এই মূহুর্তে কি বলা উচিৎ বা কেমন রিয়্যাকশ দেওয়া দরকার বুঝতে পারছে না।বাড়ি ভর্তি মানুষ।এরমধ্যে বেশির ভাগ মির্জা বাড়ির লোকজন আর যা কয়েকজন তারা পাড়াপ্রতিবেশি। বিয়ে হয় নি একটু পর বিয়ের কাজ শুরু হবে। মাইশার বাবা তিন্নির বাবা হয়ে সাক্ষী হবে। তিন্নির এখানে সবচেয়ে বড় ধাক্কা টা খেয়েছে। মির্জা বাড়ির সবাই তিন্নি কে বুঝতেই দিচ্ছে না মেয়ে টার পরিবার নেই। সাদনান ফোন করে একবার তিন্নির সাথে কথা বলেছে।তিন্নি নিজের কেমন সব স্বপ্ন মনে হচ্ছে। বিয়ে টা তিন্নি একপ্রকার ঘোরের মধ্যে থেকেই কবুল বলেছে।মাইশা এসছে। পাশেই বসে আছে তিন্নির। হঠাৎ করে সব টা এতো তাড়াতাড়ি কি করে হলো। তিন্নির মনে বারবার প্রশ্ন আসছে।বিয়ে পড়ানো শেষ ঘর ফাঁকা হতেই তিন্নি মাইশার হাত চেপে ধরলো।ফিসফিস করে জিগ্যেস করলো,
-“তুই আগে থেকে জানতি সব?”
-“আরে না।
বাবা হঠাৎ ফোন করে জানাল।
হয়তো বড়’রা আগে থেকে সব প্ল্যান করে রেখেছিল।তাই এতো দ্রুত সব আয়োজন হলো।”
তিন্নি আর কিছু বলল না।চুপ করে বসে রইল। রাত হয়তো আটটার বেশি সময় বাজে।
আস্তে আস্তে বাড়ি ফাঁকা হচ্ছে। মাইশা কে নিয়ে আয়ান অনেক আগেই বাড়ি চলে গিয়েছে। এখন শুধু মির্জা বাড়ির সবাই রয়েছে। তারাও একটু পর চলে যাবে।
-“কবির কাল কিন্তু আমার মেয়ে কে নিয়ে চলে আসবে।”
কবির শুধু হাসলো।মফিজুর মির্জা তিন্নির দিকে তাকিয়ে বলল,
-“যখন এই বাবা কে মনে পড়বে তখন চলে যাবে।
কখনো দ্বিধা করবে না।মাইশা যেমন এখন থেকে তুমি মির্জা বাড়িতে তেমনি।
মনে থাকবে?”
তিন্নি সুফিয়া বেগম এর হাত মুঠোয় পুরো ধরে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।কি বলা উচিৎ এই মানুষ গুলো কে?কোনো ভাষা খোঁজে পাচ্ছে না তিন্নি। তবে হাসি মুখেই চোখে হতে জল গড়িয়ে পড়ল।খুব সাবধানে সেটা মুছে শুধু মাথা নাড়ল।
—–
রাতে তিন্নি গেস্ট রুমে ফ্রেশ হয়ে বিয়ের শাড়ী চেঞ্জ করে একটা সুতি শাড়ী পড়ে নিলো।শাড়ী টা কবির দিয়েছে এটা কবিরের মায়ের শাড়ী। সাথে শাড়ী প্রয়োজনীয় সব।যার সব শরীরে একদম মাপ মতো হয়েছে।তিন্নি ভাবছে কোনো ভাবে কি এসব কবির স্যার দেখেছে?পরক্ষণেই ভাবে দেখলেই বা কি?স্বামী স্ত্রী এখন ওরা।কিন্তু তারপরেও নারী জাত লজ্জা তাদের ভূষণ। তিন্নি নিজে কে যথাসম্ভব ধাতস্থ করে রুম হতে বেরিয়ে এলো।কাজের লোক আজ রয়েছে। সব মানুষ বিদায় নিয়েছে। তিন্নি রান্না ঘরে গিয়ে দেখলো।একজন মহিলা খাবার গরম করছে। আরেকটা বাচ্চা আট দশ বছরের হবে প্লেট গুলো গুছিয়ে রাখছে।তিন্নি মহিলা টার দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করলো,
-“আপনার মেয়ে?”
-“হ গো বউ।
বাসায় একা থাকবার চায় না। এর লাইগা লগে লইয়া আই।”
-“আচ্ছা সমস্যা নেই।
কিন্তু কাজ করাবেন না ওকে দিয়ে।”
মহিলা টা পান খেয়ে লাল টকটকে করে রাখা ঠোঁট জোড়া এলিয়ে দিয়ে হাসল।
তিন্নি খাবার ডাইনিং নিতে নিতে কালাম খান আর কবির এসে উপস্থিত হলো।খাবার পর কাজের মহিলা সব গুছিয়ে রাখবেন জানাল।তিন্নি দ্বিধায় ভুগছে। কোন রুমে যাবে? গেস্ট রুম না-কি কবির স্যার এর রুমে?
তিন্নি ভাবতে ভাবতে লিভিং রুমের সোফায় বসে পড়লো।শাড়ীর আঁচল মাথা থেকে অনেক আগেই পড়ে গিয়েছে।চুল গুলো হাতে খোঁপা বাঁধা। বিয়ের সাজে চুল ছাড়া ছিল। তাড়াহুড়ো করে হয়তো আর আঁচড়ানো হয় নি।ফ্রেশ হয়ে এভাবেই চলে এসছে রান্না ঘরে।
কবির এগিয়ে গেলো।ক্লান্তি আর চিন্তায় মগ্ন থাকা তিন্নির একদম নিকটে গিয়ে দাঁড়াল।
তিন্নি হঠাৎ কবির কে নিজের সামনে দেখে একটু চমকাল।লাফিয়ে ওঠে বসা ছেড়ে। কবির তিন্নির দুই বাহুতে হাত রেখে মৃদু স্বরে বলল,
-“রিলাক্স।হাইপার হওয়ার কিচ্ছু নেই।
আমিই তো।তা তুমি এখানে বসো কি করছো?”
-“না ইয়ে মান,,,
-“হয়েছে।আর ইয়ে মানে করতে হবে না।
এখন থেকে আমার তুমি।আর আমার তুমি মানেই আমার সব তোমার।আই হোপ পরবর্তীতে তুমি আমার কোনো কিছু নিয়ে অস্বস্তি বোধ করবে না।”
-“অস্বস্তি না।
আমার তো লজ্জা লাগছিল।”
তিন্নি মাথা নিচু করে কথা টা বলেই সম্মতি ফিরতেই কি বলেছে বুঝতে পেরে চট করে মাথা টা উঁচু করে কবির এর দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেলো।
কবির কেমন এক ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তিন্নির দিকে তাকিয়ে আছে।
তিন্নি মাথায় আঁচল টানে।কবির লম্বা শ্বাস ছাড়ে। তিন্নির একটা হাত মুঠোয় পুরো নিয়ে নিজে আগে আগে হাঁটা ধরে। তিন্নি অজানা অনুভূতি কবিরের স্পর্শে শরীর শিরশির করে উঠল।কবির তিন্নি কে নিয়ে সোজা উপরে নিজের রুমে এলো।ফুলে সজ্জিত কক্ষে প্রবেশ করা মাত্র নানা রকম ফুলের গন্ধে তিন্নি শরীর শিহরণ হলো।কবির দরজা বন্ধ করে তিন্নি কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। তিন্নি বরফের অনুরূপ জমে গেলো।শক্ত সটান হয়ে খিঁচে চোখ বন্ধ করে নিলো।শখের পুরুষ, ভালোবাসার মানুষ টার স্পর্শে দেহ মনজুড়ে ভালো লাগার অনুভূতি সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে গেলো।কবির নিজের ঠোঁট তিন্নির ঘাড়ে ছুঁয়ে দিলো। তিন্নি কেঁপে উঠল। শক্ত করে কবির এর হাতের উল্টো পিঠে নখ ডুবিয়ে দিলো।কবির ভ্রু কুঁচকে নিলো।তবে ভালোবাসার মানুষ টার এই ব্যথা আরো দিগুণ হলো করলো বউ নামক এই সুন্দর রমণী কে নিজের করে পাওয়ার। সর্বাঙ্গে নিজের বেহায় হাতের স্পর্শ দেওয়ার। তাই তো ব্যথা উপেক্ষা করে তিন্নি কে ঘুরিয়ে নিজের দিকে করে নিলো।তিন্নি অধরে কোনো লিপস্টিক দেওয়া নেই।বিয়ের সময় লাল লিপস্টিক দিয়ে ছিল।কিন্তু তিন্নি তা ধুয়ে মুছে ছাফ করে নিয়েছে। ফ্যাকাসে রঙের ঠোঁট জোড়া বড্ড আকর্ষণীয় লাগছে দেখতে। কাঁপা কাঁপা দুই জোড়া অধর কিঞ্চিৎ পরিমাণ ফাঁকা রয়েছে তিন্নি চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে। কবির এক পলক বউয়ের অধর পানের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের পুরো ঠোঁট জোড়া দিয়ে বউয়ের ঠোঁটে চেপে ধরে।
আস্তে আস্তে পাগলামি বাড়তে থাকে।এই টা কি হঠাৎ ভালোবাসা না-কি গভীর বহু সময় ধরে জমিয়ে রাখা ভালোবাসা প্রকাশ করছে। তিন্নি বুঝতে পারলো না।
——
-“জান, জান আমার কথা টা শ,,
সাদনানের পুরো কথা না শুনেই প্রিয়তা হেঁচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে এক নাগাড়ে বলতে লাগল,
-“প্লিজ না।স্পর্শ করবেন না আমায়।বাড়ি যাব আমি।বাবা-র কাছে যাব।”
সাদনান নিজের বাড়িয়ে রাখা হাত টা গুটিয়ে নিলো।প্রিয়তা বিছানার এক কোণায় গুটিশুটি মেরে বসে কান্না করছে। চোখে মুখে ভয়ের ছাপ বিদ্যমান। সাদনান নিজের উপর রাগ হলো।ইচ্ছে করছে সব ধ্বংস করে দিতে। কোন কুক্ষণে ফোন টা রুমে ফেলে গিয়ে ছিল? যদি না ফোন টা ফেলে যেতো আর না বউ এইসব এর কিচ্ছু দেখতো।আর না ভয় পেতো।সাদনান দুই হাতে শক্ত করে নিজের চুল খামচে ধরে।
#চলবে….
#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_১৭
#জান্নাত_সুলতানা
আজ তিন হয় প্রিয়তা সওদাগর বাড়িতে রয়েছে।এর মধ্যে একদিনও সাদনান প্রিয়তার সাথে কোনো যোগাযোগ করে নি।সেদিন রাত তিন টা বাজে সাদনান সত্যি প্রিয়তার কথা অনুযায়ী প্রিয়তা কে সওদাগর বাড়ি দিয়ে গিয়েছে। বাড়ির প্রতি টা সদস্যর অবাক হয়ে চোখে মুখে প্রশ্নের ছাপ তখন সাদনান শুধু শফিক সওদাগর কে উদ্দেশ্য করে একটা কথা বলে ছিল,যে আমাকে মারতে চাইবে আমিও অবশ্যই তাকে ছেড়ে দেব না।আর এটা করা যদি দোষের হয় তাহলে আমি সেই দোষে দোষী।”
প্রিয়তা কথার গভীরতা বুঝে নি।তবে কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছে।
প্রিয়তা আনমনে নিজের রুমে পড়ার টেবিলে বসে কথা গুলো ভাবছিল।সামনে একটা বই খুলে রাখা কিন্তু দৃষ্টি তার অন্য দিকে। শফিক সওদাগর আলগোছে মেয়ের পাশে বিছানায় বসলো।প্রিয়তা হঠাৎ কারোর অস্তিত্ব টের পেয়ে ভড়কালো। বিছানায় বাবা কে দেখে একটু নড়েচড়ে বসল। বই টা বন্ধ করে হাসার চেষ্টা করে বলে উঠলো,
-“বাবা।
কখন এলে?”
শফিক সওদাগর ম্লান হেঁসে মেয়ে কে কোলে শোয়ার আহ্বান জানান। প্রিয়তা চেয়ার ছেড়ে বিছানায় বাবা-র গা ঘেঁষে বসলো। শফিক সওদাগর হাসলো।প্রিয়তা বাবার বুকে মাথা রাখলো।আজ ক’টা দিন কোথাও যেনো একটু শান্তি নেই।কেনো এমন লাগে?
তবে এখন একটু ভালো লাগছে।প্রিয়তা শ্বাস টানে লম্বা। বাবা-র গায়ের গন্ধ শুঁকে। শফিক সওদাগর শব্দ করে হাসলো।মেয়ে টা ছোট বেলার অভ্যাস এখন গেলো না।হাসি থামিয়ে মেয়ে কে আদর করলো।চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিতে দিতে বলল,
-“আব্বা কখনো কখনো আমাদের নিজেদের ভালোর জন্য খারাপ করতে হয়।মানুষ বড্ড স্বার্থপর। তাই এটা বড়ই স্বাভাবিক।”
-“বাবা।বাবা ওনি,,
প্রিয়তার উত্তেজিত হয়ে কিছু বলতে চাইলো তবে প্রিয়তার পুরো কথা না শুনেই শফিক সওদাগর বলে উঠলো,
-“খারাপ মানুষ কখনো ভালো হয় না।
আর প্রাক্তন এমপি রাজিব কখনো ভালো লোক ছিল না।তাই ওনার ভালো হওয়ার কোনো চান্স নেই।আল্লাহ ভালো খারাপ দু’টি দিয়ে মানুষ তৈরী করেছে।তুমি সেদিন রাতের কথা ভুলে গিয়েছো?কত টা জানোয়ার হলে একটা মানুষ একের পর এক ভুল করতেই পারে।আজ থেকে পাঁচ বছর আগে। তুমি যথেষ্ট ছোট ছিলে।সেবার ইলেকশনের সময় এই এমপি তিনজন কে মার্ডার করেছিল। নিজের ড্রাগস এর ব্যবসা ছিল।পুলিশের কাছে ধরা পড়ে নিজের স্ত্রী কে ফাঁসিয়ে দিয়ে ছিল।তুমি জানো এর কোনো তদন্ত হয় নি।কোনো কেস হয় নি।এবার সাদনানের অবস্থা তেমনি হতো। হয় শত্রু কে এক্কেবারে বিনাশ করো নাহয় নিজে বিনাশ হওয়ার প্রস্তুতি নাও।
এখন এখানে তোমার মতামত কি?”
প্রিয়তা বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।একটা মানুষ কতটা জঘন্য হলে নিজের স্ত্রীর সাথেও বেঈমানী করতে পারে প্রিয়তার জানা নেই।কিন্তু মনে হচ্ছে সাদনান খুব কমই শাস্তি দিচ্ছে লোক টাকে।আরো ভয়ংকর শাস্তি প্রাপ্য এই এমপির।
প্রিয়তা এমন নিশ্চুপ দেখে শফিক সওদাগর হাসলো।মেয়ের কপালে আদর দিয়ে বলল,
-“আর সাদনান এর থেকে এর পেছনে বেশি খাটছেন মন্ত্রী ওয়াসিফ দেওয়ান। তাই তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো।সাদনান কোনো খারাপ কিছু করছে না।
ভাবো।
সময় নাও।আর কাল একটা সারপ্রাইজ আছে আব্বা।”
প্রিয়তা এবার যেনো অবাক না হয়ে পারলো না। ওয়াসিফ দেওয়ান এসব করেছে! শফিক সওদাগর মেয়ে কে ঘুমুতে বলে লাইট অফ করে দরজা চাপিয়ে দিয়ে চলে গেলো।
প্রিয়তা তখন সেভাবেই বসে থাকে।কাল কি হবে? কিসের কথা বলে গেলো বাবা?ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে গেলো প্রিয়তা।
—
“ওয়াসিফ দেওয়ান মন্ত্রী পদ ত্যাগ করেছে।আর এই মন্ত্রী পদে নতুন এমপি মির্জা সাদনান শাহরিয়ার কে সিলেকশন করা হয়েছে।ছেলে টার প্রতিভা আছে এখন সেটা দেখানোর পালা।এই গ্রামের গর্ব।”
“আর কিছু শুনলাম আজ ভোরে নাকি প্রাক্তন এমপি কে ড্রাগস এর সাথে পুলিশ আটক করেছিল।কিন্তু ওনি এতোটাই মাদকাসক্ত ছিল যে নিজেই নিজে কে কোনো বিষাক্ত কেমিকেল এর ইনজেকশন নিয়ে আত্মহত্যা করেছে।”
প্রিয়তা আর দাঁড়াল না। শুনতে চাইল না ভয়ংকর সেই ঘটনা। সে দেখেছে।এমপি কে এতো পরিমাণ ড্রাগস দেওয়া হয়েছে যে আজ একমাস নাগাদ তাতে একজন মানুষ সুস্থ থাকা দুষ্কর। মস্তিষ্ক অচল হওয়া স্বাভাবিক বিষয় আর এতে করে সে কি করছে না করছে কিচ্ছু ভেবে চিন্তে করবে না আর করার পরও কোনো রকম প্রতিক্রিয়া হবে না।
কিন্তু এটা কি শুনল ও?ওয়াসিফ দেওয়ান মন্ত্রী পদ ত্যাগ করেছে আর সেখানে সাদনান কে সিলেকশন করা হয়েছে!
আজ সারা ভার্সিটিতে যায় নি।অগত্যা বাধ্য হয়ে প্রিয়তা কে একাই যেতে হয়েছে। যদিও আয়ান সকালে দিয়ে এসছিল।আর এসে নিয়ে যাবে সেটাও বলেছিল।কিন্তু প্রিয়তা আসতে বারণ করেছে।উপজেলা থেকে অটো নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। কিন্তু আজ অটোওয়ালা রাস্তার মাথাতেই নামিয়ে দিয়েছে এদিকে আসে নি।যার ফলে রাস্তার পাশে চায়ের দোকান গুলো পেরিয়ে আসার সময় উপরোক্ত কথা গুলো কানে এলো।
—–
বাড়ি ফিরে প্রিয়তা আগে ফ্রেশ হলো।রুম থেকে বেরিয়ে খাবার ঘরে আসতেই বাবা ভাই মাইশা সহ মাকে ওর জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকতে দেখে বলল,
-“কতবার বললাম খেয়ে নাও।
আমার জন্য বসে থাকতে হয়!আর আপু তুমি? এখন নিজে একা নয়। মনে রাখতে হবে।তাই খাবার টাইম মতো খেয়ে নিবে।”
মাইশা কে উদ্দেশ্য করে বলল।মাইশা হাসলো।অতঃপর প্রিয়তা কে খাবার বেড়ে দিলো।কেউ কোনো কথা না বলে খাবার খেয়ে নিলো।
-“বনু শুনেছি কিছু?”
আয়ানের প্রশ্নে প্রিয়তা নির্লিপ্ত জবাব,
-“হ্যাঁ।”
-“আজ ভয় করে নি?”
প্রিয়তা দৃষ্টি এবার পুরোপুরি আয়ানের দিকে দিলো।কণ্ঠ গম্ভীর করে বলল,
-“নাহ।
অপরাধ করলে শাস্তি পেতে হয়। হয়তো সেটা পরকালে কিংবা দুনিয়াতে।”
শফিক সওদাগরের মুখে বিজয়ী হাসি হাসলো।মেয়ে তার বুঝদার।শুধু পরিস্থিতিতে শিকার হয়ে মাঝেমধ্যে সব টা সামলে ওঠতে পারে না।
—–
রাত দেড়টার দিকে প্রিয়তা নিজের মুখের ওপর কারোর উষ্ণ নিঃশ্বাসে আঁচড়ে পড়তেই তন্দ্রা ছুটে গেলো।ধপ করে চোখ খুলতেই ড্রিম লাইট এর কমলা রঙের আবছা আলোয়ে বলিষ্ঠ পুরুষ সাদনান কে দেখে চোখ আরো বড় বড় হয়ে গেলো।শোয়া থেকে উঠতে গেলেই হাতে চাপ অনুভব করলো।সাদনান বিছানার সাথে ওর হাত শক্ত করে চেপে ধরে আছে। প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে একবার হাতের দিকে তাকিয়ে ফের সাদনান এর দিকে তাকিয়ে বলল,
-“ছাড়ুন।”
সাদনান ছেড়ে দিলো।
সোজা হয়ে বসলো।প্রিয়তা ছাড়া পাওয়া মাত্র ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল।নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে বিছানার পাশ থেকে তড়িঘড়ি করে ওড়না নিলো।সাদনান অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
-“এমন ভাব মনে হচ্ছে আজ প্রথম এমন হলো।মনে করে দেখো কতবার এই ওড়না আমি নিজে হাতে খুলে ছুঁড়ে ফেলছি।”
ছিঃ কি অসভ্য কথা। প্রিয়তার কান গরম হয়ে গেলো।সাদনান প্রিয়তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।
-“এতো রাতে আপনি?
বাড়ি যান নি?কখন এসছেন?খাবার খেয়েছেন?”
-“রিলাক্স।
এক সঙ্গে এতো কোশ্চেন!খাবার খেয়ে নিয়েছি।সবাই জানত আমি আসব।তাছাড়া রাতে না আসলে সাথে সিকিউরিটি আনতে হতো।আর এই মূহুর্তে আমি আমার শ্বশুর বাড়ি আছি।এটা এলাকায় জানাজানি হোক আমি চাইছি না।”
সাদনান একটু এগিয়ে বসল।প্রিয়তার মুখ নিজের হাতের আঁজলে নিয়ে বলল।প্রিয়তা সাদনানের মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে রইলো। সাদনানের গায়ে একটা গাঢ় নীল রঙের শার্ট কালো প্যান্ট মারাত্মক সুন্দর দেখতে লাগছে পুরুষ টাকে।
মুখ ভর্তি ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। কিন্তু চোখে তার ঘোর লাগা চাহনি। প্রিয়তার শরীর শিরশির করে ওঠলো।
সাদনান প্রিয়তা কে হঠাৎ ছেড়ে দিলো।পাশে শুয়ে চোখের উপর হাত ভাঁজ করে রেখে বলল,
-“শুয়ে পড়ো।
কাল সকালে মির্জা বাড়ি যেতে হবে।”
প্রিয়তার কান্না পেলো।বুঝতে পারলো সাদনান এখনো রেগে আছে।অবশ্য রেগে থাকবে না কেনো?
কি কষ্ট টা টাই না দিয়েছে ও।কত গুলো কথা শুনিয়েছে কিছু না জেনেশুনে।
একটু এগিয়ে এসে সাদনানের বুকের উপর মাথা রাখে আলগোছে।
সাদনান নড়ে না।প্রিয়তার এবার সত্যি কান্না চলে এলো।
চোখ হতে অশ্রু গড়িয়ে সাদনানের উন্মুক্ত লোমযুক্ত বুকে স্পর্শ করা মাত্রই সাদনান অস্থির হয়ে শোয়া থেকে ওঠে বসলো প্রিয়তা কে আগলে নিয়ে।
-“আরে বোকা মেয়ে।
কান্না কেনো করছো?”
-“আ’ম সরি সাদনান ভাই।”
-“আমি তোমার ভাই?”
সাদনান ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো।
প্রিয়তা নড়েচড়ে বসে।
সাদনান শক্ত করে বউ কে জড়িয়ে ধরে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
-“জণগণ যদি জানতে পারে মন্ত্রী সাদনান শাহরিয়ার বউ তাকে ভাই ডাকে তবে আমার সম্মান টা কোথায় যাবে বুঝতে পারছো?”
-“অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।
আগে ভাই ডাকতাম।”
-“ছয় মাসের বেশি সময় হতে চলে বিয়ে হয়েছে।এটা কোনো যুক্তি হলো?”
প্রিয়তা জবাব দিলো না।সাদনান বউয়ের মতলব বুঝতে পারে। প্রিয়তা সাদনানের শার্ট এর বোতাম খুলছে।সাদনান বাঁধা দিলো না।নিজেও বউয়ের ঘাড়ে অধর স্পর্শ করে।
——
রাহান বোনের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে।বোন কে সে প্রচুর ভালোবাসে। রিধি নিজেও ভাই কে অনেক স্নেহ করে।আদর করে। ঝগড়া কি জিনিস হয়তো এই দুই ভাই বোন জানে না।অনেক মিল তাদের মধ্যে।একে-অপরকে নিজেদের সব কথা শেয়ার করে। এই যে রাহান সারা কে ভালোবাসে এটা রিধি জানে।আবার রিধি কে ওয়াসিফ দেওয়ান এর ছেলে ভালোবাসে এটাও রাহান জানে।কিন্তু রিধি ছেলে টাকে পাত্তা দেয় না।কি ভয়ংকর কথা। মন্ত্রী ছেলে তারউপর ডক্টর এমন ছেলে কে পাত্তা দেয় না।ভাবা যায়!আর এদিকে সে মন্ত্রী বোনের সাথে প্রেম করছে।কি ভয়ংকর ব্যাপার।
রাহান কথার তালে ইনিয়েবিনিয়ে বলে উঠলো,
-“তুমি ডক্টর সাহেব কে বলো আসো নি কেনো?
আজ সন্ধ্যায় আমার সাথে কথা হলো।মনে হচ্ছে ভীষণ রেগে আছে।”
-“তুই ওনার সাথে কথা বলবি না আর।
আমি আগেও তোকে বারণ করেছি না, তাও কেনো বলিস?”
রিধি একটু থেমে আবার বলল,
-“এসব বড়লোকদের সাথে আমাদের যায় না।কোথায় ওনারা আর কোথায় আমরা দেখেছিস?এটার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে আমি নানাজান এর উপর দিয়ে এব্যাপারে কিচ্ছু করব না।যার খেলাম তাদের উপর দিয়ে আমার কোনো কথা নেই।”
-“আপু তুমি ভালো করে জানো মামারা বা নানাজান কখনো তোমার কষ্ট হয় এমন কিছু করবে না।শুধু শুধু কেনো ভেতরে ভেতরে এসব ভেবে নিজের অনুভূতি দামাচাপা দিতে চাইছো?”
-“খুব বড় হয়ে গিয়েছিস?আমাকে বোঝাতে আসে।ঘুমুতে যা।”
রাহান মুখ ভেংচি কাটলো।রিধি সেটা দেখে হাসি পেলো। তবে হাসলো না।চেপে রাখল।রাহান রুম থেকে যাওয়া মাত্র হো হা করে হাসতে লাগলো।ছোট বেলার অভ্যাস এখনো গেলো ছেলেটার।রিধি হাসতে হাসতে বিছানা ঠিকঠাক করে দরজা বন্ধ করে এসে বিছানায় শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।ঠিক তক্ষুনি পাশে থাকা ফোন টা টুং করে শব্দ হলো।রিধি ভ্রু কুঁচকে নিলো। রাত বাজে দেড় টা এতো রাতে কে ম্যাসেজ দিলো?
রিধি হাত বাড়িয়ে ফোন টা হাতে নিয়ে সাইড বাটন চাপে। ফোনের স্কিনে দৃষ্টি বোলাতেই দেখা মিলে নোটিফিকেশনে ডক্টর সাহেব দিয়ে সেভ করা একটা বিদেশি নম্বর থেকে ম্যাসেজ এসছে,
“এটা ঠিক করো নি।একদম না।এর মাশুল দিতে হবে প্রস্তুত হও।”
#চলবে…..