আমার তুমি পর্ব-৩৮+৩৯

0
464

#আমার_তুমি
#পর্ব_৩৮[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

-“আমার বোন আগেও কষ্ট পেয়েছ রাহাত।
আর এখন দাদি।
কবে ওর আর পাঁচ টা সাধারণ মানুষের মতো স্বাভাবিক জীবন হবে?”

কথা গুলো বলেই আয়না কেঁদে দিলো।রাহাত বউয়ের পাশে বসে।
আয়নার একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরো বলতে লাগলো

-“এটা কোনো সমস্যা না।দাদি আগের দিনের মানুষ।
আগের দিনের নিয়ম কানুন মেনে চলে। এসব তো শুধু প্রিয়তা না আমাদের সবার উপর এপ্লাই করে।
প্রিয়তা কে একটু বেশি কড়াকড়ি শাসন করার কারণ ও আছে বয়সে ছোট+দেখতে শুনতে ভালো সহজেই যে কারোর নজর পড়ে।তাছাড়া মা, চাচি, দাদি নিজেও বাহিরে লোকজনের সামনে যাওয়া টা পছন্দ করে না সেখানে প্রিয়তা রোজ স্কুল, কলেজ যাচ্ছে। তাই একটু অপছন্দ করে। দেখবে যখন তোমার মতো লেখা পড়া শেষ আর বাড়ির বাহিরে যাবে না তখন আবার তোমার মতো তোমার বোন কেও আদর করবে।”

রাহাত এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে কথা গুলো বলেই থামলো।
আয়না আসতে করে বিছানা হতে উঠে গিয়ে সেন্টার টেবিলে থেকে গ্লাসে পানি ভর্তি গ্লাস টা রাহাত কে দিলো রাহাত একটানে সব টা পানি শেষ করে গ্লাস টা নিজ ওঠে যথাযথ স্থানে রাখে।

ফিরে এসে আয়না কে বুকে আগলে নিয়ে আবারও শান্তনা দিয়ে বলল

-“আর মন খারাপ করো না তো।
সব ঠিক হয়ে যাবে আস্তে আস্তে।”

আয়নার নাক টানা তবুও শোনা যাচ্ছে। রাহাত বুঝতে পারে আয়না বোন কে প্রচুর ভালোবাসে।আর রাহাত নিজেও জানে সেটা।
রাহাত বেশি কিছু না ভেবে আয়না কে তাড়া দিয়ে বলল

-“দেখি চলো রেডি হও।
সাড়ে এগারো টা বেজে গিয়েছে। বরযাত্রী এসে পড়বে এক টা নাগাদ।”

আয়না উঠে এগিয়ে গিয়ে লাগেজ এর কাছে নিচে বসতে নিলেই রাহাত তৎক্ষনাৎ বসা ছেড়ে উঠে এগিয়ে এসে আয়নার দিকে চোখ গরম করে তাকালো।
আয়না বেচারি মেকি হাসি দিয়ে বলল

-“ভুলে গিয়েছি।
আর হবে না।”

রাহাত কিছু না বলে মুখের ভাব গম্ভীর রেখেই নিজে কাপড় বেড় করে লাগেজ হতে।
আয়নার জন্য শাড়ীর সাথে সব প্রয়োজনীয় জিনিস আয়নার হাতে দিয়ে বলল

-“এগুলো পড়ে এসো।
আমি রেডি করে দেবো।নয়তো একা একা পড়তে কষ্ট হবে।আর এখন মা,চাচি সবাই নিশ্চয়ই বিজি।”

আয়না কাপড় নিয়ে ওয়াশ রুম চলে গেলো।রাহাত সব সময়ই আয়নার প্রতি যত্নশীল আর এখন যেনো আয়না কনসিভ করার পর আরও দিগুণ হয়েছে সেটা।

———

সাদনান ফোনে কথা বলছে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে। রুম থেকে ব্যালকনি একদম বরাবর। সাদনান ফোনে কথা বলছে ঠিক তবে দৃষ্টি তার রুমে শাড়ী পড়তে থাকা বউয়ের উপর।
প্রিয়তা শাড়ীর কুঁচি গুলো হাতে ভাঁজ করে নিচ্ছে। কিন্তু শাড়ী টা বেশ ভারী আর মোটা হওয়ার ফলে বারবারই কুঁচি গুলো ঠিক ঠাক হাতে ভাঁজ নিতে পারছে না। এদিকে সাদনানও রেডি হয়ে গিয়েছে।
প্রিয়তা বিরক্তে চোখ মুখে।চার, পাঁচ টা কুঁচি নিয়ে সেগুলো কোনো রকম আঁচল উপরে তুলে গুঁজতে নিলেই একটা শক্ত হাত বাঁধা প্রদান করলো।
প্রিয়তা মাথা উঁচিয়ে সাদনান কে দেখে সামন্য লজ্জা পেলো।তবে পরক্ষণেই মনে পরে এখন লজ্জা পেলে চলবে না।তাই লজ্জা মনে চেপে রেখেই কপালে বিরক্তিকর ছাপ ফেলে বলল

-“একটু কুঁচি গুলো ভাঁজ করে দিন হচ্ছে না।”

সাদনান প্রিয়তা কথা গুলো বলার আগেই কুঁচি দিয়ে সেগুলো কোমড়েও গুঁজে দিলো।
প্রিয়তা দ্বিতীয় বারের ন্যায় আবারও কুঁকড়ে যায়। এ-র মধ্যে সাদনান নিচে বসে কুঁচি গুলো সুন্দর করে ধরে থেকে প্রিয়তা কে বলল

-“উপরের দিক টা দেখো।”

প্রিয়তা দেখলো।তৎক্ষনাৎ চোখে এলো অনাবৃত কোমড় সহ বুকের কিছু টা অংশও দৃশ্যমান।
প্রিয়তা চট করে আঁচল ঠিক ঠাক করে নিলো।সাদনান নিজেও ওঠে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের হাতের ঘড়ি পড়ে আর সাইডে দাঁড়িয়ে প্রিয়তা নিজেও হাল্কা সাজুগুজু করে নেয়।
যতটুকু সাজ বিয়ে বাড়িতে চলনসই।
প্রিয়তার নিজেরও বেশি সাজতে বেশি ভালো লাগে না তারমধ্যে সাদনান এর কড়াকড়ি নিষেধও আছে। বেশি সাজগোজ না করতে তবে সেটা শুধু বাহিরে।
সাদনান রেডি হয়ে আগে নিজে বেড়িয়ে গেলো যাওয়ার আগে অবশ্য বলে গিয়েছে সারা বা মাইশা কে পাঠাবে।বিয়ে বাড়ি কে কোথায় আছে আর বিয়ের খবর টা যদি কারোর কানে যায় তবে ঝামেলা হবে।তবে বেশি দিন এই লুকোচুরি চলবে না মাস তিন এক পর প্রিয়তার আঠারো হবে তখন অনুষ্ঠান করে সবাই কে জানিয়ে দিবে।

————

রিধির বিয়ের সাজ কমপ্লিট। সাজানো শেষ একবার নিজে কে। রিধি দেখতে একটু ভিন্ন রকম সুন্দর। যে কেউ এক দেখায় মায়ায় পড়বে।মুখ টা একদম মায়ায় ভরপুর সেখানে কৃত্রিম সাজ আরও দিগুণ সুন্দর দেখাচ্ছে। তবে এতো সুন্দর মুখ টা কেমন মলিন হয়ে আছে।তবে যেটা শুধু রিধি দেখতে পাচ্ছে।সবাই রিধির রূপের প্রশংসা করছে।কিন্তু কেউ ভিতরে তীব্র যন্ত্রণা টা দেখতে পাচ্ছে না।যে টা রিধি কে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে। চিৎকার করে কেঁদে বলতে মনে চাচ্ছে “আমি বিয়ে করবো না,করবো যদি পাত্র ওয়াজিদ হয়ে তবেই” রিধির এমন ভাবনা চিন্তায় নিজের উপরেই হাসি পেলো।
এ-র মধ্যে সবাই বাহির হতে বর এসছে বর এসছে বলে হৈ-হুল্লোড় কানে এলো।কম বেশি সবাই চলে গেলো। রুম একদম ফাঁকা থাকার মধ্যে সারা,প্রিয়তা আয়না।
সারা কেও রেডি করে রেখেছে। রিধির বিয়ের পর পরই এনগেজমেন্ট টা হবে।
সারা কে একটা জাম কালার শাড়ী পড়িয়েছে। দেখতে মাশাআল্লাহ। ছোট নাদুসনুদুস দেহখানা ঝলমল করছে। শাড়ী টা বেশ মানিয়েছে।
দরজা হতে রাহান সব টা পর্যবেক্ষণ করে।কিন্তু পরক্ষণেই বোনের দিকে নজর যেতে মন টা খারাপ হয়ে যায়।একটু পরই বোন তার পর হবে।মিনিট সময় ব্যাবধান হয়তো।বেশী ডিফারেন্স না রাহান আর রিধির বয়সের হবে হয়তো এই দেড় বছর এর মতো। বোন তার সাথে ছিল না পাঁচ বছরেরও বেশি সময় কিন্তু তাদের মাঝে তবুও ভালোবাসা কমতি ছিল না।না আগে ছিল তবে এদিকে এসে বোন টা তার কেমন হয়ে গেলো একদম চুপচাপ আগের মতো আর কথা চঞ্চলতা নেই।এতে অবশ্য রাহান প্রথম মন খারাপ করলেও পরে সব টা ওয়াজিদ এর কাছ থেকে ঘটনা জানতে পেরে ওয়াজিদ কে মারতে গিয়েছিল।পরে অবশ্য ক্ষমাও চেয়েছে। সে জানে বোন তার ভীষণ ভালোবাসে ওয়াজিদ কে তাই তা বোনের মন আর ভালো করার চেষ্টা করে নি।বোনের মন সব সময় যাতে ভালো থাকে সেই ব্যবস্থা করে দিচ্ছে।

-“আপু চল।”

রাহান বলল।রিধি উঠে এলো রাহান বোন কে আগলে নিলো।রুম হতে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এলো
পেছন পেছন আরও কিছু মানুষ এলো। রিধি কে মাইশা আয়ান রাহান বিয়ের ব্যবস্থা যেখানে করা হয়েছে সেখানে নিয়ে এলো তাদের সাথে সাথে সবাই এলো।
রিধির মাথায় ঘোমটা একটু বড় করেই দেওয়া। তাই আশেপাশের জিনিস খুব একটা নজরে আসে না। তবে ইচ্ছে থাকলে দেখতে পারবে কিন্তু রিধির কিছু দেখতে ইচ্ছে করছে না। তাই চোখ নিচু রেখেই রাহানের হাত ধরে লিভিং রুমে বর বউয়ের জন্য বরাদ্দকৃত সোফায় বসিয়ে দিয়ে রাহান বোনের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে।
রিধি পাশে বসা মাত্রই খুব চিরপরিচিত একটা সুগন্ধি নাকে ভেসে এলো।
তবে এতো মানুষের ভীড়ে পাশে বসা তার না হওয়া বরের দিকে তাকাতে সাহস পেলো না।

-“কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করুন।
আমাদের আরও একটা শুভকাজ আছে।”

কাজি সাহেব সম্মতি পেয়ে বিয়ের সব নিয়ম কানুন করতে লাগলো।
তবে কাজের মুখে অনাকাঙ্খিত নাম শুনে চমকে উঠলো কোনো কিছু তোয়াক্কা না করেই রিধি পাশে বসা বর রূপে ওয়াজিদ কে এক পলক দেখে সাথে সাথে চোখ নামায়।
এদিকে কাজিও কবুল বলতে মেয়ে কে তাড়া দিচ্ছে। যা রিধির কান অব্দি যাচ্ছে না।
রিধির পক্ষ হতে কোনো জবাব না পেয়ে অনেকেই ফিসফিস করতে লাগলো।পরিস্থিতি অস্বাভাবিক দেখে ওয়াজিদ নিজের শক্ত হাত টা রিধির কোমড় স্পর্শ করে।
রিধি তৎক্ষনাৎ কেঁপে উঠল সম্মতি ফিরে পেতেই বুঝতে পারে পরিস্থিতি বিগড়ে যাচ্ছে তার মধ্যে ওয়াজিদও ফিসফিস করে বলে উঠলো

-“সারপ্রাইজ পেয়ে এতোটাই চমকে গিয়ছো,যে এখন কবুল বলতে ভুলে গিয়েছো!
ফাস্ট, বলো, বলো।”

#চলবে….

#আমার_তুমি
#পর্ব_৩৯[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

-“আমাকে বলেন নি কেন আপনি ছিলেন পাত্র!”

ওয়াজিদ রুমে আসা মাত্রই রিধি উপরোক্ত কথা টা বলে উঠে।বিয়ের পর বাড়িতে আসা মাত্রই একটা ইমারজেন্সী কেস পড়ে যাওয়াতে নতুন বউ বাড়িতে রেখে তখুনি হসপিটাল যেতে হয়েছিল ওয়াজিদ কে। তখন সন্ধ্যা সাড়ে ছয় টা ছিল আর এখন রাত সাড়ে দশ টার বেশি সময় বাজে।ওয়াজিদ নিজের হাতে থাকা ঘড়ি টার দিকে এক নজর তাকিয়ে বা হাতের ভাঁজে ঝুলিয়ে রাখা সাদা অ্যাপ্রোন সাথে ডান হাতে থাকা স্টেথোস্কোপ টাও রাখে সেন্টার টেবিলে রেখে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে নিজের হাত হতে ঘড়ি খোলে রাখে।
অতঃপর শার্ট এর বোতাম খুলতে খুলতে রিধির পাশে গিয়ে বসলো।
সেকেন্ড এর মতো রিধির মায়াবী মুখ টার দিকে তাকিয়ে থেকে হুট করে রিধির কোলে মাথা তুলে দিয়ে শুয়ে পড়লো।
রিধি চমকালো হকচকিয়ে উঠে নিজের হাত জোড়া গুটিয়ে নিতে যাবে তার আগেই ওয়াজিদ আঁটকে দিলো।
রিধির হাত জোড়ায় চুমু খেয়ে নিজের মাথার উপর রেখে দিলো।
রিধির সারা শরীর শিউরে ওঠে। এতোটা কাছাকাছি এর আগে ওরা কখনো হয় নি।তাই একটু নার্ভাস তবে ভীষণ ভালো লাগলো।নিজের অজান্তেই রিধির হাত জোড়া ওয়াজিদ এর চুলের ভাঁজে চালালো।
ওয়াজিদ মুচকি হাসলো।ওয়াজিদ পাশ ফিরে কাত হয়ে রিধির পেটে মুখ গুঁজে জিজ্ঞেস করলো

-“সারপ্রাইজ,ভালো লাগে নি?”

-“কষ্ট টা তো আগে হয়েছে।”

কণ্ঠে অভিমানের রেশ স্পষ্ট।
ওয়াজিদ ফের আগের ন্যায় হাসে।তবে উল্টো ফিরে থাকায় তা রিধির চোখে ধরা পড়ে না।
ওয়াজিদ সোজা হয়।উঠে ঠিক রিধির বরাবর বসে শান্ত কণ্ঠে শুধালো

-“জানতো,দুঃখের পরেই কিন্তু সুখ আসে।
দুঃখ আছে বলেই আমরা সুখ টা উপলব্ধি করতে পারি।”

ওয়াজিদ থামলো। রিধি নিজেও চুপ। ওয়াজিদ মিনিট খানিক সময় চুপ থেকে বলল

-“তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো।”

রিধি শুনলো আলগোছে বিছানা হতে নেমে চলে যেতে নিলেই ওয়াজিদ বলে উঠলো

-“রিধু,আমার একটা টি-শার্ট পড়ো।”

রিধি অবাক হলো।
ওয়াজিদ এখনো মনে রেখেছে কথা টা?রিধি বিস্ময় নিয়ে পেছন ফিরে ওয়াজিদ এর চোখে চোখ রেখে জানতে চাইলো

-“আপনার মনে আছে আজও?”

-“মনে না থাকার কি আছে?”

-“ছয় বছর আগের কথা এটা!”

-“আমার সব টা জুড়ে তুমি।
সেখানে আমার আমি কে কি করে ভুলে যাব?”

রিধি প্রচুর অবাক হয় সাথে মনে মনে ভীষণ খুশি হয়।তার কোথাও একটা মনে হচ্ছে সে সত্যি ভাগ্যবতী। ওয়াজিদ যে দিন মেডিক্যাল চান্স পায় রিধি কে সে দিন অনেক জায়গায় ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিল আর কথার কথায় তখন রিধি কে জিগ্যেস করে ছিল রিধি আজ ওয়াজিদ এর কাছে কি চাই?তখন রিধি লজ্জা মাখা হাসি হেঁসে বলে ছিল ওয়াজিদ এর ব্যবহার করা একটা টি-শার্ট চায়। তবে সেটা বিয়ের দিন রাতে। ওয়াজিদ অবাক হয়ে ছিল। তাই কৌতুহল নিয়ে আবারও প্রশ্ন করে ছিল শুধু একটা টি-শার্ট কেন?
রিধি তখন আবারও লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে জানিয়ে ছিল ওয়াজিদ এর টি-শার্ট তার ভীষণ ভালো লাগে।সে দিন ওয়াজিদ প্রচুর হেঁসে ছিল আর প্রতি বারের ন্যায় সেই হাসির প্রেমে পড়ে ছিল রিধি।
রিধির ভাবনার মাঝেই ওয়াজিদ গিয়ে নিজের ব্যবহার করা একটা গেঞ্জি এনে রিধি হাতে দিলো।
রিধি গেঞ্জি টার দিকে এক পলক তাকালো একদম গাঢ় নীল রঙের একটা টি-শার্ট।
যা দেখে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল রিধি।
মুচকি হেঁসে ভারী লেহেঙ্গা টা উঁচু করে ওয়াশ রুমের দিকে চলে গেলো সাথে অবশ্য ওয়াজিদ একটা তার নিজের থ্রি কোয়ার্টার প্যান্টও দিয়ে দিলো।
তবে রিধি সে কি সত্যি ওয়াজিদ কে এতো সহজে মেনে নিবে?
আজ কি তাদের ভালোবাসা পূর্নতা পাবে?একে-অপরকে নিজের কাছে টেনে নিবে?
না-কি কেউ একজন বাঁধা প্রদান করবে?

ওয়াজিদ রুম টা চোখ বুলালো। ফুলে দিয়ে আর মোমবাতি দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়েছে রুম টা কে। এতে অবশ্য তার কাজিন দল তার কাছ হতে মোটা অংকের একটা টাকার এমাউন্ট নিয়েছে।
ওয়াজিদ চট করে গায়ের ঘামে ভেঁজা শার্ট টা বদলে নিলো।অতঃপর ট্রাউজার পড়ে আলমারি খোলে সেখানে কিছু নড়াচড়া করে।
রিধি ফ্রেশ হয়ে ওয়াশ রুম হতে বেড়িয়ে এলো তবে সে লজ্জা বারবার চোখের দৃষ্টি এলোমেলো ঘুরচ্ছে। ওয়াজিদ সে দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেঁসে উঠলো।
রিধি ইতালিতে থেকেছে দীর্ঘদিন তবে তার পোশাক আশাক সব সময় শালীন ছিল। সব সময় গলায় ওড়না ঝুলিয়ে রাখতো। কিন্তু আজ? শুধু একটা গেঞ্জি আর প্যান্ট যদিও এগুলো ভীষণ ঢিলাঢালা হচ্ছে তবে মেয়েলী ভাঁজ গুলো স্পষ্ট।
ওয়াজিদ এগিয়ে গেলো।
রিধি দুই পা পিছনে গেলো ওয়াজিদ অবাক হয়ে তাকালো।
রিধি কণ্ঠ খুব স্বাভাবিক রেখে বলল

-“সোফায় ঘুমিয়ে পড়ুন।”

-“রিধু, আমরা কোনো সিনেমা করছি না।”

ওয়াজিদ চোখ মুখ শক্ত রেখে বলল।
রিধি আগের ন্যায় আবারও বলল

-“জোর খাটাবেন?”

কি ছিল কণ্ঠে? ওয়াজিদ জানে না। তবে কিছু একটা ভেবে রিধির কথা অনুযায়ী কাজ করে।
রিধিও মলিন হেঁসে বিছানায় শুয়ে পড়লো। তার কেন যেনো ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। হওয়ারই কথা কেন ওয়াজিদ অধিকার দেখালো না?বরাবরের মতো এবারও সে চুপ করে রইলো।খুঁটি দেখলো না একটু।
রিধির ভাবনার মাঝেই শক্ত একটা হাত রিধির পেট আঁকড়ে ধরে।
রিধি এমন স্পর্শে কেঁপে উঠল। কিছু বলার মতো শব্দ পেলো না।
সারা শরীর অবস হয়ে আসছে শিরশির করছে শিরা-উপশিরা।
ওয়াজিদ নিজের হাতের বাঁধন টা আরও দৃঢ় করে।গেঞ্জি ভেদ করে উম্মুক্ত পেটে বিচরণ ঘটায়।
আরেক হাতে রিধি গেঞ্জি কাঁধ হতে নামিয়ে নিজের অধর ছুঁয়েই ফিসফিস করে জানালো

-“আমাকে পাগল করে, এখন দূরে রাখা হচ্ছে!
উঁহু, এটা সম্ভব হবে না মিসেস দেওয়ান।
ওয়াজিদ নিজের অধিকার বুঝে নিতে জানে।”

রিধির কি হলো কে জানে।হঠাৎ শব্দ করে কেঁদে দিয়ে উল্টো ফিল শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
ওয়াজিদ হাসলো নিজের বুকের সাথে আরও কিছু টা চেপে ধরে যত টা ধরলে একটা মানুষের হাড়গোড় ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম রিধি অবস্থাও তাই হলো।
শ্বাস নিতে কষ্ট হলো।
অনেক কষ্ট জানালো

-“কষ্ট হচ্ছে।”

ওয়াজিদ ছেড়ে দিলো।
নিজের সম্পূর্ণ ভর রিধির উপর দিয়ে সাইডে টেবিলে সুইচ টিপে লাইট অফ করে দিয়ে বুলি উড়াল

-“আজ থেকে এমন কষ্ট রোজ পেতে হবে, রিধু পাখি।”

——–

অনেক দিন পর প্রিয়তা আর সারা কলেজ যাচ্ছে।
সারা অবশ্য যেতে চায় নি তবে সামনে প্রথম বৎসর বার্ষিক পরীক্ষা।
সারা প্রিয়তা কে রেডি হতে বলে হেলেদুলে নিজের রুমে চলে গেলো।
প্রিয়তা শাওয়ার নিয়ে রেডি হয়ে নিলো।সাদনান সেই সকালেই বেড়িয়েছে।কোথাও একটা আজ সাধারণ জনগণের সাথে বেশ বড়সড় সমাবেশ আছে।
প্রিয়তা জানে না কোথায় তবে রাহান যখন সাদনান কে নিতে এসছে তখন প্রিয়তা রান্না ঘরে ছিল আর রাহান ডাইনিং টেবিলে বসে জাফর মির্জা সাথে কিছু কথোপকথন শুনে বুঝতে পেরেছে ঝামেলা হওয়ার আশংকা রয়েছে।
বিরোধী দলের প্রাক্তন এমপিও নাকি বর্তমানে দেশে অবস্থান করছে।
তাই ভয় হওয়া টা স্বাভাবিক। তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে প্রাক্তন এমপি বেশ খারাপ লোক বলেই সবার মতামত।
প্রিয়তা কলেজ ড্রেস পড়ে রেডি হয়ে হিজাব টা ভালো করে আঁটকে ব্যাগ টা কাঁধে ঝুলিয়ে সারার রুমে চলে আসে।ওর মন টা কেন জানি কেমন কেমন করছে। অস্থির অস্থির করছে।
তবে প্রিয়তা ভাবছে হয়তো শরীর খারাপ তাই এমন হচ্ছে। তাই বেশি কিছু আর ভাবে না। সারা কে সঙ্গে নিয়ে সালেহা বেগম এর কাছে বলেই দু’জন বাড়ি হতে বেড়িয়ে এলো।

———-

তখন দুপুর সমাবেশ শেষ সাদনান কে সিকিউরিটির সাহায্যে সাবধানের সহিতে তার সিকিউরিটিরা তাকে গাড়ি অব্দি নিয়ে এলো।
কিন্তু গাড়ির ভেতরে আর ঢুকতে পারে না।
তার আগেই গোলাগুলি শুরু হয়।কোথাও থেকে কারা যেনো গুলি ছুড়েছে আশেপাশের মানুষ জন ছুটাছুটি করতে লাগলো।
সিকিউরিটিরা তৎক্ষনাৎ দিকবিদিকশুন্য হয়ে পড়ে।হঠাৎ আক্রমণে তারা কোনো কিছু ঠাহর করতে পারছে না।এ-র মধ্যে দুই জন সিকিউরিটি অলরেডি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
সাদনান খুব সুক্ষ্ম ভাবে দক্ষতার সাথে নিচে পড়ে থাকা একজন সিকিউরিটির হাত থেকে বন্দুক টা নিজের হাতে তুলে নেয়।
কিন্তু অন্য সিকিউরিটিরা সাথে আইনের লোকেরাও সাদনান কে ব্যাড়িকেট দিয়ে গাড়িতে বসতে বলছে।কিন্তু সাদনান কিছুতেই গাড়িতে বসছে না সেও গুলি ছুড়ছে।তবে ঘটনা টা যতদ্রুত ঘটেছে ঠিক ততটাই দ্রুতার সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রা গুলিবর্ষণ কারিদের ইতিমধ্যে পাল্টা আক্রমণে তারা কিছু আহত হয়েছে এর মধ্যে জীবিত সবাই কে আটক করে নিয়েছেন তারা।
সাদনান পরিস্থিতি স্থিতিশীল দেখে গাড়িতে উঠে বসে।
কিন্তু হঠাৎ মনে হলো রাহান ওর সাথে ছিল কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে না কোথাও।
সাদনান ততক্ষণে আবারও গাড়ি থেকে নেমে পাশেই পুলিশ এর কাছে যেতে নিলেই দেখা মিলে রাহান সহ প্রিয়তা সারা কে নিয়ে পুলিশের তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে এদিকে নিয়ে আসছে।
সাদনান অবাক হলো সারা আর প্রিয়তা কে এখানে দেখে।ও তো রাহাত কে বলে এসছিল যেনো ওরা কলেজে না আসে আজ।তার কারণ সমাবেশ টা কলেজ থেকে মিনিট পাঁচ দূরে একটা মাঠে বসেছে।তবেই কি রাহাত ওদের নিষেধ করে নি?

-“রাহাত ভাই ফোন দিয়ে বলল,ও ভুলে গিয়েছিল।”

-“কেয়ারলেস একটা।”

রাহানের কথা শুনে সাদনান বিরবির করে বলে উঠলো।
তবে হঠাৎ সাদনান এর দৃষ্টি বউয়ের পায়ে দিকে গেলো সাদা পায়জামা টা বাম পায়ের গোড়ালির বেশ অনেক টা অংশ লাল হয়ে আছে।
সাদনান এর বুকের ভেতর ধক করে উঠলো।
অস্থির হয়ে কিছু জিগ্যেস করার পূবেই সারা আশ্বাস দিয়ে জানালো

-“যখন গণ্ডগোল বাঁধাল তখন আমরা নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য একটা গাছের পাশে যাচ্ছিলাম তখন ওর পায়ে কিছু একটা পেছন হতে গেঁথে গিয়েছে।
রাহান ভাই বেড় করে দিয়েছে।”

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে