#আমার_তুমি
#পর্ব_৮
#জান্নাত_সুলতানা
আজ সওদাগর বাড়ি সবাই মির্জা বাড়ির যাবে।কারণ মির্জা বাড়িতে বিয়ের জন্য সব শাড়ী, গহনা আনা হয়েছে এখন গিয়ে তারা পছন্দ করে যা যা লাগবে তা রেখে দেবে।
মির্জা বাড়ি থেকে গাড়ি পাঠিয়েছে জাফর মির্জা যদিও প্রিয়তাদের একটা গাড়ি আছে। কিন্তু এটা নাকি তাদের নিয়ম বাড়ির বউয়ের যাবতীয় সব বরের বাড়ি থেকে দিতে হয়।
প্রিয়তা আয়ানের পাশে বসে আছে। আয়ান ড্রাইভ করছে। আয়না আর মিতা সওদাগর পেছনে বসে আছে। কারোর মুখে কোনো কথা নেই। শফিক সওদাগর আসে নি তিনি হোটেল থেকে পরে এসে এখানে পৌঁছাবে।
আজ দুই দিন হয় প্রিয়তার জ্বর ভালো হয়েছে।
তিন দিন জ্বর ছিল মেয়েটার।
আজ সকালে আয়না কিছু কথা শোনে প্রিয়তা স্তব্ধ। যদিও এর মাঝে প্রতি দিন রাতে সাদনানের সাথে তার ছোট বাটন ফোন টা দিয়ে কথা হয়েছে সজ্ঞানে কিন্তু সে দিন সে জ্বরের তাড়নায় কি বলেছে সে নিজেও জানে না। কিন্তু আয়নার কাছে আজ কিছু কথা শোনে নিজে কে নিজে ইচ্ছে মতো বকেছে কি দরকার ছিল এতো টা বেহায়া পানার পরিচয় দেওয়ার।
নিশ্চয়ই এখন সাদনান ভাই তাকে আরও বেশি ছেঁচড়া বলবে?
পরক্ষণেই ভাবে যদি বলার হতো তো ফোনেই নিশ্চয়ই বলতো।
যদিও তাদের মাঝে বেশি কথা হতো না।
কেমন আছো? জ্বর কমছে?ঔষধ খাওয়া?আর ঠিক মতো খাবার ব্যস এটুকুই।
প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই গাড়ি এসে মির্জা বাড়ির সামনে থামে।
এই বাড়ি টা এলাকার সব গুলো বাড়ি থেকে বড় এবং ভিন্ন।
দেখতেও সুন্দর সাদা রং করা পুরো বাড়ি টা।
রাস্তার সাথে হওয়াতে প্রথমে ইয়া বড় গেইট সেটায় দুইজন দারোয়ান থাকে।
তার পর সুন্দর করে রাস্তা বাড়ির ভিতরে যাওয়ার জন্য আর তার এক পাশে সুন্দর একটা বাগান আছে আর অন্য পাশে গাড়ি রাখার জন্য গ্যারেজ।
আয়ান সবাইকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি টা রাখতে চলে যায়।
তাদের আসার খবর পেয়ে মির্জা বাড়ির সবাই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে তাদের এগিয়ে নিতে।
সবাই কুশল বিনিময় করে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে।
সাদনান নেই এখানে।
প্রিয়তা চোরা চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে সাদনান কে দেখতে পায় না।
তাই সবার সাথে বসে মার্কেট থেকে নিয়ে আসা শপিং গুলো সবার সাথে দেখতে লাগলো।আয়ান মাইশার কয়েক বার চোখে চোখে ইশারায় কথাও সেরে নিয়েছে। আর আয়না লজ্জায় রংধনু হচ্ছে। রাহাতের সাথে তেমন একটা কথা হতো না কখনো। আর আম্বিয়া মির্জা ওকে এক দিন এই বাড়িতে দেখেই পছন্দ করেছে।আর হঠাৎ এত সব হওয়াতে যেমন লজ্জা তেমন অস্থিরতা কাজ করছে।এসব ভাবতে ভাবতে আয়না সবার প্রশ্নের টুকটাক জবাব দিচ্ছে।
বউয়ের সব কিছু দুই সেট করে রাখা হচ্ছে।
মিতা সওদাগর এটা নিয়ে অমত করলেও পরে তেমন পাত্তা দেয় নি।
তিনি ভাবছে এটা হয়তো কোনো নিয়ম টিয়ম হবে।
এসব ভেবে আর তিনি চিন্তিত হলেন না।
খুশি মনে মেয়ের শরীরে এটা সেটা ফেলে দেখে নিচ্ছে।
সব দেখা শেষ সবাই আরও একদফা আলোচনা করতে বসে গেলো বড়’রা তাই সারা, মাইশা, আয়না আর প্রিয়তা কে নিয়ে বাড়ির বাহিরে চলে আসে।
রাহাত আয়ান বাড়ি ভেতরেই রয় গেলো।
বাগানে সুন্দর একটা বসার জায়গাও আছে।
ওরা চার জন সেখানে বসে আড্ডা দিতে লাগলো।কিসের আর আড্ডা এক জন আরেক জন কে খুঁচা মেরে কথা বলছে।
বিশেষ করে আয়না কে সবাই বেশি করে জ্বালাচ্ছে।
শেষমেশ আয়না লজ্জা বাড়ির ভিতরে চলে গেলো পেছন পেছন মাইশাও চলে আসে।
সারা আর প্রিয়তা দু’জনেই হেঁসে তখন লুটোপুটি খাচ্ছে।
ঠিক তক্ষুনি সাদনান বাইক নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে।
পেছনে রাহানও আছে।
সাদনান সোজা গ্যারেজে চলে যায়।
আর রাহান ওর বাইক বাগানে রেখে সারা আর প্রিয়তার দিকে এগিয়ে আসে।
-“তা দুই সুন্দরী কি করা হচ্ছে এখানে?”
মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে রাহান।
সারা কিছু বলে না চুপ চাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
প্রিয়তা হাল্কা হেসে জবাব দেয়
-“এমনি এসছিলাম।
আপনারা এই অসময়ে বাড়িতে?”
-“বন্ধুর বিয়ে কত কাজ যখন তখন যেখানে সেখানে যেতে হয়।”
রাহানের কথায় প্রিয়তা ভাবে রাহাত ভাইয়ের কথা বলছে হয়তো।
আর সারা উশখুশ করছে।
রাহান ভাইয়া না আবার মুখ ফসকে কিছু বলে ফেলে।
-“তা আর নয় দিন পর তো বোনের বিয়ে।
তার পর কিন্তু তোমাদের টেস্ট পরীক্ষা।
মনে আছে?”
-“হ্যাঁ ভাই আর সাতাইশ দিন পর।”
রাহানের প্রশ্নের জবাব উত্তর দেয় সারা।
এর মধ্যে সাদনানও এদিকে আসে।
প্রিয়তা সে দিকে মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকে।
মারাত্মক সুন্দর লাগে তার সাদনান ভাই কে সাদা সার্ট -এ।
আচ্ছা ওনি সব সময় সাদা কেন পড়ে?
ওনি কি জানে ওনাকে সাদা রঙে কত টা সুন্দর লাগে।
তবে সবচে বড় কথা হলো আমি যেভাবে ওনাকে দেখি আমার কাছে ওনাকে যতটা সুন্দর লাগে সব মেয়ের কাছেও কি তাই?
প্রিয়তার ছোট মন টা বড্ড খারাপ হয় নিজের মনে কথা গুলো ভেবেই।
প্রিয়তা এতোক্ষণ খেয়ালই করে নি ওর সামনে এসে সাদনান কখন দাঁড়িয়েছে।
আর সারা, রাহান ভাই বা কখন চলে গেলো?
প্রিয়তা এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে কাউ কেই চার পাশে দেখতে পেলো না।
তখনও সাদনান ওর দিকে তাকিয়ে আছে ভ্রু কুঁচকে।
যা দেখে আরও এক দফা লজ্জা পেলো প্রিয়তা নিজ মনেই ভাবলো ইস সকালের কথা গুলো বোধহয় না শুনলেই ভালো হতো।
এখন তো নিজেরই কেমন লাগছে।
-“আমাকে দেখা শেষ?”
সাদনানের প্রশ্নে চমকে উঠে প্রিয়তা।
আসলেও আবার কখন যে সাদনানের দিকে তাকিয়ে ফেলেছে নিজেই বুঝতে পারে নি।
সাদনান দেখছে তার ছোট জান টাকে।
এই পাঁচ দিনে শরীর টা অনেক শুকিয়েছে।সাথে চোখের নিচে কালিও পড়েছে।
কিন্তু তাতে যেনো আর মোহনীয় লাগছে তার ছোট জান কে।
আচ্ছা ও এতো লেইট করে কেন পৃথিবীতে এসছে?
আরো চার পাঁচ বছর আগে এলে কি হতো।
এখন নিশ্চয়ই ওর সাথে প্রিয়তার বিয়ে হলে তখন লোকে তাকে বলবে “সুগার ড্যাডি”সাথে বিয়ে হয়েছে কচি মেয়ের।
সাদনান কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রিয়তা নিজের মাথা টা আরও একটু নুইয়ে নিলো।
অতঃপর মিনমিন করে বলে উঠে
-” আপনি এসছেন কেন আমার সামনে?”
-“বাড়ি টা আমার।”
-“চোখ টাও আমার।”
সাদনানের কথার বিপরীতে কথা টা অনেক সাহস সঞ্চয় করে বলেই এক দৌড়ে বাড়ি ভেতর চলে গেলো প্রিয়তা।
সাদনান ভেবাচেকা খেয়ে গেলো। বিষয় টা বুঝতে ওর সেকেন্ড খানিক সময় লাগলো।
যখন বুঝতে পেরেছে ততক্ষণে প্রিয়তা পগার পার।
সাদনান মুচকি হাসলো।
সাদনান নিজে পরিহিত
কালো প্যান্ট এর পকেটে দুই হাত রেখে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বিরবির করে বলে উঠে
-“আর বেশি দিন না।
তোমাকে খুব শীগগির সাদনান তার নিজের ভালোবাসার খাঁচা বন্দী করে নেবে মিস প্রিয়তা।
অনেক জ্বালিয়েছো আমায়।
ভালোবাসা শর্তেও কখনো বলতে পারি নি ভালোবাসি।
তখনো না যখন তুমি নিজে আমাকে ভালোবাসো বলতে।
ইউ নো হোয়াট? ভালোবাসার মানুষটার মুখে ভালোবাসি শব্দ টা শুনতে কত টা ভালো লাগা কাজ করে, আর কতো টা লাকী হলে সেটা সম্ভব?”
————-
-“ক্ষমা করবেন।
আমি এই প্রস্তাবে রাজি নই।”
-“ঠিক আছে আপনি চিন্তা করবেন না।
আমি আরেক বার চেষ্টা করে দেখবো।”
-“না,না তার প্রয়োজন নেই।
আপনি বরং আপনার নাতি আর জনগণের ভরসার, আস্থার হবু এমপি মহোদয় কে আমার সাথে একবার দেখা করতে বলবেন।”
-“আচ্ছা।
আজ তবে উঠি।
বুঝতেই পারছেন বড় নাতির বিয়ে।”
-“হ্যাঁ, হ্যাঁ।
আমি কিন্তু আসছি।”
-“অবশ্যই।”
জাফর মির্জা লম্বা চওড়া হেসে বলে বলে উঠে।
অতঃপর ওয়াসিফ দেওয়ান এর বাড়ি হতে বেরিয়ে আসে।
ওয়াসিফ দেওয়ান এখন বর্তমান অবস্থানরত এমপির বিরোধী দলের হয়ে তিনি সাদনান কে চায়।
সাদনান রাজি নয়।এটা বলতেই আজ জাফর মির্জা এসেছিল যে সাদনান রাজি নয় তিনি চাইলে আজ্জম মির্জা কে নমিনেশন পাইয়ে দিতে পারে। কিন্তু ওয়াসিফ দেওয়ান কিছুতেই রাজি নয়।
ওয়াসিফ দেওয়ান খুব ভালো মানুষ। তিনি জানে সাদনান কে যদি একবার এই পথে আনা যায় তবে জনগণের কোনো সমস্যা হবে।আর জনগণ তাকে চায়।জয় তার নিশ্চিত।
আর তিনি এটাও নিশ্চিত সাদনান কে একবার যদি রাজি করানো যায় তবে তিনি এবার নিশ্চিন্তে তার পদত্যাগ করবে আর সামনে ইলেকশন সাদনান কে মন্ত্রী পদে দেবে।
———–
দুপুর সবাই মির্জা বাড়ি থেকে খাবার খেয়ে তার পর বিকেলে চলে যায় শুধু প্রিয়তা কে সারা যেতে দেয় নি।
ও বায়না ধরেছে প্রিয়তা কে থাকতে হবে।
মিতা সওদাগর কিছুতেই রাজি ছিল না।
শফিক কিছু বলে নি।
কিন্তু আয়ান বলেছে সে এসে সন্ধ্যা নিয়ে যাবে।
যদিও মিতা সওদাগর রাজি ছিল না।
কিন্তু ছেলের কথায় আর কিছু টা নিমরাজি হয়ে রেখে গিয়েছে প্রিয়তা কে।
এখন সারা,প্রিয়তা,মাইশা বসে আছে ছাঁদে।
এখানে থেকে বাড়ির গেইট একদম পরিস্কার দেখা যাচ্ছে।
ওরা গল্প করছে বসে।
ঠিক তক্ষুনি সাদনান গেইট দিয়ে বাড়ির ভিতরে বাইকে নিয়ে প্রবেশ করে।
প্রিয়তা সে দিকে এক ধ্যান এ তাকিয়ে আছে।
সাদনান একবার তাকিয়েছে ছাঁদে।
আর প্রিয়তা তৎক্ষনাৎ চোখ সরিয়ে নিলো।
সেই সকালের পর আর কথা হয় নি।
কয়েক বার লিভিং রুমে চোখাচোখি হয়েছে মাত্র।
আর এখন সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচ টা বাজে।
প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই সারা মাইশা তাগাদা দিয়ে নিজে চলে আসে কারণ সন্ধ্যা হলে ছাঁদে থাকা নিষেধ আর এই হুকুম জারি করেছে আম্বিয়া মির্জা।
তিনি আগের দিনের মানুষ বেশ নিয়ম কানুন আর কিছু ভূত-প্রেত বিশ্বাস করে।
নিচে আসার পর জানা গেলো আয়ান আসতে পারবে না ওর হোটেলে কাজ পড়ে গিয়েছে। আর তাই রাহাত কে দিয়ে আসতে বলেছে।
কিন্তু রাহাত যেতে পারবে না বলেছে তার শরীর ভালো লাগছে না বাহানা দিয়ে দিয়েছে। আসলেই কি ভালো লাগছে না?
তাই আম্বিয়া মির্জা সাদনান কে সেই দায়িত্ব দিয়েছে। যদিও তিনি বেশ ভয়ে আছে কখন আবার তার স্বামী কি বলে বসে।
সে তো আর তার মতামত জানায় নি এখনো।
তার ভাবনার মাঝেই প্রিয়তা ওনার কাছ হতে বলে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সাদনানের পেছন পেছন বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলো।
#চলবে…..