#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_১৩
#জান্নাত_সুলতানা
-“তোমার ফোনের ওয়ালপেপারে কোন মেয়ের পিকচার ওটা?”
কালম খান এর প্রশ্নে চমকাল কবির।তড়িৎ গতিতে মাথা ঘুরিয়ে বাবা-র দিকে তাকালো।
কবির খাবার চিবচ্ছিল। কিন্তু বাবার মুখে অনাকাঙ্খিত প্রশ্নে অপ্রস্তুত হলো।
খাবার মুখের টা না চিবিয়ে গিলে নিলো। পানি খেয়ে নিজে কে স্বাভাবিক করলো।কালাম খান ছেলের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছেলের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছে।কবির বাবার দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থমথমে খেলো। বাবা-র কাছ থেকে কিছু আর গোপন করা যে সম্ভব নয় বুঝতে অসুবিধা হয় না। তবে কবির খুব শীগ্রই তিন্নির ব্যাপারে বাবা-র সাথে কথা বলতো।এমনটাই মনস্থির করেছিল।তবে বাবা যে নিজ থেকে ছেলের পেছনে গোয়েন্দা ঘিরে করছে সেটা কে জানত!
কবির নিজে কে ধাতস্থ করে। সময় নিয়ে সোজাসাপটা জবাব দিলো,
-“ওর নাম তিন্নি।
তুমি চিনো।চেয়ারম্যান সাহেবের বড় নাতনির বিয়েতে এসছিল।”
-“হ্যাঁ তুমি সেদিন দেখা করলে।
আর আমি বাবা হয়ে ছেলের গার্লফ্রেন্ড কে ছেলের সাথে দেখার জন্য সাহায্য করলাম।”
অকপটে কথা গুলো বলল কালাম খান। কবির কস্মিনকালেও ভাবতে পারে নি তার বাবা এমন কিছু দেখেছে আর এসব বলবে।
তবে কবির এমন ভাবে বসে মুখে খাবার নিলো যে এসব স্বাভাবিক কোনো সিরিয়াস কথা নয়।
কালাম খান ছেলের এমন নির্বিকার ভঙ্গিতে থাকতে দেখে মনে মনে ছেলে কে নির্লজ্জ উপাধি দিলো। অবশ্য ছেলের কি দোষ ওনি নিজেই তো এমন কথা বলল।তবে দৃষ্টি আগের ন্যায় রেখেই প্রশ্ন করলো,
-“তা কিছু কি আছে?
নাকি আগের মতোই মেয়ে দেখলে দশ হাত ডিস্টেন্স বজায় রাখো?”
-“নাহ।
বিয়ে করব।তোমার সাথে দেখা করাতাম।
আর হ্যাঁ ওর কিন্তু পরিবার,,
-“সব জানি।
তা কবে নিয়ে যাচ্ছো?”
-“আমরা না।ওকে আসতে বলবো।”
-“তোমার ইচ্ছে।
আর হ্যাঁ যতদ্রুত সম্ভব বিয়ে করো।নিজের হাতের রান্না খেতে খেতে খাবারের আর স্বাদ পাচ্ছি না।”
কালাম খান এর কথায় কবির ড্যাবড্যাব করে বাবা-র দিকে তাকিয়ে রইলো।
এর একটাই কারণ আজ রাতের রান্না কবির করেছে। তাহলে বাবা-র এমন কথার অর্থ কি?
-“বাবা রান্না তো মাঝেমধ্যে আমিও করি।
তাছাড়া কাজের খালা তো রান্না করে দিতে বলে তুমি তো রাজি না।”
-“ওসব তুমি বুঝবে না।
শহরে খালার হাতে রান্না আর ঘরে বউদের রান্নার মাঝে আকাশ-পাতাল তফাৎ।”
কবির মাথা নাড়ে সত্যি। শহরে কাজের খালাদের রান্না একদম স্বাদ নয়।কেমন তাড়হুড়ো করে রান্না করে ভালো করে কিছু পরিষ্কার করে না। চাল ধুয়ে ভাত রান্না করে না।ডাল রান্না করলে মনে হয় পানিই এরচেয়ে ভালো।
কবির দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। সে হোস্টেল থাকতে ভীষণ কষ্ট হতো এরকম রান্না খেতে কিন্তু এখন সয়ে গেছে সব খেতে পারে তাই মাঝেমধ্যে ভুলে যায় বাবা এসব খেতে পারে না। কবির এর মা এক কঠিন রোগে মারা যাওয়ার পর কালাম খান আর বিয়ে করে নি। কবির তখন নাইনে পড়তো।দু’জন ভালোবেসে পালিয়ে বিয়ে করে ছিল বিধায় কোনো আত্মীয় স্বজন পরিবার কেউ কোনো খোঁজ নিতো না।সেই থেকে ছেলে কে নিয়ে একা হাতে সব সামলেছ।
——
সাদনান হসপিটাল থাকবে না।সে বাড়ি চলে যাবে।ডক্টর দু’দিন থেকে যাওয়ার কথা বললে সাদনান সোজাসাপটা জবাব জানিয়ে দিয়েছে সে আজ রাতেই বাড়ি ফিরতে চায়।প্রিয়তা একবার বলেছে। কিন্তু সাদনান তার কথায় অনড়।প্রিয়তার বুঝে আসে না সরকার থেকে এতো সেবাযত্ন নিজের জন্য পার্সোনাল সিকিউরিটি ভিআইপি কেবিন তার পরেও কেন সাদনান ভাই এখান থাকতে চাচ্ছে না?
সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে সাদনান কে আয়ান আর রাহান ধরতে এলেই সে গম্ভীর কণ্ঠে জানাল,
-“সামন্য একটা গুলি লেগেছে। একটা গুলিতে মির্জা সাদনান শাহরিয়ার কাবু করতে যথেষ্ট নয়।”
সাদনানের ডান হাত গলায় ঝুলানো। সাদনান বা হাতে প্রিয়তার হাত টা মুঠোয় পুরো নিয়ে আগে আগে হাঁটতে লাগলো। আর ওদের পেছনে বাকিরা সবশেষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে।
—–
-“বাহ দারুণ হয়েছে।
আজ বাড়ি না এলে সব মিস করে যেতাম।”
প্রিয়তা নির্বিকার সে পানি এনে সাদনানের গায়ের পাঞ্জাবি খুলে বড় টাওয়াল ভিজিয়ে গা মুছতে লাগল।
সাদনান বউ কে এটাসেটা জিগ্যেস করছে,এটা কেনো করেছো? এভাবে কেনো রুম সাজিয়েছো?শাড়ী কেনো বের করছো?আর কত কি!
সাদনানের কথায় প্রিয়তা মুখ ভোঁতা করে নিলো।কি বলবে? লোকটা এমন একটা ভাব করছে মনে হচ্ছে সে সদ্য জন্ম নেওয়া কোনো বাচ্চা। কিছু বুঝে না।
প্রিয়তা কোনো জবাব দিলো না।বালতি নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। নিজেও হাল্কা ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে ভেজা টাওয়াল ব্যালকনিতে দিয়ে আসে।
প্রিয়তা মুখ ভার করে রেখেছে সেই থেকে। সাদনান বউ কে পর্যবেক্ষণ করছে। প্রিয়তা ওড়না মাথায় দিয়ে রুম হতে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই সালেহা বেগম সহ আয়েশা বেগম খাবার নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো।প্রিয়তা নিজেও সাদনানের খাবার এর জন্যই নিচে যাচ্ছিল।সালেহা বেগম এর কাছ থেকে খাবার প্লেট হাতে নিতে নিতে বলল,
-“আমি যাচ্ছিলাম মা।
আপনারা আবার এতো রাতে,,,
-“শোন খাবার তোর টাও দিয়ে দিলাম।
খেয়ে নিবি কিন্তু।”
প্রিয়তার সম্পূর্ণ কথা না শুনেই সালেহা বেগম বলল।প্রিয়তা মাথা নাড়ে। সালেহা বেগম আর আয়েশা বেগম সাদনানের হালচাল জিগ্যেস করে খাবার খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিতে বলে চলে গেলো।
প্রিয়তা হাত ধুয়ে এসে খাবার প্লেট নিয়ে সাদনানের পাশে বসলো।সাদনান চুপচাপ খাবার খেলো।প্রিয়তা নিজেও খেলো।সাদনান বউয়ের মুখ দেখে ঠিক বুঝতে পারছে বউ রেগে আছে।কিন্তু কি ব্যাপারে?
প্রিয়তা খাওয়া শেষ সব গুছিয়ে রেখে সাদনান কে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে বড় লাইট অফ করে ছোট লাইট অন করে বিছানার এক পাশে এসে গুটিশুটি মেরে শুইয়ে পড়লো।আর এদিকে সাদনান ড্যাবড্যাব করে বউয়ের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে।
অনেক কষ্ট এগিয়ে এসে বা হাতে প্রিয়তা কে টেনে বুকের বা পাশে নিলো।প্রিয়তা জোর খাটালো সরে যেতে চাইলো।কিন্তু সাদনানের শক্তির কাছে এসে সে পরাজিত।সাদনান শব্দ করে হেঁসে উঠলো। প্রিয়তার যেনো সাদনানের হাসিটা কাটা গায়ে নুনের ছিটা মনে হলো।
ফুঁসে ওঠে।
রাগে গজগজ করতে করতে বলল,
-“একদম ছুঁতে আসবেন না আমায়।সেদিন কি বলেছিলেন?আপনি আপনার কিচ্ছু হতে দিবেন না! আমার জন্য হলেও নিজে কে ভালো রাখবেন।তাহলে আজ এসব কি?”
-“এটা তো আমি ইচ্ছে করে করি নি। তবে আমি আমায় ভালো রেখেছি।নয়তো এতখনে উপরে চলে,,,
-“প্লিজ এসব বলবেন না।
ছেড়ে দিন না এসব।অফিস যান।
আমরা আর দশ টা সংসারের মতো স্বাভাবিক ভাবে সংসার করব।”
সাদনানের কথা না শুনেই প্রিয়তা বলে উঠলো।
-“ভয় পেলে মানুষ ভয় দেখাবে।নিজে কে শক্ত করে গড়তে হবে।তোমার সংসার হবে।আমার রাজনীতি নিয়ে তোমার সংসারে ভবিষ্যতে আর কোনো প্রভাব পড়বে না।আমার স্থান টা আমি যথাশীঘ্র তেমন ভাবে তৈরী করে নেব।”
সাদনান বউ কে এক হাতে জড়িয়ে ধরে কথা গুলো বলল।
প্রিয়তা এনিয়ে আর কথা বাড়াল না। কি দরকার অযথা এসব নিয়ে মাতামাতি করে! লাভ হবে না। রাজনীতি করলে এসব হবেই।তবে প্রিয়তার ভরসা আছে।
ভালোবাসার মানুষ টার উপর।
—-
-“এভাবে কোনো সম্পর্ক হতে পারে না রাহান ভাই।
আপনি না এদিকে যাচ্ছেন না ওদিকে যাচ্ছেন।”
সারা’র কথায় রাহান হাসলো।যা অন্ধকারে সারা’র নজরে এলো না।রাহান থমথমে কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,
-“তুই বল কোন দিকে যাব?
আমার তো মনে হচ্ছে আমি ঠিক রাস্তায় হাঁটছি।”
-“হাঁটতেই থাকুন আপনি।
আর কোনো দিকে তাকাতে হবে না।”
সারা ফোঁস ফোঁস করে বলল।
রাহানের পাশ থেকে ওঠে চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই রাহান সারা’র হাত টেনে ধরলো।হেঁচকা টানে সারা কে নিজের উরুর উপর বসিয়ে দিলো।সারা চমকে উঠলো ভয়ে পেয়ে রাহানের হাত শক্ত করে খামচে ধরলো।যার ফলে রাহানের হাতের উলটো পিঠে সারা নখের আঁচড় লাগলো।রাহান ভ্রু কুঁচকে নিলো।
দাঁতে দাঁত চেপে ব্যথা হজম করলো।এখন এসব নিয়ে কিছু বলা যাবে না। বললেই এই পাগল ফোঁসে উঠলে কাজের কথা কিচ্ছু বলা হবে না যা এখন না বললেই নয়।
রাহান সারা’র কাঁধে নিজের থুঁতনি ঠেকাল।সারা’র শরীর কাঁপছে। রাহানের মনে হচ্ছে কোনো নেশা জাতীয় দ্রব্য নিয়ে সে বসে আছে।যা তাকে খুব বাজে ভাবে ওটার প্রতি টানছে। রাহান অবস্থা বেগিত বুঝতে পেরে সারা কে পাশে বসাল।সারার একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরো নিয়ে বলল,
-“যথেষ্ট ম্যাচিউর তুই।আমি এখন যা বলব মন দিয়ে শুনবি। ঠিক আছে?”
সারা মাথা নাড়ে।
রাহান মুচকি হেঁসে বলল,
-“গুড।
জন্ম হয়েছে আমার এবাড়িতে।প্রতি টা মানুষ আমাকে অনেক ভালোবাসে, বিশ্বাস করে। আমার দাদা-দাদি নেই।অথচ নানাজান আর নানিজান সেটা কখনো আমাকে উপলব্ধি করতে দেয় নি। আমার বাবা-র কোনো ভাইবোন নেই।সেই সুবাদে আমার কোনো ফুপি বা চাচা নেই। আর এটা আমি কখনো বুঝতেই পারি নি। আমার দুই মামা আমাকে সেটা বুঝতে দেয় নি।মামিরা কখনো আমায় তোদের থেকে ভিন্ন নজরে দেখে নি।বরং তোদের চেয়ে বেশি প্রায়োরিটি দেয় আমাকে আর আপু কে।বাবার জব টা তেমন আহামরি নয়।তবে মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু ছেলেমেয়ে বিদেশে পাঠিয়ে পড়ালেখা করানো বিলাসিতা। আর যেটা আমার আপু খুব সহজেই করছে।আর এটা সম্পূর্ণ সম্ভব হয়েছে মামাদের জন্য।
আমাদের সবকিছুতে মামাদের অবদান বেশি।সেখানে তাদের খেয়ে তাদের পড়ে তাদের বিশ্বাস কি করে ভেঙে দেই?”
-“তবে কি আমার আপনাকে পাওয়া হবে না?”
সারা ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো।
রাহান সারা কে এক বাহুতে আগলে নিলো। সারা’র হাতের উলটো পিঠে অধর স্পর্শ করে বলল,
-“ভাগ্য থাকলে অবশ্যই।
আমি আমার সর্বোচ্চ টা দিয়ে চেষ্টা করবো আমাদের ভালোবাসা পূর্ণতা দেওয়ার।”
হঠাৎ সিঁড়ি কাছে শব্দ হলো।রাহান সারা দু’জনে চমকে ওঠে। রাহান তড়িৎ গতিতে সারা কে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দ্রুত পা ফেলে এগিয়ে এলো।সারাও পেছন পেছন এলো।কিন্তু না ওখানে কেউ নেই।
সারা রাহানের বাহু খামচে ধরে ভয়ে। রাহান সারা কে আগলে নিলো।তবে মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন ঘুরতে লাগল, “কে ছিল এখানে?”
#চলবে….
#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_১৪
#জান্নাত_সুলতানা
[পর্ব টা একটু রোমান্টিক,পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]
-“বুঝলেন চেয়ারম্যান সাহেব। ছেলে টা দেশে ফিরছে। ভাবছি বিয়ের ব্যাপারে কথা বলব।”
ওয়াসিফ দেওয়ান জানাল।জাফর মির্জা হেঁসে বলে উঠলো,
-“সে তো ভালো কথা।
তবে মেয়ে পছন্দ আছে কি?”
-“না ইয়ে,,
ওয়াসিফ দেওয়ান আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাচ্ছিল।কিন্তু সাদনান মাঝে ফোঁড়ন কেটে বলল,
-“আঙ্কেল আমার মনে হচ্ছে আপনার একবার আপনার ছেলের সাথে কথা বলা উচিৎ।”
-“কথাখানি মন্দ বলো নি।
আজই জিগ্যেস করব।”
ওয়াসিফ দেওয়ান সাদনানের কথা টা বেশ মনে ধরলো।ছেলে টা যথেষ্ট বুদ্ধিমান। কোথায় কি ধরণের কথা বলা উচিৎ বা কোন কথা টা বললে ঠিক হবে খুব ভালো করে সেটা বুঝে।যাকে বলে যথেষ্ট বিচক্ষণ পুরুষ। এমন পুরুষ খুব কমই দেখেছেন তিনি তার রাজনীতির জীবনে। তিনি এবার ভিন্ন কিছু ভেবেছেন।সাদনান সেটারই যোগ্য।এখন শুধু সময় করে কাজ টা ভালোই ভালোই করতে পারলে হয়।
সাদনানের দিকে তাকিয়ে ওয়াসিফ দেওয়ান লম্বা চওড়া হাসে।অতঃপর আরো বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে খাবার খেয়ে ওয়াসিফ দেওয়ান মির্জা বাড়ি হতে বেরিয়ে গেলো।
—
সাদনানের হাতের ব্যান্ডেজ খোলা হয়েছে। ক্ষত শুঁকিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এখন হাত নড়াচড়া করা নিষেধ।আজ পনেরো দিনের বেশি সময় হয় সাদনান বাড়ি থেকে বেরুতে পারে না। বাসায় বসে সব মিটিং আলোচনা সমালোচনা সবাই কে বাড়িতে ডেকে করতে হয়।ডান হাতে গুলি লেগেছে বিধায় খাবার নিজের হাতে খেতে পারে না। প্রিয়তা খাইয়ে দেয়।আবার মাঝে মাঝে সালেহা বেগম আয়েশা বেগম সুফিয়া বেগম সবাই খাইয়ে দেয়।মা চাচি ফুপি সাদনানের ভীষণ ভালো।সবাই বেশ মিলেমিশে সেবা যত্ন করছে।এখন সালেহা বেগম খাবার খাইয়ে দিচ্ছে। সাথে প্রিয়তা কেও।এখন নয় টা বাজে সাড়ে দশ টায় একটা মিটিং রয়েছে।দলের কিছু লোক আসবে।নিচে সিঁড়ি কোঠার কাছে বড় একটা কক্ষ রয়েছে যেটায় সব সময় এই রাজনীতির যত কাজ আছে সেখানেই হয় সব।সাদনানের খাবার খাওয়া শেষ সালেহা বেগম সব গুছিয়ে নিয়ে চলে গেলো। প্রিয়তা সাদনানের গা থেকে কালো শার্ট টা খুলে নিল।হাতে গুলি লেগেছে পর টি-শার্ট পড়া টা সম্ভব নয়।তাই শার্ট গায়ে দেয় সাদনান। প্রিয়তা কাবাড থেকে পাঞ্জাবি এনে সাদনান কে পড়িয়ে দিলো।হাত কাঁপছে এসি অন থাকা শর্তেও প্রিয়তার গলা ঘাড় নাকের ডগা ঘেমে ন্যায় একাকার অবস্থা।
সাদনান হাসলো।প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে সাদনানের দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করলো,
-“হাসছেন কেনো?”
সাদনান ওঠে দাঁড়াল। বা হাতে প্রিয়তার কোমড়ে রেখে আচমকাই প্রিয়তা কে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।প্রিয়তা কেঁপে উঠল। তবে সাদনানের বুকের উপর দুই হাত রাখে।সাদনানের চোখের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পায়।মাথা নিচু করে নেয়।
সাদনান প্রিয়তার মুখের দিকে এগিয়ে নিয়ে প্রিয়তার ললাট নিজের অধর স্পর্শ দিলো।
সেখান থেকে সরে এসে থমথমে কণ্ঠে আদেশ করল,
-“মাথা উঁচু করো।”
হঠাৎ সাদনানের থমথমে কণ্ঠে শোনে অবাক হলো।মাথা উঁচু করে অবাক দৃষ্টিতে তাকাতেই সাদনান নিজের উদ্দেশ্য সফল করলো।বউয়ের অধর নিজের অধর চেপে ধরলো।প্রিয়তা হঠাৎ অনাঙ্ক্ষিত স্পর্শে একটু অপ্রস্তুত হলো। তবে সামনের পুরুষ টার করা অধর স্পর্শে নিজে কে সামলাতে হিমশিম খেলো।শক্ত হাতে সাদনানের বুকের কাছের পাঞ্জাবি খামচে ধরলো।নিজের মনে ভালোলাগার অনুভূতি হলো।আজ অনেক দিন পর সাদনান বউ কে এতো টা গভীর স্পর্শ দিলো।প্রথম সেদিন রাতের আর আবার আজ।যদিও মাঝেমধ্যে ছোট ছোট চুমু খায় কিন্তু আজ সময় নিয়ে নিজের তৃষ্ণা মেটাল।সাদনানের থেকে ছাড়া পাওয়া মাত্র প্রিয়তা চোখ বন্ধ করে জোর জোর শ্বাস টানে। সাদনান নিজের বুকের দিকে তাকিয়ে আবার প্রিয়তার মুখের দিকে তাকিয়ে অসহায় কণ্ঠে বলল,
-“এটা কি করলে জান।
এখন আমি বাহিরে কি করে যাব?পাঞ্জাবির অবস্থা নাজেহাল।”
প্রিয়তা লজ্জা ভুলে অবাক হয়ে সাদনানের বুকের দিকে তাকাল সত্যি পাঞ্জাবি টা বাজেভাবে কুঁচকে গিয়েছে।
প্রিয়তা কিছু বলবে তার আগেই সাদনান পাঞ্জাবি টেনে টুনে ঠিক করে।প্রিয়তা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।সাদনান এগিয়ে গিয়ে পারফিউম হাতে নিলো।ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে গায়ে পারফিউম স্প্রে করতে করতে বলল,
-“নিচে গেলো সিঁড়ির নিচের রুমে আশেপাশে যাবে না।”
-“সব সময় বলতে হয়?”
-“হুঁ।
বলাতো যায় না কখন কোন দিক দিয়ে কার নজর পড়ে বসে।”
সাদনান গুরুগম্ভীর কণ্ঠে কথা টা বলেই ফোন হাতে নিলো।ঠিক তক্ষুনি দরজায় কেউ কড়া নাড়ে।
সাদনান ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্ন করলো,
-“কে?”
-“ছোট সাহেব নিচে সব মানুষ আইয়া পড়ছে।”
-“আসছি আমি।”
একটা মহিলার কণ্ঠ স্বর।কাজের লোক চলে গেলে সাদনান বউ কে বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
—–
বেশ কিছু দিন ধরে রাহান ঠিকঠাক দুই মামার সঙ্গে অফিস যাচ্ছে। এতে আজ্জম মির্জা আর মফিজুর মির্জা ভীষণ খুশি। বেশ কিছু ডিল কনফার্ম করেছে। যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে।
আজও একটা মিটিং ছিল।সেটা শেষ করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাহানের অনেক রাত হলো।আজ অনেক দিন হয় প্রেয়সীর সাথে ঠিকঠাক কথা বলা হয় না।তাই রাহান আগে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নিলো।খাবার সালেহা বেগম পরিবেশন করে দিলো।সবাই অনেক আগেই রাতের খাবার খেয়ে নিয়েছে।
সালেহা বেগম রাহানের খাবার শেষ সব গুছিয়ে রাখে।রাহান তখনো বসে আছে বড় মামির অপেক্ষায়।সালেহা বেগম সব গুছিয়ে এলেই রাহান বলল,
-“সারা ঘুমিয়ে পড়েছে বড়মনি?”
-“মনে হয় না।
মেয়ে টা আমার দিন দিন উদাসীন হয়ে যাচ্ছে!”
চিন্তিত কণ্ঠে বলল সালেহা বেগম।
রাহান ওনার কথা শোনে বুকের ভেতর মুচড় দিলো।অনেক দিন ধরে মেয়ে টা কে একটু সময় দেওয়া হয় না।তাই এমন টা হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু ভালোবাসলে তো হবে না।ভালোবাসার মানুষ টাকে সারাজীবন এর জন্য নিজের করে রাখার জন্য নিজের প্রতিষ্ঠিত হওয়া জরুরি।
আর যেটা রাহান করছে।
রাহান কথা গুলো ভেবেই তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে উঠলো,
-“আমি কি বাবা কে বলব বাবাই’য়ের সঙ্গে কথা বলতে?”
-“নাহ আরো ক’টা দিন যাক।
নয়তো সবাই বুঝে যাবে আমি তোকে অফিস যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছি।”
-“তাহলে?”
-“আমি তোর বাবাই’য়ের সাথে কথা বলব।”
-“সাদনান কি বলেছে?”
-“বেকার ছেলের সাথে বোন বিয়ে দিতে কোন ভাই চাইবে!তবে আমি জানি সাদনানের মনের কথা এটা নয়।
তুই নিশ্চিন্তে থাক।”
-“হ্যাঁ।
আমি তোমাদের বিশ্বাস করি।”
রাহানের কথায় সালেহা বেগম হাসলো।
অতঃপর রাহান কে ঘুমুতে যেতে বলে নিজেও কক্ষের দিকে চলে গেলো।
—–
সেদিন রাতে ছাঁদের দরজা খোলা ছিল।সালেহা বেগম ভেবেছিল হয়তো কাজের লোক দরজা বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছে।তাই তিনি ছাঁদের দরজা বন্ধ করতে গিয়েছিল। আর সেখানে গিয়ে দুই মানব-মানবীর কথোপকথন শুনে তিনি থমকে দাঁড়ান। এর আগেও অবশ্য তিনি নিজের মেয়ে কে রাহানের সাথে রাতে সেদিন প্রাচীর টপকে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করতে দেখেছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই সম্পর্ক কি পরিণতি পাবে?
এমন প্রশ্ন মস্তিষ্কে আসার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। রাহান পড়ালেখা শেষ করেছে।সাদনান আর নানার সাথে থেকে রাজনীতি করে। কিন্তু কোনো পারমানেন্ট জব নেই।আর সালেহা বেগম তাই এব্যাপারে সাদনান এর সাথে কথা বলে আর সাদনানই রাহান কে অফিস যাওয়ার জন্য বলে।রাহান সবদিক বিবেচনা করে তাই করল।
—–
সাদনান ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। প্রিয়তা রুমে বসে সাজুগুজু করছে। সাজুগুজু বলতে শাড়ী পড়ে চোখে কাজল দিয়ে ঠোঁটে হাল্কা গোলাপি রঙের লিপস্টিক দিয়ে চুল ছেড়ে দিয়ে গুটিগুটি পায়ে ব্যালকনির দিকে এগিয়ে গিয়ে সাদনান কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।সাদনান একটু চমকায় না।তবে নিজের পুরুষালী চিত্ত জেগে ওঠে।হৃদপিণ্ড অস্বাভাবিক ভাবে লাফালাফি করে।মনের ভেতর ভালোবাসার জোয়ার ওঠে।বউ কে কাছে পাওয়ার নেশা তীব্র থেকে তীব্র মাত্রা ছাড়িয়ে যায়।প্রিয়তা নিজের শরীর কাঁপছে। হৃদপিণ্ড দ্রুত বেগে ওঠানামা করছে যার ফলস্বরূপ সাদনানের পিঠে প্রিয়তার বুকের সাথে সংঘর্ষ হচ্ছে।
সাদনান চকিতে পেছনে ফিরলো ফোন পাশের দোলনায় রেখে ধীরে ধীরে বউয়ের দিকে এগিয়ে এসে মুখ টা উঁচু করে নিলো।প্রিয়তার চোখ বন্ধ সাদনান প্রিয়তার বন্ধ চোখের পাতায় ফু দিলো।
প্রিয়তা কেঁপে উঠল। সাদনান তৎক্ষনাৎ বউয়ের ওষ্ঠদ্বয় নিজের ওষ্ঠদ্বয়ের ভাঁজে নিলো।সময় নিয়ে গভীর চুম্বন করলো। ছেড়ে দিয়ে প্রিয়তার মুখ টা নিজের দুই হাতের আঁজলে নিয়ে মৃদু কণ্ঠে বলল,
-“ধন্যবাদ আমার প্রাপ্তি কে প্রাপ্তিময় করে মূহুর্ত টাকে সুন্দর করে স্বরণীয় করে রাখার জন্য। তবে আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি আমার তুমি।”
#চলবে……