আপনার শুভ্রতা পর্ব-১৯

0
144

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১৯

রাদিফ গাড়ির কাছে গিয়ে দরজা খুলতেই নম্রতা নিজেকে ঠিক করে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে তুলে বসে রইলো। রাদিফ ইশারায় শুভ্রতাকে গাড়ির ভিতরে দেখতে বলল।

শুভ্রতা গাড়ির ভিতরে তাকাতেই নম্রতা বলে উঠলো
“টুকি আপু।”

শুভ্রতা অবাক হয়ে গেল। নম্রতা জড়িয়ে ধরলো বোনকে। শুভ্রতা আবেগে কান্না করে দিলো।

রাদিফ ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠলো
“কেমন লাগল সারপ্রাইজ!”

শুভ্রতা চোখের কিণারার পানিটা মুছে নিয়ে বলল
“অনেক ভালো। ধন‍্যবাদ।”

রাদিফ হাতের আইসক্রিম নম্রতাকে দিলো। আর তাড়া দিয়ে বলল
“চল সবাই বাসায় যাই।”

গাড়িতে উঠতে নিবে তখনই রাদিফের ফোনটা বেজে উঠলো। রাদিফ ফোনটা বের করে দেখলো রেহানা বেগম কল করেছে। রাদিফ কল রিসিভ করে সালাম দিলো। রেহানা বেগম ফোন রিসিভ করে বললেন
“বাবা তোমরা সবাই কোথায়?”

রাদিফ গাড়িতে বসতে বসতে বলল
“আম্মু আমরা শুভ্রতার ভার্সিটির সামনে আসি। কেন আম্মু কিছু কি হয়েছে!”

“তেমন কিছু না নম্রতার থেকে সবটাই শুনলাম। তোমরা ওই বাসায় না গিয়ে এই বাসায় চলে আসো। শুভ্রতার ও তো দুইদিন পর আবার পরীক্ষা। সমস্যা হবে না। তোমাদের জন‍্য আমি রান্না করেছি।”

“কিন্তু আম্মু!”

“কোনো কিন্তু শুনতে চাচ্ছিনা। আমি বসে আছি তোমাদের জন‍্য খাবার নিয়ে।”

রাদিফ না করতে পারলো না। মুচকি হেসে বলল
“আচ্ছা আম্মু আসছি।”

“ও হ‍্যাঁ ভালো কথা রিজভী আর বেয়ান সাহেবকেও আমাদের বাসায় দাওয়াত কেমন! একসঙ্গে খাবো দুপুরে আর রাতে। তোমাদের বিয়ের পর তো আর একসঙ্গে হওয়াই হয় নি।”

রাদিফ কিছুটা ভেবে বলল
“আচ্ছা আম্মু আমি বলে দিবোনি।”

রেহানা বেগম কল কেটে দিলেন। মুখে তার হাসি ফুটে উঠলো। মেয়েটাকে কত দিন নিজের কাছে বসিয়ে খাইয়ে দেয় না। যদিও বা কথা হয় ফোনে। মাসে দু একবার আসে তবুও মায়ের মন কি আর এতটুকুতে ভরে। আবার ছেলে দুটোরও মা নেই সে তো একটু আদর যত্ন করে খাওয়াতেও পারে। ছেলে দুটোও বেশ ভালো। রাদিফের ব‍্যবহারে বরাবরই মুগ্ধ তিনি।

রেহানা বেগম শামসুল হককে কল দিয়ে সব জানালেন। আর তূর্য রিজভী আর রফিকুল সাহেবকেও দাওয়াত দিতে বললেন। শামসুল হকও বউয়ের কথায় রাজি হয়ে গেলেন। তিনি দাওয়াত দিবেন বলে জানিয়ে দেন।

কল রাখতেই শুভ্রতা প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে রাদিফের দিকে তাকিয়ে বলল
“কি বললো আম্মু!”

রাদিফ গাড়ি স্ট্রার্ট দিয়ে বলল
“আম্মু সবাইকে ওই বাসায় যেতে বলেছে। দাওয়াত দিয়েছে।”

শুভ্রতার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো।

১৬.
রাতের খাবার শেষে রাদিফ রিজভী শুভ্রতা আর নম্রতা এসে ছাদে বসেছে আড্ডা দিতে। তূর্যের কি যেন কাজ থাকায় সে রুমেই আছে। রিজভী পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে তুরের দিকে। যা রাদিফের চোখ এড়ালো না। তুর শুভ্রতা আর নম্রতার সঙ্গে গল্প করছে। রাদিফ রিজভীকে ধাক্কিয়ে বলল
“কি হয়েছে!”

রিজভীর ধ‍্যান ভাঙলো। ঠোঁটে জোড়পূর্বক হেসে বলল
“না কিছু হয় নি তো।”

রাদিফ মাথা ঝাঁকিয়ে বাঁকা হাসলো।

তূর্য এসে রাদিফের পাশে বসে বলল
“সরি সরি দেড়ি হয়ে গেল।”

রাদিফ মুচকি হেসে বলল
“সমস‍্যা নেই ভাইয়া। আসো সবাই ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলি।”

শুভ্রতা বসা থেকে উঠে বলল
“আমি বোতল আনছি।”

বলেই সে চলে গেল। খানিক বাদেই শুভ্রতা একটা বোতল আনলো। রাদিফ বোতল নিয়ে ঘোরাতে লাগল। বোতল প্রথমে রাদিফের দিকেই থাকলো। তুর শয়তানি হাসি দিয়ে বলল
“ভাইয়া ট্রুথ না ডেয়ার।”

রাদিফ টিশার্টের কলারটা একটু ঝাকুনি দিয়ে বলল
“আমি সাহসী তাই আমি ডেয়ার নিবো।”

তুর মুখ টিপে হেসে বলল
“তাহলে এখনি শুভ্রতাকে একবার হাঁটু গেড়ে সিনেমাটিক ভাবে ভালোবাসি বলে দেখান।”

শুভ্রতা চোখ বড় বড় করে তাকালো তুরে দিকে। তুর দাঁত বের করে হাসলো। রাদিফ বাঁকা হেসে বলল
“ও এই ব‍্যাপার।”

রাদিফ এদিক সেদিক তাকালো ছাদের একটা টবে গোলাপ ফুটে আছে। যদিও বা তেমন একটা তাজা নেই। তাতে কি। রাদিফ শুভ্রতাকে দাঁড় করালো। দৌড়ে গিয়ে গোলাপ ফুলটা ছিড়ে আনলো। হাঁটু গেড়ে বসে বলল
“আমার ফুলের জন‍্য এই ফুলটা এনেছি। সে কি এই ফুলটা নিয়ে আমার ভালোবাসা কবুল করবে। বলবে কি ভালোবাসি প্রিয়!”

তুর বলে উঠলো
“শুভ্র বলে দে এখনি সুযোগ।”

তূর্যও বলে উঠলো
“বলে দেও শুভ্রতা।

রিজভীও বলল
“ভাবি বলে দেও ভাইয়াটা তাছাড়া বিরহে খান খান হয়ে যাবে।”

নম্রতা এবার খানিকটা বিরক্তি নিয়েই বলে উঠলো
“আপু এতো সময় নিচ্ছিস কেন! আমি হলে এতক্ষণে বলে দিতাম। ভিডিও ধরে থাকতে থাকতে হাত ব‍্যথা হয়ে গেল।”

তূর্য রাদিফ আর শুভ্রতার দিক থেকে চোখ ঘুরিয়ে নম্রতার দিকে তাকালো। নম্রতা তূর্যের সে তাকানিকে পাত্তা দিলো।

শুভ্রতা পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে প্রিয়তমের ভালোবাসা ঢেলে দেওয়া সেই গভীর দৃষ্টির দিকে। হাত বাড়িয়ে রাদিফের হাতে হাত রেখে বলল
“আপনার শুভ্রতা আপনার ভালোবাসা কবুল করলো জনাব। ভালোবাসি আপনাকে আপনার মায়াবতী হয়ে।”

রাদিফ মুহুর্তেই দাড়িয়ে পরলো। শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরলো শুভ্রতাকে। শুভ্রতাও জড়িয়ে ধরলো। বাকিরা হাত তালি দিতে লাগল। শুভ্রতা বেশ লজ্জা পেল। লজ্জা কান দিয়ে গরম হাওয়া বের হচ্ছে তার। লজ্জায় সে মুখ গুজলো রাদিফের বুকে। রাদিফ মুচকি হেসে তুরকে চোখ দিয়ে ধন্যবাদ জানালো। এটা তাদের সবার করা প্লান ছিলো। তুর হাসলো।

তুর সবাইকে ইশারা করতেই সবাই কেটে পড়লো সেখান থেকে।

রাদিফ পকেট থেকে একটা চেইন বের করলো। যত্ন সহকারে চেইন টা পড়িয়ে দিলো শুভ্রতার গলায়। শুভ্রতা খেয়াল করলো চেইনে ইংরেজি বর্ণের S আর R লেখা। শুভ্রতা মুচকি হাসলো। রাদিফও মুচকি হেসে শুভ্রতার দু গালে হাত রেখে কপালে চুমু খেল। শুভ্রতা চোখ বুজে অনুভব করলো মুহূর্তটা।

রাদিফ এবার গাল ফুলিয়ে বলল
“আমিই খালি চুমু খাই।”

শুভ্রতা এবার মাইনকার চিপায় পড়ে গেল। কি বলে কি এই লোক! তার কি লজ্জা করবেনা! এই বেডার না হয় লজ্জা নেই ছোট ভাইবোন বড় ভাই এর সামনে ভালোবাসি ভালোবাসি করে। কিন্তু তার তো লজ্জা আছে নাকি।

শুভ্রতা আশেপাশে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল। প্রশ্নবিদ্ধ কন্ঠে বলল
“ওরা সবাই কোথায় গেল!”

রাদিফ শুভ্রতার কোমরে হাত রেখে নিজের দিকে টেনে এনে বলল
“কাবাবে হাড্ডি কেউ হতে চায়না তাই চলে গেছে। এখন তুমি তোমার কাজ করো তো।”

শুভ্রতার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে। সে কাঁপা কাঁপা ঠোঁট নিয়ে রাদিফের কপালে চুমু খাওয়ার জন‍্য চোখ বুজতেই। রাদিফ দুষ্টু হেসে ওর ঠোঁট এগিয়ে দিলো। শুভ্রতা চুমু বসিয়ে বুঝতে পারলো রাদিফ কি করেছে। শুভ্রতার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। রাদিফ দুষ্টু হাসছে। শুভ্রতাকে সে ছেড়ে দিয়েছে। শুভ্রতা কোমরে হাত রেখে বলল
“এটা কি হলো!”

রাদিফ কলার উঁচিয়ে শুভ্রতার মুখ বরাবর নেমে এসে ফিসফিসিয়ে বলল
“কেন জান ভালো লাগে!”

শুভ্রতার কানে কথা যেতে শুভ্রতা রাদিফের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো। মুখ ভেংচে বলল
“আপনি চিটিং করেছেন!”

রাদিফ মুখটাতে ইনোসেন্ট ভাব ফুটিয়ে তুলে বলল
“চিটিং যখন করেছি তখন এর শাস্তি হিসেবে না হয় আরেকটা চুমু খাই তোমায়।”

শুভ্রতা আবারও অবাক চোখে তাকালো রাদিফের দিকে। রাদিফ ওর তাকানো দেখে হো হো করে হেসে দিলো। রাদিফকে হাসতে দেখে শুভ্রতাও হেসে দিলো।

ছাদে থাকা মাদুরে রাদিফ গিয়ে শুয়ে পরলো আর বলল
“মায়াবতী আসো আমার একসঙ্গে রাত্রি বিলাশ করি।”

শুভ্রতা মুচকি হাসি দিয়ে রাদিফের পাশ ঘেঁষে শুয়ে পরলো। রাদিফ শুভ্রতাকে একহাত দিয়ে আগলে শুভ্রতাকে নিজের বুকে শোয়ালো। শুভ্রতা মুচকি হাসলো। রাদিফ শুভ্রতা মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
“এই নিস্তব্ধ নিঝুম রাত সাক্ষী তোমার আর আমার ভালোবাসার। হে মায়াবতী কন‍্যা এই অধম পুরুষের মনিকোঠায় যে তোমারই রাজ‍্যত্ব চলে প্রতিটাক্ষণ প্রতিটা মুহূর্ত। তুমি কি বোঝনা এই হৃদয়ের আকুল আবেদন। এই ভালোবাসার পাগল প্রেমিক পুরুষকে কি সে বোঝেনা!”

শুভ্রতা এতটা সময় মন দিয়ে শুনছিলো রাদিফের কথা। রাদিফের কথা শেষ হতে শুভ্রতা চিত হয়ে শুয়ে আকাশপানে তাকিয়ে বলল
“ভালোবাসা কি প্রেমিক পুরুষকে সবসময় বলে বোঝাতে হয়। সে কি নিজে বুঝে নিতে পারেনা! তার মায়াবতী কি তাকে ভালোবাসি নাকি!”

রাদিফ শুভ্রতার দিকে কাত হয়ে শুয়ে শুভ্রতাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলল
“বুঝি তো সব। কিন্তু আমার আকুল মন যে মানে না। শুধু শুনে মন চায়।”

শুভ্রতা রাদিফের চোখপানে তাকালো। রাদিফ তার দিকেই গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। তার সেই গভীর দৃষ্টিতে শুভ্রতা ডুবে যাচ্ছে। চোখে মায়ায় নিজেকে বেঁধে ফেলছে। শুভ্রতা রাদিফের গালে এক হাত রাখলো। রাদিফের ফর্সা গালের খোঁচা খোঁচা দাড়ি বেশ আকর্ষণীয় লাগে শুভ্রতার কাছে। গভীর সেই দৃষ্টি। এই বলিষ্ট দেহের সুদর্শন ছেলেটা শুধু তার। হ‍্যাঁ শুধুই তার। শুভ্রতা নরম কন্ঠে বলল
“ভালোবাসি প্রিয়তম। অনেক অনেক ভালোবাসি আমার একান্ত উনিটাকে।”

রাদিফের ঠোঁটে এক অদ্ভুত সুন্দর মুচকি হাসি ফুটে উঠলো। সে শুভ্রতাকে নিজের বুকে শক্ত করে আকড়ে ধরলো।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে