#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১৮
১৫.
শুভ্রতার ভার্সিটির সামনে গাড়ি থামিয়ে রাদিফ বলল
“টেনশন নিও না। তুমি সব পারবে। ধীরেসুস্থে পরীক্ষা দেও। আমি তোমাকে পরীক্ষা শেষে নিতে আসবো।”
শুভ্রতা হ্যাঁবোধক মাথা নাড়ায়। রাদিফ শুভ্রতাকে হেচকা টান দিয়ে নিজের কাছে টেনে ওর কপালে একটা দীর্ঘ চুমু দিলো।
শুভ্রতা চোখ বুজে মুহূর্তটা অনুভব করলো। রাদিফ শুভ্রতাকে ছেড়ে দিয়ে বলল
“এবার যাও।”
শুভ্রতা লাজুক হেসে গাড়ি থেকে নেমে গেল।
রাদিফ তাকিয়ে রইলো শুভ্রতার যাওয়ার দিকে। শুভ্রতা চোখের আড়ালে চলে যেতেই রাদিফ গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো।
ক্লাসে এসে শুভ্রতা দেখলো তুর চুপচাপ বসে আছে। শুভ্রতা মুচকি হেসে তুরের কাছে গিয়ে বলল
“কিরে এতো চুপচাপ যে! টেনশন হচ্ছে নাকি রে!”
তুর শুভ্রতাকে দেখে বলল
“তুমি তো পইড়া ফাটাইয়া ফালাইছো। আমি কিছু পারিনা।”
শুভ্রতা সিটে বসতে বসতে বলল
“আমি টেনশন নিস না আমি তোমাকে দেখাবোনি।”
তুর দাঁত বের করে হেসে বলল
“এই না হলে আমার দোস্ত।”
শুভ্রতা হাসলো।
—————–
নম্রতা কলেজে মনমরা হয়ে বসে আছে। ওর যে কয়েকটা ফ্রেন্ড ছিলো সব আলাদা হয়ে গেছে। সে একদম একা হয়ে গেছে। সেইজন্য তার কলেজ আসতে একদমই ভালো লাগে না। চারমাস হতে চলল তবু কোনো ফ্রেন্ড হয়নি তার। কিন্তু কি আর করার কলেজ তো আসতেই হতো। নম্রতা মন খারাপ করে বসে ছিলো তখনই একটা মেয়ে তার পাশে এসে বসে বলল
“মন খারাপ”
নম্রতা তাকালো মেয়েটার দিকে। মেয়েটা হাসিমুখে ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলো। নম্রতা মাথা নাড়ালো। মেয়েটা হাত বাড়িয়ে বলল
“আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি! আসলে এই কলেজে আমার একটাও ফ্রেন্ড নেই। কাউকে পাইও নি ফ্রেন্ড করার। তারপর দেখলাম তুমি ও একা আমি ও একা।”
নম্রতা ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে বলল
“কেন না!”
মেয়েটার সঙ্গে টুকিটাকি কথা বলতে বলতে জানতে পারলো মেয়েটার নাম স্নেহা।
ক্লাস শেষে নম্রতা আর স্নেহা কলেজ গেট দিয়ে বের হচ্ছিলো। তখনই একটা ছেলে এসে দাঁড়ালো ওদের সামনে। নম্রতার কপাল কুচকে এলো। স্নেহা বিষয়টি খেয়াল করে হেসে বলল
“নম্রতা এটা আমার ভাইয়া ফয়সাল।”
নম্রতা মুচকি হেসে সালাম জানালো। ফয়সালও মুচকি হেসে সালামের উত্তর দিয়ে বলল
“কেমন আছো?”
“এই তো আলহামদুলিল্লাহ্ ভালোই আছি ভাইয়া। আপনি কেমন আছেন?”
“আমিও ভালো আছি। তা তোমাকে কি কেউ নিতে আসবে নাকি একাই যাবে।”
ফয়সালের কথায় নম্রতার হুট করেই তূর্য ওইদিনের কথা মনে পড়ে গেল। যেইদিন সে তূর্যের বাইকে বাড়ি গিয়েছিল। নম্রতা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঠোঁটে হাসি বজায় রেখেই বলল
“না ভাইয়া আমি একাই যাবো। আমি তাহলে যাই আম্মু তাছাড়া টেনশন করবে। অন্য একদিন কথা হবে।”
“আচ্ছা আমি তাহলে রিক্সা ধরে দেই।”
“দরকার নেই ভাইয়া। আমি পারবো। কষ্ট করতে হবেনা।”
“ধুর কষ্ট কিসের তুমি আমার বোনের ফ্রেন্ড। কলেজ এসেছে বেচারি চার মাস আগে আর কেবল ফ্রেন্ড পেল।”
স্নেহা রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠলো
“ভাইয়া ঠিক হচ্ছেনা কিন্তু!”
ফয়সাল মুখ ভেংচালো। নম্রতা ওদের কান্ডে হাসলো। নম্রতা না করার পরেও ফয়সাল তাকে রিক্সা ডেকে দেয়। নম্রতা ওদের বিদায় দিয়ে রিক্সায় উঠে পড়ে।
ফোনটা বাজতেই নম্রতা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে রাদিফের ফোন। নম্রতা কল রিসিভ করে কানে ধরে। রাদিফ অপর পাশ থেকে বলল
“শালিকা তুমি কোথায়! কলেজ থেকে বের হয়ে গিয়েছো!”
নম্রতা ভ্রুকুচকে জিঙ্গাসা করে
“কেন ভাইয়া কিছু কি হয়েছে! আপু ঠিক আছে তো।”
“হুম তোমার আপু একদম ঠিক আছে। তা তুমি কোথায়!”
“আমি রিক্সায় বাসায় যাচ্ছি।”
“তুমি একটু তোমার আপুর ভার্সিটির সামনে আসতে পারবে?”
নম্রতা কপাল কুচকে প্রশ্নবিদ্ধ কন্ঠে বলল
“কি হয়েছে বলো তো ক্লিয়ার করে!”
“তেমন কিছুই না। আসলে তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতাম।”
“কিন্তু ভাইয়া কথা হচ্ছে তোমাদের মাঝে আমি কেন কাবাবের হাড্ডি হবো।”
“শালিকা তুমি কিন্তু বেশ পেকেছো। তোমার আব্বুকে জানাতে হবে দেখছি। এখন কথা না বাড়িয়ে চলে এসো তো। তুর ও যাবো। কিছু খাওয়াদাওয়া করে আড্ডা দিয়ে বাসায় যেও না হয়।”
নম্রতা মুচকি হাসলো। সে আসছে বলে কল কেটে রিক্সা ভার্সিটির দিকে ঘোরাতে বলল।
নম্রতা ভার্সিটির সামনে আসতেই রাদিফ হাসি মুখে এগিয়ে এলো। নম্রতা ভাড়া দিতে নিবে তখনই রাদিফ ভাড়া বের করে দিতে নিবে তখনই নম্রতা বলল
“ভাইয়া কি করছো! আমি দিচ্ছি তো।”
রাদিফ ভাড়া দিয়ে বলল
“কথা না আর। চলো তো।”
নম্রতা আর কথা বাড়ালো না। রাদিফ ওকে গাড়িতে বসতে বলল। এসি অন করে বলল
“এখানে থাকো আমি তোমার জন্য ঠান্ডা কিছু নিয়ে আসি।”
রাদিফ নম্রতার উত্তর না শুনেই চলে গেল। নম্রতা সিটে গা এলিয়ে বসলো। বেশ ক্লান্ত লাগছে। ফোনটা হাতে নিয়ে তূর্যের লুকিয়ে তোলা ছবিগুলো দেখতে লাগল। আপনাআপনিই ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো। সে বিরবির করে বলল
“কেন করলেন এমনটা আমার সঙ্গে! চাচ্ছি ভুলে যেতে কিন্তু পারছিনা কিছুতেই।”
ফোনটা ব্যাগে রেখে সিটে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বুজলো সে।
শুভ্রতা আর তুর পরীক্ষা হয়ে বের হলো। পরীক্ষা বেশ ভালোই হয়েছে শুভ্রতার। শুভ্রতা মনে মনে রাদিফকে ধন্যবাদ দিলো। রাদিফ যে সাপোর্টটা ওকে করেছে সেইজন্যই তো আজ তার পরীক্ষাটা এতো ভালো হয়েছে। এইজন্য রাদিফ তো কিছু একটা উপহার পেতেই পারে। কিন্তু সে কি উপহার দিবে। থাক না হয় পরে ভেবে চিন্তে একটা ভালো উপহার দিয়ে দিবে। যা রাদিফের সবসময় মনে থাকবে।
শুভ্রতা এগুলোই ভাবছিলো তখন তখন তুর শুভ্রতাকে কুনি দিয়ে গুতিয়ে কুটিল হেসে বলল
“কি দোস্ত জিজুর কথা ভাবছিস নাকি! আজ কেউ নেই বলে।”
শুভ্রতা সরু চোখে তুরের দিকে তাকিয়ে বলল
“চোখটা মেলে দেখ। যাকে ইগনোর করছিস, রাগারাগি করছিস। সেও কিন্তু সুযোগ পেলে কম যত্নে রাখবে না তোক।”
তুর কপাল কুচকে বলল
“তুই কি বলতে চাইছিস!”
শুভ্রতা তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে বলল
“রিজভী ভাইয়া কিন্তু তোর ব্যবহারে বেশ কষ্ট পাচ্ছে।”
রিজভীর নাম কানে আসতেই তুরের রাগে নাকের পাটা ফুলে উঠলো। খানিকটা ঝাঝালো কন্ঠেই বলল
“ওমন সন্দেহ করা মানুষের যত্ন আমি চাইনা।”
শুভ্রতা তুরকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলল
“দেখ সেই সন্দেহ করে যে ভালোবাসে।”
শুভ্রতা আরো কিছু বলতে নিবে তখনই সেখানে রাদিফ এলো। সে কপাল কুচকে বলল
“ভালোবাসা নিয়ে কি এতো কথা হচ্ছে! আমি ও শুনি একটু।”
শুভ্রতা তাকালো রাদিফের দিকে। মুচকি হেসে বলল
“তেমন কিছুই না। আপনি কখন এসেছেন!”
রাদিফ আইসক্রিম একটা শুভ্রতার হাতে দিয়ে বলল
“বেশ কিছুক্ষণ আগেই এসেছি। তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”
শুভ্রতা ভ্রুকুচকে বলল
“কি সারপ্রাইজ!”
রাদিফ মুচকি হেসে একটা আইসক্রিম তুরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল
“নেও তুর এটা তোমার জন্য।”
তুর মুচকি হেসে বলল
“ধন্যবাদ ভাইয়া।”
রাদিফ এবার শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলল
“সারপ্রাইজটা না হয় সময় হলেই দেখতে পাবে।”
বলেই শুভ্রতা একটা হাত ধরে তুরকে বলল
“তুর চলো আজ আমাদের বাসায় আজ খাবে। আড্ডা দেওয়া হবে।”
তুর প্রশ্নবিদ্ধ কন্ঠে বলল
“কেন ভাইয়া কি আছে আজ!”
রাদিফ তাড়া দিয়ে বলল
“চলো তো এতো কথা না বাড়িয়ে।”
তুর আর কথা না বাড়িয়ে ওদের সঙ্গে যেতে লাগল।
#চলবে