#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_৬
#জান্নাত_সুলতানা
মাইশা আর আয়ানের বিয়ে টা ঘরোয়া ভাবে দিতে চাইছেন মফিজুর মির্জা। খুব কাছের কিছু মানুষ থাকবে শুধু। কেউ দ্বিধা মত পোষণ করে নি।হোক ঘরোয়া ভাবে এমনিতেই একমাস পর ভোট তারউপর বিপদ যখন তখন যেকোনো দিক দিয়ে আসতে পারে তাই সবাই এটাই বেস্ট মনে করল।শফিক সওদাগর এতেই সায় দিয়েছে। নিজের আত্মীয় বলতে তেমন কেউ নেই শ্বশুর শ্বাশুড়ি কেউ নেই অনেক আগে গত হয়েছে। মিতার দুই ভাই আছে তারা সবাই বিদেশ সেটেল্ড বাড়িতে কেউ নেই।
আর দুই মেয়ে যেকোনো একজন কে নিয়ে যাবেন এমনটাই পরিকল্পনা। তবে বড় মেয়ে কে নিয়ে আসার চেষ্টা করবে। ছোট মেয়ে নতুন তাকে না আনা শ্রেয়।
এখন আম্বিয়া মির্জার কাছে কথাখানি পাড়তে হবে।
—–
হলুদের দিন বিকেলে তিন্নি এলো মির্জা বাড়ি।তিন্নি কে বেশ আদর করল সবাই।
তিন্নি মাইশার রুমে বসে ছিল।তখন প্রিয়তা এলো হাতে নাস্তার ট্রে।তিন্নি প্রিয়তার সাথে আগে থেকে পরিচিত।তাই চিনতে অসুবিধা হয় না।
তিন্নি প্রিয়তা কে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে বেশ আদর করলো। মেয়ে টা সত্যি একটা মায়ার খনি।যেখানে তিন্নি মেয়ে হয়ে প্রিয়তা কে এতো ভালো লাগে সেখানে কবির এর ভালো লাগবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তিন্নি তো আর জানে না কবির প্রিয়তা কে দেখেই নি।
প্রিয়তা নিজেও অনেক্ক্ষণ আড্ডা দিলো সবার সাথে এরপর চলে গেলো। আম্বিয়া মির্জা প্রিয়তা কে ডাকছে।
—-
-“শোন।
বাইরের দিকটায় একদম যাবি না।
ওদিকে বাইরের লোকজন বেশি।”
সারা শাড়ী পড়ে মাত্রই নিচে এসছে আর তক্ষুনি রাহান কথাা টা বলল।
বাড়ির ভেতরে মানুষ নেই বললেই চলে।
সবাই হলুদের জায়গায়।
সারা নিজেও শাড়ী পড়ে শাড়ী সামলাতে হিমশিম খায়। তাই হলুদ দিয়ে এসেই শাড়ী খুলে নিবে এমনটাই ভেবে রেখেছে। তাই বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নেড়ে বলল,
-“আচ্ছা।
আপু কে হলুদ দিয়ে চলে আসব।”
-“আর এখন আমার পাঞ্জাবি টা আয়রন করে রেখে আয়।
আমি হাতের কাজ টা শেষ করে রেডি হব।”
সারা মুখ ভেংচি কেটে বলল,
-“পারব না।”
-“আচ্ছা!
বলব তোর বাপ কে তুই কাল আমার শার্ট গায়ে দিয়েছি!”
সারা রাহানের কথা শুনে থমথমে খেলো।চোখ বড় বড় করে রাহানের দিকে একবার তাকিয়ে ফের লজ্জায় মাথা নিচু করে নিয়ে মিনমিন করে বলল,
-“যাচ্ছি।”
রাহান শুধু বাঁকা হাসল।
পাশ কেটে যাওয়ার সময় ফিসফিস করে বলল,
-“ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাবি না।
যদি দেখেছি তো তোর সাথে সাথে তোর ঠোঁটেরও খবর করব। মাইন্ড ইট।”
সারা’র মাথায় কিছু ঢুকলো না শুধু ফ্যালফ্যাল করে রাহানের যাওয়ার পথে তাকিয়ে থাকে।
——
প্রিয়তা রেডি হয়ে রুম থেকে বেরুবে ঠিক তক্ষুনি সাদনান রুমে প্রবেশ করে যার ফলে দু’জন দু’জনের সাথে সজোরে ধাক্কা খেলো।ধাক্কার তাল সামলাতে না পেরে প্রিয়তা পড়ে যাচ্ছিল।
তবে সাদনান সেটা হতে দিলো না। শক্ত হাতে বউয়ের কোমড় পেঁচিয়ে ধরে।
প্রিয়তা ভয়ে সাদনান এর পাঞ্জাবি খামচে ধরে।
সাদনান থমকাল।বউয়ের দিকে তাকিয়ে হৃৎস্পন্দনের অস্বাভাবিক ভাবে ছুটতে লাগল।প্রিয়তা হলুদের মাঝে লাল পাড়ের শাড়ী পড়েছে। চোখে কাজল ঠোঁটে হাল্কা গোলাপি রঙের লিপস্টিক মাথায় একটা বেলি ফুলের মালা যেটা সাদনান একটু আগেই রুমে রেখে গিয়েছে। প্রিয়তা তখন রুমে ছিল না।
প্রিয়তা নিজেকে কারোর বাহুডোরে বুঝতে পেরে চোখ পিটপিট করে তাকায়।
মানুষ টা যে ওর নিজের ব্যাক্তিগত পুরুষ বুঝতে বেগ পেতে হয় না।
নিজে কে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল,
-“আপনি রেডি হয়ে নিন।
আমি সব বিছানায় রেখে দিয়েছি।”
-“যাবে না।
বসে থাকবে। আমি শাওয়ার শেষ করে আসছি।”
প্রিয়তা কোনো কিছু বলার আগেই সাদনান প্রিয়তা কে ছেড়ে দিয়ে একটা টাওয়াল হাতে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
প্রিয়তা আর কি করবে সাদনান ভাই যখন বলেছে তখন না বসে উপায় নেই অগত্যা বাধ্য হয়ে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসলো।
সাদনান শাওয়ার নিয়ে প্রায় আধঘণ্টা পর বেরিয়ে এলো।
প্রিয়তা ড্যাব ড্যাব করে সেদিকে তাকিয়ে রইলো।
সাদনান টাওয়াল দিয়ে নিজের চুল মুছে পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে রেডি হলো।তবে বউয়ের কান্ড দেখে মনে মনে হেঁসে লুটোপুটি খাচ্ছে।
এগিয়ে এসে প্রিয়তার মাথার ফুল টা ঠিকঠাক করে দিতে দিতে বলল,
-“এভাবে তাকায় না জান।
কিছু করে ফেলতে ইচ্ছে করে।”
প্রিয়তা লজ্জা পেলো। তবে লজ্জা চেপে রেখে বলল,
-“আমি মোটেও আপনার দিকে তাকায় নি।”
সাদনান হেঁসে উঠলো।
প্রিয়তা লজ্জা পেয়ে সাদনান ধাক্কা দিয়ে আগে আগে রুম থেকে বেরিয়ে এলো।সাদনান নিজেও হাসতে হাসতে পেছনে পেছনে
নিচে এলো।
লিভিং রুমে অনেক মানুষ তবে সব মানুষ ছাপিয়ে প্রিয়তার নজর দু’জন ব্যাক্তির উপর আঁটকে গেলো।সাদনান প্রিয়তা কে পেছনে রেখে নিজে প্রিয়তার সামনে দাঁড়াল। সোফায় বসা কবিরের ভ্রু কুঁচকে এলো।বিরক্ত হলো।শাড়ী পড়া রমণী টা দারুণ দেখতে। কবির ভাবে সাদনান এর বোন হয়তো। কিন্তু পরক্ষণেই কিছু মনে হতে সব পানির মতো স্পষ্ট হলো।
বুঝতে একটু সময় লাগলো।এই সেই রমণী যার জন্য মির্জা সাদনান শাহরিয়ার তাকে মিথ্যা বলে চট্টগ্রাম পাঠিয়েছিল।
সাদনান প্রিয়তার সামনে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলল,
-“মায়ের কাছে যাও।”
প্রিয়তা শুনল।রান্না ঘরে চলে গেলো। সাদনান এগিয়ে গিয়ে কালাম খাঁন আর কবির এর সাথে কথা বলে।
কবির খুব স্বাভাবিক তবে দৃষ্টি তার তীক্ষ্ণ।
কথা বলা শেষ সবাই নাস্তা খেয়ে হাল্কা হলুদের জন্য বাগানে চলে গেলো।
তবে কবির সবার পেছনে রইল।আর ঠিক তক্ষুনি তিন্নি মাইশার হাত ধরে দোতলা থেকে নামতে দেখা গেলো।মাইশা কে শাড়ী পড়িয়ে কাঁচা ফুলের গহনা পড়িয়েছে।তিন্নি নিজেও শাড়ী পড়েছে তবে খুব নরমাল। চুল গুলো বিনুনি করে একপাশে এনে রেখেছে। সবার মাঝে কবিরের দৃষ্টি না চাইতেও তিন্নির উপর পড়লো।মেয়ে টা সাধারণ।সব সময় নরমাল চলে ফেরা করে।হয়তো এই জন্যই সবার নজরে পড়ে। তবে ক্লাসেও কবির খেয়াল করেছে মেয়ে টা প্রায় ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।যেমন টা এখন তাকিয়েছে।কিন্তু বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকে না। একটু পরপরই তাকায়।কবির কথা গুলো ভাবতে ভাবতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাগানের একটা সাইডে গেলো।
সাদনান ফোনে কথা বলছিল।নিজের পেছনে কারোর অস্তিত্ব টের পেয়ে ফোন রেখে দিলো।
-“হবু এমপি মির্জা সাদনান।
ভীষণ ধূর্ত লোক।”
সাদনান অন্য দিকে তাকিয়ে হাসলো।
কবিরের কথায়।
কবির আবার বলল,
-“আমার সাথে একবার সাক্ষাৎ করতে পারতেন!”
-“রাইট।
কিন্তু কি বলুন তো।
প্রেয়সীর রাজনীতি একদম পছন্দ নয়।”
-“কথা বলে দেখতে পারতেন!”
-“সময় টা আমাকে ফাঁকি দিতে চেয়েছিল।
তাছাড়া আমার দাদাজান কখনো মেনে নিতো না।এমন পরিস্থিতি না করলে।
কবির আর কিছু বলতে যাবে তক্ষুনি সাদনান কে জাফর মির্জা ডাকলো।সাদনান চলে গেলো। কবির সরল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সেদিকে।
ভাগ্য নেই।তাই এসব ভেবে মন খারাপ করলো না।তবে মেয়ে টাকে দেখে প্রথমবারের ন্যায় এক অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছে। কবির পরক্ষণেই নিজের ভাবনা চিন্তার উপর বিরক্ত হলো।অন্যজনের বউ হয়।ইশ এভাবে ছেঁচড়াদের মতো তাকিয়ে ছিল তখন ভাবতে শরীর শিরশির করে উঠলো।
—-
হলুদের অনুষ্ঠান শেষ মাইশা রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে তিন্নির পাশে শুয়ে ছিল মাত্র।
তখন মাইশার ফোনে টুংটাং শব্দ হলো।মাইশা ফোন হাতে নিয়ে সাইলেন্ট করে।নোটিফিকেশন চেক করতেই দেখলো আয়ান ম্যাসেজ দিয়েছে। মাইশার হলুদের ছবি চাইছে মাইশা কয়েকটা ছবি হোয়াটসঅ্যাপে সেন্ড করার মিনিটের মাথায় আয়ান ভিডিও কল এলো।
মাইশা কল ধরে লজ্জায় মাথা নুইয়ে রাখলো।
আয়ান ঘোরলাগা কণ্ঠে বলে উঠলো,
-“মেরে ফেলবে আমায়!
অপেক্ষা করো কাল তোমার সব কর্মের বিচার হবে।”
#চলবে…..