#আমার_তুমি
#পর্ব_৯ [অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা
সাদনান বাইকে বসে প্রিয়তা কে ইশারায় বসতে বলে।
প্রিয়তা সাদনানের দিকে তাকিয়ে সাবধানে উঠে বসে।
বেশ দূরত্ব রেখেই বসে নিজের ছোট নরম তুলতুলে হাত টা সাদনানের কাঁধে রাখে।
সাদনান তৎক্ষনাৎ চোখ বন্ধ করে নিলো।
তাকে এই ছোট্ট হাতের মালিক অনেক জ্বালায়।
বুকের বা পাশটায় কেমন কেমন করে।
আচ্ছা তার ছোট জান টারও কি এমন লাগে?
এই যে এখন হাত রেখে আছে তাই তার মন কেমন করছে।
এই মেয়েরও কি এমন লাগছে?
কিন্তু সাদনান একটা বিষয় লক্ষ করে প্রিয়তা ওর বাইকে উঠলে বেশ দূরত্ব আর শুধু কাঁধে হাত রেখে বসে।
আর আজ যেনো আরও গুটিয়ে আছে।
তবে মনের কথা মনে রেখে বাইক স্টার্ট দিতে দিতে রাশভারী কণ্ঠে বলে উঠে
-“শক্ত করে ধরে বসো।”
-“ধরেছি তো।”
সাদনান আর কিছু বলে না।
সন্ধ্যার পরিবেশ টা উপভোগ করতে থাকে।
যদিও এই রাস্তা টা চিরচেনা তবে আজ যেনো অচেনা মনে হচ্ছে।
চার দিকে তাকিয়ে সব নতুন মনে হচ্ছে। হয়তো ভালোবাসার মানুষ টা পাশে আছে তাই।সাদনান নিজেও ধীরে গতিতে বাইক চালাচ্ছে।
আর একটু পর পর আয়নার মাঝে নিজের প্রেয়সীর দিকে তাকাচ্ছে, হাল্কা অন্ধকারে মাঝে। বেশ লাগছে। প্রিয়তা জর্জেট এর ওড়না টা ভালো করে মাথায় পেচিয়ে রেখেছে।
ছোট মুখ টা আরও ছোট মোহনীয় লাগছে। সাদনানের মনে হচ্ছে সে এই ভাবেই তার প্রেয়সী কে দেখে যাক আর রাস্তা টাও শেষ না হোক।
সাদনানের বেশ করে একটা গান মনে গুরুপাক খেলো “এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো?”
কিন্তু সে টা তো আর হওয়ার নয়।
সত্যি ভালোবাসার মানুষ পাশে থাকলে সব কিছু ভালো লাগে।
প্রায় পাঁচ মিনিট এর মাথায় সাদনানের বাইক টা এসে সওদাগর বাড়ির সামনে দাঁড়াল।
প্রিয়তা তৎক্ষনাৎ বাইক থেকে নেমে দাঁড়ায়।
সাদনান সে দিকে তাকিয়ে বলে উঠে
-“তৈরি থেকো।
খুব শীগগির নিতে আসবো।”
কথা টা বলে আর সেকেন্ডও অপেক্ষা করে না সাদনান বাইক নিয়ে চলে যায়।
ছোট প্রিয়তার মাথায় ঢুকে নি সাদনান ভাই কিসের কথা বলে গেলো?
—————-
-“আপনি এখন কি চাইছেন?”
-“আমার প্রস্তাবে একসেপ্ট করে নাও।”
-“আচ্ছা।
তবে তাই হোক।
কিন্তু আপনি এটা ভাববেন না আমি আপনার কথায় রাজি হয়েছি।
আমি আমার প্রতি টা গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এটা মেনে নিয়েছি।”
-“বোকা নই আমি।
আমি জানতাম তুমি জায়গায় শক্ত করে নিতে এতো দিন এমন টা করেছো।
কিন্তু তুমি চিন্তা করো না আমি তোমার যথাযথ মর্যাদায় তোমাকে শক্ত করে খুঁটি বানিয়ে দেবো।”
-“বুঝতে পেরেছেন তবে।”
-“সে টা আর বলতে।
তিন মাস পর ইলেকশন। প্রস্তুতি নিতে শুরু করো।
অবশ্য তোমার আর কিসের প্রস্তুতি সব তো তোমার কথায় আর বাকি টা আমি সামলে নেবো।”
সাদনান বাঁকা হাসে।
কে বলেছে সে রাজনৈতি করে না?
জেলার পুরো ছাত্র সংগঠন তার হাতের মুঠোয়।আর সাদনান কেমন মানুষ সে টা এখনো কেউ টেরই পায় নি।
উঁহু, পেয়েছে। ওয়াসিফ দেওয়ান তাই তো এতো টা অভিজ্ঞতার সাথে সে নিশ্চয়তা দিয়েছে মির্জা সাদনান শাহরিয়া জয় নিশ্চিত।
এবার শুধু সময়ের অপেক্ষা।
সাদনান ওয়াসিফ দেওয়ান এর থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে আসে তার অফিস থেকে।
অতঃপর বাইকে বসতে ফোন টা বেজে উঠে প্যান্ট এর পকেটে।
রাহান কল দিয়েছে।
সাদনান ভ্রু কুঁচকে ফোন টা রিসিভ করতেই ওপাশ হতে রাহান উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করে
-“দোস্ত কাজ হলো?”
-“একদম।
সাদনান যা বলে তাই করে।
আর সেটা পাকাপোক্ত ভাবে।”
-“জানি তো আমি।
আচ্ছা এখন চলে আয় দলের সব ছেলেরা অপেক্ষা করছে।
কয়েক দিন পর একটা সমাবেশ আছে।
সেটা নিয়ে আলোচনা করবি বলেছিলি।”
-“মনে আছে।
আসছি আমি।”
ফোন কেটে সাদনান বাইক স্টার্ট দিয়ে নিজের গন্তব্য পার্টি অফিসের দিকে ছুটে।
সে তার বাবা, দাদার থেকেও বড় নেতা।
এটা সে নিজে না মানলেও জনগণ খুব করে মানে।
————–
আজ মির্জা বাড়ি থেকে গায়ে হলুদ আর বিয়ের জন্য সব জিনিস সওদাগর বাড়ি আসবে।
আর সব ওই দিন তাদের নিজেদের পছন্দ করে আসা।
সওদাগর বাড়িতে আজ মির্জা বাড়ির সব মহিলার যাবে।কোনো পুরুষ যাবে না।
আজ সব দিয়ে আসবে। কাল গায়ে হলুদ মির্জা বাড়িতে হবে আর ছেলে মেয়ে দু’জনের এক সঙ্গে।
সাদনান ওর মা আর দাদির সাথে কথা বলে বিয়ের এক সেট সব বাড়িতেই রেখে যেতে বলেছে।
সে চায় না বিষয় টা জানা জানি হোক।
আর শফিক আর আয়ানও এ ব্যাপার এক মত পোষণ করেছে।
অগত্যা সালেহা বেগম ছেলের কথা মোতাবেক কাজ করে।
মির্জা বাড়ি একদম শুনশান নীরবতা।
লিভিং রুমে জাফর মির্জা সহ সাদনান, মফিজুর মির্জা, রাহাত,আজ্জম মির্জা সবাই বসে আছে।
কারোর মুখে কোনো কথা নেই।
তবে নীরবতা ভেঙে জাফর মির্জা বলে উঠে
-“রাজনীতি আমাদের রক্তে মিশে আছে।
সেখানে তোমার প্রথম আচরণে বেশ অবাক হয়েছি।
তবে ভাবতে পারি নি এতো টা এগিয়ে আছো।”
জাফর মির্জার কথায় সাদনান কিছু বলে না।
শুধু মুচকি হাসে।
আজ্জম মির্জা গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে
-“আমাদের ব্যবসার কি হবে।
সব টা সাদনান দেখে।”
-“তুমি চিন্তা করো না বাবা।
আমি সব দিক সামলে নেবো।”
সাদনান আজ্জম মির্জা কে আস্বস্ত করে বলে উঠে।
-“ভাই আমিও কিন্তু সাথে আছি।”
মফিজুর মির্জা বলে।তিনি খুব সাদাসিধা মানুষ প্যাচ জিনিস টা বড্ড কম আর ভীষণ ভালো মানুষ।
-“একদম ছোট বাবাই।
আর ভাইয়া তো আছে।”
সাদনান একমত পোষণ করে।
এভাবেই তারা অনেক টা সময় বসে আড্ডা দেয়।
—————–
-“গাড়ি কিন্তু পাঠিয়ে দেওয়া হবে সকাল সকাল চলে আসবেন আপা।”
-“অবশ্যই আপা।”
সাদনানের মায়ের কথার বিনিময়ে মিতা সওদাগর মুচকি হেসে জবাব দেয়।
এরমধ্যে প্রিয়তা ট্রে হাতে নাস্তা নিয়ে আসে পেছন পেছন শিউলিও আসে।
-“তোকে কাজ করতে হবে না।
তুই যা সারা’র সাথে।”
সালেহা বেগম বলে উঠে।
প্রিয়তা মুচকি হাসে।
অতঃপর উপর আয়নার রুমে চলে আসে।
সারা আয়না বসে আছে।
মাইশা নেই ওর একটা ফোন এসছে।
বলেছে ফ্রেন্ড ফোন দিয়েছে।
এটা বলে সে ছাঁদে চলে এসছে।
-“কতক্ষণ ধরে ওয়েট করছি।
আর তুমি সেখানে বসে বসে আলাপ মারছিলে।”
মাইশা ছাঁদে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শক্ত দুই টা হাত ওকে আগলে নিয়ে কথা গুলো বলে উঠে।
মাইশা কেঁপে উঠল আয়ানের এমন অনাকাঙ্খিত স্পর্শে।
কেমন অস্বস্তি হচ্ছে।যদি কেউ দেখে ফেলে সেই ভয়ে।
সে সব ভেবেই মিনমিন করে বলে
-“ছাড়ুন।
কেউ আসলে কেলেঙ্কারির শেষ থাকবে না।”
-“কেউ আসবে না।”
কথা টা বলতে বলতে আয়ান মাইশার কাঁধ হতে ওড়না টা একটু সরিয়ে সেখানে ঠোঁট ছুঁয়ে দিল।
মাইশা চোখ বন্ধ করে নিয়ে আগের ন্যায় আবারও বলে
-“বাড়িতে নিয়ে এলেই তো হয়।”
-“আসবো।
খুব শীগগির নিয়ে আসবো সুইটহার্ট।”
-“আমার কেমন ভয় করে।”
-“কোনো কারণ নেই।
কারণ আমরা পাপ করছি না।”
-“তবুও।”
-“হুঁশ।
আছি না আমি।সব সামলে নেবো।
এখন একটু ভালোবাসা দিয়ে দাও।”
কথা শেষ আয়ান মাইশার ওষ্ঠ জোড়া দিয়ে নিজের ওষ্ঠ সাহায্য চেপে ধরে।
বেশ অনেক টা সময় পর আয়ান মাইশা কে ছেড়ে দিয়ে মাইশার দুই গালে হাত রাখে মাইশা তখনো চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে ব্যস্ত।
অতঃপর চোখ খোলে আয়ান কে এক ধাক্কায় সরিয়ে দিয়ে দৌড়ে নিচে চলে আসে।
আর আয়ান নিজের চুল খামচে ধরে নিজে নিজে হেসে ফেলে।
এদিকে মাইশা রুমে আসতেই সব গুলো মাইশার দিকে কেমন করে তাকালো শুধু সারা রাগে ফুঁসছে।
আয়না আর প্রিয়তা মুখ টিপে হাসছে।
প্রিয়তা হাসতে হাসতে বলেই ফেলে
-“ভাবি হওয়ার এতো শখ বলতে পারতে।”
-“তুমি আমাকেও একবার বলার প্রয়োজন মনে করো নি।”
প্রিয়তার কথা শেষ সারা বলে উঠে।
শুধু আয়না চুপ।
ও বরাবরই চুপ চাপ থাকে।
মাইশা ওদের ভাবসাব আর কথা শুনে বুঝতে পারলো।
সবাই সব দেখে পেলেছে।
আর একবার যখন দেখে ফেলেছে তখন ওদের সবটা বলে দেওয়াই উচিত বলে মনে করলো মাইশা।
তাই মুচকি হেসে ঘড়ঘড় করে সব বলে দিলো।
মাইশার কথা শুনে সবাই স্তব্ধ।
বিয়ে হয়ে গিয়েছে আর ওরা কেউ সেটা বুঝতেও পারলো না।
বিশেষ করে সারার নিজে কে বড্ড বোকা মনে হলো কারণ ও মাইশার সাথে এতো ক্লোজ হয়ে এতো বড় একটা বিষয় এতো মাস ধরেও টের পায় নি তাই।
অবশ্য কার মনের ভেতর কে ঢোকে বসে থাকে।
আর কার মনে কি চলে সেটা যদি বোঝাই যেতো তবে হয়তো সবচেয়ে বেশি সুবিধা হতো আবার বিরক্তিকরও হতো।
————-
-“আপনি জানেন মাইশা আপুর আর আমার ভাইয়া বিয়ে করে নিয়েছে, সাদনান ভাই?”
-“তো? ”
-“মানে আপনি অবাক হন নি?”
-“অবাক হওয়ার কি আছে।
আমি তো জানি।”
-“আল্লাহ, কি?
আপনি আমাকে বললেন না কেন?”
-“তোমাকে বলতে যাব কেন?”
-“ঠিক।”
কথা টা বলেই প্রিয়তা ফোন টা কেটে দেয়।
সাদনান ফোন টা সামনে এনে ধরে ভেবাচেকা খেয়ে গেলো।
এই মেয়ে ফোন কেন কেটে দিলো?
পরক্ষণেই সাদনান ব্যাপার টা বুঝতে পেরে হেসে ফেলে। ফোন টা সোফায় ছুঁড়ে ফেলে বিছানায় ধপ করে শুয়ে উন্মুক্ত বুকে হাত বুলাতে বুলাতে বিরবির করে বলে উঠে
-“বড্ড খালি খালি লাগে।
কবে এখানে তুমি মাথা রেখে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরবে, আমার ছোট জান?”
#চলবে……