আমার তুমি ২ পর্ব-০৭

0
164

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_৭
#জান্নাত_সুলতানা

[পর্ব টা একটু রোমান্টিক, পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]

প্রিয়তা রেডি হচ্ছে। সাদনান বউয়ের কুঁচি ঠিক করে ওঠে দাঁড়াল।
মাথায় সুন্দর করে ঘোমটা টেনে দিয়ে নিজে প্রিয়তার পেছনে দাঁড়িয়ে প্রিয়তার দুই কাঁধে হাত রেখে নিচু হয়ে মৃদু স্বরে বলল,

-“বউ বউ লাগছে।”

প্রিয়তা লজ্জায় চোখ নিচু করে নিলো।সাদনান প্রিয়তা কে নিজের দিকে ফিরিয়ে বউয়ের ললাটে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিয়ে বলল,

-“লজ্জা পাচ্ছে আমার জান।
বাসর দেখি খুব শীগগির করতে হবে।”

প্রিয়তা সঙ্গে সঙ্গে সাদনান কে ধাক্কা দিলো।সাদনান হেলে-দুলে দুই কদম পিছিয়ে গেলো। প্রিয়তা আঁচল মাথায় টেনে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,

-“ছিঃ কি বেহায়া কথাবার্তা।
মুখে কিচ্ছু আঁটকায় না।”

সাদনান নিজেও পেছনে পেছনে রুম হতে বেরিয়ে পিছু নিলো প্রিয়তার।
সমান হয়ে এক সাথে একদম কাছে ঘেঁষে হাঁটতে হাঁটতে বলল,

-“সব তোমার দোষ।”

-“আমার?
আমি কি করলাম?”

প্রিয়তা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
সাদনান মোহনীয় কণ্ঠে বলল,

-“আমাকে না পুড়িয়ে শান্তি নেই তোমার।
এখন আমি কিছু বললে সব দোষ আমার।”

প্রিয়তা আর কিছু বলবে তার আগেই নজর পড়ে গেস্ট রুম থেকে কবির বেরিয়ে এসছে। গায়ে গাঢ় নীল রঙের একটা পাঞ্জাবি।
প্রিয়তা দৃষ্টি নুইয়ে নিলো।
কবির প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে নিজেও চোখ সরিয়ে নিলো।সাদনান কবিরের সঙ্গে কথা বলে আগে আগে কবির কে নিয়ে নিচে চলে গেলো।
প্রিয়তা সারা রুমে চলে গেলো।

—-

মাইশা তিন্নি কে একটা নীল জামদানী শাড়ি পড়তে দিয়েছে। তিন্নি শাড়ী পড়তে পারে না।
রাহানের মা ভীষণ ভালো শাড়ী পড়াতে পারে।সারা বলল,

-“আপু তুমি মনির কাছে যাও।
পড়িয়ে দিবে।”

সারা মাইশা কে সাজাচ্ছে। নয়তো সারা নিয়ে যেতো।প্রিয়তাও এটা সেটা এগিয়ে দিচ্ছি। অগত্যা বাধ্য হয়ে তিন্নি নিজেই একা একা নিচে এলো।রাহানের মা নিজে রেডি হবে মাত্র গোসল করে বেরিয়েছে। তিন্নি তখন শাড়ী হাতে রুমে প্রবেশ করে।
ভদ্রমহিলা দেখেই বুঝতে পারে।
মুচকি হেঁসে তিন্নি কে বলল,

-“তাড়াতাড়ি করো।
আমাকে আবার মাইশা কে খাবার খাইয়ে দিতে হবে।
নয়তো মেয়েটার আজ আর খাওয়া হবে না।
মা একজন সারা দিন কাজ কাজ করে একটা মাত্র মেয়ের বিয়ে কোথায় মেয়ে টাকে একটু সময় দিবে।বড় ভাবি কতবার করে বলল মেয়ের আশেপাশে থাকার কথা।”

তিন্নি মনোযোগ দিয়ে শুনল।শাড়ী পড়া শেষ তিন্নি মুচকি হেঁসে বলল,

-“ফুপি আপনি আস্তে ধীরে রেডি হোন।
আমি গিয়ে মাইশা কে খাবার খাইয়ে দেব।”

রাহানের মা হাসি মুখে বলল,

-“আচ্ছা তুমি যাও।
আমি রেডি হয়ে আসছি।”

তিন্নি রুম হতে বেরিয়ে উপরে আসার সময় আঁড়চোখে একবার লিভিং রুমে তাকিয়ে থমকে গেলো।
কবির বসে আছে।দৃষ্টি তার ফোনের স্কিনে।
তিন্নি একবার নিজের দিকে তাকিয়ে আবার কবিরের দিকে তাকাল।
কবির নজর তখন হঠাৎ তিন্নির উপর পড়ল।কবির থমথমে মুখ করে তিন্নির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে এলো।
তবে তিন্নির মায়াময় মুখপানে তাকিয়ে হৃদপিণ্ডটা অস্বাভাবিক ভাবে লাফাতে লাগলো।
কবির দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,

-“কি হচ্ছে এসব?
কবির বি কেয়ার ফুল।”

ফোন হাতে ওঠে দাঁড়াতেই সিঁড়ির দিকে নজর পড়তে কবির সেখানে তিন্নি কে দেখতে পেলো না।তপ্ত শ্বাস ফেলে কবির বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।
এদিকে তিন্নি সোজা রুমে চলে এসছে। স্যারের দৃষ্টিতে কিছু একটা ছিল। যা তিন্নির ছোট হার্ট নিতে পারছিল না।তাই তো পালিয়ে এলো।

—–

জামাই এসছে। কথা টা দোতলা ঘরে পর্যন্ত পৌঁছাতে দেরী সব মেয়েদের মাইশার ঘর ছেড়ে নিচে যেতে দেরী হলো না। শুধু প্রিয়তা আর তিন্নি বসে রইলো মাইশার কাছে।
মাইশা উশখুশ করছে।তিন্নি মুচকি হেঁসে বলল,

-“যা কেউ আসার আগে একবার বারান্দা থেকে ঘুরে আয়।”

প্রিয়তা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো দু’জনের দিকে। মাইশা প্রিয়তার গাল টেনে দিয়ে ওঠে লেহেঙ্গা উঁচু করে বারান্দায় যেতে যেতে প্রিয়তা কে হুশিয়ারী দিয়ে বলল,

-“খবরদার প্রিয়ু যদি তোর ভাই কে এসব বলেছি।”

-“তুমি ভাই দেখতে গিয়েছো?”

মাইশা প্রিয়তার কথা শুনে বুঝতে পারলো।প্রিয়তা বিষয় টা ধরতে পারে নি। শুধু শুধু মেয়ে টাকে ব্যাপার টা জানিয়ে দিলো।
মাইশা হেঁসে বলল,

-“হ্যাঁ।
বলবি না কিন্তু!”

-“আচ্ছা।”

প্রিয়তার ঘাড় নাড়ে।
তিন্নি প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে থাকে।মেয়ে টা একদম সরল প্রকৃতির।কত বয়স! সদ্য তো এইচএসসি দিয়েছে। ওর বয়সী সারা কি চঞ্চল অথচ এই মেয়ে টা কত চুপচাপ।
চেয়ারা টা যেমন দেখতে মায়াবী ঠিক তেমন নরম মন টা।তিন্নি কে কত সম্মান করে।যত্নআত্তি কোনো ত্রুটি রাখছে না।কবির খাঁন দারুণ সুন্দর এই মেয়ে টাকে বিয়ে কেন করতে আসে নি?

তিন্নির ভাবনার মাঝেই সারা ছুটে এলো।পেছন পেছনে রাহাত আয়না সাদনান সবাই এসছে।বিয়ের কাজ শুরু হবে তাই কনে কে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাগাদা দিচ্ছে।
সাদনান আর রাহাত এসে বোন কে আগলে নিয়ে নিচে এলো।সাদনান এরমধ্যে বারকয়েক বউয়ের সঙ্গে চোখেও ইশারায় আলাপ সেরে নিয়েছে। প্রিয়তা এমন কাণ্ডো দেখে সাদনান কে পাগল পুরুষ উপাধি দিলো মনে মনে।
তবে এগুলো প্রিয়তার কাছে না চাইতেও দারুণ লাগলো।হৃদয়ে ভালো লাগার দোলা দিলো।
বিয়ে পড়ানো শেষ খাওয়া দাওয়া শেষ বউ নিয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু হলো।
কেউ নিজের ঘরে নতুন মানুষের আগমনে খুশি মুখে উপচে পড়ছে।তো কারোর বিদায়ের বিষাদে অশ্রু সিক্ত নয়নে বিদায় দিচ্ছে নিজের কলিজার রাজকন্যা।
মাইশা আর আয়ান কে একটা গাড়িতে বসানো হলো।আর বাকি দুইটা দিয়ে বাকিরা সবাই।
আয়ান সুফিয়া বেগম এর সাথে শেষ বার কথা বলে গাড়িতে বসে দরজা লাগিয়ে দিলো।মাইশা তখনো কাঁদতে কাঁদতে বাবা-র হাত ধরে কিছু বলে যাচ্ছে। মফিজুর মির্জা আয়ানের দিকে অসহায় মুখে চেয়ে রইলো।আয়ান এই চাহনির মানে খুব ভালো করে বুঝতে পারলো।চোখ ইশারায় কিছু বলতেই মফিজুর মির্জা মেয়ের হাতে উলটো পিঠে চুমু খেয়ে বলল,

-“আম্মাজান আর কান্না করে না।
বাবা-র বুকে ব্যাথা হয়।
শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।”

মাইশা তবুও কেঁদে চলেছে আয়ান মাইশা কে টেনে নিজের কাছে নিলো।সবাই কে বিদায় দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করতে বলে ড্রাইভার কে।
মির্জা বাড়ি থেকে সওদাগর বাড়ি গাড়ি দিয়ে গেলে পাঁচ সাত মিনিট লাগে। আর হেঁটে গেলে পনেরো মিনিট এর মতো।
খুব দ্রুতে এসে পৌঁছাল বউয়ের গাড়ি। মিতা সওদাগর বেশ সম্মানের সহিত নিজের ছেলে বউ কে ঘরে তুলে।
প্রতিবেশী প্রায় অনেক লোকজন জড়োসড়ো হয়েছে বউ দেখার জন্য। তাই মাইশা কে লিভিং রুমে বসানো হলো।মাইশা অস্থির। কান্না করার ফলে মাথা ব্যাথা সাথে এতো অচেনা মানুষের ভীড়ে অস্বস্তি হচ্ছে।
অনেক্ক্ষণ এভাবে বসে থাকার পর আয়ানের দেখা মিলল।কয়েক ঘন্টা আগেই এই লোকটার সাথে একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। নিজের ভালোবাসার মানুষ টা কে নিজের স্বামী রূপে হালাল ভাবে পেয়েছে কথা গুলো ভাবতেই মাইশা দেহ জুড়ে ভালোলাগার অনুভূতি খেলে গেলো।
মাইশা আয়ানের দিক থেকে চোখ ঘুরিয়ে রান্না ঘরের দিকে তাকিয়ে দেখলো মিতা সওদাগর আয়ানের সাথে ইশারায় কিছু বলছে।
আয়ান আবার উপরে চলে গেলো। এর একটু পর মিতা সওদাগর এলো।মুলত আয়ানের ইশারায় বলা কথা ছিল মাইশা কে রুমে পাঠানোর বার্তা। মিতা সওদাগর বুঝতে পারে বউয়ের কথা চিন্তা করেই ছেলে বউ কে ফ্রেশ হওয়ার জন্য তাগাদা দিচ্ছে। মিতা সওদাগর মাইশা কে নিজের রুমে এনে ফ্রেশ করিয়ে একটা জামদানী শাড়ী পড়িয়ে নিজে হাতে খাবার খাইয়ে দিলো।
রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ মাইশা কে কিছু মেয়ে মিলে আয়ানের রুমে দিয়ে গেলো।
আয়ান তখন কিছু ফাইল দেখছিল সোফায় বসে।
মাইশা রুমে এসে দরজা বন্ধ করে এগিয়ে এসে আয়ান কে সালাম দিলো।
আয়ান সালামের জবাব দিয়ে মুচকি হেঁসে বলল,

-“আমার বেগম।
আমার মহলে আপনাকে স্বাগতম।”

মাইশা লজ্জা পেয়ে চোখ নিচু করে নিলো।
আয়ান মাইশার হাত টেনে ধরে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো।মাইশা শরীর জুড়ে শিহরণ বয়ে গেলো।
আয়ান মাইশার শরীরে মৃদু কম্পন অনুভব করে মুখশ্রীতে গুরুগম্ভীর ভাব এনে বলল,

-“আগে থেকে ভালোবাসার পরও যদি বাসর ঘরে বউ এমন কাঁপা কাঁপি করে।তাহলে প্রেম টা করে আগে থেকে চিনা জানা হয়ে লাভ টা কি হলো!”

মাইশা লজ্জায় মুখ নতজানু হয়ে রইল।সত্যি বলতে তাদের আগে থেকে চিনা জানা হলেও এতো টা কাছাকাছি কখনো আসা হয় নি।প্রথমবারের মতো কোনো পুরুষের এতো টা নিকটে এসে মাইশা লজ্জায় ভয়ে ভালোবাসার মানুষ টা কে নিজের করে পেয়ে সব অনুভূতি তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
আয়ান মাইশার মুখ টা উঁচু করে মাইশার ললাটে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিলো।
মাইশা আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো।
আয়ান সময় নিয়ে বউয়ের ললাটে ওষ্ঠ ঠেকিয়ে ছেড়ে মাইশার মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে জানতে চাইলো,

-“সময় চাই?”

মাইশা ফট করে সাথে সাথে জবাব দিলো,

-“না,,

কথার মানে বুঝতে পেরে নিজেই লজ্জায় আয়ানের বুকে মুখ লুকাল।
আয়ান শব্দ করে হেঁসে উঠলো।
পরপরই মাইশা কে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে বিছানার দিকে যেতে নেশাতুর কণ্ঠে বলল,

-“অনেক অপেক্ষা করিয়েছো।
আর না জান।”

মাইশা আয়ানের গলা জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ গুঁজে রইলো।
আয়ান বউ কে বিছানায় শুইয়ে দিলো।সময় গড়ায় গাঢ় হতে প্রগাঢ় হয় বেহায়া হাতের স্পর্শ।নারী তার প্রিয় পুরুষের ছোঁয়ায় দিশেহারা হলো।একে-অপরের মাঝে লেপ্টে গেলো।
নতুন অনুভূতির জোয়ারে দু’জন ভেসে গেলে।ভালোবাসার অনুভূতি আগে হলেও এই অনুভূতি দু’জনের নিকটই সম্পূর্ণ নতুন।গভীর হতে গভীর স্পর্শ কাতর করল আয়ান নিজের প্রেয়সী কে।
মাইশার চোখ গলিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে গাল বেয়ে। আয়ান খুব সাবধানের সহিত বউয়ের চোখের পাতায় চুমু খায়।
মাইশা শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরে আয়ান কে।

#চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে