#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_২
#জান্নাত_সুলতানা
[পর্ব টা একটু রোমান্টিক, পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]
সাদনান ফোনে কারোর সাথে কথা বলতে বলতে রুমে প্রবেশ করে।
এক হাতে গায়ে থাকা পাঞ্জাবি টার বোতাম খুলতে খুলতে পুরো রুমে একবার নজর বুলিয়ে নিলো।
কাঙ্খিত মানুষ টাকে দেখতে না পেয়ে ভ্রু জোড়া কুঁচকে আসে।
পরপরই ওয়াশ রুম হতে পানি পড়ার শব্দে বুঝতে পারে। প্রিয়তা ওয়াশ রুমে রয়েছে। কিন্তু এতো রাতে মেয়ে টা করছে টা কি?
সাদনান অতশত চিনি বাদ দিয়ে ফোনের ওপাশের ব্যাক্তি টা কে, “পরে এটা নিয়ে কথা বলছি” বলেই ফোনের লাইন কেটে ফোন সেন্টার টেবিলে রেখে ওয়াশ রুমের দরজায় খটখট শব্দ করে জিজ্ঞেস করলো,
-“এতো রাতে তুমি শাওয়ার নিচ্ছো?”
প্রিয়তার সাদনানের কণ্ঠে শুনে জান বেরিয়ে আসার জোগাড়।
কিছু বলার মতো শব্দ খোঁজে পাচ্ছে না।
একবার নিজের শরীর এর দিকে তাকিয়ে আবার দরজার দিকে তাকালো।
বেশ অনেকক্ষণ সময় নিয়ে অপরাধী কণ্ঠে জানালো,
-“শাড়ী ভিজে গিয়েছে।”
সাদনান দরজা হতে সরে দাঁড়ায়।
সাদনান প্রিয়তার কথা ঠিক মানে বুঝে না।শাওয়ার নিয়েছে শাড়ী তো বুঝবেই।
এখন শুঁকনো কাপড় পড়লেই তো হয়।
তবে সাদনান মুখে জিগ্যেস করলো,
-“আর কিছু নেই?”
-“একটা নিয়ে এসেছিলাম সেটাই ভিজে গিয়েছে।”
-“তুমি বেরিয়ে এসো।
আমি মায়ের কাছে থেকে শাড়ী নিয়ে আসছি।”
সাদনান কথা গুলো বলে রুম হতে বেরিয়ে গেলো।
প্রিয়তা ভেজা শাড়ী পড়েই সেভাবেই বেরিয়ে এলো।পুরো রুম পানি দিয়ে ভিজে জবজবে হয়ে যেতে লাগল।
সাদনান একটা ছাই রঙের শাড়ী হাতে রুমে প্রবেশ করতেই।বিরক্তে কপালে ভাঁজ পরে।
ভরাট কন্ঠে গুরুগম্ভীর স্বরে বলল,
-“এটা নিয়ে পড়ে এসো।”
সাদনান কথা শেষ শাড়ী টা নিয়ে এগিয়ে আসে। প্রিয়তা সাদনানের পায়ের দিকে তাকিয়ে ঠাহর করতে পারে। প্রিয়তা একটু পিছিয়ে গেলো। সাদনান প্রিয়তা কে পিছিয়ে যেতে দেখে নিজের পা জোরা স্থির করে।ভ্রু কুঁচকে নেয়।আর প্রিয়তা কি বলবে খোঁজে পেলো না।
সে তো শাড়ী পড়তে পারে না। তাই অসহায় চোখে একবার সাদনান এর দিকে তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে মিনমিন করে জানালো,
-“আমি শাড়ী পড়তে পারি না।”
সাদনান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে।তবে পরক্ষণেই কিছু ভেবে শুকনো ঢুক গিলে।
প্রিয়তার ভেজা শাড়ীতে মেয়েলী ভাঁজ গুলো সব স্পষ্ট।তবে সাদনান এর মনে হচ্ছে তাঁর সামনে একটা চকলেট এর প্যাকেট দাঁড়িয়ে। যার চকলেট এরচেয়ে প্যাকেট টা বেশি বড় হয়।প্রিয়তার গায়ের শাড়ী টা ততটা ভারী নয়।তবে চিকন পাতলা দেহখানার জন্য শাড়ী টা ভারী মনে হলো সাদনানের নিকট।
নিজের সদ্য বিয়ে করা স্ত্রী এমন রূপ যেকোনো পুরুষ কে টানবে।নিজের পুরুষালী সত্ত্বা দমন করে সাদনান পাশের দেওয়ালে থাকা বোর্ডে সুইচ টিপে লাইট অফ করে।
প্রিয়তা চমকে ওঠে।
তড়িঘড়ি করে ভীতু স্বরে বলল,
-“লাইট কেন বন্ধ করলেন, সাদনান ভাই?”
সাদনান প্রিয়তার কথা শুনে বিরবির করে বলল, “ইস্টুপিট”। প্রিয়তার কান অব্ধি কথা টা পৌঁছাল না। পৌঁছবে কি করে মেয়ে তো ভয়ে লজ্জায় অস্বস্তি মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে আছে।
সাদনান প্রিয়তার থেকে গুনে গুনে দুই হাত দূরত্বে দাঁড়িয়ে নিজের হাতে থাকা ব্লাউজ আর আর প্রয়োজনীয় সব প্রিয়তার হাত টা টেনে ধরে প্রিয়তা কে দিলো।শুধু শাড়ী টা নিজের হাতে রাখল।
-” আমি চাই না তুমি আমার সামনে অস্বস্তি বোধ করো।
আমি চাই তুমি আমার সামনে স্ত্রী রূপে লজ্জা পাও।আর যেদিন তুমি আমার সামনে প্রথম লজ্জা পাবে সেদিন আমি নিজে হাতে পড়ানো এই শাড়ী নিজের হাতে খোলে নেব।”
সাদনানের ফিসফিসিয়ে বলা কথা গুলো শুনে প্রিয়তার কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বেরুনোর জোগাড়। অন্ধকারের মাঝে আবছা আলোয়ে সাদনান দেখতে পেলো প্রিয়তার চোখ জোড়া বেশ টান টান করে তাকিয়ে তারই দিকে।
সাদনান প্রিয়তা কে এভাবে তাকাতে দেখে হাসল বোধহয়। যা প্রিয়তার চোখে ধরা পড়ে না।পড়বে কি করে সে তো লজ্জায় আবার দৃষ্টি আগের ন্যায় নত করে নিয়েছে।
সাদনান উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে এক হাত কোমড়ে আরেক হাত মাথার পেছনে রেখে তাগাদা দিয়ে বলল,
-“ফাস্ট ভেজা কাপড় চেঞ্জ করো।”
প্রিয়তা কাঁপা কাঁপা হাতে তাই করে। আর বাইরে থেকে ব্যালকনি দিয়ে আসা অল্প আলোর কারণে সেটা প্রিয়তার উপর পড়ে যার ফলে প্রিয়তার ছায়া টা না চাইতেও সাদনান এর নজরে আসে পাশের পর্দা টায়।
সাদনান ধপ করে চোখ বন্ধ করে নিলো।সে চায় না এখন এমনি কিছু হয়।তাহলে বারবার কেন মেয়ে টা তাকে উস্কে দিচ্ছে। সে তো পুরুষ সেখানে নিজের বিয়ে করা স্ত্রী এমনতর অবস্থায় নিজে কে কন্ট্রোল করা কত টা কষ্ট সাধ্য এই মেয়ে কি সেটা জানে?সাদনানের ভাবনার মাঝেই প্রিয়তার বারকয়েক মিনমিন করে ডাকলো সাদনান কে।শেষমেশ না পেরে সামন্য জোরেই ডাকল,
-“সাদনান ভাই?”
-“হ্ হঁ!”
সাদনান চমকাল।
পেছনে ফিরে বলল।
প্রিয়তা নিজের দুই হাত সামনে দিয়ে রেখেছে। সাদনান ঠোঁট এলিয়ে হাসল।তবে পর মূহুর্তে কি হবে ভেবে হাসি বিলীন হয় ঠোঁটের কার্নিশে হতে।
নিজের হাতের শাড়ী ভাঁজ খুলে এগিয়ে গিয়ে হাতের শাড়ীর আঁচল টা গুঁজে দিলো প্রিয়তার কোমড়ে। সাদনানের হাতের স্পর্শ কেঁপে উঠল প্রিয়তার সর্বাঙ্গ। সাদনান সেটা ঠিক বুঝতে পারল।তবে নিজে কে শক্ত করে প্রিয়তা থেকে যথেষ্ট দূরে দাঁড়িয়ে শাড়ী টা পেঁচিয়ে নিলো প্রিয়তার কোমড়ে।বলিষ্ঠ পুরুষ সাদনানের বুকে প্রিয়তার শরীর টা স্পর্শ পেলো।
সাদনান কুঁচি করে সেগুলো প্রিয়তার হাতে দিলো।প্রিয়তা কাঁপা কাঁপা হাতে সেগুলো কোনো রকম গুঁজে নিলো।
সাদনান নিচে বসে প্রিয়তার কুঁচি গুলো ঠিক করে ওঠে দাঁড়িয়ে চট করে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
প্রিয়তা সেভাবে থেকেই এগিয়ে গিয়ে লাইট অন করে।ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজে কে ঘুরেফিরে দেখতে লাগল।বেশ ভালোই হয়েছে। তবে আঁচল টা বেশ লম্বা রয়েছে।
প্রিয়তা ভেজা কাপড় গুলো ফ্লোরে। প্রিয়তা আশেপাশে কোনো ঝুরি আছে কি-না দেখে নিলো।
নাহ কিছু নেই।
প্রিয়তা ভাবল সাদনান ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে এলে সেগুলো ধুয়ে নিবে।
কিন্তু প্রিয়তার ভাবনায় এক বালতি পানি ঢেলে হঠাৎ ওয়াশ রুমের দরজা খুলে অর্ধনগ্ন সাদনান বেরিয়ে এলো।কোমড়ে একটা হাল্কা গোলাপি রঙের টাওয়াল পেঁচিয়ে।
প্রিয়তা সাদনানের দিকে তাকিয়ে রইল।মুলত বেহায়া চোখ জোরা প্রিয়তা কে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে দিল না।উদোম শরীরে বুকের ঘনকালো পশম গুলো মারাত্মক সুন্দর দেখতে লাগছে প্রিয়তার নিকট।
সাদনান প্রিয়তা কে এভাবে তাকাতে দেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
-“আমাকে দেখা শেষ হলে ব্যালকনি থেকে টাওয়াল এনে চুল গুলো মুছে নাও।”
কথা টা বলতে বলতে সাদনান প্রিয়তার ভেজা কাপড় গুলো হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
প্রিয়তা বোধগম্য হচ্ছে না।ব্যাপার টা বুঝতে প্রিয়তার ঠিক কত সময় লাগল প্রিয়তা জানে না।
তবে সাদনান ভাই তাঁর কাপড় ধুতে নিয়েছে এটা যেনো তার বিশ্বাস হচ্ছে না। কোথায় ভেবেছে বিয়ের পর হয়তো সাদনান ভাই তার সাথে ঠিক করে কথাও বলবে না।সেখানে এতসব যেনো প্রিয়তার স্বপ্ন মনে হচ্ছে।
———
রাত আনুমানিক সাড়ে দশটার মতো বাজে কবির খাঁন সওদাগর বাড়ি এসে পৌঁছাল। কালাম খাঁনও আজ সওদাগর বাড়ি রয়েছে। তিনি ছেলে কে দেখে রেগে গেলো।
তবে শফিক সওদাগর কালাম খাঁন কে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিলো। আর মিতা সওদাগর আগে কবির কে ফ্রেশ হতে বলল।কবির তাই করল।ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নিলো।এরমধ্যে কবির ঠিক আন্দাজ করতে পারে বিয়ে টা তাহলে সত্যি হয়েছে মির্জা সাদনান শাহরিয়ার সাথে।আর তাকেও যে মিথ্যা খবর দিয়ে এখান থেকে খুব দক্ষতার সঙ্গে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সেটাও বুঝতে পারে। তবে সে বিষয় টা কারোর সাথেই শেয়ার করল না।
কবির শফিক সওদাগরের কে অনুতপ্ত স্বরে বলল,
-“আমি সত্যি লজ্জিত।
তবে জরুরি কিছু কাজ থাকায় আমাকে সকালেই চট্টগ্রাম যেতে হয়েছে। আমি অতন্ত্য দুঃখিত আঙ্কেল।”
শফিক সওদাগর কবির এর কথায় জানাল,
-“দেখো বাবা যা হয়েছে ভুলে যাও।
আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে।”
#চলবে……
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]