#আমার_তুমি
#পর্ব_৪০[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা
-“আআহ,ব্যাথা পাই।”
প্রিয়তা সাদনান এর মাথার চুল শক্ত করে চেপে ধরে ব্যাথাতুর শব্দ করে বলে উঠে।
-“প্রায় শেষ আর একটু সহ্য করো সোনা।”
সাদনান শুভ্র রঙের ব্যান্ডেজ টা পায়ে পেঁচাতে পেঁচাতে জানালো প্রিয়তা কে।
প্রিয়তা আর কোনো শব্দ প্রয়োগ করে না দাঁতে দাঁত খিঁচে শক্ত হয়ে থাকে।
সাদনান ব্যান্ডেজ টা পেঁচানো শেষ উঠে এগিয়ে গিয়ে আলমারি খুলে সেখান থেকে নিজের আর প্রিয়তার ড্রেস আনে।
সেগুলো সোফায় রেখে ফিরে এসে প্রিয়তা কে কোলে তুলে নিলো।
প্রিয়তা চুপটি করে গলা জড়িয়ে ধরলো।ভীষণ ব্যাথা করছে পায়ে।তাই আর কথা বাড়ায় না। পায়ে তখন একটা ব্লেড ভাঙ্গা গেঁথে গিয়ে ছিল।
রাহান সেটা বেড় করলেও রক্ত পড়া বন্ধ হয় নি।আর হসপিটাল যাওয়া টাও তখন সেফ ছিল না তাই তো বাসায় এসে সাদনান নিজে প্রাথমিক চিকিৎসা করেছে।অবশ্য একটা ইনজেকশন পুশ করছে যাতে ইনফেকশন না হয়।
সাদনান প্রিয়তা কে ওয়াশ রুমে এনে নিজে কলেজে ড্রেস বদলে টাওয়াল পেঁচিয়ে দিয়ে আবারও কোলে করে এনে সোফায় বসিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করিয়ে দেয়।
প্রিয়তার নিজেও টেনেটুনে পড়ে নিলো।
সাদনান হাসলো হাতে থাকা ভেঁজা টাওয়াল টা নিয়ে ব্যালকনিতে যেতে যেতে বলল
-“একদম নড়াচড়া করবে না।
আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।খাবার রুমে দিতে বলবো।”
-“ভাবা যায়,এমপি মহোদয় বউয়ের সব কাজ নিজে হাতে করছে।”
প্রিয়তা কেমন তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে উঠলো। সাদনান ওয়াশ রুমে যাওয়ার জন্য মাত্রই নিজের হাল্কা গোলাপি রঙের টাওয়াল টা সোফা হতে হাতে নিয়ে ছিল।
প্রিয়তার কথা শুনে প্রিয়তার সামনে দাঁড়াল নিজেও ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো
-“কোথাও লেখা আছে এমপি’রা কাজ করতে পারবে না?”
-“কি বলুন তো,অপ্রত্যাশিত ছিল তো তাই।”
সাদনান প্রিয়তার কথা শুনে হঠাৎ মনে হলো প্রিয়তা একজন বাইশ, তেইশ বছর এর প্রাপ্ত বয়স্ক নারী।
কিন্তু কথা হলো এতো গভীর করে কেন তার সাথে কথা বলছে তার বউ?
-“তোমার হয়েছে টা কি?”
