আপনার শুভ্রতা পর্ব-২১

0
78

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ২১

১৭.
শুভ্রতাদের পরীক্ষা শেষ হয়েছে একদিন আগে। শুভ্রতা আজ ভার্সিটি আসে নি। তুর একাই এসেছে। কিন্তু তার একদম বিরক্ত লাগছে একা ক্লাস করতে। তবুও বেশ বিরক্ত নিয়ে একটা ক্লাস করলো সে।

ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে পরলো সে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্য। কিছু দূরে যেতেই সে দেখতে পেল কিছু বখাটে ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। তুর দূর থেকে দেখে নিজের শরীরের ওড়না টেনে ঠিকঠাক করে তাড়াতাড়ি করে সেদিক দিয়ে যেতে নিবে তখনই ছেলেগুলো তুরের রাস্তা আটকে ধরলো। তুর রাস্তা কাটিয়ে চলে যেতে নিবে তখনই ছেলেগুলো আবারও আটকায় তাকে। তুরের গলা শুকিয়ে আসছে তবুও নিজের ভয় দমিয়ে বলে উঠলো
“রাস্তা ছাড়ুন আমাকে যেতে দিন।”

একটা ছেলে বিচ্ছিরি হেসে বলল
“না সোনা তোমার রাস্তা তো ছাড়া যাবেনা।”

তুর দৌড় দিতে নিবে তখনই একটা ছেলে ওর ওড়না জোড়ে টেনে ধরে। ওড়নাটা পিন করা ছিলো বলে ওড়নাতে জোড়ে টান পড়ায় কাধের জামার অংশে টান পড়ে ছিড়ে গেল। তুর ছলছল দৃষ্টিতে তাকালো কাধের দিকে। সে যদি ছুটে পালাতে যায় তাহলে আরো ছিড়ে যাবে। মনে মনে সে আল্লাহর নাম নিতে লাগল। সে বারবার চাইছে কেউ এসে তাকে বাঁচাক। তুর চোখ বুজলো।

চারটা ছেলের মধ্যে একটা ছেলে তুরের গায়ে হাত দিতে নিবে তখনই ছেলেটার নাক বরাবর কেউ ঘুসি দেয়। ছেলেটা আর্তনাদ করে উঠতেই তুর চোখ খুলে পিছনে তাকালো। রিজভীকে দেখে যেন তার প্রাণ ফিরে এলো। হুট করেই সে রিজভীকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।

রিজভী পরপর ছেলেটার নাকে ঘুসি দিতেই থাকে। ছেলেটার নাক দিয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। বাকি ছেলেগুলো তা দেখে দৌড় দেয়। রিজভীর শ‍্যামবর্ণের চেহারা রাগে অদ্ভুত ভয়াবহ দেখাচ্ছে। তুর কান্নাভেজা কন্ঠে বলল
“রিজভী ওকে ছেড়ে দিন প্লীজ।”

রিজভী চোখ গরম করে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আঙুল নাচিয়ে ওয়ারনিং দিলো। ছেলেটা ছাড়া পেতেই ভো দৌড় দিলো নাক ধরে।

রিজভী রাগে কাঁপছিলো। তুর এতক্ষণে রিজভীকে ছেড়ে সামনে দাঁড়িয়েছে। রিজভী জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিলো। রাগান্বিত কন্ঠে বলল
“জানোই যখন ভাবি আসবেনা। পাকনামি করে ভার্সিটি আসতে হবে কেন!”

তুরকে ফোপাতে দেখে দমে গেল রিজভী। চোখ পড়লো তুরের কাধের দিকে। সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে টিশার্টের উপরের শার্টটা খুলে তুরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল
“পড়ে নেও এটা।”

তুর রিজভীর কথা বুঝতে না পেরে কপাল কুচকে তাকালো রিজভীর দিকে। রিজভী বুঝতে পেরে শার্টটা তুরের গায়ে জড়িয়ে দিয়ে ধীর কন্ঠে বলল
“চলো তোমাকে বাড়িতে দিয়ে আসি।”

তুর নীচু কন্ঠে বলল
“ধন‍্যবাদ”

রিজভী ভ্রুকুচকে বলল
“কেন!”

“না মানে আমাকে বাঁচানোর জন‍্য ওই ছেলেগুলোর থেকে।”

রিজভী কি যেন ভেবে বলল
“অন‍্য মেয়ে হলেও বাঁচাতাম।”

“অন‍্য মেয়ে আর আমি এক।”

রিজভী ভ্রুকুচকে তুরের দিকে তাকিয়ে বলল
“একই তো।”

হুট করেই তুর ক্ষেপে গেল। রিজভীকে রেখেই হনহন করে হাঁটা ধরলো। রিজভী বাঁকা হেসে চেঁচিয়ে বলল
“আই লাভ ইউ মিস ঝগড়ুটি।”

রিজভীর কথাগুলো কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই তুরের পা জোরে থেমে গেল। সে কি শুনলো এটা! তুর কিছু সময় নিয়ে ভেবে দুষ্টু হেসে পিছনে ঘুরে বলল
“আই হেট ইউ মিস্টার রামছাগল।”

তুরের ঠোঁটের মুচকি হাসি দেখে রিজভী হাত দিয়ে মাথার পিছনের চুলগুলো চুলকালো। তুর ঠোঁট কামরে হাসলো।

———————

শুভ্রতা কার্বাট গোছাচ্ছিলো তখনই রাদিফের জামা কাপড়ের ভাঁজে একটা খাম পেল। শুভ্রতার কপাল কুচকে এলো। শুভ্রতা খাম খুলে যা দেখলো তা দেখে আর নিজেকে কন্টোল করতে পারলো না। ধপ করে বসে পড়লো মেঝেতে। তার হাতে কয়েকটা ছবি যেখানে নিধি আর রাদিফের কিছু সুন্দর মুহূর্তের বিদ‍্যমান। অজান্তেই শুভ্রতার চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়লো। বুক ফেটে কান্না আসছে তার। এতো কষ্ট লাগছে কেন তার। শুভ্রতা যেন হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। মাথাটা ঘনঘন করে ঘুরছে তার। চোখ দুটো বারবার ভরে আসছে। রাদিফ কিভাবে পারলো এই ঘটনাগুলো গোপন করতে। তার সবকিছুই তো রাদিফ জানে। তাহলে রাদিফের গোপন কথা কেন সে জানবেনা। শুভ্রতা আর ভাবতে পারছেনা কিছু।

তখনই তার ফোনটা বেজে উঠলো। শুভ্রতা কান্নাভেজা চোখে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো রাদিফের নামটা জ্বল জ্বল করছে। শুভ্রতা ফোন‍টাকে সুইচঅফ করে বেডে ছুড়ে মারলো।

বেডের কাণিশে মাথা ঠেকিয়ে মেঝেতে বসে রইলো চোখ বুজে। এভাবে কতক্ষণ ছিলো জানা নেই তার। বাসায় কেউ না থাকায় কেউ জানতেও পারলোনা শুভ্রতার মনের খবর।

বেশকিছুক্ষণ পর শুভ্রতা ছবিগুলো জায়গা মতো রেখে টলমল ‍পায়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে লাগল। পড়নের মেরুন রাঙা শাড়ির আঁচল মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই।

ওয়াশরুমের দরজা না লাগিয়েই শাওয়ার ছেড়ে দিলো শুভ্রতা। গা হিম হয়ে যাওয়া পানি ফোঁটায় ফোঁটায় শুভ্রতার শরীর ভিজিয়ে দিচ্ছে।

অন‍্যদিকে রাদিফের কপালে চিন্তার ছাপ পড়েছে। শুভ্রতা তো কখনো ফোন অফ করে রাখেনা। আর আজকে তো ও বাসায় আছে। রিংও তো হলো প্রথমবার। তাহলে কি কোনো বিপদ হলো ওর। রাদিফের অস্থিরতা ক্রমশ বাড়তে লাগল। কাজে মন বসছে না তার। ল‍্যাপটপ অফ করে রেখে কল দিলো রিজভীকে। দুইবার রিং হতেই কল রিসিভ করলো রিজভী। রিজভীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রাদিফ বলল
“তুই কোথায়?”

রিজভী তুরকে নিয়ে গাড়িতে যাচ্ছিলো তুরকে ওর বাসায় দিয়ে আসতে। রিজভী ভ্রুকুচকে বলল
“কেন ভাইয়া কি হয়েছে! আমি একটু বাহিরে আসছি।”

রাদিফ ছোট করে
“ওও”

বলে কল কেটে দিলো। রিজভী ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু সময়। তুর ‍বলল
“কে কল দিয়েছিলো!”

রিজভী ভাবুক কন্ঠে বলল
“ভাইয়া”

“ও”

রিজভী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ি চালাতে লাগল।

রাদিফ ওর পার্টনারকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে বাসার উদ্দেশ্য রওনা হলো। রফিকুল সাহেব গ্রামে গেছেন আগের দিন জমিজমার ঝামেলার জন‍্য। রাদিফ আবারও কল করলো শুভ্রতাকে। এখন ফোন বন্ধ বলছে। রাদিফ দ্রুত ড্রাইভ করতে লাগল।

রাদিফ ডুবলিকেট চাবি দিয়ে মেইন দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো। বেশ কয়েকবার শুভ্রতার নাম ধরে ডেকেছে সে। কিন্তু শুভ্রতার কোনো সাড়াশব্দ পায়নি সে।

দ্রুত পায়ে রুমে প্রবেশ করলো রাদিফ। বেডের মাঝ বরাবর শুভ্রতার ফোনটা পড়ে আছে। কিন্তু আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো শুভ্রতা নেই।

ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসছে। রাদিফ আর দেড়ি না করে ওয়াশরুমের দিকে গেল। ওয়াশরুমের দরজা খোলা দেখে বেশ অবাক হলো রাদিফ। ওয়াশরুমের ভিতরে চোখ রাখতে দেখতে পেল শুভ্রতা শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। পরনের শাড়িটা ভিজে জবজব করছে। রাদিফ এগিয়ে গেল শুভ্রতার দিকে। শুভ্রতার হাত ধরতেই রাদিফ চমকিত হলো।

রাদিফ শুভ্রতা নিজের দিকে ফেরাতেই শুভ্রতার রক্তশূন্য হয়ে যাওয়া ফেকাসে মুখটা দেখেই আতকে উঠলো। একি অবস্থা হয়েছে তার মায়াবতীর। কি এমন হলো যে তার মায়াবতী এই অবস্থায়!

রাদিফ অস্থির কন্ঠে কয়েকবার ডাকলো শুভ্রতাকে। শুভ্রতা পিটপিট করে একবার তাকালো রাদিফের দিকে। তারপরেই ঢলে পরলো রাদিফের বুকে।

রাদিফ হতভম্ব হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারলো শুভ্রতা জ্ঞান হারিয়েছে। রাদিফ তাড়াতাড়ি করে শাওয়ার অফ করে শুভ্রতাকে কোলে তুলে নিলো। শুভ্রতার শাড়ি পাল্টে একটা কাথা গায়ে দিয়ে দিলো। গালে হাত রেখে ডাকলো কয়েকবার কিন্তু সারাশব্দ না পেয়ে রাদিফ বেশ চিন্তায় পড়ে গেল।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে