#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_১১
#জান্নাত_সুলতানা
আজ সকাল থেকে তিন্নি ভাবছে।
ভার্সিটি অফ। ভোট কাল।আজ টিউশন করে হোস্টেল ফিরে আসবে এমনটাই চিন্তা ভাবনা ছিল।কিন্তু কাল রাতে কবির খাঁন এর ম্যাসেজ এর পর থেকে ভেবে যাচ্ছে শুধু। যাওয়া উচিৎ? না-কি না?আবার ভাবছে কোনো প্রয়োজন হয়তো। পরক্ষণেই ভাবছে কবির খাঁন বুঝতে পেরে যায় নি তো ও যে স্যার কে ভালোবাসে!আবার ভাবে যাওয়া উচিৎ স্যার মানুষ ডেকেছে না গেলে বেয়াদবি হবে। তিন্নি দু-টানায় ভুগছে।তিন্নির এখন খুব করে নিজের পরিবার না থাকার অভাব টা উপলব্ধি করতে পারছে।পরিবার মা বাবা ভাই বোন কেউ যদি এখন পাশে থাকতো নিশ্চয়ই এব্যাপারে কথা বললে একটা সলিউশন দিতো।কিন্তু তিন্নির তো তেমন কেউ নেই। তিন্নি বিছানা থেকে ফোন হাতে নিলো।যদি এব্যাপারে কারোর সাথে শেয়ার করা যায় সেটা এই মূহুর্তে মাইশা।তিন্নির স্কুল, কলেজ লাইফে তেমন কোনো ফ্রেন্ড নেই।মুলত সময় হয় নি এসবে ধ্যান দেওয়ার।ভার্সিটিতে গিয়ে মাইশার সাথে কেমন অদ্ভুত ভাবে এই সম্পর্ক টা তৈরী হলো তিন্নি এখন বুঝতে পারে না।
মাইশা কে ফোন দেওয়ার সাথে সাথে কল রিসিভ হলো।
-“শোন দেখা করতে পারবি?”
তিন্নি জিজ্ঞেস করলো।
মাইশা কিঞ্চিৎ সময় ভেবে বলল,
-“এখন তো বাড়ি থেকে বেরুতে দিবে না।
কাল ভোট বুঝতে পারছি।
তুই একটা কাজ কর না আমাদের বাড়ি চলে আয়।”
তিন্নি কিছু ভেবে বলল,
-“ঠিক আছে।”
তিন্নি কল কেটে রেডি হয়ে মির্জা বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল।
—-
দুপুরে সাদনান বাড়ি ফিরল আজ।প্রিয়তা অবাক। শোয়া থেকে ওঠে বসে বিস্ময় নিয়ে বলে উঠলো,
-“আপনি?”
সাদনান জবাব দিলো না।
এগিয়ে এসে প্রিয়তার কপালে হাত রাখে।মেয়েটার সকালে জ্বর এসছিল।এক রাতেই বউয়ের অবশ্য করুণ।ভবিষ্যতে কি হবে?বউয়ের দিকে এখন থেকে নজর দিতে হবে। এখন জ্বর নেই।
সাদনান গায়ের পাঞ্জাবির বোতাম খুলতে খুলতে বলল,
-“আবার যেতে হবে।
শাওয়ার নিবে?”
-“আপনি আগে যান।
আমি পরে যাচ্ছি।”
প্রিয়তা বিছানা ছেড়ে ওঠে গিয়ে কাবাড থেকে কাপড় নিতে নিতে বলল।
সাদনান গায়ের পাঞ্জাবি খুলে সোফায় রেখে টাওয়াল হাতে প্রিয়তা কে টেনে নিয়ে ওয়াশ রুমের যেতে যেতে বলল,
-“এক সাথে নিয়ে নেব।
আমাকে আবার যেতে হবে।”
প্রিয়তা কিছু বলল না।
আগে প্রিয়তা শাওয়ার নিলো।ড্রেস চেঞ্জ করে সাদনান বউ কে রুমে পাঠিয়ে দিলো।
অতঃপর নিজে বউয়ের কাপড় ধুয়ে এক্কেবারে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলো।
সাদনান কাপড় ব্যালকনিতে মেলে দিয়ে এসে দেখলো প্রিয়তা বিছানা বসে আছে। সাদনান একপলক সেদিকে তাকিয়ে নিজের চুল মুছতে মুছতে বউয়ের পাশে গিয়ে বসলো।প্রিয়তা টাওয়াল নিজে হাতে নিয়ে সাদনানের চুল মুছে দিলো। সাদনান হাসলো।দারুণ লাগে যখন এই ছোট্ট ছোট্ট হাত দু’টির মালিক তার জন্য কিছু করে।
——-
কালাম খাঁন ভোট প্রচারণায় গিয়েছিল আজ।মফিজুর মির্জা একজন বিজনেসম্যান। রাজনীতি সম্পর্কে খুব কমই ধারণা। মূলত এসবে আজ্জম মির্জা বা মফিজুর মির্জা দু-ভাইয়ের ততটা আগ্রহ নেই।তাই তো বাবা এতো বড় নেতা হওয়ার পরেও দু’ভাই বাবার ব্যবসায় হাত লাগালেও রাজনীতি নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই।
তবে এবার সাদনানের জন্য সবাই খাটছে।
এতেও সবাই কমবেশি আশ্চর্য।
আজ সকালে তারা বেশ কিছু এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চেয়েছে। দুপুর হতেই আবার ফিরে এসছে।
তিন্নি মাইশার সাথে কথা বলে চলে যেতে যাচ্ছিল।কিন্তু সুফিয়া বেগম সালেহা বেগম যেতে দেয় নি।দুপুরে খাবার না খাইয়ে কিছুতেই যেতে দিবে না। তিন্নি বাধ্য হয়ে থেকে গেলো।
দুপুরে সবাই এক সাথে খাবার খেলো।কালাম খাঁন অদ্ভুত ভাবে মেয়ে টাকে বারকয়েক নজরে পড়ে।মনে হচ্ছিল কোথাও দেখেছে। পরক্ষণেই মনে পড়ে মাইশার বিয়েতে দেখা হয়েছে। কিন্তু না আরও কোথাও দেখেছে। তিন্নি কালাম খাঁন এর সাথে একবার কথা বলেছে। স্যার এর বাবা বলে কথা।
খাবার শেষ কালাম খাঁন সবার সাথে আড্ডা দিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন।
তিন্নি অনেক আগেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছে।কিন্তু গাড়ি একটাও নেই। সাড়ে তিনটায় বেরিয়েছিল চারটার দিকেও তিন্নি কোনো গাড়ির পেলো না মূলত সব গাড়ি ভর্তি মানুষ কোনো গাড়ি ফাঁকা নেই।কালাম খাঁন নিজের গাড়ি নিয়ে গেইট ওভারটেক করার সময় তিন্নি কে এখনো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হলো।মেয়ে টা বাড়ি থেকে অনেক টা সময় হয় বেরিয়ে এসছে।
গাড়ি যে পাচ্ছে না তিনি বুঝতে পারে।
গাড়ি সাইড করে দাঁড় করিয়ে তিন্নি কে ডাকলো।
তিন্নি কাছে এগিয়ে গেলো।
মুচকি হেঁসে বলল,
-“জ্বি আঙ্কেল!”
-“তুমি কোথায় যাচ্ছো?
গাড়ি নেই।”
-“হ্যাঁ আঙ্কেল একটা গাড়ি ফাঁকা নেই।
আমার সামনে একটা টিউশন আছে ওখানে যাব।”
-“তুমি আমার সাথে এসো।
আমি এদিক দিয়ে বাড়ি ফিরছি।”
তিন্নি না করতে ইচ্ছে করল।কিন্তু কোনো গাড়ি নেই তারউপর ভদ্রলোক নিজে থেকে বলেছেন।
তিন্নি বেশি কিছু না ভেবে ওঠে গেলো।কালাম খাঁন গাড়িতে তিন্নি সাথে অনেক কথা বলল।তিন্নির বাবা মা নেই জানতে পেরে ওনি ভীষণ আফসোস করলেন।সাথে এখন থেকে কোনো প্রয়োজন হলে ওনাকে জানাতে বলল।তিন্নি শুধু মুচকি হাসল।কালাম খাঁন যে ভীষণ ভালো লোক সেটাও তিন্নি বুঝতে পারে। আধঘন্টা পর তিন্নি বড় একটা বিল্ডিংয়ের সামনে গাড়ি থামাতে বলল।
এটা ছাঁদে একটা রেস্টুরেন্ট রয়েছে। কালাম খাঁন তিন্নি কে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করতেই আরেক টা গাড়ি গেইট দিয়ে প্রবেশ করলো। পার্কিং লটে গাড়ি টা পার্ক করে গাড়ির মালিক গাড়ি থেকে বেরুতেই কালাম খাঁন ভ্রু কুঁচকে নিলো।এটা কবির। গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছে আজ।কালাম খাঁন গাড়ি স্টার্ট করলো।হয়তো ছেলের কোনো জরুরি কাজ রয়েছে। তবে মনে মনে কিছু একটা খটকা লাগল।
হঠাৎ করেই মনে পড়ল।তিন্নির ছবি তিনি তার ছেলের ফোনের লকস্কিনে দেখেছে। ছবি টা স্পষ্ট ছিল না বিধায় এতোক্ষণ বিষয় টা মনে করতে পারছিল না। তবে বিষয় টা তেমন পাত্তা দিলো না। অফিস থেকে জরুরি ফোনকল আসায় বিষয় টা আরো ভুলে গেলো
কবির গাড়ি পার্কিং করে গেইট এর দিকে তাকাতেই কালাম খাঁন এর গাড়ি নজরে এলো একটু বিড়বিড় করে বলে উঠলো, “বাবা এখানে?আমাকে দেখেছে?”
কবির এর ভাবনার মাঝেই তিন্নি এগিয়ে এসে কবির খাঁন কে বিনয়ের সাথে সালাম দিলো।
কবির থমথমে কণ্ঠে সালামের উত্তর করলো।
চোখর সানগ্লাস টা ঠিক করতে করতে জানতে চাইলো,
-“টিউশন শেষ?”
-“নাহ।
পাঁচ টায় যাব।”
তিন্নি জানাল।
লিফটে করে ওরা ছাঁদে এলো।একদম কর্নারে একটা টেবিলে গিয়ে বসল।
একদম নামী-দামী একটা রেস্টুরেন্ট।এক-এক টা টেবিলের মধ্যে অনেক দূরত্ব।তারউপর ডেকোরেশন চমৎকার।
ওরা বসার পর একজন ওয়েটার এলো।কবির তিন্নি কে কিছু জিগ্যেস না করেই কয়েকপদ খাবার অর্ডার দিলো।
ওয়েটার জানাল একটু সময় লাগবে।কবির শুধু মাথা দুলিয়ে ওয়েটার কে যেতে বলল।
ওয়েটার যাওয়ার পর কবির মুখ থেকে মাস্ক টা খুলে নিলো।তিন্নির চোখ কবির খাঁন এর মুখে আঁটকে গেলো।
চোখে সানগ্লাস আকাশী রংয়ের শার্ট গায়ে কালো প্যান্ট। চমৎকার দেখতে এই পুরুষ টাকে যেকোনো মেয়ে এক দেখায় প্রেমে পড়বে।
-“আমাকে পর্যবেক্ষণ করা শেষ?”
তিন্নি আকস্মিক কবিরের এরূপ প্রশ্নে হকচাল।লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো।
কবির তিন্নির দিকে তাকিয়ে হাসলো।যেটা তিন্নির নজরে এলো না। কবির মুগ্ধতা নিয়ে তিন্নির দিকে তাকালো। গায়ে খয়েরী রঙের একটা কুর্তি। মাথায় ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ঝুলানো। গায়ের রং টা চাপা হয়তো নিজের যত্ন খুব একটা করে না।অবশ্য করার কথাও নয়।বাবা মা ছাড়া নিষ্ঠুর এই পৃথিবীতে একা একা নিজের জীবন পরিচালনা করা বড্ড কঠিন।যেই যুদ্ধ প্রতিনিয়ত তিন্নি করে আসছে।নিতান্তই বাচ্চা মেয়ে।
,-“স্যার কোনো দরকার!
না মানে এভাবে,,
-“হ্যাঁ তোমাকে।
দেখো আমার ভূমিকা নিয়ে কথা বলা একদম পছন্দ নয়।সোজা উপসংহারে পছন্দ। সোজাসাপ্টা বলতে গেলো আমি তোমায় ভালোবাসি। বিয়ে করতে চাই।
আমি চাইলে বাবা কে দিয়ে তোমাকে প্রস্তাব পাঠাতে পারতাম। কিন্তু ওই যে বললাম ভূমিকা আমার একদম পছন্দ নয়।তাই আমার মনে হলো আগে তোমার সাথে কথা বলে তোমার মতামত জানা প্রয়োজন। অযথা জল গোলা না করে আমাদের মধ্যে আগে এটা নিয়ে কথা বলে ক্লিয়ার হওয়া উচিৎ।”
তিন্নি স্তব্ধ। কস্মিনকালেও তিন্নি ভাবতে পারে নি কবির এমন কিছু বলার জন্য ওকে এখানে ডেকে পাঠিয়েছে।
না চাইতেও তিন্নির চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।কবির হকচকাল।
ওঠে এগিয়ে এসে তিন্নির পাশে বসে অস্থির কণ্ঠে বলল,
-“দেখো তোমাকে কেউ জোর করবে না তুমি সময় নাও যতটা লাগে। কিন্তু সময় শেষ উত্তর টা আমি পজিটিভ,,,
কবির খাঁন এর পুরো কথা না শুনেই তিন্নি
মলিন কণ্ঠে বলল,
-“স্যার আমার পরিবার নেই।রূপ গুণ কোনো দিক দিয়ে আহামরি নই।
কিচ্ছু নেই।আমার থেকে ভালো কাউ কে ডিজার্ভ করেন আপনি।
হয়তো আবেগের বশে এসব বলছেন এখন।যখন কোনো সমস্যায় পড়লে আমার দিক থেকে পারিবারিক কোনো সহয়তা পাবেন না তখন আপনার হয়তো মনে হবে আবেগের বশে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল টা আপনি করেছেন।”
তিন্নির কথায় কবির চোয়াল শক্ত করে নিলো।মেয়ে টা কি সব উদ্ভট কথা বার্তা বলছে বুঝতে পারছে?পারিবারিক সহয়তা বলতে যে আর্থিক সাহায্যের কথা বলছে সেটাও বুঝতে পারে কবির। কবির গুরুগম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,
-“তোমার আমার বয়স টাকে আবেগের মনে হচ্ছে?
আর তোমার পরিবার নেই।এতে তোমার কোনো হাত নেই।সব আল্লাহর ইচ্ছে। আর আমার বাবার বা আমার আল্লাহ কোনো দিক দিয়ে কম দেয় নি যে অর্থ-সম্পত্তির জন্য তোমার পরিবারের প্রয়োজন হবে।
আমি তোমার কি আছে না আছে এসব জানতে চাই না আমি তোমায় ভবিষ্যতে হতে চাই।যার সবটা জুড়ে আমি থাকব।”
#চলবে….
#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_১২
#জান্নাত_সুলতানা
মির্জা বাড়ির সবাই ভোট কেন্দ্রে গিয়েছে।প্রিয়তা এই প্রথম ভোট দিয়েছে।তাও আবার নিজের ব্যাক্তিগত মানুষ টাকে।আল্লাহ দরবারে রাজনীতি নিয়ে এই প্রথম প্রিয়তা আল্লাহর কাছে দো’আ চেয়েছে নিজের ভালোবাসার মানুষ টার জয় নিয়ে। হ্যাঁ প্রিয়তাও ভালবেসে ফেলেছে। এই নেতা সাদনান ভাই কে প্রিয়তা ভালোবাসে।হয়তো পবিত্র বন্ধনের শক্তি এটা।একে-অপরকে প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান যত্ন ভালোবাসা সব কিছু প্রিয়তা সাদনান ভাইয়ের কাছ থেকে পেয়েছে।ভোট কেন্দ্র থেকে মির্জা বাড়ির সবাই কে মফিজুর মির্জা আর রাহান তাদের দায়িত্ব নিয়ে ঠিক ঠাক বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে। আর সেটার সম্পূর্ণ টা সাদনান কড়া নির্দেশ দিয়েছে যাতে একটা ফুলের টোকাও কারোর গায়ে না লাগে।যদিও খারাপ কিছু বা বিরোধী দলের লোকেরা কিছু করবে না।সাদনানের ধারণা। তারপরও সে কোনো রকম রিস্ক নিতে চায় না।
বাড়ি ফিরে সব মহিলা সদস্যদের অস্থিরতা চিন্তা সব শুরু হয়ে।
একটা পুরুষ মানুষ বাড়িতে নেই।দুপুর খাবার সবাই খেলো না।প্রিয়তা রুম থেকে বেড় হচ্ছে না।
শুধু ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকে।আম্বিয়া মির্জা কে অনেক কষ্টে খাবার খাইয়ে ঘুমের ঔষধ দিয়ে রুমে পাঠাল।সালেহা বেগম শাশুড়ী সেবা শেষ প্রিয়তার জন্য খাবার হাতে রুমে এলো।প্রিয়তা কে ফ্রেশ করিয়ে নিজে হাতে খাইয়ে দিলো। প্রিয়তা খাবার শেষ সালেহা বেগম এর কোলে মাথা রেখে শুয়ে ভীতু স্বরে বলল,
-“মা আমার ভয়ে হচ্ছে।
কোনো অঘটন হবে না তো?”
-“কিচ্ছু হবে না।
তুই ঘুমা।”
সালেহা বেগম প্রিয়তা কে স্বান্তনার বাণী শোনালেও নিজেও ভয়ে পাচ্ছে।
না চাইতেও কতরকম চিন্তা মাথায় এসে ভর করছে।বারবার মনে হচ্ছে কিছু একটা বিপদ আসতে চলছে। সালেহা বেগম প্রিয়তার মুখের দিকে তাকাল।মেয়ে টার মুখ টা চিন্তায় শুঁকিয়ে এটুকুনি হয়ে গিয়েছে।
প্রিয়তা ঘুমিয়ে পড়েছে তাই তিনি প্রিয়তা কে বিছানায় বালিশে শুইয়ে দিয়ে রুমের দরজা টা চাপিয়ে লাইট অফ করে দিয়ে গেলো।
—-
ভোট গণনায় প্রতি টা কেন্দ্রে সাদনান এগিয়ে আছে। সাদনান নিজেও উপজেলা পরিষদ ভবনে বসে আছে। ঘোষণা খুব শীগগির দেওয়া হবে। টিভি স্কিনে এমন একটা খবরই ভেসে রয়েছে।সুস্থ ভাবে ভোট হয়েছে কোনো দুর্নীতি করতে পারে নি এবার।পাবলিক নিজের ভোট এবার নিজেরা দিয়েছে।
রাত তখন আটটা। সাদনান স্বাভাবিক। তার পাশেই বসে রয়েছে জাফর মির্জা আর সাদনানের বাপ চাচা। অপর পাশে বিরোধী দলের প্রাক্তন এমপি।চোখে মুখে হিংস্রতা। সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ভোট গণনা শেষ ঘোষণা দেওয়া হলো।বিপরীত প্রার্থীর চেয়ে দিগুণ ভোট বেশি পেয়ে মির্জা সাদনান শাহরিয়ার জয় লাভ করেছে।
খবর টা টিভি স্কিনে দেখা মাত্র মির্জা বাড়িতে মহিলারা সবাই ভীষণ খুশি হয়।প্রিয়তা খুশি আম্বিয়া মির্জা প্রিয়তা কে ডেকে হাসি মুখে বলল,
-“নাতবউ। আমার নাতির জন্য বিশেষ কিছুর আয়োজন কর।”
সবাই অবাক। তবে খুশির মধ্যে এমন ভালো মূহুর্ত খুশিটাকে দিগুণ করে দিলো।প্রিয়তা লজ্জা পেলো। লিভিং রুম থেকে রুমে চলে এলো।তবে ভয় এখনো কাটে নি।
যতক্ষণ না সাদনান ভাই ঠিকঠাক বাড়ি ফিরছে ততক্ষণে প্রিয়তা শান্তি পাচ্ছে না।
তবুও প্রিয়তা কিছু ভেবে সাদনানের ব্যালকনির সব গাঁদাফুল গোলাপ ফুল,কাঠগোলাপ বেলি ফুল সব ফুল ছিঁড়ে নিলো।নিচে কাজের লোকের সাহায্য বাগান থেকে ফুল আনাল।আর রুমে আগে থেকে কিছু সুগন্ধি যুক্ত ক্যান্ডেল ছিল সেগুলো দিয়ে রুমে টা সাজিয়ে নিলো।বিয়ের পর সাদনান প্রিয়তা কে তিন টা শাড়ী দিয়েছে। সেখান থেকে একটা শাড়ী পড়ে সেজেগুজে তৈরী হবে এমনটাই মনস্থির করলো।
রাত সাড়ে নয়টার দিকে সারা’র ফোনে কল এলো।রাহানের নম্বর থেকে। সারা অবাক হলো। এমন সময় রাহানের ফোন অপ্রত্যাশিত। তাই ভাবুক হলো।ফোন রিসিভ করে কানে দিয়ে চিন্তিত কণ্ঠে বলে উঠলো,
-“হ্যাঁ রাহান ভাই!”
-“শোন সাদনানের গুলি লেগেছে।
হসপিটাল নিয়ে এসছি।”
সারা’র পাশেই রাহানের মা বসে ছিল। তিনি তৎক্ষনাৎ এক চিৎকার দিলেন।সারা’র হাত থেকে ফোন টা ঠাশ করে সোফায় পড়ে গেলো।
রান্না ঘর থেকে সুফিয়া বেগম, সালেহা বেগম, কাজের লোক সবাই লিভিং রুমে এসে জড়ো হলো।
রাহান কতক্ষণ হ্যালো হ্যালো বলে।পুরো কথা তো সে বলে নি।ফোনের এপাশ হতে কোনো জবাব পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু সোরগোল এর আওয়াজ আসছে তাই ফোন কেটে দিলো।
সারা কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। রাহানের মা ততক্ষণে কথা খানা সবাই কে বলে দিয়েছে।
সবাই ছুটলো বাড়ির বাহিরে।
সদর দরজার কাছে যাওয়া মাত্র রাহানের বাবা বাড়ির ভেতর প্রবেশ করলো।
মূলত তিনি খবর পাওয়া মাত্র চলে এসছে।
-“ভাইজান ভাইজান আমার ছেলে!”
সালেহা বেগম ভীতু স্বরে বলে উঠলো।
সুফিয়া বেগম জা কে আগলে রেখেছে।
রফিক আহমেদ আশ্বাস দিয়ে বলল,
-“ভাবি ভয় পাবেন না।
সাদনান ঠিক আছে।গুলি হাতের বাহুতে লেগেছে। আর সাথে সাথে হসপিটাল নেওয়ার জন্য রক্তক্ষরণ বেশি হয় নি।”
-“আমি যাব!”
সুফিয়া বেগম অনামিকা বেগম সারা মাইশা সবাই যাবে বলে জানাল।রফিক আহমেদ নিজের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল,
-“তুমি বাড়িতে থেকে যাও ওদের কে নিয়ে। আম্মা বাড়িতে। আর প্রিয়তা তো জানে না এসব?”
-“কি জানার কথা বলছেন বাবাই?”
অনাকাঙ্খিত ভাবে এখান প্রিয়তার উপস্থিতিতে সবাই ভড়কালো। প্রিয়তা সবাই কে সদর দরজায় দাঁড়ানো দেখে ভ্রু কুঁচকে নিলো।
এগিয়ে এসে বিনয়ের সাথে জিগ্যেস করলো,
-“কিছু কি হয়েছে?
সবাই কে চিন্তিত দেখাচ্ছে!”
প্রিয়তার কোনো প্রশ্নের জবাব কেউ দিলো না।কি বলবে?সারা চোখ ফুলে আছে। সালেহা বেগম এর চোখে পানি একে একে প্রিয়তা সবার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠল প্রিয়তা।
সারা কে অস্থির আর ভীতু স্বরে জিগ্যেস করলো,
-“কি হয়েছে সারা?
সবাই কান্না করছে কেনো?
কি হলো বল!”
সালেহা বেগম ততক্ষণে আরো জোরে কেঁদে দিয়েছে। রফিক আহমেদ বিরক্ত হলো সব মহিলাদের উপর। আবার পরক্ষণেই ভাবে মায়ের মন। সন্তানের কিছু হলে মায়েদের মন অস্থির হয়ে যায়।
প্রিয়তা একে একে সবাই কে জিগ্যেস করতে লাগলো।কিন্তু কেউ কিছু বলছে না।
প্রিয়তার কোনো এক অজানা কারণেই বুকের ভেতর যন্ত্রণা হচ্ছে। চোখ দিয়ে সমানতালে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। প্রিয়তা শেষ রফিক আহমেদ কে জিগ্যেস করার জন্য উদ্যত হতেই সারা বলে উঠলো,
-“প্রিয় ভাইয়ার গুলি লেগেছে।”
সারা হঠাৎ শান্ত হয়ে গেলো।ফ্যালফ্যাল করে সারা’র দিকে তাকিয়ে পাগলের ন্যায় বাড়ি থেকে এক দৌড়ে বেরিয়ে গেলো।পেছনে পেছনে সবাই এলো।সারা গিয়ে প্রিয়তা কে আগলে নিলো।
প্রিয়তা তখনো পাগলের মতো কিছু বলছে আর কান্না করছে। সালেহা বেগম গিয়ে প্রিয়তা কে জড়িয়ে ধরে নিজেও কাঁদতে লাগলো।সারা রফিক আহমেদ কে বলল,
-“বাবাই গাড়ি।”
রফিক আহমেদ সম্মতি দিয়ে দৌড়ে চলে গেলো।
ফিরে এলো গাড়ি নিয়ে।
প্রিয়তা পেছনের সিটে বসে গেলো।সাথে সালেহা বেগম সুফিয়া বেগম বসলো।
রফিক আহমেদ গাড়ি স্টার্ট করলেন।
——
প্রিয়তারা যখন হসপিটাল পৌঁছাল তখন রাত দশ-টার বেশি সময় বাজে।
প্রিয়তা গাড়ি পার্কিং করার পরপরই গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে হসপিটালের ভেতর চলে এলো।লিফট অফ সিঁড়ি দিয়ে উপরে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই সালেহা বেগম এসে হাত টেনে ধরে বলল,
-“পাগলামি করিস না প্রিয়।
তুই পাঁচ তলায় সিঁড়ি বেয়ে আর দাঁড়াতে পারবি?”
প্রিয়তা কিছু বলার আগেই লিফট ওপেন হলো সবাই লিফটে করে পাঁচ তলায় যাওয়া মাত্র সেখানে পুলিশ আর অনেক মানুষ সাথে সাংবাদিক তো আছেই।কিছু কিছু মানুষ গুঞ্জ শোনা যাচ্ছে। এমপি কে এখানে হসপিটাইলেস করা হয়েছে। সেইজন্য এতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
একটু এগিয়ে যেতেই মানুষের ভীড় কমে এলো।
মফিজুর মির্জা আজ্জম মির্জা জাফর মির্জা একে একে সবার দেখা মিলে।।আয়ান বোন কে এভাবে দেখে বুকের ভেতর ধক করে উঠল।দুই বোন তার ভীষণ আদুরে। এরমধ্যে ছোট বোন কে আয়ান সব সময় একটু বেশি ভালোবাসে।তাই বোনের এমন অবস্থায় দেখে বুকের ভেতর মুচড় দিলো। এগিয়ে এসে বোন কে আগলে নিলো। সাদনান কে কেবিনে দেওয়া হয় নি এখনো। বিপদমুক্ত রয়েছে। অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে।
আয়ান জানাল।তবে খুব দ্রুত দেখা করা যাবে ডক্টর জানিয়েছে। প্রিয়তা ভাইয়ের মুখ থেকে এসব কথায় একটু শান্ত হলো।কান্নার বেগ কমে এলো।তবে সাদনান কে দেখা না পাওয়া পর্যন্ত সে কিছুতেই শান্তি পাবে না।
—-
সাদনানের জ্ঞান ফিরল সাড়ে এগারো টা নাগাদ। এক-এক করে সবাই দেখা করল।
প্রিয়তা এক কোণায় চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
সবাই যাওয়ার পর সাদনান প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলল,
-“দরজা বন্ধ করে এসো।”
প্রিয়তা তাই করলো।
দরজা বন্ধ করে এগিয়ে গেলো।সাদনানের ডান হাতে গুলি লেগেছে। সাদনান বা হাত বাড়িয়ে প্রিয়তা কে টেনে নিজের বুকের উপর ফেলে দিলো। যার ফলে নিজের ক্ষতস্থানে ব্যথা লাগে। নাক মুখ কুঁচকে নিলো। প্রিয়তা অস্থির হয়ে ওঠার চেষ্টা করতে করতে বলল,
-“কি করছেন ব্যথা লাগবে।
ছাড়ুন আমি পাশে বসছি।”
-“পোষাবে না।
এভাবে থাকো।”
সাদনান ঘোরলাগা কণ্ঠে জানালো। বউয়ের মুখপানে তাকিয়ে সে বুঝতে পেরেছে এই মেয়ে যে এতোক্ষণে কেঁদে কুদে অস্থির ছিল।
সাদনান প্রিয়তা কে নিয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায় দরজায় কেউ নক করলো।
প্রিয়তা সাদনানের বুকের উপর থেকে ওঠে নিজে কে ঠিকঠাক করে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলতেই রাহান এলো।
রাহান ফোন সাদনানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
-“তোর কথা মতো কাজ হয়ে গিয়েছে।”
সাদনান রহস্যময় হাসি হাসলো।প্রিয়তা ড্যাবড্যাব করে দু’জনের দিকে তাকিয়ে রইলো। কি নিয়ে কথা বলছে?ফোনের স্কিনে কি রয়েছে এমন যে সাদনান ভাই এমন অদ্ভুত হাসি হাসলো?
প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই সাদনান রাহান কে বলে উঠলো,
-“গুড জব।
আমি এর সাথে সাক্ষাৎ সেরে নেব।”
#চলবে….