আমার তুমি ২ পর্ব-০৯

0
100

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_৯
#জান্নাত_সুলতানা

[পর্ব টা রোমান্টিক, পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]

বেশ কিছু দিন নাগাদ সাদনানের দেখা খুব কমই পাওয়া যাচ্ছে। দু’দিন বাদে ভোট দেখা না পাওয়ারই কথা।সকাল সকালই আজ সাদনান বাড়ি থেকে বেরিয়েছে।এরপর আর লোকটার দেখে মিলে নি।যদিও একবার ফোন করেছে। দুপুরে খাবার খাওয়ার কড়া নির্দেশ দিয়ে। এখন বিকেল।প্রিয়তা দুপুরে খাবার খাওয়ার পর ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎই ঘুম ভেঙে যাওয়াতে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াল।
আজ সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। সাথে বাতাস বইছে।
প্রিয়তা হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটা গুলো ছুঁয়ে দিচ্ছে।বেশ ভালোই লাগছে। প্রিয়তা নিজের দিকে একবার তাকাল।আজ দুপুরে গোসল করে শাড়ী পড়েছে কালো রঙের। আয়নাও পড়েছে সাথে প্রিয়তা কেও পড়িয়ে দিয়েছে। প্রিয়তা কিছু ভেবে সারা’র রুমের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে।
দরজায় কড়া নাড়তেই সারা ভেতর থেকে বলল,

-“কে?
দরজা খোলা আছে।”

প্রিয়তা দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে।
সারা একটা বই হাতে বসে আছে। হয়তো কোনো উপন্যাসের বই হবে। প্রিয়তা সে দিকে নজর দিলো না।যা মতলব নিয়ে এসছে সেটা উগড়ে দিয়ে বলল,

-“চল বৃষ্টি ভিজি!
অনেক দিন ধরে ইচ্ছে করে।”

সারা অবাক হলো।
বই বন্ধ করে বলল,

-“মা জানতে পারলে দু’জন কে আস্ত রাখবে না।
আর দাদি আছরের আযান এর পর কাউ কে ছাঁদে যেতে বারণ করছে।”

প্রিয়তা যতটা উচ্ছসিত হয়ে কথা টা বলে ছিল সারা’র কথা শুনে ঠিক ততটা মনঃক্ষুণ্ন হলো।
সারা প্রিয়তার মুখের দিকে তাকিয়ে মায়া হলো।
বই পাশে রেখে ওঠে দাঁড়িয়ে প্রিয়তার হাত ধরে টেনে ছাঁদের উদ্দেশ্যে হাঁটতে হাঁটতে বলল,

-“চল।
কেউ দেখার আগে চলে আসব।”

প্রিয়তা আম্বিয়া মির্জার কথা মাথায় আসতেই সারা কে থামিয়ে দিয়ে বলল,

-“থাক।
দাদি জানতে পারলে আবার ঝামেলা করবে।”

-“কিচ্ছু হবে না।
আমরা তাড়াতাড়ি চলে আসব।”

প্রিয়তার কথা শুনল না সারা।টেনে নিয়ে ছাঁদে চলে এলো।
মূহুর্তের মাঝে বৃষ্টির পানি দু’জন কে ভিজিয়ে দিলো।
সারা প্রিয়তা কে টেনে নিয়ে ছাঁদের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়াল।
বৃষ্টির ফোঁটা শরীরে পড়তেই প্রিয়তা সব ভুলে গেলো।বাচ্চাদের মতো দুই বান্ধবী ইচ্ছে মতো ভিজল।
বেশ অনেক টা সময় পর প্রিয়তা কাঁপতে কাঁপতে সারা কে বলল,

-“সারা চল।
আমার ঠান্ডা লাগছে।”

সারা হয়তো আরও কিচ্ছুক্ষণ থাকতে মন চাচ্ছিল।কিন্তু প্রিয়তার ফ্যাকাসে মুখের দিকে তাকিয়ে তড়িঘড়ি করে ছাঁদ থেকে নেমে এলো।
প্রিয়তা কে ফ্রেশ হয়ে নিতে বলে নিজেও রুমে চলে গেলো।

—–

সন্ধ্যায় সারা প্রিয়তার আর নিজের জন্য চা হাতে রুমে এলো।
প্রিয়তা তখন কম্বল মুড়ি দিয়ে বিছানায় গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে।
সারা চা রেখে প্রিয়তার পাশে বসে প্রিয়তার গালে হাত রেখেই চমকে উঠলো।
শরীর আগুনের ন্যায় গরম।
সারা প্রিয়তা কে বারকয়েক ডাকল।প্রিয়তা নিবুনিবু চোখে তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে নিলো।
সারা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
ফিরে এলো মিনিট দুই মিনিট এর মাথায় সাথে সুফিয়া বেগম সালেহা বেগম।
সালেহা বেগম এসেই প্রিয়তার পাশে বসল।
সুফিয়া বেগম আর সারা মিলে বালতিতে করে পানি আনে।
মাথায় দিয়ে অল্প খাবার খাইয়ে দিয়ে জ্বরে ঔষধ খাইয়ে দিলো।
জ্বর ছাড়ল ঘন্টাখানেক পর।
তখন রাত আটটা। সবাই চলে গেলো। শুধু সারা প্রিয়তার পাশে বসে রইল।

—-

রাত সাড়ে দশ-টা নাগাদ সাদনান রুমে এলো।গায়ের পাঞ্জাবি ঘামে জবজবে। সারা কে নিজের রুমে আর প্রিয়তা কে শুয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে এলো।
চিন্তার ভাঁজ পরে কপালে।
কিঞ্চিৎ পরিমাণ সময় ভ্রু কুঁচকে দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে রুমে প্রবেশ করে।
কাবাড থেকে বাসায় পরিহিত পোশাক নামাতে নামাতে জিজ্ঞেস করলো,

-“এতো রাতে তুই বসে আছি?”

-“ভাইয়া প্রিয়র জ্বর হয়েছে।”

সারা জানাল।
সাদনান তড়িৎ গতিতে কাপড় হাতে সারা’র দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার বিছানায় বউয়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

-“কি বলছিস?
সকালে ভালো ছিল দুপুরে ফোন করলাম।তখন তো বলে নি?”

-“সন্ধ্যায় হয়েছে।”

-“তুই গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।
রাত অনেক টা হয়েছে।”

-“আচ্ছা।”

সারা চলে গেলো।
সাদনান দরজা বন্ধ করে ফ্রেশ হয়ে এলো।
টাওয়াল ব্যালকনিতে মেলে দিয়ে বউয়ের কাছে এলো।প্রিয়তার গায়ে হাত দিয়ে দেখেল।জ্বর বেশ ভালোই আছে। এরমধ্যে দরজায় কেউ কড়া নাড়ে।সাদনান দরজা খুলতেই সুফিয়া বেগম রুমে এলো।হাতে খাবারের ট্রে।ওনি প্রিয়তা কে খাবার খাইয়ে দেওয়ার কথা জানালে সাদনান না করে দিলো।রাত অনেক টা হয়েছে নিজে করে নিবে বলে ছোটমা কে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ঘুমিয়ে যাওয়ার জন্য পাঠিয়ে দিলো।
সাদনান মগে করে পানি আনে।ছোট টাওয়াল দিয়ে প্রিয়তার হাত মুখ মুছিয়ে দিলো।
প্রিয়তা নিবুনিবু চোখে তাকিয়ে শুধু কিছু বিড়বিড় করল।সাদনান সেসব শুনতে পেলো না।
তবে বউ সব নালিশ যে নিজের নামে করছে সেটা ঠিক ঠাহর করতে পারে।
মগ ওয়াশ রুমে রেখে হাত ধুয়ে এলো।
খাবার থালা হাতে প্রিয়তার সামনে বসলো।প্রিয়তা তখনো জ্বরের ঘোরে কিছু বলে যাচ্ছে।
সাদনান প্রিয়তার মুখে এক হাতে চেপে ধরে খাবার দিলো।দু’তিন বার দেওয়ার পর হলো আসল কাহিনি। গরগর করে প্রিয়তা বমি করলো। যার সবটাই সাদনানের উপর পড়ল।নিজের জামাকাপড় সাথে সাদনানের টাও নষ্ট করল।
সাদনান অসহায় চোখে বউয়ের দিকে একপলক তাকিয়ে আবার নিজের দিকে তাকালো।প্রিয়তা বাচ্চাদের মতো করে মুখে হাত চেপে বসে আছে।
সাদনান ফোঁস করে দম ছাড়ে।খাবার থালা সেন্টার টেবিলে রেখে প্রিয়তা কে নিয়ে ওয়াশ রুম গেলো।
প্রিয়তার শরীরের গরম উষ্ণতা সাদনানের শরীরে শিহরণ তৈরী হলো।জামার চেইন খুলতে গিয়ে সাদনান বুঝতে পারল যেই কাজ টা করতে যাচ্ছে সেটা তার জন্য সহজ হবে না। কিন্তু করতে হবে। কিচ্ছু করার নেই।ভালোবাসার মানুষ সাথে বউ।পুরুষত্ব ঠিকই জেগে ওঠেছে।নিজের ভেতর উত্তেজনাকে চেপে রেখে এক টানে প্রিয়তার গায়ের জামা খুলে নিলো।
প্রিয়তার অর্ধনগ্ন শরীরের দিকে তাকিয়ে তৎক্ষনাৎ সাদনান চোখ বন্ধ করে নিলো।
প্রিয়তা নিজেও লজ্জায় স্বামীর ছোঁয়ায় আড়ষ্ট।
তবে শরীরে বিন্দু পরিমাণ শক্তি অনুভব করে না। কাজ টা নিজে একা করা সম্ভব নয়।মাথা নিচু করে রইল।সাদনান পাশ থেকে টাওয়াল নিয়ে প্রিয়তার গায়ে পেঁচিয়ে দিলো।প্রিয়তার জামা টা ধুয়ে নিয়ে প্রিয়তার গা মুছিয়ে দিলো।সব কাজ শেষ সাদনানের যেনো বিশ্ব যুদ্ধ জয় হওয়ার মতো অনুভূতি হলো।তবে ভেতরে ভেতরে ঠিকই বউয়ের এমনতর অবস্থা নিজের পুরুষালী সত্ত্বা বারবার তাকে বউয়ের প্রতি আকৃষ্ট করছে।সাদনান প্রিয়তা কে ওয়াশ রুম থেকে এনে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলল,

-“তুমি বসো।
আমি চেঞ্জ করে আসছি।”

সাদনান চলে গেলো।
প্রিয়তার শরীর এতোক্ষণে একটু বল এসছে।একটু আগের কথা ভেবে নিজে নিজে লজ্জায় রংধনু হতে লাগলো।
তবে চোখে গুলো জ্বলছে। জ্বর টা আবার আসছে।প্রিয়তা বিছানায় পা তুলে গায়ে কম্বল টেনে চোখ বন্ধ করে নিলো।
সাদনান শরীর উত্তেজনা এবং বুকের ভেতর হওয়া তোলপাড় কমাতে সময় নিয়ে শাওয়ার নিলো।
বেশ অনেক টা সময় পর বেরিয়ে এসে দেখলো প্রিয়তা শুয়ে পড়েছে।
সাদনান কাছে গিয়ে ডাকতেই প্রিয়তা ওঠে বসলো।
সাদনান প্রিয়তার হাতে একটা গেঞ্জি এগিয়ে দিয়ে বলল,

-“এটা পড়ে নাও।”

সাদনান উলটো দিকে ফিরে রইলো।প্রিয়তা গেঞ্জি টা পড়ে টাওয়াল নিয়ে বিড়বিড় করে বলল,

-“অদ্ভুত লোক।
একটু ভালোবাসে না।”

সাদনান প্রিয়তার কথা শুনল।তবে না শোনার মতো করে আবার একটা প্লেটে খাবার নিলো।
প্রিয়তা কে খাইয়ে দিয়ে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে নিজেও অল্প খেয়ে নিলো।
বড় লাইট অফ করে ছোট লাইট লাগিয়ে দিয়ে বিছানায় এলো।সাদনান শোয়া মাত্রই প্রিয়তা একটু গুটিয়ে গেলো।সাদনান সেটা লক্ষ করল। প্রিয়তা কে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

-“তুমি বললে ভালোবাসি না।অথচ কাছে এলে তোমার কাঁপা কাপি শুরু হয়ে যায়।না জানি গভীর ভাবে ছুঁয়ে,,

-“চুপ।
আগে ছুঁয়ে তো দেখুন।”

ইশ কি লজ্জাজনক কথা।সাদনান শব্দ করে হেঁসে উঠলো। প্রিয়তা এতোক্ষণে বুঝতে পারে মুখ ফসকে বেফাঁস কথা বলে ফেলেছে। এখন এই বেহায়া সাদনান ভাই কি করবে?প্রশ্ন টা মাথায় আসতেই প্রিয়তা চট করে সরে যেতে চাইলো সাদনানের শক্ত হাতের বাঁধন থেকে।
কিন্তু সাদনান সেটা হতে দিলো না।এক ঝটকায় প্রিয়তা কে নিচে ফেলে নিজে প্রিয়তার উপর বসে আবছা আলোর মাঝে প্রিয়তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

-“আমাকে উস্কে দিয়ে এখন পালানো হচ্ছে?
কিন্তু সেটা হচ্ছে না সৌ্ সরি আমার জান।
এতোদিন সময় দিচ্ছিলাম।নিজেকে সামলে রেখে ছিলাম এখন তুমি সামলে নাও।”

সাদনান নিজের কথা শেষ প্রিয়তার গলায় মুখ গুঁজে দিলো।
আস্তে আস্তে ঘাড়ে গলায় অধরে অজস্র চুম্বন করতে লাগলো।প্রিয়তা নিজেও সাদনানের প্রতি টা স্পর্শে সঙ্গ দিলো।সাথে পাল্লা দিয়ে নিঃশ্বাসের শব্দ দিগুণ হলো।যা রাতের আঁধারে বড্ড ভারী শোনাল।

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে