আপনার শুভ্রতা পর্ব-১৫

0
152

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১৫

রাদিফ ধীর কন্ঠে বলল
“আচ্ছা”

খানিকক্ষণ পরেই ওরা বাসায় চলে এলো। রাদিফ শুভ্রতাকে ঘরে যেতে বলে বাবার রুমে গেল। রফিকুল সাহেব শুয়ে ছিলেন। ছেলেকে আসতে দেখে মুচকি হেসে বললেন
“সব ঠিকমতো হয়েছে তো।”

রাদিফ বাবার মাথার কাছে বসে বলল
“হুম বাবা। তুমি ঔষধ খেয়েছো।”

রফিকুল সাহেব মুচকি হেসে বললেন
“এমনটা কি হওয়ার কথা!”

রাদিফ ঔষধের বক্স থেকে ঔষধ বের করতে করতে বলল
“বাবা এমন করলে হবে বলো তো। কত রাত হয়ে গেছে। আমার জন‍্য অপেক্ষা করতে গিয়ে শরীরটা যদি খারাপ হয়। আর ঔষধ দেওয়ার জন‍্য তো আর আমি সবসময় নাও থাকতে পারি।”

রফিকুল সাহেবের বুকটা ধুক করে উঠলো ছেলের মুখে এমন কথা শুনে। তিনি ধমকে বললেন
“রাদিফ তুই এসব কি উল্টাপাল্টা কথা বলবিনা বলে দিলাম। তুই আমাকে ঔষধ দেওয়ার জন‍্য সবসময় থাকবি।”

রাদিফ ঔষধ পানি এগিয়ে দিয়ে বলল
“আচ্ছা বাবা সরি আর বলবো না। এখন ঔষধগুলো খেয়ে নেও তো। তাছাড়া শরীর খারাপ করবে তো।”

রফিকুল সাহেব ঔষধ খেয়ে শুয়ে পড়লেন। রাদিফ মুচকি হেসে বাবার গায়ে কাথা টেনে দিয়ে লাইট অফ করে। বাবার মাথায় বেশ কিছুসময় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। রফিকুল সাহেব ঘুমিয়ে যেতেই রাদিফ ওনার কপালে একটা চুমু খেয়ে চলে গেল রুম ছেড়ে।

রফিকুল সাহেব মুচকি হাসলেন। তিনি জানেন প্রতিরাতেই ছেলে তার এমন করে। প্রিয়তমাকে হারিয়ে এই ছেলে দুটোকে নিয়েই তো তিনি বেঁচে আছেন।

রাদিফ রুমে আসতেই দেখলো শুভ্রতা বিছানা গোছ করে বেডে পা ঝুলিয়ে ওর জন‍্যই বসে অপেক্ষা করছে। রাদিফ ড্রেসিংটেবিলের কাছে গিয়ে ঘড়ি খুলছিলো তখনই শুভ্রতা বলল
“খুব ভালোবাসেন বাবাকে!”

রাদিফ মুচকি হেসে শুভ্রতার দিকে ফিরে বলল
“হুম খুব ভালোবাসি। লোকটা আমাদের জন‍্য অনেক কিছু করেছে। ওনি চাইলেই আম্মু মারা যাওয়ার পর নিজের আরেকটা ভালো সংসার তৈরি করতে পারতেন। বিয়ে করতে পারতেন অন‍্য নারীকে। কিন্তু ওনি তা করেন নি। ওনি আম্মুকে ভালোবেসেছিলেন। যা বলার মতো না। আম্মু মারা যাওয়ার পর বাবা অনেকটাই ভেঙে পড়েন। আমি আর রিজভী তখন ছোট। সবাই বাবাকে আরেকটা বিয়ে করতে বলে। কিন্তু উনি এক কথায় না করে দেয়। উনি সবাইকে বলেছিলেন তিনি নিজ হাতে আমাদের মানুষ করে দেখাবেন। কতটুকু তার কথা রাখতে পেরেছি তা জানিনা। তবে নিজের শেষ নিশ্বাস অব্ধি আমি মানুষটা কোনো প্রকার কষ্টে দিবোনা।”

রাদিফের চোখের কাণিশে পানি চিকচিক করছে। শুভ্রতা বেড থেকে উঠে রাদিফের সামনে দাঁড়িয়ে নত মুখে বলল
“সরি আমি এই কথাটা না বললে এই সময় আপনার মনটা খারাপ হতো না।”

“ধুর পাগলি কি যে বলো না তুমি!”

“আমিও আজ থেকে বাবাকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করবো সবসময়।”

শুভ্রতার কথায় রাদিফের মনে যেন এক শীতল হাওয়া বয়ে গেল। রাদিফ শুভ্রতাকে কাছে টেনে ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল
“এইজন‍্যই তো আমি আমার মায়াবতীকে এতটা ভালোবাসি।”

শুভ্রতা গুটিসুটি মেরে রাদিফের বুকে লেপটে রইলো। রাদিফের প্রতিটা হৃদস্পন্দন অনুভব করতে লাগল।

বেশ কিছু সময় এভাবেই অতিবাহিত হওয়ার পর শুভ্রতা মাথা উঁচিয়ে বলল
“ফ্রেশ হয়ে আসুন। অনেক রাত হয়েছে ঘুমাবেন না।”

রাদিফ কথা বাড়ালো না। চলে গেল ফ্রেশ হতে। রাদিফ যেতেই শুভ্রতা বেডের একপাশে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পরলো।

রাদিফ ফ্রেশ হয়ে এসে শুভ্রতার পাশে শুয়ে ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে নিজের বুকের মাঝে নিয়ে চোখ বুজলো। শুভ্রতা মুচকি হাসলো।

————————

তূর্য বাসায় ফিরতেই তুরকে দেখতে পেল না। দরজাটাও নম্রতা খুলে দিয়েছিলো। সে নাকি এতটা সময় তুরের সাথেই ছিলো। নম্রতাকেও বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে। তূর্য অফিস থেকে এসে সোজা ফ্রেশ হতে চলে গিয়েছিলো।

তূর্য দেখলো খাবার টেবিলে খাবার রাখা আসে। তূর্য পা বাড়ালো তুরের রুমের দিকে।

তুর কাথা মুড়িয়ে শুয়ে আছে অন‍্যপাশ হয়ে। নম্রতা চিন্তিত মুখে তুরের মাথার কাছে বসে আছে। তূর্যের কপালে ভাঁজ পড়লো। তুর যে মেয়ে ওর তো এমন তাড়াতাড়ি কে শুয়ে পড়ার কথা না। যেখানে পাশে নম্রতা আছে। প্রশ্নই উঠে না। তূর্য কি যেন ভেবে দৌড়ে তুরের সামনে গিয়ে তুরের কাথা টান দিলো। যা ভেবেছিলো তাই। তুরের চোখমুখ লাল হয়ে আছে। গালে হাত সব জায়গায় এর্লাজি বের হয়েছে। তূর্য অস্থির হয়ে বলল
“কি খেয়েছিলি পিচ্চু!ঝাল কি খেয়েছিস! আমাকে আগে বলবি না। খুব কষ্ট হচ্ছে তোর।”

তুর আধো আধো কন্ঠে বলল
“ভাইয়া তুমি এতটা হাইপার হয়ে যেয়েও না। আমি ঠিক আছি।”

তূর্য ধমকে বলল
“চুপ একদম চুপ। তোকে না করেছিলাম না ঝাল খেতে। কথা তো শুনিস না। আগের বার কি হয়েছিলো ভুলে গেছিস। ঔষধ খেয়েছিস!”

তুর চুপ করে রইলো। তূর্যের রাগে চোখ লাল হয়ে উঠলো। গম্ভীর কন্ঠে বলল
“নম্রতা টেবিলের উপর থেকে ঔষধের বক্স‍টা দেও তো।”

নম্রতা তাড়াতাড়ি করে তূর্যের হাতে ঔষধের বক্সটা দিলো। তূর্য দেখলো তুরের ঔষধ ফুরিয়ে গেছে। তুরকে কিছু বলতে নিবে তার আগেই তুরের ক্লান্ত লাল মুখটার দিকে তাকিয়ে দমে গেল তূর্য। পরপর কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তূর্য উঠে গেল। নম্রতা তাকিয়ে রইলো তূর্যের দিকে। তুর অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো নম্রতার দিকে। নম্রতাও মুখটা ছোট করে তুরের দিকে তাকিয়ে বলল
“তূর্য ভাইয়া মনে হচ্ছে অনেকটাই খেপে গেছে তুর আপু।”

তুর ঠোঁট উল্টে বলল
“ভাইয়াকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি নম্র। ভাইয়া হাজার বার না করেছিলো ঝাল খেতে।”

“কিজন‍্য খেতে গেলে বলো তো।”

তুর কিছু বলল না। চুপ করে চোখ বুজে রইলো। তূর্য ঔষধ আর পানি এনে তুরের মুখের সামনে বাড়িয়ে দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল
“খেয়ে নে।”

তুর চোখ খুলে মুচকি হাসলো। ঔষধ নিয়ে খেতে নিবে তখনই তূর্য বলল
“কিছু খেয়েছিস!”

নম্রতা আস্তে করে বলল
“অল্প কিছু খাবার খাইয়ে দিয়েছি জোর করে। আপনি চিন্তা করবেন না।”

তূর্য শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো নম্রতার দিকে। তুর ঔষধ খেতেই তূর্য নরম কন্ঠে বলল
“নম্র তুমি এখন বাসায় যাও। আন্টি চিন্তা করছে। সমস্যা হলে ডাকবোনি। রেস্ট নেও গিয়ে।”

নম্রতা কথা বাড়ালো না। ধীর পায়ে রুম ছেড়ে চলে গেল।

তূর্য বোনের মাথার কাছে বসতেই তুর তূর্যের কোলে মাথা রেখে চোখ বুজলো। তুরের মাথায় স্নেহের হাত ‍বুলিয়ে দিতে লাগল তূর্য। ধীর কন্ঠে বলে উঠলো
“কেন করিস এমন বল তো। জানিস তো তুই ছাড়া আমি কত‍টা অচল। একবারও আমার কথা চিন্তা করলি না। কতটা কষ্ট পাচ্ছিস এখন দেখ তো।”

তুর দমে দমে বলে উঠলো
“আর কখনো এমন হবেনা ভাইয়া। এরপর থেকে নিজের খেয়াল রাখবো।”

তূর্য মুচকি হেসে বোনের কপালে চুমু খেয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।

তুর ঘুমিয়ে যেতেই তূর্য তুরকে বালিশে শুয়ে দিয়ে নিজের রুমে যেতে নিবে তখনই তূর্যের ফোনে মেসেজ টুন বেজে উঠলো। তূর্য মেসেজ ওপেন করে দেখলো নম্রতা মেসেজ দিয়েছে। তূর্য মুচকি হাসলো। তূর্য দেখল নম্রতা লিখেছে
“খাবার টেবিলে রাখা আছে। মনে করে খেয়ে নিবেন। তাছাড়া আপনার শরীর আবার খারাপ হয়ে যাবে।”

তূর্য খেয়ে নিজের রুমে গেল। বেশ ক্লান্ত লাগছে। ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিয়ে চোখ ‍বুজতেই নম্রতার মায়াময় চেহারা ভেসে উঠলো তূর্যের চোখের সামনে। মেয়েটাকে সে ভালোবাসে। শুধু যে সে ভালোবাসে তা তো নয়। মেয়েটাও তাকে ভালোবাসে। কিন্তু তূর্য নিজের ভালোবাসার কথা বলতে বরাবরের মতোই ব‍্যর্থ। তার মনে এক ভয় বাঁধা দেয় তাকে প্রতিটা মুহূর্ত। সে যদি হারিয়ে ফেলে নম্রতাকে। ভয় পায় সে ভালোবাসার কথা বলতে। যদি নম্রতা দূরে সরে যায় ওর থেকে। গুটিয়ে নেয় নিজেকে তখন কি হবে। তার বোকাফুল যে বড্ড বোকা। কিছু না হতেই চোখের কোনায় পানিরা এসে খেলা করে। সেই কান্নামাখা চেহারা যে একেবারেই পছন্দ না। তার বোকাফুল তো হাসলেই ভালো। লজ্জামাখা সেই হাসি ঘায়েল করে তাকে প্রতিটা মুহূর্ত। থাক না এমন সম্পর্ক ক্ষতি কি। প্রতিনিয়ত কথাটুকু তো বলা হচ্ছে। মেয়ে‍টা দিধা ছাড়া কথা বলতে পারছে। ভালোবাসার কথা বললে হয় তো এতটা কথা বলতে পারবেনা।

এগুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো তূর্য টের ও পেল না।

অন‍্যদিকে রিজভীর রাতটা কাটছে অস্থিরতায়। কে ছিলো ছেলেটা যার সঙ্গে এতো হেসে হেসে কথা বলছিল তুর। আর মেয়েটাকে এমনি বা লাগছিলো কেন! চোখ বুজলেই তুরের লাল হওয়া চোখমুখ ভেসে উঠছে রিজভীর চোখের সামনে যা রিজভীকে বেশি অস্থির করে তুলেছে। রিজভী আর থাকতে না পেরে শোয়া থেকে উঠে বসল। ফোন‍টা হাতে নিয়ে দেখলো রাত দুটো বাজে। আশ্চর্য রিজভী এতটাই ঘুম কাতুরে যে রাত বারোটার পর সে চোখ খোলায় রাখতে পারেনা। আর সে কিনা একটা মেয়ের চিন্তায় ঘুমাতে পারছেনা। রিজভী ফোন হাতে নিয়ে ঘরের সঙ্গে লাগোয়া বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে