আমার তুমি ২ পর্ব-০৮

0
166

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_৮
#জান্নাত_সুলতানা

সারা আর প্রিয়তা ভার্সিটিতে ভর্তি কনফার্ম করেছে। ভাগ্যক্রমে দু’জনে একই ভার্সিটিতে চান্স পেয়ে।
মাইশা কাল মির্জা বাড়ি এসছে সাপ্তাহ পর যদিও তিন দিনের দিন আসার কথা ছিল কিন্তু আয়ানের কিছু জরুরি কাজ থাকায় আসতে পারে নি।
মাইশা কে অবশ্য আয়ান আসতে বলেছিল মফিজুর মির্জা যখন মাইশা কে দেখতে গিয়েছিল।কিন্তু মাইশা আসে নি।জামাই নিয়ে আসবে সে।তাই কেউ জোর করে নি।
ইলেকশনের প্রচারণা চলছে সেই সাথে চলছে গ্রামে গ্রামে গিয়ে সমাবেশ বৈঠক। সাদনানের একদম সময় নেই।সকালে বেরিয়ে যায় রাতে ফিরে একটা দু’টোর দিকে।আজ প্রিয়তা,সারা, মাইশার সাথে ভার্সিটি যাবে।
রাহাত ওদের পৌঁছে দিয়ে অফিস চলে গেলো।
মাইশা ওদের দু’জন কে ক্লাসে দিয়ে নিজের ক্লাসে চলে গেলো।
প্রথমে ক্লাসে একজন মহিলা লেকচারার করাল।প্রথম দিন তাই তেমন একটা ক্লাস হল না।পরিচয় পর্ব কে কোথা থেকে এসছে ভালো করে পড়তে হবে এসব হলো।দ্বিতীয় ঘন্টার সময় প্রায় অনেক মেয়ে বেশ উৎসাহ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করছে।ইয়াং লেকচারর বলে কথা।আবার ভার্সিটির সবচেয়ে হ্যান্ডসাম স্যার। সাথে ভার্সিটির অনেক মেয়ের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। এমনটাই শোনা গেলো।প্রিয়তার কোনো ভাবান্তর নেই।সারার সামন্য কৌতূহল ছিল।তবে পরক্ষণেই নিজের মনের মধ্যে থাকা পুরুষের কথা মাথায় আসতেই সব কৌতূহল মূহুর্তের মধ্যে উধাও হয়ে গেলো।
প্রিয়তার হাত টা চেপে ধরে ফিসফিস করে বলল,

-“শোন, স্যার যতই সুদর্শন হোক।
তুই কিন্তু তাকাবি না।
নয়তো ভাইয়া কে বলে দেব।হুঁ!”

প্রিয়তা চোখ পিটপিট করে সারা’র দিকে তাকালো।
সারা সামনে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রিয়তা নিজেও সারা’র দৃষ্টি অনুসরণ করল।
কক্ষে সুদর্শন স্যার কবির খাঁন প্রবেশ করেছে। এতোক্ষণ যতটা কোলাহল পূর্ণ ক্লাস টা ছিল কবির খাঁন ক্লাসে প্রবেশ করার সাথে সাথে ঠিক ততটাই নীরব হয়ে যায়।সারা প্রিয়তা একজন আরেকজন নিজেদের মুখ চাওয়া চাওয়ি
করে।
সারা প্রিয়তার হাত চেপে ধরে চোখের ইশারায় স্বাভাবিক থাকতে বলে।
কবির নিজেও হয়তো ওদের দু’জন কে এখানে দেখে থমথমে খেলো। বিশেষ করে প্রিয়তা কে দেখে।বিয়ের পর তারউপর মির্জা বাড়ির বউ এতো পথ জার্নির করে গ্রাম থেকে উপজেলায় এসে ভার্সিটিতে পড়ালেখা করতে পারে কবির ভাবতে পারে নি। তার অবশ্য কারণ রয়েছে আম্বিয়া মির্জা সম্পর্কে কবির অবগত তাই এমন টা ভাবা স্বাভাবিক তবে পরক্ষণেই ভাবে একজন এমপির বউ নিশ্চয়ই লেখাপড়া নিয়ে হেলাফেলা করবে না উচ্চশিক্ষিত করবে।
কবির শতশত ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে প্রথমে সবার সাথে পরিচিত হলো।অতঃপর ক্লাস কন্টিনিউ করে।

—-

প্রিয়তা, সারা, মাইশা ক্লাস শেষ এসে গেইটে দাঁড়িয়ে রইলো।রাহাত নিতে আসবে।সাত আট মিনিট অপেক্ষা করার পর সত্যি রাহাত এলো।মাইশা রাহাতের পাশে বসে।সারা প্রিয়তা পেছনে। সবাই টুকটাক কথা বলতে বলতে গাড়ি মির্জা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল। সবাই কে নামিয়ে দিয়ে রাহাত আবার অফিসের উদ্দেশ্যে চলে গেলো
বাড়ির ভেতরে এসে প্রিয়তা সোজা নিজের রুমে চলে এলো।
গোসল করে বিছানায় শোয়া মাত্র রাজ্যের ঘুম এসে চোখে হানা দিলো।
শরীর ক্লান্ত থাকায় খুব দ্রুত ঘুমিয়ে গেলো।
সারা খাবার খাওয়ার জন্য ডাকতে এসেও ডাকে না।
ঘুমিয়েছে থাক।ভার্সিটিতে ওরা সবাই আবার হাল্কা নাস্তা করেছিল তাই আরও আগ্রহ নিয়ে ডাকে না।

—-

প্রিয়তার ঘুম ভাঙ্গে ফোনের রিংটোন এর শব্দে। ভ্রু কুঁচকে কিঞ্চিৎ সময় ভাবে কার ফোন এভাবে কাকের মতো কা কা করছে?
ওর তো ফোন নেই।তবে পরক্ষণেই মস্তিষ্ক সচল হয়।ফোনের রিংটোন খুব চেনাপরিচিত মনে হয়।
হ্যাঁ এটা সাদনান ভাইয়ের ফোনের রিংটোন।
প্রিয়তা ঝটপট চোখ মেলে শোয়া থেকে ওঠে বসে।বিছানা নিজের পাশেই সাদনান ভাইয়ের ফোন রাখা।
ফোন তখন আর কল আসে না।
প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে ফোন হাতে নেয়।
সাদনান ভাই চলে এসছে?
এতো তাড়াতাড়ি?
ক’টা বাজে দেখার জন্য সাইট বাটন টিপে স্কিনে আলো জ্বলতে একটা বাচ্চা মেয়ের শাড়ী পড়া হাস্যজ্বল মুখ ভেসে ওঠে। প্রিয়তা অবাক।
এতোটাই অবাক যে নিজের বা হাত টা কখন নিজের অজান্তেই মুখের উপর চেপে ধরেছে সেদিকে ধ্যান নেই।
এটা তো সে।আজ থেকে আর চার বছর আগে।
আয়না কে যেদিন দেখতে গিয়েছিল মির্জা বাড়ির সবাই সেদিন প্রিয়তা নিজেও বোনের মতো সেজেছিল শাড়ী পড়ে।
সে তো কোনো ছবি তুলে নি তবে?
ছবিটায় প্রিয়তা শাড়ীর কুঁচি ধরে সিঁড়ি বেয়ে নামছে।
হঠাৎ ওয়াশ রুমের দরজা খোলার শব্দ পেয়ে তড়িঘড়ি করে ফোন আবার আগের স্থানে রেখে দিলো।
ছাই রঙের ট্রাউজার পড়নে গলায় একটা টাওয়াল যার একপ্রান্তে দিয়ে মাথার চুল গুলো পানি ছাড়া করছে।
বলিষ্ঠ পেটানো শরীরে পেশিবহুল গুলো দেখতে দারুণ আকর্ষণীয় লাগছে।
প্রিয়তা আস্তে করে একবার ঢোক গিলে মাথা নুইয়ে নিলো।
সাদনান ততক্ষণে বউয়ের সামনে এসে দাঁড়িয়ে।
ফোন টার দিকে একপলক তাকিয়ে উলটো ঘুরে বউয়ের কোলে মাথা রেখে আলগোছ শুয়ে পড়লো।
প্রিয়তা চমকে ওঠে। শরীরে শীতল স্রোত বয়ে যায়।
সাদনান বউয়ের হাত জোড়া নিজের চুলে রেখে চোখ বন্ধ করে নিলো।
সময় গড়াল কতক্ষণ প্রিয়তা জানে না।
সাদনান প্রিয়তার কুর্তি টা পেট থেকে সরিয়ে উন্মুক্ত পেটে অধর স্পর্শ করলো।
প্রিয়তা কেঁপে উঠল। শক্ত হাতে খামচে ধরে সাদনানের চুল।
সাদনান সরে এলো।
বউয়ের গালে হাত রেখে নিজের অধর জোড়া এগিয়ে নিয়ে প্রিয়তার কপালে ঠেকাল।
প্রিয়তা চোখ বন্ধ করে নিলো। সাদনান নিজের গাল প্রিয়তার গালে ঘষে দিতেই প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে সাদনানের থেকে একটু দূরে সরে বসে গালে হাত বোলাতে বোলাতে বলল,

-“ব্যথা পেয়েছি।”

সাদনানের চোখ ছোট ছোট হয়ে এলো।
বউয়ের এই এক সমস্যা। রাতেও সাদনান প্রিয়তার গলায় মুখ গুঁজে ঘুমুতে পারে না।
প্রিয়তার সুর সুরী লাগে তাই দূরে থাকে।

-“ক্লিন সেভ করে নেব!’

-“নাহ, একদম না।”

-“তাহলে?”

প্রিয়তা চুপ করে গেলো।
সাদনান প্রিয়তা কে টেনে আবার নিজের কাছে আনল।
প্রিয়তার গালে হাত রেখে বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে প্রিয়তার ঠোঁটের উপর স্পর্শ করে আবদার করল,

-“একটা চুমু খাই?”

-“সেদিন না খেলেন।”

প্রিয়তা লজ্জা পেলো। মাথা নিচু করে বলল।
সাদনান গুরুগম্ভীর কণ্ঠে বলল,

-“একদিন মাত্র।
আর বউয়ের ঠোঁটে রোজ চুমু খেতে হয়।
শুধু তুমি বাচ্চা বউ বলে ছেড়ে দিচ্ছি।
এখন ঝটপট একটা চুমু খেয়ে ফেলো।এখন থেকে রোজ খেতে হবে বউ বড় হচ্ছে।”

-“ছিঃ কি সব বলছেন!
মুখে কিচ্ছু আঁটকায় না।”

সাদনানের কথা শুনে প্রিয়তার শরীর শিরশির অনুভূতি হলো।
একটু পিছিয়ে গিয়ে নাকমুখ কুঁচকে বলে উঠলো।
সাদনান মহা বিরক্ত হলো বউয়ের কথা শুনে।
প্রিয়তার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো।
বুকের সাথে সংঘর্ষ হলো প্রিয়তার দেহখানা।
কেঁপে উঠল প্রিয়তা।
সাদনান প্রিয়তার ছোট ছোট চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিতে দিতে বলল,

-“আহ, আম ইউর হাসবেন্ড।
আটকানোর কি আছে!
দাও দাও বড় একটা লম্বা চুমু দাও।”

প্রিয়তা ছুটাছুটি করে। ছাড়াতে চায় সাদনানের শক্ত হাতের বাঁধন।
সাদনান এপর্যায়ে এসে বউকে আরও চেপে ধরলো নিজের সাথে।
প্রিয়তা দমবন্ধ হয়ে আসছে।
জোরে বারকয়েক শ্বাস টানে।
ভ্রু কুঁচকে বলল,

-“এমপি সাহেব আপনি দিনদিন বেশি বেহায়া হচ্ছেন।”

-“বেহায়া আমি আগে থেকে সেটা শুধু তোমার জন্য আমার জান।”

সাদনান বিড়বিড় করে বলল।
প্রিয়তা নিজে কে ছাড়িয়ে ওড়না গায়ে জড়াতে জড়াতে ভ্রু কুঁচকে জানতে চাইল,

-“কিছু বলছেন?”

সাদনান জবাব দেয় না।
বউ কে ফের টেনে নিজের কাছে নিলো।
নিজের বেহায়া হাতের স্পর্শ কাবু করে মেয়ে টাকে।প্রিয়তা সাদনানের কাছে হার মানল।
ছুটাছুটি থামিয়ে শক্ত করে সাদনানের চুল খামচে ধরে সাদনান সময় নিলো।
গাঢ় হতে প্রগাঢ় একটা চুম্বন করলো বউয়ের অধর।
ছাড়া পেয়ে প্রিয়তা জোরে জোরে শ্বাস টানে।
সাদনান ডান হাতে নিজের অধর মুছে বা হাত এগিয়ে প্রিয়তার অধর স্পর্শ করে মৃদু কণ্ঠে জানাল,

-“এখন এটুকুই সীমাবদ্ধ থাক।
খুব শীগ্রই সীমালঙ্ঘন করব আমার জান।”

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে