আপনার শুভ্রতা পর্ব-২০

0
178

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ২০

রিজভীকে পাত্তা না দিয়ে হনহনিয়ে বাসায় চলে গেল তুর। রিজভী কিছু বলল না। সেও শুভ্রতাদের বাসায় ঢুকে পরলো। তার বরাদ্দকৃত রুমে সে চলে গেল। রফিকুল সাহেব চলে যেতে চাইছিলেন কিন্তু শামসুল হক তাকে ছাড়েননি। রফিকুল সাহেব আর শামসুল হক পাশের রুমে একসঙ্গে গল্প করতে বসেছেন। রিজভী রুমে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে শুয়ে পরলো।

তুরও হাই দিতে দিতে রুমে গিয়ে শুয়ে পরলো।

নম্রতা নেমে যাচ্ছিলো তখনই তূর্য ওকে টেনে সাইডে নিয়ে এলো। নম্রতা হঠাৎ এমন হওয়ায় ভয়ে চোখ বুজে নিলো। তূর্যের রাগে চোখমুখ লাল হয়ে আছে। তূর্য শক্ত করে নম্রতার হাত ধরায় নম্রতা ব‍্যথায় কুকিয়ে উঠলো। তূর্য হিসহিসিয়ে বলল
“তোর এতো সাহস হয় কোথায় থেকে?”

নম্রতা রক্তলাল চোখ নিয়ে তূর্যের দিকে তাকিয়ে বলল
“হাতটা ছাড়ুন লাগছে।”

তূর্য আরো শক্ত করে চেপে ধরলো নম্রতার হাত। ঝাঝালো কন্ঠে বলে উঠলো
“লাগুক। তোর এই ব‍্যথায় তুই ছটফট করছিস। আমার ভিতরের ব‍্যথাটা দেখছিস না।”

নম্রতা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল
“ওও তাই আমার শুধু হাতেই ব‍্যথা। ভালো ভালো। আর আমি বা আপনার সঙ্গে কথা বলে আমার মূল‍্যবান সময় নষ্ট করতে চাচ্ছি না। আমাকে ছাড়ুন। আর কোন অধিকারে আমাকে স্পর্শ করেন।”

তূর্য নম্রতার চোয়াল চেপে ধরে বলল
“অধিকার নিয়ে কথা বলতে আসিস না একদম। অধিকার করে নিতে আমার বেশি বেগ পেতে হবেনা।”

নম্রতা ব‍্যথায় কুকিয়ে উঠতেই তূর্য ঝারি দিয়ে নম্রতাকে ছেড়ে দিয়ে কিছুটা দূরে সরে গিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগল।

নম্রতা তূর্যের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পরলো তার। নম্রতার ফর্সা মুখটা রক্তলাল হয়ে গেছে। হাতটাও নীল হয়ে গেছে। ব‍্যথায় নাড়াতে পারছেনা হাত। নম্রতা হুট করে চেঁচিয়ে বলল
“কি শুরু করেছেন আপনি! নিজে অবহেলা করেন। আর আমি করলেই রাগারাগি করেন। আপনার তো দরকার নেই আপনার। এই কয়েকদিন আমার দিন কেটে একবারও খোঁজ নিয়েছেন। ব‍্যস্ততা সবারই থাকে। কিন্তু সময় করে প্রিয় মানুষের যত্নটাও নেওয়া যায়। ওহ সরি সরি ভুল হয়ে গেল আমি তো আপনার প্রিয় মানুষই না। আপনি তো টাইমপাস করছেন আমার সাথে।”

তূর্য ঝট করেই নম্রতার কাছে গিয়ে ওর চুলের মুটি ধরে ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দিলো। রাগে নম্রতার ঠোঁট কামরে ধরেছে সে। নম্রতা ব‍্যথায় ছটফট করছে। বেশকিছুক্ষণ পর ভালো করেই কিস করতে লাগল সে।

খানিকক্ষণ পর তূর্য নম্রতার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে ওর কপালে কপাল ঠেকালো। দুইজনই হাঁপাচ্ছে।

এমন অবস্থায় বেশ কিছু সময় অতিবাহিত হলো। তূর্য নরম হাতে নম্রতার ডান গালে হাত রেখে অপরাধী কন্ঠে বলল
“সরি,আমি বেশ ডিপ্রেশশনে পড়ে গেছিলাম। আমার মা নেই। বাবা থেকেও নেই। এমন একটা ছেলের সাথে কোনো বাবাই বিয়ে দিতে চাইবেনা। হয় তো আঙ্কেল এমন না কিন্তু অভিভাবক ছাড়া ছেলের সঙ্গে কেউ মেনে নিবে না আমাদের। আমি তোমার বয়সেও বেশ ছোট। তাই ভেবে দূরে সরে ছিলাম অনেক কষ্টে। কিন্তু তোমার ইগনোর আমার সহ‍্য হচ্ছিলো না।”

নম্রতা আবারও তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল
“আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন না। তাই তো এমনটা করতে পারলেন।”

তূর্য ভ্রুকুচকে বলল
“কে বলেছে আমি তোমাকে ভালোবাসিনা!”

“ভালোবাসেন যে এটা কখনো বলেছেন আমায়!”

“সবসময় কি মুখে সব কিছু বলতে হয়। আর তুমিও কখনো আমার বলেছো!”

নম্রতা তূর্যকে এড়িয়ে চলে যেতে নিবে তখনই তূর্য নম্রতা হাত টেনে ধরলো। ধীর কন্ঠে বলল
“রাস্তায় ছেলেদের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলবেনা।”

নম্রতা ভ্রুকুচকে তাকালো তূর্যের দিকে। তূর্য আর দাঁড়ালোনা সেখানে। ধুপ ধুপ পায়ে চলে গেল সেখান থেকে। নম্রতা শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো তূর্যের যাওয়ার দিকে। কি বলে গেল এই লোক! পর মুহূর্তেই কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া কথা মনে পড়তেই হাজারো লজ্জা এসে ভিড় করলো নম্রতার চোখে মুখে। নম্রতা আলতো হাতে হাত বোলালো ঠোঁটে।

১৭.
সকালের মিষ্টি রোদ চোখে এসে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেল শুভ্রতার। শুভ্রতা পিটপিট করে তাকিয়ে রাদিফের উন্মুক্ত বুক দেখলো। নিজের রুমের বিছানায় দেখে বুঝতে পারলো রাতে সে ছাদেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো। শুভ্রতা মুচকি হেসে রাদিফের বুকে আঁকিবুকি করতে লাগল। শুভ্রতা মুখটা উঁচু করে রাদিফের ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকালো। আলতো হাতে রাদিফের গালে হাত বোলালো। হুট করেই শুভ্রতা রাদিফের গালে একটা চুমু বসিয়ে দিলো। সাথে সাথে রাদিফ চোখ খুলে ফেলল।

রাদিফকে চোখ মেলে তাকাতে দেখে শুভ্রতা লজ্জায় পড়ে গেল। রাদিফ শুভ্রতার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল
“শুভ সকাল মায়াবতী।”

শুভ্রতা নরম কন্ঠে বলল
“শুভ সকাল”

রাদিফ শুভ্রতাকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে আবারও চোখ বুজলো। শুভ্রতা অসহায় কন্ঠে বলল
“ছাড়ুন না। অনেকবেলা হয়েছে তো।”

রাদিফ একটু ভেবে বলল
“আগে আমাকে একটা কিস দিবে তারপর ছাড়বো।”

শুভ্রতা কাচুমাচু করতে লাগল। রাদিফ নিজেই শুভ্রতার ঠোঁটে চুমু খেয়ে ছেড়ে দিলো ওকে। শুভ্রতা ছাড়া পেতেই দৌড় দিলো ওয়াশরুমে। রাদিফ মুচকি হেসে বালিশ জড়িয়ে আবারও ঘুমিয়ে পড়লো।

শুভ্রতা ফ্রেশ হয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে রুমের দরজাটা ভিড়িয়ে দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে পরলো। হাটা দিলো রান্নাঘরের দিকে।

রেহানা বেগম রান্নাঘরে চা বানাচ্ছিলেন। মেয়েকে আসতে দেখে মুচকি হেসে বললেন
“কিছু লাগবে তোর। রাদিফ উঠেছে।”

শুভ্রতা মায়ের গায়ের সঙ্গে লেপ্টে দাঁড়িয়ে বলল
“না কিছু লাগবেনা। উনি এখনো উঠেননি।”

রেহানা বেগম কাপে চা ঘেলে মেয়ের থুতনিতে হাত রেখে বললেন
“মাশাল্লাহ্ আমার মেয়েটাকে ঘোমটা দিয়ে একদম পুতুল বউয়ের মতো লাগছে। তা মা ওই বাড়িতে তুই ভালো আছিস তো।”

শুভ্রতা মুচকি হেসে বলল
“মা ওই বাসায় আমি কি করে ভালো না থাকি। সবাই আমাকে কত যত্ন করে জানো। বাবা তো তার মেয়ের মতো খেয়াল রাখে। আর রিজভী ভাইয়াও সারাদিন ভাবি ভাবি করে মাথায় তুলে রাখে আমায়।”

“আর রাদিফ!”

রাদিফের কথা কানে পরতেই শুভ্রতা লাজুক হাসলো। মেয়ের চেহারা দেখেই রেহানা বেগম যা বোঝার তা বুঝে গেলেন। উনার বুকে যেন প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেল মেয়ের সেই হাসিতে। রেহানা বেগম মেয়ের হাতে চায়ের কাপ দিয়ে বললেন
“তোর বাবা বসার রুমে আছেন। আর বেয়ান সাহেব এখনো উঠেননি। উনি উঠলে ওনার চা ঢালবোনি। তুই গিয়ে এ‍টা তোর বাবাকে দিয়ে আয়।”

শুভ্রতা হাসিমুখে চায়ের কাপ নিয়ে চলে গেল।

শামসুল হক বসার রুমে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন।

শুভ্রতা মুচকি হেসে বাবার দিকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বলল
“বাবা তোমার চা।”

শামসুল হক ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে খবরের কাগজ বন্ধ করে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে শুভ্রতাকে ইশারায় ওনার পাশে বসতে বললেন।

শুভ্রতা বাধ‍্য মেয়ের মতো বাবার পাশে বসলো। শামসুল হক মেয়েকে নিজের বুকে আগলে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন
“পরীক্ষার আগের রাতে তো তুই একা খেতে পারিস না। আমিই বরাবর তোকে খাইয়ে এসেছি। তাই এ নিয়ে বেশ টেনশন হচ্ছিলো। পরে রাদিফ বাবাকে কল করলাম ও বলল তুই খেয়েছিস।”

শুভ্রতা মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বলল
“জানো বাবা তুমি যেমন পরীক্ষার আগের রাতে আমার খেয়াল রাখতে। উনিও না ঠিক ওমনভাবেই আমার খেয়াল রাখেন।”

শামসুল হক বেশ খুশি হলেন মেয়ের কথায়। না সে মেয়ের জন‍্য ঠিক মানুষকেই বাছাই করেছেন। মেয়ে তার সুখে আছে আর কি চাই।

তখনই নম্রতার অভিমানী কন্ঠ ভেসে আসলো ওনার কানে। নম্রতা ঠোঁট উল্টে বলছে
“হ‍্যাঁ এখন তো বড় মেয়েকে পেয়ে গেছো। আমাকে কিভাবে চিনবা। আমি তো কেউ না।”

ছোট মেয়ের কথায় হেসে দিলেন শামসুল হক। ইশারায় কাছে ডাকলেন ওকে। নম্রতা হাসিমুখে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো বাবাকে।

শামসুল হক দুই মেয়েকে বুকে নিয়ে প্রশান্তির হাসি হাসলেন। এই দুই মেয়েই তো তার হাসির কারণ।

রেহানা বেগম দূর থেকে এমন দৃশ্য দেখে কেঁদে দিলেন। এটা কোনো দুঃখের অশ্রু না এটা আনন্দের অশ্রু। ওড়নার শেষ অংশ দিয়ে আলতো করে সে অশ্রু মুছে রেহানা বেগম মুচকি হেসে রান্নাঘরে চলে গেলেন।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে