#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_১৫
#জান্নাত_সুলতানা
-“এমপির বউ তুমি।
এই সাপ্তাহ পনেরো দিনের জন্যও যদি কোথাও ঘুরতে গিয়ে বাড়ি থেকে কাপড় নিতে হয়।তবে যে নিজের পদ কে খুব শীগ্রই ত্যাগ করার সিদ্ধান্তে নিতে হবে।।”
প্রিয়তা লাগেজে কাপড় নিচ্ছিল
সাদনানের হঠাৎ এরূপ কথায় ভ্রু কুঁচকে এলো।মিনিটখানেক সময় চুপ করে কথা গুলোর মানে বুঝতে চাইলো।বুঝতে পেরে লাগেজ থেকে সব কাপড় ফের কাবাডে রাখতে রাখতে বলল,
-“হয়েছে কি বলুন তো!আমি তো আগে কোনো এমপি মন্ত্রী কন্যা ছিলাম না। কোথাও গেলে আগের দিন নিজের ব্যগ গুছিয়ে রেখে দিতাম। তাই এখনো ব্যাপার টা মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়ে ছিল।”
সাদনান প্রিয়তার কথা শুনে একটু নড়েচড়ে বসলো। ল্যাপটপ স্কিনে দৃষ্টি স্থির রেখেই গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
-“এখন থেকে মাথায় রেখো।
আর মনের মধ্যে আমায়।”
শেষ এর কথা টা বিড়বিড় করে বলল।প্রিয়তা ঠিকঠাক শুনতে পায় না।তাই কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করলো,
-“কিছু বললেন?”
-“নাহ।
তাড়াতাড়ি চলো।তোমায় রেখে আমায় বেরুতে হবে।”
প্রিয়তা কিছু না বলে বোরকা হিজাব পড়ে রেডি হয়ে নিলো।সাদনান বউয়ের কপালে নিজের অধর স্পর্শ করে হাত নিজের মুঠোয় পুরো নিয়ে রুমে হতে বেরিয়ে এলো।বাড়ির সবার কাছে বিদায় নিয়ে যাত্রা শুরু করলো।
——
মির্জা বাড়ি বেশ কিছু টা রমরমা পরিবেশ।বাড়ির প্রতি টা মানুষ কাজে ব্যস্ত।বছর চার পর কাল রাহানের বোন রিধি দেশে ফিরছে।রিধি এই বংশের না হলেও এ বাড়ির সবার প্রিয় অনেক আদরের। বাড়িতে মেয়ে বলতে ওই ছিল প্রথম কন্যা।তাই ভালোবাসা টা রিধির জন্য সবার একটু ভিন্ন রকম।রিধি নিজের লেখাপড়া শেষ করে ইতালি একটা জব নিয়েছে আজ দু’বছর হলো।অবশ্য সবাই চেয়েছিল রিধি শুধু লেখা পড়া শেষ দেশে চলে আসুক।কিন্তু রিধির শখ স্বপ্ন যেটাই হোক সেটা হলো লেখাপড়া শেষ একটা ভালো জব করা।যেটা রিধি করেছে। কিন্তু এখন সবার বেশ জোরাজুরিতে রিধি দেশে আসছে।জাফর মির্জার এবার মনে মনে নাতনির জন্য ভিন্ন কিছু ভেবেছেন।এখন মেয়ে টা মেনে নিলে হয়।
জাফর মির্জা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সেটা আবার সেন্টার টেবিলে রেখে দিয়ে আজ্জম মির্জার দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করলো,
-“তা কে যাচ্ছে রিধু কে নিতে?”
-“আমি রাহান,রফিক আর সারা, মাইশা,আর সাদনান প্রিয়তা ফ্ল্যাট থেকে সাথে ফিরে আসবে।”
আজ্জম মির্জার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে আয়েশা বেগম জিগ্যেস করলো,
-“আপনি যাবেন আব্বা?”
জাফর মির্জা জানালো,
-“নাহ।
আমার একটা জরুরি সভা রয়েছে। সাদনান বাড়ি নেই।তাই আমার সেখানে উপস্থিত হতে হবে।”
আজ্জম মির্জা আগে থেকে এব্যাপারে অবগত ছিল।জাফর মির্জা যাবেন না।তাই তিনি আর কিছু জিগ্যেস করলো না।এই রাজনীতি ওনার একদম পছন্দ নয়।শুধু বাপ আর নিজের ছেলে এসব করে বলে একটুআধটু এখানে সেখানে যায়।নয়তো এসবের দ্বারপ্রান্তে তিনি যেতো না।
কি সব উটকো ঝামেলা এসব।মনে হয় ইচ্ছে করে জেনে-বুঝে নিজের সঙ্গে বিপদ নিয়ে চলেফিরা করা।যদিও মৃত্যুর স্বাদ একদিন আল্লাহর সৃষ্টি সব জীবকে গ্রহণ করতে হবে।তারপরও এসব ওনার একদম পছন্দ নয়।
—-
কবির ভার্সিটি থেকে ফিরে আসার সময় তিন্নি কে সাথে নিয়ে এসছে। আজ কালাম খাঁন দুপুরে অফিস থেকে চলে এসছে।রান্না মোটামুটি করে রেখেছে সব।কিন্তু কবির যখন তিন্নি কে কালাম খাঁন এর সাথে পরিচয় করিয়ে নিজে রুমে ফ্রেশ হতে গেলো তিন্নি সেই সুযোগে আরো কিছু খাবার এর আইটেম বানিয়ে নিলো।
নিজে গেস্ট রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো।টেবিলে খাবার দেওয়ার পর কবির আসছে না। কালাম খাঁন ছেলের উপর বিরক্ত হলো।
তিন্নি কে বলল,
-“মা দেখো তো ও কি করছে।
আমার পেটে ইদুর ছুটছে।খাবার এর গন্ধে আরো বেশি করছে।কি দারুণ দেখতে হয়েছে। খেতে নিশ্চয়ই আরো সুস্বাদু।”
তিন্নি হাসলো।কবির ওকে সব বলেছে।কালাম খান নিজের রান্না সব সময় নিজে করে খায়।সেইজন্যই তো এসেই রান্না ঘরে চলে গেলো।
তিন্নি প্লেট হাত থেকে টেবিলের উপর রেখে বলল,
-“আঙ্কেল আমি,,,
তিন্নি কে থামিয়ে দিয়ে কালাম খান চোখে ইশারা করে সিঁড়ির দিকে দেখিয়ে বলল,
-“তুমি বসে পড়ো।
ও চলে এসছে।”
কালাম খান এর ইশারা অনুযায়ী তিন্নি দৃষ্টিপাত করতেই দেখা মিলে কবিরের।ট্রাউজার পড়নে একটা গাঢ় সবুজ রঙের টি-শার্ট গায়ে।দেখতে চমৎকার লাগছে। কিন্তু তিন্নি বেশিক্ষণ তাকিয়ে না থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিলো।কবির এসে কালাম খান এর অপজিটে বসলো।তিন্নি দ্বিধায় ভুগে কার সাইডে বসবে।তবে কালাম খান এর পাশের চেয়ারে বসা টা উত্তম মনে হলো।তাই তো সবার প্লেটে খাবার দিয়ে কালাম খান এর পাশে বসলো।কালাম খান ছেলের দিকে তাকিয়ে বিশ্বাস জয় করা হাসি হাসলো।যার অর্থ টা কবির সুন্দর করে বুঝতে পারে। তিনি তার মেয়ে পেয়ে গিয়েছে।
খাবার শেষ তিন্নি সব গুছিয়ে রাখে।কালাম খান আর কবির তখন লিভিং রুমে বসে আছে।
তিন্নি সব গুছিয়ে রেখে সেখানে এলো।
-“আঙ্কেল আজ আসি আমি।”
-“কোথাও যেতে হবে না।
তুমি বসো।কবির তুমি তিন্নির সাথে কথা বলো আমি একটু পর আসছি।”
শেষে এর কথা টা কবির কে উদ্দেশ্য করে বলে তিনি নিজের রুমের উদ্দেশ্য চলে গেলো।
-“বাবা চাইছেন আমাদের বিয়ে টা আজ দিতে।
কবির কোনো ভণিতা ছাড়াই বলে দিলো।
তিন্নি চোখ বড় বড় করে কবির এর দিকে তাকালো।বুক কাঁপছে।এই মূহুর্তে কি বলা উচিৎ সেটা মাথায় আসছে না। তবে মনের ভেতর একটা প্রশ্ন ঘুরছে।আর দেরী না করে কবির কে সেটা করে ফেলল,
-“আপনি চান না?”
কবির সোফা ছেড়ে ওঠে এলো।গেঞ্জি টা টেনেটুনে ঠিক করে দুই হাত ট্রাউজার এর পকেটে রেখে সটান হয়ে ঠিক তিন্নির মুখের বরাবর দাঁড়িয়ে বলল,
-“সেটা তোমার মতামত এর উপর ভিত্তি করবে।
তবে আমি আগেই বলেছি তুমি সময় নাও।কিন্তু উত্তর টা আমি সময় শেষ হ্যাঁ চাই।
আর তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো আমি তোমায় ভালোবাসি এন্ড বিয়ে করার প্রস্তাব টাও আমি দিয়েছি।”
——-
মাইশা কনসিভ করেছে।
কথা টা আয়ান জানা মাত্র এক রকম পাগলামি শুরু করে দিয়েছে।মাইশা কে কিছুতেই এখন মির্জা বাড়ি যেতে দিবে না। আর এয়ারপোর্টে তো একদমই নয়।আয়ানের এমন পাগলামো দেখে শফিক সওদাগর তৎক্ষনাৎ লজ্জায় লিভিং রুম ত্যাগ করেন।আর মিতা সওদাগর আয়ান কে এটা সেটা বলে বোঝাচ্ছে। মাইশা নিজেও লজ্জায় আড়ষ্ট। কাল রাতেই আয়ান একটা প্রেগন্যান্সির কিট এনে ছিল।মাইশা পরে পরীক্ষা করে দেখবে বলে সেটা তখন রেখে দিয়েছিল ঠিকই কিন্তু আয়ান যখন কফি নিতে রুম থেকে বেরিয়ে এসছিল তখন মাইশা পরীক্ষা করে পজিটিভ এসছিল।কিন্তু সারপ্রাইজ দিবে ভেবে রেখে দিয়েছে। আর আজ সকালে মির্জা বাড়ি থেকে ফোন আসায় ভাবে রাতে বলবে।কিন্তু জিনিস টা যে আয়ানের হাতে পরে যাবে মাইশা কস্মিনকালেও ভাবতে পারে নি।
মাইশার ভাবনার মাঝেই আয়ান নিজের মা’কে উদ্দেশ্য করে বলল,
-“মা দেখো তুমি ওর হয়ে একদম সাফাই গাইতে আসবে না। তুমি জানো না ও কত বড় বাঁদর।”
-“এই আপনি কি বললেন?
আমি বাঁদর? তাহলে বিয়ে কেনো করেছেন ?তার মানে আপনিও বাঁদর।”
মাইশার কথা শুনে মিতা সওদাগর শব্দ করে হেঁসে উঠলো। আয়ান ভ্যাবাচ্যাকা খেলো।চোখ ছোট্ট ছোট্ট করে মায়ের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
-“আমি হোটেল যাচ্ছি।
অনেক কাজ।রাতে ফিরে আসব আর।”
আয়ান বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।
মাইশার সামন্য মন খারাপ হলো।কিন্তু সেটা আয়ানের এতো যত্ন সচেতনতা, নিজের ভালোবাসার মানুষ টা কে হারানোর ভয় সব দেখে মূহুর্তে খারাপ লাগা উবে গেলো।ঠোঁটর কোণে এক চিলতে হাসি টেনে মিতা সওদাগর কে বলে উঠলো,
-“আমি যাব না মা।
ফোন করে জানিয়ে দেব ভাইয়া কে।”
মিতা সওদাগর শুধু মাইশার গালে হাত রেখে মুচকি হেঁসে চলে গেলো।
#চলবে….