-“কিছু না তো।
আপনি যান বরং, আপনার আবার সময় অপচয় হচ্ছে।”
সাদনান জবাবে কিছু বলল না ওয়াশ রুম যাওয়ার জন্য অগ্রসর হলো।চার টার দিকে আজ কিছু মানুষ আসবে তার উপর একটা বিশেষ কাজও করতে হবে। সাথে দুপুরে আক্রমণকারী লোকদের একটা কিছু করতে হবে।রাতে না হয় আজ বউয়ের সব অভিযোগ শুনবে।সে জানে বউ তার মনে মনে অভিমানের পাহাড় তৈরি করে রেখেছে। অবশ্য রাখা’রই কথা।
কিন্তু তার নিজের কি দোষ এতো এতো ঝামেলা সামলে বউ কে সময় দিয়ে উঠতে পারছে না।
নতুন এমপি হওয়ার সুবাদে সব টা সামলে নিতে একটু হিমশিম খেতে হচ্ছে। অবশ্য ততটা সমস্যা হতো না যদি না প্রাক্তন এমপি সব দায়িত্ব, নিয়ম ঠিক ঠাক পালন করতো।
সাদনান শাওয়ার নিয়ে একটা টাওয়াল পেঁচিয়ে বেড়িয়ে এলো।
রুমে এসে প্রিয়তার পাশে বসে প্রিয়তা কে নিজের এক উরুর উপর নিয়ে চুল মুছে দিতে বলে।
প্রিয়তা বাধ্য মেয়ের মতো শুনলো। চুল মুছা শেষ সাদনান প্রিয়তা কে আবার আগের স্থানে বসিয়ে দিয়ে গায়ে একটা টি-শার্ট জড়িয়ে নিলো।
এ-র মধ্যে একজন কাজের লোক আর সুফিয়া বেগম খাবার নিয়ে হাজির হলো।
প্রিয়তার ব্যাপার টা নিয়ে সবাই অবগত তাই নিজে যে যেতে পারবে না সেই জন্য খাবার উপর রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে সালেহা বেগম। সবাই অবশ্য খাবার শেষ করে নিয়েছে, তার উপর আয়নার নয় মাস শেষ এর দিকে তাই সালেহা বেগম সেখানেই আছে বলে জানালো সুফিয়া বেগম।
খাবার রেখে প্রিয়তার হালচাল জিগ্যেস করে তিনি চলে গেলো।
সাদনান ততক্ষণে নিজের প্রয়োজনীয় সব কাজ শেষ করে প্রিয়তার পাশে বসে খাবার থালা হাতে নিয়ে প্রিয়তা কে খাইয়ে দেয় সাথে নিজেও খেয়ে নিলো।
প্রিয়তা এটা বেশ উপভোগ করলো।অনেক দিন পর সাদনান প্রিয়তা কে নিজের হাতে খাবার খাইয়ে দিচ্ছে।
খাবার শেষ সাদনান এঁটো থালা সেন্টার টেবিলে রেখে নিজের হাত ধুয়ে আসে বেসিন হতে।
প্রিয়তার মুখ মুছিয়ে দিয়ে একটা ব্যাথার ঔষধ খাইয়ে দিলো।প্রিয়তা বিনাবাক্য খেয়ে নিলো।সাদনান প্রিয়তা কে বিছানায় নিয়ে নিজের ল্যাপটপ নিয়ে বসে গেলো প্রিয়তার পাশে।
প্রিয়তা সাদনান এর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে গেলো।
সাদনান সে দিকে তাকিয়ে মিনি কম্বল টা প্রিয়তার গায়ে দিয়ে দিলো।ঠিক তক্ষুনি দরজায় কেউ কড়া নাড়ে।
সাদনান জিগ্যেস করলে জানালো নিচে মানুষ এসছে।সাদনান আসছি বলে।প্রিয়তার কপালে একটা চুমু খেয়ে বেড়িয়ে এলো রুম হতে।
———–
সাদনান বসে আছে ওয়াসিফ দেওয়ান এর সামনে।সাথে আছে আরও কিছু বড় বড় নেতা।তারা মুলত কিছু নিয়ে সমালোচনা করছে।
বেশ অনেক টা সময় সাদনান সবার কথোপকথন শুনে। কিন্তু সে খুব গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু ভেবে চলছে। ভাবনা অতি প্রখর যা ওয়াসিফ দেওয়ান পর্যবেক্ষণ করে।
-“সিকিউরিটি আরও কড়াকড়ি করতে বলবো!”
ওয়াসিফ দেওয়ান বললো।ওনার সাথে এখানে থাকা সবাই সায় দিলো।তবে সাদনান নাকচ করে দিলো।থুতনিতে নিজের দুই হাত ঠেকিয়ে জানালো
-“কি দরকার?
তারচেয়ে ঢের বেশি ভালো শেকড় টা উপড়ে ফেলা।”
-“সম্ভব হবে না।”
জাফর মির্জা বলল।সাদনান দাদার দিকে তাকালো।ফের দৃষ্টি ঘুড়িয়ে ওয়াসিফ দেওয়ান এর দিকে তাকিয়ে হাল্কা হেঁসে বলল
-“সময় বলে দিবে।
বাসায় যান রেস্ট করুন।”
————
এইচএসসি পরীক্ষা শেষ তিন্নির এডমিশন টেস্ট এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এখন।
এখন বই নিয়ে বসে আছে টেবিলে পাশেই সোফায় কবির খুব মনোযোগের সাথে কিছু করে যাচ্ছে ল্যাপটপ স্কিন এর দিকে তাকিয়ে।
হাতের আঙুল গুলো অনবরত keyboard চালিয়ে যাচ্ছে।
তিন্নি সে দিক টায় তাকিয়ে থাকে অনেক্ক্ষণ যাবত।তবে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে না খাবার খেয়ে এসছে এই একটু আগেই শরীর টা কেমন করছে গা ঘোলাচ্ছে। মনে পেটের ভেতর নাড়িভুড়ি সব বেড়িয়ে আসবে।
তিন্নি হাতে থাকা কলম টা টেবিলে রেখে মুখে হাত চেপে ধরে এক দৌড়ে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
কবিরের চোখে সেটা ধরা পরলো।ল্যাপটপ রেখে তৎক্ষনাৎ উঠে নিজেও পেছনে পেছনে ওয়াশ রুমে আসে ততক্ষণে তিন্নি ঘড়ঘড় আওয়াজ তুলে পেটের হাত চেপে ধরে বেসিনে উপর ঝুঁকে বমি করছে।
কবির এগিয়ে এলো চুল গুলো সামনে থেকে পেছনে এনে কোনো রকম বেঁধে দিয়ে মুখে পানি দিতে সাহায্য করলো।
বেচারা বেশ ঘাবড়ে গিয়েছে চোখ মুখে কেমন আতংকের ছাপ স্পষ্ট।
তিন্নি চোখে মুখে পানির ঝাঁপটা দিয়ে দূর্বল শরীর টা আর ধরে রাখতে পারে না।কবির এর বুকের উপর আলগোছে মাথা টা এলিয়ে দেয়।
কবির কি বুঝতে পারলো কে জানে।হঠাৎ করে কোলে তুলে নিলো। তিন্নি গলা জড়িয়ে ধরে ক্লান্ত ভরা কণ্ঠে জানালো
-“যেতে পারতাম।
দরকার ছিল না।”
-“হুম সেটা তো দেখতে পাচ্ছি।
ঠিক মতো খাও,,,
কবির কথা টা কি মনে করে আর সব টা সম্পূর্ণ করেনা।
তিন্নি কে বিছানায় বসিয়ে নিজেও পাশে বসে কৌতুহল নিয়ে জানতে চাইলো
-“সব ঠিক ঠাক ছিল তো এই মাসে?”
তিন্নি হাসলো খুব সাবধানের সহিতে। মাথা টা কবির এর কাঁধে রেখে এক বাহু জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো
-“যদি বলি না!”
-“মজা করছো তুমি।”
-“আপনার তাই মনে হচ্ছে? ”
তিন্নি মাথা তুলে কবির এর মুখ পানে তাকালো। কবির খুশি কি না বুঝে উঠতে পারে না।
কবির ফিরে বসলো নিজের দানবীয় হাত জোড়া তিন্নির গোলগাল মুখ খানা নিজের সেই হাতের আঁজলে নিয়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে শুধালো
-“তুমি শিওর, আমি বাবা হবো!”
#চলবে…..
#আমার_তুমি
#পর্ব_৪১[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা
রাত তখন তিন টা।রাহাত পাশেই ঘুমোচ্ছে আয়নার সে দিকে একবার দেখে নিলো।পেট টা হাল্কা ব্যাথা করছে। নিজের পেটের উপর হতে রাহাত এর ডান হাত টা সড়িয়ে অনেক কষ্ট উঠে বসলো।
সাইট টেবিল হতে গ্লাস ভর্তি পানি টা নিয়ে একটু পানি খেলো।
যদি পারতো তবে হয়তো পুরো টা খেয়ে নিতো কিন্তু সম্ভব না।কনসিভ করেছে পর থেকে পানি টা আয়না একদম খেতে পারে না,পানি না সব খাবারই কেমন অনিহা বোধ করে।
যদিও এটা প্রায়ই হয়ে থাকে প্রেগন্যান্সির সময়। তবে কষ্ট করে হলেও খেতে হয়।আয়নার ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে জোর করে খেতে হয়।কিন্তু পানি টা?একদম খেতে পারে না।
আয়না পেটে হাত চেপে বসে আছে যদি পানি সব টা খেতে পারতো তবে হয়তো ব্যাথা টা কম তো।কিন্তু এখনো তো আরও বেড়েছে।
আয়না বুঝতে পারছে না কি করবে।রাহাত কে ডাকবে?দ্বিধা করতে করতে শেষমেষ না পেড়ে ব্যাথাতুর শব্দ করে ওঠে।
রাহাত কে ডাকবে তার আগেই আয়নার শব্দ রাহাত তন্দ্রা ছুটে।
আয়না কে বসে থাকতে দেখে তড়িঘড়ি করে নিজেও ওঠে বসলো।
চুল গুলো বেঁধে দিলো পাশ থেকে ক্লিপ দিয়ে। আয়নার সারা শরীর ঘেমে ন্যায় একাকার অবস্থা রাহাত কিছু বলার মতো খুঁজে পাচ্ছে না।
আয়নাও কেমন হাঁস পাশ করছে। রাহাত যেনো কিছু বুঝতে পারলো।
কিছু জিগ্যেস না করেই আয়না কে কোলে তুলে নিলো।
দরজা শুধু ভিড়ানো ছিল বিধায় বেশি কষ্ট করতে হলো না।
রুম হতে বেড়িয়ে হতে হতে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল
-“একটু ধৈর্য্য ধরো।”
পরপরই নিজের বলিষ্ঠ কণ্ঠে সবাই কে ডাকতে লাগলো।উপর থেকে নিচে নামতে নামতে ওরা নিচের ঘরের সবাই লিভিং রুমে হাজির হলো মূহুর্তে মাঝে অন্ধকার বাড়ি টা আলোকিত হয়ে গেলো।
ঘটনা বুঝতে কারোরই তেমন কোনো অসুবিধা হয় না।যেহেতু বিষয় টা নিয়ে আগে থেকে সবাই অবগত ছিল যে কোনো সময় যা তা হতে পারে।তাই তো বাড়ির কোনো পুরুষ লোক আজ মাস ধরে রাতে বাহিরে থাকে না।
মফিজুর মির্জা কোনো বাক্য প্রয়োগ না করে নিজের চোখের চশমা টা ঠেলতে ঠেলতে বেড়িয়ে গেলো গাড়ি বেড় করতে।
সালেহা বেগম শাশুড়ীর কাছে এগিয়ে এলো নমনীয় কণ্ঠে অনুমতির আবেদন করলো
-“আম্মা আমি যাব?”
-“যাও।”
সালেহা বেগম মনে মনে অবাক হলো তবে শাশুড়ী’র থেকে সম্মতি পেয়ে আর কথা বাড়ায় না তৎক্ষনাৎ স্বামীর পেছনে পেছনে বেড়িয়ে গেলো।
সাদনান প্রিয়তা সারা এক পাশে দাঁড়িয়ে রয়।এটা তাদের কাছে অবাক করা বিষয় তাই সবাই একটু শকট। তবে সাদনান নির্বিকার। সে যেতো তবে সে যাওয়া মানেই বিপদ নিজে হাতে ডেকে আনা তাছাড়া তার কাল একটা বিশেষ কাজও আছে কতশত দায়িত্ব।
প্রিয়তা অবশ্য আয়না কে ওই অবস্থায় দেখে কেঁদে দিয়েছে কিন্তু শব্দহীন।
সে টা কেউ লক্ষ্য না করলেও সাদনান এর চোখে ঠিক ধরা পড়ে।
কিন্তু কিছু বলে না বোন আর ভাই কে যে প্রিয়তা ভীষণ ভালোবাসে অবশ্য আয়ান, আয়নাও ছোট বোন কে প্রচন্ড ভালোবাসে।
সবাই চলে গেলো যে যার রুমে সাদনানও প্রিয়তা কে নিয়ে রুমে এলো।
রুমে এসেই প্রিয়তা কেঁদে দিলো শব্দ করে সাদনান কিছু বলল না আগলে নিলো নিজের বাহুডোরে।
-“আপুর কিছু হবে না তো?”
-“তুমি পজিটিভ কেন ভাবছো না?”
-“আসে না।
আম্মু তো আমাকে রেখে চলে গিয়েছে।”
-“মায়ের তো সমস্যা ছিল বড়।
কিছু হবে না দোয়া করো।”
প্রিয়তা চুপ করে যায়।
সাদনান নিজেও চোখ বন্ধ করে আরও দেড় ঘন্টার মতো বাকি ফজরের আযান দিতে।
ঘুমানোর চেষ্টা চালায়।
—————
হসপিটাল পৌঁছাতে আধঘন্টা সময় লেগেছে।রাত শেষ এর দিকে হওয়াতে প্রায় সবাই ঘুমিয়ে ছিল।
শুধু কিছু সংখ্যক মানুষ আছে তবে তারাও কেউ রোগী কেউ বা বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে হাঁটা হাঁটি করছে।ডক্টর নার্স চোখে পড়ছে না রাহাতের।
মফিজুর মির্জা আজ্জম মির্জা দৌড়ে ভেতরে গেলো রাহাতও ব্যাথায় ছটফট করতে থাকা আয়না কে নিয়ে এগিয়ে এলো।
তবে বেশি দূর যেতে হয় নি দুই বাপ চাচা সহ ডক্টর সমতে ফিরে এলো।
আর সবাই কে অপেক্ষারত ফেলে দিয়ে আয়না কে নিয়ে চলে গেলো ওটিতে।
সালেহা বেগম ছেলে কে অবয়ব দিচ্ছে এটা সেটা বলছে।আযান দিলে পুরুষ সবাই নামাজ পড়তে চলে গেলো।শুধু সালেহা বেগম বসে রইলো।কি করবে হঠাৎ কার কাছে যাবে বুঝতে পারছে না তাই বসে বসেই আল্লাহর কাছে ছেলে বউ আর তার অনাগত সন্তানের জন্য দোয়া করতে লাগলো।
রাহাত’রা সবাই যাওয়ার ছয় কি সাত মিনিট এর মাথায় একজন নার্স সাদা একটা টাওয়াল পেঁচিয়ে একটা বাচ্চা কোলে ওটি হতে বেড়িয়ে এলো।
মুখে তার কি সুন্দর চমৎকার হাসি।সালেহা বেগম বসা ছেড়ে ওঠে দাঁড়াল।চট করে এগিয়ে এলো।
নার্স টা হাসি বজায় রেখেই সালেহা বেগম এর কোলে বাচ্চা টা কে দিলো।
নার্স টা হেঁসে বলল
-“আপনার মেয়ে ভালো আছে।”
নার্স এর কথায় সালেহা বেগম নিজেও হাসলো।নার্স টা আবারও চলে গেলো। নার্স টা বাচ্চা সম্পর্কে কিছু বলতে না দেখে সালেহা বেগম অবাক হলো অবশ্য পরে তা ঘুচে গেলো কেন না তারা যে কি বাচ্চা হবে জানে না সেটা তো আর নার্স জানে না।
সালেহা বেগম বাচ্চা টা নিয়ে বসে রইলো।তার ঠিক মিনিট এক মিনিট এর মাথায় সবার আগমন হলো।
রাহাত সবার পেছনে ছিল।
জাফর মির্জা আর মফিজুর মির্জা আগে এসে দেখে নিলো।সবার শেষ রাহাতের কোলে তুলে দিলো সালেহা বেগম রাহাত টলমল পায়ে এগিয়ে এসে কাঁপা কাঁপা হাতে কোলে নিয়ে কপালে একটা চুম্বন করলো নিজের অস্তিত্ব।
ঠিক তক্ষুনি একজন ডক্টর এলো জানালো আয়না কে কেবিনে দেওয়া হয়েছে আর রোগীর খেয়াল রাখতে বলে চলে গেলো ওনার সাথে অবশ্য মফিজুর মির্জা গেলো কথা বলতে।
রাহাত কেবিনে এসে দেখলো আয়না ঘুমিয়ে আছে। রাহাত কোনো শব্দ না করে আলগোছে এগিয়ে গিয়ে বাবু টা কে আয়নার এক বাহুর উপর শুইয়ে দিলো।
আয়নার হুঁশ নেই।হয়তো ঘুমের ঔষধ দেওয়া হয়েছে।
রাহাত চট করে সাথে থাকা বাবার ফোন টায় কয় টা ছবি তুলে নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে আবার delete for me করে দেয়।
অতঃপর বউ আর বাচ্চা কে পাহাড়া দিতে লাগলো।
————-
সময় কত দ্রুত চলে যায় তাই না! শুধু থেকে যা সৃতি হিসেবে কিছু মূহুর্ত।
তেমনি দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে একটা বছর।সারা প্রিয়তার এইচএসসি পরীক্ষা চলছে।আয়না রাহাতের মেয়ের এক বছর হলো আজ।হ্যাঁ সে দিন রাহাত আর আয়নার কোল আলো করে ইনিয়া এসছিল , তিন্নির আর কবিরের একটা ছেলে হয়েছে তিন মাস চলে বাচ্চার নাম তুরাগ খাঁন।মাইশা সেও কনসিভ করেছে তিন মাস চলে তবে বহু চেষ্টার পর আজ দেড় বছর পর মুখ তুলে চেয়েছে আল্লাহ মাইশা আর আয়ানের দিকে।ওয়াজিদ রিধি কে নিয়ে আবারও সেই সুদূর ইতালিতে পাড়ি জমিয়েছে তবে শোনা যাচ্ছে আর বছর দুই এক পর তারা বাংলাদেশ এসে যাবে এক্কেবারে তাদের কোনো বাচ্চা হয় নি এখনো।
সারা আর রাহানের বিয়ের ডেট পড়েছে আর নয় দিন পর।আর আজ মির্জা বাড়ি বেশ জমজমাট পরিবেশ তার কারণ আজ মির্জা বাড়ির একমাত্র কন্যা ইনিয়ার বার্থডে আজ।একটা বছর পা রাখলো ছোট ইনিয়া যে কি না তার ছোট মা প্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে থাকে সারাক্ষণ যা নিয়ে সাদনান এর অভিযোগের শেষ নেই।
তার কারণ ইনিয়া হওয়ার পর থেকে প্রিয়তা তার ধারেকাছেও বেশি ঘেঁষে না সব সময় ওকে নিয়ে পরে থাকে।তাই তো সাদনান ভেবে নিয়েছে আজ রাতে একটা কিছু করবেই।
বেশ অনেক টা সময় সাদনান গাড়িতে বসে আছে গাড়িতে এসি চলছে কিন্তু সাদনান তাও ঘামছে।রাহান সে দিকে এক পলক তাকিয়ে গাড়ির ড্রাইভার কে এসির পাওয়ার টা একটু বাড়িয়ে দিতে বলে ড্রাইভার কথা মতো কাজ করে।
তার পর ধীরে স্বরে সাদনান কে জানালো
-“শোন বাবা বলেছে এই মাস থেকে অফিস যেতে।”
-“যা।
তবে আমি ঠিক ঠাক সঙ্গ পেলে হলো।”
সাদনান কণ্ঠ খুব শান্ত রেখে বলল।
রাহান দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে এই কথা উঠলেই সাদনান সব সময় এমন খাপছাড়া জবাব।
রাহান আমতা আমতা করে বলল
-“নিজের একটা পরিচয় দরকার।”
-“বউ পালার চেয়ে ঢেরবেশি টাকা ইনকাম করিস।
এমপির ডান হাত ভুলে যাচ্ছিস।”
#চলবে….