আপনার শুভ্রতা পর্ব-১৬

0
151

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১৬

রিজভী ফোন হাতে নিয়ে ঘরের সঙ্গে লাগোয়া বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। মাথাটা বেশ ধরেছে তার। মাথারই বা আর দোষ কি! কম তো আর চাপ দেয়নি এই মাথায়। দীর্ঘশ্বাস ফেলল রিজভী। তুর এখনো ব্লক খুলেনি। মেজাজ খারাপ হলো রিজভীর। মেয়েটা এতো সাহস কোথায় পায় যে তাকে ব্লক করে। ভেবে পায় না রিজভী।

১৩.
কেটে গেছে চারটা দিন। রিজভী সেই রাতের পর গা কাঁপিয়ে জ্বর আসে। তাই আশেপাশে হুশ ছিলো না। তুরও এই দুই দিন বাড়িতেই ছিলো। শরীরটা সুস্থ হতেই রিজভী শুভ্রতার কাছে গিয়ে তুরের কথা জিঙ্গাসা করে। শুভ্রতা প্রথমে বলতে না চাইলেও রিজভীর জোড় করায় শুভ্রতা থাকতে না পেরে তুরের অসুস্থতার কথা জানায়। সে জানায় সেইদিন নাকি তুরের মামাতো ভাই আর তার বউ বাচ্চা নিয়ে এসেছিলো। তাদের সঙ্গেই ফুচকা খেয়েছিলো। ভুল করে ঝাল খেয়ে ফেলেছিলো সে।

সব কথা শুনে রিজভীর মাঝে যেন অপরাধবোধ আরো বেড়ে যায়। ছেলেটা তাহলে তুরের কাজিন ছিলো। বিবাহিত সে। এমনকি বাচ্চাও আছে। কি ভুলটাই না করলো সে। রাগের সময় কেন যে মাথা ঠিক থাকে না তার। ভেবেই নিজেকে নিজে হাজারো গালি দিতে লাগল রিজভী।

রিজভী কিযেন ভেবে বলল
“ভাবি তুমি কলেজ কবে যাবে!”

শুভ্রতা একটু ভেবে বলল
“কালকেই যেতে হবে। কিছুদিন পর এক্সাম আছে তো আমাদের। কিছু নোট সংগ্রহ করতে হবে।”

রিজভীর ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো। সে হাসিমুখেই চলে গেল নিজের রুমে।

—————————

নম্রতা আজ কলেজ এসে আটকা পড়েছে। একটাও রিক্সা পাচ্ছেনা। বিরক্তিতে চোখমুখ কুচকে আছে তার। তখনই তার সামনে একটা বাইক এসে দাঁড়ালো। নম্রতা ভ্রুকুচকে তাকালো সেদিকে। তূর্যকে দেখে ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো নম্রতার। তূর্য হেলমেটটা খুলে নম্রতার দিকে তাকিয়ে বলল
“ছুটি কখন হয়েছে। এখনো এখানে কি করছো!”

নম্রতা মুখটা ছোট করে বলল
“রিক্সা পাচ্ছিনা।”

তূর্য ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল
“বাইকে উঠে বসো।”

“কিন্তু”

“এমনিতেই দেড়ি হয়ে গেছে। এখন ভেবে দেখ যাবে নাকি যাবে না।”

নম্রতা খানিকটা বাধ‍্য হয়েই তূর্যের পিছনে উঠে বসলো। তূর্য হেলমেট এগিয়ে দিলো। নম্রতা হেলমেটটা পড়ে বাইক ধরে বসতেই তূর্য বলে উঠলো
“কাধে হাত রাখো তাছাড়া পড়ে যাবে।”

নম্রতা কাঁপা হাতে তূর্যের কাধে হাত রাখলো। তূর্য মুচকি হাসলো নম্রতার অগোচরে। অন‍্যদিকে নম্রতার হৃদস্পন্দন যেন বেড়েই চলছে ক্রমান্বয়ে।

তূর্য বাইক স্টার্ট দিলো। নম্রতার কপালে থাকা ছোট ছোট চুলগুলো উড়ছে আপন গতিতে। বেশ বিরক্ত হচ্ছে নম্রতা। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে আছে। তূর্য সবটাই লুকিং গ্লাসে দেখছে।

——————

রাদিফ আর শুভ্রতা কলেজে ঢুকেই বেশ অবাক হলো। কলেজ ক‍্যাম্পাসে বেশ ভীড় জমে আছে। রাদিফ ভ্রুযুগল কুচকে বলল
“হঠাৎ কি হলো কিছু জানো!”

শুভ্রতা রাদিফের দিকে তাকিয়ে বলল
“নাতো জানিনা কিছু।”

তখনই তুর ভীড় থেকে বেড়িয়ে এলো। শুভ্রতা একটু এগিয়ে গিয়ে বলল
“কি হয়েছে রে কিছু জানিস!”

রাদিফও এগিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে। তুর বলল
“রেদোয়ানকে ধরতে পুলিশ এসেছে।”

রাদিফ অবাক হয়ে বলল
“কেন কি হয়েছে! কি বলছো এগুলো তুর!”

“হুম সত্যি বলছি ভাইয়া। রেদোয়ান রিয়ার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে রিয়াকে মেরে ফেলেছে। রিয়ার বাবা এইজন‍্য রেদোয়ানের নামে মামলা করেছে। তাই আজ পুলিশ ওকে ধরতে এসেছে।”

“কি বলছো কবে হলো এসব!”

“আসলে ভাইয়া বলতে পারবোনা। এতদিন তো আমি আর শুভ্র কেউই কলেজ আসিনি।”

শুভ্রতা তুরের কথায় তপ্ত শ্বাস ফেলল। রাদিফ শুভ্রতার দিকে তাকালো। শুভ্রতা ভাবলেশহীন। তুরও বিষয়টা খেয়াল করলো। রাদিফ শুভ্রতাকে বলল
“তাহলে ক্লাস করবা নাকি বাসায় যাবা।”

শুভ্রতা ভ্রুকুচকে বলল
“বাসায় কেন যাবো!”

রাদিফ আমতা আমতা করে বলল
“না মানে ঝামেলা হচ্ছে তো তাই বললাম আর কি!”

শুভ্রতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
“এমন কিছু অনেক আগে থেকেই হওয়ার ছিলো। একটা কথা মনে রাখবেন আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না। আপনি চাইলে অপেক্ষা করতে পারেন। নোট নিয়ে না হয় যাবো।”

রাদিফ মাথা নাড়িয়ে বলল
“আচ্ছা আমি অপেক্ষা করছি তুমি নোট নিয়ে এসো।”

রাদিফ গিয়ে গাড়িতে বসলো।

তুর আর শুভ্রতা ক্লাসে দিকে এগোতেই রেদোয়ানের দিকে চোখ পড়লো শুভ্রতার। রেদোয়ানের মাথা নিচু করে আছে। পুলিশ ওকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। শুভ্রতা ছোট প্রসারিত করে হেসে তুরকে বলল
“জানিস তো মানুষের পাপে ঘড়া সে নিজে নিজেই পূর্ণ করে।”

তুর তাকালো শুভ্রতার দিকে। নরম কন্ঠে বলল
“থাক বাদ দে এসব। পরীক্ষায় মন দে।”

শুভ্রতা এগোতে লাগল।

দুটো ক্লাস করলো তারা। নোট নিয়ে পাকিং এ আসতেই রাদিফের গাড়িটা পাকিং দেখতে পেলো। রাদিফ গাড়িতেই বসে ফোন টিপছিলো। শুভ্রতাকে দেখে বের হলো সে। তুর মুচকি হেসে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলল
“তুই ভাইয়ার সঙ্গে চলে যা। আমিও বাসায় যাই।”

রাদিফ তুরকে বলল
“আমি তোমাকে ড্রপ করে দিবোনি। আমাদের সঙ্গে চলো।”

তুর ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়েই বলল
“না ভাইয়া আমি যেতে পারবো সমস্যা হবেনা।”

তুরকে একটা রিক্সায় তুলে দিলো রাদিফ। তুরকে বিদায় জানিয়ে রাদিফ আর শুভ্রতা উঠে বসলো গাড়িতে। রাদিফ গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলল
“কাজ হয়েছে?”

শুভ্রতা ছোট করে উত্তর দিলো
“হুম হয়েছে।”

রাদিফ কথা না বাড়িয়ে মন দিয়ে গাড়ি চালাতে লাগল।

বেশকিছুক্ষণ পর নিরবতা ভেঙে রাদিফ বলল
“রেদোয়ান যে এতটা নিচে নামতে পারে আমি কল্পণাও করতে পারিনি।”

শুভ্রতা তাকালো রাদিফের দিকে। রাদিফ ওর দিকে আগে থেকেই তাকিয়ে থাকায় চোখাচোখি হয়ে গেল দুইজনের। শুভ্রতা রাদিফের দিকে তাকিয়েই বলে উঠলো
“আচ্ছা আপনার কি ওর জন‍্য খারাপ লাগছে।”

“একটু খারাপ লাগছিলো ও আমার বন্ধু ছিলো তো তবে যেহেতু ও এত বড় অপরাধ করেছে ওর সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত। সেটা ভেবে আর মন খারাপ হচ্ছে না এখন আর।”

শুভ্রতা চোখ সরিয়ে জানলা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে বলল
“জানেন এখন নিজের প্রতি নিজের ঘৃণা লাগছে। আমি কিভাবে এমন একটা মানুষের জন‍্য নিজের অনুভূতি গুলোকে…”

রাদিফ গাড়ি ব্রেক করলো। শুভ্রতাকে হেচকা টান দিয়ে নিজের কাছে টেনে আনলো। হুট করে এমন হওয়ায় শুভ্রতা ভয়ে চোখমুখ খিচে বন্ধ করে নিলো। রাদিফ মুচকি হেসে শুভ্রতার কপালে থাকা অবাদ্ধ চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে বলল
“তুমি আসলেই বোকা মায়াবতী। এখনো ভালোবাসা আর ভালোলাগার মধ্যে পার্থক্য বুঝ না।”

শুভ্রতা চোখ খুলে রাদিফের মুখপানে তাকালো। রাদিফ আবারও বলল
“ভালো লাগতেই পারে এটা ব‍্যাপার না বুঝলে।”

শুভ্রতা পলকহীনভাবে রাদিফের দিকে তাকিয়ে বলল
“সারাজীবন এভাবে আগলে রাখবেন তো আমায়।”

রাদিফ মুচকি হেসে শুভ্রতাকে আরো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বলল
“মৃত‍্যুর আগ পযর্ন্ত আগলে রাখবো তোমায়। তুমি ছেড়ে দিতে চাইলেও আমি ছাড়বো না। বুঝলে মায়াবতী।”

শুভ্রতার ঠোঁট প্রসারিত হলো। সেও জড়িয়ে ধরলো রাদিফকে। রাদিফের বুকে এক প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেল।

—————-

তুর জ‍্যামে বসে ছিলো তখনই রিক্সায় লাফিয়ে উঠলো রিজভী। তুর এমন হওয়ায় চমকে উঠলো। চিল্লিয়ে উঠতে যাবে তখন রিজভীকে দেখে থেমে গেল। গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো
“আপনি আমার রিক্সায় উঠেছেন কেন! ভালোই ভালোই নেমে যান বলছি।”

“যদি বলি নামবোনা।”

তুর রিক্সা থেকে নেমে যেতে নিবে তার আগেই রিজভী তুরের একটা হাত ধরে বলল
“আমাকে ক্ষমা করে দেও প্লীজ। অপরাধবোধ আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তুর। মানসিক চাপ সৃষ্টির কারণে নিজেকে পাগল পাগল লাগছে।”

তুর রিজভীর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠেই বলে উঠলো
“কিছু করার আগে সেইজন‍্যই ভেবে করতে হয়। দয়া করে আমাকে ছেড়ে দিন। রাস্তায় সিন ক্রিয়েট করেন না।”

রিজভী অসহায় দৃষ্টিতে তাকা

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে