আপনার শুভ্রতা পর্ব-২২+২৩

0
73

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ২২

শরীর কাঁপিয়ে জ্বর এসেছে শুভ্রতার। রিজভীকে দিয়ে ঔষধ আনিয়েছে রাদিফ। শুভ্রতা জ্বরের ঘোরে বিরবিরাচ্ছিলো।

রাদিফ একটু সুপ তৈরি করে এনেছে ওর জন‍্য। এটা খাইয়ে দিয়ে ঔষধ খাইয়ে দিবে ওকে। রাদিফ সুপের বাটিটা বেড সাইড টেবিলে রেখে কান পাতলো শুভ্রতার মুখের কাছে। শুভ্রতা জড়ানো কন্ঠে বলছে
“আপনি আমাকে ধোকা দিলেন রাদিফ। আমি কতটা ভালোবেসেছিলাম আপনাকে। আর আপনি আমাকে ভালোই বাসেন না।”

রাদিফ কপাল কুচকে এলো। শুভ্রতা এগুলো কি বলছে! সে ধোকা দিয়েছে! কখন মনে পড়ছেনা তো তার।”

রাদিফ সেসব একসাইডে রেখে সুপের বাটিটা নিয়ে শুভ্রতাকে কিছুটা খাইয়ে দিয়ে ঔষধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো।

১৮.
সকালের রোদের ঝিলিক চোখে আসতেই ঘুম ভেঙে গেল শুভ্রতার। শরীরটা বেশ দূর্বল লাগছে তার। শুভ্রতা নিজের হাতের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল রাদিফ মেঝেতে বসে আছে শুভ্রতার হাত ধরে। শুভ্রতা আগের দিনের কথা মনে করেই ধীরপায়ে রুম ত‍্যাগ করলো রাদিফকে না ডেকেই।

রাদিফের ঘুম ভাঙতেই শুভ্রতাকে বেডে না পেয়ে শুভ্রতাকে ডাকতে লাগল। শুভ্রতার সারা না পেয়ে ওয়াশরুম চেক করলো না এখানে তো নেই। রাদিফ বড় বড় পা ফেলে রান্নাঘরে গেল। শুভ্রতা ওখানেই ছিলো। চা বানাচ্ছিলো। রাদিফ নরম গলায় বলে উঠলো
“তুমি আসতে গেলে কেন! আমাকে বললেই আমি বানিয়ে দিতাম।”

শুভ্রতা কোনো কথা বলল না। রাদিফের ভ্রুযুগল কুচকে এলো শুভ্রতার এমন ব‍্যবহারে। রাদিফ শুভ্রতার কাছ ঘেঁষে বলল
“কি হয়েছে কথা বলছো না কেন!”

শুভ্রতা সরে যেতে নিলো তখনই রাদিফ ওর হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে নিজের বুকে এনে ফেলল। গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো
“মায়াবতী পারলে একবারের মেরে ফেল আমায় তবুও এমন করে কথা বন্ধ করে কষ্ট দিও না আমায়।”

শুভ্রতা হুট করেই রাদিফকে জড়িয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। রাদিফ বেশ অবাক হলো শুভ্রতার কাজে। রাদিফ নিজেকে সামলে শুভ্রতার মুখটা নিজের সামনে এনে আলতো হাতে চোখের ‍পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল
“কি হয়েছে বলো আমায়। না বললে বুঝবো কিভাবে?”

শুভ্রতা চুলা বন্ধ করে রুমের দিকে পা বাড়ায়। রাদিফও ওর পিছু পিছু যায়।

শুভ্রতা কার্বাট থেকে খামটা বের করে রাদিফের দিকে দেয়। রাদিফ খামটা দেখে একদমই থমকায়নি। খামটা থেকে ছবিগুলো বের করে রাদিফ টুকরোটুকরো করে ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিলো। শুভ্রতা শুধু দেখছে কিন্তু কিছু বলছে না।

রাদিফ শুভ্রতার দুবাহু ধরে বেডে বসিয়ে নিজে হাঁটু গেড়ে মেঝেতে বসলো। শুভ্রতা দুহাত নিজের দুহাতে আবদ্ধ করে বলল
“ওর সঙ্গে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। নিধি বরাবরই গায়ে পড়া ছিলো। আমি যখন অর্নাস প্রথম বর্ষে পড়ি তখন নিধি আমার সঙ্গে রিলেশন করতে চায়। তখন আমি এগুলো এত গুরুত্ব দেইনি। তখনকারই কিছু ছবি। মেনে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু নিধির সঙ্গে একাধিক ছেলের। সে যাইহোক এটা তেমন বড় বিষয় আমি মনে করিনি। কারণ তুমি আমার প্রথম অনুভূতি। আমার প্রথম ভালোবাসা। নিধিকে আমি কাজিন সিস্টার ছাড়া কিছুই ভাবিনি।”

শুভ্রতা নাক ফুলিয়ে বলল
“তাহলে ছবিগুলো ছিলো কেন ওখানে!”

রাদিফ শুভ্রতার গালে হাত ছোঁয়ালো। অপরাধী কন্ঠে বলল
“সরি আসলে আমার মনে ছিলোনা যে ছবিগুলো ওখানে ছিলো।”

শুভ্রতা অন‍্যদিকে তাকিয়ে বলল
“ভুল করেছেন যখন শাস্তি পেতে হবে।”

রাদিফ মুখটা ছোট করে বলল
“তুমি যেই শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নিবো।”

শুভ্রতা মুচকি হেসে বলল
“আমাকে আরো বেশি বেশি ভালোবাসতে হবে। আর ভুলেও অন‍্য মেয়ের দিকে তাকাবেন না বলে দিলাম। আর আপনার
ওই নিধি না ফিধি ওর সঙ্গে যদি আপনাকে দেখেছি একবারও তাহলে আপনার খবর আছে।”

রাদিফ মুচকি হেসে ভ্রু নাচিয়ে বলল
“আমার মায়াবতী দেখছি জেলাস।”

শুভ্রতা রাদিফের গালে হাত রেখে বলল
“জেলাস না ভয় হয় আপনাকে হারানোর। ভালোবাসি যে অনেক আপনাকে।”

রাদিফ মুচকি হেসে শুভ্রতার হাতে হাত রেখে ছোট একটা চুমু বসিয়ে দিলো শুভ্রতার হাতে। ধীর কন্ঠে বলল
“মৃত‍্যুর আগ পযর্ন্ত এ অধম শুধু তোমার।”

শুভ্রতা মুচকি হাসলো।

১৯.
কেটে গেছে দুইমাস আজ নম্রতার জন্মদিন। সবাই তাকে উইস করলেও তূর্যের কোনো খবর নেই। এইজন‍্য নম্রতার মুড বেশ বিগড়ে আছে। সে আশা করেছিলো তূর্যই আগে উইস করবে। কিন্তু তার তো খবরই নেই। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। আজ অনেকগুলো গিফটও পেয়েছে সে। ওর বাবা ওকে ওর পছন্দের চকলেট বক্স এনে দিয়েছে। দুপুরে ওর মা ওর পছন্দের সব খাবার রান্না করে খাইয়েছে। তুর তাকে একটা ড্রেস গিফট করেছে। রাদিফ আর শুভ্রতা মিলে একটা ফোন গিফট করেছে। স্নেহাও চকলেট দিয়েছে।

তূর্য শুধু উইস করলেও সে খুশি হতো। কিন্তু না বাবুর কোনো খবরই নেই। এগুলোই ভাবছিলো তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো। নম্রতা বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলতে চলে গেল। দরজা খুলে বেশ অবাক হলো সে একটা পার্সেল। নম্রতা ভ্রুকুচকালো। রেহানা বেগম রান্নাঘর থেকে বলে উঠলেন
“কে এসেছে?”

“পার্সেল এসেছে আম্মু।”

“তোর কোনো ফ্রেন্ড হয়তো দিয়েছে। নিয়ে দেখ।”

নম্রতা পার্সেলটা নিয়ে রুমে চলে গেল। পেকেট খুলে দেখলো একটা সাদা গাউন বেশি কারুকাজ না থাকলেও বেশ সুন্দর। সঙ্গে মিলিয়ে হালকা কিছু গহনা, কাঁচের চুড়ি, বেলিফুলের গাজরা। নম্রতা সবকিছু বের করতেই একটা চিঠি পেল। চিঠিতে লেখা
“নিজে পছন্দ করে নিজের বোকাফুলের জন‍্য কিছু উপহার কিনেছি। এগুলো পড়ে ছাদে চলে আসো দ্রুত। হালকা কাজল দিবে সঙ্গে হালকা লিপস্টিক দিবে। মেকআপ করবেনা একদম। চুল খোলা রাখবে। চুলে গাজরাটা পড়বে কেমন।
ইতি তোমার উনি”

নম্রতার ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো। সে জানে এটা তূর্যের কাজ।

নম্রতা দ্রুত তূর্য কথামতো নিজেকে সাজিয়ে দ্রুত পায়ে ছাদের দিকে রওনা হলো।

ছাদে প্রবেশ করে দেখলো ছাদে অন্ধকার গুটগুট করছে। নম্রতা ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে তূর্যকে ডাকতে লাগল।

হুট করেই চারপাশে আলো জ্বলে উঠলো। সাদা আর আকাশি রঙের বেলুন দিয়ে পুরো ছাদটা ডেকোরেশন করা। নম্রতার মুখ হা হয়ে গেল। নিজের সামনে তূর্যকে হাঁটু গেড়ে বসতে দেখে আরো অবাক হলো নম্রতা। তূর্য নম্রতার সামনে একগুচ্ছ লাল গোলাপ এগিয়ে দিয়ে বলল
“শুভ জন্মদিন বোকাফুল। এই বিশেষ দিনে কি তুমি পারোনা এই প্রেমিক পুরুষের ভালোবাসা গ্রহণ করতে। আমি ওতো ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে বলতে পারিনা। আমি তোমাকে মনের গহীন থেকে ভালোবাসা নিবেদন করছি। উইল ইউ মেরি মি বোকাফুল!”

কথাগুলো বলেই উত্তরের অপেক্ষায় তূর্য নম্রতার মুখপানে তাকিয়ে রইলো। নম্রতা মুখে হাত দিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো তূর্যের দিকে। নম্রতাকে কিছু বলতে না দেখে তূর্য বিরক্তি নিয়ে বলল
“বসে থাকতে থাকতে হাঁটু খুলে গেল। নিজে তো শুভ্রতাকে ধমকাচ্ছিলে এখন নিজে কি করছো!”

নম্রতা হাত বাড়িয়ে গোলাপ ফুলগুলো হাতে নিয়ে বলল
“হুম আমি বিয়ে করবো আপনাকে। আমিও অনেক ভালোবাসি আপনাকে হাইপার ম‍্যান।”

তূর্য ভ্রুকুচকে বলল
“কি বললে আমায়!”

নম্রতা দাঁত ‍‍বের করে হাসলো। তূর্য দাঁড়িয়ে মুখ ঘুড়িয়ে রাখলো। নম্রতা মুচকি হেসে তূর্যের হাত ধরে কাধে আলতো করে মাথা ঠেকিয়ে বলল
“এমন সারপ্রাইজ আমি কল্পণাও করিনি। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি যে আমাকে আজকেই এমন মুহূর্ত উপহার দিবেন ভাবতেও পারিনি।”

তূর্য পকেট থেকে একটা আংটির বক্স বের করে তা থেকে আংটিটা বের করে নম্রতার আঙুলে পড়িয়ে দিয়ে ছোট একটা চুমু বসিয়ে দিলো ওর হাতে। নম্রতা লাজুক হাসলো।

তূর্য নম্রতার হাত ধরে ছাদের মাঝ বরাবর একটা টেবিলের কাছে নিয়ে এলো। যেখানে বিভিন্ন রঙের মোমবাতি আর গোলাপের পাঁপড়ি দিয়ে সাজানো। যার মাঝবরাবর একটা চকলেট কেক রাখা। যেখানে বড় বড় অক্ষরে লেখা
”শুভ জন্মদিন বোকাফুল”

তূর্য হাক ডাক দিয়ে বলল
“তোরা সবাই বেড়িয়ে আয়।”

সঙ্গে সঙ্গে পিলারের পিছন থেকে ধাক্কাধাক্কি করে দাঁত কেলাতে কেলাতে বেড়িয়ে এলো তুর রিজভী রাদিফ আর শুভ্রতা। নম্রতা অবাক চোখে একবার তূর্যের দিকে তাকালো আর একবার ওদের দিকে তাকালো। ওরা সবাই একসঙ্গে বলে উঠলো
“শুভ জন্মদিন তূর্য ভাইয়ের বোকাফুল”

নম্রতা লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। সে মনে মনে চাইছে মাটি ফাঁক হয়ে যাক আর সে সেখানে ঢুকে যাক। নাহয় আকাশ ছেদ করে দড়ি আসুক। সেটি দিয়ে সে উপরে উঠে যাক।

তূর্য নম্রতা হালকা করে ধাক্কা দিয়ে বলল
“কেকটা কাটো”

নম্রতা কেক কেটে তূর্যকে খাইয়ে দেয়। তূর্যও নম্রতাকে কেক খাইয়ে দেয়। একে একে সবাই কেক খায়।

কেক খাওয়ার পর্ব শেষ হতেই সেখানে হাজির হয় শামসুল হক রেহানা বেগম আর রফিকুল সাহেব। নম্রতা বাবা মাকে দেখে কিছুটা গুটিয়ে যায়।

শামসুল হক মেয়ের কাছে এসে মেয়ের মাথায় হাত রাখে। সবার দিকে তাকিয়ে তিনি বলে উঠলেন

#চলবে

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ২৩

সবার দিকে তাকিয়ে উনি বলে উঠলেন
“আগামী শুক্রবার তূর্য আর নম্রতার বিয়ে হলে কেমন হয়!”

ওনার কথা সবাই যখন হাসি-আনন্দে মেতে ছিল, তূর্য ও নম্রতা দুজনেই নীরব থেকে নিজেদের মধ্যে ভাবনার বিনিময় করছিল। তূর্যর চোখে এক গভীর নির্ভরতার ছাপ ফুটে উঠল। তূর্য জানত, তাদের দুজনের পথচলা সহজ হবে না, কিন্তু নম্রতার প্রতি তার বিশ্বাস ছিল অবিচল।

নম্রতার দিকে তাকিয়ে তূর্য আস্তে করে বলল
“নম্রতা, জানি, আমার পাশে থাকাটা সহজ হবে না, কিন্তু আমরা একসাথে সবকিছু সামলে নেব, তাই না?”

নম্রতা চোখ তুলে তূর্যের দিকে তাকাল। তার ঠোঁটে ফুটে উঠল এক নির্ভরতার হাসি।নম্রতা মৃদু সরে বলল

“আপনার সঙ্গে থাকতে পারা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি, তূর্য। আপনি আছেন বলেই আমি সবকিছু করতে পারব।”

এই কথাগুলোতে যেন একে অপরের প্রতি তাদের অঙ্গীকার নবায়ন হলো। বিয়ের সিদ্ধান্তে তারা দুজনই একে অপরের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে গেল। আর চারপাশে থাকা মানুষগুলোর মুখে আনন্দের ছাপ সেই মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে রইলো।

তখন রফিকুল সাহেব তূর্যের কাছে এলেন। তূর্যের কাধে হাত রেখে মুচকি হেসে বললেন
“তূর্য বাবা আজ তোমার কাছে আমি একটা আর্জি নিয়ে এসেছি।”

সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো রফিকুল সাহেবের দিকে। তূর্য মুচকি হেসে রফিকুল সাহেবের হাতে হাত রেখে বলল
“এমন করে বলবেনা আঙ্কেল। নিজের ছেলে মনে করে দিধা ছাড়া বলুন।”

রফিকুল সাহেব তূর্যের এমন ব‍্যবহারে বেশ মুগ্ধ হলেন। মুচকি হেসে বললেন
“বাবা আমার ছোট ছেলেটা বেশ চাপা স্বভাবের ছেলে। তুমি একটু খেয়াল করলে এতদিনে বুঝে যাবে। কারণ তোমাকে দেখে আমার বোঝদার ছেলে মনে হয়েছে। তোমার বোনকে আমার ছেলে পছন্দ করে। আমি তোমার ছোট বোনটাকে আমার ছোট মেয়ে করে আমাদের বাড়ি নিয়ে যেতে চাই।”

রিজভী গোল গোল চোখে বাবার দিকে তাকালো। তুরেরও একই অবস্থা।

তূর্য তাকালো তুর আর রিজভীর দিকে। সেও খেয়াল করেছে। কিন্তু রফিকুল সাহেবকে বলাতে দিধায় পড়েছিলো সে। এই মুহূর্তটা তূর্যের জন্য আরও এক ধরনের অপ্রত্যাশিত বাস্তবতা নিয়ে এল। তূর্য তাকিয়ে রইল তুর ও রিজভীর দিকে। রিজভীর মুখে এক ধরণের অস্বস্তি আর লজ্জা ফুটে উঠল। তবে তূর্যও লক্ষ্য করেছিল যে রিজভী যখনই তুরের আশেপাশে থাকত, তার চোখে এক অন্যরকম অনুভূতি ফুটে উঠত। তূর্য একটু সময় নিয়ে বিষয়টা ভাবল।

তারপর মৃদু হাসি দিয়ে বলল
“আঙ্কেল, আপনি যে কথা বললেন, তা আমার জন্য অনেক সম্মানের। তুরের ওপর রিজভীর দৃষ্টি আমি আগে থেকেই অনুভব করেছিলাম। রিজভী যদি সত্যিই তুরকে ভালোবাসে এবং তুরও যদি এ সম্পর্কে সম্মতি দেয়, তবে আমি অবশ্যই তাদের পাশে থাকব। তবে আমি আগে তুরের মতামত জানতে চাই।”

তূর্যর কথা শুনে রফিকুল সাহেবের মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠল। তিনি বললেন
“তুমিই ঠিক বলেছ, বাবা। তোমার বোনের মতামত জানা খুবই জরুরি।”

এই কথার পর তূর্য তুরের দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে বলল
“তুর, তুই কী বলবি? রিজভী তোর জন্য অপেক্ষা করছে।”

তুর কিছুক্ষণ নীরব থেকে বলল
“ভাইয়া,যদি ও সত্যিই আমাকে ভালোবাসে, তবে আমি ওকে নিয়ে ভাবতে রাজি।”

তূর্য তুরের কথায় সম্মতি জানিয়ে রফিকুল সাহেবের দিকে ফিরে বলল
“আঙ্কেল, আপনি রিজভীকে নিশ্চিন্ত করতে পারেন। তুর ওর জন্য প্রস্তুত।”

রফিকুল সাহেব আলহামদুলিল্লাহ্ বলে উঠলেন।

রফিকুল সাহেবের মুখে আলহামদুলিল্লাহ্ শুনে পুরো ছাদটা যেন এক আনন্দের ঢেউয়ে ভেসে গেল। সবাই খুশিতে মেতে উঠল। তূর্যর মনের ওপর থেকেও যেন এক ভার নেমে গেল। সে ভাবল, এই মুহূর্তটা তাদের জন্য এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।

তূর্য তুরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। সে বুঝল, তুরের মনে রিজভীর জন্য কিছু অনুভূতি গড়ে উঠেছে, যা এতদিন সে হয়তো নিজের কাছেও স্বীকার করতে পারেনি। তূর্যর মনে হল, এই নতুন সম্পর্কগুলো তাদের পরিবারে আরও আনন্দ এবং সম্প্রীতি নিয়ে আসবে।

রিজভীও তূর্যের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে সম্মতি জানাল। তুরের চোখেও একরকম লজ্জা আর আনন্দের মিশ্রণ ফুটে উঠল।

এরপর তূর্য নম্রতার দিকে তাকিয়ে বলল
“দেখলে, নম্রতা, একের পর এক ভালো খবর আসছে। আমাদের বিয়েটা শুধু আমাদের জন্য নয়, পুরো পরিবারের জন্য এক নতুন যাত্রার শুরু।”

নম্রতা হাসি দিয়ে তূর্যের হাত ধরে বলল
“হুম আমি জানি আমাদের সামনে অনেক কিছু অপেক্ষা করছে। তবে আমি জানি, আমরা একসঙ্গে থাকলে সবকিছুই সম্ভব হবে।”

তূর্য মুচকি হাসলো।

তূর্যর মুচকি হাসি দেখে নম্রতার চোখে ভরসার আলো ফুটে উঠল। তারা দুজনই জানত, সামনে আরও অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে, কিন্তু একে অপরের পাশে থাকার শক্তি তাদের আরও দৃঢ় করে তুলল।

এরপর তূর্য চারপাশে তাকিয়ে দেখল সবার মুখে খুশির ঝিলিক। এই মুহূর্তটা যেন সত্যিই এক নতুন শুরু, যেখানে ভালোবাসা, বন্ধন, এবং পারিবারিক সম্পর্কের মূল্য সবার মনে গেঁথে যাচ্ছে।

তূর্য ভাবল যাত্রাটা যতই কঠিন হোক না কেন, আমাদের একসাথে থাকার শক্তি সবকিছু জয় করবে।

তারপরে সে নম্রতার হাত শক্ত করে ধরে বলল
“নম্রতা, আমরা একসাথে নতুন জীবনের পথে পা বাড়াচ্ছি। তোমার হাত ধরেই আমার জীবনের সব আনন্দ।”

নম্রতা মৃদু হেসে বলল
“আমি জানি আপনি আমাকে ভালোবাসেন, আর আমি সবসময় আপনার পাশে থাকবো।

রিজভী তুরের পাশ ঘেঁষে বলল
“তুর, তোমার এই চোখ রাঙানোটা খুব মজার। তুমি যখনই রাগ করো, তখন তোমার মুখটা দেখতে অনেক মিষ্টি লাগে।”

তুর ভ্রুকুচকে বলল
“আপনি আবার শুরু করলেন? রাগ করলেও মিষ্টি লাগবে! এটা কোনো কথা হলো?”

রিজভী হেসে বলল
“হ্যাঁ, তোমার রাগটা এমন মিষ্টি যে, আমি ইচ্ছা করেই তোমাকে রাগাতে চাই!”

তুর রিজভীর হাতটা ধরে টান দিয়ে বলল
“তাহলে আমি আপনাকে একটু বেশিই রাগিয়ে দেখাই?”

রিজভী বলদ মার্কা হাসি দিয়ে বলল
“আরে না, প্লিজ! আমি তো শুধু মজা করছি। তুমি রাগলে আমার কিন্তু সত্যিই ভয় লাগে।”

তুর একটু গম্ভীর কন্ঠে বলল
“ভয় পেতে হয়, বুঝেছেন? আমি কোনো মজা করছি না।”

রিজভী মুচকি হেসে বলল
“ঠিক আছে, ঠিক আছে। আমি আর কিছু বলব না। তবে তুমি যখন রাগ করো, তখন তোমার গালটা একটু লাল হয়ে যায়, জানো?”

তুর রিজভীর দিকে তাকিয়ে বলল
“আপনি এমন করলে আমি সত্যিই রাগ করব।”

“আচ্ছা, আমি আর রাগানোর চেষ্টা করব না। তবে একটা কথা বলো, তোমার রাগটা আমার দিকে একটু কমিয়ে দেবে, প্লিজ?”

তুর মৃদু হেসে বলল
“ঠিক আছে, তবে তার জন্য তোমাকে আমার একটা শর্ত মানতে হবে।”

রিজভী ভ্রুকুচকে বলল
“শর্ত? ঠিক আছে, যা বলবে মানব।”

“আমাকে আর কখনও এমনভাবে রাগাবে না।”

“এই শর্ত মেনে নেওয়া আমার জন্য সবচেয়ে বড় পুরস্কার।”

“তাহলে ঠিক আছে। আজকের মতো মাফ করে দিলাম।”

“থ্যাঙ্ক ইউ, মিস ঝগড়ুটে!”

“আবার বললেন, এবার কিন্তু সত্যি রাগ করব!”

“আরে মিস ঝগড়ুটি, এত রাগ কেন তোমার? আমি তো কিছু বলিনি!”

তুর দাঁত কটমট করে বলল
“রামছাগল, রাগ তো করবোই! আপনি সবসময় আমার সাথে মজা নেন কেন?”

রিজভী মুখটা ইনোসেন্ট করে বলল
“মজা নেওয়া? আমি তো তোমাকে একটু হাসাতে চাই, আর তুমিই সবসময় ঝগড়া শুরু করো!”

তুর কপাল কুচকে বলল
“হাসাতে চান? আপনার এই হাসানোর স্টাইল একদমই ভালো লাগে না!”

রিজভী চোখ ছোট ছোট করে তুরের দিকে তাকিয়ে বলল
“তাহলে তুমি বলো, কিভাবে হাসাবো?”

“হাসাবার দরকার নেই, আপনার ঝামেলা থেকেই দূরে থাকেন!”

“ঠিক আছে, মিস ঝগড়ুটি। কিন্তু মনে রেখো, আমি থাকলে ঝগড়া হলেও মজা থাকে, আর আমি না থাকলে তোমার রাগ দেখানোর কেউ থাকবে না!”

“বেশি কথা বলবেন না! আর এই রামছাগল নামটা পাল্টাতে হবে!”

“ওহ, তাই? কিন্তু মিস ঝগড়ুটি নামটাও কিন্তু তোমার জন্য পারফেক্ট!”

তুর হাসি চাপিয়ে বলল
“তাহলে ঠিক আছে, রামছাগল আর মিস ঝগড়ুটি হিসেবে থাকি!”

রিজভীও হেসে ‍বলল
“হুম, একেবারে পারফেক্ট টিম!”

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে