#আপনিময় বিরহ (১৫)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
________________
প্রিয়তা আর প্রিয়মের দিনগুলো ভালোই কাটছে। চুটিয়ে প্রেম করছে দুজনে। সাইমা সাদাফের পেছনে পড়ে আছে। অনিমা একটা পার্ট টাইম জব করছে। শিশিরের অবস্থা আগের থেকে খারাপ। শুকিয়ে গেছে, কালো হয়ে গেছে, সবসময় নিজেকে ঘরবন্দী করে রাখে। দুইটা মেয়ের জীবন নষ্ট করার অপরাধে ভেতর থেকে ভেঙে পড়েছে।। শিলা বেগম ছেলের এই দশার জন্য নিজেকে দায়ী মনে করেন। প্রিয়তা এখনো জানে না অনিমা যে শিশিরকে ছেড়ে চলে গেছে। তনিমা ব্যালকনিতে বসে নিজের মায়ের সাথে ফিসফিস করে কথা বলতেছিলো। তখনই আসে প্রিয়তা। প্রিয়তাকে দেখে কল কেটে দেয় তনিমা। প্রিয়তা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
‘কার সাথে কথা বলছিলি? আমাকে দেখে কেটে দিলি কেন?’
তনিমা হাসার চেষ্টা করে বলে, ‘আ-আরে তেমন কিছু না।’
‘তুই ভালো করেই জানিস তুই মিথ্যা কথা বলতে পারিস না। তাহলে বলছিস কেন?’
তনিমা মাথা নিচু করে বলে, ‘বাড়িতে কথা বলতেছিলাম।’
‘তো এতে এমন করে বলার কি আছে?’
‘আসলে..অনু আপু নাকি শিশির ভাইকে ছেড়ে চলে গেছে অনেকদিন আগে। ওর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না৷ হাজার হলেও আমার বোন তো তাই খোঁজ নিচ্ছিলাম। তুই কষ্ট পাবি ভে…
তনিমাকে কথা শেষ না করতে দিয়েই ব্যস্ত কন্ঠে প্রিয়তা বলে, ‘কি বলছিস এসব? অনু আপুর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না মানে! আর তুই আমাকে এতদিনে এসব বলছিস!’
তনিমা অবাক চোখে তাকায়। যে মেয়েটা ওর স্বপ্ন, ভালোবাসা সব ভেঙে গুড়িয়ে দিলো সে মেয়েটার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে তার জন্য এতো আকুলতা! প্রিয়তা ব্যালকনি ছেড়ে চলে আসতে নিলে হাত ধরে আটকায় তনিমা। বলে,
‘তুই বড় আব্বু, বড় আম্মুকে এসব বলিস না। আমি কাল বাড়ি যাবো। দেখি শিশির ভাইয়ের সাথে কথা বলে!’
প্রিয়তা দমে যায়। শিশিরের কথা শুনেই মনে পড়ে যায় অতীত। প্রথম প্রেম তো একটু কষ্ট হবেই। প্রিয়তা নিজেকে সামলে বলে, ‘আব্বু- আম্মুকে কেন বলবো না?’
‘উনারা টেনশন করবে। আর অনু আপু তো নিজ ইচ্ছায় চলে গেছে তাই ওকে নিয়ে এতো টেনশন না করায় ভালো৷’
প্রিয়তা আর কিছু বলে না। চুপচাপ নিজের রুমে চলে আসে। চুপচাপ কিছুক্ষণ নিজের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকে। ভীষণ কান্না পায় তার। চোখ উপচে যখনই পানি পড়বে তখন হাতে কারো স্পর্শ পায়। ঝাপসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে প্রিয়ম। প্রিয়মের থেকে চোখের জল লুকায় না। উল্টো প্রিয়মের প্রশস্ত বুকে মাথা রেখে হু হু করে কেঁদে দেয়। চমকে উঠে প্রিয়ম। ব্যস্ত গলায় বলে,
‘কি হয়ছে টুনটুনি? কাঁদছিস কেন?’
প্রিয়তা জবাব দেয় না। প্রিয়ম রেগে গিয়ে বলে, ‘কাঁদছিস কেন বলবি তো! কি হয়ছে তোর?’
প্রিয়তা নিজেকে সামলে ভাঙা গলায় বলে, ‘অনু আপু হারিয়ে গেছে।’
প্রিয়ম বুঝতে না পেরে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। বলে, ‘তোর অনু আপু কি বাচ্চা যে হারিয়ে যাবে! কি পাগলের প্রলাপ বকছিস?’
প্রিয়তা সবটা বলে। প্রিয়ম ইমোশন তো দুর হেঁসে কুটি কুটি। প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে তাকায়। প্রিয়ম কোনোরকমে হাসি থামিয়ে বলে, ‘তুই এই কারণে কাঁদছিস? সিরিয়াসলি! কিরে বইন তোর কি চোখের পানি বেশি? আশ্চর্য! আরে এটা তো হওয়ারই ছিলো। অনু গেছে ভালো হয়ছে। এবার তোর শিশির ভাই আর শিলা আন্টি শিক্ষা পাবে।’
‘আপনার হাসি পাচ্ছে?’
‘হু পাচ্ছে।’
প্রিয়তা রাগী চোখে তাকায়। প্রিয়ম হেঁসে ফ্লোরে বসে পড়ে। প্রিয়তার চোখ মুখ থেকে রাগ সরে হুট করেই আতঙ্ক আসলো৷ জলদি প্রিয়মের সামনে বসে বলে, ‘আপনি এতো রাতে এখানে আসলেন কেমন করে? আব্বু-আম্মু দেখেনি?’
প্রিয়ম ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে, ‘হবু শ্বশুর-শাশুড়িকে না জানিয়ে তার মেয়ের কাছে আসলে উনারা আবার মাইন্ড করতে পারে। আমি আবার ভদ্র ছেলে।’
প্রিয়তা ভেংচি কেটে ব্যঙ্গ করে বলে, ‘হু ভদ্র ছেলে! ভদ্রর উড়োজাহাজ একদম।’
প্রিয়ম হাসে। দুজনে বসে থাকে অনেকক্ষণ। প্রিয়ম বার বার চোখের পাতা ঝাপটাচ্ছে দেখে বলে, ‘আপনি বার বার চোখ এমন করছেন কেন? কি হয়ছে? ঘুম পাচ্ছে নাকি মাথা ব্যাথা করছে?’
‘মাথাটা ব্যাথা করছে।’
‘মেডিসিন নিছেন? নাকি ওভাবেই দৌড়ে আসছেন!’
প্রিয়ম দুষ্টুমির হাসি হেঁসে বলে, ‘এই যে আমার মেডিসিন নিতে আসলাম। সবাই বলে গার্লফ্রেন্ড চু’মু দিলে সব অসুখ ভালো হয়ে যায়।’
প্রিয়তা প্রিয়মের থেকে ২ হাত সরে যায়। চোখ মুখ কুঁচকে বলে, ‘লুচু! যান এখান থেকে। আর ওইসব ন্যাকামো অন্য কারো কাছে করেন।’
‘তুই তো আমার একটা মাত্র গার্লফ্রেন্ড অন্য কেউ তো নাই। আচ্ছা যা বানাই নিবোনি।’
প্রিয়তা রাগী চোখে তাকায়। প্রিয়ম শব্দ করে হেঁসে দেয়।
পাশাপাশি রুম হওয়ায় উদয়ও তনিমার রুমে চলে এসেছে। তনিমাকে একা একা উদাস হয়ে বসে থাকতে দেখে বলে, ‘মন খারাপ নাকি তোর?’
তনিমা হাসার চেষ্টা করে বলে, ‘না তো।’
‘মিথ্যা বলছিস কেন? সত্যি করে বল।’
তনিমা মাথা নিচু করে বলে, ‘কাল বাড়ি যাবো।’
উদয় প্রথমে অবাক হলেও পরে মুচকি হাসে। তনিমাকে কাছে টেনে নিয়ে বলে, ‘এটুকু কারণে তোর মন খারাপ?’
তনিমা ঝাপসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ‘যদি আব্বু আম্মু আর আসতে না দেয়!’
‘আমি আছি না পাগলি! এতো কিসের টেনশন তোর? যাবি চিল মুডে দুদিন থাকবি পরে নিয়ে চলে আসবো।’
তনিমা আর কিছু বলে না। মন যে তার খারাপ ইঙ্গিত দিচ্ছে সেইটা বললেও তো বিশ্বাস করবে না।
______________
তনিমা আজ বাড়ি যাচ্ছে। মন কু ডাকছে। তবুও উদয়ের ভরসায় যাচ্ছে। উদয় তাকে আশ্বাস দিয়েছে কিছু হবে না। ঘুরে আসলে ভালো লাাগবে। প্রিয়তারও মন খারাপ। লাগেজ নিয়ে ট্রেনে উঠে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে উদয়ের দিকে। উদয়ের নিজেরও কষ্ট হচ্ছে তবুও কিছু করার নাই। তনিমা মনের আশ মিটিয়ে উদয়কে দেখে নেয়। ট্রেন ছাড়া না পর্যন্ত উদয়কে মন ভরে দেখে সে। ট্রেন ছাড়ার সাথে সাথে হুট করেই কেঁদে উঠে তনিমা। এ কান্নার কারণ অজানা। উদয়ও ঝাপসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেদিকে। প্রিয়ম এসে উদয়ের পিঠে চা’পড় মেরে বলে,
‘আরে শা’লাবাবু কান্না করিও না। তোমার হবু বউ মাত্র দুদিনের জন্য গেছে সারাজীবনের জন্য না।’
উদয় কিছু না বলে তাকিয়ে থাকে ট্রেন অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত। প্রিয়ম সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে, ‘পা’গল টেনশন করিস না। চল ভার্সিটির মুখ দেখে আসি।’
উদয়, প্রিয়ম, প্রিয়তা একসাথে ভার্সিটিতে আসে। প্রিয়তা নিজের ক্লাসে যায়। প্রিয়ম আর উদয় যায় তাদের আড্ডায়। সাদাফ, রিমা, নিতু, নোমান আর সামি বসে আছে। সাদাফ চুপচাপ। বাকি ৪ জন গল্প জুড়েছে। প্রিয়ম আর উদয়ও যোগ দেয় তাদের সাথে। প্রিয়ম সাদাফের পাাশে বসে। ধীর কন্ঠে বলে,
‘আমার প্রতি কি সত্যিই তোর এতো অবিশ্বাস?’
সাদাফ রহস্যের হাসি হাসে। তারপর বলে, ‘তোকে এখনো জে’লে দেয়নি এটাই অনেক। আর হ্যাঁ প্রেম করছিস ভালো করে কর। এরপর তো বিরহ নিয়ে থাকতে হবে।’
প্রিয়ম দীর্ঘশ্বাস নেয়। সাদাফ চুপচাপ এক পাশে বসে আছে। এমন সময় হাজির হয় প্রিয়তা আর সাইমা। ভ্রু কুঁচকে তাকায় সাদাফ আর প্রিয়ম। প্রিয়ম প্রিয়তাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘কিছু হয়ছে? তুই এখানে কেন?’
প্রিয়তা মিনমিন করে বলে, ‘সাইমা একটু সাদাফ ভাইয়ের সাথে কথা বলবে। তাই!’
প্রিয়ম কিছু না বলে প্রিয়তাকে সরিয়ে নিয়ে দুরে দাঁড়ায়। বাকি সবাইও দূরত্ব নেয়। সাইমা চোখের দৃষ্টি একবার এদিক তো একবাার ওদিক করছে। সাদাফ চোখ মুখ কুঁচকে বলে, ‘কি সমস্যা?’
সাইমা চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নিয়ে সোজাসাপ্টা বলে, ‘আই লাভ ইউ।’
সাদাফ ‘থ’। বলে কি! পা থেকে মাথা পুরোটা পর্যবেক্ষণ করে বলে, ‘সিরিয়াসলি!’
বলেই হু হা করে হাসতে থাাকে। সাইমা নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে থাকে সাদাফের হাসির দিকে। সাদাফ কিছুক্ষণ হেঁসে বলে, ‘বলা হয়ে গেলে আসতে পারো।’
সাইমা কি বলবে বুঝে পায় না। ভয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘আ-আমার আন্সার!’
‘তুমি কি গাা’ধা নাাকি অন্যকিছু! তোমাকে চলে যেতে বলেছি মাানে তোমাকে রিজেক্ট করেছি।’
সাইমা আর দাঁড়ায় না। উল্টো ঘুরে কোনোদিকে না তাকিয়ে ঝাপসা চোখে সরে আসে। প্রিয়তা জলদি সাইমার পিছু পিছু আসে। সাইমা কমন রুমে এসে ব্যাগ ছুড়ে ফেলে বসে পড়ে। তার ভীষণ রকম কান্না পাচ্ছে তবুও সে কাঁদবে না। হয়তো সাদাফ এখনো সামিরাকেই ভালোবাসে তাই জন্যই ওকে রিজেক্ট করলো। কিন্তু সেও হাল ছাড়বে না। নিজের ভালোবাসাটা সে নিবেই। প্রিয়তা চুপ করে এসে সাইমার পাশে বসে।
_______________
কফিশপে বসে আছে অনিমা আর তার কলিগ অয়ন। দুজনেই নিশ্চুপ। অয়নকে একটু আগে নিজের অতীতটাা জানিয়েছে সে। অয়ন তাতে নিশ্চুপ হয়ে গেছে। নিরবতা ভেঙে অনিমাই বললো,
‘আমি তবে আসি। আমার মেয়েটা অপেক্ষা করছে।’
অয়ন চোখ তুলে তাকায় তার দিকে। তারপর বলে, ‘হুম যান। তবে একটা কথা বলবো?’
‘জ্বি বলেন।’
‘আপনি ভুল না একটা অন্যায় করেছেন। কিন্তু আপনি তাতে অনুতপ্ত তাই আমার মনে হয় আপনার একটাবার প্রিয়তার সাথে কথা বলা উচিত।’
অনিমা কিছু বলে না। অয়ন ফের বলে, ‘আমরা সবাই স্বার্থপর। বিশেষ করে ভালোবাসার মানুষটার দিক দিয়ে। আমরা এক পাক্ষিক ভাালোবাসলেও তাকেই পেতে চাই। তাই সে মানুষটা আমাদের হতে চাইলে তখন আমরা সব থেকে বেশি স্বার্থপর হয়ে যায়। এটা আপনার ক্ষেত্রেও হয়েছে। ঝোকের বসে ভুল করে ফেলেছেন। মানুষ মাত্রই ভুল। আর যদি সে মানুষটা অনুতপ্ত হয় তাহলে তো ক্ষমা করে দেওয়া যায়। আমার মনে হয় প্রিয়তাও বুঝবে।’
অনিমা মলিন হাসে। বলে, ‘কোন মুখ নিয়ে দাঁড়াবো ওদের সামনে? তার থেকে ভালো ওরা ভালো থাকুক।’
অয়নকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বের হয়ে আসে অনিমা। সেদিকে তাকিয়ে থাকে অয়ন। প্রথম দেখাতেই ভালো লাগা মেয়েটির স্বার্থপরতা দেখে বুকে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হলো। তারও বুঝি আপনিময় বিরহ শুরু।
অনিমা ফুটপাত ধরে হাটতেছে আর জীবনের সব অতীত বর্তমানের হিসাব মিলাচ্ছে। সে ভালো ভাবেই বুঝে অয়ন তাকে পছন্দ করে। শুধু পছন্দ বললে হয়তো ভুল হবে। এর থেকেও বেশি কিছু আছে তা বোঝার অপেক্ষা রাখে না। তাই তো আজ সবটা বলে দিলো যাতে লোকটা তার থেকে দুরে থাকে। নানানটা চিন্তার মাঝেই বাড়ি চলে আসে। কলিং বেল বাজাতেই দদরজা খুলে দেয় তানিয়া৷ দ্রুত কন্ঠে বলে,
‘তোর মেয়েকে তুই সামলা বইন। আমার সব চুল ছি’ড়ে ফেলছে তোর জন্য।’
অনিমা হেঁসে বলে, ‘যাস কেন ওর সাথে লাগতে!’
তানিয়া জিহ্বায় কামড় দেয়। অনিমা ব্যাগ রেখে মেয়ের কাছে যায়। ৩ মাস হলো সে একটা বাচ্চা এডপ্ট করেছে। অন্তত একা জীবনের সঙ্গী হয়ে এই বাচ্চাটাই থাক। বাচ্চাটার বয়স মাত্র ১ বছর।
_____________
উদয় বার বার কল দিচ্ছে তনিমাকে কিন্তু তনিমা কিছুতেই রিসিভ করতেছে না। টেনশনে পুরো পাগল পাগল অবস্থা। দ্রুত সে ছুটে যায় প্রিয়তার কাছে। প্রিয়তা উদয়কে এমন উদ্ভ্রান্তের মতো দেখে ভয় পেয়ে যায়। বলে,
‘কি হয়ছে ভাইয়া? এমন করছিস কেন?’
‘দেখ না তনিমা কল তুলছে না। তুই একটু কল দে না ওরে।’
প্রিয়তা কোনোরকমে শান্ত করে উদয়কে। তারপর কল লাগায় তনিমার ফোনে। বেশ কয়েকবার কল যাওয়ার পর রিসিভ হয়। প্রিয়তা হ্যালো বলতেই বুঝতে পারে এটা অন্য কারো কন্ঠ। হন্তদন্ত হয়ে বলে,
‘কে আপনি? তনু কই?’
ওপাশ থেকে শান্ত গলায় বলে, ‘তনুকে তো আজ পাত্রপক্ষ দেখতে আসছে। আজই আকদ হওয়ার কথাা ছিলো। কিন্তু তনু আজ জার্নি করে আসার ফলে অনেকটাই ক্লান্ত। তাই আকদ কাল ঠিক হয়েছে।’
কথাটা শুনে দুই ভাই বোনই বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো৷ কি বলবে বুঝতে পাারলো না। কলটা কেটে দিয়ে আস্তে করে বসে পড়ে বিছানায়। উদয় কিছুক্ষণ চুপ থেকে কঠিন স্বরে বলে,
‘প্রিয়ু তুই বাবা মা কে সামলা আমি আর তনু আজ রাতেই পালাবো।’
চলবে..
#আপনিময়_বিরহ (১৬)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
_________________
উদয় আর তনিমা ভোর রাতের দিকে পালিয়ে এসেছে চট্টগ্রামে। সেখান থেকে সরাসরি কাজী অফিস। যদিও তারা জানে তনিমার বাবা মা চট্টগ্রামে আসবে তবুও তারা এখানেই আসছে। প্রিয়তা, প্রিয়ম, সামি, নোমান, রিনি সবাই এসেছে। তনিমার মন কিছুটা খারাপ হলেও সে উদয়কেই বেশি প্রায়োরিটি দিয়েছে। সে তাার বাবা মা কে উদয়ের কথা বলাতেই তারা আরো বিগড়ে গেছে। কিছুতেই তনিমা আর উদয়কে মানবে না। তনিমা অনিমার মতো ভুল করতে চায়নি। হয়তো পালিয়ে বিয়ে করা ভুল কিন্তু এটা ছাড়া কোনো উপায় নাই। হাসি ঠাট্টার মধ্যে দিয়েই বিয়ে হয়ে যায়। প্রিয়তা, প্রিয়ম দুজনকে নিয়ে বাড়ি আসে। আর বাকি সবাই চলে যায়। বাড়িতে এসে কলিং বেল বাজাতেই দরজা খুলে দেয় তাঁরা বেগম। মুখ তার থমথমে। বুঝায় যাচ্ছে ঘটনাটা তাদের কানে পৌঁছে গেছে। তাঁরা বেগম দরজা থেকে সরে লিভিং রুমের সোফায় বসলেন। সেখানে পলক সাহেবও বসা। তার মুখেও গম্ভীরতা স্পষ্ট। উদয় আর তনিমা মাথা নিচু করে তাদের সামনে দাঁড়াতেই পলক সাহেব বলেন,
‘তার মানে এসব সত্যি যে তোমরা পালিয়ে বিয়ে করে এসেছো?’
উদয় শান্ত গলায় বললো, ‘কাকা কাকি বাধ্য করছে এই কাজ করার জন্য।’
‘তনিমা তুমি তোমার বাবা-মায়ের সম্মানের কথা একবারও ভাবলে না?’
তনিমা পলক সাহেবের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বললো, ‘বাবা-মায়ের সম্মান! বড় আব্বু তারা তো একবারও ভাবেনি তাদের মেয়ে কি চাই! তারা শুধু দেখেছে পাত্রপক্ষের টাকা। মোটা অঙ্কের টাকা। আমাকে মিথ্যা বলে বাড়িতে নিয়ে গেছে যখন উদয় ভাইয়ের কথা বললাম তখন আমারে কষিয়ে থা’প্পড় দিয়েছে। কাদের সম্মানের কথা বলছো বড় আব্বু? যারা তোমাদেরই ছোট করেছে। আর আমি মনে করি আমি পালিয়ে এসে কোনো ভুল করিনি বড় আব্বু। উদয় ভাই আমার বেষ্ট চয়েস। আর তোমরা নিশ্চয় এমন কোনো শিক্ষা উদয় ভাইকে দাওনি যাতে সে আমাকে একসময় ছুড়ে ফেলবে! তাছাড়া আব্বু আম্মুর কথা শুনলে আপুর মতো আমার জীবনটাও নরক হয়ে যেতো। সংসার হতো না।’
পলক সাহেব আর তাঁরা বেগম অবাক চোখে তাকালেন। উদয় নিজেও অবাক হলো। প্রিয়ম আর প্রিয়তা স্বাভাবিক। প্রিয়তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য পলক সাহেবের কাছে এসে ফ্লোরে হাঁটু মুড়ে বসে বললো,
‘আব্বু-আম্মু যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন এদের জিজ্ঞাসাবাদ ছেড়ে বরণ করে ঘরে তোলো।’
পলক সাহেব প্রিয়তার মাথায় হাত বুলিয়ে হালকা হেঁসে বললেন, ‘বরণ করে ঘরে তোলো তাহলে।’
তাঁরা বেগম হাসলেন। সবাই খুশি। উদয় আর তনিমা বাহিরে দাঁড়ালো। তাঁরা বেগম বরণ করে ঘরে তুললেন। তারপর কিচেনে চলে গেলো৷ তাহেরা বেগম এসে হাজির। তনিমা লজ্জা রাঙা মুখ নিয়ে সোফায় বসে আছে। নিজের বোনের কাছে সব শুনে সে গম্ভীর একটা ভাব নিয়ে এগিয়ে আসলেন তনিমাদের দিকে। কেশে নিজের উপস্থিতি বুঝিয়ে গম্ভীর গলায় বললেন,
‘সবাই সরে বসো। আমি নতুন বউকে দেখবো।’
সবাই ভ্রু কুঁচকালো। প্রিয়ম কিছু বলতে যাবে তার আগেই তাহেরা বেগম ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলেন। সবাই খানিকটা সরে বসলো। তনিমার কাছে বসে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তনিমাকে দেখতে দেখতে হাজারটা সমস্যার কথা বললেন। প্রিয়ম, প্রিয়তা, উদয় সবাই ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করছে। তনিমার কাঁদো কাঁদো অবস্থা দেখে তাহেরা বেগম শব্দ করে হেঁসে দিলেন। তনিমা হা করে তাকালো মুখের দিকে। তাহেরা বেগম জড়িয়ে ধরে বললেন,
‘পাগলি মেয়ে। আমি তো দেখছিলাম কি করিস! তুই যা পাজি তাতে তো চটপট মুখের উপরই সব বলে দিস। আর আমি এতোগুলা কথা বললাম কিছুই বললি না!’
তনিমাসহ বাকি সবাই হাসে। তাঁরা বেগম সবার জন্য নাস্তা এনে বসতেই প্রিয়তা মায়ের কোল ঘেঁষে বসে। তাঁরা বেগম ভ্রু কুঁচকে বলেন, ‘ব্যাপার কি? কি চাই?’
প্রিয়তা দাঁত বের করে বলে, ‘বিয়ের অনুষ্ঠান। ওরা তো পালিয়ে বিয়ে করেছে কোনো মজাই করতে পারলাম না। ওহহহ আম্মুউউ প্লিজ বিয়েটা আবার বড় করে দাও না! কাকা কাকি কে মানাও আর না মানলে নাই।’
তাঁরা বেগম হেঁসে বলেন, ‘তোমার আব্বুকে বলো।’
‘তুমি বলো না গিয়ে। প্লিজ প্লিজ।’
তাঁরা বেগম হেঁসে সম্মতি দিয়ে রুমের দিকে যান। প্রিয়তারা বসে আড্ডা শুরু করে।
_____________
উদয় আর তনিমার মেহেন্দি থেকে শুরু করে রিসেপশন সব হবে। ৩ দিন পর থেকেই সব রকম অনুষ্ঠান শুরু হবে। তাই সবাই কাল থেকেই শপিং করতে যাবে। রাতের বেলায় ছাঁদে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে প্রিয়তা। সেসময় হাজির হয় প্রিয়ম। প্রিয়তা গভীর দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে। প্রিয়ম এগিয়ে এসে ফু দিয়ে চুল উড়িয়ে দেয়। প্রিয়তা আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়। প্রিয়ম দুষ্টুমির হাসি হেঁসে বলে, ‘উদয় আর তনিমার সাথে চল আমরাও বিয়ে করে নেয়।’
প্রিয়তা ভেংচি কেটে বলে, ‘জ্বি না। আমি আমার ভাইয়ের বিয়েতে প্রচুর মজা করবো। লুঙ্গি ডান্স দিবো। কিন্তু যদি ওদের সাথে বিয়ে করতে যায় তাহলে কোনো মজা পাবো না। আমরা পরে বিয়ে করবো।’
প্রিয়ম হেঁসে দেয় প্রিয়তার লজিকে। তারপর আঙুলে আঙুল রেখে বলে, ‘যথা আজ্ঞা মহারানী। আসেন এবার চাঁদ দেখি।’
প্রিয়তা হেঁসে প্রিয়মের সাথে বসে চাঁদ দেখতে। প্রিয়মের ঘাড়ে মাথা রেখে বলে, ‘ওদের ভালোবাসাটা তাহলে পূর্ণতা পেলো তাই না।’
‘হুম। উদয় তো বিয়ে করে উড়তেছে। আমি যে বউ কবে পাবো রে!’
প্রিয়তা হাসে। চোখ বন্ধ করে বলে, ‘শিশির ভাই আর অনু আপুকে অনেক ধন্যবাদ। ওরা যদি আমার সাথে বিশ্বাসঘা’তকতা না করতো তাহলে আপনার মতো একটা মানুষকে পেতাম না। এতো ভালোবাসা অনুভব করতে পারতাম না। আসলেও আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করেন।’
‘তুই যে নিজের অতীত না আঁকড়ে আমারে সুযোগ দিছিস এটাই অনেক। আমি তো ভাবছি টুনটুনি প্রেম করার আগেই আমারে ছ্যাকা দিবে।’
বলেই হাসতে থাকে। প্রিয়তা ভেংচি কাটে। দুজনে এটা ওটা নিয়ে হাসতে থাকে। সেসময় ছাঁদে আসে সিমি৷ দুজনকে এতো কাছে দেখে থমকে দাঁড়ায়। তারপর দুষ্টুমির হাসি হেঁসে পেছন থেকে কাশি দিয়ে বলে,
‘বাব্বাহ এখানে তো দেখি প্রেমের বন্যা বয়ে যাচ্ছে।’
প্রিয়তা হকচকিয়ে যায়। সরে আসে প্রিয়মের কাছ থেকে। প্রিয়ম ভ্রু কুঁচকে বলে, ‘আসার আর সময় পাইলি না শাঁক’চু’ন্নি!’
‘তোমরা প্রেম করবা আর আমি জ্বালাবো না তাই কখনো হয়!’
প্রিয়ম ভ্রু কুঁচকে বলে, ‘তুই যখন প্রেম করিস তখন আমি কিছু বলি! কাবাব মে হাড্ডি একটা। যা এন্তে।’
সিমি ভেংচি কেটে বলে, ‘তোমাদের মধ্যে আসতে আমার বয়েই গেছে। নিচে চলো। জলদি!’
প্রিয়তা এতক্ষণ একবার প্রিয়মের দিকে তো আরেকবার সিমির দিকে তাকাচ্ছিলো। সিমি প্রিয়তাকে চোখ মেরে বলে, ‘টাটা ভাবি।’
সিমি দৌড় দিয়ে যেতেই প্রিয়তা অবাক কন্ঠে বলে, ‘আমি তো ভাবছিলাম ‘ও’ আপনাকে ভালোবাসে এখন দেখি কাহিনি ভিন্ন।’
প্রিয়ম শব্দ করে হেঁসে প্রিয়তাকে নিয়ে নেমে আসে।
বেলা গড়িয়ে ১১ টা বেজে গেছে তাও মেয়ে পার্টির এখনো সাজগোজ শেষ হয়নি। তারা যে শপিং করতে যাচ্ছে নাকি বিয়ে করতে যাচ্ছে আল্লাহ মালুম! প্রিয়ম বিরক্তির দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে সিড়ির দিকে। সে সময় নেমে আসে প্রিয়তা আর সাইমা। প্রিয়ম ভ্রু কুঁচকে বলে,
‘শপিং করতে যাচ্ছিস নাকি বয়ফ্রেন্ডের সাথে ডেটিংএ যাচ্ছিস!’
প্রিয়তা চোখ মুখ কুঁচকে বলে, ‘ইয়াক ছিঃ। বয়েই গেছে আমার ডেটিংএ যেতে। অবশ্যই শপিংএ যাচ্ছি।’
‘তোদের লেইট মনে হয় না শপিং করতে যাচ্ছিস। তা আর মহারানী গুলো কই?’
সাইমা হেঁসে বলে, ‘তনিমাকে সিমি বসিয়ে রাখছে। নিচে নামতে দেয়নি। সিমি এখনো রেডি হচ্ছে, রিনি আপু, রিতু আপু, নিতু আপু সবাই একে অপরের চুল টেনে নষ্ট করছে আর ঠিক করছে। অনেক কষ্টে বের হয়ে আসছি।’
প্রিয়মের মাথায় হাত। এরা কি বাচ্চা হয়ে গেলো নাকি! উদয় হা হুতাশ করতে করতে বললো, ‘এরে বইনেরা অন্তত আমার বউটারে তো ছাড় তোরা।’
প্রিয়ম বলে, ‘তোর বউ শেষ ভাই।’
সাইমা আর প্রিয়তা শব্দ করে হেঁসে দেয়। সকাল সকালই সাইমা, রিনি, রিতু, নিতু সবাই চলে আসছে। ছেলেরা সবাই নিজেদের মতো শপিং মলে চলে আসবে। মেয়েরা একসাথে যাবে বলে প্রিয়তাদের বাড়ি চলে আসছে। কিন্তু এদের তো রেডি হয়তেই ১১ টা গড়িয়ে গেছে। সবাই আজ থেকেই এখানে থাকবে। রিতু আর নিতু ম্যারিড হওয়ায় ওদের একটু সমস্যা হলেও প্রিয়মেরা কথা বলে সব ম্যানেজ করেছে। ওদের হাজবেন্ডরাও চলে আসবে সন্ধ্যার পর। সবাই রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ে এক সাথে। পুরো শপিং মলে যে যার মতো শাড়ি, লেহেঙ্গা, গাউন চুজ করতেছে। উদয় তনিমার জন্য ম্যাচিং করে লেহেঙ্গা আর নিজের জন্য পাঞ্জাবী কিনে। প্রিয়ম আর প্রিয়তাও তাই। সিমি আর শায়ন নিজেদের মতো কিনে। শায়ন সিমির বয়ফ্রেন্ড+উডবি। রিতু, নিতু নিজদের আর হাজবেন্ডের জন্য ম্যাচিং কিনে। বাকি থাকে সাইমা, সামি, নোমান আর সাদাফ। সাদাফের এসবে ইন্টারেস্ট না থাকলেও সিঙ্গেল জনগনস একসাথে বললো,
‘কাপল গুলা তো ম্যাচিং ম্যাচিং কইরা সুন্দর কিনে ফেললি। আমরা সিঙ্গেল জাতি কি করমু? পুতুলের লগে ড্রেস মিলামু নাকি!’
সব মিলিয়ে শপিং করতে করতে সন্ধ্যা প্রায়। দুপুরে সবাই রেস্টুরেন্টে খেয়ে নিছে। সবাই একসাথে উদয়ের বাড়ি আসলেও সাদাফ বেকে বসে। আগে সব জায়গায় সাদাফ হাজির থাকলেও ইদানীং একা থাকে। বিশেষ করে সামিরার মৃত্যুর পর। প্রিয়ম শুধু চুপ করে সাদাফের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। উদয়ের জোড়াজুড়িতে সাদাফ আসে তাদের বাড়ি। ক্লান্ত থাকায় সবাই নিজেদের রুমে রেস্ট নিতে যায়। কাপল মানে রিতু আর তার হাজবেন্ড এক রুমে, নিতু আর তার হাজবেন্ড এক রুমে। উদয়, প্রিয়ম এক রুমে। সাদাফ, সামি আর নোমান এক রুমে। বেচারা উদয় বিয়ে করেও বউ রেখে আলাদা থাকতে হবে জেনে সে কি হায় হুতাশ তার। এই নিয়ে এক দফা হাসাহাসি শেষ। তনিমা, প্রিয়তা, সাইমা, এক রুমে। সিমি আর রিনি এক রুমে। যে যার মতো রেস্ট নিচ্ছে। সাদাফ ছাদে দাঁড়িয়ে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াতে ব্যস্ত। সে সময় চুপিচুপি হাজির হয় সাইমা৷ গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে আসে সাদাফের দিকে৷ সাদাফ সাইমার উপস্থিতি টের পেয়ে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকাায়। সাইমা সে দৃষ্টি উপেক্ষা করে পাশাপাশি দাঁড়ায়। লোকটাা কবে বুঝবে তার প্রতি এই মেয়েটার আকাশ সমান ভালোবাসা জমানো! সাদাফ সিগারেট শেষ করে ছাদ থেকে নাামতে নিলে পেছন থেকে ডাকে সাইমা৷ সাদাফ পেছন ফিরে তাকিয়ে বলে,
‘কিছু বলবে?’
সাইমা হাঁসফাঁস করে এগিয়ে এসে ভীষণ অসহায় ভাবে বলে, ‘আমাকে একটু ভালোবাসবেন সাদাফ ভাই?’
সাদাফ শাান্ত দৃষ্টিতে তাকায়। তারপর উত্তর না দিয়ে ঘুরে চলে আসে। সাইমার চোখ থেকে টুপ করে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। তার এই আপনিময় বিরহ কবে কাটবে! কবে সেও একটু ভালোবাসা পাবে!
______________
অনিমা সাফাকে খাইয়ে দিচ্ছে আর গল্প শুনাচ্ছে। সাফাও ভদ্র বাচ্চার মতো মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে গল্প শুনে যাচ্ছে। সাফা পুরো খাওয়া শেষ করার আগেই হাজির হয় তানিয়া। ব্যস্ত কন্ঠে বলে, ‘কিরে অনু ২ দিন পর তো তনু আর উদয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান। জানিস নাা?’
অনিমা অবাক চোখে তাকায় তানিয়ার দিকে। বলে, ‘তুই কেমনে জানলি?’
তানিয়া মুচকি হেঁসে বলে, ‘খোজ থাকে আমার কাছে। তুই যাবি না বোনের বিয়েতে?’
অনিমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ‘আব্বু আম্মু ওদের বিয়েটা দিছে নাকি পালায়ছে?’
‘পালিয়ে করছে৷ তোর হিট’লার বাবা মা বিয়ে দিবে না উদয়ের সাথে তাই বাধ্য হয়ে পালিয়েছে।’
‘ভালো করছে। অন্তত আমার বোনটা নিজের ভালোবাসার সাথে সুখী থাকুক।’
সাফা আধো আধো বুলিতে নিজের মায়ের গাালে মুখে হাত দিয়ে বলে, ‘আম্মা আম্মা। বোওওওন।’
অনিমা হেঁসে দেয়। মেয়েকে কোলে নিয়ে ফোন অন করে তনিমার আর প্রিয়তার পিক বের করে বলে, ‘এই দেখো তোমার খালামনি মা।’
সাফা ফোন হাতে নিয়ে ‘উউউ’ শব্দ করে। তানিয়া ফ্রেশ হয়ে এসে বলে, ‘ যাবি?’
অনিমা জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে বলে, ‘নাহ। প্রিয়তার সামনে কোন মুখে যাবো বল! তার থেকে আমি দুর থেকেই ওদের জন্য দোয়া করবো।’
ওদের কথার মধ্যেই বেল বেজে উঠে৷ এসময় আবার কে আসলো ভেবে অনিমা নিজেই এগিয়ে যায়। দরজা খুলতেই দেখে অয়ন দাড়িয়ে আছে। অবাক চোখে তাকায় অনিমা। অয়ন তাদের বাড়িতে কিভাবে?
চলবে…